ড্রাইভার ওর বাপের বয়সী কিন্তু স্বচ্ছন্দে তুইতোকারি করছে সে। টাকা নিয়ে চলে গেলে ছেলেটি বলল, যান, আপনারা চটপট চা খেয়ে নিন। সকাল হলে বাঙালী ছাগলের মত চা চা করে ডাকে, হ্যাঁ হ্যাঁ।
অনিমেষের ইচ্ছা করছিল ঠাস করে একটা চড় মারে ছেলেটার গালে। ওর শরীর শক্ত হয়ে উঠেছিল। কিন্তু করুণাসিন্ধু ওর হাত ধরল, না একেবারে শিলিগুড়িতে গিয়েই খাবো। ছেলেটি সামনে বসে থাকায় ওদের দেখতে পাচ্ছিল না। করুণাসিন্ধু হাত ছেড়ে দেবার আগে চোখ টিপল তাকে।
অনিমেষ দেখল চৌমাথা একদম নির্জন। দোকানপাট কিছু কিছু খুলেছে বটে কিন্তু রোজ সকালকার স্বাভাবিক ভিড় নেই। একটু বাদেই ড্রাইভার ফিরে এল শূন্য হাতে, নেই মিলা ছোটাসাব।
নেই মিলা? কিউ? খিঁচিয়ে উঠল ছেলেটা।
নায়ার বোলতা থা পুলিশ বহুৎ ঝামেলা কিয়া। ইহা এক আদমী খুন হুয়া আউর উসি বারে মে পুলিশ বহুৎ ঝমেলা কিয়া। তিন চার আদমীকো আরেস্ট কিয়া। নায়ারকো বহুৎ তংক কিয়া।
দুটো কাঁধ নাচালো ছেলেটি বিরক্তিতে। তারপর বলল, নায়ারকে আমার নাম বলেছিলি?
হাঁ সাব।
ঠিক তখনি নায়ারকে দেখতে পেল অনিমেষ। নিরীহ মুখ করে বিরাট শরীর নিয়ে এদিকে হেঁটে আসছে। অনিমেষ আর একটু মুখ ঘুরিয়ে বসল। ছেলেটার গলা শোনা গেল, কি মশাই মেরে ফেলবেন নাকি?
আর বলবেন না স্যার, পুলিশ আমাদের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। পানিরাম খুন হয়ে গেছে জানেন তো?
পানিরাম বাবু?
হ্যাঁ। কদিন আগে রাতে ডাকাতি হয়। সাধারণ ডাকাতি নয়। নায়ারের গলা নীচে নেমে এল, নকশাল। মাল লুট করেছে আর পুলিশ তার বদলা নিচ্ছে আমাদের উপর। এখানকার কটা নিরীহ ছেলেকে ধরে নিয়ে গেছে।
নকশাল। সে তো কলকাতায় হচ্ছে শুনেছি, এখানে এলো কোত্থেকে?
তলে তলে ছড়িয়ে পড়েছে। দু-একজনের নাম শোনা যাচ্ছে। এখানকার চা বাগানের এক বাবুর ছেলে নাকি ওদের মধ্যে আছে। বিশ্বাস করতে ইচ্ছা হয় না স্যার, ছেলেটাকে আমি চিনি খুব শান্ত ছিল।
নকশাল ফকশাল না, সব মাল কামানোর ধান্দা।
স্যার। ব্যাপারটা লাইট না, একটু সাবধানে থাকবেন।
সাবধানে থাকব কেন?
ওরা লিখে গেছে বড় ব্যবসায়ীদের খুন করবে।
কিন্তু এখনই তো আপনি আমাকে খুন করছেন। একটা পাঁইট হবে না?
কোন রকমে একটাই ম্যানেজ করে এনেছি স্যার।
বেঁচে থাকুন বেঁচে থাকুন। ছেলেটির গলায় হাসি গলছে, এতদিন বাদে স্বাধীনতা পেলাম আর শুকনো থাকব এতটা পথ?
টাকা দিয়ে জিপ চলা শুরু করল। চোখের ওপর স্বৰ্গছেঁড়া মিলিয়ে যাচ্ছে। ডানদিকে চা বাগানের কোয়ার্টারগুলো দেখা যাচ্ছে। অনিমেষ ওর বাড়িটার দিকে তাকাল। দরজা বন্ধ, বারান্দায় একটা নেড়ি কুকুর শুয়ে আছে। কেমন খাঁ খাঁ করছে জায়গাটা।
বোতল খুলতে খুলতে ছেলেটা বলল, এই আর এক নকশা শুরু হয়েছে মশাই নকশাল। এলো গেল কতশাল এখন দেখি নকশাল। মাল গোটানোর ধান্দা। সব শালা সিআইএ-র কারবার।
করুণাসিন্ধু অনিমেষের হাত ধরল, সিআইএ
আমেরিকার চর মশাই। এই সব করে দেশে একটা ঝামেলা ক্রিয়ে করে ওরা। পৃথিবীর সব দেশেই নাকি এই রকম করে। কাল রাত্রে শকুনকে বলছিল হাসিমারার ওসে। ছেলেটি বলল।
ওসি এসেছিল নাকি?
হ্যাঁ। শকুনকে বলতে এসেছিল কোন উটকো লোককে যেন কাজে নেওয়া না হয়। শকুনের বন্দুকটা থানায় জমা দিতে বলছিল।
কেন?
তেনারা নাকি বন্দুক ছিনতাই করে দেশে বিপ্লব করবেন। পেছনে বিছুটি পাতা ঘষে দিতে হয় হারামীদের। শেষের কথাগুলো জড়িয়ে যাচ্ছিল।
অনিমেষ খুব কষ্টে নিজেকে সামলে রাখল। এই দায়িত্বজ্ঞানহীন কথা শুনলে মাথা ঠিক রাখা মুশকিল হয়। কিন্তু এখানে কিছু করতে গেলে পুরো ঝক্কিটা করুণাসিন্ধুর ঘাড়ে পড়বে। বেচারা নিজেকে প্রচ্ছন্ন রেখে তাদের সাহায্য করছে ওকে বিপদে ফেলে লাভ নেই।
জলপাইগুড়ি শহর বাঁ পাশে রেখে ওরা শিলিগুড়ির পথ ধরল। যেতে যেতে অনিমেষের চোখে লেখাগুলো পড়ছিল। খুবই অযত্নে কিন্তু যেখানেই জায়গা পাওয়া গেছে সেখানেই এদিকের ছেলেরা লিখেছে, নকশালবাড়ি লাল সেলাম। নকশালবাড়ির লাল আগুন দিকে দিকে ছড়িয়ে দাও।
অর্থাৎ এদিকে সংগঠন খুবই সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এটা খুব ভাল কথা, বেশ আশার কথা।
শিলিগুড়ি শহরে পৌঁছে অনিমেষ করুণাসিন্ধুর কাছে বিদায় নিল। ঠিক হল বিকেল চারটের সময় স্টেট বাসের টার্মিনালের সামনে সে ওদের জন্য অপেক্ষা করবে। সামনের সিটে ছেলেটা তখন প্রায় আউট কিন্তু তবু তার তাল ঠিক আছে। বলল, আজ বিকেলে নয়, কাল সকাল আটটায় দেখা হবে। আজ আমরা ফিরছি না।
করুণাসিন্ধু পেছন থেকে চোখ টিপল। ছেলেটার কথায় গুরুত্ব দিতে নিষেধ করল সে। অর্থাৎ আজই ফিরে যেতে হবে। জিপ চলে গেলে অনিমেষ হাঁটা শুরু করল। সঙ্গে কোন মালপত্র নেই, কেমন হালকা লাগছে তাই। শিলিগুড়ির সব রাস্তাঘাট সে চেনে না। কিন্তু মোটামুটি একটি আন্দাজ রেখে সে এগোচ্ছিল। দুপাশের বাড়ির দেওয়ালগুলোয় আন্দোলনের নানা শ্লোগান লেখা। অথচ লোকজন যে সেগুলো খুব আগ্রহের সঙ্গে পড়ছে এমন দৃশ্য তার চোখে পড়ল না। হয়তো দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে সবাই। কিন্তু কিছুদর যেতে যেতে আর এক ধরনের পোস্টার চোখে পড়ল অনিমেষের। হঠকারী দূর হঠো, সিআইএ-র দালাল নকশাল নিপাত যাক, দেওয়ালে লিখে বিপ্লব হয় না হবে না। যারা এই শ্লোগান লিখেছে তারা নিজেদের অস্তিত্ব লুকোয়নি। চোয়াল শক্ত হল অনিমেষের। কংগ্রেস থেকে এই সব কথা লিখলে তার একটা মানে বোঝা যেত কিন্তু সংশোধনবাদের শীর্ষবিন্দুতে না পৌঁছালে এই রকম বিরোধিতা করা সম্ভব নয়। অর্থাৎ বিরোধ শুরু হচ্ছে এবং তা হচ্ছে আর একটি মার্কসবাদীদের সঙ্গেই। চমৎকার!
রাস্তার পাশে পাশে ডাকবক্সে মাধবীলতাকে লেখা চিঠি ফেলে বারীনদার দোকানের কাছাকাছি এসে অনিমেষ দাঁড়াল। মার্কেটের ভেতরে চট করে ঢুকতে রাজী নয়। ওখানে পরিস্থিতিটা কেমন তা না জানলে মুশকিলে পড়তে হতে পারে। সে রাস্তার দুপাশে তাকাল। খুবই স্বাভাবিক জীবন। তবু কিছুক্ষণ অপেক্ষা করল অনিমেষ। যদি কোন পরিচিত মুখ চোখে পড়ে তাহলে ভাল হয়। তারপর যেন দোকান খুঁজছে এমন ভঙ্গীতে মার্কেটের ভেতরে ঢুকে পড়ল একটু এগোতেই বারীনদার দোকান নজরে এল। বন্ধ। ভাল করে চোখ বুলিয়ে নিঃসন্দেহ হয়ে অনিমেষ বাইরে বেরিয়ে এল। কি ব্যাপার? এত বেলা পর্যন্ত তো বারীনদার দোকান বন্ধ থাকার থাকার কথা নয়। কিছু হয়ে গেল নাকি? পুলিশ এখানে হানা দিয়েছিল কিনা বোঝা যাচ্ছে না। যাই হোক বারীনদার বাড়িতে যাওয়া উচিত হবে না। ওদের যে আড্ডায় খবরাখবর পাওয়ার জন্য দেখা করতে যাওয়ার কথা সেখানে এখন কি অবস্থা কে জানে। আগে যতবার সে এসেছে এই বারীনদার মাধ্যমেই কাজ হয়েছে।
ভেতরে ভেতরে একটু নার্ভাস হয়ে পড়ল অনিমেষ। কি করবে বুঝে ওঠার আগেই সে ছেলেটাকে দেখতে পেল। রাস্তার উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে আছে। যেন একটু আলো দেখা গেল এই ভঙ্গীতে অনিমেষ পা চালালো। ছেলেটি বোধহয় অনেক আগে থেকেই তাকে লক্ষ্য করছিল কারণ অনিমেষ এগোন মাত্রই সে অলস ভঙ্গীতে হাঁটতে লাগল। দূরত্বটা কমতে দিচ্ছে না অথচ হাঁটাচলায় ব্যস্ততাও দেখাচ্ছে না। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে অনিমেষও আর ব্যস্ত হল না।
শিলিগুড়ি টাউন স্টেশনের কাছে এসে ছেলেটা দাঁড়াল। লেবেল ক্রসিং বন্ধ। সার দিয়ে দুপাশে গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে, ভীড়-ভাট্টায় একাকার। অনিমেষ কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করল, কি ব্যাপার।
খুব খারাপ। বিজনেসের বারোটা বেজে যাবে।
সে তো বুঝলাম কিন্তু হয়েছে কি?
দাদাকে শুইয়ে দিয়েছে ওরা।
খুলে বল।
বারীনদা মার খেয়েছে জানতে পেরে মাথা গরম হয়ে গেল অনিমেষের। সে ছেলেটিকে নিয়ে প্রায় বাতিল হয়ে যাওয়া প্ল্যাটফর্মের ওপর গিয়ে দাঁড়াল। জায়গাটা এককালে রমরমা ছিল। এখন স্টেশন হিসেবে এর কোন গুরুত্ব নেই। ফলে লোকজন চোখে পড়ে না।
ছেলেটি বললো, পার্টির বাবুরা খুব শাসিয়ে গিয়েছিল দাদাকে। নকশালদের সঙ্গে নাকি দাদা যোগাযোগ রাখে। দাদা অস্বীকার করেছিল কিন্তু ওরা বিশ্বাস করেনি। তারপর পুলিশ এসে একদিন খুব জেরাটেরা করে গেল। আমি ভাবলাম আর দোকানে আড্ডা বসবে না। কিন্তু কোথায় কি, ওই ছেলেগুলোর আসা বন্ধ হল না। শেষে এই গতরাতে ওরা এসে হামলা করল, বোমা মারল আর দাদাকে দোকান থেকে বের করে প্রায় মেরেই ফেলেছিল, অল্পের জন্যে বেঁচে গেছে। বলে গেছে দোকান যেন খোলা না হয় আর।
ওদের চেনো?
হ্যাঁ, পার্টির বাবুরা।
বারীনদা এখন কোথায়?
বাড়িতেই। সকালে আমাকে পাঠাল হালচাল দেখতে। আমি এসে আপনাকে দেখতে পেলাম। এখন যে কি হবে বুঝতে পারছি না।
অনিমেষ আর সময় নষ্ট করল না। ছেলেটিকে সেখানেই ছেড়ে দিয়ে একটা রিকশা নিয়ে সটান বারীনদার বাড়ির দিকে রওয়ানা হল। বারীনদার সঙ্গে অবিলম্বে দেখা করা দরকার। ওখানে গেলে বিপদ হবে কিনা সে ভাবনা এখন মাথা থেকে উড়ে গেছে।
এক ডাকেই সাড়া পাওয়া গেল। জানলা দিয়ে শব্দ এল, কে
আমি অনিমেষ।
কয়েক মুহূর্ত, বারীনদার মা দরজা খুললেন। একটু অচেনার ভাব কিন্তু সেটা খুব দ্রুত কেটে গেল, ছেলেকে মারল কেন ওরা?
আমি জানি না। অনিমেষ মাথা নীচু করল।
আমি ওকে জানি। ও তো কোন দোষ করেনি, তবে মারল কেন? বৃদ্ধার গলা এখন থমথম করছে। ঠিক সেইসময় অনিমেষ বারীনদার গলা শুনতে পেল, ওকে ভেতরে আসতে দাও মা।
খুব অনিচ্ছার সঙ্গেই বৃদ্ধা একপাশে সড়ে দাঁড়ালেন। অনিমেষ বারীনদার ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে চমকে উঠল! সর্বাঙ্গে ব্যান্ডেজ, বারীনদা শুয়ে আছেন। চোখ নাক এবং ঠোঁট ছাড়া মুখ দেখা যাচ্ছে না। ওকে দেখা মাত্র বললেন, অনেক দিন পর রেস্ট নিচ্ছি ভাই। এভাবে শুয়ে থাকা তো হয় না।
বারীনদাকে যারা আঘাত করেছে তাদের অনিমেষ চেনে না কিন্তু এই মুহূর্তে তার নিজেকে অপরাধী বলে মনে হচ্ছিল। সে এগিয়ে যেতে বারীনদা বিছানার একটা পাশ দেখিয়ে বললেন, বসো ভাই।
অনিমেষ বুজতে পারল বারীনদার নড়াচড়া করতেই অসুবিধে হচ্ছে! সে গম্ভীর গলায় জিজ্ঞাসা করল, কি হয়েছিল?
ইংরেজরা বলে না এসবই খেলার একটা অঙ্গ তাই। জলে নাম কিন্তু বেণী ভেজাবো না, তা আর কদিন চলে। কিন্তু তুমি খবর পেলে কি করে! তোমার তো এখন হাসিমারায় থাকার কথা।
অনিমেষ অবাক হল, হাসিমারার কথা আপনি জানেন?
জেনেছি।
অনিমেষের কপালে ভাঁজ পড়েছিল। সে প্রসঙ্গে ফিরে এল, আপনার দোকানে গিয়ে দেখলাম সেটা বন্ধ। বেরিয়ে এসে আপনার অ্যাসিস্টেন্টের দেখা পেলাম।
তুমি দোকান ঘুরে এসেছ? হঠাৎ বারীনদা উত্তেজিত হলেন।
হ্যাঁ, কেন?
খুব অন্যায় করেছ, তোমার এখানে আসা উচিত হয়নি।
আমি বুঝতে পারছি না।
আঃ, যা হবার তা তো হয়েই গেছে। আমার দোকানের ওপর ওদের নজর আছে। এ বাড়ির মুখে গলিতেও ওরা আছে। তুমি এখান থেকে যখন বেরোবে তখন সতর্ক হয়ে বেরিও। বারীনদা যেন হাল ছেড়ে দিলেন।
আপনি কি আমাকে খুলে বলতে চাইছেন না?
অনিমেষ, এসব নিয়ে কম চিন্তা করাই ভাল। তবু যখন জানতে চাইছ বলছি। কিছুদিন হল সি পি এম নকশালপন্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে নেমেছে। এরা সি আই এর চর, বিদেশী টাকায় গোলমাল করতে চাইছে, এইসব প্রচার ছিলই। এখন পাড়া দখল নিয়ে বোমাবাজি শুরু হয়েছে। এমন কি কোথায় নকশাল অ্যাকশন করবে তাও আগেভাবে পুলিশের কাছে খবর পৌঁছে যাচ্ছে। তুমি জানো আমার দোকানে এখনকার গল্পলিখিয়েরা আড্ডা মারে। তারা কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নয়। তোমাদের সঙ্গে আমার সম্পর্কের কথা বাইরের কেউ জানে না। কিন্তু তা সত্ত্বেও ওরা এসে আমাকে শাসিয়ে গেল। পরদিনই এল পুলিশ। ওরা কি করে খবর পেল তা বুঝতে পারলাম না। কিন্তু দল থেকেই খবর বেরিয়ে যাচ্ছে। পুলিশকে উলটোপাল্টা বোঝাতে পারলেও ওদের বোঝাতে পারছিলাম না। কারণ ওরা বুঝতে পারছে যে এ্যাদ্দিন জনসাধারণের সামনে ওদের যে চেহারাটা ছিল তা তোমরা কাগুজে বাঘে পরিণত করে দিয়েছ। নিজের অস্তিত্ব বাঁচাবার জন্যে ওরা তাই মরিয়া হয়ে পড়েছে। বারীনদা নিঃশ্বাস ফেলল। সামান্য সময় নিল দম নেবার জন্যে। অনিমেষ চুপচাপ মানুষটিকে দেখছিল। এবার জিজ্ঞাসা করল, ওরাই আপনাকে মেরেছে?
বারীনদা মাথা নাড়লেন, না।
তাহলে? কে মারল?
তোমরা।
অনিমেষ সোজা হয়ে বসল। মনুমেন্টের ওপর থেকে পড়ে গেলেও ধাক্কা খেত না। বারীনদা বললেন, ওই ইংরেজদের কথাটা, এসবই খেলার অঙ্গ। এইভাবেই মেনে নিয়েছি। তুমি কি জানো আন্দোলন এখন দ্বিমুখী হিয়ে গেছে। দুটো দল পাশাপাশি কাজ করছে। কেউ কাউকে সহ্য করতে পারছে না। এখন মেইন লাইন যাদের হাতে তাদের বক্তব্য হল, খতম অভিযান চালিয়েই আমরা সমস্ত সমস্যার সমাধান করব ভারতবর্ষের প্রতিটি গ্রামে খতম অভিযানের মাধ্যমে গেরিলা যুদ্ধ চালানো যায়, এই খতমের সগ্রামের প্রশ্নে যারা আমাদের বিরোধিতা করতে তাদের আমরা পার্টিতে থাকতে দেব না। কিন্তু এসব করতে গিয়ে আমরা জনসাধারণের কাছ থেকে সরে আসছি। সাধারণ মানুষ এখন আমাদের ভয় পাচ্ছে। একজন কনস্টেবলকে খুন করে কতটা বিপ্লব করা যায়? পুলিশের যে কর্তারা নকশাল হত্যার মদত দিচ্ছে তাদের গায়ে হাত পড়ছে না কেন? কলকাতায় যে সব এলাকায় সংঘর্ষ চলছে সেগুলো গরীব মদ্যবিত্তদের জায়গা। পার্কস্ট্রীট বড়বাজার এলাকায় কেন অ্যাকশন হচ্ছে না? আমি এসব প্রশ্ন তুলেছিলাম।
তারপর?
সি পি এম থেকে শাসিয়ে গেল, পুলিশ জেরা করল, আর সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পারলাম আমি ব্ল্যাক লিস্টেড হয়ে যাচ্ছি। তোমার বন্ধুরা সন্দেহ করলেন আমি গোপনে ওদের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছি। শুধু সন্দেহের বশে ওরা আমাকে মেরে গেল। যাচাই করার প্রয়োজন কেউ বোধ করছে না আজকাল।
অনিমেষ স্তব্ধ হয়ে শুনছিল। শুরুতেই যদি পার্টির মধ্যে ভাঙ্গন দেখা যায় তাহলে কাজ হবে কি করে? পার্টির মূল উদ্দেশ্য, ব্যাপক গণ-আন্দোলন সৃষ্টি করা, গ্রামাঞ্চলে কৃষকদের মুক্তাঞ্চলের সঙ্গে সঙ্গে ধর্মঘট সংঘটিত করে শাসনযন্ত্রকে চলৎশক্তিহীন করে দেওয়া, বিচ্ছিন্ন গেরিলা স্কোয়াডগুলোকে সংখ্যায় বৃদ্ধি করে গণমুক্তি ফৌজে পরিণত করা। কিন্তু বিভেদ যদি গোড়াতেই আসে তাহলে এসব হবে কি করে?
বারীনদা বললেন, অনিমেষ, এখন পার্টির মধ্যে হু হু করে বেনোজল ঢুকছে। গুন্ডামি করার এমন সুযোগ কজনে ছাড়ে! ঝাড়াই বাছাই করার সুযোগ আর নেই। আমার খুব ভয় হচ্ছে অনিমেষ।
আপনাকে মারার সিদ্ধান্ত কি পার্টি থেকে নেওয়া হয়েছিল?
আমার তো মনে হয় না আসলে এখন দু-তিন চারজন মানুষ যা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তাই ঠিক। আবার দুটো ভাগ হয়ে যাওয়ায় দুদলের দুইরকম সিদ্ধান্ত। কলকাতায় বিদ্যাসাগর বা সুরেন ব্যানার্জীর মূর্তি ভেঙে কি লাভ হচ্ছে অনিমেষ, আমার মনে হচ্ছে কেউ কিংবা কারা অত্যন্ত চতুরভাবে আমাদের আন্দোলনকে হত্যা করার জন্যে এইসব কাজ করাচ্ছে। আমরা তাদের হাতের পুতুল হয়ে যাচ্ছি।
কারা?
আমি জানি না।
আপনাকে মারল তার বিচার হবে না?
ছেড়ে দাও। আজ সকালে মহাদেববাবু খবর পাঠিয়েছিলেন, আমি তাকেও বলে দিয়েছি এ নিয়ে কোন ঝামেলা না করতে।
মহাদেবদা এখানে এসেছেন?
হা, ওহো তুমি জানো না। খুব মুশকিলে আছেন ভদ্রলোক। এখুনি ওঁর একটা শেলটার দরকার। আমি খাড়া থাকলে…
কোথায় আছেন উনি?
ঠিকানাটা জেনে নিয়ে অনিমেষ উঠল, বারীনদা, আমি খুব দুশ্চিন্তা নিয়ে ফিরছি আপনার গায়ে হাত তুলল কেন ওরা! এভাবে ভাঙ্গন শুরু হলো, কেন এই ভাঙ্গন?
নেতৃত্ব নিয়ে। বাঙালী কাউকে বেশিদিন সহ্য করতে পারে না।
গলির মুখে এসে অনিমেষ দুপাশে তাকাল। দুটি ছেলে নিরীহ মুখ করে ওর দিকে এগিয়ে আসছে। অনিমেষ বিপদের গন্ধ পেল। এই ধরনের মুখগুলো অনেক কথা বলে দেয়। তার একটা হাত জামার মধ্যে ঢুকে রিভলভারের স্পর্শ নিল।
কোথায় এসেছেন?
একটি ছেলে জিজ্ঞাসা করল।
বারীনদাকে দেখতে।
কি নাম?
কেন?
ঝামেলা না করে নাম বলুন। নামে কি দরকার, নিয়ে চল। দ্বিতীয় জন অসহিষ্ণু গলায় বলল।
অনিমেষ চোয়াল শক্ত করল, কেটে পড়, সুবিধে হবে না।
যাবে ফোট! কথাটা শেষ করার আগেই ছেলেটার হাতে চকচকে ছুরি ঝলসে উঠল। অনিমেষ আর দ্বিধা করল না। দ্রুত সরে গিয়ে রিভলভার বের করে চিৎকার করল, নড়লেই শেষ করে দেব। ছুরি ফেল।
ছেলে দুটো আচমকা রিভলভার দেখে এত ঘাবড়ে গিয়েছিল যে ওদের মুখ হাঁ হয়ে গেল। ছুরিটা মাটিতে পড়ল ঠক করে। অনিমেষের কানে দ্রুত জানলা দরজা বন্ধ হবার আওয়াজ এল। আশেপাশের বাড়ির লোক শামুকের খোলে মুখ লুকোচ্ছে। অনিমেষ আর সময় নষ্ট করল না। সে দ্রুত রাস্তা পেরিয়ে একটা রিকশায় উঠে চালাতে বলল। লোকটা তার হাতে রিভলভার দেখে জোরে জোরে প্যাডেল ঘুরোতে লাগল! অনিমেষ পেছনে তাকিয়ে দেখল ছেলে দুটো তখনও নড়ছে না। ওরা যেন কি করবে বুঝতে পারছে না। রিভলভারটা লুকিয়ে রাখল অনিমেষ। কিন্তু এতক্ষণে অনেকেই এটার অস্তিত্ব জেনেছে। জানুক, আর লুকোচুরি করে কি হবে মাইল দুয়েক এলোমেলো ঘুরে রিকশাওয়ালা মাথা নেড়ে প্রায় ছুটে চলে গেল খালি রিকশা নিয়ে। লোকটা ওর কাছে থেকে পয়সা নিল না কেন? ভালবেসে নিশ্চয়ই না। রিভলভারটা দেখতে পেয়ে লোকটা ওকে ভয় পেয়েছে। অনিমেষের খুব খারাপ লাগল। কিন্তু এখানে আর দাঁড়িয়ে থাকার কোন মানে হয় না। সে বেশ কিছুটা এগিয়ে একটা পাঞ্জাবীর দোকানে ঢুকে কিছু খেয়ে নিল।
এখন ভর দুপুর। অনিমেষ নির্দিষ্ট ঠিকানায় মহাদেবদাকে খুঁজে পেল। একমুখ দাড়ি, মহাদেবদাকে খুব অসুস্থ দেখাচ্ছে। ওকে দেখে বললেন, কিছুতেই তোমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। তোমার খবর যারা জানে তারা তো এখন আমার শত্রু।
মানে?
আমরা এখন বিরোধীপক্ষ অনিমেষ। যা হোক, তুমি কেমন আছ?
চলছে।
তুমি কোন দলে অনিমেষ খতমপন্থী না বিরোধী?
ঠিক করিনি।
আমার একটা থাকার জায়গা দরকার কদিনের জন্যে। তুমি সেরকম কোন জায়গার সন্ধান জানো?
অনিমেষ একটুও দ্বিধা করল না, মাথা নাড়ল সম্মতির।
আমি তোমাকে বিশ্বাস করতে পারি?
নিশ্চয়ই।
মহাদেবদা যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। তারপর চোখ বন্ধ করে বললেন, গত সপ্তাহে বরানগরে পুলিশ সুবাসকে মেরে ফেলেছে।
মহাদেবদার সঙ্গে রিকশায় যেতে যেতে অনিমেষ চোখ বন্ধ করে বসেছিল। বন্ধ চোখের পাতায় সুবাসদার মুখ। সেই উজ্জ্বল উদ্দাম সুবাসদা। কলকাতায় প্রথমে পা দেবার পর যে তাকে পথ থেকে কুড়িয়ে নিয়ে গিয়েছিল আহত হবার পর, যাকে সে প্রথম চিনেছিল হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে সেই সুবাসদা আজ নেই। কেমন ফাঁকা লাগছিল অনিমেষের। তার জীবনের বড় বড় বাকগুলো সে সুবাসদার হাত ধরেই ঘুরেছে। বিপ্লবের স্বপ্ন ছিল যার চোখে, স্বপ্ন অন্য মানুষের চোখে ছড়িয়ে দিতে যে জানতো, বিপ্লব শুরু হওয়ার আগেই তাকে চলে যেতে হল। সত্য বড় নিষ্ঠুর, দুরমুশের মত মানুষকে বিশ্বাসে বাধ্য করে। অনিমেষের বুকের ভেতরটা জ্বলে যাচ্ছিল। এখনও তার পেটের ওপর সুবাসদার দেওয়া অস্ত্র, তার আত্মরক্ষার কিংবা আক্রমণের জন্য সুবসাদার ভালবাসা, এখনও প্রমাণিত হয়নি সে এর কতটা যোগ্য!
আজ শিলিগুড়িতে এসে একটার পর একটা খারাপ খবর পেল অনিমেষ। বারীনদার মার খাওয়া, পার্টির ভাঙ্গন এবং সুবাসদার মৃত্যু। অনিমেষের কথা বলতে আর ভাল লাগছিল না। শিলিগুড়িতে আজ যে উদ্দেশ্যে আসা তার কোনটাই সম্ভব হল না। এখন মনে হচ্ছে যত তাড়াতাড়ি এখান থেকে চলে যাওয়া যায় ততই মঙ্গল। করুণাসিন্ধু ঠিকই বলেছিল, শিলিগুড়ি এখন সত্যিই গরম হয়ে আছে। কিন্তু এবার তার সঙ্গে আছেন মহাদেবদা। ওঁর মত ডেডিকেটেড নেতাকে যে করেই হোক বাঁচাতে হবে। অন্য কোন চিন্তা মাথায় আসছে না, এক করুণাসিন্ধু যদি রাজী হয়। এভাবে প্রকাশ্যে রিকশায় যাওয়াটাও বিরাট ঝুঁকি নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এছাড়া তো কোন উপায়ও নেই।
নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে খুশি হল অনিমেষ। করুণাসিন্ধুদের জিপ দাঁড়িয়ে আছে। পাশের একটা সিগারেটের দোকানে খুচরো পয়সা দিয়ে করুণাসিন্ধু এগিয়ে এল, আপনার জন্য খুব চিন্তায় ছিলাম। তারপর একজন অপরিচিত মানুষের উপস্থিত ভেবে চুপ করে গেল আচমকা।
অনিমেষ রিকশা থেকে নেমে করুণাসিন্ধুর সামনে এসে নীচু গলায় বলল, আপনার কাছে একটা সাহায্য চাই। একে শেলটার দিতে হবে কদিন।
আমার ওখানে তো আর জায়গা নেই।
কিন্তু তা সত্ত্বেও ব্যবস্থা করতে হবে।
কি আশ্চর্য, আপনি একা আছেন বলে কেউ কিছু ভাবছে না কিন্তু আর একজন গেলে একটা অন্যায় অনুরোধ হয়ে যাচ্ছে না?
বুঝতে পারছি, কিন্তু কোন রাস্তা দেখতে পাচ্ছি না। ইনি ধরা পড়লে আমাদের লজ্জার শেষ থাকবে না।
কে ইনি?
মহাদেবদা।
মহাদেববাবু? করুণাসিন্ধুর মুখ দ্রুত পালটে গেল। সে আরো নীচু গলায় অনিমেষের সঙ্গে কয়েকটা কথা বলে মাথা নেড়ে জিপের দিকে এগিয়ে গেল। এবার একটু হালকা হল অনিমেষ। সে রিকশাওয়ালাকে ভাড়া মিটিয়ে বলল, নেমে আসুন মহাদেবদা, এই জিপটায় উঠতে হবে।
আমরা কোথায় যাচ্ছি?
হাসিমারার কাছে একটা রিভারবেডে। এই ছেলেটি ওখানে কাজ করে। মহাদেবদাকে সঙ্গে নিয়ে জিপের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে অনিষের মনে পড়ল করুণাসিন্ধুর ছোটমালিকের কথা। সে যদি মহাদেবদাকে দেখে বিগড়ে যায়! করুণাসিন্ধু কিভাবে ম্যানেজ করবে ওকে?
জিপের ভেতর তাকিয়ে অনিমেষ অবাক হয়ে গেল। পেছনের সিটে পা গুটিয়ে ছোটমালিক হাঁ করে ঘুমুচ্ছে। করুণাসিন্ধু বলল, তাড়াতাড়ি উঠে পড়ুন।
অনিমেষ ছেলেটিকে ইশারা করে দেখাতে করুণাসিন্ধু বলল, পুরো আউট হয়ে গেছে। কাল সকালের আগে ডিস্টার্ব করবে না। অবশ্য আউট না হলে আজ বিকেলে ফেরা যেত না। উঠে পড়ুন।
ওরা পেছনে উঠে বসতেই জিপ ছেড়ে দিল। বিশ্রী টোকো গন্ধ ছড়াচ্ছে ছেলেটির মুখ থেকে। অনিমেষের শরীর গুলিয়ে উঠছিল। মহাদেবদা একটা কোণে ঠেস দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছেন। চশমাটা বা হাতে ধরা। বাইরে শিলিগুড়ি শহর সরে সরে যাচ্ছে। অনিমেষ ছেলেটির দিকে তাকাল, মৃতদেহের মত নিঃসাড়। এটাকে মাঝরাস্তায় কোন জঙ্গলের মধ্যে নামিয়ে দিলে কেমন হয়। ড্রাইবারটা না থাকলে তাই করত সে। মহাদেবদাকে ড্রাইভার লক্ষ্য করছিল, কি ভাবছে কে জানে। বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ যাওয়ার পর মহাদেবদা বললেন, বারীনের খবর শুনেছ?
মাথা নাড়ল অনিমেষ। তারপর মহাদেবদার মুখের দিকে তাকাল।
মহাদেবদা চোখ বন্ধ করেই বললেন, মুঠোটা খুলে গেছে অনিমেষে, আঙ্গুলগুলো যে যার ইচ্ছে মতন কাজ করছে। শত্রুপক্ষের এখন মহা সুবিধে।
কেন এমন হচ্ছে?
মত পার্থক্য। আমরা বিপ্লব করি কিংবা খেলি, আমাদের প্রত্যেকের যে নিজের মত আছে। আমরা চাই প্রত্যেকে আমারটাই মানুক।
তাহলে আমরা কি হেরে যাব?
সঙ্গে সঙ্গে চোখ খুললেন মহাদেবদা, কে বলল হেরে যাব? নো, নেভার। যারা আজ ভুল করছে তাদের বাদ দিয়েই আমরা এগিয়ে যাব।
কিন্তু একমত হবার কি উপায় নেই?
আছে, যদি প্রয়োজনটা এক হয়। একটা কনস্টেবলের গলা কেটে কিংবা একটা মূর্তির মুন্ডু ভেঙ্গে এদেশে বিপ্লব আসতে পারে না। এতে প্যানিক ছড়ানো যায়। এসব করে আমরা ইতিমধ্যে জনসাধারণকে আমাদের সম্পর্কে ভয় পাইয়ে দিচ্ছি। ওদের বাদ দিয়ে বিপ্লব হবে কি করে তা এরা চিন্তা করছে না। কিন্তু একবার পাহাড় ছেড়ে বেরিয়ে এলে ঝরণা আর ফিরে যেতে পারে না। অতএব আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। মুশকিল হল সমুদ্রের পথটা এখন ক্রমশ অস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মহাদেবদা হাসবার চেষ্টা করলেন।
সারা দেশ জুড়ে একটা সেন্ট্রাল কমিটি তাহলে গঠন হল না?
না।
তাহলে? গলা কেঁপে গেল অনিমেষের।
অপেক্ষা করো। অপেক্ষা করা ছাড়া কোন উপায় নেই। যেন যুদ্ধ শুরু করার মুখে জানা গেল কারো রাইফেলে গুলী নেই। অনিমেষ দাঁতে দাঁত চাপল। না, এ হতে পারে না। হাজার হাজার ছেলে আজ ভবিষ্যৎ না ভেবে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে, তারা কিছুতেই থেমে থাকতে পারে না। যারা থিওরি নিয়ে মাথা ঘামান তাদের বিরোধের জন্য এতগুলো আগুন নিবে যেতে পারে না। যেতে যেতে মহাদেবদার কাছে আরও অনেক খবর শুনল অনিমেষ। কলকাতা বীরভূম এবং মেদিনীপুরে পুলিশ এখন নকশাল-হত্যার জন্য সুপরিকল্পিত ব্যবস্থা নিয়েছে। ছেলেদের ধরতে পারলে কুকুর বেড়ালের মত প্রকাশ্যে হত্যা করছে তারা। দলের সবাই এখন আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে গেছে। সাধারণ মানুষ প্রথম দিকে ছেলেদের আশ্রয় দিচ্ছিল, খাবার দিচ্ছিল কিন্তু এখন যেন তারা সন্ত্রস্ত। এক একটা এলাকা ঘিরে ফেলে পুলিশ চিরুনির মত তল্লাস চালিয়ে সন্দেহজনক ছেলেদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। পুলিশের সঙ্গে মদত দিচ্ছে পুনর্নির্বাচিত মার্কসবাদে দীক্ষিত এক বামপন্থী দল। তাদের নেতা ময়দানে প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছেন যে তিনি ইচ্ছে করলে একদিনে নকশাল আন্দোলন ঠান্ডা করে দিতে পারেন। বাইরে থেকে আন্দোলন ভাঙ্গার এই প্রচেষ্টা বোঝা যায় কিন্তু দলের ভেতর থেকে সবকিছু ভেস্তে দেবার জন্য সুপরিকল্পিত প্রচেষ্টা চলছে মহাদেবদা বলতে পারলেন না কোন বিদেশী শক্তি কিংবা কোন রাজনৈতিক দলের এ ব্যাপারে কোন ভূমিকা আছে কিনা, কিন্তু সন্দেহ আন্দোলন বিদেশী শক্তির পরিকল্পিত প্রচেষ্টা। ঠিক এইরকম আন্দোলন পৃথিবীর নানান দেশে সময়ে সময়ে হয়েছে। এতে আর কিছু না হোক সেই দেশের সরকার এমন বিব্রত হয় যে তা থেকে সেই শক্তি হয়তো মুনাফা পেতে পারে। কিন্তু অনিমেষ তো বটেই, মহাদেবদাও এ ব্যাপারে কোন তথ্য জানে না।
মহাদেবদা চুপ করে গেলে অনিমেষ দেখল জিপ স্বৰ্গছেঁড়া ছাড়িয়ে গেল। করুণাসিন্ধু এতক্ষণ কোন কথা বলেনি। চুপচাপ সামনে তাকিয়ে আছে। এপাশে ছোটমালিক নিঃশব্দে পড়ে আছে। করুণাসিন্ধু নকশাল আন্দোলনের সমর্থক। ওর পরিচয় এবং মানসিকতা অনিমেষ জানে। কিন্তু সক্রিয়ভাবে করুণাসিন্ধু আন্দোলনে নামেনি। সে সাহায্য করছে কিন্তু তাকে বিপদে ফেলতে ইচ্ছে নেই অনিমেষের। মহাদেবদার কথায় জানা গেছে যে পুলিশ তাকে ধরলেই হত্যা করবে। কথাটা করুণাসিন্ধুও শুনেছে। যদি কোন কারণে তার মতটা পাল্টে যায়। একটা বিকল্প ব্যবস্থা খুঁজতে হবে। ফুন্টশিলিং-এ ওদের সমবেত হবার দিনটা এসে গেল।
দুপাশে জঙ্গল, একটানা ঝিঁঝি শব্দ করে যাচ্ছে। সন্ধ্যে হয়ে গেছে। কিন্তু এখনো পৃথিবী থেকে শেষ আলোটুকু মুছে যায়নি। অনিমেষ সামনের দিকে তাকিয়েছিল। ড্রাইভার এবং করুণাসিন্ধুর মাথার মাঝখান দিয়ে সামনের কাঁচ ভেদ করে সরু পিচের রাস্তাটা দেখছিল সে। আর মিনিট দশেকের মধ্যেই গন্তব্যে পৌঁছে যাবে। হঠাৎ অনিমেষের চোখে পড়ল অনেক দূরে ঠিক রাস্তার মাঝখানে একটা কালো বিন্দু নড়ছে। একটু বাদেই বোঝা গেল ওটা একটা মানুষ। লোকটি চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল, যেন জিপটি চিনতে পেরেই হঠাৎ দুহাত তুলে নাচতে লাগল। বোঝা যাচ্ছে লোকটা ওদের থামতে বলছে। ড্রাইভার চাপা গলায় বলল, মনে হচ্ছে সামনে হাতি বেরিয়েছে।
করুণাসিন্ধু বলল, হাতি?
ড্রাইভার স্পীড কমাচ্ছিল, হাতি বড় রাস্তায় নামলে লোকে সাবধান করে দেয়। কিন্তু ততক্ষণে অনিমেষ ওকে চিনে ফেলেছে। সে চিৎকার করে গাড়িটাকে থামাতে বলল। ড্রাইভার যেন একটু অবাক হয়ে গাড়িটা থামাতেই অনিমেষ লাফিয়ে নেমে ছুটে গেল সিরিলের কাছে। সিরিল উত্তেজিত, তার কালো মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। কিন্তু প্রথমে সে যেন অনিমেষকে চিনতেই পারল না। পরক্ষণেই দাড়িটা কামানো হয়েছে বুঝতে পেরেই সে তার হাত চেপে ধরল।
অনিমেষ জিজ্ঞাসা করল, কি হয়েছে, তুমি এখানে কেন?
নেমে পড়ুনচটপট, ওদিকে যাবেন না।
কেন, কি হয়েছে?
আপনারা চলে যাওয়ার পর পুলিশ ক্যাম্পে ক্যাম্পে সার্চ শুরু করেছে। ওরা কি আমাদের কথা জেনে গেছে। আমি কোন মালপত্র নিয়ে আসতে পারিনি।
সিরিল মুখ দিয়ে বাতাস টানছিল।
অনিমেষের কপালে ভাঁজ পড়ল। ওরা যে রিভারবেডের ক্যাম্পে আছে তা পুলিশ জানল কি করে? কোনরকম সন্দেহ তারা উৎপাদন করেনি, তাহলে! যাওয়ার সময় ছোটমালিক বলেছিল যে দারোগা কাম্পে এসেছিল। সেটা কি এই উদ্দেশ্যেই? এখন নিশ্চয়ই ক্যাম্পে ফিরে যাওয়া যায় না। অথচ মহাদেবদা সঙ্গে আছেন। যেমন করেই হোক ওঁকে বাঁচাতে হবে। সে সিরিলের কাঁধে হাত রেখে বলল, সাবাস কমরেড, তুমি এখানে না এলে আমরা বিপদে পড়তাম।
সিরিলের কালো মুখ সাদা মুক্তো ঝলসে উঠল।
অনিমেষ একটু চিন্তাণ্বিত গলায় বলল, কিন্তু মুশকিল হল আমার সঙ্গে মহাদেবদা আছেন। ওঁকে বাঁচানো দরকার। কোথায় যাওয়া যায়!
আমাদের প্রথম সারির নেতা। কলকাতা থেকে এসেছেন। পুলিশ ওঁকে পেলেই মেরে ফেলতে পারে। অনিমেষ কথাটা বলে ঘুরে দাঁড়াল। জিপটা খানিক দূরে, করুণাসিন্ধু গাড়ি থেকে নেমে বনেটে ঠেস দিয়ে ওদের দেখছে। অনিমেষ ওকে ডাকল। করুণাসিন্ধু বেশ গম্ভীর মুখে কাছে আসতেই অনিমেষ বলল, আপনাদের ক্যাম্পে পুলিশ আমাদের জন্যে বসে আছে। এ অবস্থায় আমি মহাদেবদাকে নিয়ে ওখানে যেতে চাইছি না। অনিমেষ জানাল।
কি করবেন?
আমাদের হাসিমারায় পৌঁছে দিন।
করুণাসিন্ধু মাথা নাড়ল, এখন আর সম্ভব নয়।
কেন?
আপনাদের জন্যে আমি আর ঝুঁকি নিতে রাজী নই। অনেক করেছি।
করেছেন বলে আমি কৃতজ্ঞ। কিন্তু এ অবস্থায় যদি এখানে ছেড়ে দেন তাহলে সেই করার কোন মূল্য থাকবে না। অনিমেষ যথেষ্ট নরম গলায় বলল।
দেখুন ইতিমধ্যেই আমার যা সর্বনাশ হবার তা হয়ে গেছে। আপনি আমার সঙ্গে ছিলেন বলে হয়তো অনেক কৈফিয়ত দিতে হবে। আমি আর রিস্ক নিতে চাই না। করুণাসিন্ধু ফেরার জন্যে ঘুরতেই অনিমেষ জিজ্ঞাসা করল, কিন্তু হাসিমারা পর্যন্ত ফিরে যেতে আপনার আপত্তি কেন?
করুণাসিন্ধু বলল, ড্রাইভার পুলিশের কাছে ঘটনাটা জানিয়ে দেবে।
অনিমেষ আবেদনের ভঙ্গীতে বলল, আপনি আর একবার ভেবে দেখুন।
না, ভাববার কিছু নেই। অনেক হয়েছে।
আপনি আন্দোলনের বিপক্ষে যাচ্ছেন। অনিমেষের গলা শক্ত হল।
আন্দোলন? সে তো শিকেয় উঠেছে। আমি আর এই হঠকারিতার সঙ্গে যুক্ত হতে চাই না।
করুণাসিন্ধু ফিরে যাচ্ছিল। অনিমেষ খুব দ্রুত মন স্থির করে নিল। সে সিরিলের মুখের দিকে তাকাতেই সিরিল মাথা নাড়ল। যেন তার মনের কথা সিরিল বুঝে নিয়েছে। যতটা সম্ভব নিরাসক্ত মুখ করে জিপের কাছে এগিয়ে গেল। ভেতরে মহাদেবদা যেন কিছুটা আন্দাজ করেই উদ্বিগ্ন চোখে তাকিয়ে আছেন। ড্রাইভার ওদের দেখছে। জিপের বাইরে দাঁড়িয়ে করুণাসিন্ধু বলল, আপনি নেমে আসুন। আমি আর সময় নষ্ট করতে রাজী নই!
হতভম্ব মহাদেবদার গলা শোনা গেল, কি হল?
ততক্ষণে অনিমেষরা করুণাসিন্ধুর পেছনে এসে গেছে। এবং কিছু বোঝার আগেই সিরিল ঝাঁপিয়ে পড়ল সামনে। করুণাসিন্ধুর গলায় হাতের প্যাঁচ দিয়ে পেছনে টানার চেষ্টা করতেই সে ঘুরে লাথি মারতে চাইল। কিন্তু সিরিল আরও চটপটে। সে দুহাত এক করে প্রচণ্ড জোরে আঘাত করল করুণাসিন্ধুর মাথায়। ওরকম রোগা ছেলে যে এমন জোরে আঘাত করতে পারে তা অনিমেষ ভাবতে পারেনি। দেখা গেল করুণাসিন্ধুর শরীরটা টলতে টলতে মাটিতে উপুড় হয়ে পড়ল। অনিমেষ দেখল সিরিলের কালো মুখে আবার মুক্তো ঝলসাচ্ছে।
ড্রাইভার ব্যাপারটা দেখে হকচকিয়ে গিয়েছিল। করুণাসিন্ধু পড়ে যেতেই সে ইঞ্জিনটা চালু করল। কিন্তু অনিমেষ সঙ্গে সঙ্গে তার শরীরে রিভালভার ঠেসে ধরল, যা বলব তা না শুনলে মরতে হবে তোমাকে।
রিভলভার দেখে লোকটা ঠকঠক করে কাঁপতে লাগল। কোনরকমে ঘাড় নেড়ে সে জানাতে চাইল সে কথা শুনবে। অনিমেষ রিভলভারটা মহাদেবদার হাতে দিয়ে দিয়ে বলল, এটার দিকে লক্ষ্য রাখুন, আমরা ওটার ব্যবস্থা করছি।
করুণাসিন্ধুর শরীরটাকে ওরা দুজনে ধরাধরি করে রাস্তা থেকে নেমে এল। দুপাশে ঘন জঙ্গল। জঙ্গলে এখন বেশ অন্ধকার। মানুষের চোখের আড়ালে ওরা করুণাসিন্ধুকে শুইয়ে দিল। তারপর জিপে ফিরে আসতেই খেয়াল হল আর একজনের কথা। এই অবস্থায় আর কোন ঝুটঝামেলা বাড়ানো উচিত নয়। ছোট মালিকের নেশা কেটে গেছে কিনা বোঝা যাচ্ছিল না কিন্তু এখনও তার চোখ বন্ধ কিন্তু মুখে অস্পষ্ট শব্দ বের হচ্ছে। ওরা তার শরীরটা নিয়ে নীচে নামতে দূরে গাড়ির হর্ণ শোনা গেল। অনিমেষ বলল, কেউ কথা বলবেন না। গাড়িটা দাঁড়ালে বলবেন ইঞ্জিনে গোলমাল হয়েছে। লোক গেছে খবর দিতে।
দ্রুত ওরা ছোট মালিককে নিয়ে জঙ্গলে ঢুকে গেল। এইসময় গোঙানি শুরু হয়ে গেল। ছোট মালিক জিজ্ঞাসা করল, কে, কে নিয়ে যাচ্ছে আমাকে? অর্থাৎ এর জ্ঞান ফিরে এসেছে। মাটিতে শুইয়ে দিতেই সে উঠে বসতে চাইল। অনিমেষ আর ঝুঁকি নিল না। সজোরে একটা লাথি মারল ছোটমালিকের পেটে। কক্ করে একটা শব্দ করেই শরীরটা নিথর হয়ে গেল। সেই মুহূর্তে গাড়িটা হেড লাইটের আলোয় রাস্তা আলোকিত করে হুস করে বেরিয়ে গেল। জিপটাকে তারা নিশ্চয়ই দেখেছে কিন্তু থামবার কোন চেষ্টা করল না। অনিমেষ সিরিলকে আর একবার করুণাসিন্ধুর খোঁজ নিতে বলল। কয়েক মিনিট বাদেই সিরিল এসে জানাল সব ঠিক আছে।
ওরা রাস্তায় উঠে এল। চারধার চুপচাপ, এমনকি ঝিঁঝিঁগুলোও শব্দ করছে না। এবার সিরিল চাপা গলায় বলল, ড্রাইভারটাকে শুইয়ে দিন।
গাড়ি চালাবেক কে?
আমি পারি!
ও হ্যাঁ। অনিমেষের নিজের ওপরেই রাগ হল, এই উত্তেজনার সময় সে মাথাটা ঠান্ডা রাখতে পারেনি! সে এগিয়ে গিয়ে মহাদেবদার কাছ থেকে রিভলভারটা চেয়ে নিয়ে ড্রাইভারকে বলল, নেমে দাঁড়ান।
সঙ্গে সঙ্গে দুহাত জোড়া করে লোকটা ককিয়ে উঠল, আমি কিছু জানি না বাবু, আমাকে ছেড়ে দিন।
তোমাকে কিছু জানতে হবে না। নেমে এস।
অনিমেষের আদেশ সত্ত্বেও লোকটা হাউ হাউ করে কাঁদতে লাগল। আর সময় নষ্ট করা যায় না। সিরিল গিয়ে ওকে টানতেই যেন গড়িয়ে নেমে এল লোকটা। ওর শরীরে ভয়েতেই কোন শক্তি অবশিষ্ট ছিল না। সিরিল ওকে ঠেলতে ঠেলতে জঙ্গলে নিয়ে চলল। অনিমেষ বুঝল তাকে যেতে হবে না।
একটু বাদেই সিরিল হাত মুছতে মুছতে বেরিয়ে এল। সেই নিরীহ ভাবটুকু উধাও। এসেই জিপে লাফিয়ে উঠল। অনিমেষরা জায়গা নিতেই একেবারে ইউ টার্ন করে জিপ ঘুরিয়ে ছুটে চলল হাসিমারার দিকে।
এখন গাড়িতে তিনজন কিন্তু কেউ কোন কথা বলছিল না। অনিমেষ ভেবে পাচ্ছিল না এখন কোথায় যাওয়া যায়! আজ রাত্রের একটা শেলটার দরকার। কাল সকাল হলে একটা ব্যবস্থা করা যাবে। তাছাড়া এতক্ষণে বেশ খিদে পেয়ে গেছে। কোথাও বসে খেয়ে নেওয়া দরকার। কিন্তু এদিকে বেশি গাড়ি চলে না বলেই বোধহয় কোন চটি নেই। খেতে হলে হাসিমারায় যেতে হবে। যদি পুলিশ তাদের গন্ধ পেয়ে থাকে তাহলে হাসিমারায় গিয়ে খাওয়া মানে যেচে জেলখানায় ঢোকা।
অনিমেষ যেন নিজেকেই প্রশ্ন করল, কোথায় যাওয়া যায়?
মহাদেবদা বললেন, এদিকে তোমার জানাশোনা কেউ নেই?
অনিমেষ ঘাড় নাড়ল। তারপরেই ওর খেয়াল হল জলপাইগুড়িতে চলে গেলে কেমন হয়! ওখানে যে কোন পরিচিতের বাড়িতে কয়েকদিন থাকা যেতে পারে। নিজের বাড়ির কথা একবার মনে এলেও সে এখন মহীতোষের মুখোমুখি হতে চাইল না। কথাটা সিরিলকে বলতেই সে ঘাড় নাড়ল, অতদূর যাওয়ার মত তেল নেই বোধহয়। মুশকিলে পড়ে যেতে হবে।
তাহলে?
ফুন্টশিলিং-এ চলুন।
হাসিমারা এসে গেল। এই রাতে তেমন দোকানপাট খোলা নেই। তেমাথা থেকে বাঁ দিকে বাঁক নিল ওরা। ফুন্টশিলিং-এ হোটেল আছে। জায়গাটা ভূটানে। অতএব ভারতীয় পুলিশের কোন এক্রিয়ার নেই। অনিমেষ কিছুটা স্বস্তি পেল। এদেশের পুলিশ ওদেশের সরকারকে অনুরোধ করে ওদের ধরতে চাইলে অনেক সময় পাওয়া যাবে।