What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected তনু অতনু সংবাদ (1 Viewer)

বিয়ের দিন বিকেল বিকেল পৌঁছলাম আমরা। আদর করে ভেতরে নিয়ে গিয়ে বসালেন পাত্রীর বাবা। একটু গল্পগাছার পর জিজ্ঞাসা করলাম, এত তাড়াতাড়ি পাত্র পেয়ে গেলেন, মেয়ে লগ্নভ্রষ্টা হল না। তা কোথায় থাকে পাত্র?

পাত্রীর বাবা বললেন, ওই তো, আপনার পাশে বসে আছে।

গোরক্ষ আর নাগেশ্বর একসঙ্গে বলে উঠল, অ্যাঁ?

ঘটকমশাই বললেন, আমিও চমকে উঠেছিলাম। কিন্তু আমাদের কথা শুনতেই চাইলেন না ভদ্রলোক। ভয় দেখালেন ওঁর কথা অমান্য করলে রামসাই থেকে ফিরে যেতে দেবেন না। ছেলের বাবা বললেন, দেখুন আমার বয়স ছেচল্লিশ, আপনার মেয়ের উনিশ। ডাবলের চেয়ে বেশি। ওর শ্বশুর হওয়ার কথা আমার।

ছিল। কিন্তু আপনার শরীর দেখে মনেই হয় না অত বয়স হয়েছে। এখনও চল্লিশ বছর দিব্যি বেঁচে থাকবেন। তখন আমার মেয়ে বুড়ি হয়ে যাবে। আপনার ছেলে যে অন্যায় করেছে তার প্রায়শ্চিত্ত আপনাকেই করতে হবে। ওই বাড়ির বউ হয়ে যাবে আমার মেয়ে।

তার পর? গোরক্ষ জিজ্ঞাসা করল।

তারপর আর কি? জোরজবরদস্তি করে বিয়ে হয়ে গেল। ঘটকমশাই বললেন।

আমার খাওয়ার সময় হয়েছে। উঠছি। ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন সতীশ রায়।

নাগেশ্বর জিজ্ঞাসা করল, এই দশ বছরের খবর কী?

ছেলে প্রেম করে বিয়ে করে ব্যাঙ্গালোরে চাকরি করছে। এঁরাও খুব দুঃখে নেই। বড় মেয়েটির বয়স নয়, ছোট ছেলের বয়স সাত। কিন্তু বড়বাবু হঠাৎ উঠে গেলেন কেন? গল্পটা কি খারাপ লাগল? ঘটকমশাই জিজ্ঞাসা করলেন।

উত্তর দেওয়ার আগেই হরিপদ এল, এবার উঠুন।

উঠুন? বললেই হল। ঘটকবাবু অতিথি। এখানে থাকবেন। এখনও ওঁর গ্লাস শেষ হয়নি দেখতে পাচ্ছ না। খিঁচিয়ে উঠল নাগেশ্বর।

উনিও উঠবেন। ওঁকে খাবার দিয়ে তবে এলোকেশী বাড়ি যাবে। হরিপদ জানাল।

এলোকেশী? সে আবার কোত্থেকে এল? গোরক্ষ জিজ্ঞাসা করল।

ঘটকমশাই তাড়াতাড়ি গ্লাস শেষ করে বললেন, আমার শরীরটা কিরকম গুলোচ্ছে। আমি যদি না খাই?

ঝটপট গ্লাস বোতল সরিয়ে নিয়ে ঘটকমশাইকে নিয়ে পাশের বাথরুমে গেল হরিপদ, নিন, গলায় আঙুল দিয়ে বেসিনে বমি করুন। অভ্যেস নেই খান কেন?

বলমাত্র বমি বেরিয়ে এল।

সেই শব্দে নাগেশ্বর বলল, তাড়াতাড়ি চল। ওই শব্দ বড় ছোঁয়াচে। এখানে থাকলে আমারও হয়ে যাবে।

মানিকজোড় দ্রুত বেরিয়ে গেলে মুখে মাথায় জল দিলেন ঘটকমশাই। হরিপদ জিজ্ঞাসা করল, কেমন লাগছে?

অনেক ভালো।

পাখার তলায় বসুন। বড়বাবুর খাওয়া শেষ হলেই ডাকব। সে বেরিয়ে গেলে ঘটকমশাই নিজেকে শক্ত করতে চেষ্টা করলেন। এই বাড়িতে আজ তার প্রথম ভাত খাওয়া। বিয়েটা দিতে পারলে সেটা পাকা হয়ে যাবে। এই সুযোগ ছাড়া উচিত নয়। শরীর, তুই ঠিক হ! মনে মনে বললেন ঘটকমশাই।

হরিপদ যখন ডাকতে এল তখন ঘটকমশাই পাশের তক্তাপোশে শরীর এলিয়ে দিয়েছেন। বার তিনেক ডেকেও সাড়া পাওয়া গেল না। অতিথি অভুক্ত হয়ে রাত কাটালে বড়বাবু অসন্তুষ্ট হবেন। হরিপদ ঘটকবাবুর শরীর ধরে নাড়ল।

ঘটকবাবু পাশ ফিরে শুলেন।

অগত্যা আলো নিভিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল হরিপদ।

*
 
সকালেই চলে এল ওরা আলিপুরদুয়ার থেকে। লোকদুটোর হাতে দুটো পুঁটলি ছাড়া কিছু নেই। লোকদুটোর নাম যতীন আর মতিন।

সতীশ রায় হাসলেন, তোমরা কি দুই ভাই?

যতীন বলল, না বাবু। পাশাপাশি ঘর। আমি আগে জন্মেছি, ও পরের দিন।

মতিন বলল, ওর বাবা নাম রাখল যতীন, তাই শুনে আমার আব্বা মতিন রাখল।

তাহলে তোমাদের ধর্ম আলাদা?

কিন্তু কর্ম এক। যতীন হাসল।

হরিপদকে পাঠিয়েছিলেন ছেলেদের খবর দিতে। তারা এসে গেল।

সতীশ রায় বললেন, এই ছেলেদের মাছধরা শেখাতে হবে তোমাদের।

এবার মতিন বলল, কেন বাবু? এঁরা সব ভদ্রলোকের ছেলে, মাছ ধরবেন কেন?

ওরা মাছের ব্যবসা করবে। তাই নিজেরাই মাছ ধরুক, অন্যের ওপর নির্ভর করলে ব্যবসায় মায়া বসে না। এখন তোমার দরকার দুটো নৌকো আর হাতটানা জাল। মঙ্গল। মঙ্গলের দিকে তাকালেন সতীশ রায়।

এগুলোর ব্যবস্থা দু দিনের জন্যে করে রেখেছি বড়বাবু। মঙ্গল বলল।

ও। কিন্তু এগুলো কিনে নিতে হবে।

যতীন বলল, চিন্তা করবেন না, আমরা অল্প দামে ব্যবস্থা করে দেব।

ভালো কথা। শোন, তোমরা ওদের দুপুর একটা পর্যন্ত যা শেখাবার তা শেখাবে। আজ আর কাল। একটার পরে আর নয়।

মতিন বলল, আমাদের থাকার ব্যবস্থা।

মঙ্গল বলল, ক্লিাবঘরে থাকতে পারেন ওরা।

বাঃ। সতীশ রায় বললেন, আমার বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে যেয়ো।

যতীন জিজ্ঞাসা করল, আপনারা সাঁতার জানেন তো?

সবাই একসঙ্গে বলে উঠল, হ্যাঁ।

সতীশ রায় বললেন, যাও, কাজ শুরু করে দাও। আমি কাল দুপুরে গিয়ে দেখব তোমরা কেমন কাজ শিখলে।

মতিন বলল, শেখাবার সময় যে মাছ জালে উঠবে—

সেগুলোকে জলেই ছেড়ে দেবে। সতীশ রায় গম্ভীর গলায় বললেন।

ছেলেরা ওদের নিয়ে চলে গেল ডুডুয়ার দিকে।

*

জলখাবার খেয়ে ছেলেকে ডেকে পাঠালেন সতীশ রায়। সত্যচরণ দরজার কাছে এসে মাথা নিচু করে দাঁড়াল। ওই ত্রিভঙ্গমুরারির ভঙ্গি দেখে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন মনে মনে। সেটাকে চেপে রেখে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কবিতা লেখো?

সত্যচরণ কথা বলল না। মুখ তুলল না।

এই ডুডুয়ার কোন পাখি কথা বলে না? বোবা হয়ে আছে এমন পাখি দেখেছ তুমি?

মাথা নেড়ে না বলল সত্যচরণ।

তুমি কি বোবা? কথা বলতে পারো না?

বলি তো। সত্যচরণ কথা বলল।

কার সঙ্গে বল? উত্তর দাও।

মতির মায়ের সঙ্গে বলি। কাল থেকে এলোকেশীদির সঙ্গে বলছি। সরল গলায় জবাব দিল সত্যচরণ।

বাঃ! কথা বলার চমৎকার সঙ্গী। শোন, এইসব উলটোপালটা কবিতা লেখা বন্ধ কর। ওই শোন, কাক চেঁচাচ্ছে। অথচ তুমি লিখছ সব পাখি বোবা হয়ে গেছে। যে জন্যে তোমাকে ডেকেছি, এখনই ডুডুয়া নদীতে যাও।

ডুডুয়া নদীতে?

হ্যাঁ। তরুণ সঙেঘর ছেলেরা পেশাদার জেলের কাছে মাছ ধরা শিখছে। তুমি তো সাঁতার জানো না। জলে নামতে হবে না। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই দ্যাখো। দেখেও শেখা যায়, যেটা কবিতা লেখার চেয়ে অনেক বেশি কাজে লাগবে।

আপনাকে আমি বলেছিলাম–।

কী?

এই মাসটা আমাকে কিছু করতে বলবেন না।

হাঁ হয়ে গেলেন সতীশ রায়। সামলে গিয়ে বললেন, ও। খুব শোকে আছ?

মাথা নেড়ে নিঃশব্দে হ্যাঁ বলল সত্যচরণ।

তুমি সকাল থেকে রাত পর্যন্ত গাণ্ডেপিণ্ডে গিলছ না? তখন শোক হাওয়া হয়ে যাচ্ছে নাকি? এখন থেকে দিনের বেলায় তোমার খাওয়া বন্ধ। রাত্রে যত পারো খেয়ো, কিন্তু যতদিন তোমার শোকপর্ব চলবে ততদিন সূর্য-উদয় থেকে অস্ত যাওয়া পর্যন্ত না খেয়ে থাকবে। যাও হাত নাড়লেন সতীশ রায়। আর সেটা দেখামাত্র অদৃশ্য হয়ে গেল সত্যচরণ।
 
বাইরে বেরিয়ে এলেন সতীশ রায়। তার স্থির ধারণা, এই ছেলেটি একটি মিচকে শয়তান। নিশ্চয়ই নিজের ঘরে ফিরে গিয়ে তাঁকে ভ্যাঙাচ্ছে। অথচ মাতৃহারা হওয়ার পর ওর যাতে কোন অসুবিধে না হয় তার সব ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি। মতির মা তো আছেই, দুজন মাস্টার ওকে পড়াতে আসত। ভালো ভালো জিনিস কিনে দিয়েছেন। কিন্তু ছেলের ওই এক স্বভাব, তাকে দেখলেই শামুক হয়ে যায়। এখন মনে হচ্ছে সেটাকেই কাজে লাগাচ্ছে।

কেউ একজন গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। সতীশ রায় এগিয়ে গেলেন, কে? কী চাই আপনার?

লোকটি প্রৌঢ়। দেখেই বোঝা যায় দরিদ্র।

নমস্কার। আমার নাম গুরুচরণ হালদার। হাতজোড় করলেন ভদ্রলোক।

নামটা যেন শোনা বলে মনে হল। ঠিক ঠাওর করতে না পেরে জিজ্ঞাসা করলেন, বলুন, আমি কি করতে পারি?

আপনি বোধহয় আমাকে চিনতে পারলেন না।

না।

আমি ব্লক অফিসে কেরানির কাজ করি।

এবার মনে পড়ল। মতির মা এর কথাই বলছিল। গুরুচরণ বললেন, বেশি দিন আসিনি। তেমন বের হই না। আপনার সঙ্গে আলাপ করার সুযোগ হয়নি।

ও। এলোকেশী–।

হ্যাঁ। আমার মেয়ে। সমস্যা ওকে নিয়েই।

বলুন।

অনেক ঋণ করে বিয়ে দিয়েছিলাম। ছেলের যে ক্যানসার আছে জানতাম না। বিয়ের বছর খানেকের মধ্যেই বিধবা হল। তারপরে শ্বশুরবাড়িতেই ছিল। সেখানে বনিবনা না হওয়ায় চলে এসেছে আমার কাছে।

ও।

বুঝতেই পারছেন, অভাবের সংসার। ঘাড়ের ওপর একটা পূর্ণবয়স্ক মানুষ এসে পড়ল। খরচ চালাতে আমি হিমসিম খাচ্ছি। তা এইসময় আপনার বাড়ির মতির মা প্রস্তাবটা দিল। মেয়ে এককথায় রাজি হয়েছে দেখে আমি খুশি হলাম। বললাম, কাজের কোন ছোটবড় নেই। সব কাজই কাজ।

হ্যাঁ। এটা খুবই সত্যি কথা।

কিন্তু আমার ওয়াইফের আপত্তি হচ্ছে।

কেন? সতীশ রায় অবাক হলেন।

এখানে সমাজ আছে। পাড়া-প্রতিবেশী আছে। দুদিন পরেই তারা কথা বলবে বলে আমার ওয়াইফের ধারণা। ভদ্রলোেকের বাড়ির মেয়ে রাঁধুনির কাজ করতে যাচ্ছে। সম্মান ধুলোয় লুটোবে। তাছাড়া আমার আর একটি কন্যা আছে। তার বিয়ের সময় পাত্র পাব না। এটাও আমার ওয়াইফের ধারণা। দিদি অন্যের বাড়িতে রান্না করে শুনলে পাত্রপক্ষ তাচ্ছিল্য করবে। গুরুচরণ বললেন।

আপনার ওয়াইফের এইসব কথাকে আপনি সমর্থন করেন?

আজ্ঞে করি না। কিন্তু হাজার হোক তিনি তো ওয়াইফ।

তাহলে তো কথাই ওঠে না। মেয়েকে আর আসতে দেবেন না।

সেটা তো করাই যায়। কিন্তু তাতে তো সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। এই যে ভোরে একবার আসছে, দুপুরে আবার ফিরে যায়। তারপর বিকেলে এসে মাঝরাত্রে একা ফেরে। প্রত্যেকেই তো দ্যাখে। অত রাত্রে একজন যুবতী বিধবা হেঁটে এতটা পথ যাচ্ছে, লোকে তো কুকথা বলবেই। তাই আমার ওয়াইফ বলছিলেন মানুষজনের মুখ বন্ধ করা দরকার। গুরুচরণ খুব ভেবেচিন্তে কথাগুলো বলে ফেললেন, দুটো উপায় আছে।

কিভাবে?

আমার ওয়াইফ বললেন, ওকে ওর শ্বশুরবাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া উচিত। সে ওই পরিবারের পুত্রবধূ। স্বামীর ভিটে আঁকড়েই তার থাকা উচিত। যত কষ্ট হোক কিন্তু সম্মানহানি হবে না। আর এর ফলে আমার ওপর চাপ কমে যাবে। গুরুচরণ মাথা নাড়লেন।

দ্বিতীয়টা?

ও যদি যাওয়া-আসা না করে তাহলে কেউ দেখতে পাবে না। আপনার বাড়ির অন্দরমহলে থাকলে কারও পক্ষে ভাবাও সম্ভব নয় যে এখানে কি করছে।

এটাও আপনার ওয়াইফের কথা?

আজ্ঞে হ্যাঁ।

কিছু মনে করবেন না, উনি কি এলোকেশীর গর্ভধারিণী?

আজ্ঞে না। আমার দ্বিতীয় পক্ষ। বুঝতেই পারছেন, কি অশান্তিতে আছি।

অনুমান করছি। কিন্তু যার ব্যাপারে এসব ভাবছেন তার কী ইচ্ছে তা জেনেছেন?

এলোর আবার কী ইচ্ছে হবে? আমি যা বলব তাই ও মেনে নেবে।

তাহলে আমি বলব ওকে শ্বশুরবাড়িতে পাঠিয়ে দিন।

অ্যাঁ?

দেখুন, আমরা বাড়িতে মেয়েমানুষ বলতে শুধু মতির মা। আমার স্ত্রী গত হওয়ার পর অন্দরমহলের সব ব্যাপার আমি ওর ওপর ছেড়ে দিয়েছি। ও যদি চায় তাহলে এলোকেশী রাত্রে এখানে থাকতে পারে। কিন্তু তাকে থাকতে হবে বাড়ির অন্য কাজের লোক যেমন থাকে সেইরকম। আপনি মতির মায়ের সঙ্গে কথা বলুন, সে-ই তো আপনার বাড়িতে গিয়ে ওকে নিয়ে এসেছে। সে যদি না রাজি হয় তাহলে মেয়েকে শ্বশুরবাড়িতে পাঠিয়ে দিন। কথা শেষ করতে চাইলেন সতীশ রায়।
 
বেশ, আপনি যখন বলছেন তখন ওর সঙ্গে কথা বলব। ও হ্যাঁ, সে রাজি হয় তাহলে বেতন কী দেবেন? গুরুচরণ হালদার জিজ্ঞাসা করলেন।

আপনিই বলুন।

চব্বিশ ঘণ্টা থাকার, মাসে অন্তত দু হাজার না হলে—

আপনি বরং মেয়েকে নিয়ে যান।

না না, আপনি কত পারবেন?

আপনি ডুডুয়াতে তো কিছুকাল আছেন, দুহাজার টাকার মাইনেতে কোন রাঁধুনি এখানে চাকরি করছে? শুনুন, মতির মায়ের মাইনে বেড়ে বেড়ে এখন পাঁচশো হয়েছে। তার আন্ডারে সে কাজ করবে তাকে ওর বেশি দিতে পারব না।

সতীশ রায় ঘুরে দাঁড়াতেই গুরুচরণের গলা মিনমিনে হয়ে গেল।

বেশ। আমার ওয়াইফ অবশ্য অসন্তুষ্ট হবেন কিন্তু মেনে নিচ্ছি। তাহলে মাসের এক তারিখে আমি এসে টাকাটা নিয়ে যাব।

আগে মতির মায়ের সঙ্গে কথা বলুন। সতীশ রায় বারান্দার দিকে হাঁটতে শুরু করলেন।

গুরুচরণ পেছন পেছন এসে বললেন, আজ্ঞে, একটু যদি ডেকে দেন।

হরিপদ। হরিপদ। হাঁক ছাড়লেন সতীশ রায়। হরিপদকে দেখতে পেয়ে বললেন, মতির মাকে ডেকে দে। উনি কথা বলতে চান।

নিজের ঘরে চলে এলেন সতীশ রায়। চেয়ারে বসে সিগারেট ধরালেন। মেজাজ খিঁচড়ে গিয়েছিল তার। অদ্ভুত মানুষ। এখানে দু-এক বছরের জন্যে সরকারি দপ্তরে বদলি হয়ে যারা আসে তাদের সঙ্গে স্থানীয় মানুষের এই কারণে মিলমিশ হয় না। একই বিষয় নিয়ে এত কথা বলে না কেউ। তাছাড়া তাঁর বাড়ির একজন কর্মচারীর পারিবারিক সমস্যা নিয়ে তাঁকে কেন এত কথা শুনতে হবে।

সিগারেট যখন শেষ হয়ে এসেছে তখন বাইরে চিৎকার শুরু হল। সবাইকে ছাপিয়ে গেল যার গলা সে অবশ্যই এলোকেশী। এসব কি হচ্ছে? সতীশ রায় হাঁকলেন, হরিপদ! ওদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়ে ঝগড়া করতে বলল।

হরিপদর গলা শোনা গেল, সবাইকে চুপ করতে বলছে।

মতির মা এল দরজায়। ঘোমটা মাথায় দিয়ে, খোকার তো খেতে ভালো লেগেছে, সকালের জলখাবারও পেট ভরে খেয়েছে, কিন্তু এলোকেশীকে রাত্রে এখানে থাকতে দেওয়াটা কী ঠিক হবে?

আমাকে জিজ্ঞাসা করছ কেন? তুমি ঠিক করো।

যদিও খোকা বলছিল এতদিনে একজন দিদি পেয়েছে।

আঃ। খোকা খোকা করো না তো! আমিও তো রান্নার প্রশংসা করেছিলাম কিন্তু তোমার মনে পড়ল খোকার কথা। ও হ্যাঁ, খোকা জলখাবার খেয়েছে। কখন? আমার ঘরে আসার আগে না পরে? সতীশ রায় তাকালেন।

আজ্ঞে আগে।

হুঁ। কি খেয়েছে জলখাবারে?

আজ্ঞে, লুচি, বেগুনভাজা, কুমড়োর ছক্কা আর সন্দেশ।

বাঃ। চমৎকার। মাতৃশোকের জন্যে কটা লুচি খেয়েছে? এক ডজন?

শুনলে আয়ু কমে যায় বলে শুনিনি।

শোন মতির মা। ও যদ্দিন বাড়ির বাইরে না যাবে তদ্দিন ভোর থেকে সন্ধে পর্যন্ত ওকে কোনও খাবার দেবে না। কথাটা ওকেও বলেছি, তোমাকেও বললাম। আমার আদেশ অমান্য হলে সবাইকে বাড়ি থেকে দূর করে দেব।

খোকা তো না খেয়ে মরে যাবে। মতির মা শিউরে উঠল।

কোনও চান্স নেই। কোটি কোটি ধর্মপ্রাণ মানুষ একমাস ধরে নিলা উপোস করেন। সন্ধের সময় তারা উপপাসভঙ্গ করেন। রাত্রে যত খুশি খাইয়ো, সে বহাল তবিয়তে থাকবে। যাও। হাত নাড়লেন সতীশ রায়।
 
আমি ভেতরে আসব বড়বাবু? দরজায় এসে দাঁড়াল এলোকেশী। আজ তাকে বেশ ছিমছাম দেখাচ্ছে। আঁচল কোমরে জড়িয়েছে। মতির মা বেরিয়ে যাচিছল, তাকে দাঁড়াতে বললেন সতীশ রায়। ঘরে ঢুকল এলোকেশী, আপনি আমার বাবাকে বলেছেন শ্বশুরবাড়িতে পাঠিয়ে দিতে?

তোমার সন্দেহ হচ্ছে?

হ্যাঁ। লোকটা মিথ্যেবাদী। অসৎ।

তুমি ভুলে যেয়ো না উনি তোমার বাবা।

না ভুলছি না। কিন্তু যে বাবা টাকার লোভে নিজের মেয়েকে একটা ক্যানসার রুগীর সঙ্গে বিয়ে দেয় তাকে সৎ বলা যায় কি?

উনি জানতেন না?

সব জানতেন, সম্বন্ধ এনেছিল আমার সৎমায়ের ভাই। বাবা পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে নিজের ঘাড় থেকে আমাকে নামিয়েছিল।

খুব অন্যায় করেছিল। দ্যাখো এলোকেশী, আমি যতটুকু বুঝলাম, তোমার সম্মা চাইছেন না তোমাকে ওবাড়িতে রাখতে। ওখানে থেকে লোকের সামনে দিয়ে আমার বাড়িতে রোজ কাজ করতে আসাও তার অপছন্দ। এক্ষত্রে সম্মানের সঙ্গে, বাপের বাড়িতে না থেকে শ্বশুরবাড়িতে যাওয়াই ভালো। তাই নয় কি?

আমার সন্দেহ হচ্ছে সম্মায়ের কাছে টাকার প্রস্তাব এসেছে। এলোকেশী বলতে বলতে এবার আঁচলে চোখ ঢাকল।

কী রকম?

বিধবা হওয়ার পর আমার দেওর আমাকে জ্বালিয়ে শেষ করেছিল। এমন কি স্নান করার সময় উঁকি দিত। লজ্জায় কাউকে বলতে পারতাম না। তারপর এতে যোগ হল ভাসুর। স্বামীর চেয়ে দশ বছরের বড়। তার বউ বাপের বাড়িতে গেলেই রাত্রে কোনও না কোনও বাহানায় আমাকে তার ঘরে ডাকত। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে বলত। ওর সঙ্গে যেদিন শুতে বলল সেদিন আমি পালিয়ে এসেছিলাম বাপের বাড়ি। এসব কথা আমি মা-বাবাকে বলেছি। দেওর নিতে এসেছিল আমি যাইনি। সৎ মা বলেছিল, একটু মানিয়ে নিলে যদি সবার সুবিধে হয় তাহলে ক্ষতি কি! কদিন আগে ভাসুর চিঠি লিখেছিল সত্মাকে। পথখরচা বাবদ কত টাকা পাঠালে তিনি মেয়েকে পাঠাতে রাজি হবেন। তার স্ত্রী বাচ্চা হতে বাপের বাড়িতে গিয়েছে, তিনমাসের জন্যে। এখন হাত পুড়িয়ে খেতে হচ্ছে। পথ-খরচার নামে টাকা নিয়ে ওরা যখন জোর করে আমাকে পাঠাবে ভাবছে তখনই মতির মা গিয়ে এই কাজটার কথা বলল। আমি এক কথায় রাজি হয়ে গেলাম। এরপরেও আপনি কি বলবেন শ্বশুরবাড়িতে যেতে? এলোকেশী গড়গড় করে বলে গেল।

মতির মা চুপচাপ শুনছিল। এবার বলল, তাহলে থাকুক।

শান। তোমাকে আমি পাঁচশো টাকা বেতন দেব। মতির মা, তোমার বেতন পঞ্চাশ টাকা বাড়ালাম। এলোকেশী, তোমার বাবা বলেছে প্রত্যেক মাসের এক তারিখে এসে টাকাটা নিয়ে যাবে।

না। খুব জোরে উচ্চারণ করল শব্দটা এলোকেশী।

অবাক হয়ে তাকালেন সতীশ রায়। মাথা নাড়ল এলোকেশী, আমার রোজগারের টাকা আমি কাউকে দেব না।

সেটা তোমার ব্যাপার। তবে দুদিন অপেক্ষা করো। পরশু থেকে তুমি এ বাড়িতে থাকতে পারবে। আসার আগে আমাকে যা যা বললে তা বাবাকে বলে আসবে। এখন যাও তোমরা, আমি বেরুবো। সতীশ রায় উঠে দাঁড়ালেন।

বড়বাবু। মতির মা ঘোমটা সামনে টানল।

আবার কী হল?

আমার মাইনে বাড়াবার দরকার নেই।

সেকি! তুমি কি গোত্রছাড়া।

শুধু একটা কথা।

আবার কী কথা?

খোকাকে দিনের বেলায় খেতে দিন।

অবাক হয়ে তাকালেন সতীশ রায়। সামান্য মাইনের একটি কাজের মহিলা পঞ্চাশ টাকা মাইনে বাড়ার প্রস্তাবকে ফিরিয়ে দিচ্ছে স্নেহের কারণে। বেচারা জানে না হাতে ক্ষমতা পেলেই ওর ছায়া মাড়াবে না সত্যচরণ।

মাথা নাড়লেন সতীশ রায়, তাহলে তাকে বলে রাজি করাও বাইরে বের হতে। ডুডুয়ায় মাছ ধরা শিখছে ছেলেরা, সেখানে যাক। কাঠচেরাই-এর কারখানায় গিয়ে বসুক। তখন তুমি দিনরাতে যত খুশি ওকে খাওয়াও, আমার কোন আপত্তি থাকবে না। যাও।

*
 
গাড়ি নিয়ে এস. ডি. ও.-র অফিসে যাওয়ার আগে ডুডুয়ার দিকে যেতেই এপারে বেশ ভিড় চোখে পড়ল। গাড়ি থেকে নেমে এগোতেই সবাই উল্লসিত গলায় বলল, উঃ কত বড় কাতলা, দুটো রুই যা উঠেছিল না। কিন্তু বড়বাবু ওরা মাছ ধরেই আবার জলে ফেলে দিচ্ছে। এত করে বলছি তবু আমাদের দিচ্ছে না। সবাই ঘিরে ধরল তাঁকে।

সতীশ রায় হাসলেন। তারপর ওদের বোঝাতে চেষ্টা করলেন ব্যাপারটা। তাঁকে দেখে যতীন উঠে এল, খুব ভালো মাছ আছে বাবু।

ছেলেরা কেমন শিখছে?

কোনদিন করেনি তো। হয়ে যাবে। নাহলে তো আমরা আছি।

তা আছ। তবে ওদের শিখতেই হবে।

মঙ্গল এল সাঁতার কেটে এপারে, এরা সবাই আমাদের পাগল করে দিচ্ছে। বড়বাবু। ফুটবল খেলা দেখতে মাঠে ভিড় করে না, মাছ ধরা দেখতে এসেছে।

ওদের ওপর রাগ কোরো না। মাছ ধরা দেখতে সবারই ভালো লাগে। আবার গাড়িতে উঠলেন তিনি।

এস. ডি. ও.-র অফিসে যেতে পঁয়তাল্লিশ মিনিট লাগল। ভদ্রলোকের সঙ্গে তাঁর ভালো আলাপ আছে। খাতির করে বসিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, চা খাবেন?

না। একটা অপ্রীতিকর কাজে এসেছি। বলুন।

ডুডুয়ার ব্লক অফিসের একজন কেরানির নাম গুরুচরণ হালদার। চেনেন?

মনে করতে পারছি না। কী করেছে সে?

ক্যান্সার পেশেন্টের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিয়েছে টাকা নিয়ে।

সেকি?

মেয়ে বিধবা হয়েছে। জোর করে শ্বশুরবাড়িতে পাঠাতে চায় টাকার লোভে। বিধবা ভ্রাতৃবধূর ওপর ভাসুর দেওরের নজর আছে। এই মেয়েটি আমার বাড়িতে রান্নার কাজে লেগেছে। দুবেলা আসা-যাওয়া করছে বলে ওর বাপ মায়ের নাকি সম্মানহানি হচ্ছে। মেয়েটিকে আমি যদি দিন রাতের জন্যে রাখি তাহলে তারা রাজি কিন্তু মোটা মাইনে দিতে হবে। অথচ মেয়েটি চাইছে বাবার লোভের শিকার না হতে। মেয়েটির মা নেই। সৎ মা-ই বাবার পরামর্শদাতা। সতীশ রায় বললেন।

এস. ডি. ও. বড়বাবুকে ডাকলেন। তিনি এলে জিজ্ঞাসা করলেন, ডুডুয়ার ব্লক অফিসে গুর চরণ হালদার বলে যে লোকটি আছে তাকে চেনেন?

চিনি স্যার।

কীরকম?

ও আগে ছিল ফালাকাটায়। কমপ্লেন হচ্ছিল বলে ডুডুয়াতে বদলি করা হয়েছে। ব্যবহার ভালো না। বড়বাবু বললেন।

হুঁ। এক কাজ করুন। নাথুয়াতে তোক কম আছে। আজই অর্ডার করুন যাতে সে চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে নাথুয়াতে জয়েন করে। দেরি করা চলবে না। এস. ডি.ও. সাহেব জানিয়ে দিলেন।

আর ডুডুয়াতে কাকে পাঠাবো?

আমাদের অফিসে যে নতুন ছেলেটি জয়েন করেছে, বিয়ে থা করেনি, ওকে পাঠিয়ে দিন কয়েকমাসের জন্যে। তারপর দেখছি।

বড়বাবু চলে গেলে সতীশ রায় বললেন, খুব ভালো কাজ করলেন।

এসব লোককে ফাঁসিতে ঝোলানো উচিত কিন্তু সে-ক্ষমতা তো আমার নেই। এস. ডি. ও. সাহেব বললেন।

সতীশ রায় বললেন, সামনের মাসের পনেরো তারিখে আপনাকে একবার ডুডুয়ায় আসতেই হবে।

কী হবে সেদিন?

ছেলেরো কো-অপারেটিভ করেছে। তার উদ্বোধন হবে। ডি. এম. সাহেবকে দিয়ে উদ্বোধন করাব। আপনাকে থাকতে হবে।

কো-অপারেটিভ? কেন?

ওরা স্বনির্ভর হবে। কো-অপারেটিভ করে ব্যবসা করবে।

কী ব্যবসা?

মাছ ধরবে ডুডুয়া থেকে। বিক্রি করবে বিভিন্ন হাটে।

মাছ ধরে ব্যবসা করবে বাঙালি ছেলেরা? অবাক হলেন এস. ডি. ও.।

হ্যাঁ। আজ থেকে ট্রেনিং নিচ্ছে ওরা।

কি করেছেন মশাই? নিশ্চয়ই যাব।

আমি আর একবার মনে করিয়ে দেব আপনাকে।

বেরিয়ে এলেন সতীশ রায়। ডুডুয়াতে ঢোকার সময় ড্রাইভারকে বললেন, একবার নদীর ধারে চলো তো।

এখন একটা বেজে গেছে। নদীর ধারে গিয়ে দেখা গেল জনশূন্য। ছেলেরাও চলে গেছে যে যার বাড়িতে। ওদের বলেছিলেন একটা পর্যন্ত নদীতে থাকতে। কথা শুনেছে। হঠাৎ ড্রাইভার বলল, খোকাবাবু।
 
চমকে তাকালেন সতীশ রায়। একটা গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে সত্যচরণ নদীর দিকে তাকিয়ে আছে। গাড়ির শব্দ পেয়েও এদিকে তাকায়নি। মনে মনে হাসলেন তিনি। পেটের দায় বড় দায়। ড্রাইভারকে বললেন, বাড়ি চলো।

ড্রাইভার কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল। গাড়ি ঘোরাবার আগে সে একবার সত্যচরণের দিকে তাকাল। সেটা লক্ষ করেও কিছু বললেন না সতীশ পায়।

বাড়ির পথে দূর থেকে হরিপদকে দেখতে পেলেন। হন্তদন্ত হয়ে আসছে। ড্রাইভারকে গাড়ি দাঁড় করাতে বললেন সতীশ রায়। বড়বাবুর গাড়ি দেখতে পেয়ে হরিপদ বেশ বিব্রত হয়ে কাছে এসে বলল, মতির মা বলল খোকাবাবুকে খুঁজে আনতে।

কেন?

কোনদিন বাড়ির বাইরে যায় না, আজ বেরিয়েছে। কিন্তু তার আর ফেরার নাম নেই। বেলা প্রায় দেড়টা হয়ে গেল, খাওয়া দাওয়া করেনি। মতির মা আমাকে এমন তাড়া দিল।

উঠে ড্রাইভারের পাশে বসো। সতীশ রায় হুকুম করলেন।

হরিপদ উঠে বসল। গাড়ি চলতে শুরু করলে সতীশ রায় বললেন, একটা দামড়া ছেলে, দিনদুপুরে বেরিয়েছে, তাকে খুজতে যাচ্ছ তুমি? এখানেই তো তার জন্ম। তোমাদের মাথা খারাপ হয়ে গেল নাকি!

আমি বলেছিলাম, কিন্তু মতির মা প্রায় কান্নাকাটি করছিল।

বাড়াবাড়ির একটা সীমা আছে। তিনকুলে কেউ নেই নইলে বাড়ি পাঠিয়ে দিতাম ওকে। বাড়ির সামনে গাড়ি থামল। সতীশ রায় গেট খুলে ভেতরে পা বাড়াতে বাড়াতে বললেন, মতির মাকে বলো আমার খাবার টেবিলে দিতে।

হরিপদ মাথা নাড়ল।

খাওয়া শেষ করে আয়েসে সিগারেট খেয়ে সতীশ রায় ঘড়ি দেখলেন। দুটো বাজে। তার খাওয়ার টেবিলের খানিকটা তফাতে মতির মা দাঁড়িয়ে ছিল (মটা মাথায়। একটাও কথা বলেনি। এখন তাকে শত্রু ভাবছে মতির মা। এলোকেশী দুবার জিজ্ঞাসা করেছে এটা ওটা লাগাবে কিনা।

বিশ্রাম নিতে সবে খাটে বসেছেন, হরিপদ এল, একজন দেখা করতে এসেছেন সদর থেকে। অপেক্ষা করতে বলব?

না। যাচ্ছি। ও হ্যাঁ, এবার যাও, শ্রীমানকে ডেকে আনো। নদীর ধারে গাছের তলায় বসে তিনি বোধহয় কবিতা ভাবছেন। সনীম বায় বললেন।

খোকাবাবু তো এসে গেছে।

কখন?

আপনি যখন খাচ্ছিলেন।

অ। কী করছিলেন তিনি কিছু বলেছেন?

হুঁ। বলেছে আপনি মাছ ধরা দেখতে বলেছিলেন, কতক্ষণ সেখানে থাকতে হবে বলেননি। এখন খেতে বসেছে। হরিপদ বলল।

মিচকে শয়তান। বিড়বিড় করলেন সতীশ রায়। তারপর বাইরের ঘরের দিকে পা বাড়ালেন। ঘরে ঢুকে চমকে উঠলেন তিনি। আরে! আপনি?

চলে এলাম। কিন্তু এ সময়ে এসে বিশ্রামের ব্যাঘাত ঘটালাম বোধহয়।

না না। দুপুরে সাধারণত ঘুমাই না আমি। সতীশ রায় বললেন, নিশ্চয়ই খাওয়া-দাওয়া হয়নি। ভাত দিতে বলি?

না না। আমি রোজ দশটায় দুপুরের খাবার খেয়ে নিই। কিন্তু ভাই, তাদের সঙ্গে কখন দেখা করা যাবে?

অবনীদা, আপনি ব্যস্ত হবেন না। একটু রোদ পড়ুক, ওরা আসবে।

ব্যাপারটা কী হয়েছে। তোমার ব্যাপারটা নিয়ে ভাবতে গিয়ে মনে হল ছেলেগুলোকে দেখা উচিত একবার। মনে হওয়ামাত্র চলে এসেছি। বাড়িতে বলে আসিনি। সন্ধের আগেই ফিরে যেতে হবে।

বেশ তো, তাই যাবেন। সতীশ রায় বললেন, ধরুন, আজ ওদের সঙ্গে কথা বলে, খেলা দেখে আপনার ভালো লাগল। তখন কী হবে?
 
যদি দেখি ওদের মধ্যে সম্ভাবনা আছে তাহলে নিজেকে উজাড় করে দিতে আমার একটুও আপত্তি থাকবে না। দ্যাখো ভাই, ভালো ছাত্র পাওয়া খুব ভাগ্যের ব্যাপার। বেশির ভাগই চায় ফাঁকি দিতে। এখন ফুটবল খেলা একেবারে বিজ্ঞানের পর্যায়ে চলে গেছে। দুমদাম বলে কিক মারা আর ফুটবল নয়। অবনীদা বললেন।

বেশ। আমার প্রস্তাবটা তাহলে গ্রহণ করেছেন?

কী প্রস্তাব?

ফুটবল খেলা যেমন বিজ্ঞানসম্মত হয়েছে তেমনি কোচকেও পেশাদার হতে হবে। পেশাদার কোচ কোচিং করাচ্ছেন জানলে ছেলেরা উজ্জীবিত হবে। তাদের উৎসাহ অনেক বেড়ে যাবে। সতীশ রায় বললেন।

ঠিক আছে। গাড়ি ভাড়া দিয়ে দিয়ো। তাহলেই হবে।

আপনি সপ্তাহে দুদিন আসবেন। একটা রাত থাকবেন এখানে। আপাতত গাড়িভাড়া ছাড়া আপনাকে মাসে দু-হাজার টাকা দেব। এ ব্যাপারে আর নেও কথা নয়। আপনার ছেলেরা ফুটবল খেলে?

না ভাই, ঈশ্বর সন্তান দেননি। তাতে আমার বিন্দুমাত্র আপসোস নেই। কত হাজার ছেলেকে ফুটবল শেখাতে গিয়ে কাছে পেয়েছি। আমরা দুই ভাই। ছোট আসামের চা-বাগানের ম্যানেজার ছিল। পঞ্চাশ বছর বয়সেই অবসর নিয়ে বাড়িতে বসে আছে। অবনীদা বললেন।

কেন?

মালিকের সঙ্গে বনিবনা হচ্ছিল না। শ্রমিকদের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হচ্ছিল। ইচ্ছে করলে এখানকার কোনও চা-বাগানে ঢুকতে পারে কিন্তু ওর সেই ইচ্ছে আর নেই। ও কিন্তু স্কুলে পড়ার সময় ভালো ফুটবল খেলত।

সতীশ রায় কথাটা শুনে একটু ভাবলেন। তারপর বললেন, আপনার ভাই-এর সঙ্গে আমি একবার দেখা করতে চাই।

কেন? অবনীদা হাসলেন।

একটু আলোচনা করব।

বেশ। ওকে বলব এখানে আসতে।

*

চা খেয়ে বেলা পৌনে চারটের সময় অবনীদাকে নিয়ে মাঠে গিয়ে দেখলেন মঙ্গলরা নেই। কয়েকটা বাচ্চা ছেলে বল পেটাপেটি করছে।

দুটো ছেলেকে পাঠালেন তিনি মঙ্গলের খোঁজ নিতে। অবনীদা বললেন, কি হে, এদের কি বাড়ি গিয়ে নেমন্তন্ন করে নিয়ে আসতে হয়?

না না। কিছু একটা হয়েছে।

পনেরো মিনিটের মধ্যে ছেলেরা এসে গেল। তাদের দেখে চক্ষু চড়কগাছ। সতীশ রায়ের। খুঁড়িয়ে হাঁটছে কেউ কেউ। কারও হাতে ফোস্কা। প্রত্যেকেই বেশ কাহিল। মঙ্গল বলল, প্রথম দিন তো, অভ্যেস ছিল না আর ওরা খাটিয়েছেও খুব। কাল ঠিক হয়ে যাবে।

তাহলে আজ তোমরা প্র্যাকটিস করছ না?

না মানে, সবাই বলল আজ বিশ্রাম নেবে–। মঙ্গল বলল।

কী হয়েছে? অবনীদা জিজ্ঞাসা করলেন।

ঘটনাটা কী এবং কেন অল্প কথায় বললেন সতীশ রায়। শোনামাত্র অবনীদা বললেন, বাঃ! চমৎকার। নিজের খাবার নিজেই জোগাড় কর। এর চেয়ে আনন্দ কিছুতেই নেই। আজ যে পরিশ্রম করেছ তা যদি রোজ করো তাহলে দেখবে শরীরের সহ্য করার ক্ষমতা বেড়ে যাবে।

সতীশ রায় বললেন, ইনি অবনীদা। টাউন ক্লাবের ক্যাপ্টেন ছিলেন অনেক বছর। তারপর কোচিং করেন। আজকের আধুনিক ফুটবলের কোচিং ট্রেনিং করে এসেছেন। আমি ওঁকে অনুরোধ করেছি তোমাদের ফুটবল শেখাতে।

সঙ্গে সঙ্গে ছেলেরা লাইন দিয়ে প্রণাম করে গেল।

অবনীদা বললেন, আমি ভুল দিনে এসেছি। তোমাদের শরীরের যা অবস্থা তাতে কিছু করে দেখাতে পারবে না তোমরা। আচ্ছা, এই কুচোগুলোকে দেখা যাক।
 
দুজন দুজন করে দশজনকে পরপর দাঁড় করালেন তিনি। এদের বয়স দশ কী বারো। তারপর একজন আর একজনকে পিঠে তুলে দু মিনিট দৌড়ে যেতে বললেন। আগে পরে পাঁচটা দল দু মিনিট দৌড়াতেই থামতে বলে উলটোটা করতে বললেন। অর্থাৎ যে পিঠে উঠেছিল সে এবার পিঠে তুলবে। তারা দুমিনিট দৌড়ে ফিরে আসতেই জিজ্ঞাসা করলেন, কার কার কষ্ট হল? কারও হয়নি? বাঃ। এবার পাঁচজন সামনের দিকে মুখ করে পাশাপাশি দাঁড়াও! এবার তোমরা পাঁচজন যে যার পার্টনারের একেবারে পেছনে এমনভাবে দাঁড়াও যাতে দুই ইঞ্চির বেশি কাঁক না থাকে। ওরা বুঝতে পারছিল না, অবনীদা নিজে প্রত্যেকের অবস্থান ঠিক করে দিলেন। বললেন, ধরে নাও সামনে যে আছে সে বল পায়ে নিয়ে দৌড়াচ্ছে পেছনে যে আছে সে বলটা কেড়ে নেবে। কিন্তু সেটা করার আগে দুমিনিট এমনভাবে দৌড়াবে যেন সামনের ছেলের শরীরে তোমার শরীর স্পর্শ না করে। করলেই ফাউল হয়ে যাবে।

দুজন কোনরকমে পারল, তিনজন পারল না।

অবনীদা বললেন, আজ বল নিয়ে না খেলে তোমরা এইটাই প্র্যাকটিস করো। যখন ঠিকঠাক পারবে তখন বুঝব তোমাদের শরীরের ব্যালেন্স এসে গেছে।

মঙ্গল জিজ্ঞাসা করল, এটা আমরা করব?

না। তোমরা মাটিতে শুয়ে পড়ো সবই।

বড় ছেলেরা শুয়ে পড়ল। অবনীদা বললেন, এবার উপুড় হও। হ্যাঁ। ঘাসের ওপর চিবুক রেখে গোলপোস্টের দিকে তাকাও। কেউ মুখ তুলবে না। ওপরের আকাশ দেখতে পাচ্ছ?

সবাই বলল, না।

কী দেখছ?

তিনটে পোস্ট। মঙ্গল জবাব দিল।

না। পোস্টের মাঝখানের আয়তক্ষেত্রটাকে দ্যাখো। যখন ফুটবল খেলবে তখন শুধু ওই জায়গাটায় বল মারবে, ওপরে পাশে নয়। দেখতে দেখতে বুকের মধ্যে ছবিটাকে ঢুকিয়ে ফেলো। এবার চিৎ হয়ে শোও। মনে করো সাইকেল চালাচ্ছ। কোমরের নিচের অংশ থেকে পা পর্যন্ত সাইকেলের প্যাডেল ঘোরানোর সময় যেমন করতে হয় তেমন করো তিন মিনিট। আজ পাঁচবার করলেই হবে। আমি সামনের শনিবার দুপুরে আসব। এ কদিন তোমরা নিজেদের মতো খেলো আর আমি যা শিখিয়ে গেলাম সেটা অন্তত আধঘণ্টা প্র্যাকটিস করবে। চলুন, যাওয়া যাক। অবনীদা বললেন।

যেতে যেতে সতীশ রায় জিজ্ঞাসা করলেন, কী বুঝলেন।

কিছুই না। বল পায়ে পড়লে তবে বুঝতে পারব। কিন্তু আমি ওদের শনিবার আসব বলে এলাম কেন জানেন? বললাম কারণ আজ সকালে অত পরিশ্রম করে যখন শরীরের ওই হাল করেছে তখন নিজে থেকেই আমার কাছে। আজ কিছু শিখতে চাইল। দিস ইজ ইম্পর্টেন্ট।

অবনীদা বাসে চেপে চলে গেলেন।

*

কাল রাত্রে ঘটকমশাই ফোন করেছিলেন। মালবাজারের মহাদেব সেনের বাড়িতে গিয়ে কথা বলেছেন। ওঁরা খুব খুশি। সতীশ রায়ের যদি অসুবিধে না থাকে তাহলে আগামীকালই তারা মেয়ে দেখাতে রাজি আছেন। সতীশ রায় বলেছেন, কোনও অসুবিধে নেই। তবে তুমি দুপুরে চলে এসো এখানে।

আজ সকালে চা খাওয়ার পর ছেলেকে ডেকে পাঠালেন। হরিপদ ফিরে এসে জানাল, খোকা এখনও ঘুম থেকে ওঠেনি।

ঘড়ি দেখলেন সতীশ রায়। সকাল আটটা। বললেন, এক বালতি জল ওর। গায়ে ঢেলে দাও। বিছানা ভিজুক।

মিনিট আটেক বাদে সত্যচরণ এসে দাঁড়াল। সতীশ রায় ছেলেকে আপাদমস্তক দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, বেলা আটটা পর্যন্ত ঘুমোচ্ছ, লজ্জা করে না তোমার?

রাত্রে ঘুম আসে না। মিনমিন করে বলল সত্যচরণ।

কেন?

মায়ের কথা মনে পড়ে।

উফ্! যাকে তুমি ভালো করে চেনোনি তার জন্যে রাত জাগছ? শোনো, আজ আমি মালবাজারে যাচ্ছি। ওখানে একটি ভালো মেয়ের সন্ধান পেয়েছি। সে যদি তোমার উপযুক্ত হয় তাকে এই বাড়ির বউ করে নিয়ে আসব। সতীশ রায় ঘোষণা করলেন। সত্যচরণ চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল।

কথাটা কি কানে গিয়েছে?

এটা মায়ের মৃত্যুমাস, এখন না দেখলেই কি নয়?

মৃত্যুমাস শেষ হয়ে এল বলে। আচ্ছা, এর আগে অনেকবার এই মৃত্যুমাস এসেছে, কই, কখনও তোমাকে এসব বলতে তো শুনিনি। সতীশ রায় সন্দেহের চোখে তাকালেন, কথাটা জানিয়ে রাখলাম। আজ মেয়েটিকে দেখতে যাব।

আমি–।

না না। তোমাকে নিয়ে যাওয়ার কোনও প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। তবে হ্যাঁ, পাত্রীপক্ষ চাইতে পারেন তোমাকে দেখতে। তুমি যে বোবা কালা হাবা ল্যাংড়া নও তা ওঁরা কী করে জানবেন! সেক্ষেত্রে তাঁরা দেখতে আসবেন। তখন দয়া করে মুখ বন্ধ করে থেকো না। কাল থেকে কাঠের কারখানায় গিয়ে বসবে। পাত্র বেকার, এটা শুনলে কোনো পাত্রীপক্ষের ভালো লাগার কথা নয়। কারখানায় নিয়মিত বসলে বলতে পারব তুমি আমাকে ব্যবসায় সাহায্য করছ। যাও।
 
ছেলে চলে গেলে হিসেবপত্র নিয়ে বসেছিলেন সতীশ রায়, দরজায় শব্দ হল। মুখ ঘুরিয়ে দেখলেন এলোকেশী আর মতির মা দাঁড়িয়ে আছে।

কী চাই? বিরক্ত হলেন তিনি।

ভগবান আছেন বড়বাবু। এলোকেশী বলল।

ও। তার সঙ্গে দেখা হল বুঝি? যত্ত বাজে কথা। কাজের সময় বিরক্ত না করলেই নয়। কী বলতে এসেছ বলে ফেলো।

বাবার বদলির অর্ডার এসেছে গতকাল। আজকের মধ্যেই যেতে হবে। এলোকেশীর গলায় খুশি স্পষ্ট।

তাই নাকি?

হ্যাঁ। বাবা তো ভেবেই পাচ্ছে না এত তাড়াতাড়ি কী করে বদলি হতে হচ্ছে! আজ দুপুরের মধ্যে বাবাকে নাথুয়াতে যেতে হবে। বাবা গেলে মাও সঙ্গে যাবে।

সেটাই তো স্বাভাবিক। তাহলে তুমিও তো ওদের সঙ্গে যাচ্ছ!

না। কিছুতেই না। মাথার ওপর ভগবান আছেন তা আপনি যতই ঠাট্টা করুন। এখানে ওরা থাকলে আমার ওপর জোর ফলাতো তাই ভগবান ওদের দূরে পাঠিয়ে দিলেন। এলোকেশী বলল, আজ দুপুরে গিয়ে আমার সব জিনিসপত্র এ বাড়িতে নিয়ে আসব।

এবার মতির মায়ের দিকে তাকালেন সতীশ রায়। তোমার কোনও কাজকর্ম নেই?

বাবু, একটা কথা বলব।

তোমার ছোটখোকার ব্যাপার ছাড়া যে কোন ব্যাপারে বলতে পারো।

আজ্ঞে ও ছাড়া আমার তো কেউ নেই।

কী বলতে চাও?

ওর তো বয়স খুব কম। একটু-আধটু কাজকর্মে সড়গড় তোক তারপর মেয়ে দেখাশোনা করলে হয় না?

একথা তোমাকে সে বলেছে?

হ্যাঁ বাবু।

আমাকে বলেনি কেন?

আজ্ঞে, আপনাকে মুখের ওপর বলতে ভয় পায়।

ওই যে সড়গড় শব্দটা বললে না? ওটা করাবার জন্যে বাড়িতে বউমা আনছি। যাও, বিরক্ত কোরো না।

যেতে যেতে মতির মাকে বোঝাচ্ছিল এলোকেশী, কানে এল সতীশ রায়ের, ছোটবাবু তো নরম মনের মানুষ তাই ভেঙে পড়েছে। বিয়ের পর ঠিক হয়ে যাবে।

মনে মনে হাসলেন সতীশ রায়। নরম মনের মানুষ! মা চলে গেছে পনেরো বছর আগে আর এখন ওর মন নরম হয়ে ভেঙে পড়ছে। ম্যাদামারা। এবার শব্দ করে হেসেই চেপে গেলেন। লোকে শুনলে পাগল বলে ভাববে। মেয়েটা যদি তার প্রশ্নের জবাব ঠিকঠাক দেয় তাহলে সত্যচরণকে নিয়ে কোনও চিত্ত নেই।

সকালে মাছ ধরার কোচিং দেখতে গেলেন। আজ আর গতকালের মতো ভিড় নেই। লোকে যখন জানতে পেরে গেছে চাইলেও মাছ পাওয়া যাবে না তখন আর গিয়ে লাভ কি। যতীন আর মতিন কীভাবে জাল টানতে হয় তা শেখাচ্ছিল। এইসময় গোরক্ষ আর নাগেশ্বর চলে এল।

নাগেশ্বর বলল, কাণ্ড দেখুন। একবার মুখ তুলে দেখাবি তো কে এসে দাঁড়িয়ে আছে পাড়ে। বাড়িতে না খাওয়া হোক, পাত্রী দেখতে যাব, হাতে পাঁচ কেজি টাটকা কালা থাকলে লোকে মাথা নুয়োবে। বড়বাবু, ওদের ডেকে বলি?

না। আমার জন্যে নিয়ম ভাঙতে হবে না। যখন বলেছি কোচিং-এর সময় যত মাছ জালে পড়বে তাদের আবার জলে ফেলে দিতে হবে তখন নিজের জন্যে মাছ চাইব কেন? সতীশ রায় ঘড়ি দেখলেন।

কখন শুভযাত্রা হবে বড়বাবু? গোরক্ষ জিজ্ঞাসা করল।

তিনটে থেকে সাড়ে তিনটে। ঘটকবাবু বলছিল ওই সময়টা নাকি যাত্রা শুরু করার পক্ষে খুব ভালো। সতীশ রায় নদীর ধার থেকে বাড়ির পথ ধরলেন।

নমস্কার বড়বাবু। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কম্পাউডারবাবু নমস্কার করলেন।

নমস্কার। সব ঠিক আছে তো?

কী করে ঠিক থাকবে বলুন। জ্বর পেট খারাপ আর ব্যান্ডেজ ছাড়া কোন ওষুধ তো স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেই। ওষুধে জ্বর না কমলে রক্ত পরীক্ষা করাতে হয়। সেটার জন্যে সদরে যেতে বললে গালাগাল খেতে হয়। তার ওপর হয়েছে নতুন জ্বালা। কম্পাউন্ডারবাবু মুখ ঘোরালেন।

সেটি কী? সতীশ রায় জিজ্ঞাসা করলেন।

যার পেটে ভালো করে ভাত পড়ে না সে পয়সা হাতে এলে ভাটিখানায় গিয়ে আকণ্ঠ মদ গিলছে। কাল বিকেলে ধরাধরি করে নিয়ে এল একজনকে। ডাক্তারবাবু ভাগ্যিস ছিলেন। নুনজল খাইয়ে বমি করালেন। একটু সুস্থ হলে বললেন শহরে নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা করাতে। কম্পাউন্ডারবাবু বললেন।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top