কোনোদিন এত সকাল-সকাল ও স্কুল থেকে বের হয়নি। স্কুলের বাগানটা এখন হরেকরকম ফুলে উপচে পড়ছে। এত প্রজাপতি আর মৌমাছি উড়ে বেড়ায় যে সাবধানে শান-বাঁধানো প্যাসেজটা দিয়ে হাঁটতে হয়। বাড়িতে কার কী হল? আসবার সময় তো তেমন-কিছু দেখে আসেনি! দাদুর কি শরীর খারাপ হয়েছে? কে এসে খবর দিল? ও হঠাৎ দৌড়তে শুরু করল। স্কুলের গেট খুলে রাস্তায় পা দিতেই দেখল মেনকাদি ওদের বাড়ির গেটে দাঁড়িয়ে আছে। চোখাচোখি হতেই হাত নেড়ে কাছে ডাকল।
এই, তোমার জন্য ঠায় আধঘন্টা দাঁড়িয়ে আছি। তাড়াতাড়ি এসো।
মেনকাদি একগাল হাসল। অনিমেষ বুঝতে পারল না মেনকাদি কেন তার জন্য অপেক্ষা করবে। ও বলল, আমাকে বাড়িতে যেতে হবে, খুব বিপদ। কিছু-একটা হয়েছে, খবর এসেছে।
ঠোঁট ওলটাল মেনকাদি, তুমি একদম বন্ধু, আমরাই খব দিয়েছি। প্রিয়দই দিতে বললেন। নিজের হাতে গেট খুলে দিলেন মেনকাদি।
এক-এক সময় অনিমেষের নিজের ওপর খুব রাগ হয়। সবকথা অনেক সময় ও চট করে ধরতে পারে না। যেমন এই মুহূর্তে ও মেনকাদির কথার মানে বুঝতে পারছে না। ওর বাড়িতে বিপদ হলে মেনকাদিরা কী করে জানবেন! নাকি বিপদটিপদ কিছু নয়, শুধুশুধু মেনাদিরা ওকে ডেকে আনল! কিন্তু কেন?
মেনকাদি গেট বন্ধ করতে করতে অনিমেষ দেখে নিল গেটের বাইরে বিরাম কম শব্দটার আগে আজ অ অক্ষরটা লেখা নেই! মেনকাদি ওর চোখ দেখে ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছিল, হেসে বলল, আজ বাবার নামটা ঠিক আছে, না! আচ্ছা, যারা দেওয়ালে এসব লেখে তারা কী আনন্দ পায় বলো তো?
অনিমেষ বলল, জানি না, আমি কখনো লিখিনি।
মেনকাদি বলল, জানি না, আমি কি তা-ই বলছি। তারপর অনিমেষকে নিয়ে বারান্দার দিকে হাঁটতে হাঁটতে বলল, আচ্ছা, আমাদের বাড়িতে তো তুমি সেদিন এলে, কাকে তোমার সবচেয়ে ভালো লাগল? বাবা, মা, আমি, উর্বশী আর রম্ভা-চটপট ভেবে নাও, কাকে খুব ভালো লেগেছে তোমার?
এরকম বোকা-বোকা প্রশ্নের উত্তর দেওয়া খুব মুশকিল। অনিমেষ হাসল, সবাইকে।
মিথ্যে কথা! একদম মিথ্যে কথা! রম্ভা আমাকে বলেছে। হাসতে হাসতে মেনকাদি বারান্দায় উঠে পড়লেন। রম্ভা আবার কী বলল মেনকাদিকে রম্ভার সঙ্গে তো ওর তেমন কোনো কথা হয়নি। কিন্তু এ-ব্যাপারে মেনকাদি ইতি টেনে দিয়ে ঘরে ঢুকে বলল, এই নিন, আপনার ভাইপোকে এনে দিলাম।
অনিমেষ দরজায় দাঁড়িয়ে দেখল ঘরে বেশ একটা মিটিংতো ব্যাপার চলেছে। বিরাম কর তেমনি গিলে–করা দুধ-রঙা পাঞ্জাবি পরে বসে আছেন, তাঁর একপাশে নিশীথবাবু একটা লম্বা কাগজে কীসব লিখছেন! উলটোদিকে ছোটকাকা গম্ভীরমুখে বসে সিগারেট খাচ্ছে। ছোটকাকার পাশে মুভিং ক্যাসেল বসে। অভিং ক্যাসেলের দিকে নজর যেতেই অনিমেষ চোখ সরিয়ে নিল। অসাবধানে আঁচল সরে যাওয়ায় মুভিং ক্যাসেলের বড়-গলার জামার উন্মুক্ত হয়ে পড়েছে। বেশিক্ষণ চেয়ে থাকা যায় না, কেমন অস্বস্তি হয়।
প্রিয়তোষ বলল, আয়! আজ আর স্কুল করতে হবে না। তোর মাস্টারমশাই অনুমতি দিয়েছেন।
অনিমেষ নিশীথবাবুকে আর-একবার দেখল। এর আগে অসুখবিসুখ ছাড়া নিশীথবাবু কোনদিন স্কুল-কামাই করেননি। নিশীথবাবু বললেন, ফার্স্ট পিরিয়ড কেউ নিল? ঘাড় নাড়ল অনিমেষ।
প্রিয়তোষ বলল, মোটামুটি একইভাবে কাজ হলে কিছু আটকাবে না। নিশীথবাবু, আপনি তা হলে জেলার সবকটা স্কুলের প্রথম চারজন ছেলের একটা লিস্ট করে ফেলুন। ক্লাস এইট আর নাইন। টেন দরকার নেই, ওদের ইনফ্লুয়েন্স করার সময় পাবেন না। এইট নাইনের মেরিটোরিয়াস ছাত্রদের জন্য স্কলারশিপ দিলে কাজ হবে। কটা বাজল?
বিরাম কর সরু গলায় বললেন, দেরি আছে। আমি গাড়ির ব্যবস্থা করেছি?
মুভিং ক্যাসেল বললেন, তা হোক, গরিবের বাড়িতে একটু খেয়ে যেতে হবে ভাই।
প্রিয়তোষ বলল, কী দরকার। দুপুরের মধ্যে কলকাতায় পৌঁছে যাব।
মুভিং ক্যাসেল ছেলেমানুষের মতো মুখভঙ্গি করলেন, আহা! না খেয়ে গেলে আমার মেয়েদের বিয়ে হবে না, সেটা খেয়াল আছে।
যেন বাদ্য হয়েই মেনে নিল ছোটকাকা, মাথা নাড়ানো দেকে অনিমেষের তা-ই মনে হল। নিশীখবাবু বললেন, আমরা কি সবাই এয়ারপোর্ট যাব?
এই, তোমার জন্য ঠায় আধঘন্টা দাঁড়িয়ে আছি। তাড়াতাড়ি এসো।
মেনকাদি একগাল হাসল। অনিমেষ বুঝতে পারল না মেনকাদি কেন তার জন্য অপেক্ষা করবে। ও বলল, আমাকে বাড়িতে যেতে হবে, খুব বিপদ। কিছু-একটা হয়েছে, খবর এসেছে।
ঠোঁট ওলটাল মেনকাদি, তুমি একদম বন্ধু, আমরাই খব দিয়েছি। প্রিয়দই দিতে বললেন। নিজের হাতে গেট খুলে দিলেন মেনকাদি।
এক-এক সময় অনিমেষের নিজের ওপর খুব রাগ হয়। সবকথা অনেক সময় ও চট করে ধরতে পারে না। যেমন এই মুহূর্তে ও মেনকাদির কথার মানে বুঝতে পারছে না। ওর বাড়িতে বিপদ হলে মেনকাদিরা কী করে জানবেন! নাকি বিপদটিপদ কিছু নয়, শুধুশুধু মেনাদিরা ওকে ডেকে আনল! কিন্তু কেন?
মেনকাদি গেট বন্ধ করতে করতে অনিমেষ দেখে নিল গেটের বাইরে বিরাম কম শব্দটার আগে আজ অ অক্ষরটা লেখা নেই! মেনকাদি ওর চোখ দেখে ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছিল, হেসে বলল, আজ বাবার নামটা ঠিক আছে, না! আচ্ছা, যারা দেওয়ালে এসব লেখে তারা কী আনন্দ পায় বলো তো?
অনিমেষ বলল, জানি না, আমি কখনো লিখিনি।
মেনকাদি বলল, জানি না, আমি কি তা-ই বলছি। তারপর অনিমেষকে নিয়ে বারান্দার দিকে হাঁটতে হাঁটতে বলল, আচ্ছা, আমাদের বাড়িতে তো তুমি সেদিন এলে, কাকে তোমার সবচেয়ে ভালো লাগল? বাবা, মা, আমি, উর্বশী আর রম্ভা-চটপট ভেবে নাও, কাকে খুব ভালো লেগেছে তোমার?
এরকম বোকা-বোকা প্রশ্নের উত্তর দেওয়া খুব মুশকিল। অনিমেষ হাসল, সবাইকে।
মিথ্যে কথা! একদম মিথ্যে কথা! রম্ভা আমাকে বলেছে। হাসতে হাসতে মেনকাদি বারান্দায় উঠে পড়লেন। রম্ভা আবার কী বলল মেনকাদিকে রম্ভার সঙ্গে তো ওর তেমন কোনো কথা হয়নি। কিন্তু এ-ব্যাপারে মেনকাদি ইতি টেনে দিয়ে ঘরে ঢুকে বলল, এই নিন, আপনার ভাইপোকে এনে দিলাম।
অনিমেষ দরজায় দাঁড়িয়ে দেখল ঘরে বেশ একটা মিটিংতো ব্যাপার চলেছে। বিরাম কর তেমনি গিলে–করা দুধ-রঙা পাঞ্জাবি পরে বসে আছেন, তাঁর একপাশে নিশীথবাবু একটা লম্বা কাগজে কীসব লিখছেন! উলটোদিকে ছোটকাকা গম্ভীরমুখে বসে সিগারেট খাচ্ছে। ছোটকাকার পাশে মুভিং ক্যাসেল বসে। অভিং ক্যাসেলের দিকে নজর যেতেই অনিমেষ চোখ সরিয়ে নিল। অসাবধানে আঁচল সরে যাওয়ায় মুভিং ক্যাসেলের বড়-গলার জামার উন্মুক্ত হয়ে পড়েছে। বেশিক্ষণ চেয়ে থাকা যায় না, কেমন অস্বস্তি হয়।
প্রিয়তোষ বলল, আয়! আজ আর স্কুল করতে হবে না। তোর মাস্টারমশাই অনুমতি দিয়েছেন।
অনিমেষ নিশীথবাবুকে আর-একবার দেখল। এর আগে অসুখবিসুখ ছাড়া নিশীথবাবু কোনদিন স্কুল-কামাই করেননি। নিশীথবাবু বললেন, ফার্স্ট পিরিয়ড কেউ নিল? ঘাড় নাড়ল অনিমেষ।
প্রিয়তোষ বলল, মোটামুটি একইভাবে কাজ হলে কিছু আটকাবে না। নিশীথবাবু, আপনি তা হলে জেলার সবকটা স্কুলের প্রথম চারজন ছেলের একটা লিস্ট করে ফেলুন। ক্লাস এইট আর নাইন। টেন দরকার নেই, ওদের ইনফ্লুয়েন্স করার সময় পাবেন না। এইট নাইনের মেরিটোরিয়াস ছাত্রদের জন্য স্কলারশিপ দিলে কাজ হবে। কটা বাজল?
বিরাম কর সরু গলায় বললেন, দেরি আছে। আমি গাড়ির ব্যবস্থা করেছি?
মুভিং ক্যাসেল বললেন, তা হোক, গরিবের বাড়িতে একটু খেয়ে যেতে হবে ভাই।
প্রিয়তোষ বলল, কী দরকার। দুপুরের মধ্যে কলকাতায় পৌঁছে যাব।
মুভিং ক্যাসেল ছেলেমানুষের মতো মুখভঙ্গি করলেন, আহা! না খেয়ে গেলে আমার মেয়েদের বিয়ে হবে না, সেটা খেয়াল আছে।
যেন বাদ্য হয়েই মেনে নিল ছোটকাকা, মাথা নাড়ানো দেকে অনিমেষের তা-ই মনে হল। নিশীখবাবু বললেন, আমরা কি সবাই এয়ারপোর্ট যাব?