What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected মৌষলকাল - সমরেশ মজুমদার (3 Viewers)

অর্ক ওকে দেবেশবাবুর আশ্রমের ঠিকানা বুঝিয়ে বলল, হাসপাতালে গিয়ে খোঁজ করুন। ওখানে আমার ঠাকুমা অসুস্থ হয়ে ভরতি আছেন।

অনেক অনেক ধন্যবাদ দাদা। রামজি যেন স্বস্তি পেল।

একটা কথা রামজি, আপনাকে আমি কখনও জিজ্ঞাসা করিনি, কেন আপনাকে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে? আপনি কি একজন মাওবাদী?

দাদা, আপনি তো জানবেন। তবু জিজ্ঞাসা করছেন?

অনুমান করেছিলাম। আপনার ব্যবহার ভাল লেগেছিল বলে কিছুটা সাহায্য করেছিলাম। কিন্তু রামজি, এসব করে কী লাভ? এতবড় ভারতবর্ষকে কয়েক হাজার মাওবাদী কোনও অস্ত্র দিয়ে বদলে দিতে পারে? মানুষ খুন করে কি অসম থেকে কন্যাকুমারিকা পর্যন্ত বিপ্লব আনা সম্ভব? আপনারা যেটা করছেন সেটা স্রেফ আত্মহত্যা। এখনও সময় আছে, পথটা ছেড়ে দিন। অর্ক বলল।

কীভাবে?

পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করুন। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন করে মূল স্রোতে ফিরে আসুন।

আপনাদের মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন পশ্চিমবাংলায় মাওবাদী নেই। তা হলে আবেদন করলে কান দেবেন কেন? পুলিশ আমাকে বিনা বিচারে জেলে ফেলে রাখবে। আপনি– লাইন কেটে গেল। অর্কর মনে হল রামজির মোবাইলে যে পঞ্চাশ টাকা ভরা হয়েছিল তা শেষ হয়ে গিয়েছে।

নির্বাচনে প্রার্থী ঘোষণার সময় তৃণমূল নেত্রীর সিদ্ধান্তে অবাক হয়েছিল সাধারণ মানুষ, সাংবাদিকরাও। যাঁরা কখনও রাজনীতি করেননি, নিজের নিজের ক্ষেত্রে যাঁরা অত্যন্ত কৃতী, তেমন কয়েকজনকে তিনি বিধায়কপদে দাঁড় করিয়েছিলেন। কিন্তু মানুষ বুঝতে পেরেছিল পশ্চিমবাংলায় সবগুলো বিধায়কের আসনে তৃণমূল কংগ্রেস জোট বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে নির্বাচনী লড়াই করছে না, লড়াইটা হচ্ছে তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে বিরোধীদের। অবশ্যম্ভাবী ফল হল, মানুষ তৃণমূল নেত্রীকে ভোট দিয়ে তার প্রার্থীদের জিতিয়ে দিলেন। যাঁরা চার মাস আগেও কোনও রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন না, তারা রাজভবনের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছায় মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন। এই ঘটনা মানুষকে খুশি করল। অর্থনীতিবিদ, একজন জাঁদরেল আই এ এস অফিসার, একজন নাট্যব্যক্তিত্ব পশ্চিমবাংলার গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের মন্ত্রিত্বের দায়িত্ব পেলেন।

অর্ক ভাবছিল, এই ব্যাপারটা বাবা কীভাবে নেবে? পশ্চিমবাংলার রাজনীতিতে এইরকম ঘটনা এর আগে ঘটেছে কি না তার জানা নেই। প্রচলিত রাজনৈতিক শিক্ষায় যাঁরা শিক্ষিত তারা ব্যাপারটাকে মেনে নিতে পারবেন না। অনিমেষ নিশ্চয় বলত, এইসব মানুষ নিজের কাজের জায়গায় কৃতী হতে পারেন কিন্তু তাদের তো কোনও রাজনৈতিক ভিত নেই। শুধু মন্ত্রিত্ব রক্ষার জন্য দলের প্রতি অনুগত হয়ে কতদিন থাকতে পারবেন তাতে সন্দেহ রয়েছে। অর্ক মনে মনে মাথা নাড়ে, ভবিষ্যৎই শেষ কথা বলবে।
 
ছোটমা এখনও আইসিইউ-তে। সারাদিনের পরে বিকেলে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেল ওরা। ডাক্তার বললেন, ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক। ঠিক সময়ে নিয়ে আসা হয়েছিল বলে আমরা চেষ্টা করতে পারছি। কিন্তু পরিষ্কার বলছি, ওষুধে খুব একটা কাজ হচ্ছে না।

দূর থেকে দেখল ওরা ছোটমাকে। বিছানায় শরীর যেন মিশে গেছে। নাকে নল হাতে নল লাগিয়ে চিত হয়ে রয়েছেন।

এই সময় দেবেশ এল। ওদের দেখে খুশি হল সে, যাক, তোরা এসে গেছিস। কখন এলি? আমাকে ফোন করিসনি কেন?

ফোন করেছিলাম। তোর ফোন বন্ধ ছিল। বেলা বারোটায় পৌঁছেছি, ট্রেন লেট ছিল। অনিমেষ বলল, ডাক্তারের সঙ্গে কথা বললাম, ভরসা পেলাম না।

হ্যাঁ। সকালে এসে শুনেছিলাম বাহাত্তর ঘণ্টা কাটবে না। খুব খারাপ লাগছে রে। দেবেশ বলল, এদিকে আমি খুব সমস্যায় পড়েছি।

কী?

চারপাশে তাকিয়ে নিয়ে দেবেশ বলল, বলছি। তোরা কি কোনও হোটেলে উঠেছিস?

অনিমেষ মাথা নাড়ল, হ্যাঁ, রুবি বোর্ডিং-এ।

বিরক্ত হল দেবেশ, ওঃ আশ্রমে না উঠে হোটেলে গেলি কেন? মিছিমিছি পয়সা নষ্ট করার কী দরকার ছিল?

মাধবীলতা হাসল, আপনার মোবাইল বন্ধ দেখে বুঝতে পারছিলাম না আপনি আশ্রমে আছেন কি না। তা ছাড়া সারারাত প্রায় না ঘুমিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। স্নান খাওয়ার দরকার ছিল। আর এটাও তো ঠিক, আশ্রম থেকে হাসপাতালে আসা যাওয়াটা তো একেবারে সহজ ব্যাপার হবে না। আপনি বাইকে আসছেন বলে বোধহয় টের পান না।

কয়েকটা ওষুধ কিনে দিতে বললেন নার্স। দেবেশই সেটা কিনে দেওয়ার পর ওদের সঙ্গে হোটেলে চলে এল। এখন জলপাইগুড়িতে সন্ধে নামছে, হোটেলের সামনের রাস্তা দিয়ে যেন রিকশার মিছিল চলছে। তাদের হর্নের আওয়াজে কানে তালা লাগার জোগাড়। অনিমেষ বলল, একসময় এই রাস্তাটা শুনশান ছিল।

দেবেশ হেসে বলল, তখন কটা মানুষ রিকশায় চড়ত? চা খাব।

মাধবীলতাই চায়ের অর্ডার দিল বেল বাজিয়ে, হোটেলের কর্মচারীকে ডেকে। অনিমেষ বিছানায় আরাম করে বসে বলল, কী সমস্যার কথা বলছিলি?

দেবেশ ম্লান হাসল, রাজা বদলে গেলেও রাজপুরুষরা বদলাল না।

মাধবীলতা জিজ্ঞাসা করল, রাজপুরুষ মানে?

পার্টির নেতা, উপনেতারাই তো রাজপুরুষ। এখানকার একজন তৃণমূল নেতার সঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছে এতদিন যারা কংগ্রেস করত অথবা সিপিএমের কর্মী বলে যারা পরিচিত ছিল এমন সব লোক। দ্যাখ, শহর থেকে দূরে অনেক কষ্টে আশ্রম বানিয়েছিলাম যাতে বয়স্ক মানুষেরা একটু স্বস্তিতে থাকতে পারেন। বামফ্রন্টের আমলে চাপ আসত একে জায়গা দিন ওকে জায়গা দিন। সেই চাপ কেটে যেত যখন ওপরতলার নেতাদের জানাতাম। সব সময় যে নেতারা সহযোগিতা করতেন এমন নয়, তবু চক্ষুলজ্জা বলে একটা ব্যাপার ছিল। এখন সেইটেও গেছে। দেবেশ বলল।

ঠিক কী হয়েছে বল তো? অনিমেষ জিজ্ঞাসা করল।

কয়েকদিন আগে তৃণমূলের তিনজন এসে বলল তারা চারজন বৃদ্ধকে আমার আশ্রমে ভরতি করতে চায় কিন্তু তার জন্যে কোনও টাকাপয়সা দিতে পারবে না। আমি বললাম, তা হলে আমি খরচ চালাব কী করে? কী বলল জানিস? বলল, এতদিন অনেক মুনাফা করেছেন, বামফ্রন্টের চামচে ছিলেন, এখন সেই টাকায় এদের উপকার করুন। আমি রাজি না হওয়ায় গালমন্দ করে চলে গেল। তার দুদিন পরেই একজন আঞ্চলিক নেতা কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে গাড়িতে চেপে এলেন। বললেন, এটা আপনার ব্যক্তিগত ব্যাবসা নয়। এখানে যারা আছে তারা জনগণের অংশ। আপনি মা-মাটি-মানুষকে নিয়ে ব্যাবসা করতে পারেন না।
 
আমি অনেক বোঝাতে চাইলাম। নেতা কোনও কথা না শুনে বললেন, আপনাকে পনেরো দিন সময় দিচ্ছি। আপনার এখানে যারা থাকেন তারা প্রথমে যত টাকা দিয়েছেন, প্রতি মাসে কত টাকা দেন তার হিসেব রেডি করুন। তার সঙ্গে তরি-তরকারি, মাছ, মুরগি বিক্রি করে কী আয় হয় সেটা তৈরি করে আমাদের দেবেন। ওটা অডিট করা হবে।

আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম, এসব চাইবার অধিকার কি আপনাদের আছে? উত্তর হল, পনেরো দিনের মধ্যে যদি হিসেব না দেন তা হলে আপনার প্রশ্নের জবাব পাবেন।

কথাগুলো বলে দেবেশ চোখ বন্ধ করল।

মাধবীলতা জিজ্ঞাসা করল, পনেরো দিন শেষ হতে আর কত দিন বাকি আছে?

দিন এগারো।

ব্যাপারটা ওপরতলার নেতাদের জানিয়েছেন? মাধবীলতা শ্বাস ফেলল।

কাকে জানাব? রাতারাতি কংগ্রেসিরা তৃণমূল হয়ে গিয়েছে, একসঙ্গে নির্বাচন লড়াই করে মন্ত্রীসভায় অংশ নিয়েও কংগ্রেস দল দূরে সরে দাঁড়িয়েছে। আর তাদের দল থেকে কিছু স্বার্থান্বেষী ঢুকে পড়েছে তৃণমূলে। এদের সঙ্গে কথা বলতে যাওয়াও বিপদ। স্বার্থ ছাড়া কেউ হাত বাড়াবে না। দেবেশের কথার মধ্যেই চা এল।

পুলিশকে বলেছিস?

পাগল!

পুলিশ তোর কথা শুনবে না?

কানেই নেবে না। সিপিএম চৌত্রিশ বছরে যা যা করেছে, পুলিশকে যেভাবে মেরুদণ্ডহীন করে রেখেছিল এরা এই কয়দিনেই সেটা রপ্ত করে ফেলেছে। দেবেশ বলল।

মাধবীলতা মাথা নাড়ল, না দেবেশবাবু। জলপাইগুড়ির বাড়ি নিয়ে সিপিএমের কর্মীরা যখন আমাদের ওপর হুমকি দিচ্ছিল তখন একজন আইপিএস অফিসার তাদের শায়েস্তা করেছিলেন। সব পুলিশই মেরুদণ্ডহীন নয়। ব্যতিক্রমী পুলিশও আছেন। আচ্ছা, আশ্রমের মানুষজন নিশ্চয়ই এসব কথা শুনেছেন। তারা কী বলছেন?

তারা আশঙ্কিত। আশ্রম বন্ধ হয়ে গেলে সবাই বিপদে পড়বেন। ওঁরা আমার পাশে আছেন বলে এখনও মনে জোর পাচ্ছি। চা শেষ করে দেবেশ বলল, এবার অন্য কথা বলি। মাসিমার অবস্থা তো আর আশাজনক নয়। উনি চলে গেলে যে সমস্যা হবে তার কী সমাধান হবে ভেবে দ্যাখ অনিমেষ।

কী সমস্যা?

ব্যাঙ্কের টাকা না হয় জয়েন্ট নামে রয়েছে। কিন্তু আশ্রমের জন্য গতমাসে উনি কুড়ি হাজার টাকা ব্যাঙ্ক থেকে তুলে দিয়েছিলেন। কয়েকজনকে চিকিৎসার জন্যে শিলিগুড়ির হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়েছিল। একজনের গলব্লাডার থেকে পাথর বের করতে হয়েছিল। যাঁদের জন্যে ওই খরচ করতে হয়েছিল তাদের মাসিক টাকা দেওয়ার পর আর কিছু দেওয়ার মতো সংগতি নেই। মাসিমা যেচে ওই টাকা দিয়েছিলেন। আমি ভেবেছিলাম একটু একটু করে টাকাটা ওঁকে ফিরিয়ে দেব। আজ ওঁর যদি কিছু হয়ে যায় তা হলে তোরা আমাকে সময় দিবি? চোখ তুলে তাকাল দেবেশ।

অনিমেষ আচমকা হেসে উঠল, আমরা সময় দেওয়ার কে? যিনি দিয়েছেন তাকেই ফিরিয়ে দিবি, যদি পারিস।

ঠিক তখনই দেবেশের ফোন বেজে উঠল। সেটা অন করে কানে চেপে সে জানান দিল। ওপারের কথা শোনার পর সে বলল, আমি আসছি।

ফোন বন্ধ করে মাথা নিচু করে সে বসে থাকল কয়েক সেকেন্ড।

মাধবীলতার গলা কেঁপে গেল, কোনও খারাপ খবর?

মাথা নাড়ল দেবেশ, মাসিমা চলে গিয়েছেন।

মিনিটখানেক কথা বলল না কেউ।

দেবেশ উঠে দাঁড়াল, এই রাতে কিছু করার নেই। যা হবে তা কাল সকালেই করতে হবে। আমার একটাই সান্ত্বনা, তোরা এসে গেছিস।

আচমকা শরীর কেঁপে উঠল অনিমেষের। সমস্ত শরীর যেন কোনও প্রতিরোধ মানছিল না। গলা দিয়ে আহত শব্দ বেরিয়ে এল, দুচোখ বেয়ে জল। মাধবীলতা তার কাঁধে হাত রাখল।

দেবেশ নিচু গলায় বলল, আমি হাসপাতাল হয়ে আশ্রমে যাচ্ছি। সবাই উদ্বিগ্ন হয়ে আছে। খবর পেয়ে ভেঙে পড়বে। কিছু তো করার নেই। তোরা সকাল আটটার মধ্যে হাসপাতালে চলে যাস। দেবেশ বেরিয়ে গেল।
 
মাধবীলতা বেশ অবাক হল। ছোটমা সম্পর্কে অনিমেষের কোনও আবেগ, কোনও দুর্বলতা ছিল বলে সে জানত না। অনিমেষ তার ছেলেবেলার গল্প করার সময় বলেছে যে সে তার বাবার দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীকে কখনও মন থেকে মেনে নিতে পারেনি। এই না পারাটা তার পরবর্তীকালের আচরণেও দেখতে পেয়েছে মাধবীলতা। বাবা, বড় পিসিমা গত হওয়ার পরেও বোধহয় সেই কারণে অনিমেষ জলপাইগুড়িতে এসে ছোটমার কাছে কিছুদিন থাকতে চায়নি। তাই আজ তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়ে অনিমেষের এভাবে ভেঙে পড়া মাধবীলতাকে অবাক করেছিল। সে বলল, শান্ত হও। এরকম করছ কেন?

জানি না। হঠাৎ মনে হল সব কিছু শেষ হয়ে গেল। কান্না চাপল অনিমেষ।

সব কিছু শেষ হয়ে গেল? মাধবীলতা অনিমেষের হাত ধরল।

মা, দাদু, বড় পিসিমা, বাবা চলে গিয়েছেন অনেক আগে। আজ মনে হচ্ছে এতদিন তো ছোটমা ছিলেন যিনি বাবা, দাদু, বড় পিসিমাকে চিনতেন, তাদের সঙ্গে সংসার করেছেন। সেই তার চলে যাওয়া মানে অতীতের সঙ্গে আমার সমস্ত যোগসূত্র ছিন্ন হয়ে যাওয়া। বড় শ্বাস ফেলল অনিমেষ, যাঁকে কখনওই মন থেকে গ্রহণ করতে পারিনি তার চলে যাওয়ার সময় এলাম। সেই ছোটবেলায় আমার নিজের মায়ের মুখাগ্নি করেছিলাম। তারপর তিন তিনজন যখন চলে গেলেন আমি তখন কলকাতায়। শেষযাত্রায় পৌঁছোতে পারিনি। সেই দায় মেটাতেই বোধহয় এবার এলাম আমার দ্বিতীয় মায়ের মুখাগ্নি করতে।

মাধবীলতা বলল, এসব ভেবো না। জীবন যা করতে বলে মানুষকে তাই করতে হয়। মানুষ জীবনকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে কিন্তু শাসন করতে পারে না। তুমি একটু বিশ্রাম নাও। রাত্রে খেতে ইচ্ছে না করলে খেয়ো না।

রুবি বোর্ডিং থেকে সকাল পৌনে আটটায় বেরিয়ে ওরা যখন রিকশায় উঠল তখন মাধবীলতার ফোন বেজে উঠল। মাধবীলতা সাড়া দিতেই অর্ক বলল, কী ব্যাপার? ওখানে গিয়ে তোমরা কোনও খবর দাওনি। আমি যতবার ডায়াল করেছি ততবার শুনেছি আউট অব রেঞ্জ। শোনো, বাবা কোথায়? ফোনটা দাও, বাবাকে একটা জরুরি কথা বলার আছে।

কী কথা?

তুমি শুনলে রেগে যাবে। বাবাকেই বলব।

শোনো আমাদের মন খুব খারাপ। হাসপাতালে যাচ্ছি। তোমার ছোটঠাকুমা। কাল সন্ধেবেলায় চলে গেছেন। মাধবীলতা গম্ভীর গলায় বলল।

সে কী!

এখন রাখছি।

শোনো অশৌচ-টশৌচ কি মানতে হবে?

মাধবীলতা জবাব না দিয়ে লাইন কেটে দিল। অনিমেষ পাশে বসে জিজ্ঞাসা করল, কী হয়েছে? কী বলছে সে?

কিছু না। মাধবীলতা কথা বাড়াল ।

ওরা হাসপাতালে পৌঁছে দেখল দেবেশ এসে গেছে। সে একা নয়, সঙ্গে আরও দুজন বৃদ্ধ আশ্রমবাসী রয়েছেন। তারা এগিয়ে এসে অনিমেষকে বললেন, আমরা ভাবতে পারছি না। কাল রাত্রে কেউ ঘুমাতে পারিনি। উঃ। দ্বিতীয়জন বললেন, আমাদের সবাইকে মায়ায় জড়িয়ে ছিলেন।

সমস্ত ব্যবস্থা হওয়ার পরে দেবেশ জিজ্ঞাসা করল, দাহ করার জায়গার ব্যাপারে তোর কি কোনও বিশেষ সেন্টিমেন্ট আছে?

মানে? অনিমেষ তাকাল।

তোর দাদু, বাবা, বড় পিসিমাকে কি মাসকলাইবাড়ির শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল?

সম্ভবত। আমি তখন ছিলাম না। জলপাইগুড়িতে কি তখন আর কোনও শ্মশান ছিল?

না। দেবেশ মাথা নাড়ল।

তা হলে ওখানেই–। তুই জিজ্ঞাসা করছিস কেন? অনিমেষ প্রশ্ন করল।

এখন পর্যন্ত আমাদের আশ্রম থেকে কেউ চলে যাননি, আমরা ভেবেছি যদি কেউ আপত্তি না করে তা হলে চলে যাওয়া মানুষের সৎকার আশ্রমের পাশেই করব। যেখানে তিনি ছিলেন সেখানকার মাটিতেই যেন তিনি মিশে থাকেন। দেবেশ কথাগুলো বলতেই দুই বৃদ্ধ মাথা নেড়ে সমর্থন করল।

অনিমেষ বলল, এর চেয়ে ভাল ব্যবস্থা আর কী হতে পারে?

দেবেশ অনিমেষের হাত ধরল, আশ্রমের সমস্ত বয়স্ক-বয়স্কারা অপেক্ষায় রয়েছেন। মাসকলাইবাড়িতে গেলে ওঁদের পক্ষে আসা সম্ভব হত না। অনেক ধন্যবাদ তোকে।

.

একটা ম্যাটাডোরে খাঁটিয়ায় শুইয়ে ছোটমাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল জলপাইগুড়ি শহরের বাইরে, আশ্রমে। দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব নয় বলে অনিমেষ আর একজন বৃদ্ধের সঙ্গে ড্রাইভারের পাশে বসল। মাধবীলতা ছোটমার মাথার কাছে ম্যাটাডোরের ওপরেই বসে তার মাথায় হাত বোলাচ্ছিল। দেবেশ এবং আর এক বৃদ্ধ দুপাশে দাঁড়িয়ে। ম্যাটাডোর ছুটে যাচ্ছিল রাজবাড়ি ছাড়িয়ে। অনিমেষের মনে হচ্ছিল এইসব রাস্তা, রাজবাড়ির গেট, ডানদিকের দিঘি যা সে আবাল্য দেখে এসেছে, যার ছবি আমৃত্যু মনে থাকবে তা আজ চিরদিনের জন্যে পেছনে ফেলে চলে যাচ্ছে। আর কখনও জলপাইগুড়িতে ফেরার জন্যে কোনও পিছুটান রইল না। বুকে ভার জমছিল তার।

.

মহিলাদের কান্নাকাটির পর্ব শেষ হলে ছোটমাকে নিয়ে যাওয়া হল পুকুরের প্রান্তে, সেখানে ইতিমধ্যে আবাসিকরা চিতা সাজিয়ে রেখেছিলেন। দেবেশ বলল, তুই যদি এখানে নিয়ে আসার অনুমতি না দিতিস তা হলে সবাই খুব কষ্ট পেত।

মাধবীলতা দেখল সমস্ত বৃদ্ধ-বৃদ্ধা লাইন করে দাঁড়িয়ে আছেন। সবচেয়ে যিনি বৃদ্ধা তিনি হাত জোড় করে কিছু স্তোত্ৰজাতীয় লাইন সুরে গাইছেন। সে কাছে গিয়ে কান পেতে চমকে উঠল। বৃদ্ধা যে রবীন্দ্রনাথের গান গাইছেন। কোনও হরিধ্বনি ভয়ংকর শব্দে আকাশ চৌচির করছে না।

দেবেশ সাহায্য করল। মুখাগ্নি করল অনিমেষ। জীবনের প্রান্তে এসে এই প্রথম সে তার অতীতকে অগ্নিশুদ্ধ করল। দাউদাউ আগুন যখন আকাশ ছুঁতে যাচ্ছে তখন অনিমেষের চোখে পড়ল কেউ একজন এগিয়ে আসছে। সেই লাল আগুনের দেওয়াল ভেদ করে উসকো খুসকো চেহারার মানুষটাকে দেখতে পেল সে। রামজি এসে হাত জোড় করে তাকিয়ে আছে জ্বলন্ত চিতার দিকে। রামজি এখানে কী করে এল?

.
 
ছোটমায়ের শরীর চিতার পোড়া কাঠের সঙ্গে মিশে যাওয়ার পর যা করণীয় তা বয়স্কদের নির্দেশ মেনে পালন করল অনিমেষ। মহিলাদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে মাধবীলতা আজ অন্য অনিমেষকে দেখল। অস্থি বিসর্জনের পরে অনিমেষ দেবেশকে বলল, আমাকে একটা সাদা থান এনে দে।

দেবেশ অবাক হল। সে কী! তুই কাছা নিবি?

না। গলায় কাছা নেব না। কিন্তু এই পাজামা পাঞ্জাবি ছেড়ে থাকব কয়েকটা দিন। আশ্রমে না থাকলে বাজার থেকে আনিয়ে দে, মাধবীলতাকে বলছি টাকা দিতে। আমি ততক্ষণ এখানেই অপেক্ষা করছি। অনিমেষ চিতার দিকে তাকিয়ে বলল।

দেবেশ বলল, আমি ভেবেছিলাম এসব রিচ্যুয়াল মানবি না, শ্রাদ্ধ করবি না।

অনিমেষ বলল, তুই ঠিকই ভেবেছিস দেবেশ। ব্যক্তিগতভাবে আমি এগুলো কখনও মানিনি, মূল্যহীন একটা সংস্কার বলে মনে করি। যিনি চলে গেলেন তার প্রতি শ্রদ্ধা না রেখে যারা এইসব ধড়াচুড়ো পরে শ্রাদ্ধ করে, লোক খাওয়ায় তারা আত্মপ্রচার করে। তুই ঠিকই ভেবেছিস।

মাধবীলতা এবং কয়েকজন পাশে দাঁড়িয়ে কথাগুলো শুনছিল। মাধবীলতা বেশ অবাক হয়ে প্রশ্ন করল, তা হলে তুমি থান পরতে চাইছ কেন?

অনিমেষ বলল এই মহিলা সারাজীবন ঠাকুরঘরে থেকে গেছেন নিজের কষ্ট ভোলার জন্যে। দেবদেবীর পুজো করে নিজের কষ্ট ভুলতে চেয়েছিলেন। আমরা যখন ওঁর কাছে এসে কিছুদিন ছিলাম তখন তো দেখেছ সারাদিনের বেশিরভাগ সময় ওঁর ঠাকুরঘরেই কেটে যেত। জীবনভর তিনি তাঁর মতো করে বেঁচেছিলেন। আমি একমত না হলেও যখন মুখাগ্নি করেছি তখন তাকে শ্রদ্ধা জানাতে এই কয়েকদিন তার শান্তির জন্যে নিজের মতামত সরিয়ে রাখছি।

মাধবীলতা নিচু গলায় বলল, আমি আজও ঠিক বুঝতে পারলাম না।

অনিমেষকে একটা মোড়া এনে দেওয়া হল পুকুরের ধারে বসার জন্যে। ভিড়টা সরে গেল আশ্রমের দিকে। অনিমেষ মাধবীলতাকে বলল, ওই যে ছেলেটা দাঁড়িয়ে আছে, ওকে ডেকে দাও।

মাধবীলতা দেখতে পেল, জিজ্ঞাসা করল, ও কে?

ওর নাম রামজি। তোমার ছেলে কলকাতার বাড়িতে থাকতে দিয়েছিল।

আশ্চর্য! ও এখানে কী করে এল? মাধবীলতা বিরক্ত হল।

ওর সঙ্গে কথা না বললে জানা যাবে না। অনিমেষ বলল।

মাধবীলতা রামজির কাছে গিয়ে কথা বলে আর পঁড়াল না। দূরে বৃদ্ধারা যেখানে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন, সেখানে চলে গেল।

কাছে এসে রামজি হাতজোড় করল, আমাকে মাপ করুন।

আমি এখানে এসেছি তা কি অর্কর কাছে জেনেছ? অনিমেষ তাকাল।

হ্যাঁ চাচা। বিপদে পড়ে ওঁকে ফোন করেছিলাম। ওর কাছে শুনলাম। আমার মোবাইলের টাকা শেষ হয়ে গেছে। তাই ওর কাছ থেকে আপনার নাম্বার নিয়ে ফোন করতে পারিনি।

তুমি এখানে কোথায় উঠেছ?
 
আপনি যে চা-বাগানে যেতে বলেছিলেন সেখানে গিয়ে শুনলাম যাঁর কাছে আপনি পাঠিয়েছিলেন তিনি দুবছর আগে মারা গিয়েছেন। ওঁর বউ ছেলে আমাকে দুদিন থাকতে দিয়েছিল। কিন্তু ওরা খুব গরিব মানুষ। ওখানে কাজ পেতে গেলে অন্তত এক মাস থাকতে হত যা ওদের ওপর অত্যাচার হয়ে যেত। সঙ্গে যা টাকা ছিল তা ওদের দেওয়ার পরে আমার হাতে আর কিছু নেই। রামজি বলল।

ওরা কি টাকা চেয়েছিল?

না চাচা। অবস্থা দেখে না দিয়ে পারিনি।

অনিমেষ মাথা নাড়ল, বহু বছর যোগাযোগ নেই। সব পালটে গেল। এখানে কীভাবে এলে?

হাসপাতালে গিয়েছিলাম। ওখানেই খবর পেলাম, আশ্রমের কথা শুনলাম। ওখান থেকে হেঁটেই চলে এসেছি। রামজি বলল।

এখন কী করবে?

চাচা, আপনি যদি আমাকে কিছু টাকা দেন তা হলে দেশে চলে যেত পারি। আমি আর পারছি না। রামজি শ্বাস ফেলল।

কিন্তু তুমি বলেছিল সেখানে পুলিশ তোমাকে খুঁজছে।

হ্যাঁ। ফাঁসি তো দেবে না, দু-তিন বছরের জেল হতে পারে। জেলেই যদি থাকতে হয় দেশের জেলেই থাকব। আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি টাকাটা গিয়েই শোধ করে দেব।

অনিমেষ হাসল, তা হলে তোমার বিপ্লব শেষ হয়ে গেল!

রামজি বলল, চাচা, এই বাংলায় কখনও বিপ্লব হবে না।

বড় দেরি হয়নি কথাটা বুঝতে। আমরা অনেক হারিয়ে বুঝতে পেরেছিলাম।

আপনাদের সময়ে কী ছিল জানি না। এখন মানুষের মন থেকে জোর চলে যাচ্ছে। এই সরকার আসার পর থেকে আমাদের অনেকেই লোভী হয়ে উঠেছে। আপনাকে আমি এই সময় নিশ্চয়ই বিরক্ত করছি কিন্তু থেমে গেল রামজি।

অনিমেষ মুখ তুলে দেখতে চাইল মাধবীলতা কোথায়! না দেখতে পেয়ে উঠে দাঁড়াতেই একজন প্রৌঢ় তাড়াতাড়ি চলে এলেন, কোনও দরকার আছে?

এই ছেলেটি আমার পরিচিত। মনে হচ্ছে ও অভুক্ত। যদি কিছু খাবার ওকে দেওয়া সম্ভব হয়– অনিমেষ নিচু গলায় বলল।

নিশ্চয়ই, বড়মাকে বললে সব ব্যবস্থা করে দেবেন। আসুন ভাই। রামজিকে ডাকলেন প্রৌঢ়। রামজি হেসে ফেলল অনিমেষের দিকে তাকিয়ে, আপনি কী করে বুঝলেন?

ওঁর সঙ্গে যাও। অনিমেষ মুখ ঘুরিয়ে নিল।

.

কিন্তু মাধবীলতা আপত্তি জানাল। বলল, চিনি না, জানি না, একটা উটকো ছেলেকে তোমার ছেলে বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছিল বলে আমরা অসন্তুষ্ট হয়েছিলাম আর তুমি সেই ছেলেকে অতগুলো টাকা দিতে বলছ?

অনিমেষ স্নান সেরে শরীরে থান জড়িয়ে বসে ছিল। দেবেশের অনুরোধে আজ সে হবিষ্যি না করে নিরামিষ খেয়েছে। মাধবীলতার দিকে তাকিয়ে সে বলল, বেচারা খুব বিপদে পড়েছে। ওকে সাহায্য না করলে–।

পৃথিবীর প্রচুর মানুষ এই মুহূর্তে বিপদে রয়েছে।

ঠিকই। কিন্তু ওই ছেলেটা তো দিব্যি নিজের বাড়িতে থেকে কাজকর্ম করতে পারত। তা না করে এতদূরে এসে বিপ্লব করার স্বপ্ন দেখল। নিজের ভবিষ্যৎ বা বর্তমানের কথা একটুও ভাবল না। অনিমেষ বলল, যে কেউ বলবে এটা হঠকারিতা। ইচ্ছে করে নিজের বিপদ ডেকে আনা। যা একসময় আমরা করতে চেয়েছিলাম তা এরা করছে। ইতিহাস থেকে বিন্দুমাত্র শিক্ষা নেয়নি। এই ছেলে যদি আবার নিজের জায়গায় ফিরে যেতে চায় তা হলে কিছু টাকা দিয়ে সাহায্য করাই যেতে পারে।

আমাদের কাছে কেন? মুখ্যমন্ত্রীর কাছে যাক। মাধবীলতা বিরক্ত হচ্ছিল।

মানে? অনিমেষ অবাক হল।

কাগজে দেখলাম মুখ্যমন্ত্রী মাওবাদীদের কাছে মূলস্রোতে ফিরে আসতে আবেদন করেছেন। ওরা আত্মসমর্পণ করলে তিনি তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দেবেন। এই রামজিকে বলো মুখ্যমন্ত্রীর কাছে গিয়ে আত্মসমর্পণ করতে। মাধবীলতা বলল।

সে কী! মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে উনি তো বলেছিলেন এই রাজ্যে কোনও মাওবাদী নেই, যা গোলমাল, খুনখারাপি হচ্ছে তা সিপিএমের হার্মাদবাহিনী করে মাওবাদীদের নামে চালিয়ে দিচ্ছে। সেই তিনি কাদের পুনর্বাসন দিচ্ছেন? অনিমেষ জিজ্ঞাসা করল।

তোমরা কারও ভাল কাজকেও স্বাভাবিক মনে নিতে পারো না? সবসময় ছিদ্র খোঁজো। বিরোধী নেতা হিসেবে যা বলা যায় ক্ষমতায় থাকলে তা বলা যুক্তিসংগত নয়। তুমি ওই রামজিকে বলো থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করতে। মাধবীলতা চলে গেল।

অনিমেষ ফাঁপরে পড়ল। তার নিজের কাছে শচারেক টাকা আছে। যা কিছু খরচ তা মাধবীলতাই করে বলে তার টাকা সঙ্গে রাখার দরকার হয় না। এখন মনে হল, জলপাইগুড়ি থেকে হাজারিবাগ যাওয়ার ট্রেনের টিকিট চারশো টাকার মধ্যে হয়তো হয়ে যাবে। সাধারণ ক্লাসে এর বেশি বোধহয় লাগবে না। ঘরে গিয়ে টাকাটা বের করে সে রামজির খোঁজে বের হল।
 
ক্র্যাচ নিয়ে কিছুটা হাঁটতেই দেবেশকে দেখতে পেল। দেবেশের পাশে রামজি। কাছে এসে দেবেশ বলল, এই ছেলেটি তত বেশ কাজের। আমাদের একটা পাম্প মাস দুয়েক হল খারাপ হয়ে পড়ে ছিল। জলপাইগুড়ি থেকে মেকানিক আনিয়ে সারাতে প্রায় সাত-আটশো খরচ হত। তারপর সে যদি বলত পার্টস কিনতে হবে তা হলে তো হয়েই যেত। তোমার রামজি আধঘণ্টার চেষ্টায় পাম্পটাকে চালু করে দিয়েছে। অনেক ঝামেলা থেকে বেঁচে গেলাম।

অনিমেষ রামজির দিকে তাকাল। বাঃ, খুব ভাল কথা।

দেবেশ বলল, তার ওপর ও বলছে গাড়ি চালাতে জানে।

গাড়ি? আশ্রমে গাড়ি আছে নাকি? অনিমেষ জিজ্ঞাসা করল।

গাড়ি নেই। তবে জলপাইগুড়ির এক ব্যবসায়ী তার একটা পুরনো ম্যাটাডর আশ্রমকে দিতে চেয়েছিলেন, আমি নিইনি। পুরনো গাড়ি, রোজ বিগড়াবে, সারাইয়ের খরচ, ড্রাইভারের মাইনে দেব কোত্থেকে? তা রামজি বলছে ছোটখাটো খারাপ হলে ও সারাতে পারবে। আর থাকা খাওয়া ছাড়া মাসে এক হাজার টাকা পেলে ও আশ্রমেই থেকে যেতে পারে। লোভনীয় প্রস্তাব। তুই কী বলিস?

অনিমেষ রামজির দিকে তাকাল। তারপর জিজ্ঞাসা করল, তুমি দেশে ফিরে যাবে না?

রামজি হাতজোড় করল, আশ্রমের জন্যে কাজ করার সুযোগ পেলে থেকে যেতে রাজি আছি।

অনিমেষের মনে হল দেবেশের প্রস্তাব পেয়ে ছেলেটা আর আত্মসমর্পণ করতে ইচ্ছুক নয়। কিন্তু এটা ভুল হচ্ছে। হাজারিবাগে গিয়ে আত্মসমর্পণ করলে দু-তিন বছর ওকে জেলে কাটাতে হতে পারে, কিন্তু তারপর তো সারাজীবনের জন্যে মুক্ত। কিন্তু এখানে থাকলে সবসময় ভয়ে ভয়ে থাকতে হবে। উত্তরবাংলার এই নির্জন জায়গায় একটি অবাঙালি ছেলে আশ্রমের গাড়ি চালালে কারও না কারও মনে সন্দেহ আসতেই পারে। সেটা পুলিশের কানে গেলে ও বিপদে পড়বে। অনিমেষ বলল, কিন্তু রামজি, আমাকে তুমি বলেছিলে দেশে ফিরে যেতে চাও, আমার মনে হয় তাই যাওয়া ভাল।

দেবেশ বুঝতে না পেরে বলল, আরে ভাই কেন ওকে দেশে যেতে বলছিস! ওখানে তো কাজকর্ম কিছু করে না। ও নিজে থেকেই এখানে থাকতে চাইছে যখন তখন থাক না। তোর পরিচিত লোক, তুই না বললে আমি জোর করতে পারি না।

অনিমেষ হাসল, বেশ। তোর যখন ইচ্ছে হচ্ছে তখন আমি বাধা দেব না।

.

আনন্দের উচ্ছ্বাস বাঁধ ভাঙল। ক্ষমতা দখল করেছিলেন কোটি মানুষের ভালবাসা পেয়ে একজন মহিলা। নির্বাচনের আগে তাঁর সংগঠন ছিল সীমিত। কিন্তু নির্বাচনের ফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেল প্রতিটি কেন্দ্রে মানুষ ভোট দিয়েছেন তার মুখের দিকে তাকিয়ে। পরিহাস করে বলা হল, তার আশীর্বাদ পেলে একজন বাবা এবং কালা মানুষও নির্বাচনে জিতে যেত এবার। কুরুক্ষেত্রের আগে শ্রীকৃষ্ণ যে দলে যোগ দিয়েছিলেন সেই দলই জিতে যাবে বলে ব্যাসদেব ইঙ্গিতে জানিয়েছিলেন। দুর্যোধনের ঔদ্ধত্য, যুধিষ্ঠিরের নম্র আচরণই ভাগ্য নির্ধারণ করে দিয়েছিল। মানুষ এই নির্বাচনে নেত্রীকে শ্রীকৃষ্ণের ভূমিকায় দেখতে চেয়েছিল এবং দেখেছিল। নির্বাচনের পরে ওই সীমিত সংগঠিত দল আচমকা ফুলে ফেঁপে বিশাল হয়ে গেল। যারা কখনওই তৃণমূলের ছায়া মাড়ায়নি তারা ক্ষমতার স্বাদ পেতে বেনোজলের মতো ঢুকে গেল সংগঠনের নিচুতলায়।
 
নেত্রীর স্লোগান ছিল, ভয়ংকর অত্যাচারী সিপিএমকে সরিয়ে পরিবর্তন আনতে হবে। পরিবর্তন এনেও নেত্রী সেই বক্তব্যে অটল থাকলেন। তার মুখে ক্রমাগত সিপিএম বিরোধী কথা শুনে উদ্দীপ্ত হলেন দলের প্রথম সারির নেতারা। তারা সর্বত্র সিপিএমের ভূত দেখতে লাগলেন। সেই উদ্দীপনা ছড়িয়ে পড়ল নিচুতলায়। সদ্য দলে যোগ দেওয়া তৃণমূল কর্মীরা গ্রামে গ্রামে মফস্সলে সিপিএমের কার্যালয় ভাঙতে লাগল। মানুষ ভয় পেল। নেত্রী বলেছিলেন গণতন্ত্রে তিনি বিশ্বাস করেন, অথচ দলতন্ত্র প্রবল হচ্ছে। নেত্রী তা বন্ধ করতে মুখ খুলছেন না। উলটে যা কিছু সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে তা সিপিএমের তৈরি বলে দায় এড়িয়ে যাচ্ছেন। তিনি মুখ্যমন্ত্রী না বিরোধী নেত্রী সেটা সাধারণ মানুষের কাছে মাঝে মাঝেই বিভ্রম তৈরি করছিল। কেউ সামান্য সমালোচনা করলে মুখ্যমন্ত্রী যদি বিরক্ত হয়ে পড়েন, তার পারিষদরা উন্মাদ হয়ে যাচ্ছে। ফলে মানুষ মুখ খুলতে ভয় পাচ্ছে। গ্রামে গঞ্জে মানুষ দেখছে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে বাধ্য হওয়ার আগে সিপিএমের হার্মাদ বাহিনী যে আচরণ করত ঠিক তার অনুকরণ করছে তৃণমূলের নিচু তলার কর্মীরা। রাতারাতি স্কুলপরিচালন সমিতি পালটে যাচ্ছে। তার সভাপতি হয়ে যিনি আসছেন তার বিদ্যে স্কুলের চৌহদ্দিতেই শেষ হয়েছে। কিন্তু মানুষ কথা বলতে ভয় পাচ্ছে।

কারণ কেউ প্রতিবাদ করলে সে কারও সমর্থন পাবে না। পুলিশ তাদের আচরণে পরিষ্কার বুঝিয়ে দিয়েছে কোনও তৃণমূল নেতা-নেত্রী কর্মীর বিরুদ্ধে তারা অ্যাকশন নেবে না, বামফ্রন্টের আমলে তারা যে শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছিল তাতে যদি মাস্টার্স ডিগ্রি পেয়ে থাকে এখন তারা নামের আগে ডক্টর লিখতে চাইছে। উলটে তৃণমূল কর্মীরা ভাঙচুর করলে তারা রিপোর্ট দিচ্ছে অপরাধীদের কেউ তৃণমূলের সমর্থক ছিল না। তবু পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখা মানুষ ভাবছিল, বন্যার পর অনেক আগাছা ভেসে আসে। জল যখন যায় তখন পলি পড়ে। তারপর সেই মাটিতেই নতুন করে শস্য তৈরি হয়। মুখ্যমন্ত্রী নিশ্চয়ই সবকিছু সামলে পরিবর্তিত শাসন ব্যবস্থাকে সুদৃঢ় করবেন।

কুন্তীর ফোন এল, চলে আসুন।

অর্ক অবাক হল, কোথায়?

সকাল ছটা পঞ্চান্নর ইস্পাত এক্সপ্রেস ধরবেন হাওড়া স্টেশন থেকে। তিন সাড়ে তিন ঘণ্টা পরে নামবেন গালুডি স্টেশনে। ওখান থেকে শেয়ার অটোতে উঠে বলবেন ভাল পাহাড়ে যাবেন। বান্দোয়ানের আগেই ভাল পাহাড়। কুন্তী বলল।

আপনি এখন ওখানে?

হ্যাঁ। দারুণ জায়গা। কমলবাবুর এই স্কুলের বাইরে কোনও মানুষ নেই। শুধু গাছ আর গাছ। দূরে দূরে পাহাড়ের বেড়া। বাতাসে এত অক্সিজেন আমি আগে কখনও পাইনি। আমার মন খুব ভাল হয়ে গেছে। কুন্তী বলল।

আপনি কি এখন ওখানেই থেকে যাবেন? অর্ক জিজ্ঞাসা করল।

না। কমলবাবু চাইছেন এইসব জেনে কলকাতায় ফিরে গিয়ে আমি একটু ভেবে দেখি। আর আমার সঙ্গ কেমন লাগল তাও এঁরা ভাববেন। দুই ভাবনা মিলে গেলে সামনের মাস থেকে আমি পাকাপাকি চলে আসব। এখানে কমলবাবুর সঙ্গে যারা আছেন, সব ছেড়ে মহা আনন্দে বাচ্চাদের মানুষ করছেন সেই জয়তী, দিলীপবাবু আর প্রদীপবাবুরা কিন্তু আমাকে পছন্দ করেছেন। আমি তো আরও দিন তিনেক এখানে আছি, চলে আসুন না। কুন্তী অনুরোধ করল।

দেখি, গেলে আপনাকে জানাব। অর্ক কথাগুলো বলতেই লাইন কেটে গেল। যাওয়ার ইচ্ছে হচ্ছিল খুব, কাল রবিবার। সঙ্গে আরও দুদিন ছুটি ম্যানেজ করতে পারলে ঘুরে আসা সম্ভব। কিন্তু কমল চক্রবর্তীরা তাকে কীভাবে নেবে? কুন্তী কি তাকে বন্ধু বলে পরিচয় করাবে। তা ছাড়া সেখানে থাকার ব্যবস্থা কীরকম তা জানা নেই। অর্কর মনে হল এখন গিয়ে জটিলতা তৈরি করলে হয়তো কুন্তী সম্পর্কে ওরা সুবিচার করতে পারবে না। তার চেয়ে সামনের মাস থেকে কুন্তী যদি ওখানে গিয়ে থাকে তা হলে তখন যাওয়া যেতে পারে।
 
কিন্তু অর্কর খুব ভাল লাগল। তার বয়স চল্লিশ পেরিয়ে গিয়েছে। এই বয়সে পৌঁছে কুন্তীর সঙ্গে আলাপ হওয়ার পরে ধীরে ধীরে যে তার মনের বয়স কমতে শুরু করেছে তা টের পাচ্ছিল। আজ কুন্তীর ফোন পাওয়ার পর মনে হল তার সামনে ভালভাবে বেঁচে থাকার জন্যে অনেক সময় পড়ে আছে।

মাধবীলতাকে ফোন করল অর্ক, ফোন বন্ধ।

কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ শেষ করে যাওয়ার পরে কৃষ্ণ দ্বারকার রাজা হিসেবে তাঁর যাদব প্রজাদের নিয়ে শান্তিতে থাকবেন বলে ভেবেছিলেন। কিন্তু প্রজাদের চরিত্র ও স্বভাব যে বদলে যাচ্ছে তা অনুধাবন করতে পারেননি। এই সময় নারদ মুনি, বিশ্বামিত্র এবং কন্বমুনি দ্বারকায় এলে যাদবদের কয়েকজন কৃষ্ণের ছেলে শাম্বকে মহিলা সাজিয়ে মুনিদের কাছে নিয়ে গিয়ে বলেছিল, এই মহিলার যে সন্তান হবে সে ছেলে না মেয়ে তা বলুন। লোকগুলোর এই ইতর রসিকতা বুঝতে পেরে তারা অভিশাপ দেন শাম্ব একটি লোহার মুষল প্রসব করবে যা যদুবংশকে ধ্বংস করবে। ভয় পেয়ে ওই যাদবরা লোহার মুষলকে ভেঙে চুরমার করে সমুদ্রের জলে ফেলে দেন। মুনিদের শাপে পুরুষ শাম্ব পরের দিনই মুষলটাকে প্রসব করে।

কৃষ্ণ দ্বারকায় মদ্যপান নিষেধ করেছিলেন। এতে অসন্তুষ্ট হয় কিছু যাদব। চারদিকে অনেক অমঙ্গলের চিহ্ন দেখে কৃষ্ণ সমুদ্রের তীরে প্রভাসতীর্থে সবাইকে পুজোর জন্যে যেতে বলেন, যাদবদের অনুরোধে মাত্র একদিনের জন্যে সুরাপানের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা ছিল তা তুলে নেন, সেইদিন প্রচুর সুরাপান করে যাদবরা মত্ত হয়ে কৃষ্ণের রথের সারথি সাত্যকি ও পুত্র প্রদ্যুম্নকে পানপাত্রের আঘাতে হত্যা করে। কৃষ্ণ সেই হত্যাদৃশ্য দেখে ক্রুদ্ধ হন। তিনি একমুঠো তৃণ তুলে নিতেই সেই তৃণ লোহার মুষলে রূপান্তরিত হয়। সেই লোহার মুষলে কৃষ্ণ সুরামত্ত যাদবদের হত্যা করলেন। কিন্তু ক্রমশ সব তৃণ লোহার মুষলের চেহারা নিতেই যাদবরা তাই দিয়ে পরস্পরকে আঘাত করতে লাগল। ক্রমশ যদুবংশ ধ্বংস হয়ে গেল। কৃষ্ণ বনবাসী হওয়ার সংকল্প নিলেন। তাঁর মন ভেঙে গিয়েছিল। এই সময় গাছের নীচে বসে থাকা কৃষ্ণকে হরিণ ভেবে একজন ব্যাধ তির ছুড়লে তা কৃষ্ণের পায়ে বিদ্ধ হয়। যাঁর হাতে সুদর্শন চক্র থাকত, যিনি ঈশ্বরের বিকল্প হিসেবে মানুষের শ্রদ্ধা পেয়েছেন, সেই অসীম ক্ষমতার অধিকারী কৃষ্ণ এমন শক্তিহীন হয়ে গেলেন যে, তিরের আঘাতে যে ক্ষত তৈরি হয়েছিল তা সারাতে পারলেন না। তার মৃত্যু হল। খবর পেয়ে অর্জুন দ্বারকায় এসে কৃষ্ণের সৎকার করে মহিলাদের হস্তিনাপুরে নিয়ে যান। দ্বারকা সমুদ্রগর্ভে নিমজ্জিত হল।

অতি জনপ্রিয় কৃষ্ণ ওই মৌষলপর্বে দ্বারকাকে রক্ষা করতে পারেননি। এই মৌষলকাল পশ্চিমবঙ্গে আসুক তা সাধারণ মানুষ চাইছেন না।

.
 
দুপুরে কুন্তী ফোন করেছিল। সে কলকাতায় ফিরে এসেছে। সন্ধেবেলায় অর্ক কুন্তীর বাড়িতে গেল। ওপর থেকে নীচে নেমে দরজা খুলল কুন্তী। হেসে বলল, আসুন। ওপরে উঠে আগের জায়গায় বসল ওরা। অর্ক চারপাশে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, মা-দিদাদের দেখছি না?

মা দিদাকে তার আর এক মেয়ের বাড়িতে পৌঁছোতে গিয়েছেন। দিদার ভাগ্য খুব ভাল। মেয়েরা পালা করে মাকে নিজেদের কাছে রাখে। ফলে দিদার ফ্ল্যাট তালাবন্দি হয়ে পড়ে থাকে বেশিরভাগ সময়ে। কুন্তী আবার হাসল, চা খাবেন?

ওটা করে দেওয়ার মতো কেউ আছে?

না। আমাকেই করতে হবে। কুন্তী উঠতে যাচ্ছিল।

বসুন। এখনই চায়ের দরকার নেই। অর্ক বলল, আমরা বাইরে মিট করতে পারতাম।

তা হলে এই বাড়িতে তালাচাবি দিয়ে যেতে হত আমাকে। মা জানে যে আপনি আসবেন। খালি বাড়িতে আমার সঙ্গে কথা বলতে আপনার কি সমস্যা হচ্ছে?

আমি বলতে চাইছি, চা বানাতে গেলে তো আপনি কিছুটা সময় এখানে থাকবেন না। সেই সময়টুকু কোনও রেস্টুরেন্টে বসলে নষ্ট হত না। অর্ক বলল।

ও। তাই বলুন! কুন্তী হাসল।

এবার বলুন, কী ঠিক করেছেন?

জায়গাটাকে আমার খুব ভাল লেগেছে। তবে ঠান্ডার সময় প্রচণ্ড ঠান্ডা। আবার গরমের সময় অসহ্য গরম। কিন্তু কমলবাবুরা এত গাছ ওখানে আনিয়েছেন যে আবহাওয়াটা ম্যানেজ করা যাবে। তা ছাড়া আমার খুব ভাল লেগেছে ওখানকার মানুষদের। এই কদিনে আমাকে আপন করে নিয়েছেন। আর বাচ্চাগুলো এত মিষ্টি, ওই স্কুল না তৈরি হলে ওরা কোথায় ভেসে যেত! কুন্তী মাথা নাড়ল।

কেন?

জায়গাটা বান্দোয়ান থেকে দশ কিলোমিটার দূরে। কাছাকাছি গ্রামগুলো জঙ্গলের মধ্যে, পাহাড়ের গায়ে। সেখানে প্রচুর ধরপাকড় হয়েছিল কারণ মাওবাদীদের মুক্ত অঞ্চল ছিল এলাকাটা। অনেক খুন হয়েছে। মাওবাদীরা করেছে, পুলিশও। ওদের শিশুরা স্কুলের মুখ দেখত না। বাবা ঠাকুরদাদের মতো অক্ষর না চিনে বড় হয়ে অভাবের সঙ্গে লড়াই করত। কমলবাবু স্কুল করার পর সেই তিন-চার বছরের শিশুরা অক্ষর চিনল, ভাল করে কথা বলতে শিখল, পড়াশোনা আরম্ভ করল। এর জন্যে ওদের পেট ভরে ভাত খেতে দিতে হয়েছে যা গ্রামে প্রায় দুর্লভ ছিল। ভাবতে পারেন, শুধু ভাতের জন্যে বাচ্চাগুলো পড়তে পড়তে একের পর এক ক্লাসে উঠছে? কুন্তী তৃপ্ত গলায় কথাগুলো বলল।

এদের কারও বাবা-কাকা মাওবাদী?

এককালে থাকলেও এখন ওই এলাকায় মাওবাদী কার্যকলাপ নেই।

তবু তো একটা আতঙ্ক থাকেই।

না। নিজের বাচ্চার ভবিষ্যতের কথা ভেবে এই স্কুলটাকে স্পর্শ করেনি ওরা। আর বোধহয় এই কারণে পুলিশের সন্দেহের তালিকায় এই স্কুল ছিল। কুন্তী বলল।

এখন কী?

এখন তো ওই অঞ্চলে মাওবাদীদের অস্তিত্ব আগের মতো শোনা যায় না। তার ফলে পুলিশও তেমন আক্রমণাত্মক নয়। কুন্তী বলল।

তা হলে আপনাকে ওদের সিদ্ধান্তের জন্যে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। অর্ক বলল।

না। ওঁরা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। চলে আসার সময় কমলবাবু বলেছেন, আমি ওঁদের সঙ্গে বাচ্চাদের জন্যে কাজ করলে সবাই খুশি হবেন। কুন্তীর ঠোঁটে হাসি।

ও আচ্ছা! তা হলে কবে যাচ্ছেন?
 

Users who are viewing this thread

Back
Top