অত্যন্ত বিরক্ত হলেও হেডমাস্টার অনুরোধ রাখলেন। দুটো খাতা আনানো হলো। দেখা গেল প্রশ্নের উত্তর টনি যতটুকু লিখেছে পুরো সময় পরীক্ষা নিয়েও সুনীল তা লিখতে পারে নি। গম্ভীর মুখের ভদ্রলোক খাতা দুটো টেনে নিয়ে পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে বললেন, সুনীল ছেলেটি যে সব বানান ভুল করেছে এ তা করেনি। একটা উত্তর ধরে লেখা আর একটা তাড়াহুড়োর। হেডমাস্টার মশাই আপনি ভুল করেছেন। হেডমাস্টার মশাই ঢোঁক গিললেন, আসলে আমি আচমকা দেখেছিলাম তো–। মানে ডিসিপ্লিন রাখতে গিয়ে–! ঠিক আছে, তুমি কাল থেকে ক্লাসে এস। গৌরব মাথা নাড়ল, না। আপনি ওকে টি সি দিন। কারণ এর পরে ও আপনাকে শ্রদ্ধা করতে পারবে না। আপনাদের খামখেয়ালিতে কত ছাত্রের জীবন নষ্ট হয়ে যায় তার খোঁজ আপনারা রাখেন না। চলি। হেডমাস্টার মশাই মুখ নামিয়ে বসেছিলেন। গম্ভীর মুখের ভদ্রলোক বললেন, মিস্টার বোস, আপনাকে একটা অনুরোধ করব। এখন মিড সিজন। কোথাও ওকে ভর্তি করতে পারবেন না। আপনাদের আত্মসম্মানবোধকে আমি শ্রদ্ধা করছি। কিন্তু আমি বলি কি ওকে অ্যানুয়াল পরীক্ষা অবধি এখানে রাখুন। নতুন ক্লাসে উঠলে টি সি নেবেন। আমি স্কুল ইন্সপেক্টর। ভালো স্কুলে ভর্তি করার প্রব্লেম হবে না তখন। তারপর হেডমাস্টারমশাইকে বললেন, আপনি খুব অন্যায় করেছেন। প্রথমেই খাতা দুটো কমপেয়ার করার দরকার ছিল। সুনীল তো শেষ প্রশ্নটার উত্তর কমপ্লিট করতে পারেনি। কেন পারেনি সেটা ওকে জিজ্ঞাসা করতে পারতেন।
আমি একবার ভেবেছিলাম–। হেডমাস্টারমশাই থেমে গেলেন।
ভেবেছিলেন তা করেননি কেন?
আসলে সুনীলকে ঘাঁটাতে চাইনি। ওর বাবা খুব বড় রাজনৈতিক নেতা।
গৌরব বলল, টনি বাইরে যাও। উনি চলে গেলে সে বলল, এখানে আপনার ডিসিপ্লিন কতটা থাকছে হেডমাস্টারমশাই? একটি ছেলের বাবার প্রভাব আছে বলে আপনি নিজের বিচারবুদ্ধি প্রয়োগ করতে অক্ষম হলেন?
হেডমাস্টার মশাই কিছু বলার আগেই ইন্সপেক্টর বললেন, আপনি সুনীলের বাবাকে ডেকে পাঠান কাল। আমি থাকব। যে স্টেপ এর বিরুদ্ধে নিতে গিয়েছিলেন তা সুনীলের বিরুদ্ধে নেবেন। কারণ সে-ই অপরাধী।
.
সন্ধের পরে সৌরভ জিজ্ঞাসা করল, তুই এসব কথা আমায় বলিসনি কেন গোরা?
যেটা আমি ম্যানেজ করতে পারব সেটা তোমাকে বলে বিব্রত করতে চাইনি।
আমি ওই হেডমাস্টার নামে কেস করতাম। ক্রিমিন্যাল!
না। তুমি শুধু টনিকেই বকতে। ব্যাপারটা তলিয়ে ভাবতে না।
সৌরভ হেসে ফেলল, এই তোর আমার সম্পর্কে অ্যাসেসমেন্ট!
যে কোনো বাবা-মাই তাই করত। লীনাদেবীর খবর কিছু জানো?
না। কেন?
ওঁকে ওর বাড়িওয়ালা নোটিস দিয়েছিল, কী হলো কে জানে!
না। আমি ফোনটোন করি নি। লীনার সম্পর্কে ভাবছিস যে বড়?
হ্যাঁ। কলকাতা শহরে একটা মেয়ে স্রেফ একা বাস করছে দেখলে তাকে বাহবা দিতে হয়।
গৌরব উঠল, তুমি আর টনির ব্যাপারটা নিয়ে মাথা ঘামিও না। এ বছর ওখানে থাকুক। সামনের বছর নতুন ক্লাসে উঠলে যদি আবহাওয়া পাল্টায় তখন অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা কোরো।
সৌরভ বলল, আমি একটা ব্যাপার ভাবছিলাম গৌরব। তোর তো আমেরিকায় অনেক বছর হয়ে গেল। ভালো চাকরি করছিস। অত মাইনে এদেশের কোনো চাকরিতে পাওয়া যায় না। তবু তোর কি এখানে সেটেল্ড করতে মন চায় না?
গৌরব বলল, আমি তো কথাটা আগেও বলেছি। তের সপ্তাহ ছুটি নিয়ে আমি এখানে এসেছি নিজেকে পরীক্ষা করতে। বারো বছর দেশের বাইরে ছিলাম। এখানকার পরিবেশ মানুষজন, কাজের সুযোগ কেমন পাল্টেছে তা দেখে সিদ্ধান্ত নেব। আসলে আমেরিকায় আমি যে চাকরি করি ঠিক সেই কাজ এখানে পাব না। তবে–?
বাধা দিলো সৌরভ, সেই কাজ এখানে নেই বলছিস?
মাথা নাড়ল গৌরব, নামের দিক দিয়ে এক। কিন্তু তফাতটা হলো কেউ একজন অক্ষর চিনে শব্দ বুঝে বাক্য লিখতে শিখেছে। সেও বলছে আমি পড়াশোনা করি। আর যে থিসিস লিখছে তাকেও বলতে হচ্ছে আমি পড়াশোনা করি। টাকাটা আমার কাছে কোনো সমস্যা নয়। মাসে পাঁচ হাজার টাকা পেলে এদেশে দিব্যি ভালো থাকা যায়। দেখি দাদা, আর একটু দেরি আছে। যাওয়ার আগে সিদ্ধান্ত নিতেই হবে।
আমি একবার ভেবেছিলাম–। হেডমাস্টারমশাই থেমে গেলেন।
ভেবেছিলেন তা করেননি কেন?
আসলে সুনীলকে ঘাঁটাতে চাইনি। ওর বাবা খুব বড় রাজনৈতিক নেতা।
গৌরব বলল, টনি বাইরে যাও। উনি চলে গেলে সে বলল, এখানে আপনার ডিসিপ্লিন কতটা থাকছে হেডমাস্টারমশাই? একটি ছেলের বাবার প্রভাব আছে বলে আপনি নিজের বিচারবুদ্ধি প্রয়োগ করতে অক্ষম হলেন?
হেডমাস্টার মশাই কিছু বলার আগেই ইন্সপেক্টর বললেন, আপনি সুনীলের বাবাকে ডেকে পাঠান কাল। আমি থাকব। যে স্টেপ এর বিরুদ্ধে নিতে গিয়েছিলেন তা সুনীলের বিরুদ্ধে নেবেন। কারণ সে-ই অপরাধী।
.
সন্ধের পরে সৌরভ জিজ্ঞাসা করল, তুই এসব কথা আমায় বলিসনি কেন গোরা?
যেটা আমি ম্যানেজ করতে পারব সেটা তোমাকে বলে বিব্রত করতে চাইনি।
আমি ওই হেডমাস্টার নামে কেস করতাম। ক্রিমিন্যাল!
না। তুমি শুধু টনিকেই বকতে। ব্যাপারটা তলিয়ে ভাবতে না।
সৌরভ হেসে ফেলল, এই তোর আমার সম্পর্কে অ্যাসেসমেন্ট!
যে কোনো বাবা-মাই তাই করত। লীনাদেবীর খবর কিছু জানো?
না। কেন?
ওঁকে ওর বাড়িওয়ালা নোটিস দিয়েছিল, কী হলো কে জানে!
না। আমি ফোনটোন করি নি। লীনার সম্পর্কে ভাবছিস যে বড়?
হ্যাঁ। কলকাতা শহরে একটা মেয়ে স্রেফ একা বাস করছে দেখলে তাকে বাহবা দিতে হয়।
গৌরব উঠল, তুমি আর টনির ব্যাপারটা নিয়ে মাথা ঘামিও না। এ বছর ওখানে থাকুক। সামনের বছর নতুন ক্লাসে উঠলে যদি আবহাওয়া পাল্টায় তখন অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা কোরো।
সৌরভ বলল, আমি একটা ব্যাপার ভাবছিলাম গৌরব। তোর তো আমেরিকায় অনেক বছর হয়ে গেল। ভালো চাকরি করছিস। অত মাইনে এদেশের কোনো চাকরিতে পাওয়া যায় না। তবু তোর কি এখানে সেটেল্ড করতে মন চায় না?
গৌরব বলল, আমি তো কথাটা আগেও বলেছি। তের সপ্তাহ ছুটি নিয়ে আমি এখানে এসেছি নিজেকে পরীক্ষা করতে। বারো বছর দেশের বাইরে ছিলাম। এখানকার পরিবেশ মানুষজন, কাজের সুযোগ কেমন পাল্টেছে তা দেখে সিদ্ধান্ত নেব। আসলে আমেরিকায় আমি যে চাকরি করি ঠিক সেই কাজ এখানে পাব না। তবে–?
বাধা দিলো সৌরভ, সেই কাজ এখানে নেই বলছিস?
মাথা নাড়ল গৌরব, নামের দিক দিয়ে এক। কিন্তু তফাতটা হলো কেউ একজন অক্ষর চিনে শব্দ বুঝে বাক্য লিখতে শিখেছে। সেও বলছে আমি পড়াশোনা করি। আর যে থিসিস লিখছে তাকেও বলতে হচ্ছে আমি পড়াশোনা করি। টাকাটা আমার কাছে কোনো সমস্যা নয়। মাসে পাঁচ হাজার টাকা পেলে এদেশে দিব্যি ভালো থাকা যায়। দেখি দাদা, আর একটু দেরি আছে। যাওয়ার আগে সিদ্ধান্ত নিতেই হবে।