রাত সাড়ে এগারোটার লোকাল ট্রেনে উঠে খুব খুশি হল অর্ক। দু তিনজন যাত্রী ছাড়া কামরা বিলকুল ফাঁকা। ট্রেন চলতে শুরু করলে বেঞ্চিতে শরীর মেলে দিল সে। আঃ, কী আরাম! সেই সকালের পর এরকম বিশ্রামের সুযোগই পাওয়া যায়নি। সারাদিন শুধু টেনশন আর টেনশনে কেটে গেছে। কাল সকালে হাওড়া স্টেশন থেকে সোজা সে শিয়ালদায় চলে যাবে। মা বাবা যে ট্রেনেই আসুক সকাল নটার মধ্যে শিয়ালদায় পৌঁছে যাবে। স্টেশনে ওকে দেখতে পেলে নিশ্চয়ই খুশি হবে ওরা।
ব্যাপারটা ভেবে আরাম বোধ করল অর্ক। সে কঁধব্যাগ মাথার নীচে রেখে আরাম করে পাশ ফিরে শুল। ট্রেনটা চলেছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। মাঝেমধ্যে স্টেশনগুলোতে থামছে কিন্তু যাত্রী উঠছে খুব কম। ফলে অর্কর ঘুমের ব্যাঘাত হচ্ছিল না। হঠাৎ মাথাটা ওপরে উঠেই বেঞ্চিতে আছাড় খেলে সে উঃ বলে উঠে বসতেই একটা লোক দৌড়ে নেমে গেল প্ল্যাটফর্মে। থেমে থাকা ট্রেন চলতে শুরু করেছে, অর্ক দৌড়ে দরজার সামনে পৌঁছোতে না পৌঁছোতে প্ল্যাটফর্ম পেছনে চলে গেল।
এইরকম মড়ার মতো ঘুম কেউ কি রেলগাড়িতে ঘুমায়?
প্রশ্নটা শুনে মুখ ফেরাল অর্ক। পাকা দাড়ি, মাথায় সাদা টুপি পরা প্রৌঢ় মানুষটি বললেন, আসুন শান্ত হয়ে বসুন, যা গেল তার জন্যে শোক করবেন না।
লোকটাকে আমার ব্যাগ ছিনতাই করতে দেখেও চিৎকার করলেন না কেন? অর্ক রেগে গেল।
প্রাণের ভয়ে। ওর কাছে নিশ্চয়ই ছুরি আছে, সেটা যদি আমার বুকে বসিয়ে দিত তা হলে কি আমার ভাল লাগত? আপনি খুশি হতেন। দামি কিছু ছিল?
জামাকাপড়।
ইনসাল্লা। আল্লা যা ভাল মনে করেন তাই করেছেন।
আমার আর কোনও জামাকাপড় সঙ্গে থাকল না এটা ভাল হল?
মনে করুন, আরও খারাপ কিছু হতে পারত। এটা মনে করলে বোঝাটা কমে যাবে। প্রৌঢ় হাসলেন, বসুন। রাতের এইসময় লোকাল ট্রেনে কেউ ঘুমায়?
অভিজ্ঞতা ছিল না বলে! এইরকম ছিনতাই হয় কে জানত?
ও অতি নিম্নশ্রেণির ছিনতাইবাজ। অতি উচ্চশ্রেণির হলে আপনাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলত। ব্যাগের দিকে হাত না বাড়িয়ে বলত, পকেটে যা আছে সব বের করে দিতে। আপনি কোনও প্রতিবাদই করতে পারতেন না কারণ আগ্নেয়াস্ত্র দেখাত। তারপর দিব্যি সিগারেট খেত আপনার সামনে বসে। যে স্টেশনে দরকার নেমে যেত। এই কারণেই মাঝরাত্রের ট্রেনে উঠলে আমি সঙ্গে কিছু রাখি না। প্রৌঢ় তাঁর সাদা দাড়িতে আঙুল বোলালেন।
অর্ক বসল, তার পকেটে ট্রেনের টিকিট, কিছু টাকা আর এটিএম কার্ড, মোবাইল রয়েছে। এখন ফিরে আসার ট্রেন থাকলেও সেটা না ধরে ভোরের ট্রেন ধরতে হবে। যাতে ওগুলো ছিনতাই না হয়ে যায়।
কোথায় যাচ্ছেন?
প্রৌঢ় জিজ্ঞাসা করলেন।
কোথাও না।
লাখ টাকার উত্তর। সত্যি তো আমরা কে কোথায় যাচ্ছি জানি না।
আপনি কোথায় যাচ্ছেন?
খড়্গপুরে, আমার ভাইয়ের বাসায়। ও কাল সকালে হজ করতে যাবে। বাসা খালি পড়ে থাকবে। তাই কদিন পাহারা দিতে হবে। প্রৌঢ় হাসলেন, সেখান থেকে যাব ইসলামপুরে। বাপ-মাকে নিয়ে এক বন্ধু আজমিরে যাবে, তারও বাসা পাহারা দেবার জন্য আমাকে দরকার।
অর্ক অবাক হল, আপনি বিয়ে থা করেননি?
করেছিলাম। আমাকে তার পছন্দ হয়নি বলে আর একজনের সঙ্গে চলে গেছে। ওই যে বললাম, যা গেছে তার জন্যে শোক না করতে। আমিও করিনি। প্রৌঢ় বললেন, খড়্গপুর অবধি ঠিক আছে, তারপরেই আসল। বিপদ।
কীরকম?
কখন ট্রেনলাইন বোমা মেরে উড়িয়ে দেবে তা কামরায় বসে জানতেও পারবেন না। দেখছেন না, খোদ সরকারও মাওবাদীদের ভয় পাচ্ছে। প্রৌঢ় গলা নামালেন শেষ কথাগুলো বলতে।
ব্যাপারটা ভেবে আরাম বোধ করল অর্ক। সে কঁধব্যাগ মাথার নীচে রেখে আরাম করে পাশ ফিরে শুল। ট্রেনটা চলেছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। মাঝেমধ্যে স্টেশনগুলোতে থামছে কিন্তু যাত্রী উঠছে খুব কম। ফলে অর্কর ঘুমের ব্যাঘাত হচ্ছিল না। হঠাৎ মাথাটা ওপরে উঠেই বেঞ্চিতে আছাড় খেলে সে উঃ বলে উঠে বসতেই একটা লোক দৌড়ে নেমে গেল প্ল্যাটফর্মে। থেমে থাকা ট্রেন চলতে শুরু করেছে, অর্ক দৌড়ে দরজার সামনে পৌঁছোতে না পৌঁছোতে প্ল্যাটফর্ম পেছনে চলে গেল।
এইরকম মড়ার মতো ঘুম কেউ কি রেলগাড়িতে ঘুমায়?
প্রশ্নটা শুনে মুখ ফেরাল অর্ক। পাকা দাড়ি, মাথায় সাদা টুপি পরা প্রৌঢ় মানুষটি বললেন, আসুন শান্ত হয়ে বসুন, যা গেল তার জন্যে শোক করবেন না।
লোকটাকে আমার ব্যাগ ছিনতাই করতে দেখেও চিৎকার করলেন না কেন? অর্ক রেগে গেল।
প্রাণের ভয়ে। ওর কাছে নিশ্চয়ই ছুরি আছে, সেটা যদি আমার বুকে বসিয়ে দিত তা হলে কি আমার ভাল লাগত? আপনি খুশি হতেন। দামি কিছু ছিল?
জামাকাপড়।
ইনসাল্লা। আল্লা যা ভাল মনে করেন তাই করেছেন।
আমার আর কোনও জামাকাপড় সঙ্গে থাকল না এটা ভাল হল?
মনে করুন, আরও খারাপ কিছু হতে পারত। এটা মনে করলে বোঝাটা কমে যাবে। প্রৌঢ় হাসলেন, বসুন। রাতের এইসময় লোকাল ট্রেনে কেউ ঘুমায়?
অভিজ্ঞতা ছিল না বলে! এইরকম ছিনতাই হয় কে জানত?
ও অতি নিম্নশ্রেণির ছিনতাইবাজ। অতি উচ্চশ্রেণির হলে আপনাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলত। ব্যাগের দিকে হাত না বাড়িয়ে বলত, পকেটে যা আছে সব বের করে দিতে। আপনি কোনও প্রতিবাদই করতে পারতেন না কারণ আগ্নেয়াস্ত্র দেখাত। তারপর দিব্যি সিগারেট খেত আপনার সামনে বসে। যে স্টেশনে দরকার নেমে যেত। এই কারণেই মাঝরাত্রের ট্রেনে উঠলে আমি সঙ্গে কিছু রাখি না। প্রৌঢ় তাঁর সাদা দাড়িতে আঙুল বোলালেন।
অর্ক বসল, তার পকেটে ট্রেনের টিকিট, কিছু টাকা আর এটিএম কার্ড, মোবাইল রয়েছে। এখন ফিরে আসার ট্রেন থাকলেও সেটা না ধরে ভোরের ট্রেন ধরতে হবে। যাতে ওগুলো ছিনতাই না হয়ে যায়।
কোথায় যাচ্ছেন?
প্রৌঢ় জিজ্ঞাসা করলেন।
কোথাও না।
লাখ টাকার উত্তর। সত্যি তো আমরা কে কোথায় যাচ্ছি জানি না।
আপনি কোথায় যাচ্ছেন?
খড়্গপুরে, আমার ভাইয়ের বাসায়। ও কাল সকালে হজ করতে যাবে। বাসা খালি পড়ে থাকবে। তাই কদিন পাহারা দিতে হবে। প্রৌঢ় হাসলেন, সেখান থেকে যাব ইসলামপুরে। বাপ-মাকে নিয়ে এক বন্ধু আজমিরে যাবে, তারও বাসা পাহারা দেবার জন্য আমাকে দরকার।
অর্ক অবাক হল, আপনি বিয়ে থা করেননি?
করেছিলাম। আমাকে তার পছন্দ হয়নি বলে আর একজনের সঙ্গে চলে গেছে। ওই যে বললাম, যা গেছে তার জন্যে শোক না করতে। আমিও করিনি। প্রৌঢ় বললেন, খড়্গপুর অবধি ঠিক আছে, তারপরেই আসল। বিপদ।
কীরকম?
কখন ট্রেনলাইন বোমা মেরে উড়িয়ে দেবে তা কামরায় বসে জানতেও পারবেন না। দেখছেন না, খোদ সরকারও মাওবাদীদের ভয় পাচ্ছে। প্রৌঢ় গলা নামালেন শেষ কথাগুলো বলতে।