What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected নিকট কথা - সমরেশ মজুমদার 📞 (1 Viewer)

হেনাকে উত্তর দিতে হল না কারণ সেইসময় টয়লেটের দরজা খুলে গেল। আশ্চর্য দুনম্বরি লোক তো। বউ টয়লেটে যাওয়া মাত্র অন্য মহিলাকে প্রেমের প্রস্তাব দিচ্ছে? ইচ্ছে হচ্ছিল বাইরে বেরিয়ে এসে লোকটার কলার ধরি। কিন্তু মহিলা বললেন, চলো। এলাম ভাই।

এসো। আবার বলছি অনেক ধন্যবাদ এখানে আসার জন্যে। হেনার গলা।

দরজা বন্ধ হল। আলো নিবল। নিবল বলেই সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় হেনা আমাকে দেখতে পেল না। শোওয়ার ঘরে ঢুকে গেল সে। ঘরে আলো জ্বলল। গুনগুন করে সুর ভাঁজছে হেনা। মনে বোধহয় আনন্দ এসেছে। কেন? এই যে একের পর এক অবিবাহিত বা বিবাহিত পুরুষেরা ওকে প্রেম নিবেদন করছে, তাই? কিন্তু ব্যাপারটা কী? এই দুনম্বরি লোকটাকেও হেনা যার কথা বলল সে আমি ছাড়া কেউ নয়। অথচ এখন হেনা আমার সঙ্গে প্রেম করছে না। কিন্তু প্রেমিকদের কাটাবার জন্যে আমার নাম ব্যবহার করছে। কেন?

হেনা বেরিয়ে এল। এখন ওর পোশাক পাল্টে গেল। হালকা নীল এবং বেশ পাতলা একটা হাতাকাটা নাইটি পরেছে। এক পলক দেখতে পেলাম, তারপরেই কিচেনে ঢুকে আলো জ্বালল। গুনগুনানি বন্ধ হচ্ছে না এখনও। আমি এখন কী করি। চোরের মতো এখানে দাঁড়িয়ে থাকাটা আর ভাল দেখাচ্ছে না। আমি যে যাইনি, এই বাড়িতেই ছিলাম, তাও হেনা পছন্দ করবে না। অথচ এখন দরজা খুলে বেরুতে গেলেই আমি ওর কাছে ধরা পড়ে যাব।

তখনই কিচেনের আলো নিবিয়ে বেরিয়ে এল হেনা। একটু দাঁড়াল। তারপর টেলিফোনের সামনে গেল। আমি ওর পেছনটা দেখতে পাচ্ছি। হেনার ফিগার খুব ভাল। আজকাল চুলে নানান কায়দা করায় গ্ল্যামার বেড়ে গেছে। ওপাশের আলো জ্বেলে নিয়ে হেনা ডায়াল করল। কয়েক সেকেন্ড বাদেই সে হ্যালো বলল।

হ্যালো। আমি খুব দুঃখিত এত রাত্রে আপনাদের বিরক্ত করছি বলে। আসলে বিপ্লব আমার এখান থেকে একটু দেরি করে বের হয়েছে। ও ঠিকঠাক বাড়িতে পৌঁছাল কিনা সে ব্যাপারে চিন্তায় ছিলাম। কী বললেন? এখনও পৌঁছায়নি? অদ্ভুত! আমি? আমি ওর সঙ্গে একসময় কলেজে পড়তাম। আমার নাম হেনা। আপনি? ওহো, না মেসোমশাই, আমি আগে কখনও ফোন করিনি। নাম্বারটা লেখা ছিল। কী বললেন? এটা ঠিক, আপনি নিশ্চয়ই আপনার ছেলেকে চেনেন। ওকে কনভিন্স করা খুব ডিফিকাল্ট। ও, তাই? এ তো খুব ভাল ব্যাপার। এন. আর আই-দের সঙ্গে? বাঃ। আচ্ছা, ঠিক আছে, না না, তার দরকার নেই। আজ রাত্রে আর ফোন করতে হবে না। নিশ্চয়ই পৌঁছে যাবে। গুডনাইট।

আমি হতভম্ব হয়ে শুনছিলাম। আমার বাপের এখন সুখনিদ্রা দেওয়ার সময়। এই সময় তিনি ফোন তুললে ক্ষেপে যাওয়ার কথা, এক পার্টির বড়কর্তার ফোন যদি না হয়। আজ হেনা যে গলায় বলল তাতে মনে হল তিনি বেশ ফুর্তিতে আছেন। আর হেনার ব্যাপারটা কী? কোনোদিন ও সত্যিই ফোন করেনি। আজ সে পৌঁছালো কি না তা জানতে এত উদ্বিগ্ন হবে কেন?

হেনা তার ঘরে চলে গেল। ঠিক করলাম ও ঘুমিয়ে পড়লে এখান থেকে বেরিয়ে যাব। কিন্তু কাঁহাতক এভাবে দাঁড়িয়ে থাকা যায়? আমি অন্ধকার ঘরে পা টিপে টিপে সোফার কাছে গেলাম। তারপর প্রায় নিঃশব্দে সোফায় বসে পড়লাম। আঃ, আরাম।

হেনার এই ফোন করাটা আমাকে খুব ডিস্টার্ব করছে। এত রাত্রে ফোন করে বাবার সঙ্গে কথা বলা মানে ও ইচ্ছে করেই জানিয়ে দিল ওর সঙ্গে আমার সম্পর্ক আছে। কেন? বাবাকে জানিয়ে ওর কী লাভ যখন সম্পর্কটা নেই।

ভেতরের ঘরের টিউব নিবল এবং একটা হালকা নীল আলো জ্বলে উঠল। আর বড়জোর মিনিট পনেরো। তার মধ্যেই ওর ঘুমিয়ে পড়ার কথা। আমি ঘড়ি দেখতে লাগলাম। অন্ধকারে ঘড়ির ভেতর যেভাবে জ্বলে তাতে রহস্য আরও বেড়ে যায়।

পনেরো মিনিট বাদে উঠে দাঁড়িয়ে মনে হল হেনা ঘুমিয়েছে কি না দেখে তবেই দরজা খোলা উচিত। নইলে খুলতে গেলে যে শব্দ হবে তাতেই হেনা সজাগ হয়ে যাবে।

নিঃশব্দে ওর বেরুমের দরজার পাশে পৌঁছে গেলাম। উঁকি মারতেই আমার শরীরে বিদ্যুতের তরঙ্গ প্রবাহিত হল। উপুড় হয়ে বালিশে মুখ গুঁজে শুয়ে আছে হেনা। সেই নাইটিটা পাশে খুলে রেখেছে। এখন তার অঙ্গে শুধু অন্তর্বাস ছাড়া কিছু নেই। ওই নীল আলো ওর শরীরে খোলা জায়গায় পড়ে অপূর্ব মায়া সৃষ্টি করেছে। আমার মনে তীব্র বাসনা জাগল ওই জায়গা স্পর্শ করতে। এমন আকর্ষণ আমি কখনও অনুভব করিনি। এক পা এগিয়েই আমি থেমে গেলাম। হঠাৎই নিজেকে চোর বলে মনে হলো।
 
চুপচাপ ফিরে এলাম। মাথার মধ্যে যেন আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। কিছুই ভাবতে পারছি না। শুধু মনে হচ্ছিল এখান থেকে বেরিয়ে গেলে আমি বেঁচে যাব। দরজা খুললাম। সামান্য শব্দ বাজল। বন্ধ করলে সেটা দ্বিগুণ হল। মনে হলো হেনার গলা শুনতে পেলাম। ও কি জেগে উঠে কে বলল। লিফট বন্ধ। তাড়াতাড়ি সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে লাগলাম। যত তাড়াতাড়ি পারি এখান থেকে বেরিয়ে যেতে চাই।

নিচে নেমেই দেখতে পেলাম গেট বন্ধ। সেখানে তালা ঝুলছে। বের হবার কোনো উপায় নেই। কী করা যায়? দারোয়ান নিশ্চয়ই তালাচাবি দিয়ে অন্য কোথাও চলে যায়নি? লোকটাকে খোঁজার চেষ্টা করলাম উঁকি মেরে। এদিকের আলো জ্বলছে না। দারোয়ানকে দেখতে পেলাম না। সারারাত এখানে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া আমার কোনো উপায় নেই।

মিনিট পনেরো বাদে মনে হল ওপরেই উঠে যাই। হেনাকে ডেকে তুলে বলি সব কথা। আমার কোনো মতলব ছিল না এই থেকে যাওয়ার পেছনে। ঠিক সেই সময় কেউ একজন হাঁকল, কে? কে ওখানে? কৌন হ্যায়?

চিৎকারটা এত জোরে যে আমি ঝটপট সরে এলাম। ওই লোকটাই কি এই বাড়ির দারোয়ান? এই সময় দ্বিতীয় গলা শোনা গেল, কেয়া হুয়া সেলিম ভাই?

একটা লোককে দেখলাম গেট থেকে সরে যেতে। তালা খোল, জলদি।

এইবার হাতেনাতে ধরা পড়ার চেয়ে লুকিয়ে পড়া ভাল। নাকি, এগিয়ে গিয়ে বলব, আমি চোর নই। হেনার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলাম কিন্তু গেট বন্ধ হয়ে গিয়েছে তা জানতাম না। যুক্তিটা জলো বলে মনে হলো। হেনা নিশ্চয়ই জানে কখন গেট বন্ধ হয়। সেক্ষেত্রে সে নিশ্চয়ই তার কাছে রাখা চাবি দিয়ে দরজা খুলে দিত। ওরা আমাকে হেনার কাছে ধরে নিয়ে যাবে সত্যিই বলছি কিনা জানার জন্যে। তখন হেনা কী বলবে?

দ্রুত দৌড়ে ওপরে উঠলাম। হাঁপাতে হাঁপাতে দরজার সামনে পৌঁছে বেল বাজালাম। মিনিটখানেক গেল, মনে হচ্ছিল অনেক সময়। নিচে হল্লা বাড়ছে। এই সময় দরজা খুলল হেনা। তার পরনে এখন হাউসকোট। আমাকে দেখে সে হতভম্ব, তুমি?

তাড়াতাড়ি ভেতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করলাম। তখনও নিঃশ্বাস স্বাভাবিক হয়নি।

তুমি এখানে কী করে এলে? প্রায় চিৎকার করে উঠল হেনা।

প্লিজ! চুপ করো। সব বলছি। আমি মিনতি করলাম।

কিন্তু!

আমি তোমাকে বিরক্ত করছি কিন্তু কোনো উপায় নেই। যদি কেউ এখানে খোঁজ করতে আসে তাহলে বলবে আমি এখানে আসিনি।

এই বাড়িতে ঢুকলে কী করে?

আমি এখান থেকে বের হইনি। সোফায় বসে হেনাকে সব খুলে বললাম।

হঠাৎ হেনার চোখমুখ অন্যরকম হয়ে গেল, আমি শুয়ে পড়ার পর তুমি আমার বেডরুমে গিয়েছিলে? সত্যি কথা বলো?

না। বলেই মনে হল, মিথ্যে বলে কী লাভ, ভেতরে যাইনি। দরজা পর্যন্ত গিয়ে দেখেছিলাম তুমি ঘুমিয়ে পড়েছ কিনা। আই অ্যাম সরি।

ভেতরে গিয়ে ডাকোনি কেন?

অ্যাঁ?

ভেতরে ঢুকে আমাকে ডাকোনি কেন?

আমার মনে হয়েছিল ঘুম থেকে উঠে আমাকে দেখে তুমি রেগে যাবে।

অদ্ভুত। আচ্ছা, বলো তো, তুমি আর কতদিন আমাকে জ্বালাবে?

আমি চাইনি।

এখন কী করবে। এত রাত্রে এখান থেকে আমি যদি তোমাকে নিয়ে গিয়ে গেট খুলে দিই তাহলে কাল সবাই গল্পটাকে নানান রঙে সাজাবে। উঃ।
 
আমি এখানেই থাকছি। সকাল হলে গেট খুললে বেরিয়ে যাব। আমাকে নিয়ে তুমি চিন্তা করো না। যাও, শুয়ে পড়। তোমাকে এভাবে বিরক্ত করার জন্যে সত্যি আমি দুঃখিত।

দুঃখিত! শব্দটাকে অর্থহীন করে দিলে তুমি।

যাও। শুয়ে পড়।

কী ভাবে?

তার মানে?

একই ফ্ল্যাটে একজন পুরুষ বাইরে বসে থাকলে আমার ঘুম আসবে?

দরজাটা বন্ধ করে দাও।

বেডরুমের দরজা আমি কখনও বন্ধ করি না।

ও। আমি প্রমিজ করছি, ওদিকে আমি যাবো না। বিশ্বাস করো।

আমি বিশ্বাস করি না। তুমি একবার গিয়েছ, আবার যেতে পার। তখন সাহস পাওনি, এখন। তাছাড়া আমি হাউসকোট বা শাড়ি পরে শুতে পারি না। তুমি এ ঘরে থাকলে এগুলো ছেড়ে শোওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।

হঠাৎ আমার মনে হল বড্ড বাড়াবাড়ি করছে হেনা। বললাম, যা ইচ্ছে তাই করো তাহলে। আলো নিবিয়ে চলে যাও, আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।

হেনা চলে গেল। আলো নেবাল না। আমি চোখ বন্ধ করার চেষ্টা করলাম। বাপ নিশ্চয়ই আজ রাত্রে অনেক কিছু ভেবে নিয়েছে। কাল বাড়িতে গেলে গেট আউট বললে অবাক হব না। পরিস্থিতি যেরকম হবে সেইরকম কাজ করতে হবে। আগেভাগে ভেবে কোনো লাভ নেই। তন্দ্রা এসে গিয়েছিল। চেয়ারের ওপর পা ছড়িয়ে দিয়ে সোফায় হেলান দিতে ঘুম এসে গেল। কিন্তু সেটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হল না।

হাঁটুতে মৃদু আঘাত লাগতেই ঘুম ভেঙে গেল। তাকিয়ে দেখলাম প্রায় রণরঙ্গিনী মূর্তি ধরে হেনা দাঁড়িয়ে আছে। সে বলল, ওঠো!

কেন?

আমার ফ্ল্যাটে তুমি আরাম করে ঘুমাবে আর আমি ঠায় জেগে থেকে সেটা দেখব এটা হতে পারে না।

তুমি ঘুমাচ্ছো না কেন?

কারণ আমি মানুষ। তোমার মতো অ্যাবনর্মাল নই যে সুইচ টিপলেই ঘুম চলে আসবে। তোমাকে এখানে থাকতে হলে জেগে থাকতে হবে, নইলে চাবি দিচ্ছি বেরিয়ে যাও, যাওয়ার সময় আমার লেটার বক্সে চাবিটা ফেলে দিয়ে যেও।

এত রাত্রে আমি কোথায় যাব?

তুমি তো আমার অনুমতি নিয়ে এখানে থাকোনি।

বেশ। দাও চাবি।

বাঃ। তবু তুমি জেগে থাকবে না?

তোমার উদ্ভট ইচ্ছে পূর্ণ করার কোনো মানে হয় না।

কে উদ্ভট? আমি না তুমি? এম. এ. পাশ করে বেকার বসে আছ, কি না, আমি দুনম্বরি উপায়ে পাওয়া চাকরি নেব না। ভালবাসব অথচ যাকে ভালবাসি তাকে নিরাপত্তা দেব না। তোমার মত সুবিধেবাদী অলস অকর্মণ্যরাই একথা বলে। এই সমাজে তুমিই নিজেকে উদ্ভট করে রেখেছ।

বেশ। তুমি আমাকে কী করতে বলো?

আমার কিছু বলার নেই।

প্লিজ, হেনা।

হেনা আমার দিকে তাকাল, বেশ। পারবে তুমি তোমার বাবার অফার অ্যাকসেপ্ট করতে? এন. আর. আই-দের সঙ্গে ব্যবসা শুরু করতে পারবে?

তুমি বুঝতে পারছ না, ওটা করতে গেলে বাপের দুনম্বরি ক্ষমতার সাহায্য চাই। পার্টি, রাইটার্স বিল্ডিং, সর্বত্র বাপের প্রতিপত্তি খাটিয়ে কাজ আদায় করতে হবে। যার এই সুযোগ নেই সে বেচারা কোনোদিন যা পাবে না আমি তা সহজেই পেয়ে যাব। আমাকে তুমি এই অন্যায় করতে বলছ? আমি বোঝাবার চেষ্টা করলাম।

অন্যায়? এই যে এখানে একজন অবিবাহিতা এক মহিলার ফ্ল্যাটে মধ্যরাতে তুমি দাঁড়িয়ে আছ যার সঙ্গে তোমার কোনো লিগ্যাল সম্পর্ক নেই, এটা অন্যায় নয়? এতই যখন তোমার আপত্তি তাহলে এখানে পড়ে আছ কেন? জঙ্গলে বা পাহাড়ে চলে যাও। সেখানে হয়তো এত সমস্যা থাকবে না। হেনা ছুটে ভেতরে চলে গেল। ফিরে এল চাবি নিয়ে। টেবিলের ওপর ছুঁড়ে দিয়ে বলল, গেট লস্ট।

চাবিটা তুলে বেরিয়ে এলাম। নিচে নেমে তালা খুলতেই একজন এগিয়ে এল, আপনি কোন ফ্ল্যাট থেকে আসছেন স্যার?

উত্তর দিলাম। লোকটা দ্বিতীয় প্রশ্ন করার আগে বাইরের দেওয়ালে টাঙানো লেটার বক্সগুলোর মধ্যে যেটার বুকে হেনার নাম লেখা তার গর্তে চাবিটা ফেলে দিয়ে হাঁটতে লাগলাম। কিছুক্ষণ হাঁটার পর দেখলাম রাস্তা শুনশান। আলোগুলো হলদেটে লাগছে। ফুটপাতে দাঁড়িয়ে মনে হলো, সত্যি কি আমি উদ্ভট? হেনাকে আজ কত বছর হয়ে গেল বন্ধু বলে নিয়েছিলাম। কিন্তু আজ পর্যন্ত আমি একবারও ওকে চুমু খাইনি। কলেজে পড়ার সময় এসব ব্যাপারে যারা অভিজ্ঞ তারা কতবার জিজ্ঞাসা করেছে আমাদের সম্পর্ক কত দূর এগিয়েছে? চুমু খাওয়া ওদের কাছে হাত মেলানোর মতো সহজ ব্যাপার ছিল, ওরা আরও এগিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু হেনার সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গল্প করলেও ওসব ভাবনা আমার মাথায় আসেনি। হেনা যখন চাকরি নিল, ওর ব্যাচেলার মামার এই ফ্ল্যাটে উঠে এল তখন তো অনেক সময়ই একা পেতাম। মামা মারা যাওয়ার পর তো কোনো ভয় ছিল না। তাহলে? আমি কি একজন ছেলেবন্ধুর থেকে হেনাকে আলাদা করিনি? এটা উদ্ভট নয়? একজন আমার বয়সী ছেলে হেনার মত সুন্দরী মহিলাকে প্রেমিকা হিসেবে পেয়ে শরীর সম্পর্কে নিস্পৃহ থাকবে কি?
 
আমি উদ্ভট না মিসফিট? এই জগৎসংসারে সবাই যেমন চলছে তেমন চলতে পারি না কেন? এই সব প্রশ্ন যখন মনে আসছিল ঠিক তখন একটা মারুতি ভ্যান দ্রুত গতিতে পাশ দিয়ে চলে যেতে যেতে ব্রেক করে চলে এল আমার পাশে। গাড়ির কাচ কালো, ভেতরে ঠাণ্ডা মেশিন। চলছে বলেই বোধহয় সেগুলো নামানো হয়নি। ড্রাইভারের পাশে আসনে যে বসেছিল সে কাচ নামিয়ে জিজ্ঞাসা করল, আচ্ছা, টাইগার সিনেমাটা কোন দিকে পড়বে?

কলকাতায় বাস করে টাইগার চেনে না এমন হতে পারে না। বুঝলাম এরা নতুন। আমি জায়গাটা বুঝিয়ে দিচ্ছিলাম কিন্তু লোকটা বুঝতে পারছিল না। হঠাৎ মনে হল ওরা যদি আমাকে লিফট দেয় তাহলে আমি ধর্মতলা পর্যন্ত এগিয়ে যেতে পারি আর ওদেরও উপকার হবে। লোকটি বলল, আমরা কলকাতায় নতুন। আপনি কি এখানে থাকেন?

না। আমি ওদিকেই থাকি। বললাম, আপনার গাড়িতে জায়গা থাকলে সঙ্গে যেতে পারি।

তাই নাকি? খুব ভাল হয়। উঠে পড়ুন।

পেছনের দরজা খুলে দিতেই গাড়িতে উঠলাম। দরজা বন্ধ করতেই গাড়ি ছুটল। আমি রাস্তা বলতে গিয়ে শুনলাম পেছন থেকে গোঙানির আওয়াজ ভেসে আসছে। চমকে পেছন ফিরে দেখলাম কেউ একজন ডিকিতে পড়ে আছে। হাত পা মুখ বাঁধা তার। আমি পাশে তাকালাম। সেখানে দুজন লোক বসে আছে নিস্পৃহ ভঙ্গিতে। জিজ্ঞাসা করলাম, এসব কী ব্যাপার?

সামনের লোকটি বলল, ওর দিন হয়ে গেছে। আজ বলি হবে। আমরাই করব ঠিক ছিল। এখন মনে হচ্ছে সেটা তোকে দিয়ে করালে ভাল হয়। অন্তত পুলিশ জানবে আমরা খুন করিনি। চুপচাপ বসে থাক যদি প্রাণে বাঁচতে চাস। টাইগার চেনাচ্ছে। বলা মাত্র বাকিরা হো হো করে হেসে উঠল। মদের গন্ধ নাকে লাগল।

আমাকে নামিয়ে দাও। থামাও গাড়ি। থামাও। চিৎকার করে বলতেই একটা শক্ত কিছু দিয়ে পেটে আঘাত করল আমার। কক করে পেট চেপে ধরলাম। তীব্র যন্ত্রণাতে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে এল প্রায়। লোকটি বলল, আবার চিৎকার করলে জন্মের মতো থামিয়ে দেব।

গাড়ি ছুটে চলেছে নির্জন রাস্তা দিয়ে। সেদিকে তাকাবার মতো ক্ষমতা আমার নেই। যন্ত্রণাটা কিছুতেই কমছিল না। এরা মাস্তান না ডাকাত আমি জানি না। তবে এরা অত্যন্ত নিষ্ঠুর তা বুঝে গিয়েছি। পেছনের লোকটাকে এরা খুন করবে। আমাকে একা এত রাত্রে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তুলে নিয়েছে কাজটা করাবে বলে। না করলে আমার ভাগ্যে কি আছে আমি জানি না।

ভ্যানটা থামতেই সামনে থেকে হুকুম হল, চটপট।

ওপাশের দরজা খুলে লোক দুটো লাফিয়ে নামল। ডিকি খুলে লোকটাকে টেনে হিঁচড়ে নিজে নামাল। মনে হল এই সুযোগ পালিয়ে যাওয়ার। আমি দরজা খুলতে যেতেই সামনের লোকটা আমার দিকে রিভলভার উঁচিয়ে বলল, তোকে নামতে হবে না। তুই এখানে বসেই গুলি ছুঁড়বি। চালাকি আমি একদম পছন্দ করি না।

আমি অজান্তেই মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললাম। সেটা দেখে লোকটা জিজ্ঞাসা করল, আগে কখনও খুন করেছিস? করিসনি তো?
 
হঠাৎ কিছু একটা ভর করল আমার ওপর। তিলজলা থেকে বাপের কাছে একটা লোক আগে প্রায়ই আসত। বিশেষ করে ইলেকশনের সময়। লোকটার নাম মহিম গুপ্ত। মুখে কাটা দাগ ছিল। ছুরি মেরেছিল কেউ। সে এলেই বাপ সবাইকে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে বলে। সমাজবিরোধী হিসেবে লোকটার নাম কয়েকবার কাগজে বেরিয়েছে। আজ হঠাৎ সেই মহিম গুপ্তকে মনে পড়ল। পড়তেই বললাম, শেয়ার দিতে হবে।

তার মানে? খিঁচিয়ে উঠল সে।

আমি মহিমের জন্যে দাঁড়িয়ে ছিলাম।

মহিম? কোন মহিম?

তিলজলার মহিম গুপ্ত। ও শেয়ার ছাড়া কোনো কাজ করে না। আমি করাও যা আর ওর করাও তা। চেনা যাচ্ছে?

লোকটা হঠাৎ দরজা খুলে নেমে গেল। ওর সাকরেদদের সঙ্গে কথা বলল। তারপর এগিয়ে এসে জিজ্ঞাসা করল, তোমার আস্তানা কোথায়?

তুই থেকে তুমিতে উঠেছে দেখে সাহস বেড়ে গেল। জায়গাটা বললাম। তারপর জিজ্ঞাসা করলাম, মহিমকে ফোন করবে? ও আমার বাপের চামচে।

চামচে? তোমার বাপের নাম কী?

জবাব শুনে লোকগুলো এর ওর দিকে তাকাল। তারপরেই মুখের চেহারা বেশ বদলে গেল লোকটার, খুব ভুল হয়ে গেছে দাদা। একদম সেমসাইড করে ফেলেছি। কিছু মনে রাখবেন না। আপনার বাবা কিংবা মহিমকে কিছু জানাবার দরকার নেই।

এ কে?

বহুৎ হারামি। আমাদের কয়েকজনকে ফাঁসিয়েছে। আজ মওকা বুঝে তুলেছি। এই উঠে পড়। লোকটা হুকুম করতেই বাকিরা উঠে পড়ল। গাড়িতে ওঠার আগে সামনের সিটের লোকটা রিভলভারে ট্রিগার টিপল। দুবার। দুটো শব্দ বাজল। দেখলাম লোকটা পাশ ফিরে পড়ে আছে হাত-পা বাঁধা অবস্থায়। অন্ধকারে রক্ত বের হয়েছে কি না বোঝা গেল না।

গাড়ি চলেছে ফুল স্পিডে। আমার চোখের সামনে একটা মানুষ খুন হয়ে গেল কিন্তু আমার কোনো প্রতিক্রিয়া নেই? উল্টে আমাকে খুন করতে হল না বলে হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছি। যদি মহিমের নামটা মুখে না আসত তাহলে ওরা আমাকে বাধ্য করত খুন করতে। আমার অন্য কোনো পথ ছিল না। কিন্তু বাপের নামটা শোনামাত্র ওরা পালটে গেল কেন? ওই মহিম গুপ্তের নাম ওদের এতখানি বিচলিত করেনি। বাপ জানতাম সরকারি মহলে খুব প্রতিপত্তিশালী নেতা কিন্তু সমাজবিরোধীরাও এত খাতির করে?

ওরা গাড়ি ছুটিয়েছে নর্থের দিকে। জিজ্ঞাসা করলাম, এদিকে?

আপনাকে নামিয়ে দিয়ে আসছি দাদা।

দাদা! নামিয়ে দিয়ে আসছে? আমাদের বাড়ি চেনে নাকি? অথবা শেষবার আমার পরিচয় যাচাই করতে যাচ্ছে। যাকগে, আমারই সুবিধে হচ্ছে। বউবাজারের মোড়ে একটা পুলিশের জিপ দাঁড়িয়েছিল। দুজন অফিসার হাত দেখিয়ে গাড়ি থামাল। একজন এগিয়ে এসে জিজ্ঞাসা করল, কী ব্যাপার? এত রাত্রে, কোথায় যাওয়া হচ্ছে? কার গাড়ি?

সামনে বসা লোকটি বলল, কাজ ছিল। আমার বাপের নাম বলে বলল, ওর ছেলেকে পৌঁছে দিতে যাচ্ছি বাড়িতে। আপত্তি আছে?

অফিসার উঁকি মেরে আমাকে দেখল, ঠিক আছে। যান। গাড়ি আবার স্পিড তুলল! সামনের লোকটি হাসল, দাদার নাম বললে দারুণ কাজ হয়।
 
আমি চুপচাপ বসেছিলাম। এসব কী হচ্ছে? যা আমি কোনো কালে চাইনি, সেই কাজটাই এরা করছে। আমার এতদিনের লড়াই তাহলে বৃথা হবে। হঠাৎ নজরে এল থানা আসছে। এই একটা জায়গায় আমি জীবনে যাইনি। তেইশ বছর বয়সে চাকরির দরখাস্ত করেছিলাম। সরকারি চাকরি। ইন্টারভিউ হয়েছিল লিখিত পরীক্ষার পরে। শুনেছিলাম পুলিশ ভেরিফিকেশনের পর অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার আসবে, খুব ভাল লাগছিল সে সময়। এই প্রথম কাউকে ধরে বা কারও দয়ায় আমি চাকরি পাচ্ছি না, একেবারে নিজের যোগ্যতায় চাকরি করতে চলেছি। ব্যাপারটা আমার বাপকে জানাইনি। একদিন সকালে একটা রোগামত লোক চোরের মতো বাড়িতে এল। বাপ তখন বাড়িতে নেই। এসে বলল ওই থানার একজন অফিসার আমার সঙ্গে কথা বলতে চান। পাড়ার এক সেলুনে তিনি দাড়ি কামাচ্ছেন। আমার সঙ্গে পুলিশের কী কথা থাকতে পারে ভেবে যখন চুপ করেছিলাম তখন লোকটা বলল, আপনার চাকরির ব্যাপারে। বাবু খুব ভাল লোক, হয়ে যাবে। চলুন।

গিয়েছিলাম। ওই সেলুনটায় আমরা সাধারণত ঢুকি না। সবসময় হিন্দি গান বাজানো হয়। ঢুকে দেখলাম সেলুন ফাঁকা। পুলিশ দাড়ি কামাচ্ছে বলেই বোধহয় লপেটারা তখন বাইরে। লোকটা বেশ মোটা, মুখে সাবানের ফেনা। রোগা লোকটা বলল, এনেছি স্যার।

আপনি বিপ্লবচন্দ্র? আয়না দিয়ে লোকটা আমাকে দেখল।

না। আমি শুধু বিপ্লব।

ওই একই হল। ইন্টারভিউ তো ভালই হয়েছে। আমি এক কলম ফেবারে লিখলে চাকরি। বুঝতে পারছেন? তবে আমার তো না লিখে উপায় নেই। জলে বাস করে তো কুমিরের সঙ্গে ঝগড়া করা যায় না। আপনার বাবাকে কুমির বলিনি কিন্তু, ওটা কথার কথা। লোকটা হাসল, আসলে, আপনার বাবাও জানেন, এসব কেসে আমরা কিছু পেয়ে থাকি।

কী পান?

কী পাই? যার যেমন চাকরি সে তেমন দেয়। আপনার চাকরি মন্দ নয়।

কেন পান?

কেন পাই? লোকটা এবার সরাসরি আমাকে দেখল। মুখে সাবান থাকায় এর মুখ পরে চেনা মুশকিল হবে। তবে কপালে কাটা দাগ ছিল।

লোকটা হাসল, রসিকতা হচ্ছে? হে হে। ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। শুনুন আমি তো আপনার বাবাকে বলতে পারব না। বললে বড়বাবু, বড়বাবু থেকে এসি, ডি সি, সিপির কানে চলে যাবে কথাটা। দিয়ে দেবে রাইটার্সের ভি আই পি গেটে ডিউটি। জীবন কয়লা হয়ে যাবে। কিন্তু আপনাকে বলতে পারি। না, না টাকা পয়সা চাই না। পোস্টিং চাই। বড়বাজারে। লালবাজারকে ধরলে কিছু করতে পারব না। আপনার বাবা যদি বলে দেন তাহলে কর্তারা না করতে পারবে না। আপনি আমার হয়ে ওঁকে রাজি করাবেন বলতে। ঠিক আছে?

কেন?

কেন? কেন মানে? আমি যে খুব ভাল রিপোর্ট দেব আপনার ফাইলে।

আমি আজ পর্যন্ত কোনো খারাপ কাজ করিনি যে আপনি খারাপ রিপোর্ট দেবেন।

অ।

আমি যেতে পারি?

হেনা নামে একটা মেয়ে আপনার বন্ধু?

হেনার নাম ওর মুখে শুনব ভাবিনি। অবাক হয়ে বললাম, কেন?

ওর বাড়িতে যে যান তা আপনার বাবা জানেন?

কেন?

আমার রিপোর্টে সত্যি কথাটা যে লিখতে হবে। হেনাকে নিয়ে আপনি নার্সিং হোমে গিয়েছিলেন অ্যাবরশন করাতে। আপনার মর‍্যাল ক্যারেক্টার কিরকম তা জানলে এই চাকরি কি পাবেন। ভেবে দেখুন।

আপনি মিথ্যেবাদী। যদি পুলিশ না হতেন তাহলে আপনাকে মারতাম। কথাটা বলার সময় চিৎকার করে উঠলাম।

লোকটা চট করে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে বলল, এই, দেখছ কি, আমার টাইম নেই। দাড়ি কাটো।

আমি বেরিয়ে এলাম। রাগে শরীর জ্বলছিল। কীরকম বানিয়ে গল্প বলল লোকটা। এই হলো পুলিশ। বাবার নেতা এদের সভায় গিয়ে এদেরই প্রশংসা করেন। মনে হয়েছিল এত বড় মিথ্যে কাগজে কলমে কখনও লিখতে পারবে না লোকটা।

সেই রোগা লোকটা পেছন পেছন আসছিল, আপনি রাগ করবেন না। শুধু বাবাকে একটু বলে দিন, বাবু আপনার ভাল রিপোর্ট দেবে। বুঝতেই পারছেন।
 
আমি জবাব দিইনি। চাকরিটা আমার হয়নি। এই পুলিশ অফিসার কীরকম রিপোর্ট দিয়েছিল বোঝাই যাচ্ছে, কিন্তু কী লিখেছিল তা জানি না। বাপকে আমি কিছু বলিনি। বললেই তিনি নিশ্চয়ই আমাকে কৃতার্থ করতেন। সেটা চাইনি। ভেবেছিলাম, এমনিতেই চাকরিটা হয়ে যাবে। ভারতবর্ষে তা হয় না। এদেশে যারা ভোট দেয় তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার আছে। কিন্তু সেই অধিকার আদায় করতে গেলে টাকা লাগে। আর যেহেতু এদেশের নিরানব্বই ভাগ মানুষের টাকা নেই তাই ওসব অধিকার-টধিকার কাগুজে ব্যাপার। আমি শুধু নিজের মত প্রতিবাদ করে স্বস্তি পেতে পারি, জানি সেই স্বস্তিটাও হরিণের লুকানোর মতো।

থানাটার সামনে ভ্যানটাকে দাঁড় করতে বললাম আমি। সামনের লোকটা আমার দিকে অবাক হয়ে তাকাল। খুব নরম গলায় জিজ্ঞাসা করল, খুব দরকার আছে ভাই?

আমি চুপচাপ মাথা নাড়লাম। ভ্যান থামল। দরজা খুলে নেমে সোজা থানায় চলে এলাম। দুটো সেপাই বসে গল্প করছিল। তাদের জিজ্ঞাসা করলাম, ওসি কোথায়?

বড়বাবু এখন কোয়াটার্সে। মেজবাবু আছেন, ভেতরে যান।

দ্বিতীয়জন জিজ্ঞাসা করল, কী কেন?

আমি উত্তর না দিয়ে ভেতরের ঘরে ঢুকে দেখলাম একটা লোক গেঞ্জি গায়ে টেবিলের ওপর পা তুলে দিয়ে চেয়ারে মাথা হেলিয়ে ঘুমোচ্ছে। এই লোকটাই কি মেজবাবু? আমি পেপার ওয়েট তুলে শব্দ করতে মেজবাবু ঘুম ভাঙল। চোখ খুলে পা না নামিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, কী চাই?

একটু আগে ময়দানে একটা মার্ডার হয়েছে।

কোথায়?

ময়দানে। লোকটাকে গুলি করে মারা হয়েছে। আমি নিজের চোখে–।

হাত তুলে থামতে বললেন মেজবাবু, ময়দান আমাদের জুরিসডিকশন নয়। যত্তসব ঝুট ঝামেলা। এই এলাকায় খুন হলে আসবেন। যান।

দেখুন, যারা খুন করেছে তারা থানার বাইরে গাড়িতে বসে আছে।

অ্যাঁ?

হ্যাঁ। আপনি এখনই ওদের অ্যারেস্ট করুন।

ইয়ার্কি মারছেন? ময়দানে খুন করে কেউ আমার থানার সামনে এসে অপেক্ষা করবে ধরা দেওয়ার জন্যে। রাতবিরেতে ইয়ার্কি মারছেন?

বেশ চলুন। ওদের সঙ্গে রিভলবার আছে কিন্তু।

রিভলবার শব্দটায় কাজ হলো। মেজবাবু লাফিয়ে উঠে হাঁকাহাঁকি করতে লাগলেন। মিনিট দুয়েক মধ্যে রণসাজে সজ্জিত হয়ে বাইরে বার হওয়া মাত্র মারুতিটা সোঁ করে বেরিয়ে গেল সামনে থেকে। ধর ধর করেও তার নাগাল পাওয়া গেল না। আমার দেরি দেখে বোধহয় আগেই ইঞ্জিন চালু করে রেখেছিল।

মেজবাবু মিলিয়ে যাওয়া গাড়ির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, ওই গাড়িতে কজন ছিল বলুন তো?

ড্রাইভারকে নিয়ে চারজন।

হুম। গাড়ির নাম্বারটা নোট করেছেন?

মনে করতে পারলাম না। গাড়িতে ওঠার সময় সন্দেহ হয়নি, তাই নাম্বার দেখিনি। গাড়িতে বসে থাকার সময় তো নাম্বার দেখার সুযোগ নেই। আর এখানে নামার সময় যদি আমি নাম্বার দেখতে যেতাম তাহলে ওরা আমাকেই সন্দেহ করত।

না। আমি দেখিনি।

তাহলে কী দেখেছেন? আসুন। সদলবলে মেজবাবু থানায় ঢুকে গেলেন।
 
আমি দাঁড়িয়ে রইলাম। বেশ বুঝতে পারছিলাম থানায় গেলে আর কোনো কাজের কাজ হবে না, উল্টে আমাকে ঝামেলায় ফেলবে ওরা। অথচ লোকটার গাফিলতিতে খুনিরা ধরা পড়ল না, আমি ফুটপাতে ধরে হাঁটতে লাগলাম। বাঁ দিকের গলি দিয়ে গেলে পাড়ায় শর্টকাটে পৌঁছানো যায়। সেটাই ধরলাম। ময়দানে মৃতদেহ নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে। তখন টনক নড়বে মেজবাবুর। কৃতিত্ব দেখানোর জন্যে তিনি আমাকে লালবাজার পাঠাবেন। আর সেখানে পুলিশ আমাকে জেরা করে জেরবার করে ছাড়বে। অপরিচিত লোকের গাড়িতে কেন আমি উঠলাম? অত রাত্রে ভবানীপুরের ফুটপাতে কেন দাঁড়িয়েছিলাম? কোথায় গিয়েছিলাম তার আগে? ওরা যখন কাউকে খুন করবেই আমাকে কেন সাক্ষী হিসেবে নিয়ে গিয়েছিল? আমাকে দিয়ে খুন করানোর গল্প যদি সত্যি হয়, তাহলে সেটা করল না কেন? তার ওপর ওই লোকগুলোর পরিচয় কী? বাপের নাম শুনে যদি ভয় পেয়ে থাকে, তাহলে আমার বাপ নিশ্চয়ই তাদের চেনে। এসব প্রশ্নের উত্তর ঠিকঠাক দিলেও ওরা খুশি হবে না অথচ খুনীদের ধরার কোনো সম্ভাবনা থাকবে না। আমি চেষ্টা করেছিলাম এটুকুই আমার সান্ত্বনা। মেজবাবু আমাকে পরিচয় জিজ্ঞাসা করেননি। তিনি আমাকে চেনেনও না। তাই আমার কাছে পৌঁছবার কোনো রাস্তা ওঁর কাছে খোলা নেই।

বাড়ির সামনে যখন পৌঁছলাম তখন রাত সাড়ে তিনটে। পাড়া নিঝুম। বাড়িতে একটাও আলো জ্বলছে না। ভাগ্যিস আমার ঘরের একটা দরজা রাস্তার দিকে আর সেটাও তালা দিয়ে আমি বের হই। তালা খুলে ভেতরে ঢুকলাম। জামাকাপড় খুলে পাজামা পরে শুয়ে পড়লাম অন্ধকারেই। বাথরুমে গেলে আলো জ্বালতে হবে। সেইটে চাইলাম না।

ঘুম ভাঙল বেশ বেলায়। ভাঙালো ছোটভাই। বাবা তোকে ডাকছে।

বুঝলাম ঝড় উঠবে। কী আর হবে? চলে যেতে বলবেন বড়জোর। ধীরে সুস্থে বাথরুম সেরে দাঁত মেজে খবর নিলাম, এ বাড়ির চায়ের পাট শেষ হয়ে গেছে। এখন রান্নার সময়। চা পাওয়া যাবে না। জামাপ্যান্ট পরে বাপের ঘরে ঢুকলাম। ঘরে তখন বাপ ছাড়া যে লোকটি বসে আছে তাকে দেখেই চিনতে পারলাম, মহিম গুপ্ত।

বাপ জিজ্ঞাসা করলেন, কাল রাত্রে কোথায় ছিলে?

আমার এক সহপাঠিনীর বাড়িতে গিয়েছিলাম। ফিরতে রাত হয়েছিল।

সেটা আমি জানি। মেয়েটি মাঝরাতে ফোনে জিজ্ঞাসা করেছিল তুমি বাড়ি ফিরেছ কি না। তারপর? তারপর কোথায় গিয়েছিলে?

কোথাও যাইনি। আমাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ফুটপাতে দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ একটা মারুতি ভ্যানে মিথ্যে কথা বলে আমাকে তুলে নেওয়া হয়।

তোমাকে মিথ্যে কথা বলে তুলল আর তুমি গেলে? বাচ্চা ছেলে নাকি? যদি তোমাকে দিয়ে খুন করাতো? পারতে সারাজীবন এই দায় থেকে নিজেকে বাঁচাতে? ছি ছি। তোমার আর কবে কাণ্ডজ্ঞান হবে বল তো? ওদের কাছে প্রথমে মহিমের নাম করেছ! মহিমকে তুমি চিনলে কী করে? বাপ গলার স্বর পাল্টালেন।

আপনার কাছে আসতে দেখেছি।

আমার কাছে তো হাজারটা লোক আসে। হোয়াই মহিম?

আমার মনে হয়েছিল উনি ক্ষমতাবান লোক।

মহিম তিলজলায় থাকে তা জানলে কী করে?

খবরের কাগজে পড়েছি।

মহিম গুপ্ত চুপচাপ শুনছিল। এবার হাত নাড়ল, ঠিক আছে দাদা। আপনি রাগ করবেন না। আমার নাম বলেছিল বলে প্রাণ বেঁচে গেছে। ওসব লোক খুব খতরনাক। তারপর আপনার ছেলে শুনে ভদ্রতা করে পৌঁছতে এসেছিল কিন্তু তখনই উনি বেইমানি করে ফেললেন বলে ওরা বলেছে। থানার বাইরে দাঁড় করিয়ে উনি ভেতরে গিয়েছিল পুলিশকে খবর দিতে। ঠিক তো?

এই প্রশ্নটা আমার উদ্দেশ্যে।

হ্যাঁ। আমি মনে করি খুনীদের শাস্তি হওয়া উচিত।

ঠিক কথা। কিন্তু ওরা আপনার জান বাঁচাল, বাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছিল সেটা আপনি ভুলে গেলেন কেন? এটা কি ঠিক কাজ?

বাপ জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি পুলিশকে ঠিক কী বলেছ?

বলেছি ওরা ময়দানে একজনকে আমার সামনে গুলি করে মেরেছে। কিন্তু মেজবাবু বললেন ময়দান নাকি তার এলাকায় পড়ে না। তারপর যখন উঠলেন তখন ওরা নাগালের বাইরে চলে গিয়েছে।

বাঃ নাম-ধাম বলেছ? মহিমের নাম?

না। কিছুই বলিনি।

মহিম গুপ্ত জিজ্ঞাসা করল, গাড়ির নাম্বার?

নাম্বার আমি নিজেই দেখিনি তো বলব কী করে?
 
মহিম গুপ্তকে এবার একটু সহজ দেখাল। বলল, ওটা ওদের পলিটিক্যাল ব্যাপার ভাই। রোজ গ্রামে-গঞ্জে রাজনৈতিক সংঘর্ষে কত মানুষ মারা যাচ্ছে, কেউ এ নিয়ে মাথা ঘামায় না। এটা ঠিক যুদ্ধের মত। যুদ্ধে শত্রুকে মারলে তাকে খুন বলা হয় না। আপনি একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলেছেন। তবে ওরা ভেবেছিল আপনি আমার নাম আর গাড়ির নাম্বার পুলিশকে দিয়েছেন। তা যখন দেননি, তখন ওদের বুঝিয়ে বলব মাথা ঠাণ্ডা রাখতে। এসব নিয়ে আর চিন্তা করবেন না। আপনি কতবড় লোকের ছেলে। দাদার একটা আলাদা ইজ্জত আছে। যান।

আমি ফিরে যাচ্ছিলাম বাপ বলল, শোনো। তোমার ওই সহপাঠিনীর নামটা কী যেন? আমার মনে পড়ছে না!

হেনা।

হ্যাঁ। হেনা আমার বড়মাসির নাম হেনা ছিল। যাক গে, মেয়েটিকে বেশ বুদ্ধিমতী মনে হল। কোথায় আছে, মানে কী করে?

চাকরি করে।

কোথায়?

আমি জানি না। মনে হয় কোনো কোম্পানিতে।

সহপাঠিনীর বাড়িতে মাঝরাত পর্যন্ত আড্ডা মারো, অথচ সে কী করে তার খোঁজ রাখো না। ওয়ার্থলেস। মেয়েটি আমাকে বলেছে সে-ও চায় তুমি ব্যবসায় ঢোকো। আর সেটা করতে গেলে এন. আর. আই-দের অফারটা নেওয়া উচিত। একথা সে বলেছে। বুঝলাম তোমার মতো বাতাস খেয়ে বেঁচে থাকার মেয়ে সে নয়। একদিন আসতে বলবে, ওর সঙ্গে কথা বলে আমার ভাল লেগেছে। বাপ ইশারা করলেন চলে যেতে।

সেটা সম্ভব নয়। না বলে পারলাম না।

কেন? তিনি তাকালেন।

আমার সঙ্গে ওর কোনো সম্পর্ক নেই। ইনফ্যাক্ট একবছর ধরে নেই। কাল সেটা আরও স্পষ্ট হয়ে গেল। আমাকে ওর উদ্ভট বলে মনে হয়।

সত্যি? একথা বলেছে সে? ঠিক কথা বলেছে। তোমার মতো উদ্ভট লোকের সঙ্গে কোনো ভদ্রলোক সম্পর্ক রাখতে পারে না। মেয়েটার ওপর শ্রদ্ধা আমার আরও বেড়ে গেলে। শোনো, ওসব পাগলামি ছাড়ো। রোমে থাকতে হলে রোমান হওয়া উচিত।

তার মানে আপনার কাছে ওই আলমারির বইগুলো মিথ্যে?

না। কখনই না। চণ্ডীপাঠ, গীতাপাঠ করলেই যেমন সন্ন্যাসী হয়ে যায় না কেউ তেমনই কার্ল মার্কস, লেনিন পড়লেই সেই আমলের কম্যুনিস্ট হতে হবে তার কোনো মানে নেই। গীতা পড়েও যেমন লোক সংসারের প্যাঁচ-পয়জারে অভ্যস্ত থাকে, তেমনি ক্যাপিটাল পড়েও পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া উচিত।

চা খেতে খেতে খবরের কাগজের একটা খবরে চোখ আটকালো। মন্ত্রীর সঙ্গে তার সেক্রেটারির বিরোধ লেগেছে আলুর দাম বাঁধা নিয়ে। সেক্রেটারি পরিষ্কার বলেছেন মন্ত্রীর দুর্নীতির কারণেই আলুর দাম বাড়ছে এবং জনসাধারণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এত স্পষ্ট কথা বলা সত্ত্বেও সেই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। বছর পাঁচেক আগে হলে এরকম খবর পেলে খুব চিঠি দিতাম। আমি এখনও মনে করি আমাদের মতো সাধারণ মানুষের মতো প্রকাশের একমাত্র মাধ্যম হল খবরের কাগজ। খবরের কাগজ সেটা যদি কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দলের মুখপাত্র না হয় তাহলে সেখানে মানুষ স্বাধীন মতামত প্রকাশ করতে পারে। দশটা চিঠির একটা ছাপা হয়েছে। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। যার উদ্দেশ্যে চিঠি তিনি গ্রাহ্য করেননি। আমি শেষবার যে চিঠি লিখেছিলাম তাতে প্রশ্ন তুলেছিলাম গত আঠারো বছরে পার্টি ক্ষমতায় আসার আগে উঁচু মাঝারি এবং নিচু তলার নেতাদের সম্পত্তির পরিমাণ কি ছিল এবং এখন কি হয়েছে তার একটা পরিসংখ্যান নেওয়া হোক। যদি কেউ ঠিকঠাক আয়ের উৎস না দেখাতে পারেন তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক পার্টি।
 
কিন্তু সেই চিঠি ছাপা হলেও কোনো কাজ হয়নি। আমার চিঠি তো সামান্য, লক্ষ্য করেছি, আজ যা খবরের কাগজের হেডলাইন, খবর হিসেবে দারুণ চাঞ্চল্য তুলল, পরশু সেটা লোকে ভুলে যাচ্ছে, খবরের কাগজও নতুন খবরে উৎসাহী। সরকারও জেনে গিয়েছে কোনোমতে দিন সাতেক কাটিয়ে দিতে পারলেই সমস্যাটা নিয়ে কেউ আর মাথা ঘামাবে না। মনে পড়ছে দেবশ্রী রায়চৌধুরীর কথা। মেয়েটি যখন উধাও হয়ে গেল প্রতিটি খবরের কাগজে তাকে নিয়ে কত লেখালেখি। যে করেই হোক মেয়েটিকে খুঁজে বের করতেই হবে। শেষপর্যন্ত সে তার প্রেমিকের সঙ্গে ধরা পড়ল। কিন্তু পুলিশের অসাবধানতায় তারা পালিয়ে গেল ট্রেন থেকে। আর তাদের খোঁজ পাওয়া গেল না। দেবশ্রীর বাবা হন্যে হয়ে মেয়েকে খুঁজে শেষ পর্যন্ত হাওড়ার এক হোটেলে খুন হয়ে গেলেন। সেই দেবশ্রী আজও নিখোঁজ। আর কোনো খবরের কাগজে ওকে নিয়ে কোনো লেখা বের হয় না। কেউ ওর খোঁজে এখন সময় দিচ্ছে বলে জানা নেই।

চা শেষ করে একটা টাকা দিয়ে সোজা কলেজ স্ট্রিটে চলে এলাম। তখন সবে অফিস খুলছে। নিজের টেবিলে যাওয়া মাত্র বেয়ারা বলল প্রকাশক আমাকে ডাকছেন। গেলাম। ভদ্রলোক একটা ক্লাসিক ধরিয়ে বললেন, শোনো, আজ থেকে তোমাকে আর প্রুফ দেখতে হবে না।

কে? আর একটা খারাপ খবর শোনার জন্যে তৈরি হলাম।

সুভদ্রার কাছে তোমার কথা সব শুনলাম। তুমি যে আমার এখানে আটশো টাকার বিনিময়ে প্রুফ দ্যাখো একথাটা ওকে বলতে পারিনি। অতএব যা আমি বলতে পারিনি তা তোমাকে করতে দিতে পারি না। অন্তত আমার এখানে। বুঝতে পেরেছ? প্রকাশক জিজ্ঞাসা করলেন।

পরিষ্কার। নির্লিপ্ত হবার চেষ্টা করলাম।

কিন্তু তুমি এডিটিং-এর কাজটা করতে পার।

এডিটিং না বলে রিরাইটিং বলুন। অন্যের হয়ে লিখে দিতে হবে। না। আমি ভেবে দেখলাম এরকম কাজ আমার দ্বারা হবে না।

এমন ভাব দেখাচ্ছ যে তুমি স্বচ্ছন্দে পাতার পর পাতা চমৎকার উপন্যাসে লিখে ফেলবে, আর পাঠকরা সেটা স্বজনের উপন্যাস ভেবে লুফে নেবে?

সেই ঝুঁকি তো আপনি নিচ্ছেনই। আচ্ছা, তাহলে চলি।

বসো। তুমি এমন নীতিবাগীশ কেন হে?

কী করব বলুন। হয়ে গেছি।

আচ্ছা ধরো, তোমার খুব প্রিয়জনের মারাত্মক অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে। এখন রক্ত দরকার। অথচ তার গ্রুপের রক্ত কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। এই সময় দালাল এসে প্রস্তাব দিল বেশি টাকা দিলে সে জোগাড় করে দিতে পারে। যেহেতু তখনই রক্ত না দিলে তোমার প্রিয়জন বাঁচবে না তুমি কী করবে? তাকে মেরে ফেলবে তোমার নীতির জন্যে? প্রশ্নটি করে প্রকাশক আমার দিকে স্থির চোখে তাকালেন।

আপনি একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতির কথা বলছেন।

না। ওই অ্যাকসিডেন্টের পেশেন্ট আর সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকার সমস্যার মধ্যে পার্থক্য খুবই কম। এখন যা অবস্থা বেঁচে থাকা মানেই যুদ্ধ করা। আর এই যুদ্ধে ন্যায়নীতি নিয়ে যত কম মাথা ঘামাবে তত তুমি সুবিধে পাবে।

আপনি কী বলতে চাইছেন? উপন্যাসটা রিরাইট করা উচিত?

তুমি যেতে পার।

বেরিয়ে এসে নিজের চেয়ারে বসলাম। কিছুক্ষণ পরে এটাকে আর নিজের চেয়ার বলে ভাবতে পারব না। এই সময় ম্যানেজার ভদ্রলোক আমার সামনে এলেন, ভাই বিপ্লব। অত্যন্ত বিপদে পড়েছি। আমাকে সাহায্য করতে পার?

ওঁর দিকে তাকালাম। এইরকম কথা কখনও ওঁর মুখে শুনিনি।

তোমার বউদি অ্যানিমিক, শরীরে রক্ত কম। চিকিৎসা চলছিল। কদিন আগে জানতে পারলাম ব্লাড ক্যানসার। বাঁচিয়ে রাখার জন্যে প্রচুর টাকা দরকার। আমার মত গরিব মানুষের পক্ষে যা করা সম্ভব তা করছি। কিন্তু আরও টাকা দরকার। ভদ্রলোক করুণ গলায় বললেন।

সর্বনাশ। কিন্তু ওঁকে বাঁচাতে তো হবে। অফিস থেকে টাকা চেয়েছেন?

হ্যাঁ। স্যারকে বলেছি। শুনেই উনি কুড়ি হাজার টাকা দিয়েছেন। বিনা সুদে এরকম ধার কেউ দেবে না। এত টাকা আমি রিটায়ার করলেও পাব না। উনি বলেছেন, আগে স্ত্রীকে বাঁচান, টাকা শোধ করার কথা পরে ভাববেন। উনি আমার কাছে দেবতা। কিন্তু আরও দশহাজার দরকার। ওঁর কাছে চাইতে সঙ্কোচ হচ্ছে। তুমি যদি টাকাটা জোগাড় করে দাও, তাহলে চিরকৃতজ্ঞ থাকব ভাই।

দশ হাজার টাকা?

হ্যাঁ। ডাক্তার তাই বলেছেন। আমার অবস্থা দেখে খুব কম করে বলেছেন।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top