মেয়েটি চলে যাবার পর অসাড় হয়ে অনি শুয়ে থাকল বালির ভেতর। ওর মাথা ঘুরছিল এবং বুঝতে পারছিল ওরা খুব খারাপ কিছু করছিল যেটা সবার সামনে করা যায় না। মেয়েটা তা হলে। প্রথমে অত ছটফট করছিল কেন? কেন লোকটাকে ঘুসি মারছিল। আবার পরে লোকটা যখন ওর বুকে। অমন দাঁত বসিয়ে দিল তখন ও কেন যন্ত্রণা পায়নি? কেন তখনও ও মজুরটাকে আদর করছিল। হঠাৎ ওর মালবাবুর ছোট মেয়ে সীতার কথা মনে পড়ে গেল। সীতা ওর চেয়ে এক বছরের ছোট। বাড়ি থেকে খুব কম বের হয়। কিন্তু ওর হাত একটু শক্ত করে ধরলে ভ্যা করে কেঁদে ফেলে। সীতাও কি বুকে ওরকম করে কামড়ে দিলে কাঁদবে না। সঙ্গে সঙ্গে ওর মনে পড়ল সীতার বুক তো ওদের মতোই একদম সমান। তা হলে বড় হলে সীতার বুক নিশ্চয়ই এই কামিনটার মতো হয়ে যাবে। আর বুক বড় হলে মেয়েটার নিশ্চয়ই ব্যথা লাগে না। সমস্যাটার এইরকম একটা সমাধান করতে পেরে অনির অন্যমনস্ক হয়ে পড়তেই চাপ লেগে বালির দেওয়াল ধসে পড়ল। অনি দেখল ওপরের বালি হুড়মুড়িয়ে তাকে চাপা দিতে আসছে। কোনোরকমে টেনে-হিঁচড়ে ও বাইরের খোলা হাওয়ায় বেরিয়ে এল।
বাড়ি শেষ হয়ে গেলে হেমলতার চাপে সরিৎশেখর ঘটা করে গৃহপ্রবেশের ব্যবস্থা করলেন। ঝকঝকে তকতকে বাড়ির দিকে তাকালে তার চোখ জুড়িয়ে যায়। নতুন রঙ আর সিমেন্টের গন্ধ নাক ভরে নেন তিনি। সাধুচরণের সঙ্গে এখানকার কালীবাড়ির পুরোহিতদের খুব ভাব আছে। তিনি সরিৎশেখরকে কলকাতার কাছে হালিশহরে এক তান্ত্রিকে খবর দিলেন, যিনি নাকি সিদ্ধ পুরুষ। অনেক চেষ্টাচরিত্র করে তাকে আনানোর ব্যবস্থা হল। স্বৰ্গছেঁড়া থেকে সবাই এসে হাজির। এখানে আসার পর অনি একদিনও স্বৰ্গছেঁড়ায় যায়নি। সরিৎশেখর পাঠাতে চেয়েছিলেন, কিন্তু মহীতোষ জানিয়েছিলেন এত ঘনঘন এলে শহরে মন বসবে না। মাধুরী আসার পর হেমলতা বললেন, দ্যাখ, তোর ছেলে কত রোগা হয়ে গেছে।
মাধুরী ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বললেন, নোগা কোথায়, ও দেখছি বেশ লম্বা হয়েছে!
হেমলতা বললেন, হবে না কেন? এ-বংশের ধারাই তো লম্বাটে।
একসময় একটু একলা পেয়ে মাধুরী ছেলেকে জিজ্ঞাসা করলেন, হ্যাঁ রে, আমার জন্যে তোর মন-কেমন করে না? আর সঙ্গে সঙ্গে অনি ভ্যা করে কেঁদে ফেলল।
সেই কান্না শুনে বাড়ির সবাই ছুটে এসে দেখল অনি মাধুরীকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। মাধুরী ছেলেকে যত থামাতে চান কান্না তত বেড়ে যেতে লাগল। শেষ পর্যন্ত হেমলতা বললেন, না ভাই, এতদিন পর দেখা হল আর তুমি ওকে বকাবকি করছ-এটা উচিত হয়নি।
এমনকি সরিৎশেখর অবদি যেতে-যেতে হঠাৎ দাঁড়িয়ে বললেন, না বৌমা, তুমি বড় ছেলেকে শাসন কর। মাধুরী লজ্জায় মরে যান। ছেলে যে এভাবে কেঁদে উঠবে বুঝতে পারেননি তিনি।
তোড়জোড় চলতে লাগল গৃহপ্রবেশের। কাল মঙ্গলবার, সব মিলিয়ে দিন ভালো। আত্মীয়স্বজন তো আছেনই, সরিৎশেখর শহরের সমস্ত বন্ধুদের নিমন্ত্রণ করেছেন। কিন্তু আজ সকাল থেকেই আকাশ মেঘলা, টিপটিপিয়ে বৃষ্টি পড়ছে। কে যেন এসে বলে গেল তিস্তার জল বেড়েছে। তোরে বেড়াতে যাবার সময় সরিৎশেখর তেমন কিছু লক্ষ করেননি। উঠোনে ভিয়েন বসেছে। কাল দুপুরে খাওয়াদাওয়া হলেও আজ থেকে মেয়েদের রান্নাঘরে যেতে হচ্ছে না। সন্ধের ট্রেনে হালিশহরের সিদ্ধপুরুষ একজন শিষ্যসমেত এসে গেলেন। সরিৎশেখর মহীতোষকে নিয়ে স্টেশনে গিয়েছিলেন তাকে আনতে। কিন্তু তিনি সোজা গিয়ে কালীবাড়িতে উঠলেন। ঠিক হল পরদিন ভোরে পুরোহিমশাই-এর সঙ্গে উনি চলে আসবেন। খাওয়াদাওয়া সারতে রাত হয়ে গেল। ঠিক হল টিনের চালায় মেয়েরা বাচ্চাদের নিয়ে শোবেন। যেহেতু গৃহপ্রবেশ এখনও হয়নি তাই সরে নয়, নতুন বাড়ির ঢাকা বারান্দায় শতরঞ্জি বিছিয়ে ছেলেদের শোওয়ার ব্যবস্থা হল। শোওয়ার আগে ক্যাম্পখাট পেতে সরিৎশেখর একবার অনির খোঁজ করতে হেমলতা বললেন, ও মায়ের সঙ্গে শোবে।
বাড়ি শেষ হয়ে গেলে হেমলতার চাপে সরিৎশেখর ঘটা করে গৃহপ্রবেশের ব্যবস্থা করলেন। ঝকঝকে তকতকে বাড়ির দিকে তাকালে তার চোখ জুড়িয়ে যায়। নতুন রঙ আর সিমেন্টের গন্ধ নাক ভরে নেন তিনি। সাধুচরণের সঙ্গে এখানকার কালীবাড়ির পুরোহিতদের খুব ভাব আছে। তিনি সরিৎশেখরকে কলকাতার কাছে হালিশহরে এক তান্ত্রিকে খবর দিলেন, যিনি নাকি সিদ্ধ পুরুষ। অনেক চেষ্টাচরিত্র করে তাকে আনানোর ব্যবস্থা হল। স্বৰ্গছেঁড়া থেকে সবাই এসে হাজির। এখানে আসার পর অনি একদিনও স্বৰ্গছেঁড়ায় যায়নি। সরিৎশেখর পাঠাতে চেয়েছিলেন, কিন্তু মহীতোষ জানিয়েছিলেন এত ঘনঘন এলে শহরে মন বসবে না। মাধুরী আসার পর হেমলতা বললেন, দ্যাখ, তোর ছেলে কত রোগা হয়ে গেছে।
মাধুরী ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বললেন, নোগা কোথায়, ও দেখছি বেশ লম্বা হয়েছে!
হেমলতা বললেন, হবে না কেন? এ-বংশের ধারাই তো লম্বাটে।
একসময় একটু একলা পেয়ে মাধুরী ছেলেকে জিজ্ঞাসা করলেন, হ্যাঁ রে, আমার জন্যে তোর মন-কেমন করে না? আর সঙ্গে সঙ্গে অনি ভ্যা করে কেঁদে ফেলল।
সেই কান্না শুনে বাড়ির সবাই ছুটে এসে দেখল অনি মাধুরীকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। মাধুরী ছেলেকে যত থামাতে চান কান্না তত বেড়ে যেতে লাগল। শেষ পর্যন্ত হেমলতা বললেন, না ভাই, এতদিন পর দেখা হল আর তুমি ওকে বকাবকি করছ-এটা উচিত হয়নি।
এমনকি সরিৎশেখর অবদি যেতে-যেতে হঠাৎ দাঁড়িয়ে বললেন, না বৌমা, তুমি বড় ছেলেকে শাসন কর। মাধুরী লজ্জায় মরে যান। ছেলে যে এভাবে কেঁদে উঠবে বুঝতে পারেননি তিনি।
তোড়জোড় চলতে লাগল গৃহপ্রবেশের। কাল মঙ্গলবার, সব মিলিয়ে দিন ভালো। আত্মীয়স্বজন তো আছেনই, সরিৎশেখর শহরের সমস্ত বন্ধুদের নিমন্ত্রণ করেছেন। কিন্তু আজ সকাল থেকেই আকাশ মেঘলা, টিপটিপিয়ে বৃষ্টি পড়ছে। কে যেন এসে বলে গেল তিস্তার জল বেড়েছে। তোরে বেড়াতে যাবার সময় সরিৎশেখর তেমন কিছু লক্ষ করেননি। উঠোনে ভিয়েন বসেছে। কাল দুপুরে খাওয়াদাওয়া হলেও আজ থেকে মেয়েদের রান্নাঘরে যেতে হচ্ছে না। সন্ধের ট্রেনে হালিশহরের সিদ্ধপুরুষ একজন শিষ্যসমেত এসে গেলেন। সরিৎশেখর মহীতোষকে নিয়ে স্টেশনে গিয়েছিলেন তাকে আনতে। কিন্তু তিনি সোজা গিয়ে কালীবাড়িতে উঠলেন। ঠিক হল পরদিন ভোরে পুরোহিমশাই-এর সঙ্গে উনি চলে আসবেন। খাওয়াদাওয়া সারতে রাত হয়ে গেল। ঠিক হল টিনের চালায় মেয়েরা বাচ্চাদের নিয়ে শোবেন। যেহেতু গৃহপ্রবেশ এখনও হয়নি তাই সরে নয়, নতুন বাড়ির ঢাকা বারান্দায় শতরঞ্জি বিছিয়ে ছেলেদের শোওয়ার ব্যবস্থা হল। শোওয়ার আগে ক্যাম্পখাট পেতে সরিৎশেখর একবার অনির খোঁজ করতে হেমলতা বললেন, ও মায়ের সঙ্গে শোবে।