What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected বুকের ঘরে বন্দী আগুন♨️ (2 Viewers)

হাসপাতালের দরজায় ছোট নার্স দাঁড়িয়েছিল। মাকে দেখে চোখ কুঁচকে বলল, “কী হল তোমার? আবার শরীর খারাপ?”

“একটু। মাথা ঘুরছে!” মা দুর্বল গলায় বলল।

“শরীর দুর্বল, ঘরে শুয়ে থাকলে উপকার হত। এলে কেন?”

“ঘরে থাকলে অপকার হত,” বিড়বিড় করল মা।

“কী বললে?” চেঁচিয়ে জিজ্ঞাসা করল ছোট নার্স।

মাথা নাড়ল মা, “কিছু না।”

“ভেতরে গিয়ে বোসো। একটু পরে নাম লেখানো হবে,” ছোট নার্স চলে গেল। এতোয়ারি বলল, “নিজে যেতে পারবে?”

“হ্যাঁ। এখন একটু ভাল লাগছে।”

আজ কাজ করতে করতে কেবলই বুধুয়ার বউয়ের মুখ মনে পড়ছিল। এতদিন যে বুধুয়ার বউ লাইনে থাকত, তা কারও তেমনভাবে নজরে পড়ত না। সেই বউটা ওরকম রুগ্‌ণ শরীর নিয়েও মনের জ্বালা মেটাতে স্বামীকে খুন করে তার টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার পর নিজেকে মেরে ফেলা ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে পারল না। যতই স্বামীকে খুন করুক, আত্মহত্যা করা মানে তো নিজের কাছে নিজের হেরে যাওয়া। আত্মহত্যা না-করলে কী হত ওর? তাকে খুন করতে দেখেছে বলে কেউ সাক্ষী দিলে, পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়ে হয় ফাঁসি নয় সারা জীবন জেলে ঢুকিয়ে রাখত। জেলে ঢুকিয়ে রাখলে তো সে বেঁচে থাকত। তার বদলে বোকার মতো আত্মহত্যা করে ফেলল? কী লাভ হল!

দুপুরে ডাক্তারবাবু কোয়ার্টার্সে চলে যান স্নান-খাওয়া করতে। বিকেলে ফিরে আসেন হাসপাতালে। দুপুরে তেমন কাজ থাকে না। কিচেনে গিয়ে খাওয়ার প্লেট চেয়ে নিতেই এতোয়ারির মনে পড়ল মা না-খেয়ে আছে। সে প্লেট হাতে মাকে খুঁজতে বাইরে এসে হতাশ হল। মা কোথাও নেই। ডাক্তারবাবু যেখানে পেশেন্ট দেখেন, সেখানটা এখন ফাঁকা। মা কোথায় গেল, ভেবে পাচ্ছিল না এতোয়ারি।

সবে সে খাওয়া শেষ করেছে বড় নার্স সামনে এসে দাঁড়ালেন, “তুই তো ডাক্তারবাবুর কোয়ার্টার্স চিনিস!”

এতোয়ারি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলল।

“শোন, এই প্যাকেটটা নিয়ে ডাক্তারবাবুর বাড়িতে দিয়ে আয়,” বড় নার্স বললেন, “তাড়াতাড়ি যাবি। বুঝলি?”

এখন আকাশে হালকা মেঘ। প্যাকেটটা নিয়ে একটু এগোতেই দূরে গাড়ির আওয়াজ হল। নতুন লালমুখো ম্যানেজার প্রায়ই গাড়ি নিয়ে চা-বাগানের ভেতরে ঘুরে বেড়ায়। লোকটির চরিত্র নাকি খারাপ। চাকরিতে যোগ দিয়ে প্রথমেই বাংলোর বয়স্ক মহিলা কর্মচারীদের ছাঁটাই করে অল্পবয়সি মেয়েদের চাকরি দিয়েছে। ক’দিন আগে লোকটা হাসপাতালে এসেছিল। বড় নার্স যখন ওঁর সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখন দূরে দাঁড়ানো এতোয়ারিকে লোকটা ঘুরে ঘুরে দেখছিল। পরে বড় নার্স তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন ছোটসাহেবের বাংলো দেখাশোনার কাজে যেতে রাজি আছিস? এককথায় না বলে দিয়েছিল।

চটপট পাশের চা-বাগানের ভেতর লুকিয়ে পড়ল এতোয়ারি। জিপটা জোরে শব্দ তুলে বেরিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরে আর গাড়ির রাস্তা না-ধরে চা-বাগানের মধ্য দিয়ে হেঁটে ডাক্তারবাবুর বাংলোয় পৌঁছে গেল। ডাক্তারবাবু নিজে দরজা খুলে চারপাশে নজর বুলিয়ে বললেন, “ভেতরে এসো। দেখি প্যাকেটটা!”

দরজা বন্ধ করে প্যাকেটটা টেবিলের ওপর রেখে খুলে দেখলেন। এইসময় ভিতরের দরজায় এসে দাঁড়ালেন ডাক্তারবাবুর স্ত্রী। এতোয়ারির দিকে তাকিয়ে একটু হাসলেন তিনি। তারপর স্বামীকে বললেন, “আর একবার ভেবে দ্যাখো।”

“আমি অমানবিক হতে পারব না। প্লিজ়, তুমি পাশে থাকো,” ডাক্তারবাবু এতোয়ারির দিকে তাকালেন, “আমি এখানে একটা অপারেশন করব। তোমাকে সাহায্য করতে হবে। আর এই অপারেশনের কথাটা বাইরের কেউ যেন না-জানে।”

মাথা নিচু করে এতোয়ারি বলল, “আচ্ছা।”

পাশের ঘরে এল সে ডাক্তারবাবুর পেছন পেছন। একটা চৌকিতে শুয়ে যে-লোকটা ছটফট করছে, তার মুখে কিছু ঢুকিয়ে বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এক ডাক্তারবাবু হিন্দিতে বাংলা মেশানো ভাষায় বললেন, “আর-একটু কষ্ট করুন। একটু পরে কষ্ট অনেক কমে যাবে।”

লোকটা মাথা নাড়ল প্রবলভাবে। ডাক্তারবাবু আলমারি খুলে চামড়ার স্ট্র্যাপ বের করে এনে লোকটার হাতে একটা দিকে বেঁধে অন্য দিকটা চৌকির গায়ে শক্ত করে জড়িয়ে দিয়ে বললেন, “হাসপাতালে গেলে তোমাকে যেটুকু আরাম দিতে পারতাম, এখানে তো তা দিতে পারব না। গুলিটা বের করে দিচ্ছি, দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করো ভাই।”
 
এতোয়ারির নিয়ে আসা প্যাকেট থেকে ইনজেকশন বের করে লোকটির হাতে সিরিঞ্জ ঢুকিয়ে ওষুধ দিতেই ধীরে ধীরে লোকটি শান্ত হয়ে গেল, মাথা একপাশে এলিয়ে পড়ল। এতোয়ারি বুঝতে পারল ওকে অজ্ঞান করা হয়েছে। প্যাকেট থেকে যন্ত্রগুলো বের করে একটা ট্রে-তে রেখে ডাক্তারবাবু তাদের নাম বলে দিলেন। বললেন, “আমি যখন যে যন্ত্র চাইব, সেই যন্ত্র এগিয়ে দেবে। নামগুলো আবার বলব, না মনে থাকবে?”

গোটা চারেক অপারেশন করার ছুরি, কাঁচি, তুলো, ওষুধের শিশি আর ইনজেকশন। এতোয়ারি মাথা নাড়ল, মনে থাকবে। তারপর ডাক্তারবাবু লোকটার ক্ষতস্থানে বাঁধা কাপড়ের ব্যান্ডেজ খুলে সেখানে ওষুধ ঢাললেন। তারপর ছুরি দিয়ে ক্ষতস্থান কেটে ভেতর থেকে একটা ধাতব বস্তু বের করে এনে ভেতরে ওষুধ ঢেলে তুলো চেপে ধরে নতুন ব্যান্ডেজ বেঁধে দিলেন। এরপর অন্য টেবিল থেকে একটা ইনজেকশনের সিরিঞ্জ এনে লোকটার হাতে সুচ ঢুকিয়ে ওষুধ দিলেন। লোকটা এবার একটু নড়াচড়া করল। ডাক্তারবাবু জিজ্ঞাসা করলেন, “আহা, তোমার নামটা যেন কী!”

“এতোয়ারি।”

“হ্যাঁ, এতোয়ারি, তুমি এই লোকটাকে কি কখনও দেখেছ?”

ডাক্তারবাবুর দিকে তাকিয়ে মাথা নেড়ে না বলল এতোয়ারি।

“তুমি যে এখানে এসে লোকটার শরীর থেকে আমাকে গুলি বের করতে দেখলে, তা কাউকে না-বললে খুশি হব,” ডাক্তারবাবু বললেন।

মাথা নিচু করে এতোয়ারি বলল, “ওকে কে গুলি করল?”

“পুলিশ।”

“সে কী!” চোখ বড় হয়ে গেল এতোয়ারির।

“কিন্তু এই লোকটা চোর, ডাকাত, বদমাইশ নয়। ও বিপ্লবী। আমাদের দেশকে ওরা স্বাধীন করতে চায়। আচ্ছা, যারা দেশের স্বাধীনতার জন্যে ব্রিটিশদের সঙ্গে লড়াই করছে, তাদের কথা তুমি শোনোনি?”

কেউ কেউ যে বলাবলি করেনি তা নয়, কিন্তু এদিককার যত চা-বাগানের মানুষ ব্রিটিশদের সঙ্গে লড়াই করছে, এমন কথা এতোয়ারি শোনেনি। এদিককার সব চা-বাগানের মালিক সাদা চামড়ার সাহেবরা, বড় ম্যানেজার থেকে ছোট ম্যানেজারের গায়ের চামড়াও সাদা। ওরা যে সাগরপারের দেশের মানুষ, তা সবাই জানে। লাইনের বুড়োরা বলত, এই চা-বাগানে সাহেবরা এসেছে সাগর পেরিয়ে, বহুদূর থেকে। আর তারা, যারা চা-পাতা তোলে, ফ্যাক্টরিতে কাজ করে তারাও এখানকার মানুষ নয়। তারা এসেছে রেলগাড়িতে চেপে বহু দূরের দেশ থেকে। ওই সাদা চামড়ার মানুষগুলো চাকরির শেষে যে যার নিজের দেশে ফিরে যেতে পারে, তারা পারে না। দেশে ফিরে যাওয়ার রাস্তা যারা জানত, তারা কবে মরে গিয়েছে। আবার এই চা-বাগান যে কারও দেশ হতে পারে না, সেটাও তারা বুঝে গেছে।

“আঃ, আঃ,” লোকটার শরীর নড়ে উঠল। এতোয়ারি দেখল এবার চোখ খুলছে লোকটা।

ডাক্তারবাবু ঝুঁকে লোকটার মুখের বাঁধন খুলে চওড়া ধাতব বস্তু দাঁতের তলা থেকে বের করে বললেন, “আর ভয় নেই। গুলি বের করে দিয়েছি। চুপচাপ কয়েক ঘণ্টা ঘুমিয়ে নিলে ব্যথা কমে যাবে, তার ওষুধ দিচ্ছি।”

লোকটা মুখ খুলল। ওর কথা শুনে এতোয়ারি বুঝতে পারল বাঙালি নয়, মদেশিয়া, মুন্ডা বা ওঁরাও হবে। কাতরে কাতরে লোকটা বলল, “আমি চলে যেতে পারব। আপনার এখানে ধরা পড়লে আপনি বিপদে পড়বেন।”

“ঠিক কথা। কিন্তু যে তোমাকে এখানে রেখে গেছে, সে সন্ধের পরে আসবে। ততক্ষণ তো এখানে থাকতে হবে ভাই। তা ছাড়া এই দিনের আলোয় তোমাকে খুঁড়িয়ে হাঁটতে দেখলে সবাই তাকাবে। তুমি ধরা পড়বেই,” ডাক্তারবাবু বললেন, “কয়েক ঘণ্টা বিশ্রাম নিয়ে তুমি চলে যেয়ো।”

লোকটা মুখ ঘুরিয়ে এতোয়ারিকে দেখল। মুখে ভয় ফুটে উঠল তার, “এই মেয়েটা কে? এ বলে দেবে না তো?”

“ওকে নিয়ে তুমি চিন্তা কোরো না,” ডাক্তারবাবু আর-একটা ইনজেকশন দিলেন লোকটার হাতে। এতোয়ারি দেখল ধীরে ধীরে ঘুমিয়ে পড়ল লোকটা। ব্যবহৃত ওষুধগুলোর খালি প্যাকেট একটা কাগজে মুড়ে ডাক্তারবাবু বললেন, “এগুলো হাসপাতালের ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ো। আর এগুলো বড় নার্সকে ফেরত দেবে,” বড় নার্সের পাঠানো জিনিসগুলো প্যাক করে দিলেন ডাক্তারবাবু।

দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে তিনি বললেন, “আজ তুমি খুব ভাল কাজ করলে। আর হ্যাঁ, বড়রাস্তা দিয়ে না-গিয়ে চা-বাগানের মধ্য দিয়ে হাসপাতালে যাবে। যাও।”

এতোয়ারি কথাগুলোর মানে বুঝতে পারছিল না। তবে কোনও মানুষের সঙ্গে দেখা হলে নানা প্রশ্ন শুনতে হবে, যার উত্তর ডাক্তারবাবু আর ওই লোকটির ক্ষতি করতে পারে, এটা বুঝতে পারল সে।
 
চা-বাগানের মধ্যে ঢুকে পড়ল এতোয়ারি। রাস্তাটি কিছুটা দূরে। কাউকে সেখানে যেতে আসতে দেখলে সে একটু নিচু হয়ে গেলেই হল। কারও নজরে পড়বে না। হঠাৎ বেশ উত্তেজিত হল সে। কাজটা করতে বেশ রোমাঞ্চ বোধ করছে। যদিও দূরের গাড়ি যাওয়ার রাস্তায় এখন কেউ নেই, তবু সে কোনও ঝুঁকি নিচ্ছিল না। গাড়ি না-আসুক সাইকেল চালিয়ে কেউ না-কেউ তো যেতেই পারে। হঠাৎ থমকে গেল এতোয়ারি।

সামনের শেড ট্রি-তে একটা বড় সাপ দোল খাচ্ছে। ওটা যেমন লম্বা তেমনই মোটা। নিচু হয়ে বসে পড়ল এতোয়ারি। দোল খেতে খেতে সাপটা প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়ল চা-গাছের ওপর। সঙ্গে সঙ্গে একটা শেয়াল ছটফটিয়ে দৌড়ে পালিয়ে গেল সেখান থেকে। সাপটা ধীরে ধীরে চা-বাগানের মধ্যে ঢুকে গেল। সতর্ক পায়ে জায়গাটা পেরিয়ে এল এতোয়ারি।

হাসপাতালে ফিরে এসে মাকে দেখতে পেয়ে স্বস্তি হল। সে জিজ্ঞাসা করার আগে মা-ই জিজ্ঞেস করল, “কোথায় গিয়েছিলি?”

“ডাক্তারবাবুর বাড়িতে,” মুখ ফসকে বেরিয়ে এল শব্দ দুটো।

“ওর ঘরে তো বউ আছে, নেই?”

“আছে। না থাকলেই-বা কী হত?”

“কিছু হলে তুই তো জানতেই পারতিস,” মা আবার হাসল।

এই হাসিটা একটুও ভাল লাগল না এতোয়ারির। মা যেন এখন অন্যরকম হয়ে আছে।

বড় নার্সকে প্যাকেট ফেরত দিতেই প্রশ্ন হল, “কে রে?”

সঙ্গে সঙ্গে সতর্ক হল এতোয়ারি, “মানে?”

“কার জন্যে ওগুলো নিয়ে গেলি?”

“জানি না তো। ডাক্তারবাবুর বউ নিয়েছিল।”

“ডাক্তারবাবুর বউ?” খুব অবাক হলেন বড় নার্স। তারপর কিছু ভেবে আর প্রশ্ন করলেন না।

বিকেলে পেশেন্টদের দেখতে এলেন ডাক্তারবাবু, রোজ যেমন আসেন। সঙ্গে দুই নার্স। এতোয়ারি লক্ষ করল তার দিকে ডাক্তারবাবু একবারও তাকালেন না। ডাক্তারবাবু যখন একজন পেশেন্টকে বুকে স্টেথো চেপে পরীক্ষা করছেন, তখন দু’-দুটো গাড়ি এসে হাসপাতালের সামনে দাঁড়াল। গাড়ি দুটো থেকে নেমে এলেন এই চা-বাগানের চিফ অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার এবং পুলিশের পোশাক পরা ভারতীয় অফিসার। অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার গলা তুলে জিজ্ঞাসা করলেন, “হোয়ার ইজ ডক্টর? ডক্টর কিধার?”

ছোট নার্স দৌড়ে বাইরের দরজায় গিয়ে উঁকি মেরে ফিরে এসে উত্তেজিত হয়ে বলল, “সেকেন্ড ম্যানেজার পুলিশকে নিয়ে এসে আপনাকে ডাকছেন।”

ডাক্তারবাবু বড় নার্সকে রোগীর দায়িত্ব দিয়ে বাইরে বেরিয়ে ওঁদের দেখতে পেয়ে বললেন, “গুড আফটারনুন স্যার। আসুন, ভেতরে আসুন।”

চিফ অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার বললেন, “এঁকে নিশ্চয়ই আপনি চিনবেন না। আমিও আজ প্রথম দেখলাম। উনি বাজারহাট পুলিশ স্টেশনের চার্জ নিয়েছেন।”

ডাক্তার বললেন, “গ্ল্যাড টু মিট ইউ।”

তাঁর বাড়ানো হাত আলতো স্পর্শ করে অফিসার বললেন, “আমাদের কাছে খবর আছে একজন ভয়ংকর ক্রিমিনাল এদিকের চা-বাগানগুলোতে শেল্টার নিয়েছে। গত রাতে একটা এনকাউন্টারে ওর শরীরে গুলি লেগেছে বলে আমি রিপোর্ট পেয়েছি। আপনাদের এই হাসপাতালে কোনও অজানা লোক উন্ডেড হয়ে ভরতি হয়েছে?”

মাথা নাড়লেন ডাক্তার, “না, আমার জানা নেই।”

পেছনে দাঁড়ানো ছোট নার্স বলল, “না স্যার। এরকম কেউ আসেনি।”

অফিসার অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজারকে বললেন, “আমি একবার হাসপাতালটা ঘুরে দেখতে চাই। আপনাদের সঙ্গে আসতে হবে না।”

অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার বললেন, “আপনার গাইড হিসেবে এই নার্স গেলে সুবিধেই হবে।”
 
অফিসার ছোট নার্সকে ইশারা করে সামনে যেতে বলে তাকে অনুসরণ করলেন। অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার বললেন, “গুলিতে উন্ডেড হয়ে কেউ হাসপাতালে ভরতি হলে আপনি নিশ্চয়ই জানতে পারতেন!”

“নিশ্চয়ই।”

“আমাদের এদিককার চা-বাগানগুলোতে সো কলড বিপ্লবীদের আসা-যাওয়ার কথা আগে কখনও শুনিনি। আশ্চর্য! এরা আমাদের এদেশ থেকে তাড়াতে চাইছে। আরে, আমরা চলে গেলে দেশটাকে চালাতে পারবে? এই চা-বাগানের কথাই ধরুন, আমরা ম্যানেজাররা যেভাবে বাগানের প্রোডাকশন, অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কড়া হাতে নিয়ন্ত্রণ করি, আমরা চলে গেলে ইন্ডিয়ানরা তা পারবে? ডাক্তার, আমাদের পরে ইন্ডিয়াতে টি ইন্ডাস্ট্রি থাকবে না।”

ডাক্তার কথা বলছিলেন না। সেটা লক্ষ করে অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার জিজ্ঞাসা করলেন, “আমার এই কথাগুলো কি ভাল লাগছে না?”

ডাক্তারবাবুকে উত্তর দিতে হল না। তার আগেই থানার দারোগা ফিরে এলেন, পেছনে ছোট নার্স। অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার জিজ্ঞাসা করলেন, “দেখলেন?”

“নাঃ। পেশেন্টরা বলছে তেমন কাউকে আসতে দেখেনি। আপনাদের এই বাগান না-হোক অন্য বাগানের হাসপাতালে গিয়ে থাকতে পারে।”

মাথা নেড়ে দারোগা বললেন, “ওয়েল, আপনাদের সবাইকে বলছি, অজ্ঞাতপরিচয় কোনও লোক যদি আহত অবস্থায় আসে তা হলে তার চিকিৎসা করা, আশ্রয় দেওয়া মারাত্মক অপরাধ হবে। তেমন কেউ এলে তাকে আটকে রেখে সঙ্গে সঙ্গে থানায় খবর দেবেন।”

অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার বললেন, “অনেক ধন্যবাদ অফিসার। আপনারা আছেন বলেই ব্রিটিশ সাম্রাজ্য এদেশে সুরক্ষিত।”

অফিসার মাথা ঝুঁকিয়ে বললেন, “আই অ্যাম অলওয়েজ অ্যাট ইয়োর সার্ভিস স্যার,” দু’পা এগিয়ে ভদ্রলোক ঘুরে দাঁড়ালেন, “খুব সাবধানে সবাই থাকবেন স্যার। যে-লোকটিকে আমরা খুঁজছি, সে খুব বিপজ্জনক বিপ্লবী। বাঙালি হলে বুঝতাম। কিন্তু লোকটা মদেশিয়া। সন্দেহ করা হচ্ছে ওকে চা-বাগানের শ্রমিকরা শেল্টার দিতে পারে। যদি ধরা পড়ার পরে লোকটা পালাতে চায়, তা হলে ওকে আটকাতে না-পারলে খুন করলেও সরকার আপনাদের পুরস্কৃত করবে। আচ্ছা…” অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজারের হাতের সঙ্গে হাত মিলিয়ে দারোগাবাবু গাড়িতে উঠলেন।

অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার বললেন, “ডক্টর, খুব সাবধানে থেকো। আমরা বাগানের লেবারদের খুশি করার জন্যে একটা কাজ করার কথা ভাবছি। সেটা করতে পারলে এই বাগানের কুলিলাইন শান্ত থাকবে।”

ডাক্তারবাবু যখন একা তাঁর চেয়ারে বসে ভাবছেন তখন বড় নার্স কাছে এসে নিচু গলায় জিজ্ঞাসা করলেন, “ও কি চলে যেতে পেরেছে?”

ডাক্তারবাবু বললেন, “জানি না।”

“আপনার কাছে আমি কৃতজ্ঞ হয়ে থাকলাম স্যার।”

“এসব কথা থাক।”

“আপনি যদি সাহায্য না-করতেন তা হলে ও মরে যেত।”

“ঠিক আছে। এসব কথা থাক,” ডাক্তারবাবু নিচু স্বরে বললেন, “ওর কথা তুমি হাসপাতালের কাউকে বলোনি তো?”

“না। শুধু এতোয়ারি জানে। মনে হয় ও কাউকে বলবে না। একটু পরে ওকে নিয়ে যেতে লোক আসবে। অন্ধকারে বেরিয়ে যেতে পারবে।”

“তুমি বলেছিলে ও তোমার ভাই হয়…”

“হ্যাঁ। আমার মামার ছেলে। ওর নাম নোয়াম, তাই বলেছে তো?”

মাথা নাড়লেন ডাক্তারবাবু।

কিন্তু তাঁর খুব স্বস্তি হচ্ছিল না। সাধারণত কেউ খুন না-হলে চা-বাগানে পুলিশ আসে না। শ্রমিকদের মধ্যে মারামারি হয়েছে, রক্ত ঝরেছে তবু পুলিশ আসেনি, ক্ষুব্ধ শ্রমিকরাই থানায় গিয়েছে। আজ থানার বড়বাবু সটান চলে এলেন চা-বাগানে, হাসপাতালে ঢুকে আহত লোকটির খোঁজ নিলেন, এর পেছনে নিশ্চয়ই ওপর মহলের চাপ আছে। দশটা খুনিকে ধরলে হয়তো একটু বেতনবৃদ্ধি হয়, কিন্তু একজন বিপ্লবীকে ধরলে চাকরিতে প্রোমোশনের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়। বিশেষ করে সেই বিপ্লবী যদি যদি কোনও ইংরেজকে আহত বা খুন করে থাকে, তা হলে কথাই নেই। ডাক্তারবাবু চিন্তিত হলেন।
 
এই তল্লাটে হাতে গোনা কয়েকজন ডাক্তার আছেন। তাঁদের অধিকাংশই বিভিন্ন চা-বাগানের কর্মী। একশো মাইলের মধ্যে গুনলে তিনজনের বেশি হবে না। চা-বাগানের বাইরে গঞ্জের মানুষদের চিকিৎসার জন্যে দু’জন আধা ডাক্তার আছেন। এঁদের সবাই এখন নিশ্চয়ই পুলিশের নজরে পড়েছেন। ডাক্তারবাবুর মনে হল, তাঁর কোয়ার্টার্সের ওপর পুলিশের লোক নজর দিচ্ছে না তো!

এতোয়ারি দরজায় এসে দাঁড়িয়ে তাঁকে নমস্কার জানাল। প্রতিদিন ছুটির পরে ঘরে ফেরার আগে সে এটা করে। ডাক্তারবাবু মাথা নাড়লেন, মুখে কিছু বললেন না। তারপরই তাঁর খেয়াল হল। বললেন, “তুমি একবার আমার কোয়ার্টার্সে যেতে পারবে?”

“কিছু আনতে হবে?” এতোয়ারি জিজ্ঞাসা করল।

“না, আনতে হবে না, তুমি তো এখন লাইনে ফিরে যাচ্ছ?”

“হ্যাঁ। মাকে নিয়ে ফিরে যাব।”

“ও। তা হলে থাক,” ডাক্তারবাবু উঠে দাঁড়ালেন।

“বলুন না। আমার কোনও অসুবিধে হবে না,” এতোয়ারি বলল।

একটু ভাবলেন ডাক্তারবাবু। মেয়েটাকে বিশ্বাস করা যেতে পারে। নোয়ামের পা থেকে গুলি বের করতে দেখেও যে হাসপাতালে ফিরে এসে কাউকে সেকথা বলেনি। কিন্তু এখন অন্য কোনও পথ তাঁর সামনে নেই। ভেবেছিলেন পুলিশ এই বাগানে নজর দেবে না। বাগান পত্তন হওয়ার পর থেকে কখনও কোনও ব্যাপারে পুলিশকে এখানে নাক গলাতে হয়নি। সাধারণ অপরাধগুলোর ব্যাপারে বড় ম্যানেজার যা সিদ্ধান্ত নিতেন, তাই সবাই মেনেছে এতকাল। এখন দিন বদলাচ্ছে। দশ বছর আগে কেউ কি ভেবেছে সাদা চামড়ার মানুষগুলোকে এই দেশ থেকে তাড়ানোর জন্য কালো চামড়ার ভারতীয়রা মরিয়া হয়ে উঠবে? এই ব্যাপারে বাঙালি, বিহারি, মদেশিয়া, ওঁরাও এক হয়ে যাবে!

ডাক্তারবাবু বললেন, “তুমি তোমার মাকে নিয়ে আমার কোয়ার্টার্সে যাও। আমার স্ত্রীকে বলবে আমি তোমাদের পাঠিয়েছি। আমি না-ফেরা পর্যন্ত তোমরা অপেক্ষা করবে।”

মাথা নেড়ে চলে গেল এতোয়ারি।

রাতের বেলায় হাসপাতালের সব ঠিকঠাক থাকবে কি না নজর বুলিয়ে যখন কোয়ার্টার্সে ফেরার জন্যে ডাক্তারবাবু পা বাড়িয়েছেন, তখন বড়সাহেবের গাড়ি হেডলাইট জ্বালিয়ে সামনে এসে দাঁড়াল।

হুডখোলা গাড়ির জানলা থেকে মুখ বের করে বড়সাহেব বললেন, “গুড ইভনিং, ডক্টর। হসপিটালে কোনও প্রবলেম নেই তো?”

“গুড ইভনিং স্যার। সব ঠিক আছে,” হাসলেন ডাক্তারবাবু।

“উঠে এসো। তোমাকে আজ হাঁটতে হবে না। আমি নামিয়ে দিচ্ছি।”

গাড়িতে উঠে বসলেন ডাক্তারবাবু। গাড়ির ইঞ্জিন চালু করে বড়সাহেব বললেন, “তুমি নিশ্চয়ই শুনেছ আমাদের এই দেশ থেকে তাড়াতে যে-আন্দোলন শুরু হয়েছে, তার ছোঁয়া ডুয়ার্সের চা-বাগানগুলোতে লেগেছে। অথচ দ্যাখো, ব্রিটিশরা যদি এই অঞ্চলে চা-বাগান তৈরি না-করত, তা হলে জায়গাটা জন্তু জানোয়ারদের রাজত্ব হয়ে থাকত। স্বাধীনতা আন্দোলন, সাহেব খুন করে দেশ স্বাধীন করবে। নিজের দাঁড়ানোর ক্ষমতা নেই অথচ দৌড়োবার স্বপ্ন দেখছে। তুমি কি শুনেছ একজন ম্যানেজারকে গুলি করে মারতে গিয়ে তার ড্রাইভারকে ওরা মেরে ফেলেছে? যে-লোকটা মারা গেল সে কী দোষ করেছিল? বলো!”

ডাক্তারবাবু মাথা নাড়লেন, কথা বললেন না।

“অথচ দ্যাখো ডক্টর, চা-বাগানে কাজ পেয়ে যারা দু’বেলা খেতে পাচ্ছে, আরামে থাকছে তাদের পূর্বপুরুষরা বিহারে কীভাবে বেঁচে ছিল, তা নিশ্চয়ই ওরা জানে না,” অন্ধকার চা-বাগানের মাঝখান দিয়ে গাড়ি চালাতে চালাতে বড়সাহেব কথা বলছিলেন। হঠাৎ গাড়ির হেডলাইটের আলোয় কিছু চোখে পড়ায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে বললেন, “দেখতে পাচ্ছ?”
 
ডাক্তারবাবু দেখতে পেলেন। একটা চিতাবাঘ ঠিক রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে এদিকে তাকিয়ে আছে। গাড়ির হেডলাইট পছন্দ না-হওয়ায় চিতাবাঘ পাশের জঙ্গলে ঢুকে গেল।

বড়সাহেব বললেন, “আমি যখন প্রথম এই চা-বাগানে চাকরি করতে এসেছিলাম, তখন বাঘের সংখ্যা অনেক বেশি ছিল। সেটা তিরিশ বছর আগের কথা। যাকগে, আমার মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয়, আমাদের কুলিলাইনের কিছু মানুষকে ওদের পূর্বপুরুষের দেশে পাঠাই। গিয়ে দেখে আসুক, সেখানে ওদের আত্মীয়রা কেমনভাবে বেঁচে আছে,” হাসলেন ম্যানেজার, “অবশ্য তারা যদি এখনও বেঁচে থাকে তবেই জানা যাবে।”

ডাক্তারবাবু হেসে ফেললেন। বড়সাহেব জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনি হাসছেন?”

“হাসছি কারণ, ছেলেবেলায় পড়েছিলাম, সবকিছু আবার গোড়ায় ফিরে যায়। আপনি যা ভেবেছেন তা সত্যি অভিনব। যারা যাবে, তারা ফিরে এসে পূর্বপুরুষের দেশের গল্প শোনাতে পারবে।”

“ঠিক তাই। তখন এরা কমপেয়ার করতে পারবে ওখানে থাকলে সুখে থাকত না, এখানে সুখে আছে। বড়সাহেব বললেন, “এটা দেখলে স্বাধীনতার ভূত আর মাথায় উঠবে না।”

ক্রমশ গাড়ি চা-বাগান ঘেঁষা কোয়ার্টার্সগুলোর সামনে পৌঁছে গেল। ডাক্তারবাবু বড়সাহেবকে ধন্যবাদ জানালে তিনি গাড়ি ঘুরিয়ে চলে গেলেন। এখনও অন্ধকার হালকা, খানিকটা দূরের গাছপালা ভাল দেখা যাচ্ছে না। ডাক্তারবাবুকে দেখে একটা লোক এগিয়ে এল, কপালে আঙুল ছুঁইয়ে বলল, “সেলাম ডকদর সাব। আপনি এসে গিয়েছেন এবার আমি যেতে পারি।”

“তুমি কী করছিলে এখানে?”

“অর্ডার ছিল, বাইরের লোক এখানে লুকিয়ে আছে কি না তা দেখা। রাত্রে বাঘের ভয়ে কেউ আসবে না। দিনের বেলাতেও কেউ আসেনি,” কপালে আঙুল ছুঁইয়ে লোকটা বড়রাস্তা ধরে চলে গেল।

বাইরের দরজায় শব্দ করতেই ডাক্তারবাবুর স্ত্রী দরজা খুলে বললেন, “এসো। চা হয়ে গিয়েছে।”

ভিতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে ডাক্তারবাবু নিচু গলায় জিজ্ঞাসা করলেন, “যে-মেয়েটি দুপুরে এসেছিল, সে কি ওর মাকে নিয়ে এসেছে?”

“এসেছিল। আবার চলেও গিয়েছে।”

“সে কী! ওকে যে আমি থাকতে বলেছিলাম।”

“শুনেছি। কিন্তু আমি ওদের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি। অযথা ওদের বিপদে ফেলে কী হবে। মেয়েটা কিন্তু খুব সিরিয়াস ধরনের!”

“কীরকম?”

“বলে গেছে ও পেছনের নদীর ধারে রাত দশটা পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। যদি দরকার হয়ে ওকে…”

“বাঃ,” ডাক্তারবাবু ভেতরের ঘরে ঢুকে দেখলেন হারিকেন জ্বলছে। তাঁদের বসার এবং শোওয়ার ঘরগুলোতে হ্যাজাক জ্বলে। নদীর স্রোত থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে শুধু ফ্যাক্টরির ইঞ্জিন চালানো হয়। শোনা যাচ্ছে, খুব শিগগির শক্তিশালী ডায়নামো এনে ম্যানেজারদের বাংলো, বাবুদের কোয়ার্টার্সে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। ডাক্তারবাবু লোকটাকে দেখলেন। খাটের পাশে টুলের ওপর বসে আছে।

ডাক্তারবাবুকে দেখেই নোয়াম কপালে আঙুল ছুঁইয়ে নমস্কার জানাল।

“কেমন আছ এখন?”

“খুব ব্যথা, তবে আগের চেয়ে ভাল। আমাকে যে পৌঁছে দিয়েছিল, সে কি এসেছে? আমি একা হেঁটে যেতে বোধহয় পারব না,” নোয়াম বলল।

“না। এলেও আমার সঙ্গে দেখা করেনি,” ডাক্তারবাবু বললেন।

“ওঃ,” নোয়ামের মুখে হতাশা ছড়িয়ে গেল।

“চিন্তা কোরো না। নিশ্চয়ই আসবে। কিছু খেয়েছ?”

“হ্যাঁ, মা চা দিয়েছেন। চা আর মুড়ি।”

পকেট থেকে কতগুলো ট্যাবলেট বের করে নোয়ামকে দিলেন ডাক্তারবাবু, “এখন একটা ট্যাবলেট খেয়ে নাও। আর-একটা রাতের খাবার খেয়ে খাবে। মনে হয়, দু’দিনেই তুমি অনেকটা ঠিক হয়ে যাবে।”

শুনে নোয়াম হাসল। ডাক্তারবাবু সেটা লক্ষ করেও কিছু বললেন না।

নোয়াম বলল, “আমার পক্ষে তো বেশি দূরে হেঁটে যাওয়া সম্ভব হবে না, কেউ যদি না-নিতে আসে, তা হলে আমি কী করব ভেবে পাচ্ছি না!”
 
“তুমি যে আমার এখানে আছ, তা তোমার দলের লোকেরা নিশ্চয়ই জানে। তারা নিশ্চয়ই তোমাকে নিরাপদে নিয়ে যাবে। তবে তোমার খোঁজে এই বাগানেও পুলিশের চর ঘুরে বেড়াচ্ছে, তাই যত তাড়াতাড়ি এখান থেকে বেরিয়ে যেতে পারো তত ভাল।”

ডাক্তারের কথা শেষ হতেই একটা হুইসলের আওয়াজ ভেসে এল। পর পর দু’বার।

সঙ্গে সঙ্গে নোয়াম উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করল, “আমি এবার যেতে পারি।”

“ওই শব্দ কি তোমার দলের লোক করল?”

“হ্যাঁ।”

“কিন্তু তুমি তো হেঁটে যেতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না। অপেক্ষা করো, ওরা নিশ্চয়ই এখানে এসে তোমাকে নিয়ে যাবে,” কথাগুলো বলে ডাক্তারবাবু ভেতরে চলে গেলেন।

কিন্তু মিনিট দশেকের মধ্যেও কারও সাড়া পাওয়া গেল না। আধঘণ্টা পরে ডাক্তারবাবু যখন সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না, তখন উঠোনের পেছনের দরজায় শব্দ হল। ডাক্তারবাবুর স্ত্রী ভেতরের বারান্দায় গিয়ে চাপা গলায় জিজ্ঞাসা করলেন, “কে?”

“আমি!” কাঁপা স্বর বেরিয়ে এল মহিলাকণ্ঠ থেকে। ডাক্তারবাবুর স্ত্রী টর্চ জ্বাললেন, “এ কী! তুমি?”

পায়ে পায়ে এতোয়ারি সামনে এসে দাঁড়াল, “আমি।”

“ওহ! কী ব্যাপার? এত রাতে কেন ফিরে এলে?”

“ডক্টরসাব এসেছেন?”

উত্তর দিতে হল না। তার আগেই ডাক্তারবাবু বেরিয়ে এলেন, “কী হয়েছে?”

“ওকে নদীর ধারে নিয়ে যেতে বলল,” এতোয়ারি বলল।

“কে বলল?”

“ওর বন্ধু। এদিকে আসতে ভয় পাচ্ছে। বলল, ওকে শাড়ি পরিয়ে নিয়ে গেলে বিপদ হবে না। বলল, তাড়াতাড়ি করতে।”

“তোমাকে কি লোকটা চেনে?”

“না। বড় নার্স ওকে নিয়ে আমার কাছে এসেছিলেন। বললেন, লোকটা এখানে এলে বিপদ হতে পারে। আমি যদি নদীর ধারে পৌঁছে দিই, ও লাইনের পাশ দিয়ে নিয়ে যেতে পারবে,” এতোয়ারি বলল।

ডাক্তারবাবুর স্ত্রী জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি যে-কাজটা করতে এসেছ, তার জন্যে পুলিশ তোমাকে ধরে জেলে ঢুকিয়ে দিতে পারে, তা কি জানো?”

একটু চুপ করে থেকে এতোয়ারি বলল, “কাজটা নিশ্চয়ই ভাল কাজ, না-হলে ডক্টরসাব বলতেন না।”

এতোয়ারিকে বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখে ওঁরা ভেতরে চলে গেলেন। এতোয়ারি আকাশের দিকে তাকাল। আজ আকাশে আলো নেই। মেঘের পরে মেঘ জড়িয়ে যাচ্ছে আকাশে। ঘরে ফিরে ওরা বাবাকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখেছিল। এতোয়ারিকে অবাক করে ওর মা জিজ্ঞাসা করেছিল বাবার সামনে দাঁড়িয়ে, “খিদে পেয়েছে?” বাবা যতটা অবাক হয়ে মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলেছিল, তার চেয়ে অনেক বেশি অবাক হয়েছিল এতোয়ারি। মা এতোয়ারির দিকে তাকিয়ে হেসে বলেছিল, “আজ আমি ভাত চাপাই।”
 
শাড়ি পালটে মা যখন হাতমুখ ধুতে গেল, তখন এতোয়ারির মনে হচ্ছিল আজ মা যেন অন্যরকম, একটু খুশি খুশি ভাবভঙ্গি! শেষ কবে মাকে এইরকম সে দেখেছে মনে পড়ল না।

ডাক্তারবাবুর গলা কানে এল, “এই মেয়েটির সঙ্গে যাও।”

এতোয়ারি দেখল একটা সাধারণ শাড়ি পরা ঘোমটা মাথায় দেওয়া মহিলাকে অস্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। ডাক্তারবাবু বললেন, “ওর নাম এতোয়ারি। ওকে বিশ্বাস করতে পারো। তোমার পা থেকে যখন গুলি বের করছিলাম, তখন ওর সাহায্য দরকার হয়েছিল। এতোয়ারি, ওকে সাবধানে নিয়ে যাও।”

ঘোমটার আড়াল থেকে পুরুষকণ্ঠে প্রশ্ন করল, “যে পাঠিয়েছে তার নাম কী? তোমাদের বড় নার্সের সঙ্গে কে ছিল?”

“একজন ছিল। নাম বলেনি আমাকে।”

একটু যেন দ্বিধায় পড়ল শাড়ির আড়ালে থাকা লোকটা। তারপর পা বাড়াল। বোঝা যাচ্ছিল পা ফেলতে কষ্ট হলেও সেটা সহ্য করছে সে।

খুঁড়িয়ে হাঁটলেও নদীর ধারে পৌঁছাতে ছ’মিনিটের বেশি লাগল না। এতোয়ারির মনে হচ্ছিল লোকটাকে বলে, সুবিধে হলে তার কাঁধ ধরতে পারে। কিন্তু সংকোচে বলতে পারছিল না। নদীর ধারে পৌঁছনো মাত্র অন্ধকার ফুঁড়ে দুটো লোক বেরিয়ে এল। চাপা গলায় নোয়ামের সঙ্গে কথা বলে একজন এগিয়ে এল এতোয়ারির সামনে, “অনেক ধন্যবাদ তোমাকে। তুমি এবার ঘরে ফিরে যাও।”

মাথা নেড়ে নদীর জলের দিকে পা বাড়াচ্ছিল এতোয়ারি, পেছন থেকে মাথার ঘোমটা সরিয়ে নোয়াম ডাকল, “তোমার কী নাম তা বলে যাও।”

একটু ইতস্তত করে নিজের নাম বলল এতোয়ারি। তারপর অন্ধকারে হাঁটুজলের নদী পার হয়ে ঘরের পথ ধরল।

ঘরে ঢুকে এতোয়ারি দেখল বাবা ডাল-ভাত-আলুসেদ্ধ খাচ্ছে। তাকে দেখে মা বলল, “তোর জন্যে বসে আছি, কোথায় গিয়েছিলি?”

“নদীর ধারে।”

“কেন? কে আছে ওখানে?” মায়ের ঠোঁটে হাসি ফুটল।

“আশ্চর্য! কে থাকবে ওখানে!”

“কী জানি বাবা! যাকগে, ভাত ডাল আলু আর ডিমসেদ্ধ রেঁধেছি। খেয়ে নিয়ে শুয়ে পড়। আমার খাওয়া হয়ে গিয়েছে।”

“ডিম কোথায় পেলে?”

“দুটো ডিম হাসপাতাল থেকে চেয়ে নিয়ে এসেছিলাম।”

“ঠিক করোনি। হাসপাতালের জিনিস বাড়িতে আনা ঠিক নয়।”

কথাটা শুনে মা ঠোঁট মোচড়াল।

“আমাকে আস্ত ডিম দিয়েছ কেন? তুমি কি অর্ধেক নিয়েছ?”

“অর্ধেক কেন নেব! তুই আর আমি গোটা গোটা।”

“বাবাকে দাওনি?”

“নাঃ,” মা ওপাশ ফিরে শুয়ে পড়ল।

শ্বাস ফেলল এতোয়ারি। সে মুখ ফিরিয়ে তাকাতেই বাবার সঙ্গে চোখাচোখি হল। অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে আছে বাবা। সে নিজের থালা থেকে ডিমসেদ্ধটা তুলে উঠে গিয়ে বাবার পাতে দিয়ে এল। বাবা মাথা ঝাঁকাল, মুখে খুশি ফুটল। ডিম তুলে অতি ক্ষুদ্র একটা টুকরো কেটে চোখ বন্ধ করে চিবোতে লাগল। তার দাড়ি-গোঁফ ভরতি মুখে খুশি ফুটে উঠল।

মধ্যরাতে চিৎকার চেঁচামেচিতে ঘুম ভেঙে গেল। এতোয়ারির মা উঠে বসে অবাক গলায় জিজ্ঞাসা করল, “কী হয়েছে? বাইরে গিয়ে দেখ তো!”
 
এতোয়ারি দরজা খুলতে লাইনের স্ত্রী-পুরুষদের ঘরের বাইরে এসে কান্নাকাটি করতে দেখল। তারপরই টর্চ হাতে পুলিশদের ওপর চোখ পড়ল তার। লোকগুলো এক হাতে টর্চ অন্যহাতে লাঠি উঁচিয়ে কুলি বস্তি তছনছ করতে করতে এগিয়ে আসছে। অন্ধকার এখন অনেক পাতলা হয়ে এসেছে। লোকগুলো পাশের ঘর ভাঙচুর করে এগিয়ে আসতেই এতোয়ারি গলার শিরা ফুলিয়ে চিৎকার করল, “অ্যাই! খবরদার!”

গোটা পাঁচেক লাঠিধারী পুলিশ যারা এতক্ষণ ঘরভাঙার উল্লাসে মেতে ছিল, তারা থমকে দাঁড়াল। এতোয়ারি চিৎকার করল, “সবাই ওইখানে দাঁড়িয়ে থাকো। যা খুঁজছ, তা দেখতে শুধু একজন ঘরের ভেতরে আসতে পারো।”

লোকগুলো নিজেদের মধ্যে নিচু স্বরে কথা বলল। একজন জিজ্ঞাসা করল, “এই, তুমি কে?”

“আমি হাসপাতালে কাজ করি। একজন আসতে পারো।”

নিজেদের মধ্যে মুখ চাওয়াচায়ি করে একজন এগিয়ে এলে এতোয়ারি দেখল পুলিশটির বয়স হয়েছে। ঘরের ভেতর লোকটা ঢোকামাত্র মায়ের আর্তনাদ শোনা গেল। দরজার কাছে ছুটে গিয়ে এতোয়ারি জিজ্ঞাসা করল, “কী হয়েছে।”

যে ঢুকেছিল, সে দ্রুত বাইরে বেরিয়ে এল, “কিছু করিনি, মাইরি বলছি বুড়ি কেন যে ভয় পেল জানি না।”

ততক্ষণে মা এসে দাঁড়িয়েছে দরজায়। চিৎকার করে বলল, “অ্যাই! তুই কাকে বুড়ি বলছিস? তোর বউ বুড়ি, তোর মেয়ে বুড়ি! রাতদুপুরে শোওয়ার ঘরে ঢুকে হামলা করছিস, লজ্জা করে না?”

এতোয়ারি অবাক হয়ে দেখল লোকটা কথা না-বলে তার দলের কাছে চলে গেল। দলের একজন চেঁচিয়ে জিজ্ঞাসা করল, “তোমরা কোনও বাইরের লোককে আজ লাইনে ঢুকতে দেখেছ?”

কেউ জবাব দিল না। লোকটি বলল, “জবাব না-দিলে সবাইকে ধরে জেলে ঢোকাবার অর্ডার আছে।”

একজন মিনমিন করে বলল, “কোনও নতুন লোক লাইনে আসেনি।”

“বেশ। নতুন কাউকে দেখলে সঙ্গে সঙ্গে থানায় খবর দেবে!”

পুলিশগুলো চলে যাওয়ার পর সবাই যে যার ঘরে ঢুকে গেল। কিন্তু ঘরে ঘরে তখন এতোয়ারিকে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গেল। আজ পর্যন্ত কোন কুলির মেয়ে-বউ পুলিশকে ধমক দিয়ে কথা বলার সাহস করেনি। হাসপাতালে চাকরি পাওয়ার পর থেকে এতোয়ারির মধ্যে একটু একটু করে যে পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে, তা কেউ কেউ বলতে লাগল।

এতোয়ারি মায়ের দিকে তাকাতে মা হাসল, “চল, শুয়ে পড়ি। এখনও রাত শেষ হতে ঢের দেরি আছে,” মা ভেতরে ঢুকে গেলেও কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল এতোয়ারি। মা যেন অনেক বদলে যাচ্ছে।

কয়েকদিন ধরে সমস্ত চা-বাগান থমথমে হয়ে রইল। কাজকর্ম মানুষ করে যাচ্ছে যন্ত্রের মতো। পাতি তুলতে যারা ঝুড়ি পিঠে নিয়ে বাগানের বিভিন্ন অংশে রোজ সকালে ছড়িয়ে পড়ে, তারাও হাসিঠাট্টা করছে না নিজেদের মধ্যে। মাঝে-মাঝেই একটা পুলিশের জিপ টহল দিতে চা-বাগানের ভেতরের রাস্তায় ঢুকে পড়ছে। কাজে যাওয়ার পথে সেই জিপ দেখে এতোয়ারি বুঝতে পারে এখনও নোয়াম ধরা পড়েনি।

নোয়াম নিশ্চয়ই একা সাহেবদের সঙ্গে, পুলিশের সঙ্গে লড়াই করছে না। পুলিশ যে নোয়ামকে ধরতে কাল রাত থেকে এভাবে খোঁজাখুঁজি করছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে লোকটা সাধারণ মানুষ নয়।
 
হাসপাতালে এসে অবাক হল এতোয়ারি। আজ আউটডোরে ওষুধ নিতে খুব কম রোগী এসেছে। ডাক্তারবাবুর আসার সময় এখনও হয়নি। তাকে একলা পেয়ে বড় নার্স ডেকে বললেন, “তোর জন্যে কাল নোয়াম পালিয়ে যেতে পারল। তুই যে কাল কী উপকার করেছিস জানিস না।”

মনের মধ্যে যে-প্রশ্ন বুজকুড়ি কাটছিল, সেটা উগরে দিল এতোয়ারি, “ওকে পুলিশ খুঁজছে কেন?”

“পুলিশ হল ইংরেজদের চাকর। ইংরেজরা হল বিদেশি। জোর করে আমাদের দেশ দখল করে মালিক হয়ে আছে। ওদের তাড়িয়ে দেশকে স্বাধীন করতে আন্দোলন শুরু করেছে নোয়ামরা। মুশিকল হল, আমাদের এই দেশের কিছু লোক ইংরেজদের পা-চাটা হয়ে আছে,” মাথা নাড়লেন বড় নার্স।

একটু একটু মাথায় ঢুকছিল। এতদিন সে ধনুবুড়োর মুখে শুনে এসেছে তাদের একটা দেশ আছে। সেটা অনেক দূরে। সেই দেশ থেকে তাদের পূর্বপুরুষদের ট্রেনে চাপিয়ে এখানে আনা হয়েছিল। ধনুবুড়ো সেই দেশে ফিরে যাওয়ার স্বপ্ন দেখত। বেচারার স্বপ্ন বাস্তব হয়নি। ধনুবুড়োর কথা যদি সত্যি হয়, তা হলে এইসব চা-বাগানে যারা কাজ করে, তাদের নিজেদের দেশ অনেক দূরে ছিল। কথাটা যদি সত্যি হয়, তা হলে নোয়ামরা কেন এই দেশের স্বাধীনতার জন্যে লড়াই করছে। উত্তরটা মাথায় ঢুকছিল না এতোয়ারির। বরং মনে প্রশ্ন জাগছিল, যে-দেশ ছেড়ে তাদের পূর্বপুরুষেরা এখানে এসেছিল, সেই দেশটাকেও কি ইংরেজরা দখল করে আছে?

তিনদিন পরে বড় নার্স ফিসফিস করে খবরটা দিলেন, “নোয়ামকে পুলিশ ধরতে পারেনি। ও এখন আসামের চা-বাগানে চলে গিয়েছে।”

শোনামাত্র নোয়ামের পায়ের কথা মনে এল। এতোয়ারি জিজ্ঞাসা করল, “ওর পা ঠিক হয়ে গেছে?”

“নিশ্চয়ই কিছুটা ঠিক হয়েছে। না-হলে গেল কী করে!” বড় নার্স গলা আরও নামিয়ে বললেন, “এসব কথা কাউকে যেন বলে ফেলিস না।”

তিনদিন পরে পুলিশের গাড়ি চা-বাগানে ঢোকা বন্ধ হল। ফলে একটু স্বস্তি ফিরে এল মানুষের মনে। কিন্তু সমস্যায় পড়ল এতোয়ারি। খালিগায়ে ঘরের বাইরে খোলা আকাশের নীচে শুয়ে বুকে সর্দি বসেছে বাবার, সেই সঙ্গে জ্বর। দুম করে জ্বর এত বেড়ে গেল যে, তাকে নিয়ে হাসপাতালে আসতে হল।

মেয়েদের ঘরে বেড খালি থাকলেও ছেলেদের ঘরে বেড খালি না-থাকায় মেঝেতে বিছানা পেতে শোয়াতে হয়েছে। বাবা সুস্থ না-হওয়া পর্যন্ত বড় নার্স এতোয়ারিকে হাসপাতালেই থেকে যেতে বললেন। মা এল না। সকালবেলায় পাতি তুলতে যাওয়ার সময় বলে গেল, “এত লোকের থাকার কোনও দরকার নেই, তুই তো আছিস!”

খুব অবাক হয়েছিল এতোয়ারি। বাবা যতই খারাপ কাজ করে থাকুক, এটা শোনার পর লোকটার জন্যে তার মায়া হয়েছিল।

দ্বিতীয় রাতে দু’জন মহিলা আর চারজন লোক রিকশায় এক মহিলাকে নিয়ে হাসপাতালে এল। মহিলাটির প্রসববেদনা উঠেছে। লাইনের ঘরেই ধাই দিয়ে প্রসব করানোর চেষ্টা হয়েছিল, কিন্তু তা সফল হয়নি।

মহিলাকে ধরাধরি করে বিছানায় শুইয়ে দেওয়া হল। ঘিরে দেওয়া হল খাটটা সাদা পরদা দিয়ে। ছোট নার্স চেঁচিয়ে বলল, “সঙ্গে কে এসেছে? বাবা না স্বামী? যে-ই এসে থাকো অফিসে চলো, নাম ঠিকানা লেখাতে হবে।”
 

Users who are viewing this thread

Back
Top