অনিমেষ কী বলবে বুঝতে পারছিল না। খরচ এমন কিছু বেশি নয়। অষ্টধাতুর মূর্তি। একটু বড় না হলে তো চোখে পড়বে না। মায়ের পায়ের মল আর রুপোর খাড়া। লাখ পাঁচেক আমাকে দিলে আমি কিনে নেব। আরে মশাই, আপনি যা পাচ্ছেন তার টোয়েন্টি পার্সেন্টে জনগণের সেবা করবেন। ঠিক আছে? আপনার স্ত্রী এসেছেন তো? তার সঙ্গে কথা বলে জানাবেন। আমি সব ব্যবস্থা করে খদ্দের নিয়ে আসব। আচ্ছা, আমাকে একটু পার্টি অফিসে যেতে হবে। উঠে দাঁড়ালেন ভোম্বলবাবু।
অনিমেষ উঠে দাঁড়াল, আপনি যে এসব করছেন, তা আপনার পার্টি জানে?
দেখুন মশাই, আমি কি চুরি করছি যে লুকিয়ে করব? নৃপেনদাকে মনে আছে? ছেলেবেলা থেকে সিপিআই করতেন, পরে সিপিএমে। জেলা সম্পাদক হয়ে আছেন বহু বছর। তাঁকে নিয়ে এসে মন্দিরের জমিটাকে দেখিয়েছি। পার্টি থেকে কোনও সাহায্য নেব না বলেই তো আপনাদের কাছে হাত পাতছি। মন্দিরের গায়ে শ্বেতপাথরের ফলকে মাসিমার নাম লিখে জানিয়ে দিতে পারি তিনিই দান করেছেন। চলুন। বাইরে বেরিয়ে রিকশাটাকে দেখলেন ভোম্বলবাবু। চেঁচিয়ে বললেন, অ্যাই, দাঁড়িয়ে আছিস বলে ওয়েটিং চার্জ নিবি না। আমার লোক।
লছমন সঙ্গে সঙ্গে মাথা নাড়ল। অনিমেষ রিকশায় না ওঠা পর্যন্ত অপেক্ষা না করে মোটরবাইকে চেপে বেরিয়ে গেলেন ভোম্বলবাবু।
রিকশা চালাতে চালাতে লছমন বলল, উনি বাইক চালান, গাড়িতে ওঠেন না। গাড়ি চড়েন ওঁর ছেলে, বউ।
অনিমেষ গম্ভীর হয়ে বসে ছিল।
.
বাড়িতে ঢুকে অনিমেষ দেখল ছোটমা বারান্দায় বসে একটি বালকের সঙ্গে বেশ হাসিমুখে গল্প করছেন। অনিমেষকে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, কী হল? মুখ গম্ভীর কেন?
অনিমেষ মাথা নাড়ল। পেছন পেছন আসছিল লছমন। চেঁচিয়ে বলল, বাবা, বাবুকে প্রণাম কর।
বালক এগিয়ে এসে প্রণাম করতে চাইলে অনিমেষ তাকে বাধা দিল, না না। প্রণাম করতে হবে না। তুমি কে?
লছমন পাশে এসে বলল, আমার ছেলে। মাসিমা ওকে খুব ভালবাসেন।
ছোটমা বললেন, লক্ষ্মী ছেলে। আমার কথা খুব শোনে। আয় বাবা।
তোমার নাম কী?
অর্জুন। ডাকনাম, বাবা। বালক বলল।
বাঃ। এরকম ডাকনাম তো কখনও শুনিনি।
জন্মাবার পরে ওকে বাবা বলে ডাকা শুরু হয়। সেটাই ওর ডাকনাম হয়ে গেছে। লছমন বলল। আঁচলের খুঁট থেকে এক টাকার কয়েন বের করে বাবার হাতে দিয়ে ছোটমা বললেন, লজেন্স কিনে খাস।
আপত্তি করল লছমন, না না দেবেন না। অভ্যেস খারাপ হবে।
তুমি চুপ করো। ধমক দিলেন ছোটমা, যা বাবা। সন্ধে হয়ে আসছে। বাড়ি গিয়ে পড়তে বস। লছমন, অন্ধকার হয়ে আসছে, তুমি ওর সঙ্গে যাও।
লছমন ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে চলে গেলে মাধবীলতা ঘর থেকে বেরিয়ে এল, কী হল?
সংক্ষেপে ভোম্বলবাবুর বক্তব্য জানাল অনিমেষ।
মাধবীলতা বলল, সেকী? পার্টির অবস্থা এখানে এইরকম হয়েছে?
এখানে? রেগে গেল অনিমেষ, কোথায় নয়? কলকাতায় দেখোনি? আমাদের পাড়ায় ভোম্বলবাবু নেই?
কিন্তু কমিউনিস্ট পার্টির হয়ে যিনি ভোটে লড়াই করেন তিনি কালীবাড়ির জন্যে চাপ দিয়ে টাকা তুলবেন? এক পয়সা দেবে না ওঁকে। বেশ জোরে কথাগুলো বলল মাধবীলতা।
আমি কি দিতে চাইছি? কিন্তু এমনভাবে জাল বিছিয়ে রেখেছে যে তা কেটে বাড়ি বিক্রি করা কতটা সম্ভব হবে তা জানি না। অনিমেষ বলল।
এই যে পার্টির জেলা সম্পাদক, একে তুমি চেনো?
এককালে চিনতাম। বারীনদার স্টুডিয়োতে আসতেন।
ওঁর সঙ্গে কথা বলবে?
দেখি, ওঁর মদত না পেলে ভোম্বলবাবু এত সাহস পাবে?
তোমার সঙ্গে কথা বললে ভদ্রলোকের মন বদলাতে পারে।
কী জানি! ছোটমা এতক্ষণ শুনছিলেন, বললেন, থাক। এত ঝামেলা হচ্ছে যখন তখন বাড়ি আর বিক্রি করতে হবে না। আমি এখানেই মরব। ওই লছমন আছে, বাবাও আসে, ওরা নিশ্চয়ই আমাকে শ্মশানে নিয়ে যাবে।
অনিমেষ উঠে দাঁড়াল, আপনি যে এসব করছেন, তা আপনার পার্টি জানে?
দেখুন মশাই, আমি কি চুরি করছি যে লুকিয়ে করব? নৃপেনদাকে মনে আছে? ছেলেবেলা থেকে সিপিআই করতেন, পরে সিপিএমে। জেলা সম্পাদক হয়ে আছেন বহু বছর। তাঁকে নিয়ে এসে মন্দিরের জমিটাকে দেখিয়েছি। পার্টি থেকে কোনও সাহায্য নেব না বলেই তো আপনাদের কাছে হাত পাতছি। মন্দিরের গায়ে শ্বেতপাথরের ফলকে মাসিমার নাম লিখে জানিয়ে দিতে পারি তিনিই দান করেছেন। চলুন। বাইরে বেরিয়ে রিকশাটাকে দেখলেন ভোম্বলবাবু। চেঁচিয়ে বললেন, অ্যাই, দাঁড়িয়ে আছিস বলে ওয়েটিং চার্জ নিবি না। আমার লোক।
লছমন সঙ্গে সঙ্গে মাথা নাড়ল। অনিমেষ রিকশায় না ওঠা পর্যন্ত অপেক্ষা না করে মোটরবাইকে চেপে বেরিয়ে গেলেন ভোম্বলবাবু।
রিকশা চালাতে চালাতে লছমন বলল, উনি বাইক চালান, গাড়িতে ওঠেন না। গাড়ি চড়েন ওঁর ছেলে, বউ।
অনিমেষ গম্ভীর হয়ে বসে ছিল।
.
বাড়িতে ঢুকে অনিমেষ দেখল ছোটমা বারান্দায় বসে একটি বালকের সঙ্গে বেশ হাসিমুখে গল্প করছেন। অনিমেষকে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, কী হল? মুখ গম্ভীর কেন?
অনিমেষ মাথা নাড়ল। পেছন পেছন আসছিল লছমন। চেঁচিয়ে বলল, বাবা, বাবুকে প্রণাম কর।
বালক এগিয়ে এসে প্রণাম করতে চাইলে অনিমেষ তাকে বাধা দিল, না না। প্রণাম করতে হবে না। তুমি কে?
লছমন পাশে এসে বলল, আমার ছেলে। মাসিমা ওকে খুব ভালবাসেন।
ছোটমা বললেন, লক্ষ্মী ছেলে। আমার কথা খুব শোনে। আয় বাবা।
তোমার নাম কী?
অর্জুন। ডাকনাম, বাবা। বালক বলল।
বাঃ। এরকম ডাকনাম তো কখনও শুনিনি।
জন্মাবার পরে ওকে বাবা বলে ডাকা শুরু হয়। সেটাই ওর ডাকনাম হয়ে গেছে। লছমন বলল। আঁচলের খুঁট থেকে এক টাকার কয়েন বের করে বাবার হাতে দিয়ে ছোটমা বললেন, লজেন্স কিনে খাস।
আপত্তি করল লছমন, না না দেবেন না। অভ্যেস খারাপ হবে।
তুমি চুপ করো। ধমক দিলেন ছোটমা, যা বাবা। সন্ধে হয়ে আসছে। বাড়ি গিয়ে পড়তে বস। লছমন, অন্ধকার হয়ে আসছে, তুমি ওর সঙ্গে যাও।
লছমন ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে চলে গেলে মাধবীলতা ঘর থেকে বেরিয়ে এল, কী হল?
সংক্ষেপে ভোম্বলবাবুর বক্তব্য জানাল অনিমেষ।
মাধবীলতা বলল, সেকী? পার্টির অবস্থা এখানে এইরকম হয়েছে?
এখানে? রেগে গেল অনিমেষ, কোথায় নয়? কলকাতায় দেখোনি? আমাদের পাড়ায় ভোম্বলবাবু নেই?
কিন্তু কমিউনিস্ট পার্টির হয়ে যিনি ভোটে লড়াই করেন তিনি কালীবাড়ির জন্যে চাপ দিয়ে টাকা তুলবেন? এক পয়সা দেবে না ওঁকে। বেশ জোরে কথাগুলো বলল মাধবীলতা।
আমি কি দিতে চাইছি? কিন্তু এমনভাবে জাল বিছিয়ে রেখেছে যে তা কেটে বাড়ি বিক্রি করা কতটা সম্ভব হবে তা জানি না। অনিমেষ বলল।
এই যে পার্টির জেলা সম্পাদক, একে তুমি চেনো?
এককালে চিনতাম। বারীনদার স্টুডিয়োতে আসতেন।
ওঁর সঙ্গে কথা বলবে?
দেখি, ওঁর মদত না পেলে ভোম্বলবাবু এত সাহস পাবে?
তোমার সঙ্গে কথা বললে ভদ্রলোকের মন বদলাতে পারে।
কী জানি! ছোটমা এতক্ষণ শুনছিলেন, বললেন, থাক। এত ঝামেলা হচ্ছে যখন তখন বাড়ি আর বিক্রি করতে হবে না। আমি এখানেই মরব। ওই লছমন আছে, বাবাও আসে, ওরা নিশ্চয়ই আমাকে শ্মশানে নিয়ে যাবে।