What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected স্বনামধন্য - সমরেশ মজুমদার (1 Viewer)

কোনো লাভ নেই। কথা, যুক্তি যে এ মুহূর্তে অচল ভরত বুঝতে পারছিল। তার কেবলই কৌতূহল হচ্ছিল, কী কী কারণে বাবা এবং মায়ের সম্পর্ক এইরকম হল তা জানা যাচ্ছে না। দুজনের কেউ বলছে না। ওরা আর নিজেদের মধ্যে ঝগড়াও করছে না। এত বছর এই বাড়িতে একসঙ্গে থেকেও সে নিজে কখনও জানতে পারেনি। তাকে ওরা এমন শিশু করে রেখেছিল যে এসব ব্যাপারে আগ্রহ হয়নি।

হঠাৎ পুরিয়াটার কথা খেয়াল হল ভরতের। সে সন্তর্পণে মোড়কটা বের করল। দুটো ট্যাবলেট। একেই কি ড্রাগ বলে? ড্রাগ তো পুড়িয়ে খায়! তা হলে? ভরত উঠে দরজা বন্ধ করল। সঙ্গে সঙ্গে দরজায় আওয়াজ হল, খেতে দিচ্ছি।

মায়ের গলা। ভরত গলা তুলল, আমারটা ঢেকে রেখে দাও।

মা দ্বিতীয়বার অনুরোধ করল না। সেটাই স্বাভাবিক। এখন যা বলার তা বলা হয়ে গিয়েছে। খাওয়ার টেবিলে একসঙ্গে বসে নাটক করার আর কোনো প্রয়োজন নেই। প্রচণ্ড রাগ হয়ে গেল। ভরতের। ঘরে বাইরে এইসব দুশ্চিন্তা থেকে যেন মুক্তি নেই। সমস্ত পৃথিবীটা জুড়ে যেন ক্যান্সারের বিষ ছড়িয়ে পড়েছে। কে যেন বলেছিল ক্যান্সার রোগীর শেষ সময়ে যে যন্ত্রণা তা সহ্য করার চেয়ে তাকে আত্মহত্যা করার অধিকার দেওয়া উচিত। আমি একার চেষ্টা এই দেশের চেহারাটা পাল্টাতে পারব না। আমার মতো অনেকে কবে একত্রিত হয়ে সেই করবে তার ঈশ্বর জানেন। আমি একা এই বাড়ির চেহারাটাও বদলে দিতে পারব না। আমি অর্থহীন, দুর্বল একটি প্রাণীমাত্র। আমার চারপাশে ক্যান্সারের বিষ আর তার মধ্যে আমাকে বাস করতে হবে। আমি কেন সেটা মেনে নেব? আমি আত্মহত্যা করব। এই অধিকার আমাকে দেওয়া হয়েছে কি না তা নিয়ে আমি মাথা ঘামাবো না। লোকটা বলেছিল এসব থেকে ভুলে থাকার একমাত্র উপায় ড্রাগ খাওয়া। সারা পৃথিবী জুড়ে ড্রাগের বিরুদ্ধে আন্দোলন হচ্ছে কিন্তু যারা ড্রাগ খায় তাদের কথা শোনার কোনও চেষ্টা হয়েছে? কেন তারা ড্রাগ খায়? যে পৃথিবীতে সিগারেট খাওয়া বন্ধ করার জন্যে ব্যস্ততা শুরু হয়েছে সেই পৃথিবীতেই সিগারেট বিক্রি হচ্ছে প্যাকেটের ওপর সিগারেট খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর বাক্যটি লিখে। যদি ক্ষতিকর হয় তা হলে সরকার সেটা বিক্রি করতে দিচ্ছে কেন? সব ব্যাপারে এই ভাওতাবাজি। চারপাশে এখন দু নম্বরীদের মুখ আর মুখোশ একাকার।

ড্রাগ খেলেই মানুষ মরে যায় না চট করে। খেতে খেতে একসময় হয়তো মরে যায়। একটা বাচ্চা ছেলে যেমন কলকাতা শহরে টানা বাস করলে পলিউশনের কারণে ফুসফুস নংরা হয়ে মরে যেতে পারে। একটা মদ্যপ যেমন লিভার পচিয়ে মরে যায় অথবা একজন মাস্তান নেতাদের আশ্রয়ে মাস্তানি করতে করতে গুলি খেয়ে মরে। কিন্তু মাত্র একবার একটা ট্যাবলেট খেলে কিরকম প্রতিক্রিয়া হয় তা তার জানা নেই।

ক্রমশ সেটা জানার ইচ্ছে প্রবল হতে লাগল। একটা ট্যাবলেট খেলে কিরকম অনুভূতি হয়? কিন্তু কৌতূহল বেড়ে যাওয়া সত্ত্বেও কোথাও যেন কি একটা বাধা দিচ্ছিল তাকে। সঙ্গে সঙ্গে বাবার তুলে ধরা জলের গ্লাসের ছবি চোখের সামনে ভেসে উঠল। ভরত উঠে ঢাকা দেওয়া জলের গ্লাসটা তুলে এক ঢোঁক গলায় ঢালল। তারপর একটা ট্যাবলেট মুখে ফেলে দিল। ওটা কিভাবে খায় সে জানে না। ওষুধ যেমনভাবে খেতে হয় সেইটেই সহজ উপায়। অসুখ হলে এভাবে ওষুধ খেতে হয় তাই এতকাল জেনে এসেছে।

প্রথমে কোনো প্রতিক্রিয়া ছিল না। সে সব কিছু সহজ সরলভাবে দেখতে পাচ্ছে। কোনও কিছু ভাবতে অসুবিধে হচ্ছে না। তারপরেই শরীর ঝিমঝিম করতে লাগল। বিছানায় শুয়ে পড়ল ভরত। সমস্ত শরীর জুড়ে অদ্ভুত অস্বস্তি। ঘরের টিউবলাইটটা যেন একডজন হয়ে গেছে আচমকা। চোখের সামনে নীল লাল হরেক রকম আলো।
 
তখনও ভেতরে ভেতরে একধরনের সচেতন শক্তি কাজ করছিল। ভরত প্রাণপণে ভাবতে চেষ্টা করছিল তার কিছু হয়নি, সব কিছু ঠিক আছে। বিছানা থেকে ধীরে ধীরে উঠে বসার চেষ্টা করল সে। সঙ্গে সঙ্গে মনে হল শরীর ওপরে উঠে যাচ্ছে। আর কি আনন্দ! সে যেন পরীদের মতো আকাশে ভাসতে পারছে। ওড় ওড় ওড়। চঁদমামা দেয় হামা–। তার শরীরটা এখন এত হাল্কা। ঘরের দেওয়াগুলো সরে সরে যাচ্ছে আর সে ইচ্ছেমতন ঘোরার অথবা ওড়ার জায়গাটা বাড়িয়ে নিতে পারছে। এখন তার কোনো কষ্ট নেই, দুঃখ নেই। তার কী কোনো কষ্ট ছিল? দুঃখ ছিল? কিছুই মনে করতে পারল না ভরত। কে যেন তার দিকে উড়ে উড়ে আসছে। যে আসছে তার হাতে মালা। কাছে আসতেই সে সুদেষ্ণাকে চিনতে পারল। সুদেষ্ণা তাকে দেখে একগাল হাসল, হাই!

সে জবাব দিল, হাই।

সুদেষ্ণা হেসে বলল, চল যাই কুঞ্জবনে।

ভরত জিজ্ঞাসা করল, সেখানে গিয়ে আমরা কি করব?

সুদেষ্ণা চোখ ঘোরাল, ন্যাকা। নেকু আমার। নেকু সোনা।

মাইরি বলছি আমি জানি না।

আমরা লাভু লাভু খেলব।

লাভু লাভু? সে কেমন খেলা?

আই লাভ ইউ, টুকি! আমি তোমার টুনটুনি পাখি হব, তুমি আমার আলেকজান্ডারের বাজপাখি। এই ধর না, আমাকে ধর।

আবেগে গলে গিয়ে ভরত তাকে ধরতে যেতেই সুদেষ্ণা ইন্দিরা গান্ধী হয়ে গেল। ভরত বলল, যাচ্চলে।

ইন্দিরা গান্ধী বলল, আমি এখন স্ট্যাচু। মাথার ওপরে আরশোলা ঘুরছে, ওটাকে তাড়িয়ে দাও।

ভরত সযত্নে আরশোলা তাড়াল। আরশোলা উড়ছে। উড়তে উড়তে বলল, জিন্দাবাদ।

ভরত জিজ্ঞাসা করল, কিসের জিন্দাবাদ ভাই?

জানি না। বলতে হয় বলছি। দেশে তো এখন কোনও অভাব নেই। কোনো শ্রেণিশত্রু নেই। টাটা বিড়লা আমাদের বন্ধু, প্রধানমন্ত্রী বুকডন দেয় সি. এমের ডিকটেশন শুনে। নো প্রতিপক্ষ অই স্ট্যাচুটাকে আক্রমণ করেছিলাম।

আরশোলাকে ছেড়ে দিয়ে শ্যামবাজারের মোড়ে পৌঁছে ভরত ওপর থেকে দেখতে পেল একজন সার্জেন্ট বাইকে হেলান দিয়ে গান গাইছে, আমায় যে সব দিতে হবে সে তো আমি জানি। একটা লরিওয়ালা যেতে যেতে দাঁড়িয়ে গেল, কী করব স্যার? আপনি ঘুষ নেবেন না?

না। নো এন্ট্রিতে ঢুকলে তোর লাইসেন্স কেড়ে নেব বরাহনন্দন।

লরিওয়ালা আবার ফিরে যেতে হাততালি দিয়ে উঠল ভরত, ও দাদা, আপনি গান গাইছেন?

সার্জেন্ট ওপরের দিকে তাকাল, কেন? গান গাইতে পারি না? মন্ত্রী নাটক লিখতে পারে, ফাংশন করাতে পারে যখন তখন আমিও গাইব।
 
ভরত হকচকিয়ে গেল। সে ওড়ার কথা ভাবতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে চলে এল। সেখানে মিটিং হচ্ছে। একজন জঙ্গি মন্ত্রী বলছেন, আমাদের নম্র হতে হবে। বাংলা সাহিত্যের প্রবীণ সেবকদের শ্রদ্ধা করতে শিখতে হবে। বঙ্কিম রবীন্দ্রনাথ তারাশঙ্করকে অস্বীকার করে বাঙালি কখনও বেঁচে থাকতে পারে না। মনে রাখবেন এঁরা কেউ অশ্লীল লেখা লেখেননি, বুর্জোয়াদের শ্রমিকের বিপক্ষে কলম ধরেননি বরং এঁরা বারংবার বলেছেন, আমি তোমাদের লোক। হাততালি পল্ল। ভরত খুব খুশি হল। কিন্তু ওরা কেউ তাকে দেখতে পাচ্ছে না কেন? হঠাৎ সে দেখল কলেজ স্ট্রিট কালো করে একটা স্টেটবাস ডিজেলের ধোঁয়া ছড়াতে ছড়াতে আসছে আর তার পেছনে অদ্ভুত সব যন্ত্রপাতি নিয়ে কিছু লোক একটা লরিতে। সে বাসড্রাইভারের পাশে নেমে এল, এই যে মশাই, ধোঁয়া ছড়িয়ে কলকাতার বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছেন?

লোকটি বলল, দুর মশাই! কলকাতা মেগাসিটি হবে তাই ফরেন এক্সচেঞ্জ আর্ন করতে সাহায্য করছি। পৃথিবীর কোথাও আর ডিজেলের কালো ধোঁওয়ার সঙ্গে রাস্তার হাওয়ার মিকচার পাওয়া যায় না। তাই পেছনের ট্রাকের লোকেরা সেটা সংগ্রহ করছে উত্তর মেরুতে পাঠাবে এক্সপেরিমেন্টের জন্যে। তার বদলে ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক লক্ষ লক্ষ ডলার দেবে। গ্রো মোর ধোঁয়া অ্যান্ড। মেক মেগাসিটি।

তারপর আর কিছু খেয়াল নেই। দপ করে যেন সব আলো নিভে গেল। তেষ্টায় বুকের ছাতি ফেটে যাচ্ছিল। দু হাতে বিছানার চাদর আঁকড়ে ধরে সে কিছু একটা করার চেষ্টা করেছিল যা তার মনে নেই।

.

চোখ খুলতেই সাদা দেওয়াল। এই দেওয়াল তার ঘরের নয়। ভরত আবিষ্কার করল সে যেখানে শুয়ে আছে তার সব কিছু সাদা। পরক্ষণেই একটা তীব্র কষ্ট সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে পড়ল। যেন তার শরীরে সর্বত্র সাহারা মরুভূমির দুপুর হয়ে গেছে। সে কোনওমতে বলল, আঃ।

বলমাত্র একরাশ যন্ত্রণা শাবল ঠোকরাতে লাগল। গলা কানে এল, কী রকম লাগছে?

খুব কষ্ট হচ্ছে। জল, জল খাব!

দাঁড়ান, ডাক্তারবাবু আসুন। সাদা জামা পরা মহিলাটি যে নার্স তা বুঝতে পারল ভরত। ওর ইচ্ছে হচ্ছিল লাফিয়ে বিছানা থেকে নেমে এসে গ্লাস জল খুঁজে নিতে। কিন্তু উঠতে গিয়ে আবিষ্কার করল সমস্ত শরীর ভারী এবং অসাড়। তার একটুও শক্তি অবশিষ্ট নেই। সে চোখ বন্ধ করল।

খানিক পরে পুরুষ কণ্ঠ শুনল, সেন্স এসেছে? ভাল। কী বলছে?

জল খেতে চেয়েছে।

শুধু জল না ওই ট্যাবলেট-ফ্যাবলেট?

না। জল।

একটা হাত খপ করে তার কব্জি ধরল। পালস দেখছ বোধহয়। এই লোকটা তা হলে ডাক্তার। ট্যাবলেটের কথা বলল কেন? ভরতের মনে পড়ল সে ট্যাবলেট খেয়েছিল। নগদ চল্লিশ টাকা দিয়ে কেনা দুটো ট্যাবলেটের একটা সে গলায় ঢেলেছিল কিন্তু দ্বিতীয়টা কোথায়?

স্যালাইনটা খুলে দিন।

তার কি স্যালাইন চলছিল? সে এখন কোথায়? এটা তা হলে হাসপাতাল? না নার্সিং হোম! লোকটা তার পাশে চলে এল, এ যে ভাই! শুনতে পাচ্ছ?

ভরত চোখ খুলল।

এখন কেমন লাগছে?

ভাল না। সে কথা বলল কিন্তু নিজের গলা অচেনা মনে হলো।

লাগার তো কথা নয়। সত্তর ঘন্টা সেন্সলেস থাকার পর কেউ গান গাইতে পারে না। খুব ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে। কটা ট্যাবলেট খেয়েছ?

একটা।

অ্যাঁ? একটাতেই এই অবস্থা। ঐ কদিন ধরে খাচ্ছ?

এই প্রথম। আমি জল খাব।

কেন?

তেষ্টা পাচ্ছে।

ডাক্তার নার্সকে বললেন, দু চামচ জল দিন। ওর আরও কিছুক্ষণ ঘুমানো দরকার। পালস খুব লো। ইঞ্জেকশনটা দিয়ে দেবেন।

নার্স তাকে জল দিল। দু চামচ জল যে অমৃতের চেয়ে সুস্বাদু তা জীবনে প্রথমবার টের পেল ভরত। তার পরেই হাতে একটা যন্ত্রণা হয়েই মিলিয়ে গেল। ভরত বুঝতে পারল ধীরে ধীরে সে আর কিছু ভাবতে পারছে না। ঘুম আসছে সমস্ত পৃথিবী ঢেকে দিয়ে। তার চোখ বন্ধ হয়ে গেল।

.
 
নার্স বলল, বেডে শুয়ে মুখ ধোবেন না টয়লেটে যেতে পারবেন?

ভরত চোখ মেলেছিল একটু আগেই। নার্স জানলা খুলে দিতে বুঝেছিল এখন সকাল। সে বলল, টয়লেটে যাব।

কিন্তু তাকে ধরতে হলো। নার্স বলল, আমার কাঁধে হাত রেখে হাঁটুন। লজ্জা করার কিছু নেই, আপনি আমার ভাই-এর চেয়ে ছোট।

টয়লেটে পৌঁছে নিয়ে নার্স বাইরে বেরিয়ে গেল কিন্তু দরজাটা সামান্য ভেজিয়ে দিল মাত্র। প্রচন্ড দুর্বল লাগছে। পরিচ্ছন্ন হয়ে এক পা হাঁটতে মাথা ঘুরে গেল। সে দেওয়াল ধরে সোজা হতেই নার্স চলে এল কাছে। যত্ন করে বিছানায় ফিরিয়ে এনে বলল, শরীর তো ঝাঁঝরা হয়ে গেছে। ধোঁয়া এঁকেছেন না ট্যাবলেট খেয়েছেন। ধোঁয়াতে তো এত বাড়াবাড়ি হয় না।

ভরত জবাব দিল না।

নার্স বলল, কোনও লাভ হয় না। একটু একটু করে মরে যাওয়ার কী মানে আছে? এত অল্পবয়স এখনই কি এমন দুঃখ যে ওসব গিলতে গিয়েছেন?

আপনার কোনও দুঃখ নেই? দুর্বল গলায় জিজ্ঞসা করল ভরত।

ওমা। থাকবে না কেন? নার্স বলল, সারাজীবন চাকরি করে ভাইবোনদের মানুষ করলাম, বিয়ে দিলাম এখন যে যার নিজেরটা নিয়ে আছে। এই চাকরি করতে এসে কতবার ইজ্জত নিয়ে টানাটানি হয়েছে, বেশি প্রতিবাদ করলে চাকরি যাবে তাই কোন্ কায়দায় লাঠি না ভেঙে সাপ মারতে হয় শিখে নিয়েছি। সবাই তাই করে। শুধু আপনার মতো বোকা গাধারা ওসব খায়। বলে হাসল, দুঃখ কিসের? প্রেম?

না।

তা হলে। বাবা-মাকে দেখে মনে হয় কোনো অভাব নেই।

বাবা-মা? তারা আসে?

ওমা। আসবে না কেন? দুবেলা আসে। আপনাকে এখানে নিয়ে আসার পর দুজনে পালা করে থেকেছে দিনরাত। খুব ভাল মানুষ।

ভরতের এতক্ষণে ওদের কথা মনে এল। তাকে এখানে নিয়ে ওরাই এসেছে। কবে? আজ কত তারিখ? জিজ্ঞসা করল সে। উত্তর শুনে সে অবাক? তিনদিন কেটে গেছে এখানে? এই তিনদিনের কোনো স্মৃতি তার মনে নেই।

বাবা-মা পালা করে তার জন্যে এখানে উপস্থিত থেকেছে। কথাটা শুনে বিশ্বাস করতে খুব ভাল লাগল। কেন থাকল? শুধু তার প্রতি যে স্নেহ তা থেকে জেগে ওঠা উদ্বেগ এর কারণ? কি জানি! আর দিন পাঁচেক বাদে বাবা চলে যাবে নতুন ফ্ল্যাটে। এই তিনদিন যদি অফিস কামাই করে তা হলে প্রমোশন আটকে যাবে না তো? একেবারে শয্যাশায়ী না হলে বাবাকে অফিস কামাই করতে দ্যাখেনি সে। অতএব ব্যাপারটা বিস্ময়কর।

নার্স তাকে চা খাওয়ালো, সঙ্গে ভিটামিন। খানিকবাদে ভরতের ইচ্ছে হচ্ছিল আবার ঘুমিয়ে পড়তে। খুব কাহিল লাগছিল তার। এই সময় পর্দাটা ঈষৎ সরে গেল। সে বালিশে মাথা রেখেই দেখল, মা দাঁড়িয়ে আছে।

মাত্র কদিন, কিন্তু মায়ের চেহারা যেন একটু অন্যরকম দেখাচ্ছে। চুল বেশ উস্কোখুস্কো, চোখের তলায় কালি। মায়ের পেছনে নার্স।

নার্স বলল, আর কোনো চিন্তা নেই। ডাক্তারবাবু বলেছেন ভয় কেটে গিয়েছে। কয়েকটা টেস্ট করে ছেড়ে দেবে।

মা চুপচাপ এগিয়ে এসে পাশের টুলে বসল। নার্স জিজ্ঞাসা করল, বাবা আসেনি?

মা বলল, আসবে।

আসলে এটা যদি প্রথমবার হয় তা হলে ভয় নেই। বিষ এখনও রক্তে মিশে যায়নি। একবার মিশে গেলে ছাড়ানো মুশকিল। নার্স কথা বলে যাচ্ছিল।

মা বলল, ঠিক আছে।

মহিলা বুদ্ধিমতী, ইঙ্গিত বুঝতে পেরে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।

.
 
মা জিজ্ঞাসা করল, কেমন আছিস?

ভরত তাকাল। মুখে কিছু বলল না।

এই কদিনেই চেহারা কি হয়ে গেছে। মুখে রক্ত নেই একটাফোঁটা।

ঠিক হয়ে যাবে।

নাও হতে পারত। আমরা খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। মায়ের হাত ওর হাতের ওপর এল। কদিন এই স্পর্শ পায়নি সে।

তোমরা কী করে টের পেলে?

তোর বাবা টের পেয়েছিল। রাত বারোটা নাগাদ ওর তোকে কিছু বলতে ইচ্ছে হওয়ায় ঘরে যেতে গিয়ে দ্যাখে দরজা বন্ধ। অনেকবার ধাক্কা দিতেও যখন দরজা খুলল না–ওঃ, আমার রক্ত হিম হয়ে গিয়েছিল।

কী কথা বলতে গিয়েছিল বাবা?

আমি জানি না। মাথা নাড়ল, জীবনে যা করিনি তাই করছি। কালীঘাটে মানত পর্যন্ত দিয়েছি। এ তুই কেন করতে গেলি খোকা?

তুমি বিশ্বাস করতে পারবে না।

কেন?

আমি নেশা করব বলে ওটা খাইনি।

তা হলে?

কৌতূহলে খেয়েছিলাম।

কেন?

জানি না।

খেয়ে তো দেখলি!

দেখলাম। অনেক কিছু দেখলাম।

কী দেখলি?

পৃথিবীটা কি রকম ভাল হয়ে গিয়েছিল। হাসল ভরত, আচ্ছা, মা, আর একটা ট্যাবলেট ছিল, সেটা কোথায়?

পুলিশ নিয়ে গেছে।

পুলিশ?

নার্সিং হোম থেকে খবর দিয়েছে পুলিশকে। একটা সময় এরা তোর প্রাণের আশংকা করছিল। তো বাবা এখন থানায় গিয়েছে।

বাবা অফিসে যাচ্ছে না?

না

ভরত চুপ করে গেল। ঠিক তখনই পর্দা সরিয়ে বাবাকে ঘরে ঢুকতে দেখল। বাবার পরনে পাজামা পাঞ্জাবি, অফিসে যাওয়ার পোশাক নয়। বাবা তার পাশে এসে দাঁড়াল, খুব উইক লাগছে তো?

হ্যাঁ।

তোর মত ছেলে ড্রাগ খাবে আমি আশা করিনি।

কেন?

তুই আর পাঁচজনের মত তো নস। যাকগে, আমি ডাক্তারকে বলেছি তোকে বাড়ি নিয়ে যাব। বাবা বলল।

মা বলল, তবে যে, ওরা বলল কী সব পরীক্ষা করবে?

দেখতে চাইছে আবার অ্যাটাক হয় কি না? অ্যা

টাক মানে?

যারা এ্যাডিক্টেড তাদের একটা সময় পরে ড্রাগ নেবার ইচ্ছে প্রবল হয়। তখন কিছুতেই রেজিস্ট করতে পারে না। ওই সময় ড্রাগ না পেলে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পাগলের মতো আচরণ করে। আমি বলেছি খোকার ক্ষেত্রে সেরকম সম্ভাবনা নেই। দিস ওয়াজ হিজ ফার্স্ট অ্যাডভেঞ্চার এবং এটা রেকার করবে না। বাবা হাসল, কিন্তু পুলিশ তোকে কিছু প্রশ্ন করবে। তোর কাছে কিছু জানতে চাইবে। যা সত্যি তাই বলবি।

মা বলে উঠল, কী দরকার ছিল। তুমিই তো কথা বলতে পারতে।

আমি তো কিছুই জানি না। তবে ভয়ের কিছু নেই, এটা রুটিন ব্যাপার। বলে বাবা দরজার কাছে গিয়ে পর্দা সরিয়ে ডাকলেন, আসুন স্যার।
 
ভরত একজন প্রৌঢ়কে ঢুকতে দেখল। পান খাচ্ছেন। পরনে পুলিশের উর্দি নেই। একবার মায়ের দিকে তাকিয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, কি শরীর ভাল?

ভরত এবারও জবাব দিল না।

বাবা বলল, আপনি বসে কথা বলুন।

মা সঙ্গে সঙ্গে উঠে টুলটা এগিয়ে দিল। ভদ্রলোক একটুও বিব্রত না হয়ে সেটা টেনে নিয়ে একেবারে মুখের কাছে এসে বসল, তুমি কী খেয়েছ?

ট্যাবলেট।

কী ট্যাবলেট? নাম কী?

জানি না।

ট্যাবলেট এই প্রথম?

হ্যাঁ।

আগে কি খেতে? পাউডার?

আগে কখনও এইসব খাইনি।

দ্যাখ, আমি চাই তুমি সত্যি কথা বল। তোমাদের এলাকায়ে অন্তত ছজন ছেলে রেগুলার ড্রাগ নেয়। তাদের মধ্যে দুজনের কেস খুব খারাপ। বারংবার চেষ্টা হয়েছে সারাবার, ফিরে গিয়ে আবার খাচ্ছে। টাকার জন্যে বাড়িতে ঝামেলা করছে। ওদের গার্জেনরা বলছে যে কোনও একটা কেস দিয়ে দুচার বছর জেলে ঢুকিয়ে দিতে। অর্থাৎ তোমাদের ওখানে এসব চালু আছে। এদের চেনো?

আমি কাউকে চিনি না।

এবার বাবা বলল, আমি তো আপনাকে বলেছি ও কখনও ওসব খায়নি।

বলেছেন। ডাক্তারও তাই বলেছে। তবু ওর মুখ থেকে শোনা আমার কর্তব্য। আচ্ছা, এই যে ট্যাবলেট তুমি খেয়েছ তার রিঅ্যাকশনের কথা তুমি জানতে?

না।

তাহলে খেলে কেন?

কৌতূহলে।

শাবাশ। কেউ তোমাকে বলেনি এটা খেলে কী হতে পারে?

না।

তোমাকে ট্যাবলেট কে দিল?

আমি কিনেছিলাম।

কোত্থেকে?

কুলপি মালাইওয়লার কাছ থেকে।

লোকটা তোমাদের পাড়ায় কুলপি বিক্রি করে?

হ্যাঁ।

ওর কাছে ট্যাবলেট পাওয়া যায় তা তুমি জানলে কী করে?

আমি জানতাম না। আমি ওর কাছে গিয়ে একটা স্পেশাল চেয়েছিলাম। স্পেশাল কুলপি। ও ভেবেছিল আমি এই জিনিস চাইছি। চল্লিশ টাকা দাম চাইল দুটোর জন্যে। কুলপির দাম অত হতে পারে না বলে আমার কৌতূহল হল। আমি নিয়ে নিলাম। ভরত কথাগুলো বলতে বলতে নিঃশ্বাস নিল।

নিয়ে তো নিলে, খেলে কেন? শুধুই কৌতূহলে? তুমি ভাল কলেজে পড়। তুমি নিশ্চয়ই ড্রাগ সম্পর্কে অনেক কিছু জানো। ড্রাগের বিরুদ্ধে যখন সমস্ত পৃথিবী লড়াই করছে তখন তুমি কৌতূহলে খেয়ে নিলে? ঐটা বিশ্বাস করতে বলছ?

ঠিক তা না–।

গুড। সত্যি কথাটা বলো।

আমি ওটা কেনার পর দুটো লোক এসে আমার কাছে টাকা চাইল। তাদের টাকা কম পড়ে গিয়েছিল। ধার চাইল। আমি দিতে না চাওয়ার ওরা খুব কাকুতি মিনতি করছিল। শেষ পর্যন্ত বলল ওটা খেলে সব ভুলে থাকা যায়। ওরা আমার বাড়িও চিনে ফেলেছিল। ওদের এড়াবার জন্যে আমি টাকা দিয়েছিলাম। কিন্তু ওই যে কথাটা, সব ভুলে থাকা যায়, শোনার পর মনে হল পরীক্ষা করা যাক।

লোকদুটো কোথায় থাকে?

আমি জানি না। আমার আগে ওরা কুলপি মালাইওয়ালার কাছে গিয়েছিল।

ঠিক আছে। কিন্তু ভাই, তোমার কাছে ওই নিষিদ্ধ ট্যাবলেট পাওয়া গিয়েছে। এটা যে অপরাধ তা নিশ্চয়ই জানো?

ভরত চুপ করে থাকল।

ভদ্রলোক হাসলেন, তোমাকে জেলে পাঠিয়ে চিরকালের জন্যে অন্ধকারে ঠেলে দেওয়ার চেয়ে সংশোধনের জন্যে সুযোগ দেওয়া অনেক দরকারি। আমি সেই সুযোগটা তোমাকে দিচ্ছি। কিন্তু ভবিষ্যতে যদি আবার এই কাজ করো– আচ্ছা তুমি বলেছিলে, ওরা ভুলে থাকার কথা বলেছিলে তুমি কী পরীক্ষা করতে চেয়েছিলে?

ভরত একটা বিষণ্ণ হাসি হাসল, জবাব দিল না।

অফিসার বললেন, নো। এড়িয়ে গেলে চলবে না। উই ক্যান হেল্প ইউ।

পারবেন না।

পারব না! এতটুকু বয়সে তুমি এত জেনে বসে আছ। কথা বলো।

এর ওষুধ দুটো। এক, আমাদের চারপাশের মানুষ এবং তাদের চরিত্র বদলে দেওয়া যা কখনই সম্ভব নয়। দুই, এখন থেকে প্রতিমুহূর্তে স্বার্থপর হয়ে জীবন কাটানো।

আমি তোমার কথা বুঝতে পারছি না।

আপনি বুঝতে পারবেন না।

অফিসার কাঁধ নাচালেন, তারপর উঠে দাঁড়িয়ে বাবাকে বললেন, আপনাদের ছেলে, ওর প্রব্লেম আপনাদেরই দেখা উচিত।

অফিসার চলে গেলে জিজ্ঞসা করলেন, খোকা, এখন যেতে পারবি?

কোথায়?

বাড়িতে।

এখন বাড়িতে গেলে তোমাদের অসুবিধে হবে।

মা জিজ্ঞাসা করল, কেন একথা বলছিস?

আমার গায়ে একফোঁটা শক্তি নেই।

জবাব দেবার আগে শব্দ পেয়ে মা দরজার দিকে তাকাল। ডাক্তার চলে এলো বেডের কাছে, কি? কেমন আছ?

আছি।

একজন সাংবাদিক এসেছিলেন আমার কাছে অন্য একটা কাজে। তাকে তোমার কথা বললাম। স্রেফ কৌতূহলী হওয়ার তোমার কী অবস্থা হয়েছিল। এত দিন জেনে এসেছি জীবন সম্পর্কে হতাশ হয়ে, হেরে গিয়ে ছেলেরা ড্রাগ খায়, বড়রা মদ ধরে। অ্যাডভেঞ্চারের নেশায় কেউ এসব কখনও করে?

আমি অ্যাডভেঞ্চার করিনি।

আই সি।

ধরুন, রেডিও বা টি ভি খারাপ হয়ে গিয়েছে একটা তার কেটে যাওয়ায়। আমি মেকানিকজম জানি না তাই মেকানিক যদি বলে দুশো টাকা খরচ হবে আমাকে তাই মানতে হবে। লোকটা ঠকাচ্ছে এবং আমি ঠকছি।

হ্যাঁ। অসৎ লোকেরা তাই করে।

পেটে যন্ত্রণা হচ্ছে, আমি আপনার কাছে এলাম। আপনি দেখে শুনে বললেন অপারেশন করতে হবে। পাঁচ হাজার টাকা বেরিয়ে গেল। কিন্তু যন্ত্রণাটা কয়েকটা ক্যাপসুল খেলে সেরে যেত। তাতে পঞ্চাশ টাকার বেশি আপনি পেতেন না।

হ্যাঁ। অসৎ ডাক্তাররা এরকম করে থাকে বলে শুনেছি।

আপনি নিজে কখনও করেনিনি?

ডাক্তারবাবু মাথা ঘুরিয়ে বাবার দিকে তাকালেন। তারপর ভরতের দিকে তাকিয়ে বললেন, করলে আজ তোমাকে রিলিজ করতাম না। তোমার যা কন্ডিশন তাতে আরও তিনদিন এখানে রাখা যেত এবং তাতে আমার নার্সিংহোমের আয় বাড়ত। আবার একদম করিনি এটাও ঠিক নয়। পেশেন্টকে হালকা ওষুধ দিয়ে সারাতে চেয়েছি। না সারলে কড়া দিতে হয়েছে। প্রথমেই সেটা দিলে সে দ্বিতীয়বার এসে আমাকে ফি দিত না। কিন্তু হালকাতেও সে সেরে যেতে পারত। কিন্তু ওষুধের বদলে চকের গুঁড়ো কখনও দিইনি।

আপনি ব্যতিক্রম।

তোমার খুব রাগ হয়, না?

হ্যাঁ।

কেন?

চারপাশে যেসব ঘটনা ঘটছে তা মেনে নিতে পারি না।

তোমার বাবা মায়ের প্রতি?

ভরত জবাব দিল না। ডাক্তার বললেন, হয়। ওঁদের সব কিছু তুমি মানতে পার না। আর এই কারণে তুমি ক্রমশ হতাশ হয়ে পড়েছ। আচ্ছা, আমি একটু বাড়াবাড়ি করি। মা হিসেব উনি তোমার কাছে কী রকম?

ভরত মায়ের দিকে তাকাল, মা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। সে বলল, ভাল।

আর বাবা হিসেব উনি?

ঠিক আছে।

তাহলে সমস্যাটা কোথায়?
 
আমি জানি না। হয়তো আমি বড় হয়ে গিয়েছি সেটাই আমার সমস্যা। ওরা আমাকে যেভাবে মানুষ করেছিল, যে সততা সুস্থ জীবনের কথা বলে আমাকে তৈরি করেছিল তার সঙ্গে জীবনের কোনও মিল নেই তা বড় হয়ে বুঝলাম। মা মানে একটা এটারনাল ব্যাপার, সন্তানকে ঘিরেই তার সমস্ত একজিসটেন্স এমন একটা ধারণা ছেলেবেলা থেকে তৈরি হয়েছিল। বই-তে তাই লেখা হয়েছে আর সেসব বই আমি গিলেছি। কোথাও কেউ বলেনি মা একজন মানুষ তারও ব্যক্তিগত জীবন আছে, ইচ্ছে আছে। বাবার সঙ্গে তার বিরোধ অসহ্য হয়ে উঠলে আর মেনে নাও নিতে পারে। আমার মন এমনভাবে তৈরি হয়ে গিয়েছিল যে এটা সহ্য করতে পারিনি। একই কথা বাবার। এগুলো সবসময় চেপে বসেছে।

ডাক্তার ভরতের মাথায় হাত রাখলেন, চিয়ার আপ মাই বয়। বড় যখন হয়েছ তখন একটু উদার হও। উদারতা না দেখালে পৃথিবীতে ভালভাবে বেঁচে থাকা যায় না। মাঝে মাঝে তোমার সঙ্গে ফোনে কথা বলব। তুমিও আমাকে ফোন কোরো।

গাড়ি থেকে নেমে লিফট পর্যন্ত ভরত এল বাবার ওপর নির্ভর করে। তার মাথা ঘুরছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও সে বাবার গায়ের গন্ধ পেল অনেক দিন পরে। বাল্যকালে ওই গন্ধের সঙ্গে সে পরিচিত ছিল।

নিজের ঘরের বিছানায় শোওয়ামাত্র জানলা খুলে দিল মা। অনেকদূরে আকাশে একটা চিল খুব ধীরে উড়ে উড়ে বেড়াচ্ছে। মা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞাসা করল, একটু পরে স্নান। করে ভাত খেয়ে লম্বা ঘুম দে।

বাবা উল্টোদিকের চেয়ারে বসেছিল। বলল, ওকে আজ স্নান করিয়ে দাও।

আমি পারব। ভরত প্রতিবাদ করল।

মা বলল, এক পা হাঁটার ক্ষমতা নেই তবু জেদ আছে খুব, না?

জেদ না–।

তবে?

আমার অভ্যেস নেই।

তাই। নার্সিংহোমে বেডে শুয়ে যখন সব কিছু করতিস তখন তোর অভ্যেস কোথায় গিয়েছিল? মা চোখ বড় করে হাসল।

তখন উপায় ছিল না। সে বাবার দিকে তাকাল, তুমি অফিসে যাবে না?

না।

অনেক দিন যাওনি।

কে বলল তোকে?

তোমার প্রমোশন নিয়ে গোলমাল হবে না?

আমি প্রমোশন নিচ্ছি না।

নিচ্ছ না?

না। কাগজটা কোথায়? আজ সকালে কাগজ দেখা হয়নি।

বাবা যেন চলে যাওয়ার জন্যে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।

ভরত মায়ের দিকে তাকাল, প্রমোশন না নিলে তো বাবা ফ্ল্যাটে পাবে না?

হ্যাঁ।

তার মানে বাবা এক তারিখে চলে যাচ্ছে না?

এসব কথা থাক।

তুমি?

আমি তো এখানেই আছি। মা চলে গেল ঘর থেকে।

একটু পরেই ওদের কথাবার্তা কানে এল। মা বলছে ভাতের সঙ্গে মাছের ঝোল করবে আর বাবা বলছে মাংস দিতে। মাংস গায়ে তাড়াতাড়ি জোর আনবে। এরকম একটা বিষয় নিয়ে দুজনের আলোচনা কখনও শোনেনি ভরত।

সে আকাশের দিকে তাকাল, চিলটা উড়ছে। একা অত ওপরে অসীম আকাশে একলা উড়ে পাখিটা কি আনন্দ পাচ্ছে? ভরতের খেয়াল হল উড়ে ক্লান্ত হলে তবে চিল পৃথিবীতে নেমে আসে। দুদণ্ড জিরোয়। পৃথিবীর মাটিতে আর যাই হোক ওড়া যায় না।

ডাক্তারবাবু লোকটা ভাল। কথাটাও সুন্দর। উদার হতে হবে। যে যা ইচ্ছে করে যাক তাকে উদার হয়ে উপেক্ষা করতে হবে। দুর্বল হয়ে মেনে নেওয়ার মধ্যে একটা গ্লানিবোধ তৈরি হয় কিন্তু উদারতা শব্দটিতে গর্বের আড়াল থাকে। এই ভাবে নিজেকে আড়ালে রেখে বেঁচে থাকার নাম জীবনযাপন। পৃথিবীর সব মানুষ এর যে কোনো এক ভাবে দিব্যি বেঁচে আছে। এখন থেকে তাকেও সেই চেষ্টা করতে হবে। ওই চিলটাকেও বিশ্রামের জন্যে পৃথিবীতে নেমে আসতেই হয়।

ভরত চোখ বন্ধ করল। তার ঘুম আসছিল।

.
 
ভরত এখন সুস্থ। হাসপাতাল থেকে ফিরে আসার পর দিন দশেক সে নিজের ঘর থেকে বের হয়নি। প্রথম দিকে সেই সামর্থ্য ছিলও না। বিছানায় শুয়ে দিনভর আকাশ দেখতে দেখতে সে ক্লান্ত হয়ে পড়ত। আকাশ বেশিক্ষণ একনাগাড়ে দেখা যায় না ও আগে জানত না। আকাশ তো মুক্তির প্রতীক, আকাশ নিয়ে মানুষ কত কাব্য করেছে কিন্তু চেয়ে থাকতে থাকতে সেটাও যে একঘেয়ে হয়ে যা তা সে জানত না।

আর এটা বোঝার পর থেকেই ওর ভাবনা-চিন্তা পাল্টালো। যত প্রিয় জিনিস হোক, একনাগাড়ে তার সঙ্গে লেপ্টে থাকলে বৈচিত্র্য হারাবেই। আকাশকে ভাল লাগাতে মাঝে মাঝে তাই পৃথিবীর দিকে চোখ ফেরাতেই হয়।

মাথা ঝিমঝিম করা, খিদে না হওয়া, কয়েক পা হাঁটলেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলা উপসর্গগুলো ধীরে ধীরে কমে এল। মা এখন তার নতুন অফিসে যাচ্ছে। বাবাও কাজে যোগ দিয়েছে। দুপুরটা একই ভাবে কাটে ভরতের। সেই সময় টিভি দেখে কাটে। বি বি সি তাকে সমস্ত পৃথিবীর খবর দেয়। এশিয়া শুধু নয় ল্যাটিন আমেরিকার অনেক দেশের মানুষ খুব কষ্ট করে থাকে। আফ্রিকার তো কথাই নেই। এমন কি ইউরোপের কিছু দেশের সাদা চামড়ার মানুষেরা একার রোজগারে ফ্ল্যাট ভাড়া করতে পারে না। লন্ডনের রাস্তায় ভিখিরি শুয়ে থাকে কম্বল মুড়ি দিয়ে। নিউইয়র্কের হানিফের সঙ্গে রাজাবাজারে বস্তির মনসুরের তেমন অমিল নেই।

এই সব তথ্য জানতে জানতে অদ্ভুত এক আগ্রহ আচ্ছন্ন করে রাখে তাকে। অবশ্য ইদানীং এবাড়ির আবহাওয়া পাল্টে গেছে। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর মা কয়েকবার, বাবা অন্তত দুবার কারণে অকারণে কথা বলে যায়। সন্ধের মধ্যেই বাড়ি ফিরে আসে ওরা। চা খেতে খেতে খোশগল্প করে। রাত নটার একটু আগে বাবা নিজের ঘরে ফিরে যায়। ওটা তার পানের সময়, ভরতের মনে হয় এইসবই ওরা করছে বাধ্য হয়ে। ছেলেকে সুস্থ করতে যে চিকিৎসা দরকার তার অঙ্গ হিসেবে এসব করে। ভরতের এখন কিছুই ভাবতে ভাল লাগে না। এখন সে আর সেই স্বপ্নের ছবিটা দেখতে পায় না। সেই ছিমছাম রাস্তা, গাড়িগুলো ট্রাফিক আইন মেনে চলছে, বাসে কেউ দাঁড়িয়ে নেই। ছবির মতো সেই শহরে মানুষ মানুষের মত চমৎকার বেঁচে আছে। বাল্যকাল থেকে এই যে ছবিটা সে মনে মনে আঁকতে তো কখন উধাও হয়ে গিয়েছে, এখন শুধু একটি মানুষের সঙ্গে কথা বলতে তার ভাল লাগে। তিনি হচ্ছেন নার্সিংহোমের সেই ডাক্তারবাবু। ভদ্রলোক প্রায়ই তাকে টেলিফোন করেন। অসুখ বিসুখ অথবা ওষুধ নিয়ে কোনও কথাই বলেন না। এই যেমন, গতকাল দুপুরের কথাবার্তাগুলো। ফোন বাজল। তখন বাড়িতে কেউ নেই। ভরত রিসিভার তুলে হ্যালো বলতেই ডাক্তারবাবু বললেন, বুদ্ধিমানরা এত বোকা সেজে থাকতে পছন্দ করে কেন ভরত?

বুঝলাম না। হাসল ভরত।

বুঝলে না? তুমি কিং কিং নামের ছবি দেখেছ?

টিভিতে দেখেছি।

হুম্। কিংকং, স্যামসন এন্ড ডেলাইলা থেকে শুরু করে হাতেমতাই, যত আজগুবি গাঁজা কাহিনি যখন ছবি হয়েছে তখন পাবলিক হুমড়ি খেয়ে তা দেখেছে। একটা বিশাল গরিলা নায়িকাকে হাতের তেলোয় নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, অসম্ভব জেনেও আমরা মুগ্ধ হয়ে দেখি। ক্লাসিক হয়তো নয় কিন্তু অল টাইম হিট লাগত। তখন পড়ার বই-এর তলায় নীহার গুপ্তের কালো ভ্রমর রেখে গোগ্রাসে গিলে সারারাত ঘুমাইনি। আর তোমরা এখন টিভির কল্যাণে কত বেশি জানেনা। ফেলুদা পড়ছ। তোমাদের কাছে ওসব জোলো বলে মনে হবে। কিন্তু এখনকার সবচেয়ে জনপ্রিয় ছবির নাম কি? জুরাসিক পার্ক। ডাইনোসরাসের ডিম ফুটিয়ে তাদের এখন বের করে যে কাণ্ডকারখানা ছবিতে করা হয়েছে তার সঙ্গে কিংকং এর পার্থক্য শুধু পরিবেশনের আধুনিকত্বে। এই আধুনিক ছাপটা আছে বলে অবাস্তব হওয়া সত্ত্বেও বুদ্ধিমান মানুষ বোকা সেজে উপভোগ করতে যাচ্ছে। এর আর একটা দিক আছে ভরত। এই আমাদের চারপাশে মজা পাবার উপকরণ খুব বেশি নেই। তাই অবাস্তব আনন্দে স্বচ্ছন্দে ডুবে থাকতে পারি যদি তা বাস্তবের গন্ধ মিশিয়ে পরিবেশন করা হয়। রাখি হে, অনেকক্ষণ বকবক করলাম।

আপনি কবে জুরাসিক পার্ক দেখলেন?

কাল রাত্রে, তুমি চাঁদের পাহাড় পড়েছ?

হ্যাঁ।

রাখছি।

কী কথা থেকে কোন কথায় চলে যান ভদ্রলোক। কেন তাকে ফোন করলেন তাও সবসময় বুঝে পায় না ভরত। কিন্তু তার ভালো লাগে মানুষটাকে। একদম খাপছাড়া মানুষ। নিয়মকানুনের ধার ধারেন না। একরকম লোকের সঙ্গে কথা বললে মন ভাল হয়ে যায়। আজও হলো।
 
ভরতের মনে হল ফোন রেখে দেবার পর ডাক্তারবাবুর হয়তো নতুন কিছু মনে এসেছে তাই আবার ফোন। সে রিসিভার তুলে বলল, বলুন।

মহিলাকণ্ঠ। নাম্বার যাচাই করল প্রথমে। তারপর বলল, আমি কি ভরতের সঙ্গে কথা বলছি? ও, কেমন আছ তুমি? আমি সুদেষ্ণা।

ভরত সোজা হয়ে দাঁড়াল। নিচু গলায় বলল, ভাল।

কলেজে আসছ না কেন?

যাব।

আমি যদি তোমার সঙ্গে দেখা করতে যাই তাহলে কি অসুবিধে হবে?

অসুবিধা কীসের?

তোমার টেলিফোন নম্বর আর ঠিকানা কালকে পেয়েছি। ঘন্টাখানেকের মধ্যে যেতে পারি। ঠিক আছে, রাখছি। সুদেষ্ণা লাইন কেটে দেবার পরও ভরত খানিকক্ষণ রিসিভার ধরে থাকল। অদ্ভুত এক ঝিমঝিম ভাব তার সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে পড়ছিল। তার মনে পড়ল সেদিনকার কথা যেদিন সে সুদেষ্ণাদের বাড়িতে ছুটে গিয়েছিল। সুদেষ্ণা বলেছিল, তুমি যা চাইছ সেরকম অনুভূতি কখনও যদি আমার হয় তাহলে তুমি জানতেই পারবে! ভরত প্রচণ্ড আগ্রহ নিয়ে জানতে চেয়েছিল, কবে? সুদেষ্ণা হেসে বলেছিল, কখন যে সেটা হবে তা বলতে পারছে না কারণ সে জ্যোতিষী নয়। সেদিন সে মাথা নিচু করে চলে এসেছিল সুদেষ্ণাদের বাড়ি থেকে। নিজেকে বঞ্চিত, অপমানিত বলে মনে হচ্ছিল সেদিন। অদ্ভুত এক শূন্যতাবোধে আক্রান্ত হয়ে ভরত ঠিক করেছিল আর কখনও সুদেষ্ণার সঙ্গে যোগাযোগ করবে না। আর তারপরই একের পর এক ঘটে গেল ঘটনাগুলো। সেই সুদেষ্ণা এতদিন বাদে নিজে যোগাযোগ করেছে। কেন? শুধুই সে অসুস্থ হয়ে কলেজে যাচ্ছে না বলে? কলেজে তো কত ছেলে অনুপস্থিত থাকে। তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে নিশ্চয়ই সুদেষ্ণা যোগাযোগ করে না।

সুদেষ্ণা এ বাড়িতে আসবে শোনামাত্র কি রকম একটা ভাললাগা তৈরি হয়ে গেল। তার তখনই মনে হল গ্রহণ না করে সুদেষ্ণা ঠিক করেছে। চট করে এত বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া মুখের কথা নয়। তার মনে হচ্ছিল এতদিনে সুদেষ্ণা নিশ্চয়ই সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছে। এখন মনে হচ্ছে তার প্রস্তাব অবশ্য সেসময় খুব খারাপ লেগেছিল। হয়তো সেই খারাপ লাগা থেকেই সে ড্রাগ খেয়ে ফেলেছিল। কি ছেলেমানুষী ব্যাপার। লোকে এককালে এরকম হলে মদ খেয়ে দেবদাস হয়ে যেত। এখন ভাবলেই হাসি পায়! ভরত ফ্ল্যাটটার চারপাশে তাকাল। সুদেষ্ণা এলে কোথায় ওকে বসতে বলবে? এই ড্রইং রুমে না নিজের ঘরে? সে ঝটপট নিজের ঘরটাকে আর একটু ভদ্রস্থ করে তোলার চেষ্টা করল। বইপত্র এত ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে যে নিজেরই রাগ হচ্ছিল।

ঠিক সওয়া তিনটের সময় বেল বাজল। ভরত যতটা সম্ভব দৌড়ে এসে দরজা খুলে দেখল। সুদেষ্ণা হাসছে এবং ওর পেছনে একটি যুবক সপ্রতিভ ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। সুদেষ্ণা জিজ্ঞাসা করল, দরজা আটকে দাঁড়িয়ে আছ, ভেতরে যেতে বলবে না?

কিরকম অসাড় লাগছিল শরীরটা, দরজার খোলামাত্র সেটা হয়েছিল, তবু সরে দাঁড়াল ভরত। মাথা নেড়ে বলল, এসো।

ওরা ভেতরে ঢুকল। ড্রইং রুমের সোফা দেখিয়ে বসতে বলল ভরত। সুদেষ্ণা আরাম করে বসে জিজ্ঞাসা করল, শরীর কেমন আছে?

অনেকটা ভাল। ভরত একটুও উৎসাহ পাচ্ছিল না।

আলাপ করিয়ে দিই। এ হচ্ছে সঞ্জয় দত্ত। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ফাইনাল ইয়ারে আছে। সঞ্জয়, তোমাকে ভরতের কথা বলেছি। সুদেষ্ণা মিষ্টি হাসল।

সঞ্জয় মাথা নাড়ল, সুদেষ্ণা বলছিল আপনি খুব একরোখা। অন্যায়ের সঙ্গে আপোষ করে চলতে পারেন না। আপনাকে দেখার আগ্রহ থেকেই এলাম।

ভরত ভালভাবে তাকাল। একবছর পরে ইঞ্জিনিয়ার হয়ে যাবে ও। তার মা বাবা যা চেয়েছিল তা কি সুদেষ্ণাও চায়। নিশ্চিত নিরাপত্তা?

সুদেষ্ণা জিজ্ঞাসা করল, তুমি হঠাৎ ডুব মারলে। সেই যে দুপুরে আমাদের বাড়ি থেকে চলে আসার পর আর কোনও খবরই নেই। হঠাৎ অর্ণব বসুরায় বলল তুমি খুব অসুস্থ। কী হয়েছিল তোমার?
 
ভরত নিস্তেজ গলায় বলল, এমন কিছু নয়। ঝোঁকের মাথায় নেশার ট্যাবলেট খেয়ে ফেলেছিলাম। সহ্য হয়নি। কদিন নার্সিংহোমে থাকতে হয়েছিল। তারপর শরীর ঠিক হতে কিছু সময় লাগছে, এই আর কি?

নেশার ট্যাবলেট? মাইগড! সুদেষ্ণা আঁতকে উঠল।

সঞ্জয় জিজ্ঞাসা করল, আপনি কি নিয়মিত ড্রাগ খান?

আমার চেহারা দেখে সেরকম মনে হচ্ছে নাকি? ভরত ঠোঁট কামড়াল।।

না না। হঠাৎ আপনি এই ট্যাবলেট খেতে যাবেন কেন?

কোনও কোনও ঘটনা হঠাই হয়ে যায়। উদাসীন গলায় বলল ভরত।

তুমি জানতে না ওই ট্যাবলেট খেলে ক্ষতি হতে পারে? সুদেষ্ণা প্রশ্ন করল।

কৌতূহল বড় মারাত্মক অসুখ।

কিন্তু তোমার মতো ছেলের ক্ষেত্রে এটা যে সম্পূর্ণ বেমানান।

না। কারণ কোনটা মানানসই সেই ফর্মুলা আজও আবিষ্কৃত হয়নি।

সঞ্জয় জিজ্ঞাসা করল, ওই বস্তু আপনি পেলেন কী করে?

পেয়ে গেলাম। যাক গেলো, এখন আমি ভাল আছি। ভরত প্রসঙ্গ পাল্টাতে চাইল, তোমরা কী খাবে? চা না কফি?

সুদেষ্ণা মাথা নাড়ল, ধন্যবাদ। আজ কিছু খাব না। বাড়িতে আর কেউ নেই?

না। মা-বাবা দুজনেই অফিসে।

তুমি কবে থেকে কলেজে যাচ্ছ?

দেখি।

বললে এখন ভাল আছ তাহলে যেতে অসুবিধে কোথায়?

ডাক্তার বলুক আগে।

তাহলে আজ উঠি।

ঠিক আছে। এখানে আসার জন্যে অনেক ধন্যবাদ।

সুদেষ্ণা আর সঞ্জয় দরজার দিকে এগিয়ে গেল। দরজার বাইরে পা রেখে সঞ্জয় বলল, পরে একদিন আপনার সঙ্গে ভাল করে আলাপ করা যাবে।

ভরত কোনও জবাব দিল না। নেমে যাওয়ার আগে সুদেষ্ণা একবারও পেছন ফিরে তাকাল না। সঞ্জয়ের সঙ্গে অন্য প্রসঙ্গে কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে গেল সে। ভরত চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিল। সে কি বোকা! সুদেষ্ণা এসেছিল নেহাৎই ভদ্রতা করে তাকে দেখতে। অথচ ওর এই আসাটাকে উপলক্ষ করে সে কত কিনা ভেবে বসেছিল। একটা মেয়েকে বন্ধু হিসেবে ভাবতে পারার মতো সহজ মনটাকে সে আর পাঁচটা বাঙালি ছেলের মতো হারিয়ে বসে আছে।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top