মাচাটাকে ঘিরে পঞ্চায়েতের সদস্যরা বসেছিল। মাচার ওপর নেংটি পরে শুকরা বুড়ো গম্ভীর মুখে রয়েছে। আজ তার হাতে বিড়ির পুরো বাণ্ডিল। যে পঞ্চায়েত ডাকবে তাকে এটা খরচ করতেই হয়। সদস্যদের সামনে একদিকে বুকু সর্দার অন্যদিকে তার জামাই দাঁড়িয়ে আছে। জামাই কথা শেষ করলে মাংরা সর্দার উঠে দাঁড়াল, সব কথা শুনলাম, কথাগুলোর মোটেই ভাল নয়। বুকু সর্দার বলুক তার যা বলার আছে।
বেশ কিছুটা দূরে লাইনের তামাম মানুষ গোল হয়ে বসে পঞ্চায়েত শুনছিল। তারা দেখল বুকু খুব ঘাবড়ে গেছে। তার পা কাঁপছে উঠে দাঁড়াতে গিয়ে। লাঠিতে ভর করে দাঁড়িয়ে বুকু বলল, কোনো গাছ বলে না তার ফল খারাপ। কোনো মেঘ কি বলবে তার বৃষ্টিতে নুন আছে? যে যেমন সে সেইভাবে ভেবে নেয়। আমার মেয়ে দোষ করতে পারে নাও পারে। তাকে আমি শাদীর পর চারবার জোর করে বিনাগুড়িতে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু দুধ দুইতে গেলে তো গরু লাথি মারবেই, তাই বলে ওই ভয়ে যে দুধ না দুয়ে গরুটাকে তাড়িয়ে দিতে চায় তার মতো মূর্খ আর কে আছে?
সঙ্গে সঙ্গে বুকু সর্দারের জামাই চিৎকার করে উঠল, বাঃ বাঃ, যে গরুর দুধ দেবার ক্ষমতা নেই তার লাথি খেতে যাব কোন দুঃখে?
পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে মাংরা সর্দার দুজনকে থামিয়ে জিজ্ঞাসা করল, বুকু সর্দার কি তোমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছে?
জামাই দ্রুত মাথা নাড়ল, আমার ঘর তো ওকে নিয়ে নয়, ওর মেয়েকে নিয়ে। ও ভাল ব্যবহার করল কি না করল তাতে কী এসে যায়?
মাংরা সর্দার আবার জিজ্ঞাসা করল, জিজ্ঞাসা করছি তার জবাব দাও আগে!
সঙ্গে সঙ্গে জামাই বলল, না।
ওর মেয়ে করেছে?
হ্যাঁ।
কী করেছে?
সে আমার ঘরে থাকতে চায় না। আশেপাশের ছেলে-ছোকরাদের সঙ্গে ফষ্টিনষ্টি করে। এসব কারণের জন্য আমি তাকে মারতেই পারি। নিজের বউকে মারার অধিকার সব স্বামীর আছে। কিন্তু সে সুযোগ পেলেই পালিয়ে আসে। এমনকি শেষবার আসবার আগে আমাকেই সে মেরেছে। এখান থেকে কেউ নিশ্চয়ই মতলব দিয়েছিল। নষ্ট রাণ্ডী মেয়েছেলে হলে যেমন হয় আমার বউ তাই। বলতে বলতে ভেউ ভেউ করে কেঁদে উঠল জামাই।
শোকটাকে মরে যেতে কিছুটা সময় দিল সবাই। পঞ্চায়েতের সদস্যরা নিজেদের মধ্যে খানিকটা গুগুনাল তারপর। পাকামাথাগুলো এক হয়ে যে সিদ্ধান্ত নিল সেইমত বুধুয়া সর্দার বলল, বউ যদি বেঁকে যায় তাহলে জীবনটা মিথ্যে হয়ে যায়। তা বিনাগুড়ির জামাইকে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে সে কী চায়?
চোখের জল মুছে গলা পরিষ্কার করে জামাই বলল, ও আমার সঙ্গে চলুক। এই চাওয়াটার কথা সবাই জানত বলে একটু খুকখুকে হাসি উঠল দুরের শ্রোতাদের মধ্যে। কারণ এত অভিযোগের শেষে এটা কানে লাগছে সবার। মাংরা সর্দার বলল, বুকু সর্দার, তোমার কি জামাই-এর ঘরে মেয়েকে পাঠাতে এখন আপত্তি আছে?
বুকু সর্দার আবার লাঠিতে ভর দিয়ে দাঁড়াল, সব বাপই চায় মেয়ে স্বামীর ঘর করুক। কিন্তু যাবে কিনা সেটা বলতে পারে যে যাবে সে।
পঞ্চায়েতের হুকুমে লোক গিয়ে নিরিকে ডেকে নিয়ে এল। নিরি এল চুপচাপ, খুব শান্ত ভঙ্গিতে। এমনিতে আজকাল যে রকম বেপরোয়া ভাব দেখা যায় ওর হাঁটাচলায় এখন সেটা নেই। বাপ এবং স্বামীর থেকে সমান দূরত্ব রেখে দাঁড়াল সে। তাকে দেখামাত্র বিনাগুড়ির জামাই এর চোখ দুটো উজ্জ্বল হয়ে উঠল।
বুধুয়া সর্দার জিজ্ঞাসা করল, তোর স্বামী তোকে নিয়ে যেতে এসেছে, তুই যাবি?
কথা না বলে ঘাড় নাড়ল নিরি, না।
সঙ্গে সঙ্গে জামাই চিৎকার করে গালাগালি শুরু করল। কিন্তু তার দিকে নিরি এমন তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে তাকাল যে বেচারা আস্তে আস্তে গলা নামাল।
কেন যাবি না? পঞ্চায়েতের প্রশ্ন।
ওটা মানুষ না, আমার স্বামীকে মানুষ হতে হবে। নিরির গলা পরিষ্কার, ওর কাছে ফিরে যাওয়ার চেয়ে মরে যাওয়া ভাল।
কুত্তি, নষ্ট, রাণ্ডী মেয়েছেলের কথা শুনছেন সবাই? চিৎকারটা থামালো নিরি একটা হাত ওপরে তুলে, আমি যদি ওখানে ফিরে যাই তাহলেই নিজেকে রাণ্ডী ভাবব।
পঞ্চায়েত জিজ্ঞাসা করল, কেন ফিরবি না পরিষ্কার করে বল।
নিরি বলল, বললাম তো লোকটা মানুষ না। খেতে পেতাম না, মারধোর করত, সব বউ এর ভাগ্যেই থাকে, তা নিয়ে কিছু বলার নেই। কিন্তু একটা রাতও সে আমাকে সুখ দিতে পারেনি। আমি কি আরো খুলে বলব?
বেশ কিছুটা দূরে লাইনের তামাম মানুষ গোল হয়ে বসে পঞ্চায়েত শুনছিল। তারা দেখল বুকু খুব ঘাবড়ে গেছে। তার পা কাঁপছে উঠে দাঁড়াতে গিয়ে। লাঠিতে ভর করে দাঁড়িয়ে বুকু বলল, কোনো গাছ বলে না তার ফল খারাপ। কোনো মেঘ কি বলবে তার বৃষ্টিতে নুন আছে? যে যেমন সে সেইভাবে ভেবে নেয়। আমার মেয়ে দোষ করতে পারে নাও পারে। তাকে আমি শাদীর পর চারবার জোর করে বিনাগুড়িতে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু দুধ দুইতে গেলে তো গরু লাথি মারবেই, তাই বলে ওই ভয়ে যে দুধ না দুয়ে গরুটাকে তাড়িয়ে দিতে চায় তার মতো মূর্খ আর কে আছে?
সঙ্গে সঙ্গে বুকু সর্দারের জামাই চিৎকার করে উঠল, বাঃ বাঃ, যে গরুর দুধ দেবার ক্ষমতা নেই তার লাথি খেতে যাব কোন দুঃখে?
পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে মাংরা সর্দার দুজনকে থামিয়ে জিজ্ঞাসা করল, বুকু সর্দার কি তোমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছে?
জামাই দ্রুত মাথা নাড়ল, আমার ঘর তো ওকে নিয়ে নয়, ওর মেয়েকে নিয়ে। ও ভাল ব্যবহার করল কি না করল তাতে কী এসে যায়?
মাংরা সর্দার আবার জিজ্ঞাসা করল, জিজ্ঞাসা করছি তার জবাব দাও আগে!
সঙ্গে সঙ্গে জামাই বলল, না।
ওর মেয়ে করেছে?
হ্যাঁ।
কী করেছে?
সে আমার ঘরে থাকতে চায় না। আশেপাশের ছেলে-ছোকরাদের সঙ্গে ফষ্টিনষ্টি করে। এসব কারণের জন্য আমি তাকে মারতেই পারি। নিজের বউকে মারার অধিকার সব স্বামীর আছে। কিন্তু সে সুযোগ পেলেই পালিয়ে আসে। এমনকি শেষবার আসবার আগে আমাকেই সে মেরেছে। এখান থেকে কেউ নিশ্চয়ই মতলব দিয়েছিল। নষ্ট রাণ্ডী মেয়েছেলে হলে যেমন হয় আমার বউ তাই। বলতে বলতে ভেউ ভেউ করে কেঁদে উঠল জামাই।
শোকটাকে মরে যেতে কিছুটা সময় দিল সবাই। পঞ্চায়েতের সদস্যরা নিজেদের মধ্যে খানিকটা গুগুনাল তারপর। পাকামাথাগুলো এক হয়ে যে সিদ্ধান্ত নিল সেইমত বুধুয়া সর্দার বলল, বউ যদি বেঁকে যায় তাহলে জীবনটা মিথ্যে হয়ে যায়। তা বিনাগুড়ির জামাইকে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে সে কী চায়?
চোখের জল মুছে গলা পরিষ্কার করে জামাই বলল, ও আমার সঙ্গে চলুক। এই চাওয়াটার কথা সবাই জানত বলে একটু খুকখুকে হাসি উঠল দুরের শ্রোতাদের মধ্যে। কারণ এত অভিযোগের শেষে এটা কানে লাগছে সবার। মাংরা সর্দার বলল, বুকু সর্দার, তোমার কি জামাই-এর ঘরে মেয়েকে পাঠাতে এখন আপত্তি আছে?
বুকু সর্দার আবার লাঠিতে ভর দিয়ে দাঁড়াল, সব বাপই চায় মেয়ে স্বামীর ঘর করুক। কিন্তু যাবে কিনা সেটা বলতে পারে যে যাবে সে।
পঞ্চায়েতের হুকুমে লোক গিয়ে নিরিকে ডেকে নিয়ে এল। নিরি এল চুপচাপ, খুব শান্ত ভঙ্গিতে। এমনিতে আজকাল যে রকম বেপরোয়া ভাব দেখা যায় ওর হাঁটাচলায় এখন সেটা নেই। বাপ এবং স্বামীর থেকে সমান দূরত্ব রেখে দাঁড়াল সে। তাকে দেখামাত্র বিনাগুড়ির জামাই এর চোখ দুটো উজ্জ্বল হয়ে উঠল।
বুধুয়া সর্দার জিজ্ঞাসা করল, তোর স্বামী তোকে নিয়ে যেতে এসেছে, তুই যাবি?
কথা না বলে ঘাড় নাড়ল নিরি, না।
সঙ্গে সঙ্গে জামাই চিৎকার করে গালাগালি শুরু করল। কিন্তু তার দিকে নিরি এমন তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে তাকাল যে বেচারা আস্তে আস্তে গলা নামাল।
কেন যাবি না? পঞ্চায়েতের প্রশ্ন।
ওটা মানুষ না, আমার স্বামীকে মানুষ হতে হবে। নিরির গলা পরিষ্কার, ওর কাছে ফিরে যাওয়ার চেয়ে মরে যাওয়া ভাল।
কুত্তি, নষ্ট, রাণ্ডী মেয়েছেলের কথা শুনছেন সবাই? চিৎকারটা থামালো নিরি একটা হাত ওপরে তুলে, আমি যদি ওখানে ফিরে যাই তাহলেই নিজেকে রাণ্ডী ভাবব।
পঞ্চায়েত জিজ্ঞাসা করল, কেন ফিরবি না পরিষ্কার করে বল।
নিরি বলল, বললাম তো লোকটা মানুষ না। খেতে পেতাম না, মারধোর করত, সব বউ এর ভাগ্যেই থাকে, তা নিয়ে কিছু বলার নেই। কিন্তু একটা রাতও সে আমাকে সুখ দিতে পারেনি। আমি কি আরো খুলে বলব?