সামনে পেছনে কোন গাড়ি নেই। যেন ওদের জিপটা একাই অন্ধকার সাঁতরে চলছে। কিন্তু হঠাৎ জিপটা নড়ে উঠল বেয়াদপভাবে। রাস্তার একপাশে জিপটাকে কোনরকমে দাঁড় করিয়ে সিরিল লাফিয়ে নামল। তারপর ঘুরে এসে বিষণ্ণ গলায় জানালো, তেল নেই।
অনিমেষ দাঁতে দাঁত চাপল। এইটুক আসতেই তেল যদি শেষ হয়ে যায় তাহলে সে কিভাবে জলপাইগুড়ি যেত? ওরা জিপ থেকে নেমে এল। গাঢ় অন্ধকারেও আকাশের রঙ পরিষ্কার থাকে। তার নিজস্ব আলোয় মানুষ অভ্যস্ত হলে পরস্পরের মুখ বোঝা যায়। অনিমেষ সিরিলকে জিজ্ঞাসা করল, এদিকে কোন পাম্প নেই?
জানি না।
মহাদেবদা বললেন, থাকলেও সেখানে যাওয়া সেফ হবে না। ফুন্টশিলং এখান থেকে কতদূর?
দেখা গেল সঠিক আন্দাজ কারো নেই। তবু যেটুকু আঁচ করা যায় তাতে এখন হাঁটা শুরু করা ছাড়া কোন উপায় নেই।
মহাদেবদা বললেন, জিপটার কি গতি হবে? এটা এখানে থাকলে পুলিশ আমাদে হদিস জেনে যাবে।
কথাটা শোনা মাত্র অনিমেষ স্থির হল। করুণাসিন্ধুর জ্ঞান ফিরে আসতে নিশ্চয়ই দেরী হবে না। আর তারপরেই সে পুলিশের মন পাওয়ার জন্যে উঠে পড়ে লাগবে। এই রাত্রেই পুলিশ যদি বেরিয়ে পড়ে তাহলে হদিস পেতে দেরী হবে না। কথাটা মাথায় আসামাত্রই দূরে হেডলাইট দেখা গেল। ওরা আর জিপের কাছে না দাঁড়িয়ে থেকে দৌড়ে রাস্তার পাশে গাছের আড়ালে চলে এল। দুধার আলোয় ভাসাতে ভাসাতে একটা গাড়ি আসছে। গাড়িটা বেশ স্পীডে খানিক এগিয়ে গিয়েও হঠাৎ থেমে গেল। তারপর হেড লাইট জ্বালা অবস্থায় ব্যাক করে এল ওদের জিপটার কাছে।
রাস্তা থেকে বেশি দূরে না থাকায় স্পষ্ট গলা কানে এল, জিপটা এভাবে পড়ে আছে কেন?
বোধহয় খারাপ হয়ে আছে।
কিন্তু এখানে খারপ হবে কেন? নাম্বারটা আমার চেনা। নেমে দ্যাখো তো কি ব্যাপার!
খারাপ হয়েছে স্যার, নাহলে লোক থাকত।
দূর, যা বলছি তাই করো। এটা কন্ট্রাক্টরবাবুর জিপ।
বোঝা যাচ্ছে বেশ অনিচ্ছায় একটি লোক নেমে এল গাড়ি থেকে। অনিমেষ শক্ত হয়ে দাঁড়াল। গাড়িটা পুলিশের। এই রাত্রে এ পথে পুলিশের গাড়ি কেন এল তার মাথায় ঢুকছে না। অনিচ্ছুক লোকটা বাতিল জিপের মধ্যে উঁকি মেরে দেখে বলল, কেউ নেই স্যার।
সে তো বুঝতেই পারছি, চাবি আছে?
হা স্যার আছে। বলে লোকটা ড্রাইভিং সিটে উঠে বসল। তারপর ইঞ্জিনের বিকট একটা গোঙানি শোনা গেল। সেটাকে থামিয়ে লোকটা নিশ্চিন্ত-গলায় জানাল, তেল নেই বলে এখানে রেখে গেছে। গাড়ি অলরাইট।
তেল নেই। যারা এসেছিল তারা জানতো না তেল নেই?
বোধহয়। কিন্তু যাওয়ার সময় তো গাড়িটাকে দেখিনি!
তা ঠিক স্যার। তবে এ নিয়ে ভাববার কি আছে?
বাতিল জিপ থেকে লোকটা নেমে এসে নিজেদের গাড়ির দিকে এগোলে। কিন্তু অফিসার তাকে আবার ফিরিয়ে দিল, চাবিটা নিয়ে এস। তেল আনতে কেউ চাবি ফেলে গেছে বলে কখনও শুনিনি। সামথিং ফিশি ব্যাপার আছে। চলো গিয়ে খোঁজ নিচ্ছি। এদের গাড়ি থেকে চাবি খুলে নিয়ে লোকটা ফিরে যেতেই গাড়িটা ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে গেল হাসিমারার দিকে।
আবার সব চুপচাপ, অন্ধকার আরো ঘন হয়ে নির্জনতা আনল। ওরা রাস্তা থেকে বেরিয়ে এসে পাশাপাশি দাঁড়াল।
অনিমেষ বলল, আর ঘণ্টখানেক সময় পাওয়া যেতে পারে, তার মধ্যে এই এলাকা ছেড়ে যেতে হবে আমাদের।
সিরিল বলল, রাস্তা দিয়ে তো হাঁটা যাবে না।
মহাদেবদা বললেন, ওরা কিন্তু সহজেই বুঝবে আমরা ফুন্টশিলিং-এর গিয়েছি। যাদের জঙ্গলে শুইয়ে রাখা হয়েছে তাদের স্টেটমেন্ট পেয়ে গেলে তো আর কোন কথা নেই। ফুন্টশিলিংটা এ্যাভয়েড করাই ভাল।
অনিমেষ একটু উত্তেজিত হল, ফুন্টশিলিং এ্যাভয়েড করবেন আবার এদিকে হাসিমারাতেও যাওয়া যাবে না। তাহলে?
মহাদেবদা হাসলেন, উত্তেজিত হয়ো না। ভেবে দ্যাখো, এই অবস্থায় হাসিমারাই আমাদের পক্ষে নিরাপদ। কারণ ওরা ভাববেই না যে ওদের নাকের ডগায় আমরা যেতে পারি।
হঠাৎ একট গোঁ গোঁ শব্দ কানে বাজল। পায়ের তলায় পথটা কাঁপছে। সিরিল হাত দিয়ে রাস্তাটা ছুঁয়ে বলল, ফুন্টশিলিং থেকে একটা গাড়ি আসছে।
মহাদেবদা বললেন, সাধারণ গাড়ি হলে লিফট চাওয়া যায় না?
সিরিল হাসল, এরকম ফাঁকা জায়গায় থামাবেই না।
অনিমেষ বলল, ওটাকে থামাতে হবে। দরকার হলে গায়ের জোরে ওই গাড়িতে উঠতে হবে।
মহাদেবদা বললেন, কিভাবে করবে? ওটা তো স্পীডে আসছে। হাত দেখালে থামবে?
সিরিল মাথা নাড়ল। তারপর অনিমেষকে বলল, মনে হচ্ছে লরি আসছে। কোনভাবেই থামাতে পারবে না। রাত্তিরে ওরা অচেনা লোককে ভয় পায়। তার চেয়ে চলুন হাঁটতে শুরু করি।
অনিমেষ দাঁতে দাঁত চাপল। এইটুক আসতেই তেল যদি শেষ হয়ে যায় তাহলে সে কিভাবে জলপাইগুড়ি যেত? ওরা জিপ থেকে নেমে এল। গাঢ় অন্ধকারেও আকাশের রঙ পরিষ্কার থাকে। তার নিজস্ব আলোয় মানুষ অভ্যস্ত হলে পরস্পরের মুখ বোঝা যায়। অনিমেষ সিরিলকে জিজ্ঞাসা করল, এদিকে কোন পাম্প নেই?
জানি না।
মহাদেবদা বললেন, থাকলেও সেখানে যাওয়া সেফ হবে না। ফুন্টশিলং এখান থেকে কতদূর?
দেখা গেল সঠিক আন্দাজ কারো নেই। তবু যেটুকু আঁচ করা যায় তাতে এখন হাঁটা শুরু করা ছাড়া কোন উপায় নেই।
মহাদেবদা বললেন, জিপটার কি গতি হবে? এটা এখানে থাকলে পুলিশ আমাদে হদিস জেনে যাবে।
কথাটা শোনা মাত্র অনিমেষ স্থির হল। করুণাসিন্ধুর জ্ঞান ফিরে আসতে নিশ্চয়ই দেরী হবে না। আর তারপরেই সে পুলিশের মন পাওয়ার জন্যে উঠে পড়ে লাগবে। এই রাত্রেই পুলিশ যদি বেরিয়ে পড়ে তাহলে হদিস পেতে দেরী হবে না। কথাটা মাথায় আসামাত্রই দূরে হেডলাইট দেখা গেল। ওরা আর জিপের কাছে না দাঁড়িয়ে থেকে দৌড়ে রাস্তার পাশে গাছের আড়ালে চলে এল। দুধার আলোয় ভাসাতে ভাসাতে একটা গাড়ি আসছে। গাড়িটা বেশ স্পীডে খানিক এগিয়ে গিয়েও হঠাৎ থেমে গেল। তারপর হেড লাইট জ্বালা অবস্থায় ব্যাক করে এল ওদের জিপটার কাছে।
রাস্তা থেকে বেশি দূরে না থাকায় স্পষ্ট গলা কানে এল, জিপটা এভাবে পড়ে আছে কেন?
বোধহয় খারাপ হয়ে আছে।
কিন্তু এখানে খারপ হবে কেন? নাম্বারটা আমার চেনা। নেমে দ্যাখো তো কি ব্যাপার!
খারাপ হয়েছে স্যার, নাহলে লোক থাকত।
দূর, যা বলছি তাই করো। এটা কন্ট্রাক্টরবাবুর জিপ।
বোঝা যাচ্ছে বেশ অনিচ্ছায় একটি লোক নেমে এল গাড়ি থেকে। অনিমেষ শক্ত হয়ে দাঁড়াল। গাড়িটা পুলিশের। এই রাত্রে এ পথে পুলিশের গাড়ি কেন এল তার মাথায় ঢুকছে না। অনিচ্ছুক লোকটা বাতিল জিপের মধ্যে উঁকি মেরে দেখে বলল, কেউ নেই স্যার।
সে তো বুঝতেই পারছি, চাবি আছে?
হা স্যার আছে। বলে লোকটা ড্রাইভিং সিটে উঠে বসল। তারপর ইঞ্জিনের বিকট একটা গোঙানি শোনা গেল। সেটাকে থামিয়ে লোকটা নিশ্চিন্ত-গলায় জানাল, তেল নেই বলে এখানে রেখে গেছে। গাড়ি অলরাইট।
তেল নেই। যারা এসেছিল তারা জানতো না তেল নেই?
বোধহয়। কিন্তু যাওয়ার সময় তো গাড়িটাকে দেখিনি!
তা ঠিক স্যার। তবে এ নিয়ে ভাববার কি আছে?
বাতিল জিপ থেকে লোকটা নেমে এসে নিজেদের গাড়ির দিকে এগোলে। কিন্তু অফিসার তাকে আবার ফিরিয়ে দিল, চাবিটা নিয়ে এস। তেল আনতে কেউ চাবি ফেলে গেছে বলে কখনও শুনিনি। সামথিং ফিশি ব্যাপার আছে। চলো গিয়ে খোঁজ নিচ্ছি। এদের গাড়ি থেকে চাবি খুলে নিয়ে লোকটা ফিরে যেতেই গাড়িটা ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে গেল হাসিমারার দিকে।
আবার সব চুপচাপ, অন্ধকার আরো ঘন হয়ে নির্জনতা আনল। ওরা রাস্তা থেকে বেরিয়ে এসে পাশাপাশি দাঁড়াল।
অনিমেষ বলল, আর ঘণ্টখানেক সময় পাওয়া যেতে পারে, তার মধ্যে এই এলাকা ছেড়ে যেতে হবে আমাদের।
সিরিল বলল, রাস্তা দিয়ে তো হাঁটা যাবে না।
মহাদেবদা বললেন, ওরা কিন্তু সহজেই বুঝবে আমরা ফুন্টশিলিং-এর গিয়েছি। যাদের জঙ্গলে শুইয়ে রাখা হয়েছে তাদের স্টেটমেন্ট পেয়ে গেলে তো আর কোন কথা নেই। ফুন্টশিলিংটা এ্যাভয়েড করাই ভাল।
অনিমেষ একটু উত্তেজিত হল, ফুন্টশিলিং এ্যাভয়েড করবেন আবার এদিকে হাসিমারাতেও যাওয়া যাবে না। তাহলে?
মহাদেবদা হাসলেন, উত্তেজিত হয়ো না। ভেবে দ্যাখো, এই অবস্থায় হাসিমারাই আমাদের পক্ষে নিরাপদ। কারণ ওরা ভাববেই না যে ওদের নাকের ডগায় আমরা যেতে পারি।
হঠাৎ একট গোঁ গোঁ শব্দ কানে বাজল। পায়ের তলায় পথটা কাঁপছে। সিরিল হাত দিয়ে রাস্তাটা ছুঁয়ে বলল, ফুন্টশিলিং থেকে একটা গাড়ি আসছে।
মহাদেবদা বললেন, সাধারণ গাড়ি হলে লিফট চাওয়া যায় না?
সিরিল হাসল, এরকম ফাঁকা জায়গায় থামাবেই না।
অনিমেষ বলল, ওটাকে থামাতে হবে। দরকার হলে গায়ের জোরে ওই গাড়িতে উঠতে হবে।
মহাদেবদা বললেন, কিভাবে করবে? ওটা তো স্পীডে আসছে। হাত দেখালে থামবে?
সিরিল মাথা নাড়ল। তারপর অনিমেষকে বলল, মনে হচ্ছে লরি আসছে। কোনভাবেই থামাতে পারবে না। রাত্তিরে ওরা অচেনা লোককে ভয় পায়। তার চেয়ে চলুন হাঁটতে শুরু করি।