লোকটা যে হাতে লাইসেন্স পেয়ে গেছে। আর দোকানও করেছে গ্রামের বাইরে জঙ্গল ঘেঁষে। দেখছি, কী করা যায়।
আরও কিছুটা এগিয়ে ঘড়ি দেখলেন তিনি। বারোটা বেজে দশ। বললেন, লোকটার নাম হরেকৃষ্ণ।
ওই ভাটিখানার মালিক তো, জানি। নাগেশ্বর বলল।
জানো। গিয়েছ নাকি সেখানে?
ছি ছি বড়বাবু। আপনার অনুমতি ছাড়া কোথাও গিয়েছি?
শোনো, তোমরা দুজন একবার সেখানে যাও। হরেকৃষ্ণকে আমি শর্ত দিয়েছিলাম বেকার লোক এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের মদ বিক্রি করতে পারবে না। সেটা মানছে কিনা দেখবে। বলবে তার বিক্রি করা মদ খেয়ে একজন এমন অসুস্থ হয়ে পড়েছে যে ডাক্তার বলেছে শহরে নিয়ে যেতে। এরকম যেন আর না হয়। পারবে তো তোমরা? সতীশ রায় বললেন।
গোরক্ষ বলল, আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন।
তাহলে তোমরা যাও। ঠিক তিনটের সময় সেজেগুজে এসো।
সে আর বলতে– নাগেশ্বর হাসল।
*
আজ দুপুরের খাবার মতির মা পরিবেশন করল। জানা গেল এলোকেশী গিয়েছে বাপের বাড়ি থেকে জিনিসপত্র আনতে। কিন্তু তার চেয়ে অন্য খবর জানতে উৎসাহ বেশি মতির মায়ের, ছোটখোকা আজও মাছ ধরা দেখতে গেছে।
কখন?
এই তো, আপনি বাড়ি ফিরে চানে গেলেন, তখন—।
কথা বাড়ালেন না সতীশ রায়।
খাওয়া-দাওয়া সিগারেট শেষ পর্ব চুকলে গুরুচরণ হালদার দেখা করতে এল, মেয়ে নিশ্চয়ই বলেছে আমি বদলি হয়ে গেছি।
হ্যাঁ। বদলির চাকরির তো এই বিপদ।
মাত্র দুবছর হল এসেছি, আসরফ এক জায়গায় আট দশ বছর মাটি আঁকড়ে পড়ে আছে অথচ আমার ঘাড়েই কোপ পড়ল। গিয়েছিলাম বি. ডি. ও. র অফিসে। উনি কিছুই জানেন না। গুরুচরণ ফুঁসছিল।
আমার কাছে কেন এসেছেন সেটা বলুন।
আজ্ঞে, আচমকা বদলি করল কিন্তু জিনিসপত্র নিয়ে নতুন জায়গায় যাওয়ার খরচ পরে বিল করে আদায় করতে হবে। এখন এই খরচ আমি কীভাবে করি? যদি কিছু ধার দেন।
কত?
এই ধরুন, হাজার পাঁচেক। গাড়ি ভাড়া করে মালপত্র নিয়ে যাওয়ার খরচ তো কম নয়। নতুন জায়গায় সংসার পাততেও তো খরচ হবে।
কতদিনে শোধ করবেন?
বেশিদিন না। দশ মাসে। মাসে পাঁচশো করে। গুরুচরণ বলল।
কথার খেলাপ হবে না তো?
একদম না। কারণ প্রত্যেক মাসে এলোর মাইনে বাবদ যে টাকা আপনি আমার হাতে দিতেন সেটা দশমাস দিতে হবে না। ঘরের টাকা ঘরেই রইল। সেই সঙ্গে যে ধার নিচ্ছি তা শোধ হয়ে গেল। গুরুচরণ হাসল।
তাহলে তো হল না।
মানে? হকচকিয়ে গেল গুরুচরণ।
আপনার মেয়ে বলেছে যে তার রোজগার করা টাকা কাউকে দেবে না।
একথা হারামজাদি বলেছে?
গালাগাল দিয়ো না। আমি দ্বিতীয়বার বরদাস্ত করব না।
হায় কপাল। দুধকলা দিয়ে এ কোন্ কালসাপ পুষলাম? আমার ওয়াইফ ঠিক কথা বলে! পাঁচ হাজার টাকা পথখরচা নিয়ে ওকে জোর করে শ্বশুরবাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়াই উচিত ছিল। আমি ভাবলাম মাসে পাঁচশো পেলে বছরে তার চেয়ে বেশি পাওয়া যাবে। যে মুরগি ডিম দেবে তাকে কেন কাটব? আপনি ওর কথা কানে তুলবেন না বাবু। গুরুচরণ ভেঙে পড়ল।
সতীশ রায় ডাকলেন, হরিপদ।
হরিপদ এল। সতীশ রায় বললেন, দুলালকে বল শুরুচরণবাবুর মালপত্র আজই নাথুয়াতে পৌঁছে দিতে। যা ভাড়া হবে তা যেন আমার কাছ থেকে নেয়। যান আপনি ওর সঙ্গে। এর বেশি কিছু আমার পক্ষে করা সম্ভব নয়।
হরিপদ গম্ভীর গলায় বলল চলুন।
*
ঘটকমশাই এসে গিয়েছেন ঠিক সময়ে। আজ বেশ প্রফুল্ল দেখাচ্ছে তাকে। খেতে বললে রাজি হলেন না। বললেন, গিন্নিকে বলে এসেছি যদি বাবুমশাই-এর পাত্রী পছন্দ হয় তাহলে রাত্রে ওঁর বাড়িতে খাওয়া-দাওয়া করে থেকে যাব। আজ কোন চিন্তা নেই।
আরও কিছুটা এগিয়ে ঘড়ি দেখলেন তিনি। বারোটা বেজে দশ। বললেন, লোকটার নাম হরেকৃষ্ণ।
ওই ভাটিখানার মালিক তো, জানি। নাগেশ্বর বলল।
জানো। গিয়েছ নাকি সেখানে?
ছি ছি বড়বাবু। আপনার অনুমতি ছাড়া কোথাও গিয়েছি?
শোনো, তোমরা দুজন একবার সেখানে যাও। হরেকৃষ্ণকে আমি শর্ত দিয়েছিলাম বেকার লোক এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের মদ বিক্রি করতে পারবে না। সেটা মানছে কিনা দেখবে। বলবে তার বিক্রি করা মদ খেয়ে একজন এমন অসুস্থ হয়ে পড়েছে যে ডাক্তার বলেছে শহরে নিয়ে যেতে। এরকম যেন আর না হয়। পারবে তো তোমরা? সতীশ রায় বললেন।
গোরক্ষ বলল, আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন।
তাহলে তোমরা যাও। ঠিক তিনটের সময় সেজেগুজে এসো।
সে আর বলতে– নাগেশ্বর হাসল।
*
আজ দুপুরের খাবার মতির মা পরিবেশন করল। জানা গেল এলোকেশী গিয়েছে বাপের বাড়ি থেকে জিনিসপত্র আনতে। কিন্তু তার চেয়ে অন্য খবর জানতে উৎসাহ বেশি মতির মায়ের, ছোটখোকা আজও মাছ ধরা দেখতে গেছে।
কখন?
এই তো, আপনি বাড়ি ফিরে চানে গেলেন, তখন—।
কথা বাড়ালেন না সতীশ রায়।
খাওয়া-দাওয়া সিগারেট শেষ পর্ব চুকলে গুরুচরণ হালদার দেখা করতে এল, মেয়ে নিশ্চয়ই বলেছে আমি বদলি হয়ে গেছি।
হ্যাঁ। বদলির চাকরির তো এই বিপদ।
মাত্র দুবছর হল এসেছি, আসরফ এক জায়গায় আট দশ বছর মাটি আঁকড়ে পড়ে আছে অথচ আমার ঘাড়েই কোপ পড়ল। গিয়েছিলাম বি. ডি. ও. র অফিসে। উনি কিছুই জানেন না। গুরুচরণ ফুঁসছিল।
আমার কাছে কেন এসেছেন সেটা বলুন।
আজ্ঞে, আচমকা বদলি করল কিন্তু জিনিসপত্র নিয়ে নতুন জায়গায় যাওয়ার খরচ পরে বিল করে আদায় করতে হবে। এখন এই খরচ আমি কীভাবে করি? যদি কিছু ধার দেন।
কত?
এই ধরুন, হাজার পাঁচেক। গাড়ি ভাড়া করে মালপত্র নিয়ে যাওয়ার খরচ তো কম নয়। নতুন জায়গায় সংসার পাততেও তো খরচ হবে।
কতদিনে শোধ করবেন?
বেশিদিন না। দশ মাসে। মাসে পাঁচশো করে। গুরুচরণ বলল।
কথার খেলাপ হবে না তো?
একদম না। কারণ প্রত্যেক মাসে এলোর মাইনে বাবদ যে টাকা আপনি আমার হাতে দিতেন সেটা দশমাস দিতে হবে না। ঘরের টাকা ঘরেই রইল। সেই সঙ্গে যে ধার নিচ্ছি তা শোধ হয়ে গেল। গুরুচরণ হাসল।
তাহলে তো হল না।
মানে? হকচকিয়ে গেল গুরুচরণ।
আপনার মেয়ে বলেছে যে তার রোজগার করা টাকা কাউকে দেবে না।
একথা হারামজাদি বলেছে?
গালাগাল দিয়ো না। আমি দ্বিতীয়বার বরদাস্ত করব না।
হায় কপাল। দুধকলা দিয়ে এ কোন্ কালসাপ পুষলাম? আমার ওয়াইফ ঠিক কথা বলে! পাঁচ হাজার টাকা পথখরচা নিয়ে ওকে জোর করে শ্বশুরবাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়াই উচিত ছিল। আমি ভাবলাম মাসে পাঁচশো পেলে বছরে তার চেয়ে বেশি পাওয়া যাবে। যে মুরগি ডিম দেবে তাকে কেন কাটব? আপনি ওর কথা কানে তুলবেন না বাবু। গুরুচরণ ভেঙে পড়ল।
সতীশ রায় ডাকলেন, হরিপদ।
হরিপদ এল। সতীশ রায় বললেন, দুলালকে বল শুরুচরণবাবুর মালপত্র আজই নাথুয়াতে পৌঁছে দিতে। যা ভাড়া হবে তা যেন আমার কাছ থেকে নেয়। যান আপনি ওর সঙ্গে। এর বেশি কিছু আমার পক্ষে করা সম্ভব নয়।
হরিপদ গম্ভীর গলায় বলল চলুন।
*
ঘটকমশাই এসে গিয়েছেন ঠিক সময়ে। আজ বেশ প্রফুল্ল দেখাচ্ছে তাকে। খেতে বললে রাজি হলেন না। বললেন, গিন্নিকে বলে এসেছি যদি বাবুমশাই-এর পাত্রী পছন্দ হয় তাহলে রাত্রে ওঁর বাড়িতে খাওয়া-দাওয়া করে থেকে যাব। আজ কোন চিন্তা নেই।