পুলিশের মুখোমুখি যদি হতে না চাও তা হলে আমার বিশ্বাস তোমরা আমাকে অপদস্থ করবে না। ওই অজয় নদের ওপারের জঙ্গলে স্বচ্ছন্দে চলে যেতে পারবে। তবে পুলিশ চলে যাওয়ার পর যদি এখানে তোমরা ফিরে আসো তখন তোমাদের থাকতে দেওয়ার ব্যাপারে আমাকে ভাবতে হবে। সকালে তোমাকে বলেছিলাম অজয়ের ধারে ঘুরে দেখে আসতে। ইচ্ছে হলে দেখে এসো। গুরুমা উঠলেন, এবার আমাকে তৈরি হতে হবে। তোমরা আসতে পারো। কুন্তী, তুমি আজই ফিরে যেতে চাইছ?
হ্যাঁ। বোলপুরে এক বান্ধবীর বাড়িতে রাত্রে থাকব।
দ্যাখো। যদি মনে করো, এখানেও থাকতে পারো। আমার এই এখানে। গুরুমা সামনের ঘরটি আঙুল তুলে দেখিয়ে ভেতরে চলে গেলেন।
রোদ মরে আসছে। অর্ক বলল, আচ্ছা, চলি।
কুন্তী বললেন, একটু দাঁড়ান, আপনার বাবার নাম কি অনিমেষ?
হ্যাঁ। আপনার বাবা তা হলে আমার বাবাকে চিনতেন?
নিশ্চয়ই। বাবার কাছে আপনার মায়ের কথাও শুনেছি। প্রচুর স্যাক্রিফাইস করেছেন মহিলা। কুন্তী বললেন।
অর্ক কিছু বলল না।
আর তা হলে আপনিই সেই অর্ক। কুন্তী হাসলেন।
পৃথিবী খুব ছোট জায়গা।
তাই তো দেখছি। পনেরো-ষোলো বছরে শোনা গল্পটা আজ আপনাকে দেখে নতুন করে মনে পড়ছে। খুব ভাল লাগছে।
অর্ক তাকাল, আপনি কি গুরুমায়ের শিষ্যা?
আমি? বুকে আঙুল রেখে মাথা নাড়লেন কুন্তী, প্রথাগত দীক্ষা নিয়ে শিষ্যা আমি হইনি। কোনও কোনও মানুষ যখন কথা বলেন তখন শুনলে ভেতরটা পরিষ্কার হয়ে যায়। এক অর্থে তিনি নিশ্চয়ই গুরু হয়ে যান। এরকম গুরু আমার কয়েকজন আছেন। তাদের আমি চোখেও দেখিনি।
যেমন?
রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ, কার্ল মার্কস।
সে কী? ওই দুজনের পাশে কার্ল মার্কস?
কেন নয়? আপনি দাস ক্যাপিটাল পড়েছেন?
না।
আলোচনা থাকায় একবার এই আশ্রমে চাই না। কিন্তু
তা হলে এই আলোচনা থাক। কুন্তী বললেন, আমি মাঝে মাঝে বোলপুরে আসি। যখনই আসি তখনই একবার এই আশ্রমে এসে গুরুমায়ের সঙ্গে দেখা করে যাই। ওঁর অতীত আমি জানি না, জানতেও চাই না। কিন্তু এলে ভাল লাগে।
অর্ক বলল, আচ্ছা। তা হলে এখন চলি।
আপনি কি প্রার্থনাতে যোগ দিচ্ছেন?
প্রার্থনা?
মন্দিরের সামনে সবাই একত্রিত হন। পুজো শুরুর আগে গুরুমাকে সামনে রেখে কিছুক্ষণ ধ্যান করেন। তারপর গুরুমা উপদেশ দেওয়ার পর নিজের হাতে মায়ের পুজো করেন। ওই পুরো ব্যাপারটাকেই এখানে প্রার্থনা বলা হয়।
না। আমি এখন অজয় নদের চরে যেতে চাই। গুরুমা আমাকে বেশ কয়েকবার ওখানে যাওয়ার কথা বলেছেন। আচ্ছা, এলাম।
অর্ক ঘর পেরিয়ে বাইরে আসতেই বৃদ্ধ শিষ্যকে দেখতে পেল। ইতিমধ্যে তার পোশাকের পরিবর্তন হয়েছে। গেরুয়া পাঞ্জাবি এবং লুঙ্গিতে তাকে ঈশ্বরভক্ত বলেই মনে হচ্ছিল। বললেন, প্রার্থনার পর এখানে চা এবং সামান্য জলযোগের ব্যবস্থা করা হয়। দূর থেকেই ঘণ্টার ধ্বনি শুনতে পাবেন। অন্য সময় এক-দুবার বাজলেও সে সময় পরপর সাতবার বাজবে।
মাথা নেড়ে এগিয়ে যেতেই অর্ক তরুণ শিষ্যকে দেখতে পেল। বেচারা সম্ভবত তখন থেকে এখানেই অপেক্ষা করছিল। দুবার ঘণ্টাধ্বনি হতে অর্ক জিজ্ঞাসা করল, এখনই প্রার্থনা আরম্ভ হবে?
হ্যাঁ, সবাই মন্দিরে পৌঁছে গিয়েছেন। অতিথিরাও অংশ নিতে পারেন। আপনি কি সেখানে যাবেন না ঘরে ফিরবেন?
ঘরেই ফিরব।
হ্যাঁ। বোলপুরে এক বান্ধবীর বাড়িতে রাত্রে থাকব।
দ্যাখো। যদি মনে করো, এখানেও থাকতে পারো। আমার এই এখানে। গুরুমা সামনের ঘরটি আঙুল তুলে দেখিয়ে ভেতরে চলে গেলেন।
রোদ মরে আসছে। অর্ক বলল, আচ্ছা, চলি।
কুন্তী বললেন, একটু দাঁড়ান, আপনার বাবার নাম কি অনিমেষ?
হ্যাঁ। আপনার বাবা তা হলে আমার বাবাকে চিনতেন?
নিশ্চয়ই। বাবার কাছে আপনার মায়ের কথাও শুনেছি। প্রচুর স্যাক্রিফাইস করেছেন মহিলা। কুন্তী বললেন।
অর্ক কিছু বলল না।
আর তা হলে আপনিই সেই অর্ক। কুন্তী হাসলেন।
পৃথিবী খুব ছোট জায়গা।
তাই তো দেখছি। পনেরো-ষোলো বছরে শোনা গল্পটা আজ আপনাকে দেখে নতুন করে মনে পড়ছে। খুব ভাল লাগছে।
অর্ক তাকাল, আপনি কি গুরুমায়ের শিষ্যা?
আমি? বুকে আঙুল রেখে মাথা নাড়লেন কুন্তী, প্রথাগত দীক্ষা নিয়ে শিষ্যা আমি হইনি। কোনও কোনও মানুষ যখন কথা বলেন তখন শুনলে ভেতরটা পরিষ্কার হয়ে যায়। এক অর্থে তিনি নিশ্চয়ই গুরু হয়ে যান। এরকম গুরু আমার কয়েকজন আছেন। তাদের আমি চোখেও দেখিনি।
যেমন?
রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ, কার্ল মার্কস।
সে কী? ওই দুজনের পাশে কার্ল মার্কস?
কেন নয়? আপনি দাস ক্যাপিটাল পড়েছেন?
না।
আলোচনা থাকায় একবার এই আশ্রমে চাই না। কিন্তু
তা হলে এই আলোচনা থাক। কুন্তী বললেন, আমি মাঝে মাঝে বোলপুরে আসি। যখনই আসি তখনই একবার এই আশ্রমে এসে গুরুমায়ের সঙ্গে দেখা করে যাই। ওঁর অতীত আমি জানি না, জানতেও চাই না। কিন্তু এলে ভাল লাগে।
অর্ক বলল, আচ্ছা। তা হলে এখন চলি।
আপনি কি প্রার্থনাতে যোগ দিচ্ছেন?
প্রার্থনা?
মন্দিরের সামনে সবাই একত্রিত হন। পুজো শুরুর আগে গুরুমাকে সামনে রেখে কিছুক্ষণ ধ্যান করেন। তারপর গুরুমা উপদেশ দেওয়ার পর নিজের হাতে মায়ের পুজো করেন। ওই পুরো ব্যাপারটাকেই এখানে প্রার্থনা বলা হয়।
না। আমি এখন অজয় নদের চরে যেতে চাই। গুরুমা আমাকে বেশ কয়েকবার ওখানে যাওয়ার কথা বলেছেন। আচ্ছা, এলাম।
অর্ক ঘর পেরিয়ে বাইরে আসতেই বৃদ্ধ শিষ্যকে দেখতে পেল। ইতিমধ্যে তার পোশাকের পরিবর্তন হয়েছে। গেরুয়া পাঞ্জাবি এবং লুঙ্গিতে তাকে ঈশ্বরভক্ত বলেই মনে হচ্ছিল। বললেন, প্রার্থনার পর এখানে চা এবং সামান্য জলযোগের ব্যবস্থা করা হয়। দূর থেকেই ঘণ্টার ধ্বনি শুনতে পাবেন। অন্য সময় এক-দুবার বাজলেও সে সময় পরপর সাতবার বাজবে।
মাথা নেড়ে এগিয়ে যেতেই অর্ক তরুণ শিষ্যকে দেখতে পেল। বেচারা সম্ভবত তখন থেকে এখানেই অপেক্ষা করছিল। দুবার ঘণ্টাধ্বনি হতে অর্ক জিজ্ঞাসা করল, এখনই প্রার্থনা আরম্ভ হবে?
হ্যাঁ, সবাই মন্দিরে পৌঁছে গিয়েছেন। অতিথিরাও অংশ নিতে পারেন। আপনি কি সেখানে যাবেন না ঘরে ফিরবেন?
ঘরেই ফিরব।