দরজা বন্ধ। কড়া নাড়তেই শব্দ ছড়াল। সেকেন্ড দশেকে পৃথিবীর কেউ কেউ একশো মিটার দৌড়ে যায়, কিন্তু দরজা খুলল না। দ্বিতীয়বার কড়া নাড়তেই পেছন থেকে এক বিধবা বুড়ি বলল, চোরের মতন থাকে, সহজে সাড়া দেয় না।
এই বুড়ি বৃষ্টি না হলে গলির পাশে দরজার গায়ে বসে থাকে প্রায় চব্বিশ ঘণ্টা। কে যাচ্ছে, কে আসছে তা নাকি শকুনের মতো খুঁটিয়ে দেখে। এক রাত্রে কাজ থেকে ফিরছিল অর্ক, বস্তির একটি যুবতী বউ তার কিছুটা সামনে হেঁটে এখান দিয়ে ফিরছিল। বুড়ি ডাকল, ও বউ! যখন বেরোস তখন তো পাই না। ফেরার সময় এত ফুলের বাস ছড়িয়ে কোত্থেকে ফিরিস?
বউটি থমকাল, উঃ, সব গেছে কিন্তু নাক আর চোখ গেল না। মরলে বস্তির লোক বেঁচে যাবে। বউটি চলে গেলে বুড়ি অর্কর দিকে তাকিয়ে হাসল, সত্যি কথা আজকাল কারও ভাল লাগে না। অর্ক জবাব দেয়নি। দরজা খুলল রামজি, খুলে অর্ককে দেখে হেসে হিন্দিতে বলল, সরি, ল্যাট্রিনে ছিলাম। খুব তাড়াতাড়ি ফিরে এলেন?
দরজা বন্ধ করে উঠোনে দাঁড়িয়ে অর্ক বলল, ওখানে তেমন কোনও কাজ ছিল না। আপনি কেমন ছিলেন? অসুবিধে হয়নি তো?
হাসলেন রামজি, তেমন কিছু নয়। যা হয়েছে তা স্বাভাবিক। চা বানাই?
মাথা নেড়ে ঘরে ঢুকে গেল অর্ক। চারপাশে তাকিয়ে খুশি হল সে। মা বাড়িতে থাকতেও এই ঘর এত গোছানো থাকত না। রামজির রুচি খুবই ভাল।
বাড়িতে যেহেতু কোনও মহিলা নেই তাই রামজি বারমুডা আর গেঞ্জি পরে থাকে। প্রথম দিনেই সে অর্কর কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছিল। ওর সঙ্গে কথা বলতে হলে হয় হিন্দি নয় ইংরেজি বলতে হয়। অর্ক হিন্দিতে স্বচ্ছন্দ নয়, বলার সময় কোনও কোনও শব্দের হিন্দি জানা না থাকায় বাধ্য হয়ে বাংলাটাই বলে। রামজির গুণ হল শব্দ না বুঝলেও প্রশ্ন করে না।
শরীর আরাম চাইছিল। বাথরুমে ঢুকে একেবারে স্নান করে বেরিয়ে এল অর্ক। রামজি দুটো প্লেটে রুটি তরকারি নিয়ে এল। অর্ক খুশি হল, বাঃ, খুব খিদে পেয়েছিল। থ্যাঙ্ক ইউ।
জলপাইগুড়িতে যাওয়ার আগে সে রামজিকে খাবার বানাতে দেয়নি। সকালে ভাতে-ভাত নিজেই করত। রাত্রের খাবার বেলগাছিয়ার মোড়ের ঠাকুরের দোকান থেকে কিনে আনত। এখন খেতে খেতে বুঝল রামজিরা নিশ্চয়ই মোটা মোটা রুটি খায়। মোটা হলেও সুস্বাদু।
পাড়ার ছেলেরা কিছু বলেছে আপনাকে? অর্ক জিজ্ঞাসা করল। রামজি হাসল, তেমন কিছু না। আমি কে? কোত্থেকে আসছি? আপনার সঙ্গে আমার কী সম্পর্ক? এইসব। এই গলিতে যে বুড়ি বসে থাকে সে আমার সম্পর্কে ভাল ভাল কথা বলেছে।
কী বলেছে?
আমি ভালমানুষ, বাড়ির ভিতর চুপচাপ থাকি। আমার কাছে এখন পর্যন্ত কোনও লোককে আসতে দিইনি। বস্তির কোনও মেয়ের দিকে আমি চোখ তুলে তাকাই না। রামজি হাসল।
পাড়ার ছেলেদের কী জবাব দিয়েছেন?
একটু মিথ্যে বলতে হল। আমার ভোটার কার্ডে লেখা আছে আমি বলরাম মাহাতো। তাই বললাম, নাম বলরাম। থাকি হাজারিবাগে। আমার পাশের বাড়ির বাঙালিদাদার অনুরোধে অর্কদাদা থাকতে দিয়েছেন। ওঁরা একসঙ্গে স্কুলে পড়তেন। আমি এখানে এসেছি চাকরির খোঁজে। ইন্টারভিউ দিয়েই চলে যাব।
রামজি উঠে ঘর থেকে ভোটার কার্ড নিয়ে এসে অর্ককে দিল, এই কার্ড দেখে ওরা আর কোনও প্রশ্ন করেনি। কিন্তু আপনি জানলেন কী করে?
এই বুড়ি বৃষ্টি না হলে গলির পাশে দরজার গায়ে বসে থাকে প্রায় চব্বিশ ঘণ্টা। কে যাচ্ছে, কে আসছে তা নাকি শকুনের মতো খুঁটিয়ে দেখে। এক রাত্রে কাজ থেকে ফিরছিল অর্ক, বস্তির একটি যুবতী বউ তার কিছুটা সামনে হেঁটে এখান দিয়ে ফিরছিল। বুড়ি ডাকল, ও বউ! যখন বেরোস তখন তো পাই না। ফেরার সময় এত ফুলের বাস ছড়িয়ে কোত্থেকে ফিরিস?
বউটি থমকাল, উঃ, সব গেছে কিন্তু নাক আর চোখ গেল না। মরলে বস্তির লোক বেঁচে যাবে। বউটি চলে গেলে বুড়ি অর্কর দিকে তাকিয়ে হাসল, সত্যি কথা আজকাল কারও ভাল লাগে না। অর্ক জবাব দেয়নি। দরজা খুলল রামজি, খুলে অর্ককে দেখে হেসে হিন্দিতে বলল, সরি, ল্যাট্রিনে ছিলাম। খুব তাড়াতাড়ি ফিরে এলেন?
দরজা বন্ধ করে উঠোনে দাঁড়িয়ে অর্ক বলল, ওখানে তেমন কোনও কাজ ছিল না। আপনি কেমন ছিলেন? অসুবিধে হয়নি তো?
হাসলেন রামজি, তেমন কিছু নয়। যা হয়েছে তা স্বাভাবিক। চা বানাই?
মাথা নেড়ে ঘরে ঢুকে গেল অর্ক। চারপাশে তাকিয়ে খুশি হল সে। মা বাড়িতে থাকতেও এই ঘর এত গোছানো থাকত না। রামজির রুচি খুবই ভাল।
বাড়িতে যেহেতু কোনও মহিলা নেই তাই রামজি বারমুডা আর গেঞ্জি পরে থাকে। প্রথম দিনেই সে অর্কর কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছিল। ওর সঙ্গে কথা বলতে হলে হয় হিন্দি নয় ইংরেজি বলতে হয়। অর্ক হিন্দিতে স্বচ্ছন্দ নয়, বলার সময় কোনও কোনও শব্দের হিন্দি জানা না থাকায় বাধ্য হয়ে বাংলাটাই বলে। রামজির গুণ হল শব্দ না বুঝলেও প্রশ্ন করে না।
শরীর আরাম চাইছিল। বাথরুমে ঢুকে একেবারে স্নান করে বেরিয়ে এল অর্ক। রামজি দুটো প্লেটে রুটি তরকারি নিয়ে এল। অর্ক খুশি হল, বাঃ, খুব খিদে পেয়েছিল। থ্যাঙ্ক ইউ।
জলপাইগুড়িতে যাওয়ার আগে সে রামজিকে খাবার বানাতে দেয়নি। সকালে ভাতে-ভাত নিজেই করত। রাত্রের খাবার বেলগাছিয়ার মোড়ের ঠাকুরের দোকান থেকে কিনে আনত। এখন খেতে খেতে বুঝল রামজিরা নিশ্চয়ই মোটা মোটা রুটি খায়। মোটা হলেও সুস্বাদু।
পাড়ার ছেলেরা কিছু বলেছে আপনাকে? অর্ক জিজ্ঞাসা করল। রামজি হাসল, তেমন কিছু না। আমি কে? কোত্থেকে আসছি? আপনার সঙ্গে আমার কী সম্পর্ক? এইসব। এই গলিতে যে বুড়ি বসে থাকে সে আমার সম্পর্কে ভাল ভাল কথা বলেছে।
কী বলেছে?
আমি ভালমানুষ, বাড়ির ভিতর চুপচাপ থাকি। আমার কাছে এখন পর্যন্ত কোনও লোককে আসতে দিইনি। বস্তির কোনও মেয়ের দিকে আমি চোখ তুলে তাকাই না। রামজি হাসল।
পাড়ার ছেলেদের কী জবাব দিয়েছেন?
একটু মিথ্যে বলতে হল। আমার ভোটার কার্ডে লেখা আছে আমি বলরাম মাহাতো। তাই বললাম, নাম বলরাম। থাকি হাজারিবাগে। আমার পাশের বাড়ির বাঙালিদাদার অনুরোধে অর্কদাদা থাকতে দিয়েছেন। ওঁরা একসঙ্গে স্কুলে পড়তেন। আমি এখানে এসেছি চাকরির খোঁজে। ইন্টারভিউ দিয়েই চলে যাব।
রামজি উঠে ঘর থেকে ভোটার কার্ড নিয়ে এসে অর্ককে দিল, এই কার্ড দেখে ওরা আর কোনও প্রশ্ন করেনি। কিন্তু আপনি জানলেন কী করে?