বাড়িতে ফিরে খানিকক্ষণ চুপচাপ বসে থাকল অর্ক। তার মনে হচ্ছিল সাঁড়াশির দুটো শক্ত হাত তার দিকে এগিয়ে আসছে। একটা পুলিশ অন্যটা সুরেন মাইতির দল। এরা তার জীবন অতিষ্ঠ করে তুলবেই।
এতদিন যে জীবন সে যাপন করেছে তা যেন ছত্রভঙ্গ হয়ে গেল। চাকরিতে জয়েন করার তারিখ চলে গিয়েছে বেশ কয়েকদিন হল। চাকরিটা চলে গেলে নতুন সমস্যা যোগ হবে। অর্ক অফিসে ফোন করল। তাদের ইনচার্জ ভদ্রলোক ফোন পেয়েই খেপে গেলেন, কী ভাবছেন আপনি? এটা কি আপনার মামার বাড়ি? যখন ইচ্ছে ছুটি নেবেন, যেদিন জয়েন করার কথা সেদিন হাওয়া হয়ে থাকবেন, আবার মর্জিমতো ফোন করবেন, এটা কর্তৃপক্ষ মেনে নেবে বলে ভাবলেন কী করে?
আমি বুঝতে পারছি কাজটা ঠিক হয়নি। কিন্তু আচমকা এমন সমস্যায় জড়িয়ে গিয়েছিলাম যে যোগাযোগ করতে পারিনি। অর্ক বলল।
কী সমস্যা? চুরিচামারি না খুন করেছেন? মানে?
না হলে পুলিশ এসে আপনার সম্পর্কে খোঁজ খবর করবে কেন?
অবাক হয়ে গেল অর্ক, পুলিশ এসেছিল আমার খোঁজে?
হ্যাঁ। আপনার চরিত্র কীরকম, মন দিয়ে কাজ করেন কিনা, কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত তা জিজ্ঞাসা করছিল। আমরা যতটুকু জানি তা বলেছি, যা জানি না তা বলিনি। খোঁজ করার কারণ হিসেবে বলেছে রুটিন চেক আপ।
এসব কেন হল বুঝতে পারছি না। অর্ক বলল।
আমরাও বুঝতে পারছি না। দেখুন, আপনি আমাদের সঙ্গে দীর্ঘদিন আছেন, কাজের ব্যাপারে আপনার বিরুদ্ধে কোনও কমপ্লেন নেই, তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যেহেতু আপনার প্রচুর ছুটি পাওনা আছে তাই টানা এক মাস ছুটিতে আপনি থাকুন, কালকের মধ্যেই এই ছুটির জন্যে আবেদন করবেন, সেই ছুটির শেষে যদি জয়েন না করেন তখন, বুঝতেই পারছেন, ব্যবস্থা না নিয়ে কোনও উপায় থাকবে না। ফোন রেখে দিলেন ভদ্রলোক।
তৎক্ষণাৎ ছুটির জন্যে আবেদনপত্র লিখে ফেলল অর্ক। দরজায় তালা ঝুলিয়ে ঈশ্বরপুকুর লেনের মুখের পোস্ট অফিস থেকে একটা খাম কিনে তাতে ঠিকানা লিখে সেটা পোস্ট বক্সে ফেলে দিল।
খুব খিদে পাচ্ছে এখন। অর্ক চারপাশে তাকাল। এই এলাকার রেস্টুরেন্টে সব খাবার পাওয়া যায় কিন্তু সেগুলো বড় একঘেয়ে। অর্কর ইচ্ছে হল ধর্মতলায় গিয়ে মাটন চাপ আর তন্দুরি রুটি খাওয়ার। বহুকাল এসব খাওয়া হয়নি। সে দেখল ডিপো থেকে একটা ট্রাম বেরুবার উদ্যোগ নিচ্ছে। ট্রামগুলো ওখান থেকে মুখ বের করে এক মিনিট থমকে থাকে। এসপ্ল্যানেড লেখা দেখে সে দৌড়ে ট্রামে উঠতেই কন্ডাক্টার বললেন, ভাড়া ফেরত দিতে পারব না কিন্তু।
এরকম সংলাপ কখনও শোনেনি অর্ক। জিজ্ঞাসা করল, কী বললেন?
কলেজ স্ট্রিট থেকে মিছিল বেরুবার কথা আছে। সেখানে গাড়ি পৌঁছাবার আগেই যদি মিছিল বের হয় তা হলে কতক্ষণ দাঁড়াতে হবে জানি না। সে সময় অনেকে ভাড়ার টাকা ফেরত চায় বলে আগাম জানিয়ে দিলাম।
কীসের মিছিল? সিটে বসে থাকা একটি যুবক বলল, আপনি আজকের কাগজ নিশ্চয়ই দেখেননি। নন্দীগ্রামে পুলিশের গুলি চালানোর প্রতিবাদে কলেজ স্ট্রিট থেকে মিছিল যাবে ধর্মতলা পর্যন্ত।
তৃণমূলের মিছিল? অর্ক জিজ্ঞাসা করল।
তা বলতে পারব না। বিদ্বজ্জনেরা ডাক দিয়েছেন। ওই নির্মম অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে সাধারণ মানুষকে মিছিলে যোগ দিতে বলেছেন। লাক ভাল থাকলে মিছিল বের হওয়ার আগেই কলেজ স্কোয়ার পেরিয়ে যেতে পারব। যুবকটি বলল।
ট্রাম চলছে। যেই কোনও স্টপে থামছে অমনি উঠে আসা যাত্রীদের একই কথা শোনাচ্ছেন কন্ডাক্টার। অর্ক লক্ষ করল এর ফলে কেউ আর টিকিট কাটছে না, যার গন্তব্য কলেজ স্ট্রিটের আগে সে-ও টিকিট না কেটে নেমে যাচ্ছে।
মহাত্মা গাঁধী রোডের মোড়ে ট্রাম দাঁড়িয়ে গেল। সামনের রাস্তায় অচল গাড়ির জটলা। ওপাশ থেকেও গাড়ি আসছে না। সেই যুবকটি হঠাৎ বলে উঠল, মার গাড়িয়েছে, বলে নেমে গেল টিকিট না কেটেই। শব্দ দুটোর অর্থ বোধগম্য হল না অর্কর। ঈশ্বরপুকুর লেনের রকবাজরা যে সমস্ত শব্দ উচ্চারণ করত তা এখন বস্তির মেয়েরাও রপ্ত করে ফেলেছে। বাবার কাছে শুনেছে সে একসময় শালা শব্দটা বড়দের সামনে বললে প্রচণ্ড মার খেতে হত। কথাটা শুনে এখনকার ছেলেমেয়েরা হাসবে, কিন্তু ওই যুবকটি যা বলে গেল তা সে কখনও শোনেনি।
এতদিন যে জীবন সে যাপন করেছে তা যেন ছত্রভঙ্গ হয়ে গেল। চাকরিতে জয়েন করার তারিখ চলে গিয়েছে বেশ কয়েকদিন হল। চাকরিটা চলে গেলে নতুন সমস্যা যোগ হবে। অর্ক অফিসে ফোন করল। তাদের ইনচার্জ ভদ্রলোক ফোন পেয়েই খেপে গেলেন, কী ভাবছেন আপনি? এটা কি আপনার মামার বাড়ি? যখন ইচ্ছে ছুটি নেবেন, যেদিন জয়েন করার কথা সেদিন হাওয়া হয়ে থাকবেন, আবার মর্জিমতো ফোন করবেন, এটা কর্তৃপক্ষ মেনে নেবে বলে ভাবলেন কী করে?
আমি বুঝতে পারছি কাজটা ঠিক হয়নি। কিন্তু আচমকা এমন সমস্যায় জড়িয়ে গিয়েছিলাম যে যোগাযোগ করতে পারিনি। অর্ক বলল।
কী সমস্যা? চুরিচামারি না খুন করেছেন? মানে?
না হলে পুলিশ এসে আপনার সম্পর্কে খোঁজ খবর করবে কেন?
অবাক হয়ে গেল অর্ক, পুলিশ এসেছিল আমার খোঁজে?
হ্যাঁ। আপনার চরিত্র কীরকম, মন দিয়ে কাজ করেন কিনা, কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত তা জিজ্ঞাসা করছিল। আমরা যতটুকু জানি তা বলেছি, যা জানি না তা বলিনি। খোঁজ করার কারণ হিসেবে বলেছে রুটিন চেক আপ।
এসব কেন হল বুঝতে পারছি না। অর্ক বলল।
আমরাও বুঝতে পারছি না। দেখুন, আপনি আমাদের সঙ্গে দীর্ঘদিন আছেন, কাজের ব্যাপারে আপনার বিরুদ্ধে কোনও কমপ্লেন নেই, তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যেহেতু আপনার প্রচুর ছুটি পাওনা আছে তাই টানা এক মাস ছুটিতে আপনি থাকুন, কালকের মধ্যেই এই ছুটির জন্যে আবেদন করবেন, সেই ছুটির শেষে যদি জয়েন না করেন তখন, বুঝতেই পারছেন, ব্যবস্থা না নিয়ে কোনও উপায় থাকবে না। ফোন রেখে দিলেন ভদ্রলোক।
তৎক্ষণাৎ ছুটির জন্যে আবেদনপত্র লিখে ফেলল অর্ক। দরজায় তালা ঝুলিয়ে ঈশ্বরপুকুর লেনের মুখের পোস্ট অফিস থেকে একটা খাম কিনে তাতে ঠিকানা লিখে সেটা পোস্ট বক্সে ফেলে দিল।
খুব খিদে পাচ্ছে এখন। অর্ক চারপাশে তাকাল। এই এলাকার রেস্টুরেন্টে সব খাবার পাওয়া যায় কিন্তু সেগুলো বড় একঘেয়ে। অর্কর ইচ্ছে হল ধর্মতলায় গিয়ে মাটন চাপ আর তন্দুরি রুটি খাওয়ার। বহুকাল এসব খাওয়া হয়নি। সে দেখল ডিপো থেকে একটা ট্রাম বেরুবার উদ্যোগ নিচ্ছে। ট্রামগুলো ওখান থেকে মুখ বের করে এক মিনিট থমকে থাকে। এসপ্ল্যানেড লেখা দেখে সে দৌড়ে ট্রামে উঠতেই কন্ডাক্টার বললেন, ভাড়া ফেরত দিতে পারব না কিন্তু।
এরকম সংলাপ কখনও শোনেনি অর্ক। জিজ্ঞাসা করল, কী বললেন?
কলেজ স্ট্রিট থেকে মিছিল বেরুবার কথা আছে। সেখানে গাড়ি পৌঁছাবার আগেই যদি মিছিল বের হয় তা হলে কতক্ষণ দাঁড়াতে হবে জানি না। সে সময় অনেকে ভাড়ার টাকা ফেরত চায় বলে আগাম জানিয়ে দিলাম।
কীসের মিছিল? সিটে বসে থাকা একটি যুবক বলল, আপনি আজকের কাগজ নিশ্চয়ই দেখেননি। নন্দীগ্রামে পুলিশের গুলি চালানোর প্রতিবাদে কলেজ স্ট্রিট থেকে মিছিল যাবে ধর্মতলা পর্যন্ত।
তৃণমূলের মিছিল? অর্ক জিজ্ঞাসা করল।
তা বলতে পারব না। বিদ্বজ্জনেরা ডাক দিয়েছেন। ওই নির্মম অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে সাধারণ মানুষকে মিছিলে যোগ দিতে বলেছেন। লাক ভাল থাকলে মিছিল বের হওয়ার আগেই কলেজ স্কোয়ার পেরিয়ে যেতে পারব। যুবকটি বলল।
ট্রাম চলছে। যেই কোনও স্টপে থামছে অমনি উঠে আসা যাত্রীদের একই কথা শোনাচ্ছেন কন্ডাক্টার। অর্ক লক্ষ করল এর ফলে কেউ আর টিকিট কাটছে না, যার গন্তব্য কলেজ স্ট্রিটের আগে সে-ও টিকিট না কেটে নেমে যাচ্ছে।
মহাত্মা গাঁধী রোডের মোড়ে ট্রাম দাঁড়িয়ে গেল। সামনের রাস্তায় অচল গাড়ির জটলা। ওপাশ থেকেও গাড়ি আসছে না। সেই যুবকটি হঠাৎ বলে উঠল, মার গাড়িয়েছে, বলে নেমে গেল টিকিট না কেটেই। শব্দ দুটোর অর্থ বোধগম্য হল না অর্কর। ঈশ্বরপুকুর লেনের রকবাজরা যে সমস্ত শব্দ উচ্চারণ করত তা এখন বস্তির মেয়েরাও রপ্ত করে ফেলেছে। বাবার কাছে শুনেছে সে একসময় শালা শব্দটা বড়দের সামনে বললে প্রচণ্ড মার খেতে হত। কথাটা শুনে এখনকার ছেলেমেয়েরা হাসবে, কিন্তু ওই যুবকটি যা বলে গেল তা সে কখনও শোনেনি।