What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected মৌষলকাল - সমরেশ মজুমদার (1 Viewer)

দুদিন বাদে বাজার থেকে বের হওয়ার সময় দেবেশের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। সাইকেল থেকে নেমে দেবেশ বুঝিয়ে দিল কীভাবে ওর ডেরায় পৌঁছোতে হবে। নিজের মোবাইল নাম্বার দিয়ে বলল, যেদিন যাবি তার আগে আমাকে ফোন করবি। সকালের দিকে আয়, দুপুরে একসঙ্গে ভাত খাব।

সঙ্গে যদি মাধবীলতা যায়?

কুছ পরোয়া নেই। আমরা তো ডাল ভাত তরকারি খাই। হয়ে যাবে।

দেবেশ, তুই বেশ ভাল আছিস। না?

হো হো করে হাসল দেবেশ। তারপর সাইকেলে উঠে চলে গেল।

.

বাড়িতে ফেরামাত্র মাধবীলতা বলল, শোনো, জগদীশবাবু ফোন করেছিলেন।

কী বললেন?

উনি ঘণ্টাখানেকের মধ্যে একজনকে নিয়ে আসছেন বাড়ি দেখাতে।

বেশ করিতকর্মা লোক তো!

কিন্তু ওঁর সঙ্গে তোমার কথা বলে নেওয়া উচিত। মাধবীলতা বলল।

কী ব্যাপারে?

আশ্চর্য মানুষ তুমি! ওঁকে পারিশ্রমিক দেবে না?

ওহো! অনিমেষ হেসে ফেলল।

হাসছ যে!

তুমি দালালি না বলে পারিশ্রমিক বললে, তাই। তা ওঁদের নিশ্চয়ই ফিক্সড রেট থাকে। বাড়িভাড়া পেতে গেলে দালালকে একমাসের ভাড়া দিতে হয়। কিন্তু ওঁকে এত কিছু জিজ্ঞাসা করব কী করে? দেখি, রামদা কী বলেন, উনি নিশ্চয়ই জানেন। অনিমেষ বলল।

কেন? তুমি ওঁকেই জিজ্ঞাসা করো কত দিতে হবে? মাধবীলতা বলল, তুমি যদি না পারো আমি ওঁকে জিজ্ঞাসা করতে পারি।

.

জগদীশবাবু যাঁকে সঙ্গে নিয়ে এলেন তার বয়স বেশি নয়। পঞ্চাশের এপাশেই। সাদা পাজামা পাঞ্জাবি পরনে। নমস্কার করে বললেন, আমি স্বপ্নেন্দু দত্ত। জগদীশবাবু বললেন, আপনারা বাড়ি বিক্রি করবেন!

হ্যাঁ।

বাড়ির মালিক কে?

আমার ঠাকুরদা বাড়িটা বানিয়েছেন। তার কাছ থেকে আমার বাবা বাড়িটা পেয়েছিলেন। এখন আমার মা এখানে থাকেন। তিনিই মালিক বলতে পারেন।

কেন? ছেলে হিসেবে আপনারও তত অর্ধেক পাওয়ার কথা। কোর্টে গিয়ে আইনসম্মত করে নেননি? স্বপ্নেন্দু জিজ্ঞাসা করলেন।

জগদীশবাবু বললেন, অনিমেষবাবু কলকাতায় থাকেন বলে ওসব করা হয়নি। এখন হবে। কয়েকদিনের মধ্যেই হয়ে যাবে।

আপনার আর কোনও ভাইবোন নেই?

জগদীশবাবু মাথা নাড়েন, না, উনিই একমাত্র ছেলে।

গুড। চলুন, দেখা যাক। স্বপ্নেন্দু বললেন।

প্রায় আধঘণ্টা ধরে স্বপ্নেন্দু দত্ত জগদীশবাবুকে নিয়ে পুরো বাড়িটা ঘুরে দেখলেন। এমনকী ভাড়াটের দিকটাও।

জগদীশবাবু অনিমেষকে বলেছিলেন, আপনি বসুন। আমিই ওঁর সঙ্গে আছি।
 
বাড়ি দেখার পর সবাই বারান্দার চেয়ারে বসল ওরা। স্বপ্নেন্দু দত্ত কোনও ভণিতা না করে বললেন, আপনারা এই বাড়ির কোনও যত্ন করেননি। মনে হয় বহু বছর মেরামত করা হয়নি।

হ্যাঁ। কথাটা ঠিক।

আমি যদি কিনি তা হলে এই বাড়ি ভেঙে ফেলব।

ভেঙে ফেলবেন? প্রশ্নটা মুখ থেকে বেরিয়ে এল।

দেখুন, এই বাড়ি তৈরি হয়েছে পরিকল্পনা ছাড়াই। যিনি তৈরি করেছেন তার ইচ্ছে ছিল পরিবারের সবাই একসঙ্গে থাকবে। এখন অত বড় পরিবার কোথায়? থাকলেও একসঙ্গে থাকে না। আমাকে মাল্টিস্টোরিড তৈরি করে ফ্ল্যাট বিক্রি করতে হবে। ওপাশে অনেকটা জায়গা ছাড়তে হবে রাস্তার জন্যে। কিন্তু দুটো কথা জানতে চাইব। আপনার ভাড়াটে কি উঠে যাবেন?

সবে কথা শুরু হয়েছে। উনি তিন লক্ষ টাকা চেয়েছেন।

সেটা আপনার হেডেক। আমি চাইব ভাড়াটেহীন বাড়ি কিনতে। আমি কিনে তুলতে গেলে অনেক ঝামেলা হবে। স্বপ্নেন্দু বললেন।

অনিমেষ চুপ করে থাকল।

দুই নম্বর, লোকাল সরকারি পার্টি কি আপনাকে বাড়ি বিক্রির ব্যাপারে গ্রিন সিগন্যাল দিয়েছেন? স্বপ্নেন্দু তাকালেন।

হ্যাঁ। জগদীশবাবু বলায় আমি ওঁদের সঙ্গে কথা বলেছি। নৃপেনবাবু এবং ভোম্বলবাবু সম্মতি দিয়েছেন। অনিমেষ বলল।

আপনি ভাগ্যবান। খুব ভাল খবর। এখন বলুন, এই বাড়ি জমির জন্যে আমাকে কত টাকা দিতে হবে? স্বপ্নেন্দু জিজ্ঞাসা করলেন।

অনিমেষ জগদীশবাবুর দিকে তাকাল, আপনি বলুন। জগদীশবাবু বললেন, এই পাড়ার জমির কাঠা যে দামে বিক্রি হয় সেই দামের সঙ্গে বাড়ির দাম যোগ করলেই অঙ্কটা বের হতে পারে।

স্বপ্নেন্দু বললেন, বাড়ির দাম তত ঠিক করাই যাবে না। জমির দামই আসল ব্যাপার। ঠিক আছে। আপনি ভাড়াটের ব্যাপারটা দেখুন। আমি কেনার ব্যাপারে ইন্টারেস্টেড। আপনাকে কোনও ফ্ল্যাট দেব না। স্রেফ আন্দাজে লাখ কুড়ির অফার দিচ্ছি। আর হ্যাঁ, বাড়ির প্ল্যানের একটা কপি আমার চাই আর কোর্ট থেকে মালিকানা আইনসম্মত করে নিন। উইল থাকলে কোনও সমস্যা হবে না।

স্বপ্নেন্দুকে নিয়ে ফিরে যাচ্ছিলেন জগদীশবাবু, অনিমেষ তাকে বলল, আপনি একটু পরে গেলে অসুবিধে হবে?

না না। ঠিক আছে, স্বপ্নেন্দুবাবু, আপনি যান, আমি পরে আসছি।

.

গাড়ি চলে গেলে জগদীশবাবু কাছে এলেন, বলুন।

অনিমেষ সরাসরি জিজ্ঞাসা করল, আপনার পারিশ্রমিক নিয়ে আমরা কথা বলিনি। আমি কি রামদার কাছে জেনে নেব?

কী কাণ্ড! আমি কী নিই তা তিনি জানবেন কী করে? তার সঙ্গে তো কোনও কাজ করিনি। হাসলেন জগদীশবাবু, এসব নিয়ে একটুও ভাববেন না। অলিখিত একটা কমিশনের কথা যাঁরা কেনাবেচা করেন তাদের সবাই জানেন। স্বপ্নেন্দু দত্ত যে দাম দিতে চাইছেন তা তো জানা হল, যদি অন্য কেউ ওঁর চেয়ে বেশি দাম দিতে রাজি হন তার জন্যে অপেক্ষা করতে হবে। এতে আপনাদের যেমন লাভ, তেমনি আমারও।

অনিমেষ বলল, আমি এসব ব্যাপারে নিতান্তই অজ্ঞ। কমিশনের ব্যাপারটা যদি বলেন।

সিম্পল। আমি মাত্র পাঁচ পার্সেন্ট নিই। তাও ভাগাভাগি করে। যিনি কিনছেন তিনি আড়াই, যিনি বিক্রি করছেন তিনি বাকি আড়াই। আপনি না হয় দুই দেবেন, আমি বায়ারের কাছ থেকে তিন চেয়ে নেব। আমাকে বিক্রির ব্যাপারটা একটু প্রচার করতে হবে। জগদীশবাবু মাথা নেড়ে বললেন।

প্রচার করবেন? কীভাবে?

লোকাল কাগজগুলোতে বিজ্ঞাপন ছাপব। এর জন্যে আপনাকে কিছু দিতে হবে না। খরচ যা হবে তা আমিই দেব। আপনি কোর্টের ব্যাপারটার ফয়সালা করে ফেলুন। এখানকার কোনও উকিলকে চেনেন? জগদীশবাবু তাকালেন।

মিস্টার রায়ের মুখ মনে পড়ায় অনিমেষ মাথা নেড়ে বলল, হ্যাঁ।

গুড। তা হলে চলি। প্রয়োজন হলেই ফোন করব। জগদীশবাবু চলে গেলেন।

.

ফিরে এসে বারান্দায় দাঁড়াতেই মাধবীলতা এগিয়ে এল, কী কথা হল? অনিমেষ স্বপ্নের কথাগুলো জানালে মাধবীলতা বলল, বাব্বা। খুব খুঁতখুঁতে লোক তো। অবশ্য টাকা দিয়ে যে কিনবে সে তো সব দিক দেখে নেবেই।

তিনটে সমস্যার সমাধান করতে হবে। অনিমেষ বলল।

মাধবীলতা মাথা নাড়ল, একটা হল মালিকানা ঠিক করে নেওয়া, দ্বিতীয়টা ভাড়াটেদের তুলে দেওয়া। তৃতীয়টা কী?

দাদুর বানানো এই বাড়ি ভদ্রলোক ভেঙে ফ্ল্যাটবাড়ি বানাবেন। ছেলেবেলায় চোখের ওপর বাড়িটাকে তৈরি হতে দেখেছি। শোনার পর কেমন লাগছে? অনিমেষ বলল।

এই সময় পেছন থেকে ছোটমার গলা শোনা গেল, তা হলে থাক।

মাধবীলতা হাসল, আচ্ছা, তোমার যদি একটা মেয়ে থাকত এতদিনে তার অনেকদিন আগে বিয়ে হয়ে যেত। বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে তাকে তাদের নিয়ম অনুযায়ী চলতে হবে। তাকে যদি বিকেল চারটের সময় ভাত খেতে হয় তুমি কী বলবে, ওই বাড়িতে থাকিস না?

দুটো এককথা হল? অনিমেষ বিরক্ত।

প্রায়। যে বাড়ি কিনবে সে কী করবে তা বিক্রেতা ঠিক করবে? মাধবীলতা বলল, এটা কোনও সমস্যা নয়। আমরা বাধ্য হয়ে বাড়ি বিক্রি করতে চাইছি আর ওরা তাজমহল কিনছে না যে ভেঙে ফেলতে পারবে না।

ছোটমা বললেন, ঠিক কথা। কিন্তু ভাড়াটেদের কি ভোলা যাবে? ওদের ছোট বউটা খুব বিপদে পড়ে যাবে।

অনিমেষ অবাক হল, কেন? তার কী হল?

ছোটমা বলল, বাপ মা ভাই নেই। স্বামী যাওয়ার পর ভাশুরের সংসারে থাকতে পারছে দিনরাত কাজ করে বলে। রান্নাঘরটা বেশ বড় বলে ওখানেই রাত্রে শোয়। ওরা যদি ছোট বাড়িতে ভাড়া নিয়ে চলে যায় তা হলে ওর নিশ্চয়ই জায়গা হবে না।

যিনি তোমার সেবা করেছিলেন?

হ্যাঁ। খুব ভাল মেয়ে।

তাকে নিয়ে চিন্তা আমাদের করার কথা নয়। অনিমেষ বলল।

ছোটমা বললেন, ওরা যা চাইছে তা দিয়ে দিলে যদি ভাল বাড়ি ভাড়া পায়, যেখানে মেয়েটা থাকতে পারবে, তাই দেওয়া উচিত। কুড়ি লক্ষ টাকা থেকে কিছু কমলে কি খুব অসুবিধে হবে মাধবীলতা?

আপনি চাইলে নিশ্চয়ই দেওয়া যেতে পারে। মাধবীলতা বলল।

ওহো, একটা কথা, অনিমেষ বলল, মিস্টার রায়, মানে বাবার উকিল, বলেছিলেন কোর্ট থেকে ফেরার পথে আমাদের বাড়িতে আসবেন। সেদিন তো আসেননি। পরে আমি যখন বাইরে গিয়েছি তখন কি এসেছেন?

তোমার কী হয়েছে বলো তো? মাধবীলতা জিজ্ঞাসা করল।

কেন? অনিমেষ তাকাল।

ভদ্রলোক এলে আমরা কি তোমাকে জানাতাম না?

তা বটে।

এরপরে ভাত খেয়ে উঠে বলবে খাইনি তো! মাধবীলতা হেসে ফেলল।

ছোটমা যোগ করলেন, ওর বাবাও এই একই কথা বলত।
 
বিকেলে মিস্টার রায়ের বাড়িতে রিকশা নিয়ে গেল অনিমেষ। জলপাইগুড়িতে আসার পর বেরোলেই রিকশাভাড়া দিতে হচ্ছে। খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এরপর থেকে একটু একটু করে হাঁটার চেষ্টা করতে হবে। ক্রাচ নিয়ে টানা মিনিট দশেক তো সে হাঁটতে পারে। চেম্বার খোলা ছিল। একটি তরুণ, সম্ভবত মিস্টার রায়ের সহকারী, বললেন, কদিন ধরে স্যার কোর্টে যাচ্ছেন না।

প্রেশার বেড়ে গিয়েছিল। কী দরকার?

উনি আমার বাবার উইল করেছেন। বাবার নাম মহীতোষ মিত্র। সেই ব্যাপারে কিছু বলার ছিল। উনি বলেছিলেন, আমাদের বাড়িতে যাবেন। অনিমেষ বলল।

জানি। সেদিন উনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। দাঁড়ান, দেখছি। তরুণ ভেতরে চলে গেল। ফিরে এল কয়েক মিনিটের মধ্যে, বসুন। স্যার আসছেন।

মিস্টার রায়কে বেশ দুর্বল দেখাচ্ছিল। চেয়ারে বসে বললেন, আমি খুব দুঃখিত, হঠাৎই প্রেশারটা–।

ঠিক আছে। এখন কেমন আছেন?

কিছুটা ভাল। সারাজীবন এত টেনশন–। যাক গে, উইলটা নিয়ে মিসেস মিত্র কী করবেন বলেছেন? মিস্টার রায় বললেন।

না। আমি চাই বাবার শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী উইলটা আইনসম্মত হোক। অনিমেষ পরিষ্কার বলল।

তা হলে সেটা তো আমিই করব। হাসলেন ভদ্রলোক, নাকি অন্য কোনও ল-ইয়ারের কাছে উনি যেতে চাইছেন?

আপনি ছাড়া এই শহরের অন্য কোনও ল-ইয়ারকে উনি বোধহয় জানেন না।

তা হলে?

উনি উইলটা ফেরত চাইছেন কেন তা আমি জানি না।

মিস্টার রায় একটু চিন্তা করলেন। তারপর তরুণ সহকারীকে বললেন, দেখো তো, বাহাদুর এখনও আছে কি না!

আছে। একটু আগে দেখেছি। তরুণ বলল।

তা হলে গাড়ি বের করতে বলল।

সে কী! আপনি এই শরীর নিয়ে বাইরে যাবেন?

শরীর এখন ভাল আছে। তা ছাড়া আমি তো মহীতোষবাবুর স্ত্রীকে আমার কাছে আসতে বলতে পারি না। মিস্টার রায় বললেন।

একটা বড় খাম নিয়ে তরুণ সহকারী সামনে বসেছিল। অনিমেষ পেছনে, মিস্টার রায়ের পাশে।

হাঁটাচলা করতে কি খুব কষ্ট হয়?

বেশিক্ষণ হাঁটলে হয়।

এখন কি মনে হয় না, কী বিরাট ভুল করেছেন?

অনিমেষ হাসল, মানুষের অগ্রগতি হয়েছে যেসব আবিষ্কারের জন্যে তা করতে অনেকবার ব্যর্থতা এসেছে। সেই ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়েই শেষপর্যন্ত সফল হয়েছেন আবিষ্কারকরা। তাই না?

মিস্টার রায় আর কথা বাড়ালেন না।

বাড়ির মেইন গেটে গাড়ি না রেখে পেছনের দিকে গাড়িটাকে পার্ক করতে বলল অনিমেষ। ভেতরে ঢুকে মিস্টার রায় বললেন, বাঃ, বাগানটা বেশ পরিষ্কার রেখেছেন দেখছি। কত বছরের বাড়ি?

পঞ্চাশ পেরিয়ে গেছে। অনিমেষ বলল, আসুন।

গাড়ির শব্দ পেয়ে মাধবীলতা বারান্দায় এসেছিল। অনিমেষ তাকে বলল, মিস্টার রায় অসুস্থ শরীর নিয়ে এসেছেন। ওঁকে বলো।

মাধবীলতা দ্রুত চলে গেল ভেতরে।

মিস্টার রায় বললেন, ইনি আপনার–! থেমে গেলেন তিনি।

আমার স্ত্রী।

আচ্ছা! আপনারা যে বিয়ে করেছেন তা মহীতোষবাবু জানতেন?

আমরা মন্ত্র পড়ে বা সই করে বিয়ে করিনি।

ও। তাই বলুন। আমি মহীতোষবাবুকে বলেছিলাম উইলে ছেলেকে বঞ্চিত করছেন কেন? তিনি আপনাদের মেনে নিতে পারেননি। চলুন।

বারান্দার চেয়ারে বসলেন মিস্টার রায়। আরও দুটো চেয়ার এনে দিল মাধবীলতা। অনিমেষের ইচ্ছে করল না মিস্টার রায়ের সঙ্গে ওর আলাপ করিয়ে দিতে। কিন্তু মাধবীলতা বলল, উনি এখনই আসছেন। আমি চা করছি। আপনি নর্মাল চা খাবেন তো?

অ্যাঁ? না, আমি চা খাই না। মিস্টার রায় বললেন।

আপনি? তরুণ সহকারীর দিকে তাকাল মাধবীলতা।

না না। আমি একটু আগেই চা খেয়েছি। তরুণ জানাল।

মিস্টার রায় অনিমেষকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনারা কি উইলটা দেখেছেন?

মাধবীলতা বলল, ওর পক্ষে দেখা সম্ভব ছিল না। আমি পড়েছি। কিন্তু ও দেখার আগেই উনি ছিঁড়ে ফেলেছিলেন।

ছিড়ে ফেলেছিলেন? মিস্টার রায় অবাক।

হ্যাঁ?

ওটা অবশ্য মূল উইলের কপি। ছিড়লেও কোনও অসুবিধে হবে না। মাথা নাড়লেন মিস্টার রায়, কিন্তু–।

মাধবীলতা বলল, উনি আসছেন।
 
দুটো চেয়ার খালি ছিল। অনিমেষ এবং তরুণ সহকারী বসেনি। একটা চেয়ার মাধবীলতা তুলে মিস্টার রায়ের মুখোমুখি কিছুটা দূরত্বে রাখল।

ছোটমা সামনে এসে হাত জোড় করলেন, নীরবে।

মিস্টার রায় বললেন, হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় আসতে পারিনি। আপনার চিঠি পেয়েছি। আপনি উইলের মূল কপি ফেরত চেয়েছেন। কারণটা জানতে পারি?

ওটা আমার দরকার। ছোটমা বসলেন না, নিচু গলায় বললেন।

কী করতে চান? উইলের প্রবেট নিতে চাইছেন?

না।

তা হলে?

ওই উইল আমার দরকার নেই।

আপনার স্বামীর শেষ ইচ্ছে–!

আমারও তো ইচ্ছে অনিচ্ছে আছে। বেশ জোর দিয়ে বললেন ছোটমা।

আপনি ভেবেচিন্তে বলছেন তো? কোনও প্রেশার নেই?

আমি ছেলেমানুষ নই।

বেশ, ওঁকে খামটা দিয়ে দাও। সহকারী তরুণকে বললেন মিস্টার রায়।

তরুণ এগিয়ে এসে খামটা দিল ছোটমাকে। তিনি খাম খুলে স্ট্যাম্প পেপারের ওপর টাইপ করা উইল বের করলেন। তারপর চারটি বিস্মিত চোখের সামনে খুব যত্ন করে ছিঁড়ে ফেললেন। টুকরোগুলো খামের মধ্যে ঢুকিয়ে মাধবীলতার দিকে এগিয়ে ধরলেন তিনি, এগুলো পুড়িয়ে ফেলো তো!

মিস্টার রায় মাথা নাড়লেন, এমন ঘটনা আমি আগে কখনও দেখা দূরের কথা, শুনিওনি। মানুষ সম্পত্তি পাওয়ার জন্যে মামলা করে, আপনি স্বেচ্ছায় ছেড়ে দিলেন।

ছোটমা বললেন, আমি আর কদিন! ধরুন, তিনি যদি কোনও উইল না করে যেতেন তা হলে এই বাড়ির ব্যাপারে কী ব্যবস্থা নিতে হত?

আদালতে গিয়ে ওঁর প্রকৃত উত্তরাধিকারীরা নিজেদের দাবির সপক্ষে প্রমাণ দিতে পারলে খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিতে হবে। তারপর কোর্ট অর্ডার দেবেন।

তবে তাই করুন।

বেশ। নামগুলো বলুন।

আপনি অনিমেষের নামেই আবেদন করুন।

ছোটমা কথাগুলো বলতেই অনিমেষের মুখ থেকে ছিটকে বের হল, অসম্ভব।

মিস্টার রায় অবাক হয়ে তাকালে অনিমেষ বলল, আমি এই বাড়ির মালিকানা পেতে একদম রাজি নই।

আপনি তো মহীতোষবাবুর একমাত্র ছেলে। মিস্টার রায় বললেন।

হতে পারি। কিন্তু আমাকে তিনি বঞ্চিত করেছেন ভেবেচিন্তে। তার শেষ ইচ্ছে ছিল আমাকে কিছু না দিতে চাওয়া। আর ছেলে হিসেবে আমি তো কখনওই এই বাড়ির জন্যে কিছু করিনি। দীর্ঘকাল এই বাড়ির ছায়াও মাড়াইনি। তাই এই বাড়ি পাওয়ার কোনও অধিকার আমার নেই। অনিমেষ বলল।

মিস্টার রায় মাথা নাড়লেন, সত্যি কথা।

মাধবীলতা বলল, তা হলে এই বাড়ি বিক্রি হবে কী করে?

বাড়ি বিক্রির কথা ভাবা হয়েছে? মিস্টার রায় জিজ্ঞাসা করলেন।

হ্যাঁ। ওঁর পক্ষে আর একা থাকা সম্ভব হচ্ছে না। ওঁর বয়স বাড়ছে, শরীরও খারাপ হচ্ছে। তাই বাড়ি বিক্রি করে যে টাকা পাওয়া যাবে তা ওঁর নামে ব্যাঙ্কে রেখে একটা ভাল ফ্ল্যাট ভাড়া করে ওঁর থাকার ব্যবস্থা করার কথা ভাবা হয়েছে। মাধবীলতা বলল।

সেখানেও তো ওঁকে একা থাকতে হবে? মিস্টার রায় জিজ্ঞাসা করলেন।

এত বড় বাড়িতে একা থাকা যায় না, যেটা ফ্ল্যাটে সম্ভব।

ওর মৃত্যুর পরে টাকাটার কী হবে?

উনিই ঠিক করবেন।

কী আশ্চর্য! উনি তো বাড়ির মালিকানা নিতে রাজি হননি। বাড়ি বিক্রি করার টাকার মালিকানা নেবেন কী করে?

মাধবীলতা চুপ করে গেল। ছোটমা বললেন, অনি যখন রাজি হচ্ছে না তখন ওর ছেলে অর্ককে এই সবকিছু দিয়ে দেওয়া হোক।

তার বয়স কত?

প্রায় চল্লিশ। ছোটমাই জবাব দিলেন।

অ। তিনি এখানে এসেছেন?

না। কিন্তু আসবে।

বেশ, তিনি এলে এবং রাজি হলে তো কোনও সমস্যাই নেই। মিস্টার রায় উঠে দাঁড়ালেন, আচ্ছা, আমি চলি।

অনিমেষ তাঁকে গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে এল। গাড়িতে ওঠার আগে মিস্টার রায় জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার ছেলে অর্ক কী করেন?

চাকরি। কলকাতায়। অনিমেষ জবাব দিল।
 
অর্কর সঙ্গে একদিন অন্তর কথা হয় মাধবীলতার। মিনিট খানেকের মধ্যেই দুজায়গার খবরাখবর নিয়ে ফোন বন্ধ হয়। অর্ক সকালে ভাত, আলুসেদ্ধ, ডিমসেদ্ধ, মাখন দিয়ে খেয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। রাত্রের খাবার বাইরে খেয়ে আসে। এতে তার কোনও অসুবিধে হচ্ছে না।

গতকাল তার এক বন্ধুর আসার কথা ছিল। আজ মাধবীলতা সে কথা জিজ্ঞাসা করল। অর্ক বলল, হ্যাঁ মা, ও এসেছে। কলকাতায় থাকার জায়গা নেই ওর, আর তোমরাও এখন জলপাইগুড়িতে বলে থাকতে দিয়েছি। ও আমার ঘরেই শোয়।

কোথায় থাকে সে? মাধবীলতা জিজ্ঞাসা করল।

ওর বাড়ি হাজারিবাগে।

বাঙালি তো?

আশ্চর্য! তুমি এই প্রশ্ন করছ? ও যদি সাঁওতাল হত তাতে কী এসে যায়। ভদ্র মানুষ, এটাই শেষ কথা।

অর্ক হেসে বলেছিল।

শোন, তোকে আজকালের মধ্যে জলপাইগুড়িতে আসতে হবে।

আমি তো বলেছি, যাব, হঠাৎ আজকালের মধ্যে কেন?

খুব দরকার আছে, তুই না এলে হবে না। মাধবীলতা গম্ভীর।

মা, হুট করে তো কাজ ছেড়ে যাওয়া যায় না। আমি দেখছি!

মাধবীলতা নিচু গলায় বলল, শোন, তুই এই সপ্তাহের মধ্যেই আয়। তোকে কোর্টে গিয়ে সইসাবুদ করতে হবে।

সে কী? আমি কী জন্যে কোর্টে যাব? অবাক হল অর্ক।

তুই এলে সব বলব। আচ্ছা, এক কাজ কর, এখানে কাগজপত্র সব রেডি হয়ে গেলেই আমি তোকে জানাব। তুই রাতের ট্রেন ধরে এসে সারাদিন কাজ শেষ করে ফিরে যাবি। মানুষের তো প্রয়োজনে একটা দিন ছুটি নেওয়া দরকার হয়। আর একটা কথা, তুই যখন এখানে আসবি তখন তোর বন্ধু কি ওই বাড়িতে থাকবে? মাধবীলতা জিজ্ঞাসা করল।

ও তোমরা ফিরে আসার আগেই চলে যাবে।

আরে, আমি জিজ্ঞাসা করছি তুই এলে ও কোথায় থাকবে?

একদিন আমি না থাকলে ওর অসুবিধে হবে না।

তুই ওকে সঙ্গে নিয়ে আয়, নতুন জায়গা দেখে যাবে।

না না, ওর পক্ষে যাওয়া সম্ভব নয়। দুই সেকেন্ড চুপ করে থেকে মাধবীলতা জিজ্ঞাসা করল, তোর এই বন্ধু পুরুষ না মেয়ে?

শব্দ করে হাসল অর্ক, যত বয়স বাড়ছে তত তুমি বাঙালি-মা হয়ে যাচ্ছ। তোমার মোবাইলের বিল বাড়ছে তা খেয়ালেই রাখছ না। আচ্ছা, এখন রাখছি।
 
মোবাইল হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ বসে থাকল মাধবীলতা। অর্কর কথাবার্তা তার মোটেই ভাল লাগছিল না। কেবলই মনে হচ্ছিল ও কিছু লুকোতে চাইছে। এই এতগুলো বছর ধরে যে ছেলেকে সে দেখেছে তার সঙ্গে আজকের অর্ক যেন একটু আলাদা। সেই কমিউন গড়ার স্বপ্ন চোখ থেকে চলে যাওয়ার পর ও অনেক গম্ভীর হয়ে গেছে ঠিকই কিন্তু ওকে বুঝতে অসুবিধা হত না মাধবীলতার।

ঘর থেকে বেরিয়ে অনিমেষকে দেখতে পেল সে।

অনিমেষ বাগানের মাঝখানে দাঁড়িয়ে মাটির দিকে তাকিয়ে আছে। তারপর ক্রাচ তুলে তার তলা দিয়ে কিছু স্পর্শ করল।

মাধবীলতা বারান্দা থেকেই জিজ্ঞাসা করল, ওখানে কী করছ?

অনিমেষ পেছন ফিরে তাকাল, এদিকে এসো।

মাধবীলতা গাছগাছালি বাঁচিয়ে কাছে গেলে অনিমেষ বলল, দ্যাখো।

একটা একরত্তি কুকুরের বাচ্চা মাটিতে শুয়ে অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে আছে।

মাধবীলতা জিজ্ঞাসা করল, এটা কোত্থেকে এল? কোনও কুকুরকে তো দেখিনি।

ইনি সারমেয় শাবক নয়। শেয়ালছানা। জঙ্গল পরিষ্কার করার সময় একে ওর মা নিয়ে গিয়েছিল, এখন নিরাপদ ভেবে ফিরিয়ে এনেছে। মা নিশ্চয়ই কাছাকাছি আছে। আমাদের দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে ভাবছে বাচ্চার ক্ষতি না করি। পৃথিবীর সব প্রাণীর মায়েরা একইরকম। শুধু জলে যারা বাস করে তারা ছাড়া। অনিমেষ যেন নিজের মনেই কথা বলছিল।

মাধবীলতা বলল, সরে এসো। ওর মাকে আসতে দাও। ওরা বারান্দায় উঠে আসতেই বাইরে থেকে একটা গলা ভেসে এল, অনিমেষবাবু কি বাড়িতে আছেন?

অনিমেষ চেঁচিয়ে বলল, হ্যাঁ, ওপাশ দিয়ে ভেতরে আসুন।

একটু পরেই মিস্টার রায়ের সহকারী তরুণটিকে দেখা গেল। হাসিমুখে বলল, নমস্কার, স্যার আপনাকে দেখা করতে বলেছেন। কাগজপত্র তৈরি হচ্ছে। সে-ব্যাপারে কিছু কথা জেনে নেবেন। আপনি কি আজ সন্ধের পরে যেতে পারবেন?

সন্ধের পরে শুনেছি, জলপাইগুড়িতে রিকশা পাওয়া একটা সমস্যা।

তা ঠিক। তবে যে রিকশায় যাবেন তার রিকশাওয়ালাকে অপেক্ষা করতে বললে করবে। কিছু বাড়তি টাকা নেবে। আসলে ওই সময়ে স্যার ফ্রি থাকেন।

অনিমেষ কিছু বলার আগেই মাধবীলতা বলল, আপনি এসে বসুন, চা আনছি।

না না, এখন একটুও সময় নেই। তরুণ মাথা নাড়ল।

ঠিক আছে, আজ সন্ধ্যাবেলায় আমরা যাব। মাধবীলতা বলল।

তরুণ মাথা নেড়ে চলে গেলে বাবাকে দেখা গেল। হাতে একটা দড়ি আর কাটারি নিয়ে ঢুকছে। মাধবীলতা হাসল, কী রে তুই?

এর মধ্যে ছোটমা বেরিয়ে এসেছিলেন, বললেন, এসে গেছিস? পারবি তো?

ছেলেটি বেশ জোরে মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলল।

ছোটমা বললেন, ওর বাবাকে বলেছিলাম কয়েকটা নারকোল পেড়ে দিতে, বলল, ছেলেই পারবে। পাইকাররা এসে সব নারকোল কিনে নিয়ে যাওয়ার আগে কয়েকটা ঘর বলতে রাখি।

অনিমেষ বলল, ওইটুকু ছেলে গাছে উঠে নারকোল কাটবে?

ততক্ষণে বাবা চলে গিয়েছে যে গাছটার নীচে, সেটা একটু বাঁকা হয়ে ওপরে উঠেছে। গাছের মাথায় অনেকগুলো পুরুষ্ট নারকোল ঝুলছে। কোমরের সঙ্গে গাছে দড়ি বেঁধে তরতর করে ওপরে উঠে গেল বাবা। তারপর স্বচ্ছন্দে গোটা পাঁচেক নারকোল কেটে নীচে ফেলে দিল। ছোটমা চেঁচিয়ে বললেন, আর লাগবে না, নেমে আয়।
 
বাবা হাসিমুখে নারকোলগুলোকে তিনবারে তুলে নিয়ে বারান্দায় রাখতে মাধবীলতা বলল, এই, তোর বাবাকে বলবি আমরা একটা জরুরি কাজে সন্ধের সময় বের হব। সে যেন সাড়ে ছটার মধ্যে রিকশা নিয়ে চলে আসে।

বাবা ঘাড় নাড়তেই ছোটমা একটা নারকোল তুলে তার হাতে দিয়ে বললেন, এটা তুই বাড়িতে নিয়ে যা। আমি নাডু বানালে এসে খেয়ে যাবি।

বাবা চলে গেলে অনিমেষ জিজ্ঞাসা করল, রিকশা যখন পাওয়া যাচ্ছে তখন আমি একাই যেতে পারতাম। তুমি কেন কষ্ট করবে?

মাধবীলতা কিছু বলার আগেই ছোটমা বললেন, ও গেলে খুব ভাল হবে।

কেন? অনিমেষ তাকাল।

তোমাকে এ ব্যাপারে আমি ঠিক বিশ্বাস করতে পারি না। গিয়ে এমন সব কথা বলবে যে সব ভেস্তে যাবে। মাধবীলতা মাথা ঠান্ডা করে কথা বলতে পারবে।

চমৎকার। সেই ছেলেবেলা থেকে আমায় দেখছ তুমি, মেনে নিলাম তুমি ভাবছ আমার মাথা ঠান্ডা নয়। কিন্তু মাধবীলতাকে তো আগের বার খুব অল্প সময়ের জন্যে দেখেছ, আর এবার এই কদিন। তার মধ্যেই জানতে পারলে ওর মাথা ঠান্ডা? একটু অবিচার হয়ে যাচ্ছে না?

অনিমেষ ঘরের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলল।

ছোটমা গলা তুললেন, শোনো, ভাত হয়ে গিয়েছে কি না তা বোঝার জন্যে হাঁড়ির সব চাল টিপতে হয় না, একটাতেই বোঝা যায়।

.

মাধবীলতা বুঝতে পারছিল অনিমেষ পছন্দ করছে না ওর সঙ্গে সে উকিলের কাছে যায়। ওর সম্পর্কে মহীতোষের মনোভাব জানার পর এই বাড়ি সম্পর্কে আগ্রহও কমে গেছে। উকিলকে যে সহযোগিতা করবেই এমন ভরসা হচ্ছে।, কিন্তু এ নিয়ে অনিমেষের সঙ্গে কথা বলতে চাইছিল না মাধবীলতা। ছোটমাকে এই বাড়িতে একা ফেলে রেখে কলকাতায় ফিরে যাওয়া অত্যন্ত অমানবিক কাজ হবে। এতদিন দূরে ছিল, এখানে চোখের আড়ালে কী ঘটেছে তা জানাও ছিল না, কিন্তু দেখার পর একটা ব্যবস্থা না করে সে যেতে পারবে না। পরে অনিমেষকে না হয় বোঝানো যাবে।

খাটের একপাশে বসে মাধবীলতা বলল, কলকাতার বাড়িতে একজন।

অতিথি এসেছে।

মানে? অনিমেষ তাকাল।

অর্ককে ফোন করেছিলাম। বলল, ওর কোনও এক বন্ধু নাকি থাকছে।

বন্ধু? কে? তুমি চেনো?

না। বলল, হাজারিবাগে বাড়ি। কলকাতায় কেউ নেই, তাই কয়েকদিন আমাদের ওখানে থাকছে। আমরা ফেরার আগেই চলে যাবে।

অনিমেষ মাথা নাড়ল, ঠিক শুনেছ তো?

একদম ঠিক।

কোনওদিন শুনিনি হাজারিবাগে ওর একজন বন্ধু আছে। অর্ক কখনও সেখানে যায়নি। তা ছাড়া গত দশ-বারো বছরে ওর কোনও বন্ধুকে বাড়িতে দেখেছ?

না, দেখিনি। মাথা নাড়ল মাধবীলতা।

আমরা যেই চলে এলাম অমনি তার এমন ঘনিষ্ঠ বন্ধু কলকাতায় এল যে তাকে সে বাড়িতে থাকতে দিল? লতা, আমার ভাল লাগছে না। অনিমেষ বলল।

ভাল আমারও লাগছে না। আমি ওকে এখানে আসতে বলেছিলাম।

সে তো নিজেই আসতে চেয়েছিল।

হ্যাঁ। তখন সময় বলেনি। আমি বলেছিলাম এই সপ্তাহেই কয়েকদিনের জন্যে আসতে। কিন্তু বলল, ছুটি পাবে না।

অনিমেষ অবাক হয়ে তাকাল, ছুটি পাবে না? গত তিন বছরে ও কখনও দু-একদিনের অসুখ ছাড়া অফিস কামাই করেনি। তাই ছুটি চাইলে এক সপ্তাহের জন্যে ওকে ছুটি দেওয়া হবে না, তুমি বিশ্বাস করছ?

না

কিছু একটা করছে ও!

ভেবে কোনও লাভ নেই। সবচেয়ে যেটা আমাকে অবাক করেছে তা হল, আমি চাপ দিতে বলল, সে একদিনের জন্যে আসতে পারে, কিন্তু বন্ধুকে বাড়িতে রেখে আসবে। বললাম, তাকে নিয়েই আয়। বলল, ওর পক্ষে যাওয়া সম্ভব নয়। মাধবীলতা জানাল।

ব্যাপারটা সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া দরকার লতা।

পাগল! ও জানলে ভাববে গোয়েন্দা লাগিয়েছি।

হুম। পাড়ার কারও ফোন নাম্বার জানি না। আচ্ছা, তোমার সঙ্গে পড়াতেন যে ভদ্রমহিলা, মাঝে মাঝে আসতেন, শীলাদি, হা, তার ফোন নাম্বার জানো? অনিমেষ তাকাল।

কী হবে?

জবাব দিতে গিয়েও থেমে গেল অনিমেষ। মাধবীলতা বলল, আমি শীলাদিকে বলব তুমি আমাদের বাড়িতে গিয়ে দেখে এসো ছেলে কী করছে? কার সঙ্গে আছে?
 
অনিমেষ মাথা নাড়ল, ঠিক। আমি যদি কলকাতায় চলে যাই? খাট থেকে নেমে পড়ল মাধবীলতা, নাঃ, বেশ কিছুদিন ধরে একটু-আধটু উলটোপালটা বলছিলে, আজ দেখছি একদম মাথাটা খারাপ হয়ে গেছে। আমরা এখানে এসেছি কেন? যে জন্যে এসেছি তা না শেষ করে তুমি ফিরে যাবে? কার জন্যে যাবে? যার বয়স চল্লিশ পেরিয়ে গেছে, যাকে কয়েক বছর বাদে প্রৌঢ় বলা হবে, সে কার সঙ্গে আছে তা দেখার জন্যে? অর্ক ছেলে না হয়ে যদি মেয়ে হত তা হলে যে তুমি কী করতে আমি ভেবে পাচ্ছি না। যা ইচ্ছে করুক ও, ছেলেবন্ধু হোক বা মেয়েবন্ধু হোক আমার কিছু যায় আসে না, কিন্তু এমন কিছু যেন না করে যা নিয়ে পাঁচজন কথা বলবে। আমাদের তো ওইখানেই ফিরে যেতে হবে।

মাধবীলতা ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। অনিমেষের মোটেই বিশ্বাস হচ্ছিল না তাদের অনুপস্থিতিতে অর্ক কোনও মেয়েকে বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছে। ওর আচরণ দেখে কখনওই মনে হয়নি ও কাউকে ভালবেসেছে। আজ এতদিন পরে মনে পড়ল নিজেদের কথা। শান্তিনিকেতনে সে মাধবীলতার সঙ্গে দেখা করে একটা রাত কাটিয়েছিল। মাধবীলতা সে সময় বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছে। না এলে ওর বাবা মায়ের মনের অবস্থা কী হত তা সে আজ অনুমান করতে পারে। তখন তাদের বয়স খুব কম ছিল। আবেগই শেষ কথা হওয়ায় বাস্তব নিয়ে বিন্দুমাত্র চিন্তা করেনি।

.

তখন দুপুর একটু একটু করে বিকেল হতে চলেছে।

মাধবীলতা ছোটমার ঘরে যাচ্ছিল। হঠাৎ চোখে পড়ল বাগান থেকে বেরিয়ে বারান্দার কাছে এসে কাতর চোখে তাকিয়ে আছে একটা শেয়াল, যাকে কুকুর বলে ভুল করা যায়। মাধবীলতা নিচু গলায় বলল, কী রে? সঙ্গে সঙ্গে লেজ নাড়ল শেয়ালটা।

মাধবীলতা রান্নাঘরে গিয়ে দুপুরের বেঁচে যাওয়া কিছুটা ভাত একটা কাগজে মুড়ে বারান্দার সিঁড়িতে রেখে সরে আসতেই শেয়ালটা সেটা মুখে তুলে নিয়ে দৌড়ে বাগানের ভেতরে চলে গেল। মাধবীলতার মনে হল গাছের আড়ালে তখন উত্তেজনা, নিশ্চয়ই ভাতগুলো গোগ্রাসে গিলছে শেয়ালটা। ওর ছানার তো ভাত খাওয়ার বয়স হয়নি। হয়তো সারাদিন কিছু জোটেনি শেয়ালটার, তাই মরিয়া হয়ে চলে এসেছিল এদিকে। পেট ভরলে শান্ত হয়ে ছানাকে দুধ খাওয়াবে। তারপরেই মনে হল, এই ছানা আর একটু বড় হলে, নিজে খাবার সংগ্রহ করতে শিখলেই মাকে ছেড়ে চলে যাবে। মায়ের এই ভূমিকার কথা বেমালুম ভুলে যাবে সে। হয়তো মা-ও ওর কথা আর ভাববে না, যা মানুষ পারে না। পারে না বলেই কষ্টে থাকে।

ছোটমার ঘরের দরজায় এসে থমকে গেল সে। ছোটমা খাটে বসে। তাঁর পায়ের কাছে মেঝেতে বসে কাঁদছে ভাড়াটেদের ছোটবউ। মাধবীলতা ফিরে আসছিল কিন্তু ছোটমা ডাকলেন, এসো।

মাধবীলতা ইতস্তত করে ঘরে ঢুকল।

একে বলা হয়েছে থাকার জায়গা খুঁজে নিতে। ছোটমা বললেন।

সে কী?

বেচারার কেউ নেই। স্বামী মরে যাওয়ার পর আঠারো ঘণ্টা ধরে যাদের সংসারের কাজ করে করে এই চেহারা তৈরি করেছে, আজ তারাই ওকে তাড়িয়ে দিতে চাইছে। বলছে, ফ্ল্যাটে উঠে গেলে সেখানে ওর জায়গা হবে না।

ছোটমায়ের কথার মধ্যেই বউটি নিজেকে সামলে নেওয়ার চেষ্টা করছিল।

মাধবীলতা বলল, এই ব্যাপারে আমরা কিছু বলতে গেলে ওরা শুনবে কেন? উলটে অপমান করতে পারে।

এই কথাই তো ওকে বলছিলাম। বাড়ির সবাই একটু বেশি খেলে ওর ভাগ্যে যা জুটত তাতে চার বছরের বাচ্চারও পেট ভরবে না। আমার কাছে এলে আমি ভাতে ভাত যা রাঁধতাম, তা থেকে ওকে জোর করে খাইয়ে দিতাম। এর বেশি তো আমার সামর্থ্য নেই। এই যে ও কাঁদছিল তা দেখে নিজের জন্যেই কষ্ট হচ্ছিল। ছোটমা বউটির মাথায় হাত বোলালেন, ওঠ। ভগবান যা করবেন তা মেনে নিতে হবে।

মাধবীলতা বলল, আমি একটা কথা বলছি। যদি সত্যি ওঁর কোথাও যাওয়ার জায়গা না থাকে, তা হলে এই বাড়ি বিক্রি হওয়ার পর আপনি যেখানে থাকবেন, সেখানেই তো উনি থাকতে পারেন।

ছোটমায়ের মুখ উজ্জ্বল হল, বাঃ। এই মেয়ে শুনলে তো? এবার মন হালকা হোক। আমার বউমা তোমার সমস্যার সমাধান করে দিল।

.
 
লছমনের রিকশায় উঠে অনিমেষ বলল, ঝুলনা পুল দিয়ে বাবুপাড়ায় চলো।

মাধবীলতা একটু কাত হয়ে বসেছিল, বলল, অন্য রাস্তায় যাওয়া যায় না? এই বাঁ দিক দিয়ে? দেখতে দেখতে যাই।

অনিমেষ বলল, লছমনকে খামকা বেশি পথ রিকশা চালাতে হবে। শুনে লছমন বলল, না না, কোনও অসুবিধে নেই, আমি বাঁ দিক দিয়েই যাচ্ছি।

এখন জলপাইগুড়ি শহরের বুকে অন্ধকার ঘন হচ্ছে। অনিমেষ দেখল তার ছেলেবেলার মতন এখনও রাস্তার আলো টিমটিমে। তখনকার সঙ্গে একটাই পার্থক্য চোখে পড়ছে, রাস্তায় লোকজন নেই বললেই চলে। কয়েকটা সাইকেল দ্রুত যাওয়া আসা করছে। রিকশা এক-আধটা। অথচ ষাট সালেও এই শহরের মানুষ নাইট শো-তে সিনেমা দেখে রিকশায় বা হেঁটে বাড়ি ফিরত।

এটা স্টেডিয়াম, না? মাধবীলতা জিজ্ঞাসা করল।

হ্যাঁ। টাউনক্লাব স্টেডিয়াম। আমি যখন স্কুলে পড়তাম তখন তৈরি হয়নি। বাঃ, এদিকে দেখছি একটা বড় হলঘর তৈরি হয়েছে। ওই যে বাড়িটা দেখছ, ওখানে পার্থ থাকত। বন্যার সময় একবার ওই বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলাম। অনিমেষ অন্যরকম গলায় কথাগুলো বলল।

পার্থ কে?

আমরা একই স্কুলে সহপাঠী ছিলাম। অনিমেষ বলল, এই যে রাস্তাটা দুভাগ হয়ে গেছে, সোজা গিয়েছে কিং সাহেবের ঘাটের দিকে। ওদিকেই আদালত বসত। আমরা বলতাম কাছারিপাড়া। আর এই যে, রিকশা যেদিকে যাচ্ছে তার শেষ হবে স্টেশনে।

তুমি কিছু ভোলোনি। মাধবীলতা অনেকদিন পরে অনিমেষের হাতে হাত রাখল।

অনিমেষ বলল, ডানদিকে দেখো, সুভাষচন্দ্র বসু স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। ছেলেবেলায় স্ট্যাচুটাকে বেশ বড় মনে হত। আমার যত বয়স বাড়ছে স্ট্যাচু যেন তত ছোট হয়ে যাচ্ছে।

নদীর ওপর ব্রিজে উঠে মাধবীলতা বলল, করলা নদী তো!

লছমন আফশোসের গলায় বলল, ও আর নদী নেই। পানি কোথায়?

অনিমেষ বলল, এইভাবেই সময় সব কিছু কেড়ে নেয়।

সে হাত সরাল।

মাধবীলতা বলল, হাতটা সরালে কেন?

এসে গেছি, নামতে হবে তো। অনিমেষ অন্যদিকে তাকিয়ে বলল।

সত্যি কথাটা বললে না!

সত্যি কথা!

হ্যাঁ। এখানে একটু বেশি আলো, দোকান খোলা। তাই আমার হাতে হাত রেখে বসতে তোমার সংকোচ হল। হাতে হাত থাকলে কি জলপাইগুড়ির মানুষ অশ্লীল বলে ভাবে? মাধবীলতার গলার স্বর ধারালো।

ভুল বুঝছ। একদম ভুল। লছমন, বাঁ দিকের ওই উকিলবাবুর বাড়ির সামনে দাঁড়াও। তোমাকে খানিকক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে ভাই।

মাধবীলতার মনে হল মিস্টার রায়ের বাড়িটা এসে যাওয়ায় যেন বেঁচে গেল অনিমেষ।

মিস্টার রায় তার চেম্বারে আর একজন বয়স্ক মানুষের সঙ্গে কথা বলছিলেন। তার সহকারী এখন ওই ঘরে নেই। ইশারায় বসতে বললেন ভদ্রলোক।

দূরের চেয়ারে বসে মাধবীলতা দেখল দেওয়াল ভরতি মোটা মোটা বই। এত মোটা মোটা ইংরেজি বই ভদ্রলোক পড়েন কখন? বইগুলো যে ইংরেজিতে লেখা তা মলাটের একপাশে ছাপা নামেই বোঝা যাচ্ছে। সে নিচু গলায় বলল, একজন উকিলকে কত বই পড়তে হয় দেখো।

অনিমেষ দেখছিল, বলল, এইগুলো কিনে উকিলরা বোধহয় চেম্বার সাজিয়ে রাখে যাতে লোকে ভাববে উনি খুব বড় উকিল।

তোমার সবটাতেই সন্দেহ। আজকাল এটা বেড়েছে।

বৃদ্ধ ভদ্রলোক চলে গেলে মিস্টার রায় ডাকলেন, আসুন।

ওরা এগিয়ে গিয়ে ওঁর টেবিলের এপাশে বসল।
 
মিস্টার রায় হাসলেন, আমি প্রথমবার যখন আপনাদের বাড়িতে যাই তখন মহীতোষবাবুর দিদি বেঁচে ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ওই বাড়ি যিনি বানিয়েছিলেন মানে, আপনার ঠাকুরদা, আপনাকেই মালিকানা দিতে চেয়েছিলেন। তবে যতদিন আপনার পিসিমা বেঁচে থাকবেন ততদিন তিনিই ভোগ করবেন কিন্তু বিক্রি করতে পারবেন না। তাঁর চলে যাওয়ার পরে আপনি পাবেন। এইরকম একটা ইচ্ছে তার ছিল যা পরে তিনি কার্যকর করে যাননি।

অনিমেষ মাথা নাড়ল, আমিও এইরকম শুনেছিলাম, কিন্তু নিতে রাজি হইনি। মনে হয়েছিল দাদু সুবিচার করছিলেন না।

শুনে ভাল লাগল। কিন্তু আপনার এই মা উইল ছিঁড়ে ফেলে সব ভজকট করে দিলেন। মহীতোষবাবুর উত্তরাধিকারী হিসেবে তাকে এবং আপনার ছেলেকে আদালতে আবেদন করতে হবে। ভেবে দেখুন, আপনি কি সত্যি মালিকানা নিতে চান না?

ভেবেই তো বলেছি।

বেশ, আমি কাগজপত্র দিন তিনেকের মধ্যে তৈরি করে আপনাদের বাড়িতে পাঠাব। আপনার মা আর ছেলে যেন সই করে দেন। তার সঙ্গে একটি প্রচারিত খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিতে হবে যে এই ব্যবস্থায় কারও আপত্তি থাকলে যেন দিন পনেরোর মধ্যে আদালতকে জানান। মিস্টার রায় বললেন।

মাধবীলতা জিজ্ঞাসা করল, যদি কেউ জানান?

তা হলে সমস্যা হবে। তিনি মামলা করতে পারেন।

মাধবীলতা বলল, তার সমাধান তো বহুদিন পরে হবে।

স্বাভাবিক। সেই সঙ্গে খরচও কম হবে না। মিস্টার রায় বললেন, আবার বিজ্ঞাপন না দিয়েও তো উপায় নেই। এক কাজ করতে পারেন, যে কলকাতার কাগজ শিলিগুড়ি থেকে ছাপা হয় না, নর্থ বেঙ্গলে খুব কম আসে তাতেই বিজ্ঞাপনটা দিন। এতে ঝুঁকি কম থাকবে।

কম হলেও তো থাকবে। কেউ বদমায়েশি করতেও তো পারে। মাধবীলতা বলল।

মিস্টার রায় হাসলেন, সেজন্য আমি অন্য ব্যবস্থা করে রেখেছি।

অনিমেষ জিজ্ঞাসা করল, কী?

সেদিন আপনাদের বাড়িতে আমি যে উইল নিয়ে গিয়েছিলাম সেটা একটা ডুপ্লিকেট উইল! স্ট্যাম্প পেপারে টাইপ করে নিয়ে গিয়েছিলাম। তাতে মহীতাষবাবুর পুরো সই যেমন ছিল না, ফিঙ্গার প্রিন্টও নেই। আপনারা কেউ সেটা লক্ষ করেননি। মহীতোষবাবুর অরিজিন্যাল উইল আমার কাছে আছে। যদি দেখি মামলা জটিল হচ্ছে তা হলে ওই উইল আদালতে পেশ করতে হবে। সে ক্ষেত্রে আপনার মায়ের নামেই সম্পত্তি যাবে, তিনি চাইলে পরে আপনার ছেলেকে গিফ্ট করতে পারেন। মিস্টার রায় বললেন, এই খবরটা দয়া করে ভদ্রমহিলাকে এখন জানাবেন না।

তা হলে ছেলেকে কবে এখানে আসতে বলব?

ঠিক দুদিন পরে এলেই হবে।

মাধবীলতা ব্যাগ খুলল, আমি জানি না, এখন কত টাকা দিতে হবে?

মিস্টার রায় বললেন, কী বলি বলুন তো? লোকে বলে একশোটা শকুন মারা গিয়ে একজন উকিল হয়। আমিও নিশ্চয়ই তার বাইরে নেই। আপাতত পাঁচশো দিন। আমার জন্য নিচ্ছি না, কেস ফাইল করতে যা খরচ হবে তাই দেবেন।

অনিমেষ বলল, যদি একটা আন্দাজ দেন।

কী ব্যাপারে? মিস্টার রায় তাকালেন।

এখনই কী করে বলব ভাই! যদি শুধু উইলের পজেশনের ব্যাপার হত তা হলে বলা সহজ ছিল। বিজ্ঞাপন আর অন্যান্য খরচ বাবদ হাজার দশেক ধরে রাখতে পারেন।

মিস্টার রায় বললেন।

রিকশায় উঠে মাধবীলতা বলল, দশ হাজার। কী করবে?

ভেবে পাচ্ছি না।

একটা কিছু তো করতে হবে। মাধবীলতা শক্ত গলায় বলল।

অর্কর ব্যাঙ্কে কত টাকা আছে?

জানি না। কোনওদিন খোঁজ নিইনি।

নাও। ও যা দেয় তাই তো চুপচাপ নিয়ে নাও। এবার যখন দরকার পড়ছে। তখন তো জিজ্ঞাসা করতে হবেই।

মাধবীলতা চুপ করে থাকল।

.
 

Users who are viewing this thread

Back
Top