মালপত্র ম্যাটাডোরে ভোলা হয়ে গেলে সেই ট্যাক্সিটা চলে এল। দেবেশ ড্রাইভারকে খবর দিয়েছিল। মালপত্র রাখার পর ম্যাটাডোরে জায়গা যদি না হয় সেইজন্যে। ছোটমা তার ঠাকুরদের সযত্নে পুটুলিতে বেঁধে নিয়ে বারান্দায় চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলেন। তার পাশে সেই বউটি। ছোটমা যত মুখ ঘোরাচ্ছেন তত তার চোখ উপচে জল নামছিল। ছোটমা বললেন, এই বাগান কেটে পরিষ্কার করে ফেলবে ওরা। শেয়াল সাপগুলোকে নিশ্চয়ই মেরে ফেলবে। সেই কতকাল আগে আমি চা-বাগানের বাড়ি ছেড়ে এখানে এসেছিলাম। তখন ওরা, ওই গাছগুলো যেমন ছিল, তেমনই রাখতে পেরেছিলাম। শুধু আমার শরীরটা বুড়ি হয়ে গেল।
অনিমেষকে দেখা গেল, একটু এগিয়ে এসে ডাকল, চলুন, আপনারা। চোখে বারংবার আঁচল চাপতে চাপতে বারান্দা থেকে নেমে গলির মুখে গিয়ে গাড়িতে উঠে বসলেন ছোটমা। পাশে বউটি। মাধবীলতা ওপাশের দরজা খুলে বসতেই লছমনের ছেলে বাবা চিৎকার করে কেঁদে উঠল। ছোটমা দুহাতে নিজের কান চেপে ধরলেন। মাধবীলতা ড্রাইভার ছেলেটিকে বলল, একটু হর্ন দাও তো। কোথায় গেল।
অনিমেষ অপলক বাড়িটাকে দেখছিল। স্বৰ্গছেঁড়া চা-বাগানের বাড়ি ছেড়ে সে ঠাকুরদা-বড়পিসিমার সঙ্গে চলে এসেছিল এখানে। চোখের ওপর এই বাড়ি তৈরি হতে দেখেছিল। আজ সেই বাড়িটাকে ছেড়ে যেতে হচ্ছে চিরকালের জন্যে। আজ থেকে তার আর কোনও বাড়ি নেই। এই সময় ট্যাক্সির হর্ন সজোরে কানে ধাক্কা মারল অনিমেষের।
.
বিশ্বজিৎ দাঁড়িয়ে ছিল, সঙ্গে একজন দাড়িওয়ালা যুবক। অর্ককে দেখে হাত তুলল। কাছে এলে সে বলল, ইনি আমাদের পার্টির একজন যুবনেতা। ওঁকে আপনার কথা বলেছি।
খানিকটা দূরেই থানা। সেদিক থেকে চোখ সরিয়ে যুবক বলল, আঃ, বিশু কারও সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে হলে নাম বলতে হয়। নমস্কার দাদা, আমি প্রতুল রায়। একটা কথা বলুন, যে মানুষটিকে নিয়ে পুলিশকে চিন্তিত করা হয়েছে তাকে আপনি কি দীর্ঘদিন চেনেন?
না। আমার পরিচিত এক ভদ্রলোক ঝাড়খণ্ড থেকে ওকে পাঠিয়েছিলেন, অনুরোধ করেছিলেন কয়েকদিনের জন্যে আশ্রয় দেওয়ার জন্যে। ও কলকাতার কিছুই চেনে না।
নিজের বিপদ ডেকে এনেছেন আপনি। পুলিশ মনে করে ঝাড়খণ্ডি মানেই মাওবাদী।
প্রতুলের কথা শুনে হেসে ফেলল অর্ক।
আপনি হাসছেন? প্রতুল বিরক্ত।
বাবার কাছে শুনেছি, নকশাল আন্দোলনের সময় পশ্চিমবাংলার বাইরের মানুষ ভাবত বাঙালি মানেই নকশাল। অর্ক বলল।
হুম। দেখুন, আমরা মা-মাটি-মানুষের জন্যে সংগ্রাম করছি। বামফ্রন্ট মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। নন্দীগ্রাম ওদের মুখোশ খুলে দিয়েছে। গরিব মানুষদের জমি সামান্য টাকার লোভ দেখিয়ে কিনে বুর্জোয়া টাটাদের হাতে তুলে দিয়েছে। আমরা এর বিরুদ্ধে লড়াই করবই। মুশকিল হল ওদের এবারে মানুষ এখনও ভুল বুঝছেন। জঙ্গলমহলে ওদের হার্মাদ বাহিনী ছড়িয়ে দিয়ে প্রচার করছে তারাই নাকি মাওবাদী। অথচ মানুষ জানে না মাওবাদীদের সাপ্লাই দেওয়া হয় আলিমুদ্দিন স্ট্রিট থেকে। প্রতুল পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে সযত্নে ধরাল, শুনলাম আপনার বাবা নকশাল ছিলেন। তার মানে তিনি চূড়ান্তভাবে সিপিএম বিরোধী। জেল খেটে বেরিয়ে অনেক নকশাল রাতারাতি সিপিএম হয়ে গিয়েছিলেন, আপনার বাবা হননি। আপনার অল্পবয়সে আপনি মানুষদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে সিপিএমের চাপে সরে আসতে বাধ্য হন। আপনাদের ওপর ওদের রাগ থাকা স্বাভাবিক। তাই আপনার বাড়িতে একজন মাওবাদী আশ্রয় নিয়েছে বললে ওরা এক ঢিলে দুটো পাখি মারতে পারবে। এক, আপনাকে জেলে ঢোকাতে পারবে, দুই, পাবলিককে আরও ভয় পাইয়ে দিতে পারবে। তাই এই কারণে ওদের মুখোশ খুলতে আমরা আপনাকে সাহায্য করব। আপনি বিশুর সঙ্গে থানায় যান। তবে একটা অনুরোধ, আমাকে যা বললেন তা ওখানে বলবেন না।
অনিমেষকে দেখা গেল, একটু এগিয়ে এসে ডাকল, চলুন, আপনারা। চোখে বারংবার আঁচল চাপতে চাপতে বারান্দা থেকে নেমে গলির মুখে গিয়ে গাড়িতে উঠে বসলেন ছোটমা। পাশে বউটি। মাধবীলতা ওপাশের দরজা খুলে বসতেই লছমনের ছেলে বাবা চিৎকার করে কেঁদে উঠল। ছোটমা দুহাতে নিজের কান চেপে ধরলেন। মাধবীলতা ড্রাইভার ছেলেটিকে বলল, একটু হর্ন দাও তো। কোথায় গেল।
অনিমেষ অপলক বাড়িটাকে দেখছিল। স্বৰ্গছেঁড়া চা-বাগানের বাড়ি ছেড়ে সে ঠাকুরদা-বড়পিসিমার সঙ্গে চলে এসেছিল এখানে। চোখের ওপর এই বাড়ি তৈরি হতে দেখেছিল। আজ সেই বাড়িটাকে ছেড়ে যেতে হচ্ছে চিরকালের জন্যে। আজ থেকে তার আর কোনও বাড়ি নেই। এই সময় ট্যাক্সির হর্ন সজোরে কানে ধাক্কা মারল অনিমেষের।
.
বিশ্বজিৎ দাঁড়িয়ে ছিল, সঙ্গে একজন দাড়িওয়ালা যুবক। অর্ককে দেখে হাত তুলল। কাছে এলে সে বলল, ইনি আমাদের পার্টির একজন যুবনেতা। ওঁকে আপনার কথা বলেছি।
খানিকটা দূরেই থানা। সেদিক থেকে চোখ সরিয়ে যুবক বলল, আঃ, বিশু কারও সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে হলে নাম বলতে হয়। নমস্কার দাদা, আমি প্রতুল রায়। একটা কথা বলুন, যে মানুষটিকে নিয়ে পুলিশকে চিন্তিত করা হয়েছে তাকে আপনি কি দীর্ঘদিন চেনেন?
না। আমার পরিচিত এক ভদ্রলোক ঝাড়খণ্ড থেকে ওকে পাঠিয়েছিলেন, অনুরোধ করেছিলেন কয়েকদিনের জন্যে আশ্রয় দেওয়ার জন্যে। ও কলকাতার কিছুই চেনে না।
নিজের বিপদ ডেকে এনেছেন আপনি। পুলিশ মনে করে ঝাড়খণ্ডি মানেই মাওবাদী।
প্রতুলের কথা শুনে হেসে ফেলল অর্ক।
আপনি হাসছেন? প্রতুল বিরক্ত।
বাবার কাছে শুনেছি, নকশাল আন্দোলনের সময় পশ্চিমবাংলার বাইরের মানুষ ভাবত বাঙালি মানেই নকশাল। অর্ক বলল।
হুম। দেখুন, আমরা মা-মাটি-মানুষের জন্যে সংগ্রাম করছি। বামফ্রন্ট মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। নন্দীগ্রাম ওদের মুখোশ খুলে দিয়েছে। গরিব মানুষদের জমি সামান্য টাকার লোভ দেখিয়ে কিনে বুর্জোয়া টাটাদের হাতে তুলে দিয়েছে। আমরা এর বিরুদ্ধে লড়াই করবই। মুশকিল হল ওদের এবারে মানুষ এখনও ভুল বুঝছেন। জঙ্গলমহলে ওদের হার্মাদ বাহিনী ছড়িয়ে দিয়ে প্রচার করছে তারাই নাকি মাওবাদী। অথচ মানুষ জানে না মাওবাদীদের সাপ্লাই দেওয়া হয় আলিমুদ্দিন স্ট্রিট থেকে। প্রতুল পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে সযত্নে ধরাল, শুনলাম আপনার বাবা নকশাল ছিলেন। তার মানে তিনি চূড়ান্তভাবে সিপিএম বিরোধী। জেল খেটে বেরিয়ে অনেক নকশাল রাতারাতি সিপিএম হয়ে গিয়েছিলেন, আপনার বাবা হননি। আপনার অল্পবয়সে আপনি মানুষদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে সিপিএমের চাপে সরে আসতে বাধ্য হন। আপনাদের ওপর ওদের রাগ থাকা স্বাভাবিক। তাই আপনার বাড়িতে একজন মাওবাদী আশ্রয় নিয়েছে বললে ওরা এক ঢিলে দুটো পাখি মারতে পারবে। এক, আপনাকে জেলে ঢোকাতে পারবে, দুই, পাবলিককে আরও ভয় পাইয়ে দিতে পারবে। তাই এই কারণে ওদের মুখোশ খুলতে আমরা আপনাকে সাহায্য করব। আপনি বিশুর সঙ্গে থানায় যান। তবে একটা অনুরোধ, আমাকে যা বললেন তা ওখানে বলবেন না।