What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected কালবেলা- সমরেশ মজুমদার (1 Viewer)

অনিমেষ অস্বস্তির চোখে তাকাল, এসব প্রশ্ন করবেন না। এই সময় আমি কোন আত্মীয়স্বজনের বোঝা হয়ে থাকতে চাই না। তাছাড়া–।

ঠিক আছে। ভদ্রমহিলা ওকে থামিয়ে দিলেন, আমি তোমার কিছু জানতে চাই না। তুমি দীপকের সঙ্গে চল। আমি জানবো আমি দুই ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফিরলাম। তোমরা দুজনে মিলে আমার এক ছেলে হলে।

অনিমেষ ভাববার সময় পেল না। ভদ্রমহিলার মধ্যে এমন তৎপরতা কাজ করছিল যে সে আর আপত্তি তুলতে পারল না। কোন পরিচিত বাড়িতে গিয়ে তাদের দয়ার ওপর নির্ভর করার চাইতে এটা অনেক বেশি শ্রেয় বলে মনে হল ওর। সে নিজে যাচ্ছে না, তাকে উনি আগ্রহভরে নিয়ে যাচ্ছেন। নিজের ছেলের সঙ্গে একই মমতায় যতক্ষণ উনি তাকে দেখবেন ততক্ষণ কোন অস্বস্তির কারণ হবে না। তাছাড়া এই কটা দিন চলে গেলেই সে আশ্রমে যেতে পারবে ততদিন তো মাথার ওপর একটা ছাদ দরকার।

ব্যবস্থা ভদ্রমহিলাই করলেন। দুজন সিপাই ওকে ধরে নিয়ে এল বাইরে। সেখানে একটা গাড়ি অপেক্ষা করছিল। খুব পুরনো আমলের বৃদ্ধ গাড়ি। তার ড্রাইভারও গাড়ির চেহারার সঙ্গে বেশ মিলে যায়! অনিমেষের সঙ্গে সঙ্গে দীপক হেঁটে এল। ভদ্রমহিলা এক হাতে অনিমেষকে অন্য হাতে দীপককে ধরে রেখেছেন। গাড়িতে ওরা ওকে তুলে দিয়ে ফিরে গেল। ভদ্রমহিলা দিপককে উঠতে বললে সে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকল। ভদ্রমহিলা আবার বললেন, খোকা ওঠ, গাড়িটা চিনতে পারছিস না?

দীপক কথাগুলো শুনলো বলে মনেই হল না। তিন-চারবার ডেকে ব্যর্থ হয়ে ভদ্রমহিলা বললেন, কি করি বল তো বাবা!

সিটের ওপর হেলান দিয়ে বসতে পেরেছিল অনিমেষ। এবার ঝুঁকে হাত বাড়িয়ে সে দীপককে ধরল, এই, গাড়িতে উঠে এসো। দুবার ডাকতে দীপকের দৃষ্টি এদিকে ফিরল। অনিমেষ এক হাতে ওকে টানতেই ছেলেটি গাড়ির ভেতরে ঝুঁকে পড়ল। তারপর কোন রকম দ্বিরুক্তি না করে উঠে বসল। খুব খুশি হলেন ভদ্রমহিলা, দ্যাখো তো, তোমার কথা কেমন শোনে ও।

ছেলেটি সোজা হয়ে সিটে বসছিল, তার একপাশে অনিমেষ, অন্যদিকে ভদ্রমহিলা। অনিমেষের সঙ্গে জিনিসপত্র বলতে কিছুই ছিল না। জেল থেকে বের হবার সময় সেই ভদ্রমহিলার আনুকূল্যে একটু ভদ্রস্থ হয়ে বেরোতে পেরেছে এই যা। কিন্তু গাড়ির সিটে বসে ওর নিজেকে খুব কুঁজো মনে হচ্ছিল। সে তুলনায় দীপক অনেক খাড়া। জেলের সীমা ছাড়িয়ে গাড়িটা বড় রাস্তায় পড়লে অনিমেষ অনেক পাখির ডাক শুনতে পেল। বেশ নির্জন রাস্তা কলকাতা বলেই মনে হয় না। একেই কি কপাল বলে? অনিমেষ নিজের কথা ভাবছিল। একদিন পর জেল থেকে বেরিয়ে যাদের সঙ্গে সে যাচ্ছে তাদের কাছে যাওয়ার কোন কথাই ছিল না। তবু যেতে হচ্ছে। যাচ্ছে কিছুটা পালিয়ে যাতে অন্য সবাই রক্ষা পায়। বিবেক বা চক্ষুলজ্জার সুযোগ নিতে সে কিছুতেই চায় না। তার চেয়ে পথের আলাপ পথেই রেখে যাওয়ার মতন এই ভদ্রমহিলার বাড়িতে কটা দিন চোখ বুজে কাটিয়ে দেওয়া বরং ঢের ভাল। রেসকোর্সের পাশ দিয়ে গাড়ি সোজা এগিয়ে এল রবীন্দ্রসদনের সামনে। দূর থেকে রঙিন বাড়িটার দিকে তাকিয়ে অনিমেষ দীর্ঘনিশ্বাস ফেলল, কলকাতা একই রকম রয়ে গেছে। কোন বড় শিল্পী অনুষ্ঠান হবে নিশ্চয়ই না হলে এই সকালবেলায় এতবড় লাইন পড়ে।

ল্যান্সডাউন রোডে যে বাড়িটায় ওরা ঢুকল সেটাই যে দীপকদের বাড়ি তা না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। গেট পেরিয়ে বিরাট লন, বাগান এবং তার পাশে ধবধবে সাদা একটা দোতলা বাড়ি। নুড়ি পাথরের রাস্তা ঘুরে গাড়িটা এসে দরজায় দাঁড়াতেই দুতিনজন ঝি-চাকর ছুটে এল। দীপকের মা নামলেন গাড়ি থেকে। অনিমেষ লক্ষ্য করল এর মধ্যেই ওঁর ভাব-ভঙ্গিতে একটা দৃঢ় মর্যাদাবোধ যোগ হয়েছে। গম্ভীর গলায় বললেন, একটা ইজিচেয়ার নিয়ে আয় আগে।

চাকর মুখের দিকে চেয়ে হাঁ করে দাঁড়িয়েছিল কথাটা শুনে, উনি এবার ধমক দিলেন। ইজিচেয়ার আসতেই গলা নরম করে উনি বললেন, অনিমেষ তুমি আগে নামো। ওরা তোমাকে ধরুক।
 
কর্মচারীরা এতক্ষণে বুঝে নিয়েছে ব্যাপারটা। খুব সন্তর্পণে এরা অনিমেষকে নামিয়ে ইজিচেয়ারে শোওালো। কিন্তু মুশকিল হল দীপককে নিয়ে। সে তেমনি খাড়া হয়ে বসেই আছে। শত ডাকেও তার সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। অনিমেষ তিন-চারবার ডাকলেও সে তাকাল না। এবার ভদ্রমহিলা ঝুঁকে পড়ে ওর হাতে ধরলেন, নেমে আয় খোকা। নিজের বাড়িতে এসেছিস তুই, আয় বাবা। দীপকের কোন প্রতিক্রিয়া হল না কথাগুলোয়। ভদ্রমহিলা একটু ভেবে নিয়ে চাকরদের বললেন, ওকে জোর করে নামা গাড়ি থেকে।

এবার একটা কাঠের পুতুলের মত নেমে এল দীপক ওদের হাতে। নেমে এসে যেন কিছুটা সহজ হল কারণ অনিমেষের ইজিচেয়ারের পাশ ঘেঁষে সে দাঁড়াল। ইজিচেয়ার নিয়ে চাকররা চলতে আরম্ভ করলে সেও সঙ্গ ধরল। দীপকের মা বললেন, দেখলে অনিমেষ, ও তোমার কেমন বশ মেনেছে।

অনিমেষ বুকে ভার বোধ করল। মহিলা প্রতিমূহর্তে তাকে জড়াবার চেষ্টা করছেন। এটা সে চায় না কিন্তু এখন সেকথা বলার সময় নয়।

সুন্দর সাজানো গোছানো বাড়ি। দোতলায় ওঠে যে ঘরটায় ইজিচেয়ার নামাল সেখানে দুটো সুন্দর খাট, চেয়ার এবং ঘরের দেওয়ালে কালীঘাটের পটের দুটো ছবি টাঙানো। ঝি চাকরদের কাজ করতে যেতে বলে দীপককে ওর মা প্রায় জোর করেই একটা চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে বললেন, অনিমেষ তুমি একটু জিরিয়ে নাও, তারপর হাতমুখ ধুয়ে নেবে।

অনিমেষ বলল, আপনি ব্যস্ত হচ্ছেন কেন?

বাঃ, ব্যস্ত হবে না। অ্যাদ্দিন পরে ছেলে এল আর আমি ব্যস্ত হবো না। কথা শেষ করতেই ডুকরে উঠলেন ভদ্রমহিলা। এবং শেষ পর্যন্ত কান্নাটা আর চেপে রাখতে পারলেন না তিনি। অনিমেষের কিছু করার নেই। সে দীপকের দিকে তাকাল। মায়ের কান্না দীপকের চোখে কোন ছোঁয়া ফেলছে না। স্থির চোখে সে সামনে তাকিয়ে আছে। এই সময় দরজায় থপথপ শব্দ হল। অনিমেষ ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল অত্যন্ত বৃদ্ধা এক মহিলা খুব ধীরে ধীরে ঘরে ঢুকলেন। তারপর এগিয়ে এসে দীপকের গায়ে হাত রেখে বললেন, কাঁদছ কেন বউমা। ছেলে ফিরে এসেছে এখন কি কাঁদতে আছে। আহা, খোকা আমার কি রোগা হেয়ে গেছে গো। দীপকের মা অনেক কষ্টে নিজেকে সামলাতে পারলেন, না মা কাদছি না। কাঁদবো কেন? আমার এক ছেলে গেল আর দুই ছেল ফিরল। একে দেখুন–এর নাম অনিমেষ। খোকাকে যে দেখাশুনা করত।

বৃদ্ধা ভদ্রমহিলা এবার শ্লথ পায়ে অনিমেষের কাছে এলেন, তোমার কথা শুনেছি বাবা। ভগবান তোমার মঙ্গল করুন।

অনিমেষ হেসে ফেলল, মঙ্গল যা করার তিনি করেছেন।

সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধা ভদ্রমহিলা মাথা নাড়লেন, ও কথা বলো না বাবা। যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণ আশ। আমাকে দ্যাখো না, স্বামীকে হারালাম তো ছেলেকে জড়িয়ে ধরলাম। ছেলেকে হারালাম তো নাতিকে জড়িয়ে ধরলাম এবার নাতিকে–। কথা শেষ না করে বললেন, আমি কিন্তু এখনও আশা ছাড়িনি বাবা। বউমা বলত খোকা নাকি আর কখনো স্বাভাবিক হবে না। আবার কালকে এসে বলল ও নাকি একমাত্র তোমার ডাকেই সাড়া দেয়। তবে?

এবার দীপকের মা এগিয়ে এলেন, অনিমেষ, উনি দীপকের ঠাকুরমা।

অনিমেষ ঘাড় নাড়ল, আমি বুঝতে পেরেছি। আপনাকে প্রণাম করব সে ক্ষমতা আমার নেই। আমি আজকাল কোমর বেঁকাতে পারি না।
 
থাক বাবা, যথেষ্ট হয়েছে। বউমা, এদের খাবার ব্যবস্থা কর। অনিমেষ লক্ষ্য করল দীপকের মায়ের ব্যক্তিত্ব এই বৃদ্ধার কাছে কেমন নরম হয়ে যাচ্ছে। তিনি মাথা নেড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলে বৃদ্ধা আর একটা চেয়ার নিয়ে ওর সামনে বসলেন। খোকা কি সত্যি তোমার ডাকে সাড়া দেয়?

ঠিক সাড়া নয়, মাঝে মাঝে তাকায়।

খুব ব্রাইট ছেলে ছিল ও, দ্যাখো কি হল! প্রেসিডেন্সিতে পড়ত, হায়ার সেকেন্ডারীতে স্ট্যান্ড করেছিল। ওর বাবাও খুব ভাল ছেলে ছিল। কিন্তু কখন যে কি হয়ে গেল। বাড়ি ফিরতে অনিয়ম করত। ওর মা বজা-ঝকা করলেও আমি বাধা দিতাম। বলতাম, খোকা কখনো কোন অন্যায় করতে পারে না। তারপর একদিন ও আর বাড়িতে ফিরল না। কি দুশ্চিন্তা আমাদের। হাসপাতালে খবর নিই, আত্মীয়দের বাড়িতে খবর নিই। ঘরপোড়া গরু আমি–কিছুতেই মন মানে না। কিছুই বুঝলাম না। দেশ তো স্বাধীন, তাকে আবার স্বাধীন করবি কি! সেইসময় পুলিশ এল বাড়িতে। সব তল্লাসি করে কাগজপত্র পেল। যাওয়ার সময় বলে গেল সে নাকি নকশাল হয়েছে। কাগজে তখন এসব খবর সবে ছাপা হচ্ছে। বুক আমার হিম হয়ে গেল। নকশাল মানে জানি যারা পুলিশের গলা কাটে, বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙ্গে। আমাদের খোকা ওসব করছে? একদিন রাত্তিরে টেলিফোন এল খোকার। বলল, শক্ররা নাকি তাদের ঘিরে ফেলেছে। পালাবার পথ নেই। তার মাকে বলল, বারান্দায় ফুলের টবে নাকি বোমা লুকোন আছে। সেগুলো নিয়ে ওর মা যদি আধঘণ্টার মধ্যে না পৌঁছতে পারে তাহলে ওরা মরে যাবে। আমরা দুজনে মিলে টব ভেঙ্গে দেখলাম সত্যি সত্যি সুন্দর প্যাক করা কতগুলো বাক্স বের হল। ওর মা বলল সে যাবে। আমি বললাম, না, গেলে আমি যাব। কিন্তু কাউকেই যেতে হল না। বাড়ি থেকে বের হবার আগে পুলিশ এল! আমাদের টেলিফোন লাইনে যে আড়ি পাতা ছিল কে জানতো। তারা এসে বোমাগুলো নিয়ে গেল। দুতিনদিন বউমাকে থানায় যেতে হয়েছিল ওইজন্যে। খোকাকে নাকি পুলিশ সে রাত্রে উদ্ধার করেছে। কিরকম করেছে দেখতেই পাচ্ছ। বৃদ্ধা নিঃশ্বাস ফেললেন জোরে জোরে। তারপর হঠাৎ অনিমেষের হাত ধরে ধরা গলায় জিজ্ঞাসা করলেন, সত্যি বলো তো বাবা, তোমরা কি নিজেদের ক্ষমতা জানতে না?

অনিমেষ বৃদ্ধার মুখের দিকে তাকাল। বিবর্ণ মণিদুটো তার দিকে স্থির হয়ে আছে। মুখময় অজস্র ভাঁজ। সময়ের রেখাগুলো এখন স্পষ্ট।

সে পরিষ্কার গলায় বলল, আমরা বিশ্বাস করি এভাবে মানুষের বেঁচে থাকা উচিত নয়। রাজা নেই, বিদেশী শাসক নেই কিন্তু তাদের জায়গা নিয়েছে সামান্য কয়েকজন মানুষ, যাদের ইচ্ছে-অনিচ্ছের ওপর ভারতবাসীর দিন কাটছে। আমরা একটা রাস্তা খুঁজতে চেয়েছিলাম যা আমাদের এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করবে।

বৃদ্ধা অসহিষ্ণু গলায় জিজ্ঞাসা করলেন, কিসের জোরে তোমরা এমনভাবে কোন কিছু চিন্তা না করে ঝাঁপিয়ে পড়লে?

অনিমেষ আবার বলল, বিশ্বাস।

কিন্তু এই তো তার পরিণতি হল। খোকাকে দ্যাখো, কোনদিন ও মুখ ফুটে কথা বলতে পারবে কিনা সন্দেহ, তুমি কি কোনদিন স্বাভাবিক হাঁটাচলা করতে পারবে? তবে? কি দাম এই রকম বিশ্বাসের। বৃদ্ধা নাতির হাত ধরলেন।

এই প্রশ্নটা জেলে বসে অনিমেষ হাজারবার নিজেকে করেছে। হঠকারিতা থেকে কোন সুন্দর সৃষ্টি হয় না। কিন্তু আজ এই সময়ের শিকার হওয়া মানুষের প্রশ্নর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সে উত্তর দিতে একটুও অস্বস্তি বোধ করল না, বিশ্বাস যদি সত্যি হয় তাহলে অনেক অসাধ্যসাধন করা যায়। আমরা করতে চেয়েছিলাম বলেই ভুলগুলো ধরা পড়েছে। আমাদের আগে কেউ করেনি বলে অন্ধকারে পথ হাতড়াতে হয়েছিল। কিন্তু আমাদের পরে যারা এই বিশ্বাস নিয়ে কাজ শুরু করবে তারা আমাদের ভুলগুলো থেকে অভিজ্ঞতা পাবে। ফলে তারা সফল হবেই।

কিন্তু আগুনে হাত দিয়ে তো তোমাদের হাত পুড়লো।

ঠিকই। তা থেকে মানুষ শিখল আগুনকে কীভাবে ব্যবহার করতে হয়। এটুকুই লাভ।

বৃদ্ধা নড়েচড়ে বসলেন, আমি এতসব বুঝি না। খোকার না হয় কিছু বোঝার শক্তি নেই কিন্তু তোমার আফসোস হচ্ছে না?

হচ্ছে। ভুলগুলো করলাম বলেই আফসোস হচ্ছে।

অনিমেষের কথা শেষ হওয়া মাত্র পায়ের আওয়াজ পাওয়া গেল। একটি মেয়ে হাতে ট্রে নিয়ে ঘরে ঢুকল, পেছনে দীপকের মা। টেবিলে ট্রেন নামানো হলে অনিমেষ দেখতে পেল একটা বড় কাঁচের বাটিতে জল আর তার পাশে ছোট তোয়ালে রাখা আছে। দীপকের মা বললেন, তুমি মুখহাত ধুয়ে নাও অনিমেষ।
 
জেলে বাস করে যে অভ্যাস হয়েছিল তার কাছে এই আপ্যায়নকে রাজসিক ব্যাপার বলা যায়। একটু সঙ্কোচের সঙ্গে অনিমেষ হাত মুখ ধুয়ে তোয়ালেতে মুখ মুছলে মেয়েটি সেগুলো ফিরিয়ে নিয়ে গেল। দীপকের মা তখন আর একটা ভেজা তোয়ালেতে দীপকের মুখ হাত পরমযত্নে মুছিয়ে দিচ্ছেন। দীপক পাথরের মূর্তির মত সোজা হয়ে বসে। তার চোখ অনিমেষের ওপর। হঠাৎ অনিমেষের মনে একটা নতুন চিন্তা এল। দীপক অভিনয় করছে না তো। সে সব বুঝে না বোঝার ভান করে নেই তো! কথাটা মাথায় আসতেই শরীর শিরশির করে উঠল তার। এবং কিছু না ভেবেই সে একটু ঝুঁকে দীপককে জিজ্ঞাসা করল, কিছু বলবে?

ব্যাপারটা এত আকস্মিক যে দীপকের ঠাকুমা চমকে উঠলেন, দীপকের মায়ের হাত থেমে গেল। সবাই দীপকের মুখের দিকে তাকিয়ে অথচ সেখানে কোন প্রতিক্রিয়া ঘটল না। দীপক চোখ সরালো না, দৃষ্টি পাল্টানো না, শুধু ঠোঁট কেঁপে উঠল বলে অনিমেষের মনে হল। অনিমেষ ধীরে ধীরে ইজিচেয়ারে নিজেকে এলিয়ে দিল।

দীপকের ঠাকুমা জিজ্ঞাসা করলেন, হঠাৎ ওকে জিজ্ঞাসা করলে কেন? আমাদের পারিবারিক ডাক্তার একটু বাদেই আসবেন। ওঁর সঙ্গে আলোচনা করে চিকিৎসা শুরু করব। তোমার কথাও ওঁকে ফোনে বললাম। তোমাকেও দেখবেন উনি।

কী লাভ হবে?

এত হতাশ হচ্ছ কেন? বলা যায় না, অপারেশন করে ওরা তোমাকে হয়তো স্বাভাবিক করে দিতে পারে।

না, আমি জানি তা কখনো হবে না। কথাটা বলতে বলতে অনিমেষ ডান হাত দিয়ে নিজের পা ঠিক করতে গেল। বেকায়দায় পড়ায় সেখানে ব্যথা লাগছে। তলপেটের নীচের শরীরটা তার ইচ্ছেমত চলে না। বসবার সময় যদি সেগুলো বেকায়দায় থাকে তখন প্রচণ্ড যন্ত্রণা হয়। ইজিচেয়ারে বসে থাকার দরুণ বেশ কষ্ট হল পা দুটোকে স্বাভাবিক করতে। সে চাইছিল না দীপকের মা ব্যাপারটা বুঝে। তাকে সাহায্য করেন।

এই সময় মেয়েটি খাবারের প্লেট নিয়ে ফিরে এল। টোস্ট, ডিম সেদ্ধ আর দুটো সন্দেশ। অনিমেষের সামনে একটা টিপয় এগিয়ে দিয়ে তাতে প্লেট রেখে মেয়েটি দীপকের খাবার এগিয়ে দিল। তারপর নীচু গলায় দীপকের মাকে কিছু জানাল সে। কথাটা শুনে তিনি চকিতে দীপককে দেখলেন। তারপর মেয়েটিকে বললেন, তুই যা আমি আসছি।

অনিমেষ খাবারগুলোর দিকে তাকাল। অনেক অনেক বছর বাদে কেউ তাকে ভদ্রভাবে খাবার খেতে দিল। দীপকের ঠাকুমা তখন টোস্ট নিয়ে দীপকের মুখের সামনে ধরেছেন। সে মুখ খুলছে না, এক দৃষ্টিতে অনিমেষকে তখন থেকেই দেখে যাচ্ছে। অনেক অনুনয়, পিঠে হাত বোলানো ব্যর্থ হল। সে মুখ খোলার কথা মাথায় যেন আনতেই পারছে না। অথচ দীপকের মা আগে জেলে গিয়ে ছেলেকে খাইয়ে আসতেন নিজের হাতে। অনিমেষের মনে হল ঠাকুমার বদলে মা খাওয়ালে দীপক সহজেই খেতো। কিন্তু কথাটা বলতে গিয়েই সে চুপ করে গেল। বৃদ্ধা এতে যে আঘাত পাবেন তাতে সে নিঃসন্দেহ।

দীপকের মা উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, তুমি হাত গুটিয়ে আছ কেন, খাও।

কথাটা শুনে অনিমেষ প্লেট থেকে একটা টোস্ট তুলে দীপকের চোখে চোখ রাখল। তারপর সেটা মুখের কাছে ধরে সামান্য হাঁ করতেই দীপকও যেন একই ভঙ্গীতে মুখ খুলল। ওর ঠাকুমা সেই সুযোগে খাবার তার মুখে গুঁজে দিতে সে অনিমেষের অনুকরণে চিবোতে লাগল।

দীপকের মা বললেন, তোমার খুব বাধ্য হয়েছে দেখছি খোকা।

ঠাকুমা বললেন, হ্যাঁ, কি আশ্চর্য। দ্যাখো, এখন কি সুন্দর খাচ্ছে খোকা।

দীপকের মা মাথা নেড়ে মেয়েটির সঙ্গে বেরিয়ে গেলেন ঘর থেকে। ঠাকুমা তখন নানান আদুরে সংলাপ বলে নাতিকে খাইয়ে চলেছেন। অনিমেষের অস্তিত্ব এই মুহূর্তে আর যেন ওঁর স্মরণে নেই। অনিমেষের খিদেও পেয়েছিল। প্লেট শেষ করে সে পুরো গ্লাশ জল খেয়ে নিল। এই সময় দীপকের মা ফিরে এলেন। উনি অনিমেষকে বললেন, তোমার সঙ্গে একজন দেখা করতে এসেছে।

আমার সঙ্গে? অনিমেষ অবাক হয়ে তাকাল।

মাথা নাড়লেন মহিলা।

দীপকের মুখে শেষ খাবারটুকু গুঁজে দিয়ে ঠাকুমা জিজ্ঞাসা করলেন, ও এখানে আছে তা লোকে জানল কি করে?

জেলখানায় গেলেই তো জানা যায়। দীপকের মা জানালেন।

অনিমেষ সোজা হয়ে বসার চেষ্টা করল, নাম জিজ্ঞাসা করেছিলেন?

হ্যাঁ। মাধবীলতা।

ঠাকুমা বললেন, মেয়েছেলে! চেন নাকি তুমি?
 
অনিমেষ তখন নিস্পন্দ। মাধবীলতা এসেছে তার কাছে। বুকের মধ্যে একটা রিমঝিমে অনুভুতি শুরু হয়ে গেল তার। চট করে উঠে দাঁড়াতে গিয়ে কোন রকমে দুহাতে টাল সামলালো সে। আর তখনি অদ্ভুত অবসাদ অনিমেষকে আচ্ছন্ন করল। যে কারণে সে এতগুলো বছর মাধবীলতার সঙ্গে দেখা করেনি, নিজের এই পঙ্গু শরীরটা নিয়ে মাধবীলতার ভার বাড়াতে চায়নি, ঠিক সেই কারণেই এখন সে অস্থির হল। আজ তার মুক্তির দিন একথা মাধবীলতা জানতে পারল কি করে? অবশ্য তার খেয়ালে ছিল না জেলখানায় গেলেই যে কেউ তার বর্তমান ঠিকানা পেয়ে যেতে পারে। ভদ্রমহিলা তো সবাইকে জানিয়েই অনিমেষকে এখানে নিয়ে এসেছেন। মাধবীলতা এখন তার অপেক্ষায় বাইরে অপেক্ষা করছে এবং তাদের মধ্যে জেলখানার লোহার গরাদ নেই, তবু অনিমেষের সঙ্কোচ হচ্ছিল।

ঠাকুমা প্রশ্নটা আবার করতেই অনিমেষের চমক ভাঙ্গল। সে ঘাড় নেড়ে হ্যাঁ বলল।

দীপকের মা বললেন, আমি কি মেয়েটিকে এখানে আসতে বলব?

অনিমেষ নীচু গলায় বলল, আমার পক্ষে তো।

না না ঠিক আছে। তুমি বসে থাকো। আমি ওকে এখানে আসতে বলছি। তোমার আত্মীয় না বন্ধু?

আত্মীয়। অনিমেষ দ্রুত জবাব দিল।

ওকি তোমাকে নিয়ে যেতে এসেছে? ঠাকুমার গলায় স্বর এখন অন্যরকম। একটু সতর্ক সন্দেহ সেখানে।

আমি জানি না।

যেই জেল থেকে ছেড়ে দিল অমনি সব এসে জুটেছে। এতদিন যখন জেলে কষ্ট পাচ্ছিলে তখন এরা দেখতে যেত? ঠাকুমা ফোঁস করে উঠলেন।

দীপকের মা বললেন, না, কেউ ওর সঙ্গে দেখা করেনি বলেই তো জেলে শুনেছি। হয়তো আজ জেলে গিয়ে খবর পেয়ে এখানে এসেছে।

ঠাকুমা দীপককে জড়িয়ে ধরলেন, যেই আসুক বলে দাও ও এখানেই থাকবে। ও কাছে না থাকলে আমাদের খোকা কখনও ভাল হবে না। অনিমেষকে আমরা ছাড়তে পারব না বলে দিচ্ছি।

দীপকের মা খানিক ইতস্তত করে বেরিয়ে গেলেন ঘর থেকে। অনিমেষ দেখল শুধু দীপক নয়, তার ঠাকুমাও এখন তার দিক থেকে চোখ সরাচ্ছেন না। সে আবার ইজিচেয়ারে হেলান দিল। মাধবীলতাকে কি কথা বলবে সে? এই কবছরে ওর কোন খবর সে পায়নি। এখনও কি সেই হোটেলে রয়েছে মাধবীলতা। একথা নিশ্চিত মাধবীলতা বাড়িতে ফিরে যায়নি কিংবা আর কাউকে জীবনসঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করেনি। এখনও যদি হোস্টেলেই থেকে থাকে তাহলে সেখানে অনিমেষের যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। এক ধরনের গোপন লজ্জা অনিমেষকে আচ্ছন্ন করল। অনেকদিন দেখা হয়নি, মাধবীলতার চেহারা এখন কেমন হয়েছে? সঙ্গে সঙ্গে একটা অপরাধবোধ তাকে বিদ্ধ করল। একটি মেয়ে সারাজীবন তার জন্যে সব কিছু উপেক্ষা করল অথচ বিনিময়ে নিজের পঙ্গুত্ব ছাড়া সে কিছুই দিতে পারবে না তাকে। অনিমেষ দুহাতে মুখ ঢাকল।

পায়ের শব্দ হচ্ছিল। দীপকের মায়ের গলা শোনা গেল, আসুন।

অনিমেষ অনেক চেষ্টায় শক্তি সঞ্চয় করে মুখ তুলল, দরজায় মাধবীলতা দাঁড়িয়ে। তার দিকে দৃষ্টি নিবন্ধ, নীচের ঠোঁট দাঁত দিয়ে চেপে আছে সে। সমস্ত শরীরে যে এখন তিরতিরে কাঁপুন এসেছে তা অনিমেষের চোখ এড়াল না। অনিমেষ অবাক হয়ে মাধবীলতাকে দেখল। এ কাকে দেখছে সে? যেমন করে পাহাড়ভাঙ্গা পাথরের চাই নদীর জলের ঘষা খেয়ে মসৃণ চেহারা নিয়ে মাধবীলতা এখন দরজায় দাঁড়িয়ে। অল্পবয়সী পেলবতার বদলে একটা রুক্ষ হাওয়া তার সর্বাঙ্গে। ওই কবছরে সময় যেন অনেকগুলো বয়সের ভার তার শরীরে চাপিয়ে দিয়েছে। চোখের কোলে কালি, হাত শীর্ণ, শরীরে একটা আটপৌরে শাড়ি দীনতার চিহ্ন হয়ে জড়িয়ে আছে। কাঁধে একটা কাপড়ের ব্যাগ ছাড়া আর কিছু অলঙ্কার মাধবীলতার নেই। এতদূর থেকেও যেন অনিমেষ মাধবীলতার বুকের নিঃশ্বাস অনুভব করল। সে দেখল খুব দ্রুত মাধবীলতা নিজেকে সামলে নিচ্ছে। অনিমেষ প্রাণপণে নিজের চোখ দুটোকে শুকনো রাখার চেষ্টা করছিল।
 
মাধবীলতা ধীর পায়ে তার সামনে এসে দাঁড়াল, কখন ছাড়ল?

সকালে। অনিমেষের নিজের গলা অচেনা মনে হল।

আজকে তো কথা ছিল না। হঠাৎ কি মনে হতে গিয়েই শুনতে পেলাম।

হ্যাঁ, হঠাৎই হয়ে গেল।

অনিমেষ দেখল মাধবীলতার চোখ তার পায়ের দিকে। সে সৃষ্টি ফেরাতে অন্য প্রসঙ্গে এল, এঁরা আমাকে নিয়ে এসেছেন। খুব আদর-যত্ন করেছেন।

ঠাকুমা বললেন, আমার এই নাতিটি অনিমেষের সঙ্গে এক ঘরে ছিল। পুলিশ তো ওর সব কেড়ে নিয়েছে। কথা বলতে পারে না, কোন অনুভূতি নেই। শুধু অনিমেষের ওপর একটা টান আছে।

মাধবীলতা ঘাড় ঘুরিয়ে দীপককে দেখল। দীপক তখনও অনিমেষের দিকে তাকিয়ে আছে। দীপকের মা বললেন, তুমি দাঁড়িয়ে কেন, বসো।

একটু অস্বস্তি নিয়েই মাধবীলতা অনিমেষের পাশের চেয়ারে বসল। অনিমেষ আড়চোখে দেখল মাধবীলতা সেই খেটে খাওয়া মেয়েদের মত, যাদের কাছে সামান্য প্রসাধন বিলাসিতা ছাড়া কিছু নয়।

ঠাকুমা বললেন, তুমি ওকে জেলে দেখতে যেতে?

মাধবীলতা মাথা নীচু করল, খবর নিতে যেতাম। দেখা হতো না।

কেন? বউমাকে তো খোকার সঙ্গে দেখা করতে দিত। তোমাকে দিত না কেন?

প্রশ্নটা শুনে মাধবীলতা একটু দ্বিধা নিয়েই বলল, হয়তো এক একজনের বেলায় এক এক রকম নিয়ম।

অনিমেষ দেখছিল মাধবীলতাকে। ওর কন্ঠের হাড় বেরিয়ে এসেছে, মুখে খসখসে ভাব। খুব অভিজ্ঞ এবং বয়স্ক দেখাচ্ছে ওকে। এখন পর্যন্ত মাধবীলতা তার শরীর নিয়ে একটাও প্রশ্ন করেনি। মাঝে মাঝেই তাকাচ্ছে তার পায়ের দিকে কিন্তু মুখে কিছু বলছে না। এই সময় চা নিয়ে এল মেয়েটা। দীপকের মা নিজের কাপটি মাধবীলতার দিকে এগিয়ে দিতে সে মাথা নাড়ল, না, আমি খাব না।

কেন?

আমি সকালে এক কাপ খাই, বেশি খেলে শরীর খারাপ লাগে।

অনিমেষ একটু অবাক হল। সেই মাধবীলতা এই কথা বলছে? রেস্টুরেন্টে বসে ওরা এক সময় আধ ঘণ্টা পর পর চা নিতো, এর মধ্যেই কেমন বয়স্ক মানুষের মত কথা বলছে মাধবীলতা।

চা খেতে খেতে দীপকের মা বললেন, কিছু মনে করো না, তুমি বলছি তোমাকে।

মাধবীলতা একটু শক্ত হল, তারপর বলল, বলুন।

তুমি কি অনিমেষকে নিয়ে যেতে এসেছ?

হ্যাঁ।

কিন্তু অনিমেষ প্রতিবন্ধীদের একটা আশ্রমে যেতে চাইছিল। সত্যি বলতে কি সাতদিন এখানে থাকতে ওকে জোর করে রাজী করিয়েছি।

মাধবীলতা দাঁতে ঠোঁট চাপলো। কথা বলল না। তোমার কাছে যাওয়ার কথা ও কিন্তু বলেনি।

মাধবীলতা স্পষ্ট গলায় বলল, এটা আমাদের ব্যাপার।

ও! দীপকের মা একটু অবাক হলেন যেন, আমি অবশ্য তোমাদের সম্পর্কটা কি তা জানি না।

মাধবীলতা চকিতে অনিমেষের মুখের দিকে তাকাল। তাকিয়ে হেসে ফেলল। তারপর উজ্জ্বল মুখে দীপকের মাকে বলল, আমি ওকে নিয়ে যেতেই এসেছি।

দীপকের ঠাকুমা একটু উষ্ণ গলায় বললেন, আমি বাবা মাথামুন্ডু কিছুই বুঝতে পারছি না। ও কাছে থাকলে খোকার উন্নতি হবে। আমরা খোকাকে যেমন চিকিৎসা করাবো অনিমেষকেও তেমনি সেবাযত্ন করব। ভদ্রতা না করেই বলছি ওর থাকাটা আমাদের প্রয়োজনে লাগবে। তুমি ওর কে হও তাই স্পষ্ট করে বলতে পারছ না, তোমার সঙ্গে ওকে যেতে দেব কেন?

মাধবীলতা অনিমেষের মুখের দিকে তাকাল। তারপর সহজ গলায় জিজ্ঞাসা করল, তুমি কি আমার সঙ্গে যাবে না?
 
অনিমেষ এ প্রশ্নের কি উত্তর দেবে! এই মেয়েকে সে কখনো সুখের স্বপ্ন দেখাতে পারেনি। জীবনের বাকী দিনগুলোতে আরো দুঃখের বোঝা চাপাতে চায়নি ওর ওপর। কিন্তু মাধবীলতার মুখের দিকে তাকিয়ে তার সমস্ত প্রতিরোধ ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল।

সে দীপকের মায়ের দিকে তাকিয়ে হাসতে চাইল, আপনি চিন্তা করবেন না, দীপককে ভাল করে চিকিৎসা করালে ও নিশ্চয়ই সেরে যাবে।

তুমি তাহলে যেতে চাইছ?

হ্যাঁ।

দুজন বয়স্কা মহিলার মুখ একসঙ্গে থমথমে হয়ে গেল। এবার অনিমেষ মাধবীলতার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করল, আমরা কোথায় যাব?

আমাদের বাসায়। বেলগাছিয়া।

তুমি জানো নিশ্চয়ই আমি হাঁটতে পারি না। জীবনে কখনো হাঁটতে পারব না।

জানি, জেনেই এসেছি।

তুমি একা বাসা নিলে কেন? কবে থেকে নিলে?

নিতে হল। মাধবীলতার এইরকম কথা বলার ভঙ্গীতে অনিমেষ বুঝল আর প্রশ্ন করা উচিত হবে। অন্তত দুজন বাইরের মানুষের সামনে মাধবীলতা বিশদ হতে চাইছে না।

অনিমেষ দীপকের মাকে বলল, আপনি কিছু মনে করবেন না।

না, মনে করব কেন? শুধু জানতে ইচ্ছে করছে তোমাদের সম্পর্কটা কি?

অনিমেষ মাধবীলতার দিকে তাকিয়ে হাসল।

ভদ্রমহিলা একটু ইতস্তত করে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের কি বিয়ে হয়ে গেছে?

প্রশ্নটা এতই আকস্মিক যে অনিমেষ জবাব দেওয়ার আগেই মাধবীলতা হেসে বলল, হ্যাঁ।

ওমা, তাই বুঝি। দীপকের ঠাকুমা যেন চমকে উঠলেন, তুমি তো এত বছর জেলেই ছিলে, বিয়ে করলে কখন?

জেলে যাওয়ার আগেই আমাদের বিয়ে হয়েছিল। মাধবীলতা জবাব দিল। দিয়ে উঠে দাঁড়াল।

আমি কিছুই বুঝতে পারছি না বউমা। যদি এরা স্বামী-স্ত্রী হয়ে থাকে তাহলে অনিমেষ জেল থেকে বেরিয়ে নিজেদের বাড়িতে যাবে না কেন? আশ্রমে যেতে চাইছিল? তুমি কিছু বুঝতে পারছ?

দীপকের ঠাকুমা এখনও অসহিষ্ণু।

দীপকের মা হেসে বললেন, মান অভিমানের ব্যাপার। আমাদের বেশি বুঝতে চাওয়া ঠিক নয়। তবে তুমি কিন্তু ওকে ভাল ডাক্তার দেখিও।

মাধবীলতা ঘাড় নাড়ল। ওর ভঙ্গী দেখে বোঝা যাচ্ছিল সে এখান থেকে যত তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যেতে পারে তত স্বস্তি পাবে।

ঠাকুমা জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার বাড়িতে আর কে কে আছেন?

কেন?

এ রকম মানুষের চিকিৎসার খরচ তো কম নয়, তাই বলছি।

আমি আমার সাধ্যমতন নিশ্চয়ই করব।

তুমি কি চাকরি কর?

হ্যাঁ, আমি স্কুলে পড়াই। আপনাদের অনেক ধন্যবাদ। আপনারা ওকে এখানে যত্ন করে এনেছিলেন। এবার আমি ট্যাকসি ডেকে নিয়ে আসি। মাধবীলতা বাইরে যাওয়ার জন্যে পা বাড়াল। সঙ্গে সঙ্গে দীপকের মা বললেন, আরে ট্যাক্সি ডাকতে যাবে কেন? আমার গাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসবে অনিমেষকে। তুমি বসো আমি ড্রাইভারকে খবর দিচ্ছি।

কি দরকার। এটুকু আমাকে করতে দিন। মাধবীলতা শক্ত গলায় বলল।
 
দীপকের মা ওর মুখের দিকে তাকিয়ে কি দেখলেন তিনিই জানেন, এবার গলা নামিয়ে বললেন, বেশ গাড়ি যদি না নিতে চাও নিও না, আমি ওদের কাউকে ট্যাক্সি ডেকে দিতে বলছি। এ পাড়ায় চট করে ট্যাক্সি পাওয়া মুশকিল। তাতে নিশ্চয়ই তোমার আপত্তি হবে না।

মাধবীলতা ঘাড় নাড়ল। দীপকের মা চলে গেলে সে আবার অনিমেষের সামনে এসে বসল, তোমার সঙ্গে কোন জিনিসপত্র নেই, না?

অনিমেষ বলল, আমি তো একদম খালি হাতে জেলে গিয়েছিলাম। বেরুবার সময় ওরা হাত ভরে দেবে কেন?

মাধবীলতা বলল, তোমার হোস্টেল থেকে পাওয়া সেই স্যুটকেস এখনও আমার কাছে আছে। জামাগুলো ছোট হবে কিনা জানি না।

একটু বাদেই দীপকের মা একে জানালেন ট্যাক্সি এসে গেছে। বললেন, তোমাদের ঠিকানাটা রেখে যাও, যদি কখনও দরকার পড়ে।

মাধবীলতা একটা কাগজে ঠিকানাটা লিখে টেবিলের ওপর রাখল। কাগজ এবং ডটপেন তার ব্যাগেই ছিল। অনিমেষ ঠাকুমার মুখের দিকে তাকাল। তার মুখে অসন্তুষ্টির ছাপ স্পষ্ট। দীপক এখনও তেমনি তাকিয়ে আছে। দীপকের মা সঙ্গে লোক নিয়ে এসেছিলেন যারা তাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে এখানে এনেছিল। তারা সাবধানে অনিমেষেকে ইজিচেয়ার থেকে আর একটা সাধারণ চেয়ারে বসাল। তারপর সেই চেয়ারটি নিয়ে হাঁটা শুরু করতেই অনিমেষ ওদের বলল, একটু দাঁড়াও ভাই, আমাকে একটু দীপকের কাছে নিয়ে চল।

লোকগুলো অনিমেষকে চেয়ার সমেত দীপকের সামনে নিয়ে এলে সে বলল, চললাম ভাই। বলে ডান হাতটা আলতো করে দীপকের কাঁধে রাখল। হঠাৎ একটু অদ্ভুত ঘটনা ঘটে গেল। দীপকের দুটো হাত সচল হয়ে অনিমেষের হাত জড়িয়ে ধরল। তার চোখ বিস্ফারিত, একটা গোঙানি উঠছে মুখ থেকে। অনিমেষের মনে হল তার হাত ভেঙ্গে যাবে, দীপকের মুঠোয় এত শক্তি কল্পনা করতে পারেনি সে। প্রাণপণে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করল অনিমেষ নিশ্চয়ই পড়ে যেত। সকলে মিলে অনেক চেষ্টার পর দীপকের হাত ছাড়ানো গেল। ওর মা আর ঠাকুমা তখন ওকে ধরে রেখেছেন। গোঙানিটা এখনও বন্ধ হয়নি। অনিমেষের হাতে তখনও জ্বলুনি হচ্ছিল সে দীপকের দিকে আর একবার তাকাতে দেখল বেচারার কষ বেয়ে লালা গড়াচ্ছে। বীভৎস দেখাচ্ছে ছেলেটাকে। ঠাকুমা তখন উত্তেজিত গলায় বলছেন, ডাক্তারবাবুকে ডাকো, ওর বোধহয় জ্ঞান ফিরে আসছে, ও বউমা, যাও।

একটু বাদেই ছেলেটা শান্ত হয়ে এল। দীপকের মা তাকে একটা ডিভানে শুইয়ে দিতেই সে চোখ বন্ধ করল। বোঝা যাচ্ছিল খুব পরিশ্রান্ত হয়ে পড়েছে দীপক। এতবছর এক ঘরে বাস করেও একদিনের জন্যেও এরকম ব্যবহার করতে ওকে দ্যাখেনি অনিমেষ। সে বিহ্বল হয়ে পড়েছিল।

মাধবীলতা পাশ থেকে চাপা গলায় বলল, এবার চল। লোকগুলো চেয়ার তুলে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এল। দীপকের মা এবং ঠাকুমা ঘরে রয়ে গেলেন।

অনেক কষ্টে অনিমেষকে ওরা ট্যাক্সিতে তুলে দিল। দুহাতে ভর করে অনিমেষ জানলার কাছে জায়গা নিল। মাধবীলতা ট্যাক্সিতে উঠে বসে জিজ্ঞাসা করল, তোমার অসুবিধে হলে না তো!

দীপকের ব্যবহারে অনিমেষ তখনও অন্যমনস্ক ছিল। বলল, কেন?

মাধবীলতা ব্যাপারটা ভুল বুঝল। তার কপালে ভাঁজ পড়ল। সে একটু অন্যরকম গলায় প্রশ্ন করল, আমি তোমাকে জোর করে নিয়ে যাচ্ছি।

অনিমেষ হেসে ফেলল। তারপর ঘাড় নেড়ে বলল, না। মাধবীলতা ট্যাক্সি ড্রাইভারের দিকে তাকিয়ে নিঃশ্বাস ফেলল, বেলগাছিয়ায় চলুন।
 
জানলায় কোলকাতা ঠিকঠাক, একটুও পালটায়নি। ট্রাম বাস চলছে যেমন চলতো ওরা আন্দোলন শুরু করার আগে, মানুষজনেরা ঠিক তেমনি অলস কিংবা ব্যস্ত হয়ে চলাফেরা করছে। মেট্রো সিনেমার সামনে বিরাট লাইন পড়েছে টিকিটের। ফুটপাথে বিদেশী জিনিস কিনবার জন্য জনস্রোত বইছে। অর্থাৎ কোলকাতা ঠিক কোলকাতাতেই আছে। এতবড় একটা আন্দোলন হয়ে গেল, এত ছেলে মরে গেল কিংবা বেঁচে মরে থাকল তাতে কোলকাতার কিছু এসে গেল না। অনিমেষের বুক হঠাৎ টনটন করে উঠল। ট্যাক্সির জানলা দিয়ে এই কলকাতা দেখতে দেখতে অন্যমনস্কভাবে সে নিজের পঙ্গু পায়ের ওপর হাত রাখল।

দলের লোকজন কে কোথায় আছে সে জানে না। যারা বাইরে আছে তারা এখন কি ভাবনা চিন্তা করছে, আদৌ করছে কিনা তাও অজানা। এই কোলকাতার চেহারা দেখে সে কথা মনে হয় না। আর এখন তার শরীরের অবস্থা যে রকম, কেউ যোগাযোগ করবে বলে মনে হয় না। কার কি প্রয়োজনে সে লাগতে পারে। প্রয়োজন শব্দটা মনে আসতেই সে সচকিত হল মাধবীলতা তার পাশে বসে আছে। যদিও দুজনের মধ্যে অনিকখানি দূরত্ব তবু মাধবীলতা তাকে কি প্রয়োজনে ওর বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে।

অনিমেষের নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে এল। শেষ দেখার সময়, লালবাজারে পুলিশের সামনের স্মৃতি অনুযায়ী মাধবীলতা সন্তান ছিল। তারপর কি হল? মাধবীলতার কি সন্তান হয়েছে। একা একা কোলকাতা শহরে কোন কুমারী মেয়ে কি ভরসা ও সাহসে সন্তানবতী হয়ে তাকে মানুষ করে অন্য কারো অপেক্ষায় থাকতে পারে হঠাৎ অদ্ভুত একটা হীনমন্যতাবোধ অনিমেষকে ঘিরে ধরল। তার মনে হতে লাগল, মাধবীলতা তাকে হারিয়ে দিয়েছে সর্বক্ষেত্রেই। বোলপুরে ক্ষনিকের উত্তেজনা তাকে মাঝে মাঝেই বিদ্ধ করত। তার ক্ষেত্রে শুধু এই যন্ত্রণাটুকু যা কিনা বাইরের নানান কাজের চাপে মাঝেমাঝেই চাপা পড়ে যায়। কিন্তু মাধবীলতাকে সেই স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকতে হয়েছে। তাকে একা একা লড়াই করতে হয়েছে এই সমাজের সঙ্গে, মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে এবং প্রতীক্ষা করেছে কবে অনিমেষ মুক্তি পাবে। এবং এখন অনিমেষ পরিচিত সবার কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে চেয়েছিল যে হীনতাবোধে ঠিক তার বিপরীত চিন্তায় মাধবীলতা অনিমেষকে গ্রহণ করতে বদ্ধপরিকর। সে অনিমেষ সুস্থ কিংবা পঙ্গু যাই হোক তাকে মাধবীলতার কিছুই এসে যায় না। এখানেই মাধবীলতার জিত। হঠাৎ অনিমেষের মনে একটা আলোড়ন এল। মাধবীলতা একা এসেছে। ওর সন্তান! কথাটা ভাবতেই আর একবার লজ্জিত হল অনিমেষ। সে তো ভাবতে পারল না আমাদের সন্তান! এ কি শুধু অনভ্যাসেই! সে মেয়ে না ছেলে তা অনিমেষ জানে না। তবে ক্রমশ তাকে দেখার আগ্রহ প্রবল হয়ে উঠল।

এবার মাধবীলতার দিকে স্পষ্টচোখে তাকাল অনিমেষ। অন্যমনস্ক কিনা বোঝা যাচ্ছে না, মাধবীলতা জানলার বাইরে দৃষ্টি রেখেছে। ট্যাক্সিটা এখন হ্যারিসন রোডের মুখে দাঁড়িয়ে। সার দিয়ে গাড়িগুলো অনড় হয়ে আছে। মাধবীলতার মুখে এখন কয়েকটা গাঢ় রেখা, চুল পাতলা হয়েছে, শাড়িটাও বেশ আটপৌরে। এরকম মেয়েকে পথেঘাটে অজস্র দেখা যায়। খুব ক্লান্ত একটা ছায়া ওদের ঘিরে রাখে। হঠাৎ মাধবীলতা সোজা হয়ে বসল। মুখ বাড়িয়ে জানলা দিয়ে বাইরেটা দেখার চেষ্টা করল। তারপর একটা বিরক্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল, যাচ্ছলে, আবার মিছিল বেরিয়েছে।
 
ততক্ষণে অনিমেষ দেখতে পেয়েছে। কংগ্রেসের পতাকা নিয়ে অনেকটা রাস্তা জুড়ে একটা মিছিল বিপরীত দিক থেকে আসছে। তারা চিৎকার করে নানারকম দাবী জানাচ্ছে। ভঙ্গীটা খুবই চেনা, যে কোন রাজনৈতিক দল এই একই ভঙ্গীতে বিক্ষোভ জানায়। ওদের যাত্রা শেষ হবে এসপ্লানেড ইস্ট এ। তারপর মিছিলের লোক ফুচকা খাবে কিংবা সিনেমা দেখবে। এক ধরনের ঘেন্না হল অনিমেষের। এ যেন ঈশ্বরের কাছে গিয়ে হত্যে দেওয়া, দয়া করো, দয়া করো বাবা, তারপর জলটল মুখে দিয়ে মেলা দেখতে যাওয়া। যারা নিয়ে যায় তারা জানে নিয়ে যেতে হবে, যারা যায় তারা জানে যেতে হবে এবং যাদের কাছে যাওয়া হয় তারাও জানে ওরা আসবে। এইরকম ন্যাকামিতে শরীর গুলিয়ে ওঠে। হাজার হাজার মানুষ ট্রামে বাসে ট্যাক্সিতে ঘাম ঝরাতে ঝরাতে নিঃশ্বাস বন্ধ করে বসে আছে কখন এই মহং পদযাত্রা শেষ হবে এবং তারা তাদের প্রয়োজনে যেতে পারবে। অনিমেষ মাধবীলতার দিকে তাকাতে যেতেই ড্রাইভারের সামনের আয়নায় দৃষ্টি গেল। সেখানে মাধবীলতার চোখ, এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়েছিল, চোখাচোখি হতেই মুখ নামিয়ে নিল।

কিছুক্ষণ চুপ করে থেমে অনিমেষ বলল, আমি তোমার কথা কিছুই জানি না।

কি কথা?

তুমি কেমন ছিলে?

ছিলাম, এই পর্যন্ত।

আমি তোমার চিঠির উত্তর দিইনি, তোমার সঙ্গে দেখা করিনি, কেন করিনি তা নিয়ে তুমি কিছু ভেবেছ?

তুমি ভাল মনে করেছ তাই ওই রকম করেছ, আমি কি বলব।

তবু তুমি আমাকে নিতে এলে?

সে তো দেখতেই পাচ্ছ।

কিন্তু কেন?

তুমি বুঝবে না।

বেশ কিছুক্ষণ দ্বিধার পর অনিমেষ কথাটা তুলল। মাধবীলতার মুখ জানলার দিকে ফেরানো। ট্যাক্সিটা এখনো নড়ছে না। জিভ ভারী হয়ে আসছিল অনিমেষের, শেষ পর্যন্ত বলে ফেলল, তুমি কি একা আছ?

একা? যেন চমকে উঠল মাধবীলতা, না একা থাকব কেন? আমি আর আমার ছেলে থাকি। কথাটা বলে মাধবীলতা পূর্ণদৃষ্টিতে অনিমেষের দিকে তাকাল।

অনিমেষের মনে হল কেউ যেন একটা লোহার বল ওর হৃৎপিণ্ডে বেঁধে দিল। এইসময় গাড়িটা গড়িয়ে গড়িয়ে চলা শুরু করল। চোখের পাতা অকস্মাৎ ভারী হয়ে এল, অনিমেষ প্রাণপণে চেষ্টা করছিল যাতে জল গড়িয়ে না আসে।

কিছুক্ষণ বাদে সে বলতে পারল, ও এখন কত বড় হয়েছে।

হেসে ফেলল মাধবীলতা, তোমার হিসেব নেই। তারপর গম্ভীর গলায় বলল, স্কুলে পড়ছে।

কোথায়?

আমাদের পাড়াতেই। বড় স্কুলে পড়াবার সামর্থ্য আমার নেই।

তুমি এখন পুরনো স্কুলেই পড়াচ্ছ?

না, নতুন স্কুল খুঁজে নিতে হয়েছে।

কোন অসুবিধে হয়নি?

কিসের?

অনিমেষের ইচ্ছে হচ্ছিল বিশদভাবে মাধবীলতার সব কথা জিজ্ঞাসা করে। কিন্তু একটা আড়ষ্টতাবোধ তাকে এমন আচ্ছন্ন করে ফেলছিল যে সহজভাবে কথা বলতে পারছিল না। এই ব্যাপারটা বুঝতে মাধবীলতার একটুও বিলম্ব হল না। সে খুব শান্ত গলায় বলল, এই দেশে একটা কুমারী মেয়ের শরীরে সন্তান এলে তাকে কি কি সমস্যায় পড়তে হয় তা তুমি জানো না? আমি নিজেকে কুমারী মনে না করলেও পাঁচজনে সেকথা মানবে কেন?
 

Users who are viewing this thread

Back
Top