হাটের একপাশে টেনে নিয়ে গেল ওরা সিরিলকে। একজন সিরিলকে অভিনন্দন জানাল নিরিকে ঐভাবে তৈরি করার জন্যে। অত্যাচার করলে নিজের বাবাকেও যে ছেড়ে দেবে না এই সাহস এখন সমস্ত শ্রমিকের দরকার। ওরা ভাবছে নিরিকে নিয়ে একটা সভা করবে বড় মাঠে। নিরির সাহস যাতে অন্য মেয়েরা পায় সেই জন্যে এ রকম সভা হওয়া দরকার। কারণ সামনে খুব খারাপ সময় আসছে। মালিকের মতলব বোঝা যাচ্ছে না। বাগানে যে লাভ হয় তার সবই তো মালিকের ব্যাঙ্কে যায়। এবার বিশ পার্সেন্ট বোনাস চেয়েছে য়ুনিয়ন। যদি রফা না হয় তাহলে বাগান বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এজন্যে সমস্ত শ্রমিককে এক করা দরকার। সিরিল যেন আর গা এলিয়ে না থেকে য়ুনিয়নের সঙ্গে সক্রিয় সহযোগিতা করে। এ ব্যাপারে নিরিকে ও বুঝিয়ে সভায় আসতে রাজি করাক।
আগে হলে চটপট মনের কথা প্রকাশ করত সিরিল। আজকাল ভাববার সময় নেয় সব কিছুতেই। এতে অনেক সময় অপ্রিয় হবার দায় থেকে বাঁচা যায়। এর মধ্যে ওদের একজন বলল, তোরা শাদী করছিস কবে?
শাদী?
হুম। তোর মদৎ না থাকলে নিরি কখনো মাংরা সর্দারকে অপমান করতে পারে? তা আজ কী হল? একটু আগে দেখলাম মেয়েটা হিন্দুপাড়ায় রাস্তায় কাঁদতে কাঁদতে হেঁটে যাচ্ছে। আরে বাবা মেয়েটাকে ঘরে নিয়ে যা না বউ করে তাহলেই সব মিটে যায়। চাঁদ আকাশে ছাড়া থাকলে মেঘ তাকে ঢাকবেই!
ঠিকই তো! আর একজন টিপ্পনি কাটল, মাথার ওপর স্বামী নেই তাই এর ওর মাথা খাবেই তো মেয়েটা। তোর উচিত আর দেরি না করা।
ওদের কাছ থেকে সরে এসে সিরিল কিছুক্ষণ বুঝতে পারছিল না তার কী করা উচিত। নিরিকে ওর ভাল লাগে কিন্তু বিয়ে করার কথা চিন্তাও সে করেনি। তার ওপর মেয়েটার একটা স্বামী বেঁচে আছে বিনাগুড়িতে, সে শালা ঝামেলা পাকাতে পারে। কিন্তু মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে ওদিকে গিয়েছে কেন। ওই রাস্তায় মানুষজন এমনিতেই বেশি যেতে চায় না। একটু ইতস্তত করে সিরিল হাট ছেড়ে হিন্দুপাড়ার দিকে পা বাড়াল।
কিন্তু ব্যাপার স্যাপার ক্রমশ ঘোরালো হয়ে যাচ্ছে। বোনাসের দাবি নিয়ে এবার একটা জব্বর লড়াই হবে কোম্পানি আর শ্রমিকদের মধ্যে এসব অনেকদিন থেকেই শোনা যাচ্ছিল। কোম্পানি দিয়েছে সাড়ে আট পার্সেন্ট, য়ুনিয়ন চাইছে বিশ। দেড় গুণ। শালা, রক্ত দিয়ে চা তৈরি করি আমরা আর লাভের গুড় একলাই খাবে তোমরানা, এ হয় না। কিন্তু কাম বন্ধ হলে সেটা কতদিন চলবে। একটা শ্রমিক যদি তিনশ টাকা রোজগার করে তার দশ টাকাও মাসের শেষে ধার হয়। আর যদি এক মাস বন্ধ চলে তো হয়ে গেল। মালিকরা সেটা জানে বলেই এত জোর পায়। কিন্তু এবার কোন আপোস না, ইয়ে চা বাগান হামারা হ্যায়, আমাদেরও অংশ দিতে হবে এর লাভের। খুব জোর মালিক বাগান বিক্রি করে দিতে পারে। নতুন মালিককেও তো এটা মানতে হবে। দশটা বাঙালি বাবুকে রাতারাতি তাড়িয়ে নতুন বাবু বসাতে পারে কোম্পানি কিন্তু দেড় দু হাজার কুলি সরালে কাকে দিয়ে বাগান চালাবে? এর আগে একবার এ রকম হয়েছিল। কোম্পানির সঙ্গে গোলমাল লেগেছিল য়ুনিয়নের দার্জিলিং-এর কাছে এক বাগানে! বহুৎ ভারী ঝামেলা। কোম্পানি বাগান বন্ধ করল। সবাই বাগান থেকে পাতি তুলে এক জায়গায় জমা করে নিয়ে অন্য বাগানের কাছে সস্তায় বিক্রি করতে চাইল। অন্য বাগানের মালিক প্রথম প্রথম এ রকম পাতি দু হাতে কিনলেও পরে কি কারণে পিছিয়ে গেল। চায়ের পাতা তো আর মুখে ফেলে খাওয়া যায় না? অনেক মেশিনের কসরৎ ওকে দামি করে তোলে। সেই মেশিনটাই যদি তুলে নিয়ে যায় কোম্পানি তাহলে চা বাগান তো মাঠ হয়ে যাবে। হঠাৎ সিরিলের খেয়াল হল ওরা কেউ চাষবাস জানে না। সেই টেবুয়া থেকে চলে আসার পর, চাষবাসের আর প্রশ্নই ওঠেনি। এখন তার নিজের পক্ষেও চাষ করা অসম্ভব। বাপ তো প্রায় বুড়োই হয়ে গেল। এই চা-বাগান না থাকলে তার রোজগারের একমাত্র পথ হাটে বাজারে মাল বওয়া। না, এই চা-বাগানই তাদের প্রাণ, এটাকে মেরে ফেলে তারা বাঁচতে পারে না। দাদু যে টেবুয়াতে ফিরে যাওয়ার কথা সব সময় বলে, তা নিছক পাগলামি বলে মনে হয় সিরিলের। টেবুয়াতে ফিরে গেলে খাবটা কী! সেখানে তো চা-বাগান নেই।
আগে হলে চটপট মনের কথা প্রকাশ করত সিরিল। আজকাল ভাববার সময় নেয় সব কিছুতেই। এতে অনেক সময় অপ্রিয় হবার দায় থেকে বাঁচা যায়। এর মধ্যে ওদের একজন বলল, তোরা শাদী করছিস কবে?
শাদী?
হুম। তোর মদৎ না থাকলে নিরি কখনো মাংরা সর্দারকে অপমান করতে পারে? তা আজ কী হল? একটু আগে দেখলাম মেয়েটা হিন্দুপাড়ায় রাস্তায় কাঁদতে কাঁদতে হেঁটে যাচ্ছে। আরে বাবা মেয়েটাকে ঘরে নিয়ে যা না বউ করে তাহলেই সব মিটে যায়। চাঁদ আকাশে ছাড়া থাকলে মেঘ তাকে ঢাকবেই!
ঠিকই তো! আর একজন টিপ্পনি কাটল, মাথার ওপর স্বামী নেই তাই এর ওর মাথা খাবেই তো মেয়েটা। তোর উচিত আর দেরি না করা।
ওদের কাছ থেকে সরে এসে সিরিল কিছুক্ষণ বুঝতে পারছিল না তার কী করা উচিত। নিরিকে ওর ভাল লাগে কিন্তু বিয়ে করার কথা চিন্তাও সে করেনি। তার ওপর মেয়েটার একটা স্বামী বেঁচে আছে বিনাগুড়িতে, সে শালা ঝামেলা পাকাতে পারে। কিন্তু মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে ওদিকে গিয়েছে কেন। ওই রাস্তায় মানুষজন এমনিতেই বেশি যেতে চায় না। একটু ইতস্তত করে সিরিল হাট ছেড়ে হিন্দুপাড়ার দিকে পা বাড়াল।
কিন্তু ব্যাপার স্যাপার ক্রমশ ঘোরালো হয়ে যাচ্ছে। বোনাসের দাবি নিয়ে এবার একটা জব্বর লড়াই হবে কোম্পানি আর শ্রমিকদের মধ্যে এসব অনেকদিন থেকেই শোনা যাচ্ছিল। কোম্পানি দিয়েছে সাড়ে আট পার্সেন্ট, য়ুনিয়ন চাইছে বিশ। দেড় গুণ। শালা, রক্ত দিয়ে চা তৈরি করি আমরা আর লাভের গুড় একলাই খাবে তোমরানা, এ হয় না। কিন্তু কাম বন্ধ হলে সেটা কতদিন চলবে। একটা শ্রমিক যদি তিনশ টাকা রোজগার করে তার দশ টাকাও মাসের শেষে ধার হয়। আর যদি এক মাস বন্ধ চলে তো হয়ে গেল। মালিকরা সেটা জানে বলেই এত জোর পায়। কিন্তু এবার কোন আপোস না, ইয়ে চা বাগান হামারা হ্যায়, আমাদেরও অংশ দিতে হবে এর লাভের। খুব জোর মালিক বাগান বিক্রি করে দিতে পারে। নতুন মালিককেও তো এটা মানতে হবে। দশটা বাঙালি বাবুকে রাতারাতি তাড়িয়ে নতুন বাবু বসাতে পারে কোম্পানি কিন্তু দেড় দু হাজার কুলি সরালে কাকে দিয়ে বাগান চালাবে? এর আগে একবার এ রকম হয়েছিল। কোম্পানির সঙ্গে গোলমাল লেগেছিল য়ুনিয়নের দার্জিলিং-এর কাছে এক বাগানে! বহুৎ ভারী ঝামেলা। কোম্পানি বাগান বন্ধ করল। সবাই বাগান থেকে পাতি তুলে এক জায়গায় জমা করে নিয়ে অন্য বাগানের কাছে সস্তায় বিক্রি করতে চাইল। অন্য বাগানের মালিক প্রথম প্রথম এ রকম পাতি দু হাতে কিনলেও পরে কি কারণে পিছিয়ে গেল। চায়ের পাতা তো আর মুখে ফেলে খাওয়া যায় না? অনেক মেশিনের কসরৎ ওকে দামি করে তোলে। সেই মেশিনটাই যদি তুলে নিয়ে যায় কোম্পানি তাহলে চা বাগান তো মাঠ হয়ে যাবে। হঠাৎ সিরিলের খেয়াল হল ওরা কেউ চাষবাস জানে না। সেই টেবুয়া থেকে চলে আসার পর, চাষবাসের আর প্রশ্নই ওঠেনি। এখন তার নিজের পক্ষেও চাষ করা অসম্ভব। বাপ তো প্রায় বুড়োই হয়ে গেল। এই চা-বাগান না থাকলে তার রোজগারের একমাত্র পথ হাটে বাজারে মাল বওয়া। না, এই চা-বাগানই তাদের প্রাণ, এটাকে মেরে ফেলে তারা বাঁচতে পারে না। দাদু যে টেবুয়াতে ফিরে যাওয়ার কথা সব সময় বলে, তা নিছক পাগলামি বলে মনে হয় সিরিলের। টেবুয়াতে ফিরে গেলে খাবটা কী! সেখানে তো চা-বাগান নেই।