ওরা তিনজনেই বসে পড়ল চটপট। লাইনে এখন জোর কথাবার্তা চলছে। সেইসঙ্গে হাসি আর চিৎকার। মাদলটা ঘুরেফিরে অনেকরকম বোল তুলছে এখন। এগিয়ে-আসা আওয়াজটা হঠাৎ থেমে গেছে। সামনের ওই বিরাট অন্ধকার-করে-রাখা অশ্বথগাছটার জন্য কাউকে দেখা যাচ্ছে না। যে এসেছে সে কি ওদের সন্ধান পেয়েছে। অনিমেষের মনে হচ্ছিল সেরা নিশ্চয়ই ওদের কথা ফিরে-আসা। কুলিদের বলবে না। আর যদি ওরা টের পেত তা হলে এতক্ষণে দল বেঁধে এদিকে ছুটে আসত। কিছুক্ষণ এভাবে উবু হয়ে বসে থেকে অনিমেষের অস্বস্তি হতে আরম্ভ করল। চারাগাছগুলোর তলায় ঢোকার কোনোপ্রশ্ন নেই কিন্তু ওরা যেখানে রয়েছে তা তলায় অনেক দুলো আগাছা, ঘাস শরীরটাকে ব্ৰিত করছিল। মহীতোষ যেন ফিসফিসিয়ে ছোটমাকে বললেন, এও কপালে লেখা ছিল। ছোটমার মুখ শুকিয়ে গিয়েছে, চোখ বন্ধ করে বসে আছে। এই সময় অনিমেষ ওকে দেখতে পেল। পায়েপায়ে এগিয়ে এসে মুখে ঘুরিয়ে-ঘুরিয়ে কাউকে খুঁজছে। মহীতোষও ওকে দেখেছিলেন। স্বস্তির নিশ্বাসটা তার এত জেরে হয়েছিল যে ছোটমা চোখ খুলে সামনে দেখল এবং সেই সময় বাচ্চাটা এদিকে মুখ ফেরাল। তিনটে মানুষ যে এভাবে উবু খুলে সামনে দেখল এবং সেই সময় বাচ্চাটা এদিকে মুখ ফেরাল। তিনটে মানুষ যে এভাবে উবু হয়ে বসে আছে সে-দৃশ্যে ওর মুখে কোনো ভাবান্তর দেখা। গেল না। ও অনিমেষের মুখের দিকে তাকিয়ে চুপচাপ সামনে এগিয়ে এসে ডান হাতটা এগিয়ে ধরল।
অনিমেষ দেখল ওর হাতে একটা কাগজের মোড়ক ধরা আছে। ভীষণ অবাক হয়ে গেল সে, এইভাবে। পেছন ধাওয়া করে এসে কী দিতে চাইছে ও? মোড়কটা নিয়ে কাঁপাহাতে সেটাকে খুলল অনিমেষ। পুরনো খবরের কাগজের ভাঁজগুলো খুলতেই অনিমেষ তাজ্জব হয়ে গেল। গোটা-চারেক গুড়ের বাতাসা রয়েছে তাতে। ও মুখ তুলে তাকাতেই দেখল ছেলেটা হলদে দাঁত বের করে হাসল, তারপর একটা হাত পেছনদিকে ওদের লাইনের দিকে নির্দেশ করেই সেটাকে ফিরিয়ে অনিমেষের দিকে উঁচিয়ে ধরে অবোধ্য শব্দ করে চলল। পেছন থেকে মহীতোষ জিজ্ঞাসা করলেন, কী ব্যাপার?
অনিমেষ ওদের বাতাসাগুলো দেখাল। ছোটমা বলল, আহা রে, তোমাকে খেতে দিয়েছে বুড়ি, কী ভালো দ্যাখো তো!
মহীতোষ বললেন, আশ্চর্য!
অনিমেষ এতখানি আপ্লুত হয়ে গিয়েছিল, ও কোনো কথা বলতে পারছিল না। যাদের ভয়ে ওরা বাড়ি ছেড়ে চা-বাগানের মধ্যে লুকিয়ে আছে তাদেরই একজন তাকে প্রথম দেখল বলে চারটে বাতাসা পাঠিয়ে দিয়েছে মুখমিষ্টি করতে। হয়তো এই বাতাসাগুলো সেরার কাছে মহার্ঘ জিনিস, কিন্তু তা-ই সে পাঠিয়ে দিয়েছে সরিৎশেখরকে সম্মান দেবার জন্য। এই মুহূর্তে অনিমেষ দাদুর জন্য গর্ব অনুভব করছিল। ও দুটো বাতাসা বাচ্চাটার হাতে দিতেই সে একসঙ্গে মুখে পুরল, তারপর হাত নেড়ে অনিমেষকে ডাকতে লাগল।
অনিমেষ দেখল ওর হাতে একটা কাগজের মোড়ক ধরা আছে। ভীষণ অবাক হয়ে গেল সে, এইভাবে। পেছন ধাওয়া করে এসে কী দিতে চাইছে ও? মোড়কটা নিয়ে কাঁপাহাতে সেটাকে খুলল অনিমেষ। পুরনো খবরের কাগজের ভাঁজগুলো খুলতেই অনিমেষ তাজ্জব হয়ে গেল। গোটা-চারেক গুড়ের বাতাসা রয়েছে তাতে। ও মুখ তুলে তাকাতেই দেখল ছেলেটা হলদে দাঁত বের করে হাসল, তারপর একটা হাত পেছনদিকে ওদের লাইনের দিকে নির্দেশ করেই সেটাকে ফিরিয়ে অনিমেষের দিকে উঁচিয়ে ধরে অবোধ্য শব্দ করে চলল। পেছন থেকে মহীতোষ জিজ্ঞাসা করলেন, কী ব্যাপার?
অনিমেষ ওদের বাতাসাগুলো দেখাল। ছোটমা বলল, আহা রে, তোমাকে খেতে দিয়েছে বুড়ি, কী ভালো দ্যাখো তো!
মহীতোষ বললেন, আশ্চর্য!
অনিমেষ এতখানি আপ্লুত হয়ে গিয়েছিল, ও কোনো কথা বলতে পারছিল না। যাদের ভয়ে ওরা বাড়ি ছেড়ে চা-বাগানের মধ্যে লুকিয়ে আছে তাদেরই একজন তাকে প্রথম দেখল বলে চারটে বাতাসা পাঠিয়ে দিয়েছে মুখমিষ্টি করতে। হয়তো এই বাতাসাগুলো সেরার কাছে মহার্ঘ জিনিস, কিন্তু তা-ই সে পাঠিয়ে দিয়েছে সরিৎশেখরকে সম্মান দেবার জন্য। এই মুহূর্তে অনিমেষ দাদুর জন্য গর্ব অনুভব করছিল। ও দুটো বাতাসা বাচ্চাটার হাতে দিতেই সে একসঙ্গে মুখে পুরল, তারপর হাত নেড়ে অনিমেষকে ডাকতে লাগল।