ছোটমার হাতের রান্না ভালো, তরকারিটা খেতে-খেতে অনির মনে হল। একটু ঝাল-ঝাল, কিন্তু বেশ সুস্বাদ। সুচি র খুব প্রিয় জিনিস, ফুলকো হলে কথাই নেই। ঠিক এই সময় অনি নতে পেল। বাইরের ঘরের দরজায় কে যেন খুব জোরে জোরে শব্দ করছে খেতে-খেতে ও উঠতে যাবে, ছোটমা রান্নাঘর থেকে ছুটে এল, তুমি খাও, আমি দেখছি।
ভেতরের বারান্দায় জলখাবার খাবার চল এ-বাড়িতে এখনও আছে। টুলমোড়াগুলো পালটায়নি। খেতে-খেতে অনি পিসিমার পেয়ারাগাছটা তার সব ডালপালা যেন নামিয়ে দিয়েছে, বেশ ডাশা ডাঁশা পেয়ারা হয়েছে গাছটায়। এই সময় বইরের ঘরে বেশ জোরে একটা ধমক শুনতে পেল অনি, কোথায় আড্ডা মারা হচ্ছিল, অ্যাঁ? আধঘন্টা ধরে ডাকছি, দরজা খোলা নাম নেই। ছোটমা বোধহয় কিছু বলতেই চিৎকারটা জোরদার হল, কেন, আস্তে বলব কেন? বিয়ের সময় তোমার বাপ তো বলে দেয়নি তোমার কান খারাপ!
খাওয়া প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছিল, অনি উঠে দাঁড়াল। গলাট নিচে নেমে আসতে ও স্পষ্ট চিনতে পারল। আর চিনতে পেরেই হতভর হয়ে গেল। মহীতোষকে এ-গলায় কোনদিন কথা বলতে শোনেনি অনি। আজ অবধি বাবাকে কারও সঙ্গে ঝগড়া করতে দেখেনি পর্যন্ত। মায়ের সঙ্গে যখন ঠাট্টা করতেন তখন বাবার গজদাঁত দেখা যেত। ও কিছুতেই মেলাতে পারছিল না। এমনকি বাবা যখন জলপাইগুড়ি যান তখনও তো এধরনের কথা বলেন না। মেয়েদের এ-বাড়িতে কেউ বকেছে এমন গলায়, মনে করতে পারছিল না অনি। তা ছাড়া, ওর যেজন্য আসা, বাবার এই গলা শুনে কিছুতেই মনে হচ্ছে না যে তার কোনো অসুখ করেছে।
ধুপ জ্বলছে না কেন, ধুপআবার চিৎকার ভেসে এল, এবার কাছে। বোধহয় বাবা এখন মাঝের ঘরে চলে এসেছেন। তবে স্বরটা কেমন কাপা-কাঁপা, সুস্থ নয়।
ছোটমার গলা শুনতে পেল ও, নিবে গেছে।
অ্যাই! গর্জনটা অভূতভাবে গোল যেন, সারাদিন খ্যাটন মারছ, একটা কাজ বললে পাওয়া যাবে না, না?
আঃ! আস্তে কথা বলো। ছোটমা যেন ধমকে উঠলেন।
ও বাবা, আবার গলায় তেজ হয়েছে দেখছি। ঝেড়ে বিষ নামিয়ে দেব?
জবাবে ছোটমা বলল, অনিমে এসেছে।
প্রথমে বোধহয় বুঝতে পারেননি বাবা, কে এসেছে। আবার কে জুটল?
ছোটমা বলল, অনিমেষ-অনি।
এবার চটপট বাবার কেমন-হয়ে-যাওয়া গলাটা কানে এল, অনি? অনি এসেছে! কোথায়? ভেতরে, খাচ্ছে। খুব নির্লিপ্ত ছোটমার গলা।
তুমি আনালে?
না, বাবা পাঠিয়েছেন তোমাকে দেখতে। অসুখের খবর পেয়েছেন কার মুখে। কাল বাবারও পা ভেঙেছে।
সে কী! কী করে?
রিকশার ধাক্কা লেগে। আজ হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাবেন। তবু ছেলেকে পাঠিয়েছেন তোমায় দেখতে, আর তুমি-। কেমন ধরা-ধরা লাগল ছোটমরা গলা।
অ্যাই, আগে বলিনি কেন যে ও এসেছে ছেলেকে দেখাতে চাও, না? প্রতিশোধ নিতে চাও, না।
তুমি আমাকে কিছু বলার সুযোগ দাওনি। রোজ রোজ তুমি যা কর, আমি আর পারি না। এবার যেন কেঁদে ফেলল হোট।
সঙ্গে সঙ্গে বাবা বলে উঠলেন, অ্যাই চুপ! খবরদার এ-ঘরে দাঁড়িয়ে তুমি কাঁদবে না। ছেলেকে শোনাচ্ছ বুঝতে পারছি। খবরদার, কোনো নালিশ করবে না।
ছোটমা বলল, চমৎকার। তোমার নামে আমি ঐটুকু ছেলের কাছে নালিশ করব? গলায় দড়ি জোটে না তার চেয়ে!
বাবা বললেন, গুড। তা সে কোথায়? অনেকদিন পরে এল, না?
ভেতরের বারান্দায় জলখাবার খাবার চল এ-বাড়িতে এখনও আছে। টুলমোড়াগুলো পালটায়নি। খেতে-খেতে অনি পিসিমার পেয়ারাগাছটা তার সব ডালপালা যেন নামিয়ে দিয়েছে, বেশ ডাশা ডাঁশা পেয়ারা হয়েছে গাছটায়। এই সময় বইরের ঘরে বেশ জোরে একটা ধমক শুনতে পেল অনি, কোথায় আড্ডা মারা হচ্ছিল, অ্যাঁ? আধঘন্টা ধরে ডাকছি, দরজা খোলা নাম নেই। ছোটমা বোধহয় কিছু বলতেই চিৎকারটা জোরদার হল, কেন, আস্তে বলব কেন? বিয়ের সময় তোমার বাপ তো বলে দেয়নি তোমার কান খারাপ!
খাওয়া প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছিল, অনি উঠে দাঁড়াল। গলাট নিচে নেমে আসতে ও স্পষ্ট চিনতে পারল। আর চিনতে পেরেই হতভর হয়ে গেল। মহীতোষকে এ-গলায় কোনদিন কথা বলতে শোনেনি অনি। আজ অবধি বাবাকে কারও সঙ্গে ঝগড়া করতে দেখেনি পর্যন্ত। মায়ের সঙ্গে যখন ঠাট্টা করতেন তখন বাবার গজদাঁত দেখা যেত। ও কিছুতেই মেলাতে পারছিল না। এমনকি বাবা যখন জলপাইগুড়ি যান তখনও তো এধরনের কথা বলেন না। মেয়েদের এ-বাড়িতে কেউ বকেছে এমন গলায়, মনে করতে পারছিল না অনি। তা ছাড়া, ওর যেজন্য আসা, বাবার এই গলা শুনে কিছুতেই মনে হচ্ছে না যে তার কোনো অসুখ করেছে।
ধুপ জ্বলছে না কেন, ধুপআবার চিৎকার ভেসে এল, এবার কাছে। বোধহয় বাবা এখন মাঝের ঘরে চলে এসেছেন। তবে স্বরটা কেমন কাপা-কাঁপা, সুস্থ নয়।
ছোটমার গলা শুনতে পেল ও, নিবে গেছে।
অ্যাই! গর্জনটা অভূতভাবে গোল যেন, সারাদিন খ্যাটন মারছ, একটা কাজ বললে পাওয়া যাবে না, না?
আঃ! আস্তে কথা বলো। ছোটমা যেন ধমকে উঠলেন।
ও বাবা, আবার গলায় তেজ হয়েছে দেখছি। ঝেড়ে বিষ নামিয়ে দেব?
জবাবে ছোটমা বলল, অনিমে এসেছে।
প্রথমে বোধহয় বুঝতে পারেননি বাবা, কে এসেছে। আবার কে জুটল?
ছোটমা বলল, অনিমেষ-অনি।
এবার চটপট বাবার কেমন-হয়ে-যাওয়া গলাটা কানে এল, অনি? অনি এসেছে! কোথায়? ভেতরে, খাচ্ছে। খুব নির্লিপ্ত ছোটমার গলা।
তুমি আনালে?
না, বাবা পাঠিয়েছেন তোমাকে দেখতে। অসুখের খবর পেয়েছেন কার মুখে। কাল বাবারও পা ভেঙেছে।
সে কী! কী করে?
রিকশার ধাক্কা লেগে। আজ হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাবেন। তবু ছেলেকে পাঠিয়েছেন তোমায় দেখতে, আর তুমি-। কেমন ধরা-ধরা লাগল ছোটমরা গলা।
অ্যাই, আগে বলিনি কেন যে ও এসেছে ছেলেকে দেখাতে চাও, না? প্রতিশোধ নিতে চাও, না।
তুমি আমাকে কিছু বলার সুযোগ দাওনি। রোজ রোজ তুমি যা কর, আমি আর পারি না। এবার যেন কেঁদে ফেলল হোট।
সঙ্গে সঙ্গে বাবা বলে উঠলেন, অ্যাই চুপ! খবরদার এ-ঘরে দাঁড়িয়ে তুমি কাঁদবে না। ছেলেকে শোনাচ্ছ বুঝতে পারছি। খবরদার, কোনো নালিশ করবে না।
ছোটমা বলল, চমৎকার। তোমার নামে আমি ঐটুকু ছেলের কাছে নালিশ করব? গলায় দড়ি জোটে না তার চেয়ে!
বাবা বললেন, গুড। তা সে কোথায়? অনেকদিন পরে এল, না?