অনিমেষ কিছু বলতে যাচ্ছিল, তাকে হাত নেড়ে থামিয়ে মাধবীলতা বলল, এর জন্য আমাদের কত দিতে হবে?
খুব বেশি নয়। আপনাদের যে টাকার কথা বলেছিলাম তার মধ্যেই হয়ে যাবে। কমও হতে পারে। আপনারা কি চা খাবেন? মিস্টার রায় তাকালেন।
মাধবীলতা মাথা নাড়ল, না।
একটা সময় ছিল, এই শহরের মানুষ সমস্যায় পড়লে সিপিএমের নেতাদের কাছেও যেমন যেত তেমনি কংগ্রেসের নেতাদেরও সাহায্য নিত। দুই দলের নেতারা নির্বাচনের আগে যত যুদ্ধই করে থাকুন না কেন বাকি সাড়ে চার বছর সৌজন্যবোধ হারাতেন না। তখন চা-বাগানে আর এস পি-র প্রভাব খুব বেশি ছিল। কংগ্রেস বা সিপিএমের সংগঠন সেখানে খুব দুর্বল ছিল। কিন্তু কোনও মানবিক প্রয়োজনে খগেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত যদি ননী ভট্টাচার্যকে অনুরোধ করতেন তা হলে ননীবাবু মুখ ফিরিয়ে নিতেন না। এখন তো এখানে কংগ্রেস একটা সাইনবোর্ডের পার্টি। নতুন পার্টি তৃণমূল কলকাতায় মাথা চাড়া দিচ্ছে। মা দুর্গা যখন দশ হাতে যুদ্ধ করেছিলেন তখন দেবতারা তাকে অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করেছিল। তৃণমূল যাঁর স্বপ্ন তার পাশের কারও ওপর তো ভরসা করা যাচ্ছে না। এই পরিপ্রেক্ষিতে আপনাদের উচিত প্রশাসনের সাহায্য নেওয়া। ধীরে ধীরে কথাগুলো বললেন মিস্টার রায়।
প্রশাসন আমাদের সাহায্য করবে?
সচরাচর করে না। ভয় পায়। জলপাইগুড়ি থেকে সুন্দরবনের রামগঙ্গাতে ট্রান্সফার করে দিতে পারে। পুলিশের ট্রেনিং তো মিলিটারিদের মতো নয় যে প্রয়োজনে দেশের সব জায়গায় যেতে তৈরি থাকবে। একটা কাজ করা যায়। আমার খুব ঘনিষ্ঠ একজন উত্তরবাংলার পুলিশের এক নম্বর কর্তা। সরকার তার সঙ্গে ঝামেলায় যায় না। বছর খানেকের মধ্যেই অবসর নেবেন। আমি তাঁকে টেলিফোনে ব্যাপারটা বলছি। দেখা যাক কী হয়। আচ্ছা? মিস্টার রায় উঠে দাঁড়ালেন। এগিয়ে দিলেন দরজা পর্যন্ত।
তখন সবে সন্ধে হয়েছে। লছমনের রিকশায় ওঠার পর অনিমেষ বলল, তোমার কী মনে হয়, পুলিশ সাহায্য করবে?
মাধবীলতা হেসে ফেলল, তুমি এ কথা আমাকে জিজ্ঞাসা করছ?
হুঁ। অনিমেষ অন্যদিকে তাকাল। তারপর বলল, আমার মনে হচ্ছে বাড়িতে ফিরে অর্ককে দেখতে পাব। ও নিশ্চয়ই মত পালটাবে।
মাধবীলতা মাথা নাড়ল, সত্যি, তুমি খুব পালটে গেছ।
মানে? অনিমেষ তাকাল।
শান্তিনিকেতনের ওই রাতের পর যে তুমি স্বচ্ছন্দে আমার কথা ভুলে যেতে পেরেছিলে, আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার সময় বিন্দুমাত্র দুর্বল হওনি, সেই তুমি ছেলে ফিরে যাবে শোনার পরেও ভাবছ আমাদের ছেড়ে ও যাবে না। পালটে যাওনি, বলো?
লতা, ও চলে গেলে কি তোমার ভাল লাগবে?
আমি এসব নিয়ে আর ভাবি না।
সে কী?
জীবনে দুবার প্রচণ্ড অপমানিত হয়েছিলাম। এক, লালবাজারের পুলিশ যখন আমি অন্তঃসত্ত্বা দেখেও জামাকাপড় খুলে অত্যাচার করেছিল, দুই, জেল থেকে বেরিয়ে যখন শুনলে আমি সন্তানের মা তখন অদ্ভুতভাবে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলে। মাধবীলতা শ্বাস ফেলল।
লতা, আমি তো অনেকবার বলেছি, কথাটা বলা ভুল হয়েছিল!
যখন মনে পড়ে তখন খারাপ লাগাটা ঘিরে ধরে। হ্যাঁ, তারপর এই এতগুলো বছর, প্রায় চল্লিশ-বিয়াল্লিশ বছর ধরে আমরা একসঙ্গে আছি। তুমি যে অসাধারণ থেকে ক্রমশ সাধারণ বাবা এবং স্বামীতে চলে এলে তা দেখে, বিশ্বাস করো, স্বস্তি পেয়েছি। গোটা জীবন ঘরের মধ্যে বাস করতে কোনও মেয়ে চায় না। তার চেয়ে বৈশাখ জ্যৈষ্ঠের প্রচণ্ড গরমের দুপুর, সেও ভাল। আমি সব মেনে নিয়েছি। তোমার পাশে আছি। কিন্তু জোর করে দুঃখে জড়াতে চাই না। মাধবীলতা বলল।
খুব বেশি নয়। আপনাদের যে টাকার কথা বলেছিলাম তার মধ্যেই হয়ে যাবে। কমও হতে পারে। আপনারা কি চা খাবেন? মিস্টার রায় তাকালেন।
মাধবীলতা মাথা নাড়ল, না।
একটা সময় ছিল, এই শহরের মানুষ সমস্যায় পড়লে সিপিএমের নেতাদের কাছেও যেমন যেত তেমনি কংগ্রেসের নেতাদেরও সাহায্য নিত। দুই দলের নেতারা নির্বাচনের আগে যত যুদ্ধই করে থাকুন না কেন বাকি সাড়ে চার বছর সৌজন্যবোধ হারাতেন না। তখন চা-বাগানে আর এস পি-র প্রভাব খুব বেশি ছিল। কংগ্রেস বা সিপিএমের সংগঠন সেখানে খুব দুর্বল ছিল। কিন্তু কোনও মানবিক প্রয়োজনে খগেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত যদি ননী ভট্টাচার্যকে অনুরোধ করতেন তা হলে ননীবাবু মুখ ফিরিয়ে নিতেন না। এখন তো এখানে কংগ্রেস একটা সাইনবোর্ডের পার্টি। নতুন পার্টি তৃণমূল কলকাতায় মাথা চাড়া দিচ্ছে। মা দুর্গা যখন দশ হাতে যুদ্ধ করেছিলেন তখন দেবতারা তাকে অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করেছিল। তৃণমূল যাঁর স্বপ্ন তার পাশের কারও ওপর তো ভরসা করা যাচ্ছে না। এই পরিপ্রেক্ষিতে আপনাদের উচিত প্রশাসনের সাহায্য নেওয়া। ধীরে ধীরে কথাগুলো বললেন মিস্টার রায়।
প্রশাসন আমাদের সাহায্য করবে?
সচরাচর করে না। ভয় পায়। জলপাইগুড়ি থেকে সুন্দরবনের রামগঙ্গাতে ট্রান্সফার করে দিতে পারে। পুলিশের ট্রেনিং তো মিলিটারিদের মতো নয় যে প্রয়োজনে দেশের সব জায়গায় যেতে তৈরি থাকবে। একটা কাজ করা যায়। আমার খুব ঘনিষ্ঠ একজন উত্তরবাংলার পুলিশের এক নম্বর কর্তা। সরকার তার সঙ্গে ঝামেলায় যায় না। বছর খানেকের মধ্যেই অবসর নেবেন। আমি তাঁকে টেলিফোনে ব্যাপারটা বলছি। দেখা যাক কী হয়। আচ্ছা? মিস্টার রায় উঠে দাঁড়ালেন। এগিয়ে দিলেন দরজা পর্যন্ত।
তখন সবে সন্ধে হয়েছে। লছমনের রিকশায় ওঠার পর অনিমেষ বলল, তোমার কী মনে হয়, পুলিশ সাহায্য করবে?
মাধবীলতা হেসে ফেলল, তুমি এ কথা আমাকে জিজ্ঞাসা করছ?
হুঁ। অনিমেষ অন্যদিকে তাকাল। তারপর বলল, আমার মনে হচ্ছে বাড়িতে ফিরে অর্ককে দেখতে পাব। ও নিশ্চয়ই মত পালটাবে।
মাধবীলতা মাথা নাড়ল, সত্যি, তুমি খুব পালটে গেছ।
মানে? অনিমেষ তাকাল।
শান্তিনিকেতনের ওই রাতের পর যে তুমি স্বচ্ছন্দে আমার কথা ভুলে যেতে পেরেছিলে, আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার সময় বিন্দুমাত্র দুর্বল হওনি, সেই তুমি ছেলে ফিরে যাবে শোনার পরেও ভাবছ আমাদের ছেড়ে ও যাবে না। পালটে যাওনি, বলো?
লতা, ও চলে গেলে কি তোমার ভাল লাগবে?
আমি এসব নিয়ে আর ভাবি না।
সে কী?
জীবনে দুবার প্রচণ্ড অপমানিত হয়েছিলাম। এক, লালবাজারের পুলিশ যখন আমি অন্তঃসত্ত্বা দেখেও জামাকাপড় খুলে অত্যাচার করেছিল, দুই, জেল থেকে বেরিয়ে যখন শুনলে আমি সন্তানের মা তখন অদ্ভুতভাবে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলে। মাধবীলতা শ্বাস ফেলল।
লতা, আমি তো অনেকবার বলেছি, কথাটা বলা ভুল হয়েছিল!
যখন মনে পড়ে তখন খারাপ লাগাটা ঘিরে ধরে। হ্যাঁ, তারপর এই এতগুলো বছর, প্রায় চল্লিশ-বিয়াল্লিশ বছর ধরে আমরা একসঙ্গে আছি। তুমি যে অসাধারণ থেকে ক্রমশ সাধারণ বাবা এবং স্বামীতে চলে এলে তা দেখে, বিশ্বাস করো, স্বস্তি পেয়েছি। গোটা জীবন ঘরের মধ্যে বাস করতে কোনও মেয়ে চায় না। তার চেয়ে বৈশাখ জ্যৈষ্ঠের প্রচণ্ড গরমের দুপুর, সেও ভাল। আমি সব মেনে নিয়েছি। তোমার পাশে আছি। কিন্তু জোর করে দুঃখে জড়াতে চাই না। মাধবীলতা বলল।