হেমলতার পেছনে পেছনে অনি বেরিয়ে এসেছিল। হঠাৎ পরিতোষ যেন তা আবিষ্কার করে বলে উঠল, ইে ছেলেটা, তুমি এখানে কী কাছা যাও, বড়দের কথার মধ্যে থাকতে নেই। তারপর চাপা গলায় বলল, ফাদারের পেয়ারের নাতি তো, এলেই সব রিপোর্ট করবে। … …।
সঙ্গে সঙ্গে গর্জে উঠলেন হেমলতা, পরি, তুই-তুই একেবারে উচ্ছন্নে গিয়েছিস। ছি ছি ছি। সারাটা জীবন বাবাকে জ্বালিয়ে এলি, নিজের এক পয়সা রোজগার করার মুরোদ নেই, আবার এই মেয়েটাকে বিয়ে করে কষ্ট দিচ্ছিস, ছি!
হাসল পরিতোষ, বিয়ে আমি করিনি, আমাকে করেছে।
মহিলা এই সময় ড়ুকরে কেঁদে উঠতে হেমলতা বিচলিত হয়ে উঠোনে নেমে এলেন। জ্যাঠামশাইয়ের ধমক খেয়ে অনি কী করবে বুঝতে পারছিল না। লোকটা খারাপ, খুবই খারাপ। তাদের বাড়িতে কেউ এভাবে কথা বলেনা।ও দেখল বাচ্চাটা টলতে টলতে হেঁটে উঠোন পেরিয়ে বকফুলের গাছের দিকে চলে যাচ্ছে-মোদিকে কারও নজর নেই। জ্যাঠামশাইয়ের শরীরের পাশ কাটিয়ে ও নিচে নেমে বাচ্চাটাকে ধরতে গেল। বেচারা এত নিজবি যে সামান্য হেঁটে আর দাঁড়াতে পারছিল না, অনিকে পেয়ে ওর হাঁটু জড়িয়ে ধরল। পরিতোষ সেটা লক্ষ করে বলল, বাঃ, দুই ভাইয়ে দেখছ বেশ ভাব হয়েছে।
মহিলা তখনও কাঁদছিল। হেমলতা তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। বয়েস বেশি নয়, কিন্তু অসব পোড়-খাওয়া-দেখলেই বোঝা যায়। ভালো খেতে না পেয়ে শরীর ক্ষয়টে হয়ে গেছে। এ-বাড়ির বউ হবার কোনো গুণ চেহারায় নেই। মাধুরী বা নূতন বউয়ের চেহারা দেখলে মনটা যে মিতায় ভরে যায় এই মেয়েটির মধ্যে তার বিন্দুমাত্র ছায়া নেই।
হেমলতা জিজ্ঞেস করলেন, তোমার নাম কী?
যেন বেরিয়ে-আস-কান্নাটা গিলছে এমন গলায় উত্তর এল, সাবিত্রী।
তোমার বাবা কি বিয়ে দেবার আগে খোঁজখবর নেননি? কাটাকাটাভাবে শব্দগুলো উচ্চারণ করলেন হেমলতা। উঠোনের এক কোণে বাচ্চাটাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে অনি অন্যদিকে তাকিয়ে পিসিমার কথা শুনছিল। এতদিনের দেখা পিসিমার সঙ্গে এই পিসিমাকে ও কিছুতেই মেলাতে পারছিল না। হঠাৎ ওর মনে হল, পিসিমার গলা দিয়ে যেন দাদু কথা বলছেন।
আমার বাবা নেই, যশোরে দাঙ্গার সময় মারা যায়। বিয়ের পর আমরা জানতে পারলাম না ত্যজ্যপুত্র। সাবিত্রী বলল।
বাঃ, বিয়ের আগে ছেলের বাড়িঘর আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করার প্রয়োজন বোধ করলে না কেউ! চমৎকার! হেমলতা হিসাব মেলাতে পারছিলেন না।
পরিতোষ হাস, তখন আর উপায় ছিল না যে! আমাকেও কেটে পড়তে দিল না, রাতারাতি জোর করে বিয়ে দিল। নইলে আমাদের বংশে-
চুপ কর! তোর মুখে বংশ কথাটা একদম মানায় না। যাক, বাচ্চাটাকে নিয়ে যখন এসেছ তখন এমনি চলে যেতে বলছি না। সন্ধেবেলায় বাবা আসার আগেই বিদায় হয়ো। আর তার অনুমতি না পেলে এই বাড়িতে কখনোই এসো না-মনে থাকে যেন। হনহন করে আবার রান্নাঘরে ঢুকে গেলেন। হেমলতা।
পিসিমা চোখের আড়াল হওয়ামাত্র অনি জ্যাঠামশাইকে মাথার উপর দুহাত তুলে একটা নাচের ভঙ্গি করতে দেখল। জেঠিমার কান্না চট করে থেমে গিয়ে কালো কালো দাঁত বেরিয়ে পড়েছে। বড় বড় পা ফেলে জ্যাঠামশাই জেঠিমার কাছে নেমে এসে চাপা গলায় বললেন, দারুণ হয়েছে। তুমি মাইরি জব্বর অ্যাক্টিং করলে সাবু। বউদি একদম আউট। …..
জেঠিমা বললেন, ঝগড়া না বাধালে তোমার দিদি আমার কথা শুনতই না।
জ্যাঠামশাই বললেন, আমি তো ঘাবড়ে যাচ্ছিলাম। ভাবছিলাম তুমি অরিজিনাল ছাড়ছ কিনা!
জেঠিমা বলরেন, পাগল। একটা কথা তো সত্যি বলেছ।
জ্যাঠামশাই বললেন, কী
এই বাড়িটার কথা। এতবড় বাড়ি যার তাকে কি বকা যায়। এমনভাবে হাসলেন জেঠিমা যে অনির খুব খারাপ লাগল।
এটা আমার বাবার বাড়ি-আমার নয়। তাছাড়া আমাকে ত্যজ্যপুত্র করা হয়েছে-নো রাইট এই বাড়িতে। জ্যাঠামশাই উদাস গলায় বললেন। ওঁর চোখ সমস্ত বাড়িটায় ঘুরছিল।
দেখো না, আস্তে-আস্তে সব জল হয়ে যাবে। মানুষের রাগ আমার জানা আছে। কিন্তু শেষবার একটা সত্যি কথা বলো তো, শুধু টাকা চুরি করেছিলে বলে ত্যজ্যপুত্র করেছিল না অন্য কারণ ছিল? জেঠিমার চাপা গলার স্বর কেমন হিসহিসে।
পরিতোষ খুব অস্বস্তির মধ্যে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে বলল, ফাইটিং কোরো না, একটু লটঘট করেছিলাম। প্রথম যৌবন তো!
কী বললে বুড়ো ভাম, পাঁচ বছর আগে প্রথম যৌবন ছিল তোমার—
ফুঁসে-ওঠা সাবিত্রীকে হাতজোড় করে থামিয়ে দিল পরিতোষ, নিজেদের মধ্য খেয়োখেয়ি করে শেষ পর্যন্ত লক্ষ থেকে ভ্রষ্ট হয়ে যেতে চাও? আরে পুরুষমানুষের ওরকম একটু আধটু হয়ই, তা নিয়ে কেউ মাথা-খারাপ করে না। তাছাড়া দুজনের ধান্ধাই তো এক।
সঙ্গে সঙ্গে গর্জে উঠলেন হেমলতা, পরি, তুই-তুই একেবারে উচ্ছন্নে গিয়েছিস। ছি ছি ছি। সারাটা জীবন বাবাকে জ্বালিয়ে এলি, নিজের এক পয়সা রোজগার করার মুরোদ নেই, আবার এই মেয়েটাকে বিয়ে করে কষ্ট দিচ্ছিস, ছি!
হাসল পরিতোষ, বিয়ে আমি করিনি, আমাকে করেছে।
মহিলা এই সময় ড়ুকরে কেঁদে উঠতে হেমলতা বিচলিত হয়ে উঠোনে নেমে এলেন। জ্যাঠামশাইয়ের ধমক খেয়ে অনি কী করবে বুঝতে পারছিল না। লোকটা খারাপ, খুবই খারাপ। তাদের বাড়িতে কেউ এভাবে কথা বলেনা।ও দেখল বাচ্চাটা টলতে টলতে হেঁটে উঠোন পেরিয়ে বকফুলের গাছের দিকে চলে যাচ্ছে-মোদিকে কারও নজর নেই। জ্যাঠামশাইয়ের শরীরের পাশ কাটিয়ে ও নিচে নেমে বাচ্চাটাকে ধরতে গেল। বেচারা এত নিজবি যে সামান্য হেঁটে আর দাঁড়াতে পারছিল না, অনিকে পেয়ে ওর হাঁটু জড়িয়ে ধরল। পরিতোষ সেটা লক্ষ করে বলল, বাঃ, দুই ভাইয়ে দেখছ বেশ ভাব হয়েছে।
মহিলা তখনও কাঁদছিল। হেমলতা তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। বয়েস বেশি নয়, কিন্তু অসব পোড়-খাওয়া-দেখলেই বোঝা যায়। ভালো খেতে না পেয়ে শরীর ক্ষয়টে হয়ে গেছে। এ-বাড়ির বউ হবার কোনো গুণ চেহারায় নেই। মাধুরী বা নূতন বউয়ের চেহারা দেখলে মনটা যে মিতায় ভরে যায় এই মেয়েটির মধ্যে তার বিন্দুমাত্র ছায়া নেই।
হেমলতা জিজ্ঞেস করলেন, তোমার নাম কী?
যেন বেরিয়ে-আস-কান্নাটা গিলছে এমন গলায় উত্তর এল, সাবিত্রী।
তোমার বাবা কি বিয়ে দেবার আগে খোঁজখবর নেননি? কাটাকাটাভাবে শব্দগুলো উচ্চারণ করলেন হেমলতা। উঠোনের এক কোণে বাচ্চাটাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে অনি অন্যদিকে তাকিয়ে পিসিমার কথা শুনছিল। এতদিনের দেখা পিসিমার সঙ্গে এই পিসিমাকে ও কিছুতেই মেলাতে পারছিল না। হঠাৎ ওর মনে হল, পিসিমার গলা দিয়ে যেন দাদু কথা বলছেন।
আমার বাবা নেই, যশোরে দাঙ্গার সময় মারা যায়। বিয়ের পর আমরা জানতে পারলাম না ত্যজ্যপুত্র। সাবিত্রী বলল।
বাঃ, বিয়ের আগে ছেলের বাড়িঘর আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করার প্রয়োজন বোধ করলে না কেউ! চমৎকার! হেমলতা হিসাব মেলাতে পারছিলেন না।
পরিতোষ হাস, তখন আর উপায় ছিল না যে! আমাকেও কেটে পড়তে দিল না, রাতারাতি জোর করে বিয়ে দিল। নইলে আমাদের বংশে-
চুপ কর! তোর মুখে বংশ কথাটা একদম মানায় না। যাক, বাচ্চাটাকে নিয়ে যখন এসেছ তখন এমনি চলে যেতে বলছি না। সন্ধেবেলায় বাবা আসার আগেই বিদায় হয়ো। আর তার অনুমতি না পেলে এই বাড়িতে কখনোই এসো না-মনে থাকে যেন। হনহন করে আবার রান্নাঘরে ঢুকে গেলেন। হেমলতা।
পিসিমা চোখের আড়াল হওয়ামাত্র অনি জ্যাঠামশাইকে মাথার উপর দুহাত তুলে একটা নাচের ভঙ্গি করতে দেখল। জেঠিমার কান্না চট করে থেমে গিয়ে কালো কালো দাঁত বেরিয়ে পড়েছে। বড় বড় পা ফেলে জ্যাঠামশাই জেঠিমার কাছে নেমে এসে চাপা গলায় বললেন, দারুণ হয়েছে। তুমি মাইরি জব্বর অ্যাক্টিং করলে সাবু। বউদি একদম আউট। …..
জেঠিমা বললেন, ঝগড়া না বাধালে তোমার দিদি আমার কথা শুনতই না।
জ্যাঠামশাই বললেন, আমি তো ঘাবড়ে যাচ্ছিলাম। ভাবছিলাম তুমি অরিজিনাল ছাড়ছ কিনা!
জেঠিমা বলরেন, পাগল। একটা কথা তো সত্যি বলেছ।
জ্যাঠামশাই বললেন, কী
এই বাড়িটার কথা। এতবড় বাড়ি যার তাকে কি বকা যায়। এমনভাবে হাসলেন জেঠিমা যে অনির খুব খারাপ লাগল।
এটা আমার বাবার বাড়ি-আমার নয়। তাছাড়া আমাকে ত্যজ্যপুত্র করা হয়েছে-নো রাইট এই বাড়িতে। জ্যাঠামশাই উদাস গলায় বললেন। ওঁর চোখ সমস্ত বাড়িটায় ঘুরছিল।
দেখো না, আস্তে-আস্তে সব জল হয়ে যাবে। মানুষের রাগ আমার জানা আছে। কিন্তু শেষবার একটা সত্যি কথা বলো তো, শুধু টাকা চুরি করেছিলে বলে ত্যজ্যপুত্র করেছিল না অন্য কারণ ছিল? জেঠিমার চাপা গলার স্বর কেমন হিসহিসে।
পরিতোষ খুব অস্বস্তির মধ্যে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে বলল, ফাইটিং কোরো না, একটু লটঘট করেছিলাম। প্রথম যৌবন তো!
কী বললে বুড়ো ভাম, পাঁচ বছর আগে প্রথম যৌবন ছিল তোমার—
ফুঁসে-ওঠা সাবিত্রীকে হাতজোড় করে থামিয়ে দিল পরিতোষ, নিজেদের মধ্য খেয়োখেয়ি করে শেষ পর্যন্ত লক্ষ থেকে ভ্রষ্ট হয়ে যেতে চাও? আরে পুরুষমানুষের ওরকম একটু আধটু হয়ই, তা নিয়ে কেউ মাথা-খারাপ করে না। তাছাড়া দুজনের ধান্ধাই তো এক।