What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected বুকের ঘরে বন্দী আগুন♨️ (1 Viewer)

স্বামী লোকটি লম্বাচওড়া কিন্তু কণ্ঠস্বর মেয়েদের মতো। এক সঙ্গীকে নিয়ে সে অফিসে গেল। নাম-ঠিকানা লেখাল। তখন দুই মহিলা আর এক পুরুষ ঘেরাটোপের মধ্যে দাঁড়িয়ে গর্ভবতী মহিলাকে সাহস জুগিয়ে যাচ্ছিল। লোকটি বলছিল, “তোর আর কোনও ভয় নেই। হাসপাতালে এসে গিয়েছিস যখন—তখন ডাক্তারবাবু ঠিক বাচ্চা বের করে আনবে।”

যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিল গর্ভবতী। শ্বাস নিয়ে বলল, “চুপ করো। চুপ করো। তোমার জন্যে, তোমার জন্যেই এত কষ্ট আমার…”

“কী করব! তুমিই চেয়েছিলে!” লোকটি মিনমিন করল।

উলটোদিকে বসা মহিলাদের একজন ধমক দিল, “চুপ কর। কী কথা বলছিস? মেয়েটার কি মাথাখারাপ হয়ে গেল?”

গর্ভবতী চোখ খুলল, “কাকে বলছি?”

“শুকরাকে। তোর বরের বন্ধু,” অন্য মহিলা চাপা গলায় বলল।

“ও,” গর্ভবতী চোখ বন্ধ করল।

এই সময় ছোট নার্স এসে বলল, “আপনারা সবাই বাইরে যান,” ডাক্তারবাবু এখনই এসে যাবেন।

সেই পুরুষ সঙ্গী বলল, “দিদি, কোনও ভয় নেই তো!”

ছোট নার্স লোকটির দিকে তাকাল, “আপনি কে?”

মহিলাদের একজন বলল, “ওর স্বামীর বন্ধু।”

“অ! ডাক্তারবাবুকে জিজ্ঞাসা করবেন। তিনিই বলতে পারবেন। এখন আপনারা বাইরে যান, আর এখানে থাকবেন না,” ছোট নার্স চড়া গলায় বলল।

এতোয়ারি গর্ভবতী মহিলার মাথার পাশে এসে দাঁড়িয়ে চমকে উঠল। না, তার ভুল হচ্ছে না। এই লোকটিকে সে নদীর ধারে আবছা আলোয় একজন গর্ভবতী মহিলার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে দেখেছিল। মেয়েটির দ্বিধা ছিল, কিন্তু তাকে বাধ্য করেছিল। এতোয়ারি পায়ে পায়ে বিছানার পাশে এসে দাঁড়াল। না, বেদনা কমলে গর্ভবতীর মুখ যখন স্বাভাবিক হচ্ছিল, তখন তাকে দেখে আর চিনতে অসুবিধে হল না। মেয়েটির সঙ্গে এই মহিলাকেই সে নদীর ধারে রাতের বেলায় দেখেছিল। লোকটির দ্বিধা হওয়া সত্ত্বেও এই লোকটি ওর কাছে শরীরের আনন্দ আদায় করে নিয়েছিল। আজ ছোট নার্সের সঙ্গে গিয়ে যে-লোকটি পরিচয় লিখিয়ে এসেছে, সে যদি এই নারীর স্বামী হয়, তা হলে এই উদ্বিগ্ন লোকটি কে? লোকটির মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছিল না।

ছোট নার্স বলল, “এতোয়ারি, সবাইকে সরিয়ে দাও। আপনারা চলে যান, বাইরে যান।” ছোট নার্স বাইরে বেরিয়ে গেলে এতোয়ারি প্রায় জোর করেই সবাইকে বের করে আনল। সে দেখল সেই লম্বাচওড়া লোকটি সঙ্গীর সঙ্গে দূরে দাঁড়িয়ে আছে। তার নজর এদিকে। যে-লোকটি বেডের পাশে বসেছিল, সে ধীরে ধীরে লোকটির পাশে গিয়ে মাথা নেড়ে কিছু বলতে লাগল।

এতোয়ারি আবার ঘেরাটোপের ভেতর ঢুকল। গর্ভবতীর প্রসববেদনা এখন আগের মতো বোধহয় তীব্র নয়। সে বলল, “আর-একটু অপেক্ষা করো, ডাক্তারবাবু এসে তোমার ব্যথা কমিয়ে দেবেন।”

“আমার পেট থেকে যদি না বের হয়…”

“কেন বের হবে না। সব বাচ্চাই বেরিয়ে আসে।”

“অনেক সময় বেরুতে চায় না। তা হলে আমি কি মরে যাব?”

“না না, কিছু হবে না।”

এইসময় ডাক্তারবাবু আর ছোট নার্স ভেতরে ঢুকলেন। ঢুকে হাসলেন ডাক্তারবাবু, “ভয় পেয়ো না, সব ঠিক হয়ে যাবে।”

ছোট নার্স সঙ্গে একটা ট্রে এনেছিল। তাতে মায়ের পেট থেকে বাচ্চাকে বের করে আনার জন্যে যেসব যন্ত্র দরকার হয়, তা তোয়ালে দিয়ে মোড়া আছে। ইশারায় এতোয়ারিকে সাহায্য করতে বলল ছোট নার্স। বিড়বিড় করে বলল, “কপালে কী লেখা আছে কে জানে।”
 
ডাক্তারবাবু কাজ শুরু করলেন। গর্ভবতী যাতে হাত পা না-ছুড়তে পারে, তার দাঁত যাতে ঠোঁটে না-বসে যায় তার ব্যবস্থা করে ডাক্তারবাবু শিশুকে মায়ের গর্ভ থেকে বের করে আনার চেষ্টা শুরু করলেন যন্ত্রের সাহায্যে। বেশ সময় লাগলেও শেষপর্যন্ত শিশুকে পৃথিবীর আলোয় নিয়ে আসতে সক্ষম হলেন ডাক্তারবাবু। গর্ভবতী সমানে শরীর মুচড়ে যাচ্ছিল। শিশু বেরিয়ে যাওয়ার পর ধীরে ধীরে স্থির হল। ডাক্তারবাবুর হাত থেকে শিশু নিয়ে ছোট নার্স নানারকম চেষ্টা করার পর কান্নার আওয়াজ বের হল। তখন এতোয়ারিকে বাকি সব কাজ দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দিল ছোট নার্স।

সদ্য মা হয়েছে যে, সে একপাশে মাথা হেলিয়ে শুয়েছিল। ছোট নার্স তার মুখের কাছে গিয়ে বলল, “এই যে, চোখ খুলে দ্যাখো, তোমার ছেলে হয়েছে। ফুটফুটে ছেলে।”

স্ত্রীলোকটি চোখ খুলল। তার মুখে ক্লান্তি স্পষ্ট, তবু সে যেন কিছু জানতে চাইল। ছোট নার্স আবার বলল, “ছেলে হয়েছে, ছেলে।”

স্ত্রীলোকটির ঠোঁটের কোণে একচিলতে হাসি ফুটল। তারপর একটা বড় শ্বাস ফেলে চোখ বন্ধ করল।

ছোট নার্স শিশুকে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এসে গলা তুলে বলল, “বাবা কে? এদিকে এসে দেখুন, ছেলে হয়েছে।”

লম্বা চেহারার লোকটিকে তার সঙ্গী বলল, “যান, ডাকছে।”

লোকটি এগিয়ে যেতে ছোট নার্স শিশুকে উঁচু করে তুলে দেখাল। লোকটি ঝুঁকে দেখল, তারপর হাসল। ছোট নার্স বলল, “খুশি তো? আমাদের মিষ্টি খাওয়ার টাকা না-দিলে একে বাড়িতে নিয়ে যেতে দেব না।”

স্বামী কী বলবে তা বোধহয় ভেবে পাচ্ছিল না, পাশে এসে দাঁড়িয়ে যে-লোকটা তাকে ইশারা করল হ্যাঁ বলতে, সে একটু আগে গর্ভবতীর সঙ্গে কথা বলছিল। এবার স্বামী জোর পেয়ে বারবার মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলল। এতোয়ারি দেখল পরামর্শ দেওয়া লোকটি দাঁত বের করে হাসল।

এতোয়ারি হতভম্ব। তার বারবার সেই রাতে দেখা দুটি মানুষকে মনে পড়ছিল। যাদের একজন যে-কোনওদিন মা হতে পারে, এমন শরীর নিয়েও যার সঙ্গে মিলিত হতে নদীর ধারে এসেছিল, সে স্বামী নয়, প্রেমিক। আজ সন্তানের জন্ম দেওয়ার সময় সে যখন প্রচণ্ড কষ্ট পাচ্ছিল, তখন তার জন্যে উদ্বিগ্ন মুখে পাশে বসেছিল সেই প্রেমিকই। স্বামী আছে কিন্তু থেকেও নেই। সবচেয়ে অবাক হওয়ার ব্যাপার, স্ত্রীর প্রেমিককে মেনে নিতে স্বামীর বিন্দুমাত্র আপত্তি নেই। যে-সন্তান আজ জন্মগ্রহণ করল তার বাবা স্বামী নয়, প্রেমিক, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।

ধড়পাকড় চলছিল। মাঝে-মাঝেই দেশের অন্য জায়গায় যে-স্বাধীনতা আন্দোলনের আগুন জ্বলে উঠছিল, তার আঁচ ডুয়ার্স এবং অসমের চা-বাগানেও এসে পড়ছিল। তবে বেশির ভাগ মানুষ তাদের নিরীহ জীবনযাপনের অভ্যেসে ভয়ে গুটিয়ে থাকছিল। তবে আর যেখানে যাই হোক, এতোয়ারি শুধু তার গল্পই শুনতে পাচ্ছিল, তাদের চা-বাগানের কাউকে সাহেবদের সামনে দাঁড়িয়ে গালাগালি দেওয়ার সাহস দেখাতে দেখেনি। কিন্তু হাসপাতালে এসে ডাক্তারবাবুর জন্যে অপেক্ষায় থাকায় রোগীরা নিজেদের মধ্যে যখন কথা বলত, তখন নিচু স্বরে ওদের গল্পই বলত, যারা ইংরেজদের এই দেশ থেকে তাড়িয়ে স্বাধীনতা আনতে চায়। কিন্তু স্বাধীনতা, সেটা নিয়ে এলে সাধারণ মানুষের কী হবে, সে সম্পর্কে ওইসব মানুষের মতো এতোয়ারিরও স্পষ্ট ধারণা ছিল না।

ডাক্তারবাবু যেখানে বসে রোগী দেখেন, কাগজে ওষুধের নাম লিখে কম্পাউন্ডারবাবুর কাছে পাঠান, তার পেছনের দেওয়ালে একটা বড় কাগজ বাঁধানো আছে। কোনও মানুষ বা প্রকৃতির ছবি সেই কাগজে ছাপা নেই, একটা রেখার ভেতরে অনেক ফুটকি, ফুটকির গায়ে জায়গায় জায়গায় নাম লেখা আছে। ছোট নার্স বুঝিয়ে বলেছিল, ওটাকে ম্যাপ বলে। এই দেশটার নাম কিন্তু হিন্দুস্তান, যার ইংরেজি ইন্ডিয়া। ওটা ইন্ডিয়ার ছবি। ইন্ডিয়ায় যত বড় শহর আছে, তার নাম লেখা আছে ওখানে। প্রথম দিন শোনামাত্র এতোয়ারির মনে প্রশ্ন এসেছিল, কেন এই দেশটার নাম হিন্দুস্তান। তাদের তো খ্রিস্টান বলা হয়। যিশু তাদের দেবতা। তা হলে কি শুধুই হিন্দুদের দেশ, খ্রিস্টানদের নয়? আবার লাইনের বাইরে যেখানে চা-বাগান শেষ হয়ে হাট বসার জায়গা, তার গায়ে দশ-বারো ঘর মুসলমান থাকে। দেশটা যদি হিন্দুস্তান হয়, তা হলে কি খ্রিস্টান বা মুসলমানদের নয়?
 
বড় নার্স অবসর সময়ে গল্প করেন। তখন কথাটা তুলেছিল এতোয়ারি। বড় নার্স হেসে মাথা নাড়তে লাগলেন, “দূর বোকা, এই হিন্দুস্তান শুধু হিন্দুদের নয়। হিন্দু, খ্রিস্টান, মুসলমান সবার দেশ। তবে আগে, ইংরেজরা এই দেশে আসার আগে প্রথমে শুধু হিন্দুরাই থাকত এখানে। তারপর মুসলমান এসেছিল। সাহেবরা, মানে খ্রিস্টানরা এদেশে এল এই সেদিন। তখন দেশের বেশির ভাগ মানুষ ছিল খুব গরিব। তাদের খাবারের লোভ দেখিয়ে, নিজেদের ধর্ম, নাম দিয়ে খ্রিস্টান বানিয়ে দিল। এই যেমন তোর নাম এতোয়ারি ব্রাউন। তুই খ্রিস্টান। আবার ডাক্তারবাবুর বউয়ের নাম জানিস? সরস্বতী মুখার্জি। ওরা হিন্দু। কিন্তু দেশটা তো আমাদের সবার।”

কিছুটা স্পষ্ট হয়, অনেকটাই অস্পষ্ট। কিন্তু বড় নার্সের মতো এত সুন্দরভাবে কেউ এতোয়ারিকে বুঝিয়ে বলেই না কথাগুলো।

সেই বিকেলে চৌকিদার চিৎকার করতে করতে এসে বলল, “আজ কেউ হাসপাতালের ভেতরে অনুমতি ছাড়া ঢুকতে পারবে না। দরজা বন্ধ থাকবে।”

ছোট নার্স উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞাসা করল, “কেন? কী হয়েছে?”

“খুন হয়েছে। পুলিশ একজনকে পিটিয়ে খুন করেছে,” চৌকিদার উত্তেজিত।

“সে কী! কেন?” দু’-তিনজন একসঙ্গে জিজ্ঞাসা করল।

“কেন আবার! লোকটা নাকি স্বাধীনতা চাইছিল। সব কিছু চাইতে নেই, লোকটা জানত না। না-জানলে তো দাম দিতে হবে,” হাসপাতালের মূল দরজা বন্ধ করে লাঠি হাতে ভেতরে ঢুকে পড়ল চৌকিদার।

এর কিছুক্ষণ আগে ডাক্তারবাবু তাঁর বিকেলের রাউন্ড দিতে হাসপাতালে এসেছিলেন। খবরটা তাঁর কানে গেল। তিনি চৌকিদারকে ডেকে পাঠালেন। চৌকিদার সামনে এসে মাথা নাড়তে লাগল, “সাব আমি লোকটাকে চিনতাম। ও যে সাহেবদের খতম করার দলে নাম লিখিয়েছে, আমি জানতাম না। দেখে মনেও হয়নি।”

“লোকটা কি এই বাগানে কাজ করে?”

“না না হাটে সবজি বিক্রি করে।”

“কী হয়েছিল? তুমি কী শুনেছ?”

“লোকটাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছিল। ও নাকি সাহেবমারা দলকে খাবার পৌঁছে দিয়েছিল। কিন্তু লোকটা যেতে যেতে পুলিশকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিয়ে পালাতে চেষ্টা করেছিল বলে অন্য পুলিশরা ওকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। পুলিশরা চেঁচিয়ে বলেছে, ওর নাকি কয়েকজন সঙ্গী এখানে আছে। তাদের তিনদিনের মধ্যে ধরে ফাঁসি দেওয়া হবে।”

“বাজারে যারা সবজি বিক্রি করে তাদের আমি চিনি। তুমি কার কথা বলছ?” ডাক্তারবাবু জিজ্ঞাসা করলেন।

“শনিচয়, সামনের দাঁত একটু উঁচু।”

ডাক্তারবাবু চিনতে পারলেন লোকটাকে। গোবেচারা চেহারার ওই লোকটিকে দেখে কল্পনা করা যায় না যে, ওর ভেতরে যে-আগুন ছিল, তাকে ভয় পেয়েছে ব্রিটিশ সরকার।

ডাক্তারবাবু জিজ্ঞাসা করলেন, “হাসপাতালের দরজা বন্ধ করার কথা তোমাকে কে বলেছে?”

“সবাই দরজা-জানলা বন্ধ করছে, তাই…”

“তারা কি হাসপাতালে থাকে? হাসপাতালের দরজা কখনও বন্ধ হয় না। মন্দির গির্জা মসজিদের দরজা বন্ধ হয়, কিন্তু হাসপাতালের হয় না। যাও, দরজা খুলে দিয়ে পাহারায় থাকো,” ডাক্তারবাবু বললেন।

ঠিক তখনই বড়সাহেবের বেয়ারা এসে সেলাম করে বলল, “বড়াসাহেব আপকো সেলাম দিয়া।”

“কী ব্যাপার?” ডাক্তারবাবু অবাক হলেন। এরকম ডাক কদাচিৎ পড়ে।

“নেহি মালুম,” মাথা নেড়ে বলে চলে গেল লোকটা।

ডাক্তারবাবু শঙ্কিত হলেন। তাঁকে কি এখন কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে?
 
নদীটা এখানে বেশ সরু হয়ে যাওয়ায় জল শুধু গভীর হয়নি, স্রোতও যথেষ্ট বেড়ে গেছে। সেই তীব্র স্রোত বিশাল হুইল ঘুরিয়ে যে-বিদ্যুৎ তৈরি করে, তাতে কারখানার মেশিন ঘোরে, বিদ্যুতের আলো পাওয়া যায় চা-কারখানায়। নদীর ওপর লোহার সাঁকো, সাঁকোর ওপর দিয়ে পিচের যে-রাস্তা করা হয়েছে, তাতে দিব্যি গাড়ি চলাচল করতে পারে। ডাক্তারবাবু সাঁকো পেরিয়ে বড়সাহেবের অফিসে পৌঁছে দেখলেন, বড়সাহেবের বেয়ারা ইতিমধ্যে পৌঁছে গিয়েছে। ডাক্তারবাবুকে দেখে সেলাম করে দরজা খুলে দিল।

ভেতরে পা দিতেই বড় মেজ ছোটসাহেবকে চেয়ারে আর ভারতীয় বড়বাবুকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন ডাক্তারবাবু। তিনি বললেন, “গুড ইভনিং স্যার, আপনি আমাকে ডেকেছেন?”

“গুড ইভনিং ডক্টর। প্লিজ় সিট ডাউন,” বড়সাহেব বললেন।

একটু স্বস্তি পেলেন ডাক্তারবাবু। আক্রমণ করার থাকলে প্রথমে এত মিষ্টি করে কথা বলেন না বড়সাহেব। তিনি উলটোদিকের চেয়ারে বসলেন। বড়সাহেব বললেন, “প্রথমে আমি ব্যাপারটাকে গুরুত্ব দিইনি। কিন্তু ক্রমশ ওদের কাজকর্ম দেখে উদ্বিগ্ন না-হয়ে উপায় নেই। তুমি নিশ্চয়ই শুনেছ, আজ একজন উগ্রপন্থী পুলিশের সঙ্গে এনকাউন্টারে মারা গিয়েছে। আর ঘটনাটা ঘটেছে চা-বাগানের পাশের বাজার এলাকায়। এত কাছে যে, উদ্বিগ্ন না-হয়ে উপায় নেই। তুমি নিশ্চয়ই আমার সঙ্গে একমত হচ্ছ?”

“হ্যাঁ, ব্যাপারটা সত্যি দুশ্চিন্তা করার মতো?” ডাক্তারবাবু বললেন।

দ্বিতীয় ম্যানেজার বললেন, “পুলিশের গুলিতে কোনও কোনও বিদ্রোহী উন্ডেড হয়েছে বলে খবর পাচ্ছি, তারা কি চিকিৎসার জন্যে আপনার হাসপাতালে এসেছে?”

মাথা নাড়লেন ডাক্তারবাবু, “আমার জানা নেই।”

তৃতীয় ম্যানেজার বললেন, “দায়িত্ব এড়িয়ে যাবেন না। চা-বাগান এলাকায় যারা আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করবে, তাদের কোনওরকম প্রশ্রয় আমরা দেব না। ওদের মেরে ফেললেও, আমাদের বিরুদ্ধে গভর্নমেন্ট কোনও ব্যবস্থা নেবে না। তাই কোনওরকম মার্সি দেখাবেন না।”

বড় ম্যানেজার হাত তুললেন, “শান্ত হও চার্লস। ডক্টর কয়েক বছর আমাদের কোম্পানিতে আছেন। কোম্পানি ওঁর ওপর খুব নির্ভর করে। ওয়েল ডক্টর, ব্রিটিশ সরকার ইচ্ছে করলে বিদ্রোহীদের দেখামাত্র গুলি করে মেরে ফেলে এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনতে পারে। কিন্তু আমি ওই পথে যেতে চাইছি না। আমার মাথায় একটা অন্য রকম পরিকল্পনা এসেছে। সেই ব্যাপারেই আলোচনা করব,” সিগারেট ধরিয়ে ধোঁয়া ছাড়লেন বড়সাহেব। একটু ভেবে বললেন, “ডুয়ার্স এবং অসমের চা-বাগানের কাজের জন্যে এদেশে শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছিল না একথা আপনারা তো জানেন।”

দ্বিতীয় ম্যানেজার বললেন, “হ্যাঁ’ লোকাল আদিবাসীরা চা-গাছের চাষ করতে চায়নি, তা জানি।”

তৃতীয় ম্যানেজার অবাক হলেন, “কেন? ওরা তো মাইনে পেত!”

বড় ম্যানেজার বললেন, “চার্লস, কোনও কোনও মানুষ পেটের চেয়ে ধর্মকে অনেক বেশি গুরুত্ব দেয়। লোকাল আদিবাসীরা মনে করেছিল, যে-গাছের ফল-ফুল-পাতা বা শেকড় খাওয়া যায় না, সেই গাছের চাষ করলে ওদের ভগবান রেগে যাবে। ওদের কিছুতেই চা গাছের বাগানে কাজ করানো যায়নি। কোনও অনিচ্ছুক ঘোড়ার পিঠে বসে তুমি রেস জিততে পারো না।”

তৃতীয় ম্যানেজার বললেন, “মাই গড। কী বোকা ওই লোকগুলো?”

বড়সাহেব বললেন, “ওয়েল, তখন এজেন্টরা এসে প্রমিস করল তারা চা-বাগানে কাজ করার জন্যে শ্রমিক এনে দেবে পাশের প্রভিন্স বিহার থেকে। মাথাপিছু টাকা নিয়ে জল আর খাবারের সঙ্গে ঘরের লোভ দেখিয়ে ওরা আমাদের চা-বাগানগুলোতে কাজের জন্যে শ্রমিক এনে দিত।”

“থ্যাঙ্ক গড,” তৃতীয় ম্যানেজার বললেন।
 
দ্বিতীয় ম্যানেজার হাসলেন, “এটা আমি শুনেছি। ওই লোকদের এখানে এনে চার্চের ফাদারকে অনুরোধ করা হয়েছিল ব্যাপটাইজ করে দিতে। তাই করা হলে লোকগুলো রাতারাতি খ্রিস্টান হয়ে গিয়েছিল এবং একটা খ্রিস্টান নামও ফাদারের কাছ থেকে পেয়েছিল। তাই তো?”

“কারেক্ট,” বড়সাহেব মাথা নাড়লেন, “এই লোকগুলোর পূর্বপুরুষ যদি তাদের বিহারের গ্রামে থেকে যেত, তা হলে এরা বোধহয় জন্মাত না।”

তৃতীয় ম্যানেজার অবাক হল, “কেন?”

“খাবার না-পেয়ে এদের পুর্বপুরুষ কতদিন বেঁচে থাকত? জল নেই, খাবার নেই, বন্যপ্রাণী শেষ করে ফেলেছে ধরে খেয়ে, ভয়ংকর অবস্থা থেকে চলে এসেছিল এরা। খুব কম সংখ্যায় লোক থেকে গিয়েছিল। কীভাবে ছিল, আদৌ তারা আছে কি না, তা আমি জানি না। এখানে আসার পর কেউ ফিরে গিয়েছে বলে আমি শুনিনি।”

দ্বিতীয় ম্যানেজার জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনি কী চাইছেন?”

আবার কিছুক্ষণ ধোঁয়া ছাড়লেন বড়সাহেব চোখ বন্ধ করে। তারপর চোখ খুলে বললেন, “আমি নিশ্চিত, যদি ওখানে ওদের কেউ বেঁচে থাকে, তা হলে খুব দুর্দশার মধ্যে আছে। আপনি কী বলেন ডাক্তার?”

হঠাৎ নিজের নাম শুনে ডাক্তারবাবু হকচকিয়ে গেলেন। বললেন, “আমার কাছে কোনও খবর নেই। এখানে তো খবরের কাগজ নিয়মিত পাই না। রেডিয়োর ওপর নির্ভর করতে হয়। মুশকিল হল, রেডিয়োতে সব খবর বলে না। তাই জানবার কোনও উপায় নেই।”

“ঠিক কথা,” বড়সাহেব মাথা নাড়লেন, “যদি চা-বাগানের কাজে ওদের ডুয়ার্স এবং অসমে না-নিয়ে আসা হত, তা হলে নিজের দেশে কীরকম থাকত, আপনারা কোনও ধারণা করতে পারেন?”

ছোট ম্যানেজার হাসলেন, “বেশির ভাগ মানুষ না খেয়ে হয়তো মরেই গেছে।”

মেজ ম্যানেজার বললেন, “তুমি এত নিশ্চিত হচ্ছ কী করে?”

বড় ম্যানেজার বললেন, “ঠিক কথা। প্রথমে যাদের চা-বাগানের কাজের জন্য নিয়ে আসা হয়েছিল, তাদের কেউই বোধহয় আর জীবিত নেই। আর ওখানে কী ঘটছে, যারা থেকে গিয়েছিল, তাদের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ এদের হয়নি। তার প্রধান কারণ, যারা থেকে গিয়েছিল, তারা তো বটেই, যারা এসেছিল, তাদের কারও অক্ষরজ্ঞান না-থাকায় চিঠি লিখে খোঁজখবর নিতে পারেনি।”

ডাক্তারবাবু কথা বললেন। বিষয়টা তাঁকে বেশ অবাক করছিল। বললেন, “আমি বুঝতে পারছি না, আপনি ওদের নিয়ে ঠিক কী ভাবছেন!”

“খুব সহজ ব্যাপার। আমি আমাদের শ্রমিকদের বোঝাতে চাই, যদি তাদের এখানে নিয়ে আসা না হত, তা হলে তারা এখন কী দুর্দশার মধ্যে ওখানে থাকত। আমরা এখানে এনেছি বলে ওদের কৃতজ্ঞ থাকা উচিত,” বড়সাহেব গম্ভীর গলায় কথাগুলো বললেন।

মেজসাহেব আঁতকে উঠলেন, “মাই গড। আমাদের চা-বাগানের সমস্ত শ্রমিকদের অত দূরে নিয়ে যাওয়া কি সম্ভব?”

বড়সাহেব হাসলেন, “মাথার ব্যবহার করতে তুমি দেখছি ভুলে গেছ। এত লোক কেন নিয়ে যাওয়া হবে, চার-পাঁচজনের একটা দল, যাদের লিডার ছাড়া সবাই ওই অঞ্চলের মানুষের বংশধর, শুধু তাদেরই পাঠানো হবে। এই শ্রমিকরা সব দেখেশুনে ফিরে আসার সময় দু’জন পুরুষ এবং নারীকে সঙ্গে নিয়ে আসবে, যারা এখনও ওখানে বেঁচে আছে। এই লোকগুলোর মুখে আমাদের শ্রমিকরা শুনবে, কী ভয়ংকর কষ্টের মধ্যে ওরা বেঁচে আছে। যদি আমরা ওদের না-নিয়ে আসতাম, তা হলে একই দুর্দশায় পড়ত ওরা।”
 
ছোটসাহেব বললেন, “বাঃ, ভাল হবে। কিন্তু যাদের নিয়ে আসা হবে, তাদের কি আবার ফেরত পাঠাবেন?”

বড়সাহেব বললেন, “আমার বিশ্বাস ওদের কেউ ফিরে যেতে চাইবে না এখানকার আরাম ছেড়ে।”

ডাক্তারবাবু জিজ্ঞাসা করলেন, “এটা করার পেছনে আপনার উদ্দেশ্য হল, শ্রমিকদের বোঝানো দেশে থাকলে তারা কী দুর্দশায় থাকত। তাই তো?”

“ঠিক,” বড়সাহেব মাথা নাড়লেন।

মেজসাহেব বললেন, “ওদের দেখিয়ে কোম্পানি কী লাভ করবে?”

বড়সাহেব সিগারেট নেভালেন, “ঘোষণা করে দেওয়া হবে যারা বিদ্রোহী লোকগুলোকে সাহায্য করবে, তাদের ধরে পূর্বপুরুষদের দেশে ফেরত পাঠানো হবে। বাকি জীবনটা ওদের ভয়ংকর কষ্টের মধ্যে কাটাতে হবে। যারা সাহায্য করবে না, তাদের শিশুদের পড়াশোনা শেখানো হবে। হয়তো ভবিষ্যতে তাদের বাবুর চাকরিতে নেওয়া হবে,” বড় ম্যানেজার সাহেব বললেন, “মানুষ প্রথমে পেটের কথা ভাবে। তারপর নিরাপত্তা চায়। দেশভক্তি খিদের চাপে উড়ে যেতে বাধ্য।”

ছোটসাহেব বললেন, “বাঃ, চমৎকার আইডিয়া।”

মেজসাহেব বললেন, “কিন্তু এটা বেশি দেরিতে করা চলবে না, না-হলে যারা বিপ্লব করতে চাইছে, তাদের দল আরও ভারী হয়ে যাবে।”

বড়সাহেব বললেন, “একদম ঠিক কথা। আমি আপনাদের এখানে ডেকেছি একটা টিম তৈরি করার জন্যে, যারা ওদের ফেলে আসা গ্রামগুলোতে যাবে।”

ছোটসাহেব হাসলেন, “ব্যাপারটার মধ্যে অ্যাডভেঞ্চারের গন্ধ আছে। আপনি যদি বলেন, তা হলে আমার যেতে আপত্তি নেই। আমি লিড করতে পারি।”

“বাঃ! অনেক ধন্যবাদ। কিন্তু আমার মনে হয় আমাদের এই দলে না-যাওয়াই ভাল। গায়ের চামড়া বলবে আমরা বিদেশি। মনে রাখবেন স্বাধীনতা আন্দোলন খুব ছোঁয়াচে রোগের মতো। ওখানেও যে ওই আন্দোলনের আঁচ পৌঁছয়নি, তা আমি বলতে পারি না। তাই কোনও ঝুঁকি না-নিয়েই এই দলে সাদা চামড়ার কাউকে না-রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। বড়সাহেব ডাক্তারবাবুর দিকে তাকালেন, “আমার মনে হয় এই দলের নেতা হিসেবে ডক্টরের যাওয়া উচিত।”

ডাক্তারবাবু চমকে উঠলেন, “আমি!”

“হ্যাঁ। আপনি ওদের আস্থাভাজন মানুষ, ওদের ভাষা ভাল বলতে পারেন। আপনার কাছে ওরা মনের কথা সহজে বলতে পারবে। আপনি ছাড়া দু’জন পুরুষ এবং দু’জন মহিলা শ্রমিককে দলে রাখতে চাই, যাদের চেহারা দেখলেই মনে হবে ভালভাবে খেয়েদেয়ে আছে। এদের আপনি বেছে নিন। আপনার হাসপাতালের নার্সদের কাউকে ইচ্ছে হলে নিতে পারেন।”

এত দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গেল যে, আপত্তি করার সুযোগ পেলেন না ডাক্তারবাবু। তিনি যখন ইতস্তত করছেন, তখন বড়সাহেব বললেন, “এবার আপনি বলুন বড়বাবু, আমাদের এই টিম কীভাবে ওখানে যাবে?”
 
বড়বাবুর বয়স হয়েছে। অবসর নেবেন এক বছর পরে। প্রতিটি বাক্যে দু’বার স্যার বলেন। তিনি মুখ খোলার আগেই ছোটসাহেব বললেন, “আপনি যখন ইংরেজি লেখেন, তখন একটাও ভুল পাওয়া যায় না। কিন্তু মুখ খুলেই তো-তো করে ভুল ইংরেজি বলেন! আপনি ধীরে ধীরে কথা বলুন।”

বড়বাবু পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে চোখে চশমা এঁটে পড়তে লাগলেন, “স্যার, এই চা-বাগান থেকে গাড়ি করে ওদের শিলিগুড়ি স্টেশনে যেতে হবে। সেখান থেকে ট্রেনে করে বারসই হয়ে বিহারের ট্রেন ধরে মহুয়ামিলন স্টেশনে নামতে হবে। মহুয়ামিলনে ছোট-বড় হোটেল আছে। সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে একশো মাইলের মধ্যে আদিবাসীদের বিভিন্ন গ্রামে পৌঁছে যাওয়া যাবে।”

“গুড। আপনি ডক্টরের সঙ্গে বসে এই ট্যুরের জন্যে কত খরচ হবে, তার হিসেব করে তার টেন পার্সেন্ট বাড়িয়ে দেবেন। ডক্টর, আমি চাইছি আপনি কালকের মধ্যে টিম তৈরি করে নিয়ে পরশু রওনা হয়ে যান,” বড়ম্যানেজার কথাগুলো বলে উঠে দাঁড়ালেন। যেন আর কিছু বলার বা শোনার নেই।

রাতে কোয়ার্টার্সে ফিরে স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলছিলেন ডাক্তারবাবু। বেশ কিছুদিন ধরে ডাক্তারবাবুর স্ত্রী বলছিলেন, চাকরি ছেড়ে দিয়ে প্র্যাকটিস শুরু করতে। জলপাইগুড়িতে ডাক্তারবাবুর পৈতৃক বাড়ি আছে। পড়াশোনাও সেখানেই করেছেন। ফলে পরিচিতি যে একদম নেই, তা নয়। অতএব জলপাইগুড়ি শহরে থেকে ডাক্তারি করে বেঁচে থাকা খুব সমস্যার হবে না।

ডাক্তারবাবুকে তাঁর স্ত্রী আবার ওই কথা মনে করিয়ে দিলে তিনি বললেন, “এটা তো আমি সহজেই পারি। কিন্তু চা-বাগানের এই কর্মীরা এবং তাদের পরিবারের লোকজন কী অসহায়, তা তো তুমি দেখছ। এদের ছেড়ে চলে যাব?”

“থেকেই-বা তুমি কী করতে পারছ? বলো!”

“প্রকাশ্যে কিছুই পারছি না কিন্তু…”

“তুমি গোপনে ওদের সাহায্য করছ, একথা প্রকাশ পেলে কী হবে তা ভাবতে পারছ?”

“জানি। কিন্তু আমার একটা ব্যাপারে এখন কৌতূহল হচ্ছে। এই যে ম্যানেজার আমাদের যে-উদ্দেশ্যে পাঠাতে চাইছেন, তার পাশাপাশি আমি এইসব মানুষের আত্মীয়রা, যারা ওখানে থেকে গিয়েছে, তাদের সঙ্গে কথা বলতে চাই। না-গেলে আমি সেই সুযোগ পাব না।”

“তুমি ম্যানেজারের অর্ডার মেনে নেবে?”

“এই অর্ডার মেনে নিলে যদি আমার অনকেদিনের কৌতূহলের নিরসন হয়, তা হলে তা মেনে নিতে আমার আপত্তি নেই,” ডাক্তারবাবু হাসলেন।

চা-বাগানের বড়বাবু হাসপাতালে এলেন পরের দিন সকালে। বললেন “গুড মর্নিং ডাক্তারবাবু! আসতে পারি?”

“নিশ্চয়ই। বসুন।”

উলটোদিকের চেয়ারে বসে একটা কাগজ এগিয়ে দিলেন বড়বাবু, “এই নিন। এই কাগজে সমস্ত ইনফরমেশন ডিটেলস লিখে দিয়েছি। কিন্তু আমি চেষ্টা করেও মহুয়ামিলনের কোনও হোটেলের নাম পাইনি। আপনাদের যেতে এবং আসতে প্রায় পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচদিন সময় লাগবে। বড়সাহেব চাইছেন ওখানে অন্তত পাঁচদিন থেকে সব তথ্য সংগ্রহ করে আনুন।”

“এই যে প্রায় এগারোদিন ধরে পাঁচজন মানুষ যাবে, থাকবে, ঘুরবে এবং ফেরার সময় আরও দু’জন সংখ্যায় বাড়বে, তাদের যাওয়া-আসা, থাকা-খাওয়ার খরচ কত পড়বে, তার হিসেব করেছেন?” ডাক্তারবাবু জিজ্ঞাসা করলেন।
 
“ডাক্তারবাবু, গতকাল সন্ধ্যায় অর্ডার পেয়েছি। এত অল্প সময়ের মধ্যে সবটা করে উঠতে পারিনি। আপনাকে বিকেলের আগেই দিয়ে দেব,” বড়বাবু মাথা নাড়লেন, “আপনি যাদের সঙ্গে নিয়ে যাবেন তাদের ঠিক করেছেন?”

ডাক্তারবাবু বললেন, “আপনি ঠিক করে দিন না!”

“তা দিতে পারি। কিন্তু ছেলেগুলো কি কমবয়সি হলে ভাল হবে! ওরা তো দেশের কথা শুনেছে বলে মনে হয় না!”

“কমবয়সি নয়। একজন প্রৌঢ়, একটু শক্তসমর্থ বৃদ্ধ হলে ভাল হয়। বাকিরা বিভিন্ন বয়সের। আর হ্যাঁ, সবাই ছেলে না-হয়ে একজন মেয়ে দলে থাকলে সুবিধে হবে। ওখানকার মেয়েদের সঙ্গে কথা বলতে পারবে,” বলতে বলতে মাথা নাড়লেন ডাক্তারবাবু।

“কিন্তু একজন মেয়ে দূরদেশে ছেলেদের সঙ্গে যেতে কি রাজি হবে? অল্পবয়সি হলে তার বাবা বা স্বামী ছাড়বে না। বেশি বয়সিদের নিয়ে যাওয়া ঠিক হবে না, সমস্যা হবে। দু’জন মেয়ে হলে তবু…”

“তা হলে দু’জনেই যাক। দু’জন ছেলে আর দু’জন মেয়ে। এক কাজ করুন, আমাদের হাসপাতালে এতোয়ারি নামে যে-মেয়েটি কাজ করে, তার স্বামী সঙ্গে থাকে না। ওকে নিতে পারেন। আর ওর সঙ্গে আর-একজনকে বেছে নিন। দেরি না-করে এখনই ঠিক করবেন, সঙ্গে ছেলেদুটোকেও,” ডাক্তারবাবু কথা শেষ করলেন।

কিন্তু যাও বললেই যাওয়া যায় না। পাশের চা-বাগানের এক বাঙালিবাবুর কলেজে পড়া ছেলেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে এসেছিল। ছেলেটি নাকি দেশদ্রোহী। সে পুলিশের কাছে ধরা দিতে চায়নি। পালিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের গুলিতে সে মারা গিয়েছে।

ছেলেটিকে এলাকায় সবাই পছন্দ করত। তার মৃত্যুর খবর পাওয়ামাত্র হাটের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। বাগানের মালিক সাহেব কোম্পানি বলে কর্মচারীরা কাজ করতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু মানুষ অসন্তুষ্ট হয়েছে। অসম থেকে যে-ট্রেন আসে এবং অসমে যায় তা অর্ধেকদিন বন্ধ রাখতে হয়েছিল। আর এই কারণে বড়সাহেব তার প্রতিনিধিদের যাত্রা কয়েকদিন পিছিয়ে দিলেন।

এতে লাভ হল ডাক্তারবাবুর। চা-বাগানে বইপত্র পছন্দসই পাওয়া যায় না। কিছু বই সংগ্রহ করলেন, কিন্তু তাতেও খুব একটা কাজ হল না। চা-বাগানের কাজে খাবারের লোভ দেখিয়ে নিয়ে আসা শ্রমিকদের ইতিহাস সেসব বইয়ে তেমনভাবে নেই। দু’জন বৃদ্ধ যারা একসময় বালক বয়সে এসে চা-বাগানের কাজে সারা জীবন কাটিয়েছে, তাদের সঙ্গে কথা বললেন তিনি। তারা স্মৃতি হাতড়ে যেটুকু বলতে পেরেছিল, তা জড়ো করে ডাক্তারবাবু বুঝলেন, ওরা বাবা-মায়ের সঙ্গে দলে দলে গ্রাম ছেড়ে বহু পথ হেঁটে একটা জায়গায় পৌঁছেছিল, যেখানে পেটকাটা গাড়ি রেল ইঞ্জিনের পেছনে সার দিয়ে দাঁড়িয়েছিল। সেই ওয়াগনে বাবা মায়ের নাম লিখে সবাইকে তোলা হয়েছিল। জায়গাটার নাম তারা জানে না। হয়তো বাবা-মা জানত। ডাক্তারবাবু জিজ্ঞাসা করেছিলেন, গ্রাম থেকে ওই জায়গায় পৌঁছতে তাদের কতটা সময় লেগেছিল। দু’জন দু’রকম উত্তর দিয়েছিল। কেউ বলেছিল দু’দিন, কেউ বলেছিল একদিন। তবে দু’জনে একটা বিষয়ে একই কথা বলেছে। যারা বিভিন্ন গ্রাম থেকে এসেছিল, তাদের সবাইকে ইংরেজদের আড়কাঠিরা নিয়ে আসেনি। বিশেষ করে বৃদ্ধবৃদ্ধা এবং অভিভাবকহীন শিশুদের বাধ্য করা হয়েছিল থেকে যেতে। ওরা চোখের জল ফেললেও কাজ হয়নি।

ডাক্তারবাবু খুশি হলেন। সেই বৃদ্ধরা এতদিন পরে বেঁচে থাকতে পারে না। কিন্তু বালক-বালিকা, শিশু, হয়তো কিশোর-কিশোরীদের কেউ কেউ নিশ্চয়ই বেঁচে আছে। তাদের খুঁজে বের করে কথা বলতে হবে। ডাক্তারবাবু ভাবলেন, যখন ওদের পূর্বপুরুষদের চা-বাগানের কাজে নিয়ে আসা হয়েছিল, তখন যাতায়াতের ব্যবস্থা খুব খারাপ ছিল। কিন্তু তার পরে তো অনেক পরিবর্তন হয়েছে। ওইসব গণ্ড পাড়াগাঁ থেকে আসা-যাওয়ার পথের চেহারা কি বদলায়নি?
 
বিকেলবেলায় বড়বাবু হাসপাতালে এলেন। পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে বললেন, “খুব ভাল হল যাত্রার দিন পিছিয়ে যাওয়ায়।”

ডাক্তারবাবু তাকালেন। বড়বাবু বললেন, “ওঠ ছুঁড়ি তোর বিয়ে হয়ে যাচ্ছিল,” এখন একটু ধীরেসুস্থে কাজ করা যাবে। বড়সাহেব জিজ্ঞাসা করছিলেন, কত টাকা দিলে আপনাদের ওখান থেকে ঘুরে আসতে অসুবিধে হবে না? আমি হিসেব করে একটু বেশি বলেছি। ট্রেনভাড়া বাদ দিয়ে তিনশো টাকা। ঠিক আছে?”

“ব্যাপারটা আমার চেয়ে আপনি ভাল বুঝবেন,” ডাক্তারবাবু বললেন।

“ম্যানেজার সাহেব বলেছেন, আপনার জন্যে সব ব্যবস্থা আলাদা করতে।”

“আপনি এখান থেকে ওসব আলাদা করবেন কী করে? আমার ওপর ছেড়ে দিন।”

“ঠিক কথা। আচ্ছা, আপনার সঙ্গে যারা যাবে তাদের একজনের নাম আপনি বলেছিলেন। বাকিদের কথা চিন্তা করেছেন?” বড়বাবু জিজ্ঞাসা করলেন।

“না। তা ছাড়া ওই মেয়েটি তো যেতে রাজি না-ও হতে পারে। আপনি বরং ওর সঙ্গে কথা বলে দেখুন,” ডাক্তারবাবু খবর পাঠালেন, এতোয়ারি যেন এখনই এসে দেখা করে।

বড়বাবু বললেন, “দুটি লোককে আমি ভেবেছি। আপনি কথা বলে দেখুন, একজন ফ্যাক্টরিতে কাজ করে, অন্যজন বড়সাহেবের বেয়ারা। দু’জনেই বেশ চটপটে। বেয়ারা এক-আধটা ইংরেজি শব্দ জানে। আচ্ছা, যদি এই মেয়েটি রাজি হয়ে যায় তা হলে ওকেই দায়িত্ব দিন না, যে ওর সঙ্গে যাবে সেই মেয়েকে বেছে নিতে।”

এতোয়ারি দরজায় এসে দাঁড়াল। মুখে কৌতূহল।

ডাক্তারবাবু বললেন, “ভেতরে এসো। শোনো, আমাদের বড়সাহেবের ইচ্ছে, তোমরা যারা চা-বাগানে কাজ করো, তাদের পূর্বপুরুষরা যেখান থেকে এসেছে, সেই জায়গাটা তোমরা কয়েকজন দেখে এসে কীরকম লাগল তা সবাইকে বলো। দু’জন ছেলের সঙ্গে দু’জন মেয়ে এই দলে থাকবে। মেয়েদের একজন হিসেবে তোমাকে ভাবা হয়েছে।”

বড়বাবু বললেন, “তোমরা চারজন এখান থেকে শিলিগুড়ি গিয়ে ট্রেনে চেপে তোমাদের পূর্বপুরুষের দেশে যাবে। আমাদের ডাক্তারবাবু তোমাদের নিয়ে যাবেন। উনি যা বলবেন তাই তোমাদের করতে হবে, ওঁর কথামতো চলতে হবে। এখন বলো, তুমি যেতে রাজি আছ তো?”

একটু সময় নিল এতোয়ারি। দুটো মানুষ তার দিকে তাকিয়ে আছে। যাদের সঙ্গে অন্য সময় সে কথা বলতে সাহসই পেত না।

ডাক্তারবাবু বিরক্ত হলেন, “কী হল? অসুবিধে থাকলে বলো।”

এতোয়ারি জিজ্ঞাসা করল, “ওখানে গিয়ে কী করতে হবে?”

“ওখানে তোমার পূর্বপুরুষের আত্মীয়রা আছে। তাদের সঙ্গে কথা বলবে। কী কথা বলবে তা আমি পরে বলে দেব,” ডাক্তারবাবু বললেন।

“আর কোনও মেয়ে সঙ্গে থাকবে তো?”

“হ্যাঁ থাকবে।”

মাথা নিচু করল এতোয়ারি, “আপনি হুকুম করছেন, আমি যাব।”

“তা হলে আর-একটা কাজ করো। তোমার পছন্দমতো আর-একজন মেয়েকে সঙ্গে নাও। তাকে কাল সকালে নিয়ে আসবে,” বড়বাবু বললেন।
 
এবার মাথা নাড়ল এতোয়ারি, “আমি যাদের চিনি তাদের স্বামী বা বাবা একা যেতে দেবে না,” তারপর একটু নিচু স্বরে বলল, “আমার মতো কেউ নেই।”

বড়বাবু বললেন, “ঠিক কথা। কী করা যায়! এই মেয়েটিকে একা পাঠালে ওকে নিয়ে নানা কথা রটবে,” বলতে বলতেই মনে পড়ে গেল বড়বাবুর। এতোয়ারির দিকে একবার তাকিয়ে নিয়ে বললেন, “একটি মেয়ে আছে, যেতে রাজি হলে বাবা-মা-স্বামী কোনও সমস্যা করবে না। কারণ, তারা কেউ নেই। তবে মেয়েটা চা-বাগানে কাজ করে না, এটাই মুশকিল।”

“কে? ওর পূর্বপুরুষ কি ওদেশ থেকে এসেছিল?”

“হ্যাঁ ডাক্তারবাবু। জ্বরজারি হলে আপনার কাছে নিশ্চয়ই ওষুধ নিতে এসেছে। মেয়েটার নাম পুষি। আমাদের চা-বাগানের বাউন্ডারির বাইরে যে-কয়েকটা ঝুপড়ি আছে, তার একটায় থাকে। তিরিশ-বত্রিশের বেশি বয়স না।”

ডাক্তারবাবু বললেন, “হ্যাঁ, অল্প বয়সে পুষি চা-বাগানে কাজ করত। কিন্তু ওই মেয়েটার তো বেশ দুর্নাম আছে বলে শুনেছি।”

“থাক না। বড়সাহেব যে জন্যে পাঠাচ্ছেন, সেই কাজটা ঠিকঠাক করে এলে আমাদের অসুবিধে কোথায়! ওর সঙ্গে আজই কথা বলা দরকার।”

“হ্যাঁ, বলুন। এমন তো হতে পারে, পুষি যেতে রাজি হবে না। আপনি তো ওকে জোর করে পাঠাতে পারবেন না,” ডাক্তারবাবু এতোয়ারির দিকে তাকালেন, “পুষিকে নিশ্চয়ই চেনো। ও যদি সঙ্গে যায় তা হলে তোমার কি অসুবিধে হবে?”

একটু ভাবল এতোয়ারি। তারপরে মাথা নেড়ে না বলল।

বিকেলে চেম্বারে এসে বসতেই ছোট নার্স সামনে এসে বলল, “পুষিকে কি আপনি দেখা করতে বলেছেন স্যার?”

“পুষি? ও হ্যাঁ, হ্যাঁ। আমার কাছে নয়, বড়বাবুর সঙ্গে দেখা করতে বলো।”

“পুষি বলছে বড়বাবু নাকি ওকে আপনার কাছে পাঠিয়েছেন।”

“ও। ডাকো ওকে।”

ছোট নার্স যাকে ঘরে নিয়ে এল, তার শুধু চেহারা নয়, হাঁটাচলাতেও চটক আছে। ছোট নার্স বলল “এর নাম পুষি।”

“এটাই কি তোমার ভাল নাম?”

“তাই তো ছেলেবেলা থেকে শুনেছি। চার্চের জন্য অবশ্য আর-একটা নাম ছিল, সে নাম বললে কেউ চিনতে পারবে না,” পুষি হাসল।

মেয়েটাকে ভাল করে দেখলেন ডাক্তারবাবু। বয়স আন্দাজ করা খুব কঠিন, তবে অন্য সব শ্রমিক পরিবারের মেয়েদের মতো শরীরটাকে অবহেলায় ফেলে রাখে না। ডাক্তারবাবু জিজ্ঞাসা করলেন, “কেন তোমাকে আজ ডাকা হয়েছে তা নিশ্চয়ই বড়বাবু বলেছেন?”

পুষি হাসল, “হ্যাঁ। বলেছেন অনেক দূরে রেলগাড়িতে চড়ে যে-দল যাবে, আমাকে সেই দলে থাকতে হবে। আর-একটা মেয়েও নাকি দলে থাকবে।”

“হ্যাঁ। আমরা দশ দিনের মধ্যে ফিরে আসব,” ডাক্তারবাবু বললেন।

“আপনি যাবেন তো?”

“হ্যাঁ, যাব।”

“আমার যেতে খুব ইচ্ছে করছে, কিন্তু…” থেমে গেল পুষি।

ডাক্তারবাবু তাকালেন, কপালে ভাঁজ পড়ল।

“বলতে লজ্জা করছে…”

ডাক্তারবাবু তাকিয়ে থাকলেন, কথা বললেন না।

“এতদিন থাকব না,” চোখের কোণে তাকাল পুষি, “খরচ আছে। আপনারা কি সবাইকে শুধু শুধু বেড়াতে নিয়ে যাচ্ছেন, না টাকাও দেবেন?”

“তোমার কথা তো আমি ম্যানেজার সাহেবকে বলব। আর কেউ তো টাকা চায়নি। অবশ্য এটাও সত্যি, সবাই বিনা পারিশ্রমিকে যাবে কেন! হ্যাঁ, তোমার সঙ্গে এতোয়ারির পরিচয় আছে?”

“এতোয়ারি?”

“যে-মেয়েটি এখন এই হাসপাতালে কাজ করে।”

“ও। যে-মেয়েটার চোখের ওপরে বিরাট আব ছিল? হ্যাঁ, তাকে দেখেছি। কারও সঙ্গে মেশে না বলে শুনেছি। কেন?”

“এতোয়ারি দলের সঙ্গে যাচ্ছে। তুমি যদি যাও, তা হলে তোমরা দু’জন মেয়ে একসঙ্গে থাকবে!” ডাক্তারবাবু বললেন, “ও এখনও টাকার কথা বলেনি। তোমাকে যদি বড়সাহেব টাকা দেন, তা হলে ওকেও দেওয়া হবে।”

“কী করব বলুন? ওদের তো বাবা-দাদা-স্বামী আছে। আমার তো কেউ নেই। যত খরচ সব আমাকেই মেটাতে হয়,” পুষি হাসল।

“ঠিক আছে। তুমি কাল সকালে এসে খবর নিয়ে যেয়ো বড়সাহেব টাকা দিতে রাজি আছেন কি না । আর হ্যাঁ, একটু দাঁড়াও,” ডাক্তারবাবু এতোয়ারিকে ডেকে পাঠালেন। এতোয়ারি এল। মুখ নিচু করে দাঁড়াল।

ডাক্তারবাবু বললেন, “এতোয়ারি, এই হল পুষি। তুমি নিশ্চয়ই ওকে চেনো। আমাদের সঙ্গে ওর যাওয়ার কথা আছে।”

এতোয়ারি মাথা নাড়ল। পুষি বললে, “ও মা, তোমার কপালে একটা আব ছিল না? সেটা কোথায় গেল?”

এতোয়ারি মুখ তুলল, “ছিল, এখন নেই।”

“বাঃ, আব চলে যাওয়ার পর তোমার মুখ খুব সুন্দর হয়ে গেছে।”

শান্ত গলায় এতোয়ারি বলল, “ডাক্তারবাবু ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।”

“কেটে বাদ দেওয়া হয়েছে বুঝি! অল্পবয়সে করলে ভাল জায়গায় বিয়ে হতে পারত। যার সঙ্গে বাপ-মা বিয়ে দিয়েছিল সে আছে না গেছে!”

“আমার জানা নেই।”

ডাক্তারবাবু দেখলেন পুষি ঠোঁট উলটে কাঁধ নাচাল। তার একটাই মানে, এতোয়ারিকে পুষির এখন পছন্দ হচ্ছে না। ডাক্তারবাবু বললেন, “পুষি, তুমি এখন যেতে পারো।”
 

Users who are viewing this thread

Back
Top