খবরটা সবাই শুনে থ হয়ে গেল। স্কুল ফাইনালে স্ট্যান্ড করা রীতিমতো চাঞ্চল্যকর ব্যাপার। এর আগে এফ ডি আই থেকে একজন নিচের দিকে স্ট্যান্ড করতেই শহরের হইচই পড়ে গিয়েছিল। কে সেই ছেলে? অরূপ? টেস্টে ওর রেজাল্ট সবচেয়ে ভালো ছিল। এই সময় হেডমাস্টারমশাই গলা তুলে ডাকলেন, অর্ক-অর্ক আছ এখানে?
সঙ্গে সঙ্গে ছেলেরা পেছনে দাঁড়ানো অর্ককে জড়িয়ে ধরল হইচই করে। হেডমাস্টারমশাই দেখলেন এই মুহূর্তে ওকে আলাদা করা অসম্ভব। তিনি একজনকে বলে গেলেন, অর্ক যেন যাবার সময় দেখা করে যায়।
ভূগোল-সার ততক্ষণে নোটিসবোর্ডে কাগজটা টাঙিয়ে দিয়েছেন। সবাই সেটার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে একমাত্র অর্ক ছাড়া। সবাই একসঙ্গে নিজের রেজাল্ট দেখতে চায়। অনিমেষ কিছুতেই ভিড় ঠেলে এগাতে পারছিল না। ও দেখল অর্ক দূরে দাঁড়িয়ে মেজাজে নতুন একটা সিগারেট ধরিয়ে টানতে টানতে ওদের দিকে তাকিয়ে হাসছে। তাজ্জব হয়ে গেল অনিমেষ, এই মুহূর্তে কেউ সিগারেট খেতে পারে! ভিড়টার দিকে তাকাল সে–যদি থার্ড ডিভিশন হয়ে যায়-আর-এ হয়নি বোঝা যাচ্ছে, হলে হেডমাস্টারমশাই নিশ্চয় বলতেন। আর পারল না অনিমেষ অপেক্ষা করতে, ভিড়ের একটা দিক সামান্য ফাঁক হতেই সে ঢুকে পড়ল সেইখান দিয়ে। তারপর ঠেলেঠলে একেবারে নোটিসবোর্ডের। ছয় ইঞ্চির মধ্যে ওর চোখ চলে এল। প্রথমে সার-ওদওয়া পিঁপড়ের মতো নামগুলো চোখে ভাসল। সহ্য হয়ে এলে ও প্রথম থেকে নামগুলো পড়তে লাগল। অরূপ ফার্স্ট ডিভিশন-একটা দাড়ি, অর্ক একটা দাড়ি, তারপর দুটো দাঁড়ি-দুটো-দুটো-একটা-দুটো-নিজের নাম চোখে আসতেই দৃষ্টিটা পিছনে ডানদিকে সরে গেল। সঙ্গে সঙ্গে কে যেন পেছন থেকে কোমর জড়িয়ে ধরে ওকে ওপরে তুলে ধরে চিৎকার করে উঠল। নোটিসবোর্ডের ওপরে মাথা উঠে যাওয়ায় নিজের নামের পাশে এক দাড়িকে বিরাট লম্বা দেখল সে।
সমস্ত শরীরে লক্ষ কদমফুলের নন-তপনের আলিঙ্গন থেকে নিজেকে মুক্ত করতে সময় নিল অনিমেষ। তপন সেকেন্ড ডিভিশন পেয়েছে। এবং মণ্টু ফার্স্ট ডিভিশন। বারোজন ফাস্ট ডিভিশন, আঠারোজন সেকেন্ড, বাকিরা থার্ড ভিশিন। মন্ট এগিয়ে এসে সাহেবি কায়দায় গম্ভীরমুখে ওর সঙ্গে যাডশেক করল। তপনের কোনো আপসোস নেই-ও জানত দ্বিতীয় ডিভিশনই ওর বরাদ্দ। ওরা বেশ দৃঢ়পায়ে বাইরে হেঁটে এসে অর্ককে খুঁজল-না, অর্ক কোথাও নেই। হেডমাস্টারমশাই-এর ঘরেও যায়নি।
তপন বলল, আমরা এখন কলেজ স্টুডেন্ট-আঃ, ফাইন!
মণ্টু বলল, মাইরি, শেষ পর্যন্ত বড় হয়ে গেলাম। ভাবাই যায় না! শালা আজ যদি রম্ভারা এখানে থাকত তো ট্যারা হয়ে যেত।
অনিমেষ কিছু বলল না। স্কুল থেকে বের হবার আগে সে একবার নিশীথাবু সঙ্গে দেখা করে যাবে কি না ভাবল। কিন্তু মণ্টুরা বেরিয়ে যাচ্ছে-এবং সঙ্গে সঙ্গে কুষ্ঠরোগীদের ডেরাটার কথা মনে পড়ে যাওয়ায় ও শক্ত হয়ে গেল।
বাইরে সমানে বৃষ্টি হচ্ছে। একটুও তোয়াক্কা না করে ওরা রাস্তায় নেমে পড়ল। মণ্টু বলল, চল গার্লস স্কুলটা দেখে আসি-ওখানে ফেলু মেয়েরা আজ হেভি কাঁদবে।
এখন এই বৃষ্টিতে হাঁটতে অনিমেষের ভীষন ভালো লাগছিল। ও একবার ভাবল, দাদুকে একছুটে বলে আসে খবরটা, কিন্তু বন্ধুদের দিকে তাকিয়ে ইচ্ছেটা চেপে গেল। আজ বাংলাদেশে ও একাই শুধু স্কুল ফাইনাশ পাম করেনি। বৃষ্টিতে হাঁটতে হাঁটতে ওরা শহরটাকে ভিজতে দেখল। শহরের লোকরাও বিভিন্ন ছাউনির তলায় দাঁড়িয়ে তিনটি কাকভিজে তরুণের ব্যাপার দেখে অবাক হল। গার্লস স্কুলের দিকে যেতে-যেতে তপন হঠাৎ গান ধরল, এখন আর দেরি নয়, ধর গো তোরা হাতে হাতে ধর গো/আজ আপন পথে ফিরতে হবে সামনে মিলন-স্বর্গ।
ও এক লাইন গাইছে, অনিমেষ আর মণ্টু পরের লাইনটা আবৃত্তি করছে। এই বৃষ্টির জল গায়ে মুখে মেখে গান গাইতে গাইতে ওরা ঝোলানো পুলের ওপর এসে দাঁড়াল। অনিমেষদের সুরের ঠিক নেই, কিন্তু একটা খুশির জোয়ার বুরকে ছাপিয়ে যাচ্ছিল। এক ভদ্রলোক ছাতি-মাখায় আসছিলেন, মন্টর চেনা-হাসিমুখে জিজ্ঞাসা করলেন, কী, রেজাল্ট বেরিয়েছে। পাশ করেছ মনে হচ্ছে? গাইতে গাইতে ঘাড় নাড়ল মণ্টু, মুখে জবাব দিল না।
গার্লস স্কুলের কাছে এসে গানট থেমে গেল। আর তখনই ওরা একটা মেয়েকে দেখতে পেল। বৃষ্টির মধ্যে একা একা হেঁটে যাচ্ছে। ওরা দেখল মেয়েটার মুখ কান্নায় মুচড়ে গেছে। সামলাতে পারছে না বেচারা। ওদের তিনজনেরই মন-খারাপ হয়ে গেল আচমকা। চুপচাপ দাঁড়িয়ে মেয়েটার চলে যাওয়া দেখতে-দেখতে মণ্টু বলল, চল বাড়ি যাই। যেন এই কথাটার জন্যই ওরা এতক্ষণ অপেক্ষা করছিল। তিনজনেই তিনদিকে কোনো কথা না বলে দৌড়তে লাগল।
বাড়ির গেটে হাত দিতেই অনিমেষ দেখল পিসিমা ঠায় দাঁড়িয়ে আছেন বারান্দায় যেন সে চলে যাওয়ার পর থেকে একচুরও নড়েননি। দাদুকে দেখতে পেল না সে। পিসিমা ওকে দেখেছেন, তার চোখ দুটো অনিমেষের মুখের ওপর। পায়েপায়ে কাছে এগিয়ে গেল অনিমেষ। হেমলতা ভাইপোর। মুখোমুখি দাঁড়িয়ে, কোনো কথা বলতে পারছিলেন না। অনিমেষ ইচ্ছে করে চুপ করে ছিল। ওর বেশ মজা লাগছিল পিসিমার অবস্থা দেখে। কী বলবেন কী করবেন বুঝতে পারছেন না তিনি। শেষ পর্যন্ত অনিমেষ ঝুঁকে পড়ে হেমলতাকে প্রণাম করল, আমি পাশ করেছি, ফার্স্ট ডিভিশন হয়েছে।
সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার করে জড়িয়ে ধরলেন হেমলতা। অনিকে দুহাতে জড়িয়ে ধরলেন, আতিশয্যে চিৎকারটা কান্নায় রূপান্তরিত হয়ে গেল। অনিমেষ দেখল পিসমার মুখ ওর বুকের ওপর-ও অনেক লম্বা হয়ে গিয়েছে। কান্না-মেশানো গলায় হেমলতা তখন বলছিলেন, অনিবাবা, তুই পাশ করেছিস-ও। মাধু দ্যাখ-তোর অনি ফার্স্ট ডিভিশন পেয়েছে-মাধু চোখ-ভরে দ্যাখ।
মায়ের নাম শুনে থরথর করে কাঁপতে লাগল অনিমেষ। এই সময় জুতোর শব্দ তুলে সরিৎশেখর দরজায় এসে পঁাড়ালেন। অনিমেষ তখনও হেমলতার দুহাতের বাঁধনে আটকে! সরিৎশেখর গম্ভীরমুকে নাতিকে দেখলেন, তারপর বললেন, আশা করি ফার্স্ট ডিভিশন হয়েছে
বাবার গলা শুনে হেমলতা অনিকে ছেড়ে দিয়ে চেঁচিয়ে বলে উঠলেন, হ্যাঁ হ্যাঁ-আপনার নাতি মুখ রেখেছে-আপনি মাধুকে কথা দিয়েছিলেন।
নিজের শরীরটাকে যেন অনেক কষ্টে সামলে নিলে সরিৎশেখর, কথা তো সবাই দিতে পারে, রাখে কয়জন! এই আনন্দের খবরের জন্য এতকাল বেঁচে আছি, হেম।
অনিমেষ ধীরপায়ে এগিয়ে গিয়ে দাদুকে প্রণাম করল। সরিৎশেখরের হাতটা ওর মাথার ওপর এলে অনিমেষ অনুভব করল দাদুর শরীর কাঁপছে। বিড়বিড় করে কিছু-একটা বলছেন। অনিমেষ উঠে দাঁড়ালে সরিৎশেখর গম্ভীর গলায় বললেন, কিন্তু এতে আমি সন্তুষ্ট নই অনিমেষ, তোমাকে আরও বড় হতে হবে-আমি ততদিন বেঁচে থাকব।
সঙ্গে সঙ্গে ছেলেরা পেছনে দাঁড়ানো অর্ককে জড়িয়ে ধরল হইচই করে। হেডমাস্টারমশাই দেখলেন এই মুহূর্তে ওকে আলাদা করা অসম্ভব। তিনি একজনকে বলে গেলেন, অর্ক যেন যাবার সময় দেখা করে যায়।
ভূগোল-সার ততক্ষণে নোটিসবোর্ডে কাগজটা টাঙিয়ে দিয়েছেন। সবাই সেটার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে একমাত্র অর্ক ছাড়া। সবাই একসঙ্গে নিজের রেজাল্ট দেখতে চায়। অনিমেষ কিছুতেই ভিড় ঠেলে এগাতে পারছিল না। ও দেখল অর্ক দূরে দাঁড়িয়ে মেজাজে নতুন একটা সিগারেট ধরিয়ে টানতে টানতে ওদের দিকে তাকিয়ে হাসছে। তাজ্জব হয়ে গেল অনিমেষ, এই মুহূর্তে কেউ সিগারেট খেতে পারে! ভিড়টার দিকে তাকাল সে–যদি থার্ড ডিভিশন হয়ে যায়-আর-এ হয়নি বোঝা যাচ্ছে, হলে হেডমাস্টারমশাই নিশ্চয় বলতেন। আর পারল না অনিমেষ অপেক্ষা করতে, ভিড়ের একটা দিক সামান্য ফাঁক হতেই সে ঢুকে পড়ল সেইখান দিয়ে। তারপর ঠেলেঠলে একেবারে নোটিসবোর্ডের। ছয় ইঞ্চির মধ্যে ওর চোখ চলে এল। প্রথমে সার-ওদওয়া পিঁপড়ের মতো নামগুলো চোখে ভাসল। সহ্য হয়ে এলে ও প্রথম থেকে নামগুলো পড়তে লাগল। অরূপ ফার্স্ট ডিভিশন-একটা দাড়ি, অর্ক একটা দাড়ি, তারপর দুটো দাঁড়ি-দুটো-দুটো-একটা-দুটো-নিজের নাম চোখে আসতেই দৃষ্টিটা পিছনে ডানদিকে সরে গেল। সঙ্গে সঙ্গে কে যেন পেছন থেকে কোমর জড়িয়ে ধরে ওকে ওপরে তুলে ধরে চিৎকার করে উঠল। নোটিসবোর্ডের ওপরে মাথা উঠে যাওয়ায় নিজের নামের পাশে এক দাড়িকে বিরাট লম্বা দেখল সে।
সমস্ত শরীরে লক্ষ কদমফুলের নন-তপনের আলিঙ্গন থেকে নিজেকে মুক্ত করতে সময় নিল অনিমেষ। তপন সেকেন্ড ডিভিশন পেয়েছে। এবং মণ্টু ফার্স্ট ডিভিশন। বারোজন ফাস্ট ডিভিশন, আঠারোজন সেকেন্ড, বাকিরা থার্ড ভিশিন। মন্ট এগিয়ে এসে সাহেবি কায়দায় গম্ভীরমুখে ওর সঙ্গে যাডশেক করল। তপনের কোনো আপসোস নেই-ও জানত দ্বিতীয় ডিভিশনই ওর বরাদ্দ। ওরা বেশ দৃঢ়পায়ে বাইরে হেঁটে এসে অর্ককে খুঁজল-না, অর্ক কোথাও নেই। হেডমাস্টারমশাই-এর ঘরেও যায়নি।
তপন বলল, আমরা এখন কলেজ স্টুডেন্ট-আঃ, ফাইন!
মণ্টু বলল, মাইরি, শেষ পর্যন্ত বড় হয়ে গেলাম। ভাবাই যায় না! শালা আজ যদি রম্ভারা এখানে থাকত তো ট্যারা হয়ে যেত।
অনিমেষ কিছু বলল না। স্কুল থেকে বের হবার আগে সে একবার নিশীথাবু সঙ্গে দেখা করে যাবে কি না ভাবল। কিন্তু মণ্টুরা বেরিয়ে যাচ্ছে-এবং সঙ্গে সঙ্গে কুষ্ঠরোগীদের ডেরাটার কথা মনে পড়ে যাওয়ায় ও শক্ত হয়ে গেল।
বাইরে সমানে বৃষ্টি হচ্ছে। একটুও তোয়াক্কা না করে ওরা রাস্তায় নেমে পড়ল। মণ্টু বলল, চল গার্লস স্কুলটা দেখে আসি-ওখানে ফেলু মেয়েরা আজ হেভি কাঁদবে।
এখন এই বৃষ্টিতে হাঁটতে অনিমেষের ভীষন ভালো লাগছিল। ও একবার ভাবল, দাদুকে একছুটে বলে আসে খবরটা, কিন্তু বন্ধুদের দিকে তাকিয়ে ইচ্ছেটা চেপে গেল। আজ বাংলাদেশে ও একাই শুধু স্কুল ফাইনাশ পাম করেনি। বৃষ্টিতে হাঁটতে হাঁটতে ওরা শহরটাকে ভিজতে দেখল। শহরের লোকরাও বিভিন্ন ছাউনির তলায় দাঁড়িয়ে তিনটি কাকভিজে তরুণের ব্যাপার দেখে অবাক হল। গার্লস স্কুলের দিকে যেতে-যেতে তপন হঠাৎ গান ধরল, এখন আর দেরি নয়, ধর গো তোরা হাতে হাতে ধর গো/আজ আপন পথে ফিরতে হবে সামনে মিলন-স্বর্গ।
ও এক লাইন গাইছে, অনিমেষ আর মণ্টু পরের লাইনটা আবৃত্তি করছে। এই বৃষ্টির জল গায়ে মুখে মেখে গান গাইতে গাইতে ওরা ঝোলানো পুলের ওপর এসে দাঁড়াল। অনিমেষদের সুরের ঠিক নেই, কিন্তু একটা খুশির জোয়ার বুরকে ছাপিয়ে যাচ্ছিল। এক ভদ্রলোক ছাতি-মাখায় আসছিলেন, মন্টর চেনা-হাসিমুখে জিজ্ঞাসা করলেন, কী, রেজাল্ট বেরিয়েছে। পাশ করেছ মনে হচ্ছে? গাইতে গাইতে ঘাড় নাড়ল মণ্টু, মুখে জবাব দিল না।
গার্লস স্কুলের কাছে এসে গানট থেমে গেল। আর তখনই ওরা একটা মেয়েকে দেখতে পেল। বৃষ্টির মধ্যে একা একা হেঁটে যাচ্ছে। ওরা দেখল মেয়েটার মুখ কান্নায় মুচড়ে গেছে। সামলাতে পারছে না বেচারা। ওদের তিনজনেরই মন-খারাপ হয়ে গেল আচমকা। চুপচাপ দাঁড়িয়ে মেয়েটার চলে যাওয়া দেখতে-দেখতে মণ্টু বলল, চল বাড়ি যাই। যেন এই কথাটার জন্যই ওরা এতক্ষণ অপেক্ষা করছিল। তিনজনেই তিনদিকে কোনো কথা না বলে দৌড়তে লাগল।
বাড়ির গেটে হাত দিতেই অনিমেষ দেখল পিসিমা ঠায় দাঁড়িয়ে আছেন বারান্দায় যেন সে চলে যাওয়ার পর থেকে একচুরও নড়েননি। দাদুকে দেখতে পেল না সে। পিসিমা ওকে দেখেছেন, তার চোখ দুটো অনিমেষের মুখের ওপর। পায়েপায়ে কাছে এগিয়ে গেল অনিমেষ। হেমলতা ভাইপোর। মুখোমুখি দাঁড়িয়ে, কোনো কথা বলতে পারছিলেন না। অনিমেষ ইচ্ছে করে চুপ করে ছিল। ওর বেশ মজা লাগছিল পিসিমার অবস্থা দেখে। কী বলবেন কী করবেন বুঝতে পারছেন না তিনি। শেষ পর্যন্ত অনিমেষ ঝুঁকে পড়ে হেমলতাকে প্রণাম করল, আমি পাশ করেছি, ফার্স্ট ডিভিশন হয়েছে।
সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার করে জড়িয়ে ধরলেন হেমলতা। অনিকে দুহাতে জড়িয়ে ধরলেন, আতিশয্যে চিৎকারটা কান্নায় রূপান্তরিত হয়ে গেল। অনিমেষ দেখল পিসমার মুখ ওর বুকের ওপর-ও অনেক লম্বা হয়ে গিয়েছে। কান্না-মেশানো গলায় হেমলতা তখন বলছিলেন, অনিবাবা, তুই পাশ করেছিস-ও। মাধু দ্যাখ-তোর অনি ফার্স্ট ডিভিশন পেয়েছে-মাধু চোখ-ভরে দ্যাখ।
মায়ের নাম শুনে থরথর করে কাঁপতে লাগল অনিমেষ। এই সময় জুতোর শব্দ তুলে সরিৎশেখর দরজায় এসে পঁাড়ালেন। অনিমেষ তখনও হেমলতার দুহাতের বাঁধনে আটকে! সরিৎশেখর গম্ভীরমুকে নাতিকে দেখলেন, তারপর বললেন, আশা করি ফার্স্ট ডিভিশন হয়েছে
বাবার গলা শুনে হেমলতা অনিকে ছেড়ে দিয়ে চেঁচিয়ে বলে উঠলেন, হ্যাঁ হ্যাঁ-আপনার নাতি মুখ রেখেছে-আপনি মাধুকে কথা দিয়েছিলেন।
নিজের শরীরটাকে যেন অনেক কষ্টে সামলে নিলে সরিৎশেখর, কথা তো সবাই দিতে পারে, রাখে কয়জন! এই আনন্দের খবরের জন্য এতকাল বেঁচে আছি, হেম।
অনিমেষ ধীরপায়ে এগিয়ে গিয়ে দাদুকে প্রণাম করল। সরিৎশেখরের হাতটা ওর মাথার ওপর এলে অনিমেষ অনুভব করল দাদুর শরীর কাঁপছে। বিড়বিড় করে কিছু-একটা বলছেন। অনিমেষ উঠে দাঁড়ালে সরিৎশেখর গম্ভীর গলায় বললেন, কিন্তু এতে আমি সন্তুষ্ট নই অনিমেষ, তোমাকে আরও বড় হতে হবে-আমি ততদিন বেঁচে থাকব।