দূরে তিস্তার মধ্যিখানে সেই মেয়ে দুটো কিছু বলে চেঁচিয়ে উঠতে টপটপ এরা কয়েকজন জলে ঝাঁপ দিল। অনি দেখল তিস্তার ঠিক মাঝবরাবর একটা বিরাট গাছের গুঁড়ি ভেসে যাচ্ছে। পুঁড়িটার অনেকখানি জলের নিচে ডোবা, কিন্তু যেটুকু দেখা যাচ্ছে দ্য থেকে এর আকৃতিটা বোঝা যায়, এটাকে দেখতে পেয়েই মেয়েগুলোর মধ্যে দারুণ উল্লাস ছড়িয়ে পড়েছে। এতক্ষণ যে গান গাইছিল সে এখন উঠে দাঁড়িয়ে দুটো হাত মুখের দুপাশে আড়াল করে সঁতরে-যাওয়া মেয়েলোকে নির্দেশ দিচ্ছিল। আগে মেয়ে দুটো যে লম্বা দড়ি কোমরে বেঁধে নিয়ে গিয়েছে অনি তা দেখেনি। এখন সেগুলোর ডগা চটপট ভেসে-যাওয়া গুড়িটার গায়ে গিটি দিয়ে বেঁধে ফেলে ওরা নিশ্চিন্ত হল। গুড়িটা কিন্তু ভেসেই যাচ্ছে। ততক্ষণে অন্য মেয়েরা গিয়ে সেই দড়িগুলোর প্রত্ত ধরে ফেলেছে। হঠাৎ একটা অদ্ভুত সুরেলা চিৎকার থেমে-থেমে ভেসে আসতে লাগল। গুড়িটা এত বড় যে মেয়েদের সরাসরি টেনে আনার সাধ্যি নেই। তাই ওরা ওটাকে স্রোতের টানে চলে যেতে দিয়ে মাঝে-মাঝে হ্যাচকা টানে একটু করে তীরের দিকে সরিয়ে আনছে। আর টানবার সময় সেই সুরেলা চিৎকার বোধহয় ওদের শক্তি যোগাচ্ছে বেশি করে। মগ্ন হয়ে ওদের পরিশ্রম দেখছিল অনি। মেয়েগুলোর শক্তি ওদের শরীর দেখে আঁচ করা যায় না।
নতুন স্যার কয়েক দিন আগে ওদের কয়েকজনকে নিয়ে শিকারপুর চা-বাগানের কাছে একটা জঙ্গলে গিয়েছিলেন। সেখানে একটা পোডড়া মন্দির আছে। জলপাইগুড়ি থেকে যেতে খুব বেশি সময় লাগে না। মন্দিরটা তিস্তা থেকে খুব দূরে নয়। লোকে বলে ওটা নাকি দেবীচৌধুরাণীর প্রতিষ্ঠিত কালীমন্দির। ডাকাতি করার আগে এ-অঞ্চলে এলে পুজো দিয়ে যেতেন। এই তিস্তার ওপর দিয়ে। দেবীচৌধুরাণীর বজরা ভেসে যেত কল্পনা করতেও রোমাঞ্চ হয়। এখন ওর মনে হল এইসব মেয়ে পরিশ্রমের দিক দিয়ে দেবীচৌধুরাণীর চেয়ে একটুও কম নয়। গাছের গুঁড়িটা স্রোতের টানে ক্রমশ চোখের আড়ালে চলে গেলেও অনি বুঝতে পারল সেটা তীরের দিকে চলে এসেছে এবার মেয়েগুলো যদি তীরের ওপর ওঠে গুণ-টানার মতো করে গুড়িটাকে এখানে টেনে নিয়ে আসে তা হলে ওদের নির্ঘাত দেখতে পাবে। বার্নিশ কিং সাহেবের ঘাটের গুণ-টানা দেখেছে ও। এখান থেকে সরে যাওয়া। দরকার। অনি পাশ ফিরে তাকিয়ে বন্ধুদের দেখতে পেল না। একটু আগেও ওরা এখানে ছিল, এত সন্তর্পনে এখান তেকে সরে গিয়েছে যে সে টের পায়নি। এদিকে মেয়েগুলোর চিৎকার বেশ দ্রুত এগিয়ে আসছে, বোঝা যাচ্ছে পাড়ে উঠে পড়েছে ওরা, এবার গুণ-টানা শুরু হবে।
মাথা নিচু করে ভেঙে-যাওয়া কাশবনের চিহ্ন দেখে ও জঙ্গলের ভেতর ঢুকে পড়ল। খানিক দূর আসার পর ও বন্ধুদের দেখতে পেল। অনি যে পা টিপে টিপে ওদের পেছনে এসেছে তা যেন ওরা টের পেল না। দুজনেই হাঁটু গেড়ে বসে সবকিছু দেখছে। অনি তপনের পিঠের ওপর হাত রাখতেই ভীষণ চমকে উঠে ওকে দেখতে শেয়ে নিশ্বাস ফ্যালে সে, উঃ, চমকে দিয়েছিলি! কথাটা একটু জোর হয়ে যেতেই পাশ থেকে মণ্টু ওর পটে জোরে চিমটি কাটল। তপনের মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে ব্যাথা লেগেছে খুব কিন্তু সেটা ও হজম করে নিল। কী দেখছে ওরা বোঝার জন্য অনি কাশবনের মধ্যে মাথা গলিয়ে দিল। প্রথমে বুঝতে পারেনি, পরে স্পষ্ট হল, সামনে এক চিলতে খোলা বালির ওপরে দুটো শরীর প্রচণ্ড আক্রোশে কুস্তি লড়ছে। অনেকক্ষণ ধরে লড়াইটা হচ্ছিল। অনি দেখতে আসার সময়মটায় একজনকে প্রায় কবজা করে ফেলেছে প্রতিদ্বন্দী। এরকম এক নির্জন জঙ্গলের মধ্যে ওরা কুস্তি করছে কেন বুঝতে না পেরে অনি হাঁ করে দেখল বিজয়ী উঠে দাঁড়াল, বিজিত শুয়ে আছে চিত হয়ে বালিতে। সঙ্গে সঙ্গে চমকে উঠল অনি। এরা দুজনেই মেয়েমানুষ। যে শুয়ে আছে অসহায়ের ভঙ্গিতে, একটা হাত চোখের ওপর আড়াল কলে, তার বয়স হয়েছে শরীরটা কেমন চললে। যে জিতল, তার উঠে দাঁড়ানোতে একটা গর্ব ফেটে পড়ছিল যা তার অল্প বয়সের সঙ্গে দারুণ মানিয়ে যাচ্ছিল। তার দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা যায় না। খুব গর্বিত ভঙ্গিমায় সে ছেড়ে-রাখা জামাকাপড় পরতে লাগল। হঠাৎ ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে অনির মনে হল শরীরে যেন অনেক জ্বর এসে গেছে। গলা জিভ দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে অনির মনে হল শরীরে যেন অনেক জ্বর এসে গেছে। গলা, জিভ শুকনো। একটু একটু করে কপালে ঘাম জমছে। পায়ে কোনো সাড়া নেই। যুবতী যাবার সময় থুক। করে শুয়ে-থাকা প্রৌঢ়ার দিকে একদলা থুতু ফেলে চলে গেল, প্রৌঢ়া সেই ভঙ্গিতেই পড়ে থাকল। কিছুক্ষণ, তারপর হঠাৎ উপুড় হয়ে চাপা গলায় ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল, মণ্টু ফিসফিস করে বলল, বেচারা বরটাকে হারাল। এর আগে কী কথা হয়েছে মেয়ে দুটোর মধ্যে অনি শোনেনি তাই মণ্টু কথাটা বলতে ও ঠিক বুঝতে পারল না। কিন্তু ওর শরীর এরকম করছে কেন?
নতুন স্যার কয়েক দিন আগে ওদের কয়েকজনকে নিয়ে শিকারপুর চা-বাগানের কাছে একটা জঙ্গলে গিয়েছিলেন। সেখানে একটা পোডড়া মন্দির আছে। জলপাইগুড়ি থেকে যেতে খুব বেশি সময় লাগে না। মন্দিরটা তিস্তা থেকে খুব দূরে নয়। লোকে বলে ওটা নাকি দেবীচৌধুরাণীর প্রতিষ্ঠিত কালীমন্দির। ডাকাতি করার আগে এ-অঞ্চলে এলে পুজো দিয়ে যেতেন। এই তিস্তার ওপর দিয়ে। দেবীচৌধুরাণীর বজরা ভেসে যেত কল্পনা করতেও রোমাঞ্চ হয়। এখন ওর মনে হল এইসব মেয়ে পরিশ্রমের দিক দিয়ে দেবীচৌধুরাণীর চেয়ে একটুও কম নয়। গাছের গুঁড়িটা স্রোতের টানে ক্রমশ চোখের আড়ালে চলে গেলেও অনি বুঝতে পারল সেটা তীরের দিকে চলে এসেছে এবার মেয়েগুলো যদি তীরের ওপর ওঠে গুণ-টানার মতো করে গুড়িটাকে এখানে টেনে নিয়ে আসে তা হলে ওদের নির্ঘাত দেখতে পাবে। বার্নিশ কিং সাহেবের ঘাটের গুণ-টানা দেখেছে ও। এখান থেকে সরে যাওয়া। দরকার। অনি পাশ ফিরে তাকিয়ে বন্ধুদের দেখতে পেল না। একটু আগেও ওরা এখানে ছিল, এত সন্তর্পনে এখান তেকে সরে গিয়েছে যে সে টের পায়নি। এদিকে মেয়েগুলোর চিৎকার বেশ দ্রুত এগিয়ে আসছে, বোঝা যাচ্ছে পাড়ে উঠে পড়েছে ওরা, এবার গুণ-টানা শুরু হবে।
মাথা নিচু করে ভেঙে-যাওয়া কাশবনের চিহ্ন দেখে ও জঙ্গলের ভেতর ঢুকে পড়ল। খানিক দূর আসার পর ও বন্ধুদের দেখতে পেল। অনি যে পা টিপে টিপে ওদের পেছনে এসেছে তা যেন ওরা টের পেল না। দুজনেই হাঁটু গেড়ে বসে সবকিছু দেখছে। অনি তপনের পিঠের ওপর হাত রাখতেই ভীষণ চমকে উঠে ওকে দেখতে শেয়ে নিশ্বাস ফ্যালে সে, উঃ, চমকে দিয়েছিলি! কথাটা একটু জোর হয়ে যেতেই পাশ থেকে মণ্টু ওর পটে জোরে চিমটি কাটল। তপনের মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে ব্যাথা লেগেছে খুব কিন্তু সেটা ও হজম করে নিল। কী দেখছে ওরা বোঝার জন্য অনি কাশবনের মধ্যে মাথা গলিয়ে দিল। প্রথমে বুঝতে পারেনি, পরে স্পষ্ট হল, সামনে এক চিলতে খোলা বালির ওপরে দুটো শরীর প্রচণ্ড আক্রোশে কুস্তি লড়ছে। অনেকক্ষণ ধরে লড়াইটা হচ্ছিল। অনি দেখতে আসার সময়মটায় একজনকে প্রায় কবজা করে ফেলেছে প্রতিদ্বন্দী। এরকম এক নির্জন জঙ্গলের মধ্যে ওরা কুস্তি করছে কেন বুঝতে না পেরে অনি হাঁ করে দেখল বিজয়ী উঠে দাঁড়াল, বিজিত শুয়ে আছে চিত হয়ে বালিতে। সঙ্গে সঙ্গে চমকে উঠল অনি। এরা দুজনেই মেয়েমানুষ। যে শুয়ে আছে অসহায়ের ভঙ্গিতে, একটা হাত চোখের ওপর আড়াল কলে, তার বয়স হয়েছে শরীরটা কেমন চললে। যে জিতল, তার উঠে দাঁড়ানোতে একটা গর্ব ফেটে পড়ছিল যা তার অল্প বয়সের সঙ্গে দারুণ মানিয়ে যাচ্ছিল। তার দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা যায় না। খুব গর্বিত ভঙ্গিমায় সে ছেড়ে-রাখা জামাকাপড় পরতে লাগল। হঠাৎ ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে অনির মনে হল শরীরে যেন অনেক জ্বর এসে গেছে। গলা জিভ দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে অনির মনে হল শরীরে যেন অনেক জ্বর এসে গেছে। গলা, জিভ শুকনো। একটু একটু করে কপালে ঘাম জমছে। পায়ে কোনো সাড়া নেই। যুবতী যাবার সময় থুক। করে শুয়ে-থাকা প্রৌঢ়ার দিকে একদলা থুতু ফেলে চলে গেল, প্রৌঢ়া সেই ভঙ্গিতেই পড়ে থাকল। কিছুক্ষণ, তারপর হঠাৎ উপুড় হয়ে চাপা গলায় ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল, মণ্টু ফিসফিস করে বলল, বেচারা বরটাকে হারাল। এর আগে কী কথা হয়েছে মেয়ে দুটোর মধ্যে অনি শোনেনি তাই মণ্টু কথাটা বলতে ও ঠিক বুঝতে পারল না। কিন্তু ওর শরীর এরকম করছে কেন?