দুপুরের খাওয়াদাওয়ার পর কাঁঠালগাছতলায় এসে দাঁড়াল অনি। বাড়ি ফেরার পর থেকে ছোটমার সঙ্গে কথাই হচ্ছে না প্রায়। এমনকি অনিকে খাবার দেবার সময় মনে হচ্ছিল রান্নাঘরে ওর খুব কাজ, সামনে দাঁড়িয়ে গল্প করার সময় পাচ্ছেন না। উঠোনে ডাই-করা বাসন অথচ বাড়িতে কাজের লোক নেই-বাবার ওপর ক্রমশ চটে যাচ্ছিল। ছোটমাকে এখন সব কাজ করতে হয়। বিয়ের পর পায়েসের বাটি হাতে নিয়ে ওর ঘরে-আসা ছোটমার সঙ্গে এখন কেমন রোগা জিরজিরে হয়ে যাওয়া ছোটমার কোনো মিল নেই। সত্যি বলতে কী ছোটমার জন্য ওর কষ্ট হচ্ছিল।
অনির খাওয়া হয়ে যাবার পর মহীতোষ এলেন। ভাগ্যিস একসঙ্গে খেতে বসা হয়নি। তখন বাবার পাশে চুপচাপ শব্দ না করে চিবিয়ে যাওয়া, একটা দমবন্ধকরা পরিবেশে কথা না বলে খাবার গেলা-অনির মনে হল ও খুব বেঁচে গেছে। কাঁঠালগাছতলায় দাঁড়িয়ে বাবার গলা শুনতে পেল সে, অনি কোথায়? ছোটমার জবাবটা স্পষ্ট হল না। মহীতোষ গলা চড়িয়ে বললেন, এই রোদ্দুরে টোটো করে না ঘুরে মায়ের কাছে গিয়ে বসতে তো পারে। ভক্তি নেই, বুঝলে, আজকালকার ছেলেদের মাতৃভক্তি নেই। ছোটমার গলা শোনা গেল না।
অনি ঘরে দাঁড়াল। ও ভাবল চেঁচিয়ে বাবাকে বলে যে মাকে ও যেরকম ভালোবাসে তা বাবা কল্পনা করতে পারবে না। কিন্তু বলার মুহূর্তে যেন অনির মনে হল কেউ যেন তাকে বলল, কী দরকার, কী দরকার। কিছুদিন হল অনি এইরকম একটা গলা মনেমনে শুনতে পায়। যখনই কোনো সমস্যা বড় হয়ে ওঠে, তার খুব অভিমানবা রাগ হয়, তখনই কেউ-একজন মনেমনে কদিন আগে একটা ব্যাপার হয়েছিল। ওদের স্কুলে একজন নতুন টিচার এসেছেন দক্ষিণেশ্বর থেকে খুব ভক্ত লোক। আর বেশ ভালো লেগেছিল দেখতে। একদিন হলঘরের প্রয়ারের পর উনি ব্ল্যাকবোর্ডে লিখে দিলেন ওঁ ভগবতে · শ্রীরামকৃষ্ণায় নমঃ। ওরা ভেবেছিল এটা মাস্টারমশাই-এর নিছক খেয়াল। দিন-সাতেক পরে হঠাৎ ক্লাসে এসে জিজ্ঞাসা করতে লাগলেন লাইনটা কার স্পষ্ট মনে আছে, কে লিখতে পারবে? কেউ খেয়াল করেনি, ফলে এখন ঠিকঠাক সাহস পাচ্ছিল না। অনি সঠিক জবাব দিতে তিনি ওকে কাছে ডেকে বললেন, চিরকাল লাইনটা মনে রাখবে। সুখে কিংবা দুঃখে, বিপদে-আপদে মনেমনে লাইনটা বলে নিজের কপালে মা শব্দটা লিখবে। দেখবে তোমার অমঙ্গল হবে না। কথাটা বলে ওর মুখের দিকে কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, রামকৃষ্ণ কে ছিলেন জান তো? ঘাড় নেড়েছিল অনি।
গুড! অনি ছিলেন পরম সত্য, পরম আনন্দ। তার আলোর কাছে কোনো আলো ঘেঁষতে পারে না।
কথাগুলো তখন ভালো করে বুঝতে না পারলেও মনেমনে তাঁকে শ্রদ্ধার সঙ্গে নিয়েছিল অনি। তার পর থেকে এই প্রক্রিয়াকে অনেকবার কাজে লাগিয়েছে ও। যেমন, বিকেল ফুরিয়ে সন্ধে হয়ে গেলে দেরি করে বাড়ি ফেরার জন্য বুকটা যখন চুকচুক করে ওঠে তখন চট করে ওই চারটে শব্দ আওড়ে কপালে মা লিখলে অনি লক্ষ করছে কোনো গোলমালে পড়তে হয় না। এই আজকে যখন ঝাড়িকাকুকে চৌমাথায় ছেড়ে ও বাড়ি ফিরল তখন মনে হচ্ছিল এখন বাবার মুখোমুখি হতে হবে, একসঙ্গে খেতে হবে। বাড়িতে ঢোকার আগে প্রক্রিয়াটা করতে ফাড়া কেটে গেল।
রামকৃষ্ণকে ভগবান মনে করে প্রণাম করার একটা কারণ থাকতে পারে, কিন্তু এটা অনিমেষের কাছে স্পষ্ট নয় মাস্টারমশাই কেন মা শব্দটা কপালে লিখতে বলেছিলেন। আশ্চর্য, শব্দটা লেখার পর সারা শরীরে মনে কেমন একটা নিশ্চিন্তি সৃষ্টি হয়।
অনির খাওয়া হয়ে যাবার পর মহীতোষ এলেন। ভাগ্যিস একসঙ্গে খেতে বসা হয়নি। তখন বাবার পাশে চুপচাপ শব্দ না করে চিবিয়ে যাওয়া, একটা দমবন্ধকরা পরিবেশে কথা না বলে খাবার গেলা-অনির মনে হল ও খুব বেঁচে গেছে। কাঁঠালগাছতলায় দাঁড়িয়ে বাবার গলা শুনতে পেল সে, অনি কোথায়? ছোটমার জবাবটা স্পষ্ট হল না। মহীতোষ গলা চড়িয়ে বললেন, এই রোদ্দুরে টোটো করে না ঘুরে মায়ের কাছে গিয়ে বসতে তো পারে। ভক্তি নেই, বুঝলে, আজকালকার ছেলেদের মাতৃভক্তি নেই। ছোটমার গলা শোনা গেল না।
অনি ঘরে দাঁড়াল। ও ভাবল চেঁচিয়ে বাবাকে বলে যে মাকে ও যেরকম ভালোবাসে তা বাবা কল্পনা করতে পারবে না। কিন্তু বলার মুহূর্তে যেন অনির মনে হল কেউ যেন তাকে বলল, কী দরকার, কী দরকার। কিছুদিন হল অনি এইরকম একটা গলা মনেমনে শুনতে পায়। যখনই কোনো সমস্যা বড় হয়ে ওঠে, তার খুব অভিমানবা রাগ হয়, তখনই কেউ-একজন মনেমনে কদিন আগে একটা ব্যাপার হয়েছিল। ওদের স্কুলে একজন নতুন টিচার এসেছেন দক্ষিণেশ্বর থেকে খুব ভক্ত লোক। আর বেশ ভালো লেগেছিল দেখতে। একদিন হলঘরের প্রয়ারের পর উনি ব্ল্যাকবোর্ডে লিখে দিলেন ওঁ ভগবতে · শ্রীরামকৃষ্ণায় নমঃ। ওরা ভেবেছিল এটা মাস্টারমশাই-এর নিছক খেয়াল। দিন-সাতেক পরে হঠাৎ ক্লাসে এসে জিজ্ঞাসা করতে লাগলেন লাইনটা কার স্পষ্ট মনে আছে, কে লিখতে পারবে? কেউ খেয়াল করেনি, ফলে এখন ঠিকঠাক সাহস পাচ্ছিল না। অনি সঠিক জবাব দিতে তিনি ওকে কাছে ডেকে বললেন, চিরকাল লাইনটা মনে রাখবে। সুখে কিংবা দুঃখে, বিপদে-আপদে মনেমনে লাইনটা বলে নিজের কপালে মা শব্দটা লিখবে। দেখবে তোমার অমঙ্গল হবে না। কথাটা বলে ওর মুখের দিকে কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, রামকৃষ্ণ কে ছিলেন জান তো? ঘাড় নেড়েছিল অনি।
গুড! অনি ছিলেন পরম সত্য, পরম আনন্দ। তার আলোর কাছে কোনো আলো ঘেঁষতে পারে না।
কথাগুলো তখন ভালো করে বুঝতে না পারলেও মনেমনে তাঁকে শ্রদ্ধার সঙ্গে নিয়েছিল অনি। তার পর থেকে এই প্রক্রিয়াকে অনেকবার কাজে লাগিয়েছে ও। যেমন, বিকেল ফুরিয়ে সন্ধে হয়ে গেলে দেরি করে বাড়ি ফেরার জন্য বুকটা যখন চুকচুক করে ওঠে তখন চট করে ওই চারটে শব্দ আওড়ে কপালে মা লিখলে অনি লক্ষ করছে কোনো গোলমালে পড়তে হয় না। এই আজকে যখন ঝাড়িকাকুকে চৌমাথায় ছেড়ে ও বাড়ি ফিরল তখন মনে হচ্ছিল এখন বাবার মুখোমুখি হতে হবে, একসঙ্গে খেতে হবে। বাড়িতে ঢোকার আগে প্রক্রিয়াটা করতে ফাড়া কেটে গেল।
রামকৃষ্ণকে ভগবান মনে করে প্রণাম করার একটা কারণ থাকতে পারে, কিন্তু এটা অনিমেষের কাছে স্পষ্ট নয় মাস্টারমশাই কেন মা শব্দটা কপালে লিখতে বলেছিলেন। আশ্চর্য, শব্দটা লেখার পর সারা শরীরে মনে কেমন একটা নিশ্চিন্তি সৃষ্টি হয়।