কোনটা শেষ আমি জানি না। তবে আমি যেটা শেষ পেয়েছি তাতে তুমি লিখেছিলে তোমার পক্ষে আমেরিকায় যাওয়া সম্ভব নয়। তোমার পক্ষে আমাকে বিয়ে করাও অসম্ভব। তাই তোমার জন্যে অপেক্ষা না করে আমি যেন–।
তাহলে তো আমার শেষ চিঠি পেয়েছিলে।
কিন্তু কেন তুমি আমায় উত্তর দাওনি।
দিলে একই কথার পুনরাবৃত্তি করতে হত।
ওই চিঠির পর আমি তোমাকে আর কয়েকটা চিঠি লিখেছিলাম।
আমি সেগুলো পাইনি। বোধহয় ততদিনে বাড়ি বদলে ফেলেছি।
কলকাতায় এসে তোমাকে আমি পাগলের মতো খুঁজে বেড়িয়েছি।
পাগল না হয়ে স্বাভাবিক হলে খুঁজতে না, মানে ধরতে পারতে।
প্লিজ, এভাবে কথার খেলা করো না।
আমি কিছুই করছি না গৌরব।
তুমি আমাকে আর ভালোবাস না জয়তী?
একথা থাক।
না। তোমাকে বলতে হবে। হ্যাঁ, যদি তুমি আর কাউকে পছন্দ করো, স্বচ্ছন্দে বলতে পার। আমি তোমার জীবনে আর কোনো ছায়া ফেলব না।
গৌরব। শাড়ি পাল্টাবার মতো যেমন মেয়েরা পুরুষ পাল্টায় আমি তাদের দলে যে নই তা তুমি এতদিনেও বুঝলে না দেখে খারাপ লাগছে।
আমি তো তাই ভেবে এসেছি এই এতগুলো বছর। তাহলে কেন তুমি আমার সঙ্গে এমন খেলা খেলছ? কি অন্যায় করেছি আমি?
আমি তোমার সঙ্গে খেলছি গৌরব?
আমি তো আর কিছু খুঁজে পাচ্ছি না।
তবু কিছু মনে করলাম না। এবার বলো কতদিন আছ কলকাতায়। বউ নিয়ে এসেছ নাকি বিয়ে করতে এসেছ। শেষেরটা হলে নেমন্তন্ন কোরো না, যেতে পারব না।
শেষেরটাই সত্যি। তবে তোমাকে নেমন্তন্ন খেতে যেতে হবে না, আমার স্ত্রী হয়ে যেতে হবে।
ও। জয়তী আর একবার দেখল, তুমি সত্যি বদলাবে না?
এজন্মে না।
তুমি ভুল করছ।
খুলে বলো।
আমার পক্ষে আর তোমাকে বিয়ে করা সম্ভব নয়।
কেন?
কারণ এই সংসার। মারা যাওয়ার আগে বাবা আমায় কথা দিয়ে গিয়েছেন। যদ্দিন মা জীবিত আছেন তদ্দিন কাজটা আমাকে করে যেতে হবে।
এটা কোনো কথা হলো? বিয়ের পরেও তুমি এই বাড়ির দায়িত্ব নিতে পার। তাছাড়া প্রণতি চাকরি করছে। আমি তোমাকে কখনও নিষেধ করব না এই ব্যাপারে।
টাকা দিলেই কি দায়িত্ব পালন করা হয়ে যায় গৌরব? মায়ের যদি রাতবিরেতে অসুখ হয় আমি জানতেও পারব না। তখন কি আমি দায়িত্ব পালন করছি? আর প্রণতির কথা বলছিলে? আজ আমি অফিসে যাই নি কারণ ওর ভাবী বর আমাদের সঙ্গে কথা বলতে আসবে। প্রণতির বিয়ে।
গৌরব অবাক হয়ে জয়তীকে দেখল, নিশ্চয়ই বিয়েটা তুমি দিচ্ছ?
আমার সামর্থ আর কতটুকু! ওরা রেজিস্ট্রি করছে। ছেড়ে দাও এসব কথা। কদিন আছ?
তিন মাসের ছুটি নিয়েছিলাম। এখন অন্যরকম ভাবছি।
স্নান করেছ?
মানে?
দেখে তো খুব শুকনো মনে হচ্ছে।
তোমাকেও।
বাঃ, বয়স হচ্ছে না? জয়তী যেন লজ্জা পেল।
আমি যেন এখনও বালক আছি।
আছই তো। এত করে বলছি তবু বুঝছ না।
একটু আগে বড় গলায় বলছিলে না যে মেয়েদের শাড়ি পাল্টানোর কথা। বারো বছরে কোনো সাদা চামড়ার মেয়েকে সুন্দরী ভাবতে পারলাম না।
তোমার চোখে ন্যাবা হয়েছিল।
সেটা আমৃত্যু থাক।
এখানে খেয়ে যাবে?
মানে? চমকে উঠল গৌরব।
দুপুরবেলায় এসেছ না খেয়ে গেলে খারাপ লাগবে।
এই বলছিলে, না এলে খুশি হতে আবার এখন খেয়ে যেতে বলছ।
এসো। জয়তী সিঁড়ি ভেঙে নামতে লাগল। দোতলায় তখন মাসীমা। জয়তীকে দেখে বললেন, তাড়াতাড়ি কর। ওরা দুটোর মধ্যে এসে যাবে। প্রণতি এল বলে।
এখনও দেরি আছে মা। আর হ্যাঁ, গৌরব খেয়ে যাবে আজ।
ওমা আজ তো কিছুই রান্না হয়নি তেমন!
যা হয়েছে তাই খাবে। দেখুক আমরা কেমন আছি।
কথাটা সম্ভবত মহিলার পছন্দ হলো না। বললেন, বাড়িতে বলেছ কিছু?
না। গৌরব হাত নাড়ল, এই নেমন্তন্ন পাব আগে জানতাম না।
তাহলে তোমার মা খাবার নিয়ে বসে থাকবেন!
প্রথম প্রথম থাকতেন। আমি বলে কয়ে রাজি করিয়েছি দেরি হলে খেয়ে নিতে।
কি জানি বাবা। তুইও যেমন, হুট করে খেতে বললি।
আচ্ছা মা, গৌরব কি তোমার কুটুম?
হঠাৎ ভদ্রমহিলা চমকে তাকালেন। তারপর মুখ ঘুরিয়ে অন্যঘরে চলে গেলেন। গৌরব বলল, জয়তী আজ থাক। অন্য দিন হবে।
জয়তী বলল, তুমি ভুল বুঝছ। মা যা বলছে তা সঙ্কোচ থেকে। তোমার মতো সাহেব মানুষকে খাওয়ানোর মতো আয়োজন আজ বাড়িতে হয় নি বলে সঙ্কোচ। জুতো খোলো। আচ্ছা এঘরে এসো। জয়তীর পিছু পিছু পাশের ঘরটায় ঢুকে গৌরব দুটো খাট দেখতে পেল। আলনা থেকে তোয়ালে এনে গৌরবের হাতে দিলো জয়তী, এসো বাথরুম দেখিয়ে দিই। নিম্নবিত্তের বাথরুম। শাওয়ার পাবে না। চট করে স্নান করে এসো।
খোঁচাগুলো ভালো লাগছে না। কিন্তু তুমি বললে প্রণতির ভাবী বর আসবে সেই সময় আমার উপস্থিতি কি ওদের ভালো লাগবে? খুব সরল গলায় জিজ্ঞাসা করল গৌরব।
মানে?
ওঁরা নিশ্চয় জানতে চাইবে আমি কে?
তোমার কি কোনো পরিচয় নেই?
সেটা কি বাঙালিকুটুমের ভালো লাগবে?
কেমন লাগবে সেটা নিজের চোখেই দেখো।
তোমার এই পরিবর্তনটা কবে থেকে হলো?
পরিবর্তন?
এত ভাবা। তুমি তো এই সামান্য বিষয় নিয়ে এর আগে কখনও চিন্তা করতে না!
তাহলে তো আমার শেষ চিঠি পেয়েছিলে।
কিন্তু কেন তুমি আমায় উত্তর দাওনি।
দিলে একই কথার পুনরাবৃত্তি করতে হত।
ওই চিঠির পর আমি তোমাকে আর কয়েকটা চিঠি লিখেছিলাম।
আমি সেগুলো পাইনি। বোধহয় ততদিনে বাড়ি বদলে ফেলেছি।
কলকাতায় এসে তোমাকে আমি পাগলের মতো খুঁজে বেড়িয়েছি।
পাগল না হয়ে স্বাভাবিক হলে খুঁজতে না, মানে ধরতে পারতে।
প্লিজ, এভাবে কথার খেলা করো না।
আমি কিছুই করছি না গৌরব।
তুমি আমাকে আর ভালোবাস না জয়তী?
একথা থাক।
না। তোমাকে বলতে হবে। হ্যাঁ, যদি তুমি আর কাউকে পছন্দ করো, স্বচ্ছন্দে বলতে পার। আমি তোমার জীবনে আর কোনো ছায়া ফেলব না।
গৌরব। শাড়ি পাল্টাবার মতো যেমন মেয়েরা পুরুষ পাল্টায় আমি তাদের দলে যে নই তা তুমি এতদিনেও বুঝলে না দেখে খারাপ লাগছে।
আমি তো তাই ভেবে এসেছি এই এতগুলো বছর। তাহলে কেন তুমি আমার সঙ্গে এমন খেলা খেলছ? কি অন্যায় করেছি আমি?
আমি তোমার সঙ্গে খেলছি গৌরব?
আমি তো আর কিছু খুঁজে পাচ্ছি না।
তবু কিছু মনে করলাম না। এবার বলো কতদিন আছ কলকাতায়। বউ নিয়ে এসেছ নাকি বিয়ে করতে এসেছ। শেষেরটা হলে নেমন্তন্ন কোরো না, যেতে পারব না।
শেষেরটাই সত্যি। তবে তোমাকে নেমন্তন্ন খেতে যেতে হবে না, আমার স্ত্রী হয়ে যেতে হবে।
ও। জয়তী আর একবার দেখল, তুমি সত্যি বদলাবে না?
এজন্মে না।
তুমি ভুল করছ।
খুলে বলো।
আমার পক্ষে আর তোমাকে বিয়ে করা সম্ভব নয়।
কেন?
কারণ এই সংসার। মারা যাওয়ার আগে বাবা আমায় কথা দিয়ে গিয়েছেন। যদ্দিন মা জীবিত আছেন তদ্দিন কাজটা আমাকে করে যেতে হবে।
এটা কোনো কথা হলো? বিয়ের পরেও তুমি এই বাড়ির দায়িত্ব নিতে পার। তাছাড়া প্রণতি চাকরি করছে। আমি তোমাকে কখনও নিষেধ করব না এই ব্যাপারে।
টাকা দিলেই কি দায়িত্ব পালন করা হয়ে যায় গৌরব? মায়ের যদি রাতবিরেতে অসুখ হয় আমি জানতেও পারব না। তখন কি আমি দায়িত্ব পালন করছি? আর প্রণতির কথা বলছিলে? আজ আমি অফিসে যাই নি কারণ ওর ভাবী বর আমাদের সঙ্গে কথা বলতে আসবে। প্রণতির বিয়ে।
গৌরব অবাক হয়ে জয়তীকে দেখল, নিশ্চয়ই বিয়েটা তুমি দিচ্ছ?
আমার সামর্থ আর কতটুকু! ওরা রেজিস্ট্রি করছে। ছেড়ে দাও এসব কথা। কদিন আছ?
তিন মাসের ছুটি নিয়েছিলাম। এখন অন্যরকম ভাবছি।
স্নান করেছ?
মানে?
দেখে তো খুব শুকনো মনে হচ্ছে।
তোমাকেও।
বাঃ, বয়স হচ্ছে না? জয়তী যেন লজ্জা পেল।
আমি যেন এখনও বালক আছি।
আছই তো। এত করে বলছি তবু বুঝছ না।
একটু আগে বড় গলায় বলছিলে না যে মেয়েদের শাড়ি পাল্টানোর কথা। বারো বছরে কোনো সাদা চামড়ার মেয়েকে সুন্দরী ভাবতে পারলাম না।
তোমার চোখে ন্যাবা হয়েছিল।
সেটা আমৃত্যু থাক।
এখানে খেয়ে যাবে?
মানে? চমকে উঠল গৌরব।
দুপুরবেলায় এসেছ না খেয়ে গেলে খারাপ লাগবে।
এই বলছিলে, না এলে খুশি হতে আবার এখন খেয়ে যেতে বলছ।
এসো। জয়তী সিঁড়ি ভেঙে নামতে লাগল। দোতলায় তখন মাসীমা। জয়তীকে দেখে বললেন, তাড়াতাড়ি কর। ওরা দুটোর মধ্যে এসে যাবে। প্রণতি এল বলে।
এখনও দেরি আছে মা। আর হ্যাঁ, গৌরব খেয়ে যাবে আজ।
ওমা আজ তো কিছুই রান্না হয়নি তেমন!
যা হয়েছে তাই খাবে। দেখুক আমরা কেমন আছি।
কথাটা সম্ভবত মহিলার পছন্দ হলো না। বললেন, বাড়িতে বলেছ কিছু?
না। গৌরব হাত নাড়ল, এই নেমন্তন্ন পাব আগে জানতাম না।
তাহলে তোমার মা খাবার নিয়ে বসে থাকবেন!
প্রথম প্রথম থাকতেন। আমি বলে কয়ে রাজি করিয়েছি দেরি হলে খেয়ে নিতে।
কি জানি বাবা। তুইও যেমন, হুট করে খেতে বললি।
আচ্ছা মা, গৌরব কি তোমার কুটুম?
হঠাৎ ভদ্রমহিলা চমকে তাকালেন। তারপর মুখ ঘুরিয়ে অন্যঘরে চলে গেলেন। গৌরব বলল, জয়তী আজ থাক। অন্য দিন হবে।
জয়তী বলল, তুমি ভুল বুঝছ। মা যা বলছে তা সঙ্কোচ থেকে। তোমার মতো সাহেব মানুষকে খাওয়ানোর মতো আয়োজন আজ বাড়িতে হয় নি বলে সঙ্কোচ। জুতো খোলো। আচ্ছা এঘরে এসো। জয়তীর পিছু পিছু পাশের ঘরটায় ঢুকে গৌরব দুটো খাট দেখতে পেল। আলনা থেকে তোয়ালে এনে গৌরবের হাতে দিলো জয়তী, এসো বাথরুম দেখিয়ে দিই। নিম্নবিত্তের বাথরুম। শাওয়ার পাবে না। চট করে স্নান করে এসো।
খোঁচাগুলো ভালো লাগছে না। কিন্তু তুমি বললে প্রণতির ভাবী বর আসবে সেই সময় আমার উপস্থিতি কি ওদের ভালো লাগবে? খুব সরল গলায় জিজ্ঞাসা করল গৌরব।
মানে?
ওঁরা নিশ্চয় জানতে চাইবে আমি কে?
তোমার কি কোনো পরিচয় নেই?
সেটা কি বাঙালিকুটুমের ভালো লাগবে?
কেমন লাগবে সেটা নিজের চোখেই দেখো।
তোমার এই পরিবর্তনটা কবে থেকে হলো?
পরিবর্তন?
এত ভাবা। তুমি তো এই সামান্য বিষয় নিয়ে এর আগে কখনও চিন্তা করতে না!