অফিস ঘরের ভেতর একটা কাচের ঘর। প্রকাশক মশাই সেখানে বসেন। রোগা ফর্সা প্রৌঢ় ভদ্রলোকটি শিক্ষিত এবং সুদর্শন। মাস কয়েক আগে ওঁর ঘরে ঢুকে বলেছিলাম, ভাল বাংলা বানান জানি, কাজ দেবেন? তিনি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন, লেখার নেশা আছে নাকি?
না।
তাহলে বসো। কী নাম?
কাজটা হয়ে গিয়েছিল। দরজায় টোকা দিয়ে ভেতরে ঢুকলাম। উনি কিছু হিসেব করেছিলেন। বিরক্ত হয়ে তাকালেন। বললাম, কিছু যদি মনে করেন তাহলে একটা কথা বলব।
বল।
আপনি বাংলা সাহিত্যের ক্ষতি করছেন।
আমি? চমকে উঠলেন ভদ্রলোক, কী রকম?
স্বজন মুখোপাধ্যায়ের যে উপন্যাসটা ছাপা হচ্ছে সেটা আপনি পড়েছেন?
না।
সেকি? আপনি না পড়ে বই ছাপছেন?
উনি সোজা হয়ে বসলেন। কলম বন্ধ করলেন, পড়া উচিত বলে মনে করিনি। স্বজনবাবুর বই-এর স্টেডি সেল আছে।
ও। তাহলে কিছু বলার নেই। আপনার তো আরও অনেক প্রুফ রিডার আছে তাদের কাউকে ওর প্রুফ দিলে আমার ভাল লাগবে।
কেন?
উনি লিখতে জানেন না। বাক্য অসংলগ্ন, অজস্র বানান ভুল। ভেতরে তথ্যের অসংলগ্নতা মাথা খারাপ করে দিচ্ছে।
নিয়ে এসো।
বেরিয়ে এসে প্রুফ নিয়ে গেলাম। তিনি দেখলেন। তারপর বললেন, মানুষ করে দাও।
মানে?
রিরাইট করে দাও।
অসম্ভব।
বাজে কথা বোলো না। এ বই ছাপা হলে যখন বাংলা সাহিত্যের ক্ষতি হবে তখন তোমার উচিত সেই ক্ষতিটা যাতে না হয় তা দেখা।
আপনি অদ্ভুত কথা বলছেন। রিরাইট হলে সমস্ত লেখাটাই নতুন করে লিখতে হবে। অথচ সেটা ওঁর নামে ছাপা হবে, টাকা উনিই পাবেন।
ও ব্যাপারে কথা বলছি। টেলিফোন তুলে ডায়াল করলেন প্রকাশক, হ্যালো, স্বজনবাবু ভাল আছেন? হ্যাঁ, আগেরটা আবার এডিশন হয়েছে। কিন্তু স্বজনবাবু আমি যে মুশকিলে পড়েছি। কী করি বলুন তো? হ্যাঁ। একজন সাংবাদিক এসেছেন আপনার পাণ্ডুলিপি দেখতে। উনি ফটোকপি ছাপবেন কাগজে, মানে আপনার ওপর কভারেজ করবেন। হ্যাঁ, ভাল কথা, কিন্তু মুশকিলটা এখানেই। কেন? আপনার হয়তো সময় কম ছিল তাই প্রতি পাতায় অন্তত কুড়িটা বানান ভুল, সেন্টেন্সে গোলমাল। এগুলোর ছবি ছাপা হলে কী হবে ভেবেছেন? আমি বলি কি আপনি যদি নতুন করে! হ্যাঁ, সময় কম, তা আমি জানি। আচ্ছা, এককাজ করলে হয়। আমার পরিচিত একটি ছেলেকে দিয়ে কাজটা করিয়ে নিই? হ্যাঁ, খুব ভাল বানান জানে। না না কেউ জানবে na। তবে বিনা পয়সায় তো করবে না। ধরুন আপনার প্রাপ্য থেকে তিন-চার পার্সেন্ট ওকে দিয়ে দিলে সম্মানটাও থাকে আপনার নামও বেড়ে যাবে। না দু-চারশো দিলে ও রাজি হবে না, তাছাড়া খবরটা তো চেপে রাখার ব্যাপার আছে, এটা বুঝছেন না কেন? ঠিক আছে তো? ও কে!
রিসিভার নামিয়ে রেখে বললেন, যাও।
উনি রাজি হলেন?
হয়েছেন। তুমি প্রুফেই কারকেশন করতে করতে যাও।
আমি অন্যের হয়ে লিখব?
আপত্তি কেন? তুমি সন্তোষকুমার ঘোষের নাম শুনেছ?
হ্যাঁ। শ্রীচরণেষু মাকে-র লেখক।
উনি একজন বিখ্যাত সাংবাদিক নামে রবীন্দ্রনাথের জীবনী লিখেছিলেন। সেই বইতে কোথাও ওঁর নাম ছাপা ছিল না। তুমি ভেবে নাও, বাংলা সাহিত্যকে বাঁচিয়ে দিচ্ছ। আরে, আমি না ছাপি আর একজন কৃতার্থ হয়ে ওই বই ছাপবে। বুঝেছ?
টেবিলে ফিরে এসে নিজের সঙ্গে লড়াই করতে আরম্ভ করলাম। কী করব বুঝতে পারছি না। একটা মন বলছিল, এটা অন্যায়, খুব অন্যায়। আর এক মন বলছিল, এটা শ্রাদ্ধের মতো কাজ। করা উচিত। এই বই ছাপা হলে অন্তত ষাট টাকা দাম হবে। যারা খেয়ে না খেয়ে বই কেনে তাদের উপকার করা হবে।
না।
তাহলে বসো। কী নাম?
কাজটা হয়ে গিয়েছিল। দরজায় টোকা দিয়ে ভেতরে ঢুকলাম। উনি কিছু হিসেব করেছিলেন। বিরক্ত হয়ে তাকালেন। বললাম, কিছু যদি মনে করেন তাহলে একটা কথা বলব।
বল।
আপনি বাংলা সাহিত্যের ক্ষতি করছেন।
আমি? চমকে উঠলেন ভদ্রলোক, কী রকম?
স্বজন মুখোপাধ্যায়ের যে উপন্যাসটা ছাপা হচ্ছে সেটা আপনি পড়েছেন?
না।
সেকি? আপনি না পড়ে বই ছাপছেন?
উনি সোজা হয়ে বসলেন। কলম বন্ধ করলেন, পড়া উচিত বলে মনে করিনি। স্বজনবাবুর বই-এর স্টেডি সেল আছে।
ও। তাহলে কিছু বলার নেই। আপনার তো আরও অনেক প্রুফ রিডার আছে তাদের কাউকে ওর প্রুফ দিলে আমার ভাল লাগবে।
কেন?
উনি লিখতে জানেন না। বাক্য অসংলগ্ন, অজস্র বানান ভুল। ভেতরে তথ্যের অসংলগ্নতা মাথা খারাপ করে দিচ্ছে।
নিয়ে এসো।
বেরিয়ে এসে প্রুফ নিয়ে গেলাম। তিনি দেখলেন। তারপর বললেন, মানুষ করে দাও।
মানে?
রিরাইট করে দাও।
অসম্ভব।
বাজে কথা বোলো না। এ বই ছাপা হলে যখন বাংলা সাহিত্যের ক্ষতি হবে তখন তোমার উচিত সেই ক্ষতিটা যাতে না হয় তা দেখা।
আপনি অদ্ভুত কথা বলছেন। রিরাইট হলে সমস্ত লেখাটাই নতুন করে লিখতে হবে। অথচ সেটা ওঁর নামে ছাপা হবে, টাকা উনিই পাবেন।
ও ব্যাপারে কথা বলছি। টেলিফোন তুলে ডায়াল করলেন প্রকাশক, হ্যালো, স্বজনবাবু ভাল আছেন? হ্যাঁ, আগেরটা আবার এডিশন হয়েছে। কিন্তু স্বজনবাবু আমি যে মুশকিলে পড়েছি। কী করি বলুন তো? হ্যাঁ। একজন সাংবাদিক এসেছেন আপনার পাণ্ডুলিপি দেখতে। উনি ফটোকপি ছাপবেন কাগজে, মানে আপনার ওপর কভারেজ করবেন। হ্যাঁ, ভাল কথা, কিন্তু মুশকিলটা এখানেই। কেন? আপনার হয়তো সময় কম ছিল তাই প্রতি পাতায় অন্তত কুড়িটা বানান ভুল, সেন্টেন্সে গোলমাল। এগুলোর ছবি ছাপা হলে কী হবে ভেবেছেন? আমি বলি কি আপনি যদি নতুন করে! হ্যাঁ, সময় কম, তা আমি জানি। আচ্ছা, এককাজ করলে হয়। আমার পরিচিত একটি ছেলেকে দিয়ে কাজটা করিয়ে নিই? হ্যাঁ, খুব ভাল বানান জানে। না না কেউ জানবে na। তবে বিনা পয়সায় তো করবে না। ধরুন আপনার প্রাপ্য থেকে তিন-চার পার্সেন্ট ওকে দিয়ে দিলে সম্মানটাও থাকে আপনার নামও বেড়ে যাবে। না দু-চারশো দিলে ও রাজি হবে না, তাছাড়া খবরটা তো চেপে রাখার ব্যাপার আছে, এটা বুঝছেন না কেন? ঠিক আছে তো? ও কে!
রিসিভার নামিয়ে রেখে বললেন, যাও।
উনি রাজি হলেন?
হয়েছেন। তুমি প্রুফেই কারকেশন করতে করতে যাও।
আমি অন্যের হয়ে লিখব?
আপত্তি কেন? তুমি সন্তোষকুমার ঘোষের নাম শুনেছ?
হ্যাঁ। শ্রীচরণেষু মাকে-র লেখক।
উনি একজন বিখ্যাত সাংবাদিক নামে রবীন্দ্রনাথের জীবনী লিখেছিলেন। সেই বইতে কোথাও ওঁর নাম ছাপা ছিল না। তুমি ভেবে নাও, বাংলা সাহিত্যকে বাঁচিয়ে দিচ্ছ। আরে, আমি না ছাপি আর একজন কৃতার্থ হয়ে ওই বই ছাপবে। বুঝেছ?
টেবিলে ফিরে এসে নিজের সঙ্গে লড়াই করতে আরম্ভ করলাম। কী করব বুঝতে পারছি না। একটা মন বলছিল, এটা অন্যায়, খুব অন্যায়। আর এক মন বলছিল, এটা শ্রাদ্ধের মতো কাজ। করা উচিত। এই বই ছাপা হলে অন্তত ষাট টাকা দাম হবে। যারা খেয়ে না খেয়ে বই কেনে তাদের উপকার করা হবে।