What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected তেরো পার্বন -সমরেশ মজুমদার (2 Viewers)

কোনটা শেষ আমি জানি না। তবে আমি যেটা শেষ পেয়েছি তাতে তুমি লিখেছিলে তোমার পক্ষে আমেরিকায় যাওয়া সম্ভব নয়। তোমার পক্ষে আমাকে বিয়ে করাও অসম্ভব। তাই তোমার জন্যে অপেক্ষা না করে আমি যেন–।

তাহলে তো আমার শেষ চিঠি পেয়েছিলে।

কিন্তু কেন তুমি আমায় উত্তর দাওনি।

দিলে একই কথার পুনরাবৃত্তি করতে হত।

ওই চিঠির পর আমি তোমাকে আর কয়েকটা চিঠি লিখেছিলাম।

আমি সেগুলো পাইনি। বোধহয় ততদিনে বাড়ি বদলে ফেলেছি।

কলকাতায় এসে তোমাকে আমি পাগলের মতো খুঁজে বেড়িয়েছি।

পাগল না হয়ে স্বাভাবিক হলে খুঁজতে না, মানে ধরতে পারতে।

প্লিজ, এভাবে কথার খেলা করো না।

আমি কিছুই করছি না গৌরব।

তুমি আমাকে আর ভালোবাস না জয়তী?

একথা থাক।

না। তোমাকে বলতে হবে। হ্যাঁ, যদি তুমি আর কাউকে পছন্দ করো, স্বচ্ছন্দে বলতে পার। আমি তোমার জীবনে আর কোনো ছায়া ফেলব না।

গৌরব। শাড়ি পাল্টাবার মতো যেমন মেয়েরা পুরুষ পাল্টায় আমি তাদের দলে যে নই তা তুমি এতদিনেও বুঝলে না দেখে খারাপ লাগছে।

আমি তো তাই ভেবে এসেছি এই এতগুলো বছর। তাহলে কেন তুমি আমার সঙ্গে এমন খেলা খেলছ? কি অন্যায় করেছি আমি?

আমি তোমার সঙ্গে খেলছি গৌরব?

আমি তো আর কিছু খুঁজে পাচ্ছি না।

তবু কিছু মনে করলাম না। এবার বলো কতদিন আছ কলকাতায়। বউ নিয়ে এসেছ নাকি বিয়ে করতে এসেছ। শেষেরটা হলে নেমন্তন্ন কোরো না, যেতে পারব না।

শেষেরটাই সত্যি। তবে তোমাকে নেমন্তন্ন খেতে যেতে হবে না, আমার স্ত্রী হয়ে যেতে হবে।

ও। জয়তী আর একবার দেখল, তুমি সত্যি বদলাবে না?

এজন্মে না।

তুমি ভুল করছ।

খুলে বলো।

আমার পক্ষে আর তোমাকে বিয়ে করা সম্ভব নয়।

কেন?

কারণ এই সংসার। মারা যাওয়ার আগে বাবা আমায় কথা দিয়ে গিয়েছেন। যদ্দিন মা জীবিত আছেন তদ্দিন কাজটা আমাকে করে যেতে হবে।

এটা কোনো কথা হলো? বিয়ের পরেও তুমি এই বাড়ির দায়িত্ব নিতে পার। তাছাড়া প্রণতি চাকরি করছে। আমি তোমাকে কখনও নিষেধ করব না এই ব্যাপারে।

টাকা দিলেই কি দায়িত্ব পালন করা হয়ে যায় গৌরব? মায়ের যদি রাতবিরেতে অসুখ হয় আমি জানতেও পারব না। তখন কি আমি দায়িত্ব পালন করছি? আর প্রণতির কথা বলছিলে? আজ আমি অফিসে যাই নি কারণ ওর ভাবী বর আমাদের সঙ্গে কথা বলতে আসবে। প্রণতির বিয়ে।

গৌরব অবাক হয়ে জয়তীকে দেখল, নিশ্চয়ই বিয়েটা তুমি দিচ্ছ?

আমার সামর্থ আর কতটুকু! ওরা রেজিস্ট্রি করছে। ছেড়ে দাও এসব কথা। কদিন আছ?

তিন মাসের ছুটি নিয়েছিলাম। এখন অন্যরকম ভাবছি।

স্নান করেছ?

মানে?

দেখে তো খুব শুকনো মনে হচ্ছে।

তোমাকেও।

বাঃ, বয়স হচ্ছে না? জয়তী যেন লজ্জা পেল।

আমি যেন এখনও বালক আছি।

আছই তো। এত করে বলছি তবু বুঝছ না।

একটু আগে বড় গলায় বলছিলে না যে মেয়েদের শাড়ি পাল্টানোর কথা। বারো বছরে কোনো সাদা চামড়ার মেয়েকে সুন্দরী ভাবতে পারলাম না।

তোমার চোখে ন্যাবা হয়েছিল।

সেটা আমৃত্যু থাক।

এখানে খেয়ে যাবে?

মানে? চমকে উঠল গৌরব।

দুপুরবেলায় এসেছ না খেয়ে গেলে খারাপ লাগবে।

এই বলছিলে, না এলে খুশি হতে আবার এখন খেয়ে যেতে বলছ।

এসো। জয়তী সিঁড়ি ভেঙে নামতে লাগল। দোতলায় তখন মাসীমা। জয়তীকে দেখে বললেন, তাড়াতাড়ি কর। ওরা দুটোর মধ্যে এসে যাবে। প্রণতি এল বলে।

এখনও দেরি আছে মা। আর হ্যাঁ, গৌরব খেয়ে যাবে আজ।

ওমা আজ তো কিছুই রান্না হয়নি তেমন!

যা হয়েছে তাই খাবে। দেখুক আমরা কেমন আছি।

কথাটা সম্ভবত মহিলার পছন্দ হলো না। বললেন, বাড়িতে বলেছ কিছু?

না। গৌরব হাত নাড়ল, এই নেমন্তন্ন পাব আগে জানতাম না।

তাহলে তোমার মা খাবার নিয়ে বসে থাকবেন!

প্রথম প্রথম থাকতেন। আমি বলে কয়ে রাজি করিয়েছি দেরি হলে খেয়ে নিতে।

কি জানি বাবা। তুইও যেমন, হুট করে খেতে বললি।

আচ্ছা মা, গৌরব কি তোমার কুটুম?

হঠাৎ ভদ্রমহিলা চমকে তাকালেন। তারপর মুখ ঘুরিয়ে অন্যঘরে চলে গেলেন। গৌরব বলল, জয়তী আজ থাক। অন্য দিন হবে।

জয়তী বলল, তুমি ভুল বুঝছ। মা যা বলছে তা সঙ্কোচ থেকে। তোমার মতো সাহেব মানুষকে খাওয়ানোর মতো আয়োজন আজ বাড়িতে হয় নি বলে সঙ্কোচ। জুতো খোলো। আচ্ছা এঘরে এসো। জয়তীর পিছু পিছু পাশের ঘরটায় ঢুকে গৌরব দুটো খাট দেখতে পেল। আলনা থেকে তোয়ালে এনে গৌরবের হাতে দিলো জয়তী, এসো বাথরুম দেখিয়ে দিই। নিম্নবিত্তের বাথরুম। শাওয়ার পাবে না। চট করে স্নান করে এসো।

খোঁচাগুলো ভালো লাগছে না। কিন্তু তুমি বললে প্রণতির ভাবী বর আসবে সেই সময় আমার উপস্থিতি কি ওদের ভালো লাগবে? খুব সরল গলায় জিজ্ঞাসা করল গৌরব।

মানে?

ওঁরা নিশ্চয় জানতে চাইবে আমি কে?

তোমার কি কোনো পরিচয় নেই?

সেটা কি বাঙালিকুটুমের ভালো লাগবে?

কেমন লাগবে সেটা নিজের চোখেই দেখো।

তোমার এই পরিবর্তনটা কবে থেকে হলো?

পরিবর্তন?

এত ভাবা। তুমি তো এই সামান্য বিষয় নিয়ে এর আগে কখনও চিন্তা করতে না!
 
গৌরব আর কথা বাড়াল না। জয়তী যতই বিনয় করে থাকুক বাথরুমে গিয়ে একটু অস্বস্তি বোধ করল গৌরব। চৌবাচ্চায় জল ধরা ছিল এবং তার নিচে কাদাটে কিছু জমে আছে। কলকাতার কলের জলে এত নোংরা গোপনে মিশে থাকে। এখানে নিজেদের বাড়িতে বাথরুমগুলো পরিচ্ছন্ন, চৌবাচ্চা রয়েছে ছাদে। জলের অবস্থা খালি চোখে দেখা যায় না। আমেরিকা তাকে দুটো ব্যাপারে আয়েসী করেছে। প্রথমটি ওই বাথরুম টয়লেটের ব্যবহার। কলকাতার মানুষ বাথরুম টয়লেটের অর্ধেকটা জায়গা কার্পেটে মুড়ে রাখার কথা চিন্তা করতে পারবে না। কমোডের ব্যবহারে যে স্বাচ্ছন্দ্য বারো বছরে এসে গিয়েছিল এখানে এসে সেটা প্রচণ্ড ভাবে বোঝা যায়। বাথরুমটা যে ঠাকুরঘরের মতো পবিত্র হয়ে ওঠার জায়গা এবং সেটাকেও সুন্দর এবং শুদ্ধ রাখা দরকার এই বোধ পুরোনপন্থী বাঙালিদের মনে যে কবে আসবে। দ্বিতীয় আরামটা হলো যানবাহনের আরাম যা এখানে কল্পনা করতে যাওয়াও বোকামি। তোয়ালেটা কি কাঁচা ছিল। মুখ মুছতে গিয়ে একটা মেয়েলি গন্ধ নাকে এল। এটি কি জয়তীর নিজস্ব তোয়ালে? সমস্ত শরীরে যেন জয়তীর অস্তিত্ব ছড়িয়ে পড়ল। খুব ভালো লাগছিল গৌরবের। এতদিন পরে জয়তীকে দেখেও তার তো একটুও অনাত্মীয় বলে মনে হচ্ছেনা। জয়তী যতই তাকে কঠোর কথা বলুক, যতই তাকে দূরে সরে যেতে বলুক তবু তার বিশ্বাসের মানুষটা ঠিক একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। গৌরব এই মুহূর্তে জয়তীর বলা কথাগুলো কোনো বিশ্লেষণ করতে চাইছিল না।

ভাত, ডাল, ভাজা, পোস্ত আর ছোট মাছের ঝোলও যে রান্নার কল্যাণে কিরকম উপাদেয় হয়ে ওঠে তা নতুন করে আবিষ্কার করল গৌরব। মাসীমার সমস্ত কুণ্ঠা সে এর মধ্যেই দূর করতে পেরেছে। খেতে খেতে জয়তী জিজ্ঞাসা করল, তোমার আমেরিকার জীবন সম্পর্কে বলো।

গৌরব বলল, খুব বিপদে ফেললে। ওখানকার জীবন মানে যন্ত্রের মতো চলা। তার বাইরে যা ঘটে তাতে সময় দেবার মতো সময় আমার ছিল না। মাসীমা পরিবেশন করছিলেন। জানতে চাইলেন, ওখানে ভাত, ডাল পেতে না, না?

গৌরব হেসে ফেলল, সব পাওয়া যায় মাসীমা। এই কলকাতার মতো। তবে রেঁধে খেতে হয়। চাপে পড়ে আমাকেও কাজ চালানোর মতো রান্না শিখতে হয়েছে। এখানে এসে তো একদিন বাড়ির সবাইকে খাইয়েছি। বাঙালি যেখানেই যাবে সেই জায়গাটাকেই বাঙলাদেশ করে ছাড়বে।

তোমার কোনো অসুবিধে হতো না?

প্রথম প্রথম হতো। মানিয়ে নিতে যেটুকু সময়। বোম্বে থেকে কলকাতায় আসতে ট্রেনে যে সময় লাগে তার থেকে অনেক কম সময়ে নিউইয়র্ক থেকে কলকাতায় আসা যায়।

প্রণতিকে দেখে গৌরব অবাক। আজকের আধুনিকতম যুবতীর সাজগোজ ওরশরীরে। চুলগুলোকেও ছেঁটে তুলে রেখেছে কাঁধের ওপরে। কিন্তু গৌরবকে দেখা মাত্র সে চিৎকার করে উঠল, হোয়াট এ সারপ্রাইজ! তুমি কবে এলে?

তোমার বিয়ের গন্ধে গন্ধে চলে এলাম। গৌরব ওকে দেখছিল। জয়তীর থেকে অন্তত বছর পাঁচেকের ছোট মেয়েটির এমন পরিবর্তন? মাসীমা বলেছিলেন কিন্তু চোখে না দেখলে বিশ্বাস হতো না। দিদি যেখানে ছিল সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু বোন এগিয়ে গেছে অনেক।

প্রণতি হাসল, অ্যাদ্দিন কী করে আমাদের ভুলে ছিলেন মশাই?

গৌরব বলল, তার জন্যে মরমে মরে আছি। কিন্তু তুমি কি কাণ্ড করেছ বলো তো?

কি কাণ্ড?

এই সাজগোজ?

বই-এর মলাট দেখেছেন? রংচঙে না হলে কেউ পাত্তা দেয় না! রবীন্দ্রনাথের বই-এর মতো মলাট ছাপলে আজকাল আর বই বিক্রি হবে না। একসময় কত অ্যাপ্লিকেশন করেছি চাকরির জন্যে, দু-একটা ইন্টারভিউ-ও দিয়েছি কিন্তু পাত্তাই পাইনি। তারপর স্পোকেন ইংলিশ-এ ভর্তি হলাম গ্র্যাজুয়েট হয়ে। কথাবার্তার কায়দা রপ্ত করে নিয়ে চেহারাটাকে পাল্টে ফেললাম সাজগোজের বাহারে। ব্যস, চাকরি জুটে গেল। বড় কোম্পানির রিসেপশনিস্ট। বড় বড় কর্তাদের দেখে দেঁতো হাসি হাসতে হলো। এই সাজগোজ না হলে আবার কোম্পানির প্রেস্টিজ থাকবে না। দুবছরের মধ্যে অফার আসছে অন্য কোম্পানি থেকে। বোঝ ব্যাপারটা!

গৌরব ওর কথা শুনছিল। বলার ধরনটাও পাল্টে গিয়েছে। সে জিজ্ঞাসা করল, তা এই কাণ্ডটা হলো কী করে? ঘটালে না ঘটল?

দুটোই বলতে পার। হেসে উঠল প্রণতি। মাসীমা ওকে তাড়া দিলেন খাওয়া দাওয়া সারতে। প্রণতি ঘাড় বেঁকাল, না মা আজ লাঞ্চ স্কিপ করব।

মানে?

দুপুরে খাব না। হেভি ব্রেকফার্স্ট হয়ে গেছে।

মাসীমা বিরক্ত মুখে চলে গেলেন। জয়তী নিচে। সম্ভবত ঘরটা ঠিকঠাক করে রাখছে অভ্যাগতদের জন্যে। প্রণতি দোতলার ঘরে গৌরবকে নিয়ে এসে বসল। গৌরব জিজ্ঞাসা করল, ছেলেটি তোমার সঙ্গে কাজ করছে?

ওঃ নো। অফিসের ছেলেকে বিয়ে করা যায়? ও আমাদের অফিসে আসত নিজের কোম্পানির হয়ে। আপনার কথা বলুন তো এবার। দিদিকে কবে বিয়ে করছেন?
 
এমন সাবলীলভাবে প্রশ্নটা করল প্রণতি যে গৌরব থতমত হয়ে গেল। প্রণতি সেটা লক্ষ্য করেই বলল, আমি বুঝি না আপনাদের ব্যাপারটা। আপনি পড়ে রইলেন সেখানে আর ইনি এখানে। দিদির তো বয়স হচ্ছে। ওকে জিজ্ঞাসা করলে উত্তর দেয় না। যেন এ সংসারে সব দায় মাথায় নিয়ে বসে আছে। না-না। এবার আপনারা বিয়েটা করে ফেলুন।

গৌরব বলল, আগে তো তোমারটা মিটে যাক, তারপর ভাবা যাবে।

এই সময় বাড়ির বাইরে একটা গাড়ি থামবার শব্দ হলো। সঙ্গে সঙ্গে প্রণতি বলে উঠল, এসে গেছে।

গৌরব বলল, কী করে বুঝলে?

বাঃ গাড়িটার আওয়াজ আমার চেনা। আপনি নিচে যান গৌরবদা, দিদি একা রয়েছে।

ছেলেটিকে দেখতে বেশ ভালো লাগল। নমস্কার করে বলল, আমি অঙ্গন। প্রণতি আছে? জয়তী বলল, হ্যাঁ। আপনি বসুন। প্রণতি এখনই আসছে। আমি ওর দিদি, জয়তী।

অঙ্গন এগিয়ে এসে প্রণাম করতে চাইলে জয়তী এক লাফে সরে দাঁড়াল, কি হচ্ছে! না-না। আপনার প্রণাম নেওয়ার বয়সে পৌঁছাই নি।

অঙ্গন সপ্রতিভ ভঙ্গিতে বলল, সম্পর্কে আপনি বড়।

জয়তী চট করে গৌরবকে দেখে নিল। সম্পর্ক ঘোষিত হবার আগেই অঙ্গন সম্পর্কের কথা বলছে, কৌতুকটা ঠোঁটে জড়িয়ে গেল। সে মুখ ফিরিয়ে বলল, বসুন আপনি। আলাপ করিয়ে দিই, আমাদের বন্ধু গৌরব।

গৌরব নমস্কার করতে গিয়ে শুনল ছেলেটি বলছে, ও, আপনিই তো স্টেটসে থাকেন?

থাকতাম। কিন্তু আপনি জানলেন কী করে? গৌরব অবাক।

নিজেদের গল্প তো মানুষ মানুষের কাছেই করে। অঙ্গন হাসল, ইয়ে, মাসীমা কোথায়? ওঁর সঙ্গে একটু কথা বলতাম।

জয়তী একটু অপেক্ষা করতে বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। গৌরব তখনও অবাক হয়ে দেখছে। এবাড়ির একটি মেয়ের পাণিপ্রার্থী হয়ে এসেও ছেলেটি মধ্যে কোনো জড়তা নেই। খুব সহজ ভঙ্গি তে কথা বলছে অথচ বাচাল বলে মনে হচ্ছে না। নিজে কখনই এত স্বতঃস্ফূর্ত কথা বলতে পারত না সে।

গৌরব জিজ্ঞাসা করল, প্রণতি বলছিল আপনি যে কোম্পানিতে আছেন তার সঙ্গে ওদের অফিসের বেশ যোগাযোগ রয়েছে।

হ্যাঁ। না হলে তো আলাপই হতো না। প্রণতি আপনাদের কথাও বলেছে আমায়। সত্যি এতদিন এভাবে সম্পর্ক রেখে চলা, মানে দুজনের দিক দিয়েই, বড় একটা দেখা যায় না। অঙ্গন হাসল। জবাবে কোনো কথা খুঁজে পেল না গৌরব। ছেলেটি তার চেয়ে বয়সে ছোট। ও যে কথাগুলো বলল তাতে প্রশংসা না খোঁচা রয়েছে বোধগম্য হচ্ছে না। এই সময় মাসীমাকে নিয়ে ফিরে এল জয়তী। মাসীমার হাতের ট্রে-তে কয়েক প্লেট খাবার এবং চা।

অঙ্গন উঠে দাঁড়াল, কি সর্বনাশ! না না। এত খাবার খেতে পারব না। তাছাড়া এখন তো খাওয়ার সময় নয়। প্রণতি জানে আমি বেনিয়মে খাই না।

মাসীমা এবার একটু নিচু গলায় বললেন, এমন কিছু নয়। প্রথম এলে এবাড়িতে।

জয়তী বলল, আমি আপনার অসুবিধে বুঝতে পারছি। যা ইচ্ছে হয় নিন।

অঙ্গন একটা মিষ্টি তুলে নিয়ে প্লেট ফেরত দিলো। সেটি খেয়ে নিয়ে বলল, আমি কেন এসেছি সেকথা নিশ্চয়ই প্রণতি আপনাদের বলেছে। আমি ও প্রণতি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে চাই যদি আপনারা অনুমতি দেন।

মাসীমাকে বড় মেয়ের দিকে তাকাতে দেখল গৌরব। মাসীমা বললেন, এতো আমার পরম সৌভাগ্য। প্রণতির মুখে তোমার বাড়ির কথা শুনেছি। আমরা একদিন গিয়ে তোমার মা-বাবার সঙ্গে কথা বলতে চাই।

অত দেরি তো করা যাবে না মাসীমা। মানে, সময় পাওয়া যাবে না। তাছাড়া আমার মা-বাবা অতসব ফর্মালিটি না মানলেও কিছু মনে করবেন না।
 
আসল সমস্যাটা প্রণতি আপনাদের বলতে লজ্জা পেয়েছে। আমরা আগামী কালই বিয়ে করতে চাইছি। ইনফ্যাক্ট নোটিস দেওয়া হয়ে গিয়েছে। এছাড়া আমাদের কোনো উপায় ছিল না।

মাসীমার গলা থেকে আর্তনাদের মতো স্বর বেরিয়ে এল, কেন?

প্রণতি মুখ নিচু করে দাঁড়িয়ে ডান পায়ের বুড়ো আঙুল মেঝেয় ঘষছে।

অঙ্গন বলল, আসলে আমি ট্রান্সফার হয়ে যাচ্ছি গুজরাটে। পরশু সকালের প্লেনে যেতে হবে। অন্তত বছর খানেকের মধ্যে কলকাতায় আসার ছুটি পাব না। তাই কাজটা ফেলে রেখে যেতে চাই না।

এরকম ভাবে বিয়ে হবে? সানাই বাজবে না, মন্ত্র পড়বে না, লোকজন খাবে না? মাসীমা যেন নিজের সঙ্গেই কথা বলছিলেন।

অঙ্গন বলল, আমি আপনার সেন্টিমেন্ট বুঝতে পারছি। কিন্তু প্রয়োজনের চেয়ে সেন্টিমেন্ট তো বড় হতে পারে না।

আমি জানি বাবা, আমাকে মেনে নিতে হবে। মেনে নিলে হয়তো আমি কষ্ট পাব, একাই পাব, না মানলে তোমরা সবাই পাবে। বেশ, যা ভালো বোঝো করো। মাসীমা মাথার ঘোমটা টেনে দিলেন।

প্রণতি কথা বলল। ঘরে ঢোকার পর এই প্রথম সে মুখ খুলল, মা। এভাবে বোলো না। ওর সমস্যাটা তো বুঝতেই পারছ। তাছাড়া সানাই বাজিয়ে মন্ত্র পড়ে লোক খাইয়ে আমার বিয়ে হলো না বলে একটুও আফসোস নেই। বরং ভালই হলো। আমার যা আছে তা দিয়ে শখ মেটাতে পারব আর দিদিটার ওপরও কোনো চাপ পড়ল না।

মাসীমা বললেন, তোরা বসে গল্প কর। আমি আসি।

অঙ্গন বলল, না মাসীমা, আজ আমাদের গল্প করার একটুও সময় নেই। পরশু যাচ্ছি। কাল তো ওসব করেই চলে যাবে। তাই আমি আর প্রণতি একটু কেনাকাটা করতে বেরুবো। নইলে ওখানে গিয়ে খুব বিপদে পড়তে হবে।

প্রণতি বলল, সত্যি কি ঝামেলা। সব একদিনে কিনতে হবে।

মাসীমা কাতর গলায় জিজ্ঞাসা করলেন, কখন ফিরবি?

প্রণতি বলল, দেখি। আমরা না হয় রাত্রের খাওয়া শেষ করেই ফিরব। চলো। ওহো, গৌরবদা, চলি। গৌরব মাথা নাড়ল। প্রণতি আর অঙ্গন বেরিয়ে যেতেই মাসীমা মুখে আঁচল চাপা দিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন। জয়তী অসহায় চোখে একবার গৌরবকে দেখে মাকে জড়িয়ে ধরল, মা, ভেঙে পড়ো না। তুমি তো চাও প্রণতি সুখী হোক। ও যদি এই করে সুখ পায় তাহলে তুমি কেন কাঁদবে? তোমার মতো করে যে সবাই সুখী হবে তা কেন ভাবছ? মাসীমার কানে এসব কথা ঢুকছিল না। জয়তী মাকে ধীরে ধীরে ভেতরে নিয়ে গেল।
 
গৌরব চুপচাপ বসেছিল। তার চোখের সামনে যে দৃশ্য অভিনীত হলো তাতে কারো ভিলেনের ভূমিকা নেই। প্রণতি ও অঙ্গন তো এমনটা করতেই পারে। নইলে বেচারাদের আগামী এক বছরের মধ্যে বিয়ে হবে না। মাসীমার ভেঙে পড়াটাও খুব স্বাভাবিক। সন্তানের এমনভাবে চলে যাওয়া কোন্ মা চায়! প্রণতি চলে যাওয়ার পর জয়তী ছাড়া কেউ থাকবে না তার। তাহলে সেক্ষেত্রে তার কী ভূমিকা? এখন এই অবস্থায় কোন মুখে সে জয়তীকে বিয়ে করার প্রস্তাব ওঁকে দেবে। কিংবা সেটাকে যদি জীবনের সত্য বলে ধরে নেওয়া হয় তাহলে ভদ্রমহিলার যে বাসনা ছোট মেয়ের ক্ষেত্রে অপূর্ণ রইল তা পূর্ণ করার দায় এসে পড়ে। কিন্তু টোপর পরে মন্ত্র উচ্চারণ করে বিয়ের পিঁড়িতে বসার সাধ তার নেই, জয়তীর আছে বলে মনে হয় না। ওটার জন্যে মন এবং শরীরের একটা বয়স থাকে।

জয়তী ফিরে এল। মুখের মেঘ চকিতে সরাল, তোমার খুব অস্বস্তি হচ্ছে, না?

তোমার মায়ের জন্যে খারাপ লাগছে। গৌরব নড়েচড়ে বসল।

আমারও। কিন্তু কিছু করার নেই। প্রণতিদের সমস্যাটা ভাবতে হবে আগে। আর সত্যি কথা বলতে কি অঙ্গন যদি মায়ের কথায় সম্মত হয়ে মাসখানেক সময় দিত তাহলে আমাদেরই বিপদে পড়তে হতো। মায়ের মাথায় আসবে না সেটা। জয়তী গম্ভীর হলো।

কেন?

বাঃ। তুমি তো দেখছি মায়ের মতো কথা বলছ! আনুষ্ঠানিক বিয়ের খরচ জানো? তার ওপর লোক নেমন্তন্ন করে খাওয়াতে গেলে আর দেখতে হতো না। কদিন চাকরি করে প্রণতি বড় জোর হাজার চার পাঁচ জমিয়েছে। আমি পারতাম? যেখানে সুযোগ আছে সেখানে গিয়ে হাত পাততে হতো। স্বার্থপরের মতো কথা বলছি হয় তো, কিন্তু এটাই বাস্তব।

তোমার তো এখন দায়িত্ব বেড়ে গেল।

মানে?

প্রণতি যদি বিয়ের পর গুজরাটে চলে যায়, যাচ্ছেই, তখন সংসারেও যেটা কনট্রিবিউট করত সেটা বন্ধ হয়ে যাবে।

হবে। তবে এখন তো আমরা দুজন। কোনোমতে চলে যাবে।

জয়তী, তোমার সঙ্গে আমার কিছু কথা আছে।

বলো।

এখন নয়, আজ নয়। তোমার এর মধ্যে কবে সময় হবে বলো?

সময়? বড় ঝামেলা জানো? এত খাতা দেখতে হচ্ছে। আচ্ছা, পরশু হলে কি তোমার অসুবিধে হবে? ধরো বিকেল তিনটেয়। সেদিন দুটোয় ছুটি হয়ে যাবে আমার।

চমৎকার। তিনটের সময় কোথায় অপেক্ষা করব?

স্কুলের কাছে নয়।

ফ্লুরিস। পার্কস্ট্রিটের সেই রেস্টুরেন্টা মনে আছে? গুড। সেখানেই। আজ তাহলে চলি। মাসীমাকে আর বিরক্ত করব না। ওঁকে বলে দিও। গৌরবকে দরজা পর্যন্ত পৌঁছে দিলো জয়তী। হঠাৎ সে বলল, গৌরব?

গৌরব ঘুরে দাঁড়াল, তার মনে হলো জয়তীকে এখন একটু বয়স্ক দেখাচ্ছে। আর অমনি জয়তী বলল, তোমার বয়স হচ্ছে।

মানে? হেসে ফেলল গৌরব।

তুমি এত ধীরে সুস্থে কথা বলতে না এর আগে।

বারো বছর বড় বেশি সময়। তাই না? এলাম। গৌরব বেরিয়ে এল।

.
 
টনির ব্যাগ থেকে আচমকা একটা চিঠি আবিষ্কার করে মলি হতবাক। চিঠিতে ওর স্কুলের প্রিন্সিপাল জানিয়েছেন যে তিনি ওর গার্জেনের সঙ্গে কথা বলতে চান। চিঠিটা আজ থেকে দিন সাতেক আগে লেখা। সাতদিন ধরে ওই চিঠি বহন করছে টনি কিন্তু কাউকে জানায়নি। হয়তো ওই চিঠির কথা কেউ জানতেও পারত না সহজে যদি আজ মলি দুপুরে গ্যাসের দোকানে না যেত। ছেলেমেয়েরা স্কুলে বেরিয়ে গেলে গ্যাস ইলেকট্রিক বিল প্রভৃতি বাইরের কাজগুলো মলি নিজেই করে আসে। সারাদিন বাইরের জগতে হাঁটাচলার ওইটুকুনি যা সুযোগ। সেজেগুজে বেরুতে কার না ভালো লাগে। গ্যাসের দোকান থেকে বেরিয়ে সে রিক্সা নিয়ে বস্তির পাশের মাঠ দিয়ে সুপার মার্কেট যাচ্ছিল। হঠাৎ বাঁ দিকে চোখ পড়তেই তার বুক ধড়ফড় করতে লাগল। টনি না?

রিকশাওয়ালাকে থামতে বলে আর একটু তাকিয়ে নিঃসন্দেহ হলো সে। গাছের তলায় বই এর ব্যাগ রেখে টনি গুলি খেলছে তিনটে বস্তির ছেলের সঙ্গে। ওদের কারো গায়ে জামা নেই। কেউ ছেঁড়া প্যান্ট পরে রয়েছে। কিন্তু ওরা যেভাবে চেঁচিয়ে কথাবার্তা বলছে তাতে দিব্যি মিশে গেছে টনি। শুধু ওর পরনে স্কুলের ইউনিফর্ম রয়েছে নইলে ওকে কি মলি আলাদা করে চিনতে পারত! ছেলের স্কুল আরম্ভ হবার কথা সাড়ে আটটায়। অর্থাৎ আড়াই ঘণ্টার বেশি ওর ক্লাস করার কথা। অথচ এই সময় ছেলে কয়েকটা নোংরা ছেলের সঙ্গে বসে গুলি খেলছে। মলির রিকশা যে মাঠের প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে সেদিকে ওর হুঁশ পর্যন্ত নেই। গুলি নিয়ে তিনজনের মধ্যে এবার জোর মারপিট লাগল। মলি দেখল যে টনিকে বাড়িতে শিশুর মতো মনে করা হয় সে বিচারকের ভূমিকা নিয়ে ওদের ছাড়িয়ে দিল! এবার ওদের মধ্যে যে অপেক্ষাকৃত বড় সে পকেট থেকে বিড়ি আর দেশলাই বের করল। বুকের যন্ত্রণা শুরু হয়ে গেল মলির। টনি ওদের সঙ্গে বিড়ি খাবে নাকি?

ছেলে তিনটে যখন পালা করে বিড়ি টেনে টনির মুখের সামনে ওটা ধরল তখনই মলি মুঠো করে ধরল ছেলের জামার কলার, এই হচ্ছে? অ্যাঁ! পড়াশোনার জন্যে তোমাকে স্কুলে পাঠিয়ে নিশ্চিন্ত থাকছি আর তুমি এখানে বসে বিড়ি ফুঁকছ?

মায়ের হাতের টানে এবং চিৎকারে ভয়ে জবুথবু হয়ে গেল উনি। মুখের ওপর মলির হাতের আঘাত খেতে খেতে ককিয়ে উঠল, আমি বিড়ি খাইনি, কখনও খাইনি। সত্যি বলছি মা, কখনও বিড়ি খাইনি। টনি এবার চিৎকার করে কেঁদে ফেলতেই সঙ্গীরা খিলখিল করে হেসে উঠল। সেই হাসি শুনে কান্নাটাকে প্রায় গিলে ফেলল টনি। কিন্তু তার আগেই মলি তাকে টানতে শুরু করেছে। রিকশায় বসিয়ে তার খেয়াল হলো টনির ব্যাগটার কথা। সে চিৎকার করে ছেলেদের বলল, এই ওর ব্যাগটা দাও তো! ছেলেদের মধ্যে একজন ব্যাগটাকে এনে দিয়ে জিজ্ঞাসা করল, টিফিনটা আজ খাওয়া হলো না।

রিকশা চলতে শুরু করলে মলি চাপা গলায় ফুঁসে উঠল, এইসব হচ্ছে! আমি পরিশ্রম করে তোমাকে টিফিন করে দিচ্ছি আর তুমি এদের সেটা বিলোচ্ছ! উঃ কি শয়তান রে বাবা। তোমার বাবা ভাবছেন ছেলে আমার মন দিয়ে পড়াশোনা করছে, মানুষ হচ্ছে। আর ছেলে বস্তির ছেলের সঙ্গে গুলি খেলছেন। আমাদের ছেলে হয়ে তুই এত নিচ এবং খারাপ হলি কী করে? ছিঃ। টনি মুখ গুঁজে বসেছিল। আর মলির মুখ চলছিল সমানে। চলন্ত রিক্সায় বসে আশেপাশের মানুষজন বা ঘরবাড়ি কোনো কিছুই তার খেয়াল ছিল না। আচমকা এই ধাক্কা যেন তার সমস্ত বোধকে অসাড় করে দিয়েছিল।

বাড়িতে পা দিয়ে ছেলেকে নিয়ে ঘরে পৌঁছে দরজা বন্ধ করে বেধড়ক মারল সে। খাটে মুখ গুঁজে টনি সেই মার খেল চুপচাপ। চিৎকার, যেটা মলির গলা থেকে বের হচ্ছিল শুনতে পেলেন মা। তড়িঘড়ি ছুটে এলেন তিনি দরজায়। ধাক্কা দিতে লাগলেন পাগলের মতো, অ বউমা, কী হয়েছে। ছেলেটাকে স্কুল থেকে টেনে নিয়ে এসে মারছ কেন? অ বউমা।
 
শেষ পর্যন্ত শাশুড়ির গলা মলির কানে পৌঁছাল। সে দরজা খুলে হনহন করে বাথরুমে চলে গেল। মা ঘরে ঢুকে নাতিকে দেখলেন। টনি খাটে উপুড় হয়ে শুয়ে ফোঁপাচ্ছে। ধীরে ধীরে কাছে গিয়ে তিনি খাটে বসে নাতিকে জড়িয়ে ধরলেন, কী হয়েছে। কী করেছিস তুই! টনি জবাব দিলো না। আরো ঘনিষ্ঠ হয়ে মা বললেন, ও দাদু আমাকে বল। কী করেছিস যে এমন মার মারল বউমা। ইস্। দেখি আমার কাছে আয়।

আর তখনই বাথরুম থেকে বেরিয়ে এলো মলি, থাক আর আদর দেবেন না। ওই ছেলে বংশের নাম ডোবাবে। ছি ছি। ঘেন্নায় আমার শরীর রি রি করছে। ওইটুকুনি পুচকের পেটে এত। আমাদের সঙ্গে অভিনয় করে যাচ্ছে!

মা ঝাঁঝিয়ে উঠলেন, তুমি কিন্তু মুখে যা আসছে তাই বলছ বউমা। কী করেছে টনি আমাকে বলবে তো! ওকে স্কুল থেকে আনতে গেলে কেন?

স্কুল থেকে আনিনি। আপনার নাতি বস্তির ছেলেদের সঙ্গে বসে রোজ গুলি খেলেন। স্কুলে যাওয়ার নাম করে বেরিয়ে বোধহয় ওদের সঙ্গে বসে বিড়ি খাওয়া প্র্যাকটিস করেন।

হঠাৎ টনি ওই অবস্থায় চিৎকার করে উঠল, মিথ্যে কথা। আমি কখনও বিড়ি খাই নি।

চুপ। আবার গলা তোলা হচ্ছে। আস্পর্দা বেড়ে গেছে, না? দাঁড়াও আজ তোমার হচ্ছে।

মলি হন হন করে বাইরে বেরিয়ে এল। রাগত ভঙ্গিতে রিসিভার তুলে সৌরভকে ফোন করল। বেশ কয়েকবার ডায়াল করেও সে শুধু এনগেজড টোন শুনতে পেল। রাগে সশব্দে রিসিভার রেখে দিয়ে সে দুহাতে মুখ ঢেকে হু হু করে কেঁদে ফেলল।

বিকেলের রোদ মরার আগেই বাড়িতে ফিরল গৌরব। জয়তীর সঙ্গে দেখা হওয়ার পর থেকেই মন ভালো হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রণতির ব্যাপারটা ঘটে যাওয়ার পর তাতে অস্বস্তির ধুলো জমল। কিন্তু বাড়িতে ঢুকেই তার মনে হলো কোনো গোলমাল হয়েছে। সে ভেবেছিল মা এলে অনুযোগ জানাবে না খাওয়ার জন্যে। জয়তীদের বাড়িতে খেয়ে এসেছে বলে মাকে চমকে দেবে। কিন্তু না মা না বউদি কাউকেও সে দেখতে পাচ্ছিল না। দোতলায় উঠে সে দেখল মলি চুপচাপ ব্যালকনিতে বসে আছে। চেহারা দেখেই বোঝা গেল ঝড় বয়ে গেছে। সে কাছে এগিয়ে গিয়ে একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসল, কী হলো? এমন বিরহিনীর মতো চেহারা কেন? দাদার সঙ্গে আবার লেগেছে।

মলি জবাব দিলো না। ঠোঁট টিপে আকাশের দিকে তাকাল। গৌরব সেটা লক্ষ্য করে বলল, মা কোথায়? এবারও জবাব পেল না। গৌরব আর ঘাটাল না। চেয়ার ছেড়ে উঠে সে ভেতরে ঢুকতেই মায়ের ঘরে তাকে শায়িত দেখতে পেল। গৌরব কিছু বলার আগে মা জিজ্ঞাসা করলেন, খেয়েছিস? মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলতেই অনুযোগ এল, একটা ফোন করতে পারতিস তো!

গৌরব বলল, ও বাড়িতে ফোন ছিল না। তোমাকে তো বলেছি দুটোর মধ্যে না ফিরলে খেয়ে নেবে। কিন্তু কী হয়েছে বলো তো? বউদি মুখ অন্ধকার করে বসে, তুমি এই সময় শুয়ে আছ!
 
মলির কাছে তিনি যা শুনেছেন সেই বৃত্তান্ত জানল গৌরব! মা বললেন, বউমা তো আর কিছু আমাকে বলল না। সবচেয়ে অবাক কাণ্ড ওই টনিটাকেও জিজ্ঞাসা করে আমি কিছু জানতে পারিনি। আমাকে কি তোরা সবাই পরের বাড়ির মানুষ বলে মনে করিস?

এই রে! তুমি আবার এসব গায়ে মাখতে শুরু করলে। হয়তো টনি এমন কিছু করেছে যা স্বীকার করতে লজ্জা পাচ্ছে আর বউদির তাই মনে খুব লেগেছে। একটু সময় যেতে দাও নিশ্চয়ই সব বলবে।

আর কখন বলবে। ছেলেটাকে বাথরুমে বন্ধ করে রেখেছে। আমি খুলে দিতে গেলাম, ঝাঁঝিয়ে উঠল। বলেছে তিনদিন খাবার দেবে না।

দেখছি। তুমি খেয়েছ?

মা জবাব দিলেন না। গৌরব একটু রুক্ষ হলো, কাজটা তুমি ঠিক করোনি। সে আবার ব্যালকনিতে ফিরে এল, বউদি, তোমার সঙ্গে কথা আছে। দুটো।

শেষ শব্দটি শুনে মুখ ফেরাল মলি। কিছু বলল না, কপালে ভাঁজ পড়ল শুধু।

গৌরব বলল, টনি স্কুলে না গিয়ে বস্তির ছেলেদের সঙ্গে গুলি খেলেছে। ব্যাপারটা আমাকেও অবাক করেছে। কেন করেছে জিজ্ঞাসা করেছিলে?

কেন আবার? আমার কপাল পোড়াতে। বংশের জেদ জানো না। অত মার খেয়েও মুখ খুলল না।

টনির ব্যাপারটা তুমি আমার ওপর ছেড়ে দেবে? গৌরব হাসল।

মানে?

আমি দেখি কিছু বের করা যায় কি না!

যা ইচ্ছে করো। ওর সঙ্গে কথা বলতেও ইচ্ছে নেই আমার।

গৌরব ঘুরে দাঁড়াতেই মলি জিজ্ঞাসা কর, আর একটা কী কথা বলতে চেয়েছিলে?

ও হ্যাঁ। মায়ের খাওয়া হয়নি। মুখ দেখে মনে হচ্ছে তোমার পেটেও কিছু পড়েনি।

কথাটা শোনামাত্র মলি উঠল। গৌরব জিজ্ঞাসা করল, কোথায় চললে হঠাৎ?

মায়ের খাবার আনতে।

তুমি?

আমার বমি বমি লাগছে। মলি দাঁড়াল না।

গৌরব এল বাথরুমের সামনে। এই বাথরুম প্রত্যহ ব্যবহৃত হয় না। অতএব এখানে টনিকে স্বচ্ছন্দে তিনদিন আটকে রাখা যেতে পারে। সে নিঃশব্দে ছিটকিনি নামিয়ে দরজা খুলল।

টনি চৌবাচ্চার ওপর বসে আছে। দরজা খুলতেই চমকে মুখ তুলে সে কাকাকে দেখতে পেল। এক মুহূর্তে চোখাচোখি, টনি চট করে চোখ নামিয়ে নিল। গৌরব ডাকল, বেরিয়ে আয়।

টনি গোঁজ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। গৌরব হেসে ফেলল, শুনতে পাচ্ছিস না?

মা বলেছে এখানেই তিনদিন থাকতে।

ঠিক আছে। মায়ের সঙ্গে আমার কথা হয়ে গেছে। তোমাকে আর আদেশ পালন করতে হবে না। আয় বলছি। শেষের দুটো শব্দ একটু জোরে উচ্চারিত হতেই টনি এগিয়ে এল। গৌরব ওর হাত ধরে নিজের ঘরে নিয়ে গিয়ে খাটে বসাল, তোর যদি বিড়ি সিগারেটে টান দেওয়া ইচ্ছে হয়েছিল তাহলে আমাকে বললি না কেন?

আমার কখনও ইচ্ছে হয়েনি। মা ভুল দেখেছে। ওরা বিড়ি খাচ্ছিল। তারপর আমার দিকে বাড়িয়ে জিজ্ঞাসা করল, আমি খাব কি না। আমি মাথা নেড়ে না বলেছিলাম। কিন্তু মা দেখতে পায়নি। আমাকে মা বিশ্বাস করল না। টনি এবার শব্দ করে কেঁদে উঠল।

ওকে কাঁদতে দিল গৌরব। এবং এর ফাঁকে পেছনের দরজায় মাকে এসে দাঁড়াতে দেখে সে চোখের ইশারায় সরে যেতে বলল। বৃদ্ধা কী বুঝলেন তিনিই জানে, বিষণ্ণ মুখে চলে গেলেন। কান্না কমে এলে গৌরব জিজ্ঞাসা করল, এবার পরিষ্কার করে বল তো কী হয়েছিল!
 
জবাব দিলো না টনি। বাঁ হাতের আঙুল বেড কভারে ঘষতে লাগল। সেটা লক্ষ্য করে গৌরব ঠিক করল প্রশ্ন করে উত্তর পেতে হবে। সে জিজ্ঞাসা করল, তুই যাদের সঙ্গে গুলি খেলিস তাদের নাম কী?

টনি ভেজা চোখ তুলল একবার, বাপী, বুড়ো আর মাদা।

মাদা? কী নাম রে?

ওই অবস্থাতেও টনির ঠোঁটে হাসি ফুটল, বস্তিতে আরও খারাপ খারাপ নাম হয়।

তোর সঙ্গে ওদের আলাপ হলো কী ভাবে?

ওরা গুলি খেলছিল। আমি দেখছিলাম। আমাকে খেলতে ডাকল।

তোর তো পকেটে গুলি ছিল না!

ওদের টিফিন খেতে দিয়েছিলাম। ওরা আমাকে চারটে গুলি দিয়েছিল।

জিতেছিস?

আবার হাসি ফুটল টনির মুখে। পকেট থেকে দুটো গুলি বের করে দেখাল। দেখিয়ে রেখে দিলে খাটের ওপর। গৌরব গুলিগুলোকে দেখল। একটা তুলে নিল, ছেলেবেলায় আমিও গুলি খেলতাম। কিন্তু রোজ হারতাম।

উৎসাহিত গলায় জিজ্ঞাসা করল টনি, সত্যি?

মাথা নাড়ল গৌরব, কিন্তু তুই স্কুলে না গিয়ে গুলি খেলছিস কেন?

স্কুলে যেতে আমার ভালো লাগে না।

কদিন যাচ্ছিস না?

এই সপ্তাহটা।

কিছু হয়েছিল স্কুলে?

হুঁ।

কী হয়েছিল?

হেডমাসাটার মশাই আমাকে মিছিমিছি দোষ দিয়েছিল, আমি নকল করিনি। আবার কান্না ছিটকে বেরিয়ে আসতে চাইল টনির গলা থেকে। গৌরব সেটা হতে না দিয়ে চটপট জিজ্ঞাসা করল, হেডমাস্টার মশাই বলেছে তুই নকল করেছিস?

হুঁ। মিথ্যে কথা। কান্নাটাকে গিললো টনি।

কী হয়েছিল বল তো আমাকে?

টনি যা বলল তা এই রকম : সে পরীক্ষার হলে বসে মন দিয়ে লিখছিল। সব কটা উত্তর তার জানা। ওর পাশে সুনীল নামের একটি ছেলে বসেছিল। থেকে থেকে সুনীল তাকে খোঁচাচ্ছিল প্রশ্নের উত্তর জানতে। টনি তাকে বাধ্য হয়ে উত্তর বলে যাচ্ছিল। সুনীল তাতেও সন্তুষ্ট না হয়ে ঝুঁকে তার খাতা থেকে কপি করছিল উত্তরগুলো। সে মুখ ফিরিয়ে সুনীলকে জিজ্ঞাসা করছিল কেন সে লিখতে পারছে না নিজে থেকে? আর সেই সময় হেডমাস্টার মশাই রাউন্ডে এসে ওকে কথা বলতে দ্যাখেন। সঙ্গে সঙ্গে চিটিং-এর অভিযোগে তিনি ওর পরীক্ষা বন্ধ করে দেন। সেদিন ছিল শেষ পরীক্ষা। ওর শেষ উত্তর লেখা বাকি ছিল। নিজের ঘরে ডেকে নিয়ে হেডমাস্টার মশাই খুব বকেন ওকে। কোনো কথা শুনতে চান না। শেষ পর্যন্ত গার্জেনদের ডেকে পাঠিয়ে একটা চিঠি দেন ওর হাতে। ঘটনাটা বলে উনি বলল, কিন্তু বিশ্বাস করো, সুনীল আমারটা কপি করেছে, অথচ ওকে কিছু বলেননি হেডমাস্টার মশাই।

চিঠিটা দাদাকে দিয়েছিস?

নীরবে মাথা নেড়ে না বলল টনি। গৌরব জিজ্ঞাসা করল, কেন?

রাত্রে দিতে গিয়েছিলাম। তখন বাপি মায়ের সঙ্গে খুব ঝগড়া করছিল। ভয়ে দিতে পারিনি। পরদিন মা এমন গম্ভীর ছিল কাছে যেতেই সাহস পাই নি। স্কুলের সময় হয়ে গেলে আমি জামাকাপড় পরে বেরিয়েছিলাম। হেডমাস্টার মশাই বলে দিয়েছিলেন, গার্জেন না এলে আমাকে ক্লাশে ঢুকতে দেওয়া হবে না। কী করব বুঝতে না পেরে আমি রোজ রাস্তায় ঘুরে বেড়াতাম যতক্ষণ ছুটির সময় না হয়।

আমাকে দেখাসনি কেন?

ভয় করছিল।

চিঠিটা কোথায়?

মায়ের কাছে। মা আজ আমার ব্যাগ থেকে পেয়েছে।

তুই যা বললি তাতে একটাও মিথ্যে নেই তো?

না। বিশ্বাস করো। সব সত্যি।

তোকে আমি বিশ্বাস করছি টনি। কিন্তু কোনো কথা বানিয়ে বললে আমি খুব অপমানিত হব, একথাটা মনে রাখিস। গৌরব উঠল।

আমি বানিয়ে বলছি না কাকু।

গৌরব মায়ের ঘরে ঢুকে দেখল, টেবিলে মিষ্টির প্লেট পড়ে আছে। মলি দাঁড়িয়ে। মা গম্ভীর মুখে বসে আছেন। গৌরব বলল, একজনের কাছ থেকে সব খবর জানলাম। কিন্তু তোমরা করছোটা কি? মা, মিষ্টিগুলো খেয়ে নাও।

মা বললেন, ছেলেটা না খেয়ে আছে আর তুই আমাকে খেতে বলছিস?

টনি বউদি আর আমি এখনই চা জলখাবার খাব।

মলি মুখ ফেরাল, মানে?

গৌরব হাসল, বউদি, টনির কোনো দোষ নেই। তোমরা অসুখের প্রতিক্রিয়া দেখছ কিন্তু কী কারণে অসুখটা হলো তা খুঁজতে চাওনি। আমি কাল স্কুলে যাব। তবে তোমাদের দুজনকেই একটা অনুরোধ করব। টনির ঘটনাটা নিয়ে কালকের আগে আর কথা তুলো না। এমন কি দাদাকেও বলার দরকার নেই। শুনলে ওরও মেজাজ গরম হবে। ছেলেটার ওপর ঝামেলা করবে। অথচ ব্যাপারটা অন্যরকম। তোমাকে বলছি বউদি, টনিকে আমি পুরোপুরি দোষী করতে পারছি না।

কিন্তু আমি নিজের চোখে দেখেছি–। মলি কথা শেষ করতে পারল না। গৌরব তাকে হাত তুলে থামাল, তুমি যা দেখেছ সেটাও আবার সত্যি আবার যা দ্যাখনি তাও মিথ্যে নয়।

.
 
টনির সঙ্গে রিকশা থেকে গৌরব যখন স্কুলের সামনে নামল তখন প্রেয়ার সবে শেষ হয়েছে। ছেলেরা যে যার ক্লাসে যাচ্ছে। টনির বন্ধুরা ওঁকে চেঁচিয়ে ডাকতে মুখ নামাল সে। গৌরব বলল, মুখ নামাচ্ছিস কেন? অন্যায় না করলে সবসময় মাথা উঁচু করে থাকবি।

হেডমাস্টার মশাই-এর ঘরের সামনে গিয়ে সে নিজের কার্ড দিল পিওনকে।

পিওন বলল, উনি মিটিং করছেন। ডি.আই. এসেছেন।

ডি. আই. কে?

ডিস্ট্রিক্ট ইন্সপেক্টর অফ স্কুলস।

ও, কার্ডটা দাও। বলো মিটিং হয়ে গেলেই যেন আমাকে ডাকেন। কার্ড নিয়ে ভেতরে গেল পিওন। মাস্টারমশাইরা রেজিস্ট্রার নিয়ে ক্লাসে যাচ্ছেন। তাঁদের কেউ কেউ টনিকে লক্ষ্য করছিলেন।

গৌরব খুশি হলো, টনি আর মুখ নামাচ্ছে না।

স্কুলটা বড়। সামনে বাগান আছে। ক্লাস শুরু হয়ে গিয়েছে। এখন কোথাও কোনো শব্দ নেই।

গৌরব জিজ্ঞাসা করল, তোদের ক্লাস কোন্ দিকে?

টনি আঙুল তুলে একটা দিক দেখিয়ে দিল। গৌরব ভাবল টনির ক্লাস টিচারের সঙ্গে একটু কথা বললে ভালো হতো। ভদ্রলোকের মতামত জানা যেত। একটি ছাত্রের অভ্যেস সম্পর্কে তার ক্লাস টিচারই সবচেয়ে ভালো জানতে পারেন। এই সময় ভেতর থেকে বেল বাজল। পিওন ঘুরে এসে বলল, আপনাকে ডাকছে।

গৌরব টনিকে নিয়ে ঘরে ঢুকল পর্দা সরিয়ে। লম্বা টেবিলের পিছনে যিনি বসে আছেন তিনিই হেডমাস্টারমশাই। পাশে আর এক ভদ্রলোক গম্ভীর মুখে রয়েছেন। গৌরব নমস্কার করতেই হেডমাস্টারমশাই মাথা ঝুঁকিয়ে কার্ডটাকে তুলে নিলেন, আপনি গৌরব বসু?

আজ্ঞে হাঁ। কার্ডটা আমারই, আমি এর কাকা।

বসুন।

গৌরব বসল। হেডমাস্টারমশাই একবার টনিকে দেখে নিয়ে বললেন, আপনি বিদেশে থাকেন। ওর বাবা মা এল না কেন?

এখন আমি স্বদেশে আছি। তাছাড়া আপনি গার্জেনকে দেখা করতে বলেছেন বলে আমি এলাম। আমার সঙ্গে কথা বলতে অসুবিধা আছে?

না। নেই। বলুন।

আপনি কেন আমাদের ডেকেছেন সেটা জানি না।

হেডমাস্টারমশাই এবার টনির দিকে তাকালেন, তুমি বাড়িতে কিছু বলোনি?

টনি মাথা নাড়ল, হ্যাঁ।

হেডমাস্টারমশাই বললেন, এটা খুব সিম্পল কেস। আমার স্কুলের একটা সুনাম আছে। প্রতি বছর এইট্টি পার্সেন্ট ছেলে ফার্স্ট ডিভিশন পায়। তাছাড়া আমি ডিসিপ্লিনে বিশ্বাস করি। আপনাদের ছেলে সেটাকে ভঙ্গ করেছে। পরীক্ষার হলে নকল করাকে আমি অত্যন্ত গর্হিত কাজ বলে মনে করি। ওকে রাসটিকেট করতে পারতাম। তা না করে বলেছি ওকে ট্রান্সফার সার্টিফিকেট দিচ্ছি, আপনারা অন্য কোথাও ভর্তি করুন।

গৌরব বলল, নকল করাকে কেউ সমর্থন করবে না। কিন্তু আপনি নিশ্চিত ও নকল করেছে?

আমি নিজের চোখে দেখেছি মিস্টার বোস।

আপনি নিজের চোখে ওকে নকল করতে দেখেছেন?

হ্যাঁ। আমি যখন ক্লাস রুমের দরজায় যাই তখন ও সুনীলের খাতার ওপর ঝুঁকে পড়েছিল।

অর্থাৎ আপনি বলতে চাইছেন ও সুনীলের খাতা দেখে নকল করছিল?

এজ্যাক্টলি।

সুনীল ছাত্র হিসেবে কেমন?

সেটা কোনো কথা নয়। খারাপ ছাত্ররাও মাঝে মাঝে ভালো উত্তর লেখে।

আপনি ওদের ক্লাসটিচারের সঙ্গে কথা বলেছেন?

কেন?

আপনি কি ওদের দুজনের খাতা কমপেয়ার করেছেন? এ যদি সুনীলের দেখে লেখে তাহলে সুনীল ওর চেয়ে ভালো লিখবে। শেষ প্রশ্নটা অর্ধেক লেখার পর ওর খাতা আপনি কেড়ে নিয়েছিলেন। সুনীল নিশ্চয় সেই প্রশ্নের উত্তরটা পুরো লিখবে। অতএব আমি আপনাকে অনুরোধ করছি ওদের দুজনের খাতা এনে একটু মিলিয়ে দেখুন।

গম্ভীর মুখের ভদ্রলোক বললেন, খুব যুক্তিপূর্ণ কথা। ইউ ডু দ্যাট।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top