চটপট মুখ ধুয়ে নিয়ে গৌরব নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে মায়ের ঘরের দরজায় শব্দ করল। এই ঘরে এখন মা আর বনি শোয়। টনির আলাদা ঘর। এমন কাশির শব্দে বনির ঘুম ভেঙে যাওয়া উচিত। তিনবার আধ মিনিটের ব্যবধানে শব্দ করার পর মায়ের গলার স্বর শোনা গেল, কে?
গৌরব জানান দিলো। তার পরেও কিছুক্ষণ চুপচাপ। তারপর মা ধীরে ধীরে দরজা খুললেন। গৌরব দেখল মা পরিষ্কার, মুখে জলের ভেজা দাগও নেই। বরঞ্চ চোখে বিস্ময়, কিরে?
তুমি কাশছিলে?
কই! না তো।
কিন্তু আমি যে তোমার বাথরুম থেকে কাশির শব্দ ভেসে আসতে শুনলাম।
দূর! ভুল শুনেছিস।
গৌরব আচমকা শক্ত হয়ে গেল। সে ভুল শুনতে পারে না। মা ব্যাপারটা গোপন করতে চাইছেন। কিন্তু কেন? সে লক্ষ্য করল মায়ের মুখ সামান্য লাল। এই সময় তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তুই কি সারারাত জেগে বই পড়িস যে উল্টোপাল্টা স্বপ্ন দেখছিস ভোরবেলায়?
গৌরব হাসবার চেষ্টা করল, সরি। তুমি রেস্ট নাও। এখনই উঠো না। সে চলে এল ব্যালকনিতে। ব্যাপারটা তার একদম ভালো লাগছিল না। বাংলাদেশের মায়েরা তাদের অসুখের কথা প্রথম দিকে বলতে চান না। হয়তো কাউকে বিরক্ত করার জন্যে সঙ্কোচ হয় তাঁদের। কিন্তু মা তাদের দলে পড়বেন কেন? তার সঙ্গে তো খুব সহজ সম্পর্ক। তারপরেই মনে হলো সে হয়তো একটা সামান্য ব্যাপার নিয়ে বাড়াবাড়ি করছে। কত কি কারণে মানুষের কাশি হতে পারে। আর সবসময়ে যে কারণগুলো খুব ভয়ঙ্কর তা তো নয়।
এরকমটা ভাবতে মন কিছুটা হাল্কা হলো। সে বাগানের দিকে তাকাল, এখন ছায়া ছায়া চারধার। গাছপালাগুলো অত্যন্ত তাজা। সামান্য হাওয়ায় ওরা হাল্কা দুলছে। সে আকাশের দিকে তাকাতেই ধন্দে পড়ল। আকাশ বেশ মেঘলা। যাকে সে এতক্ষণ প্রথম ভোর বলে মনে করছিল সেই সময়টা নিশ্চয়ই পেরিয়ে গেছে। যেহেতু সূর্যদেবকে মেঘেরা অক্টোপাশের মতো ঢেকে রেখেছে তাই সেটার চেহারা ফোটেনি রোজের মতো। গৌরব ধীরে ধীরে নিচে নেমে এলো। সদর দরজা খুলে বারান্দা পেরিয়ে বাগানে এসে দাঁড়াল। সৌরভ মলি এখনও ওঠেনি। আজকের মেঘলা আকাশ নিশ্চয়ই ওদের সময় সম্পর্ক বিভ্রান্ত করছে। সৌরভ তো ছুটির দিনে সহজে বিছানা ছাড়তে চায় না। সে বাগানে হাঁটতে লাগল। প্রায় প্রতিটি গাছ মায়ের নিজের হাতে যত্নে লাগানো। স্নেহপ্রবণ মানুষের সঙ্গে মাটির সম্পর্ক খুব নিবিড়। এইখানে বোধহয় মাইনে করা লোকের ওপর নির্ভর করলে মনে তৃপ্তি আসে না।
মেঘলা বলেই সম্ভবত রাস্তা আজ নির্জন। অন্যদিন প্রাতঃভ্রমণকারীদের ক্রমাগত যাতায়াত করতে দেখা যায় রাস্তায়। গৌরব একটা গোলাপফুলের কুঁড়ির দিকে তাকাল। ঈষৎ মুখ খোলা, যেন চুপিসারে আকাশ বাতাস এবং মৌমাছির জন্যে নিজেকে বিকশিত করতে তৈরি হচ্ছে! হঠাৎ গৌরবের মনে হলো আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধব চারপাশে ঘিরে থাকলেও মানুষ সবসময়ই একা। কলকাতা কিংবা নিউইয়র্ক অথবা লন্ডনের শহরতলিতে যদি সে একা বাস করে তাহলে কিছু কিছু মুহূর্তে সে একই রকম থাকে। তার নিজস্ব উপলব্ধির মুহূর্তে অন্য কেউ তাকে সঙ্গ দিতে পারে না। এই একাকীত্ব সাময়িকভাবে দূর হয় গ্রথিত সম্পর্কে মানুষের সংশ্রবে এলে। কিন্তু তার আগে পরে সে তার নিজের জন্যেই একা। নিউইয়র্কে বাস করেও মাঝে মাঝে তার মনে যেসব অনুভূতিরা স্বচ্ছন্দে চলে আসে কলকাতার এই ভিড়ে তাদের আসতে কোনো অসুবিধা হয় না যদি সে একা থাকে। হঠাৎই গৌরবের মনে হলো কেউ যেন সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। সে মুখ ঘুরিয়ে তাকাতেই অবাক হয়ে গেল। জয়তী–!
গৌরব জানান দিলো। তার পরেও কিছুক্ষণ চুপচাপ। তারপর মা ধীরে ধীরে দরজা খুললেন। গৌরব দেখল মা পরিষ্কার, মুখে জলের ভেজা দাগও নেই। বরঞ্চ চোখে বিস্ময়, কিরে?
তুমি কাশছিলে?
কই! না তো।
কিন্তু আমি যে তোমার বাথরুম থেকে কাশির শব্দ ভেসে আসতে শুনলাম।
দূর! ভুল শুনেছিস।
গৌরব আচমকা শক্ত হয়ে গেল। সে ভুল শুনতে পারে না। মা ব্যাপারটা গোপন করতে চাইছেন। কিন্তু কেন? সে লক্ষ্য করল মায়ের মুখ সামান্য লাল। এই সময় তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তুই কি সারারাত জেগে বই পড়িস যে উল্টোপাল্টা স্বপ্ন দেখছিস ভোরবেলায়?
গৌরব হাসবার চেষ্টা করল, সরি। তুমি রেস্ট নাও। এখনই উঠো না। সে চলে এল ব্যালকনিতে। ব্যাপারটা তার একদম ভালো লাগছিল না। বাংলাদেশের মায়েরা তাদের অসুখের কথা প্রথম দিকে বলতে চান না। হয়তো কাউকে বিরক্ত করার জন্যে সঙ্কোচ হয় তাঁদের। কিন্তু মা তাদের দলে পড়বেন কেন? তার সঙ্গে তো খুব সহজ সম্পর্ক। তারপরেই মনে হলো সে হয়তো একটা সামান্য ব্যাপার নিয়ে বাড়াবাড়ি করছে। কত কি কারণে মানুষের কাশি হতে পারে। আর সবসময়ে যে কারণগুলো খুব ভয়ঙ্কর তা তো নয়।
এরকমটা ভাবতে মন কিছুটা হাল্কা হলো। সে বাগানের দিকে তাকাল, এখন ছায়া ছায়া চারধার। গাছপালাগুলো অত্যন্ত তাজা। সামান্য হাওয়ায় ওরা হাল্কা দুলছে। সে আকাশের দিকে তাকাতেই ধন্দে পড়ল। আকাশ বেশ মেঘলা। যাকে সে এতক্ষণ প্রথম ভোর বলে মনে করছিল সেই সময়টা নিশ্চয়ই পেরিয়ে গেছে। যেহেতু সূর্যদেবকে মেঘেরা অক্টোপাশের মতো ঢেকে রেখেছে তাই সেটার চেহারা ফোটেনি রোজের মতো। গৌরব ধীরে ধীরে নিচে নেমে এলো। সদর দরজা খুলে বারান্দা পেরিয়ে বাগানে এসে দাঁড়াল। সৌরভ মলি এখনও ওঠেনি। আজকের মেঘলা আকাশ নিশ্চয়ই ওদের সময় সম্পর্ক বিভ্রান্ত করছে। সৌরভ তো ছুটির দিনে সহজে বিছানা ছাড়তে চায় না। সে বাগানে হাঁটতে লাগল। প্রায় প্রতিটি গাছ মায়ের নিজের হাতে যত্নে লাগানো। স্নেহপ্রবণ মানুষের সঙ্গে মাটির সম্পর্ক খুব নিবিড়। এইখানে বোধহয় মাইনে করা লোকের ওপর নির্ভর করলে মনে তৃপ্তি আসে না।
মেঘলা বলেই সম্ভবত রাস্তা আজ নির্জন। অন্যদিন প্রাতঃভ্রমণকারীদের ক্রমাগত যাতায়াত করতে দেখা যায় রাস্তায়। গৌরব একটা গোলাপফুলের কুঁড়ির দিকে তাকাল। ঈষৎ মুখ খোলা, যেন চুপিসারে আকাশ বাতাস এবং মৌমাছির জন্যে নিজেকে বিকশিত করতে তৈরি হচ্ছে! হঠাৎ গৌরবের মনে হলো আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধব চারপাশে ঘিরে থাকলেও মানুষ সবসময়ই একা। কলকাতা কিংবা নিউইয়র্ক অথবা লন্ডনের শহরতলিতে যদি সে একা বাস করে তাহলে কিছু কিছু মুহূর্তে সে একই রকম থাকে। তার নিজস্ব উপলব্ধির মুহূর্তে অন্য কেউ তাকে সঙ্গ দিতে পারে না। এই একাকীত্ব সাময়িকভাবে দূর হয় গ্রথিত সম্পর্কে মানুষের সংশ্রবে এলে। কিন্তু তার আগে পরে সে তার নিজের জন্যেই একা। নিউইয়র্কে বাস করেও মাঝে মাঝে তার মনে যেসব অনুভূতিরা স্বচ্ছন্দে চলে আসে কলকাতার এই ভিড়ে তাদের আসতে কোনো অসুবিধা হয় না যদি সে একা থাকে। হঠাৎই গৌরবের মনে হলো কেউ যেন সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। সে মুখ ঘুরিয়ে তাকাতেই অবাক হয়ে গেল। জয়তী–!