What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected মৌষলকাল - সমরেশ মজুমদার (1 Viewer)

অনিমেষ বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল, বলল, আয়। আমার কেবলই দেরি হয়ে যায়। কাল আসার কথা ছিল, আজ এলাম। বারান্দায় দুটো চেয়ার রাখা ছিল, তার একটায় বসল দেবেশ। অন্যটায় অনিমেষ।

দাড়িতে হাত বোলাতে বোলাতে দেবেশ জিজ্ঞাসা করল, কদ্দিন পরে এলি?

বহু বছর পরে।

একাই?

না। মাধবীলতাও এসেছে।

কই, ডাক, আলাপ করি।

বাড়িতে নেই। বাজারে গিয়েছে।

বাজারে? তোর বউ বাজারে গেছে?

কেউ যদি গিয়ে খুশি হয় তো যাক না।

জলপাইগুড়িতে এখন কোনও কোনও মহিলা বাজারে যান বিকেল বেলায়। এইসময় কাউকে তো যেতে দেখিনি। তোর ছেলেমেয়ে কজন?

একজন। তোর কী খবর?

এসেছি একা। যাব একা। পৃথিবীর কোনও মেয়ে আমাকে বিয়ে করতে চায়নি, তাই করা হয়নি। তুই যখন স্বর্গভেঁড়া থেকে আসতিস তখন দোমহনি নামে একটা জায়গা পড়ত, মনে আছে?

দোমহনি নয়, ময়নাগুড়ি থেকে বার্নিশঘাটে চলে আসতাম। তবে দোমহনি কোথায় তা আমি জানি।

তার কাছেই আমার আস্তানা। দশজন বুড়োবুড়িকে নিয়ে। দেবেশ বলল।

বুঝলাম না।

দশ বিঘে জমি বহুদিন আগে খুব অল্পদামে পেয়ে গিয়েছিলাম। সেখানে চালাঘর বানিয়ে আছি আমরা। যেসব মানুষের রোজগার নেই, খাবার দেওয়ার কেউ নেই, মরার পর মুখে আগুন দেওয়ার মতো কোনও আত্মীয় স্বজন নেই, তারা আমার সঙ্গে থাকে। বছর দশেক হয়ে গেল। এর মধ্যে চারজন চলে গেল, তাদের জায়গায় নতুন চারজনকে এনেছি। মনে হচ্ছে। ওদের মধ্যে দুজনের যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। দেবেশ বলল।

এই দশজনের থাকা-খাওয়ার খরচ তুই চালাচ্ছিস? অনিমেষ অবাক গলায় জিজ্ঞাসা করল।

থাকার খরচ তো নেই। খাওয়ার খরচ–। হাসল দেবেশ, আয় না। একদিন। নিজের চোখে দেখে আসবি।

যাব। খুব ইন্টারেস্টিং বলে মনে হচ্ছে।

ভাই। আমি তো একা বিপ্লব, সমাজসেবা কিছুই করতে পারব না। জীবনভর কোনও রাজনীতিতে বিশ্বাস করতে পারিনি। শুনেছি তুই বিপ্লব করতে গিয়েছিলি, জেলে ছিলি। নিজের একটা পা তার জন্যে সেলামি দিতে হয়েছে, আমার সে সব করার ক্ষমতা বা সাহস ছিল না। আমি একটা কথা বুঝেছি। সেই বোঝার কাজটা করে বেশ শান্তি পাই। যাদের নিয়ে করি তারা পরের দিনের স্বপ্ন দেখে, যা আগে দেখত না। কবে যাবি বল? দেবেশ জিজ্ঞাসা করল।

এই তো এলাম। একটা বড় কাজ করতে হবে। সেটা আগে করি।

কী কাজ?

এই বাড়িতে আমার ছোটমা একা থাকেন। ওঁর পক্ষে আর থাকা সম্ভব হচ্ছে না। তাই বাড়িটাকে বিক্রি করতে হবে।

ছোটমা– আমার দ্বিতীয় মা। দাদু,বাবা, বড়পিসিমা চলে গেছেন। উনি আছেন।

তাই বাগান পরিষ্কার করাচ্ছিস?

প্রশ্নটা শুনে হেসে ফেলল অনিমেষ। না না। সাপখোপ জন্মাচ্ছে, শেয়াল বাচ্চা দিয়েছে ওখানে, তাই। ভাবছি এখানকার কাগজে বিজ্ঞাপন দেব।

তুই এক কাজ কর, কদমতলার মোড়ে একটা স্টেশনারি দোকান আছে। দোকানের মালিক জগদীশবাবু। সবাই চেনে। লোকটা বাড়ি কেনা-বেচার দালালি করে। ওর কাছে যা। ব্যবস্থা হয়ে যাবে।

তোর চেনা?

আগে চিনতাম। অনেক বছর যোগাযোগ নেই।

এই সময় অনিমেষ দেখল ছোটমা তার ঘর থেকে বেরিয়ে এসে ইশারায় তাকে ডাকছেন। সে ক্রাচ নিয়ে এগিয়ে যেতেই ছোটমা বললেন, চা করেছি। সঙ্গে কি থিন অ্যারারুট বিস্কুট দেব।


ক্রাচ সামলে দুটো কাপ হাতে নেওয়া সম্ভব নয়। অনিমেষ ডাকল, দেবেশ, এদিকে আয়। দেবেশ উঠে এলে বলল, এর নাম দেবেশ। আমরা সহপাঠী ছিলাম।

মাথা নেড়ে ছোটমা ভেতর থেকে দুটো চায়ের কাপ নিয়ে এলেন।

অনিমেষ লক্ষ করল, একদিকে চিড় লাগা-কাপটা তাকে দিলেন ছোটমা।

বিস্কুট লাগবে? অনিমেষ জিজ্ঞাসা করল।

না না। মাথা নাড়ল দেবেশ, আমি চা খাই না। কিন্তু উনি নিজের হাতে দিলেন বলে আজ খাব।

অনিমেষ লক্ষ করল ছোটমায়ের মুখে তৃপ্তির ছাপ ফুটে উঠল।

.
 
দেবেশের তাড়া ছিল। সে নিজের টেলিফোন নাম্বার লিখে দিল অনিমেষকে। বারংবার অনুরোধ করল একটা ফোন করে ওর ওখানে যাওয়ার জন্যে।

ওকে এগিয়ে দেওয়ার জন্য টাউন ক্লাবের মোড় অবধি হেঁটে গেল অনিমেষ।

সাইকেলে চেপে দেবেশ চলে যাওয়ার পর অনিমেষ একটু চিন্তায় পড়ল। এতক্ষণে মাধবীলতার ফিরে আসার কথা। সে বাজারের রাস্তার দিকে তাকাল। এমনও হতে পারে, এই সময় রিকশা পাওয়া যাচ্ছে না। মাধবীলতা এসে গেলে দেবেশের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেওয়া যেত। হঠাৎ খেয়াল হল, দেবেশ তাকে ওর ওখানে যেতে বলেছে কিন্তু মাধবীলতাকে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেনি। কেন?

খুব চেনা চেনা লাগছে! এক বৃদ্ধ লাঠি হাতে পাশে এসে দাঁড়ালেন।

অনিমেষ তাকাল। স্মৃতি ঝাপসা।

কবে আসা হয়েছে? বৃদ্ধ জিজ্ঞাসা করলেন। গতকাল।

যাঁরা ছিলেন তারা একজনকে রেখে চলে গিয়েছেন। বাড়িটার কী দশা হয়েছে! মহীতোষবাবু যখন বেঁচে ছিলেন তখন ভাবতেই পারতেন না এরকম হবে!

আপনাকে ঠিক–!

কয়েকবার দেখেছি। মহীতোষবাবুর বাবা যখন বেঁচে ছিলেন। অবসর নিয়ে এখানে এসে সময় কাটাতে আমাদের সঙ্গে তাস খেলতেন। তখন তার সঙ্গে আমার একটু ঘনিষ্ঠতা হয়। বন্ধুত্ব বলা বোধহয় ঠিক হবে না। বৃদ্ধ বললেন।

ও।

ছেলে নকশাল হয়ে জীবন নষ্ট করেছে, খুব আপশোস করতেন তিনি। যখন শরীরটা অকেজো হয়ে গেল তখন কলকাতায় পড়ে না থেকে এখানে চলে এলে ভাল হত না? মানুষটা শান্তি পেতেন। বাড়িটার হাল এমন হত না!

অনিমেষের মনে হল বৃদ্ধ অনধিকারচর্চা করছেন কিন্তু সেটা বলতে ইচ্ছে করল না। সে হাসল, আপনি কোন বাড়িতে থাকেন?

জেলা স্কুলের দিকে যেতে ডানদিকে ব্যানার্জিদের বাড়ি ছিল, মনে আছে?

হ্যাঁ। অরুণ ব্যানার্জি। দারুণ ক্রিকেট, হকি খেলতেন।

হ্যাঁ। অরুণ তো কবেই মারা গিয়েছে। ওই বাড়ির পাশেই আমার বাড়ি।

মন্টুদের বাড়ি?

হ্যাঁ। মন্টু আমার ছোটভাই। দুবছর আগে মেয়ের বিয়ে দিল ডিসি অফিস থেকে রিটায়ার করে। গত বছর ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক হয়ে গেল।

মন্টুর মুখটা ঝাপসা মনে হল। ফণীন্দ্রদেব স্কুলে পড়ত। খুব ভাল ছেলে ছিল না। অনিমেষ দেখতে পেল মাধবীলতা আসছে। রিকশার পাদানিতে বাজারের ব্যাগ। তাকে দেখে রিকশা দাঁড় করাল মাধবীলতা।

অনিমেষ জিজ্ঞাসা করল, এত দেরি হল?

মাধবীলতা হাসল, পরে বলব। তুমি এখানে?

কথা খুঁজে না পেয়ে কাঁধ নাচাল অনিমেষ।

বৃদ্ধ জিজ্ঞাসা করলেন, ইনি?

আমার স্ত্রী।

ও! বুঝলাম। আচ্ছা, চলি। যাওয়ার আগে বলি, সৎ মা হলেও তিনি তো মা। তার জন্যেও তো মাঝে মাঝে এখানে এসে থাকা দরকার। বৃদ্ধ লাঠি নিয়ে চলে গেলেন।

রিকশায় বসে শুনছিল মাধবীলতা, জিজ্ঞাসা করল, কে ইনি?

বাবার পরিচিত।

তুমি কি এখন বাড়িতে ফিরবে?

মেজাজটা বিগড়ে দিয়েছিলেন বৃদ্ধ। অনিমেষ বলল, না, তুমি যাও, আমি একটু ঘুরে আসছি।

সঙ্গে টাকা এনেছ?

খেয়াল হল। দেবেশের সঙ্গে কথা বলতে বলতে সে বাড়িতে যে পাঞ্জাবি পরে ছিল তাই পরেই বেরিয়ে এসেছে। পকেটে কিছু নেই।

ওঃ। তাই তো! অনিমেষ মাধবীলতার দিকে তাকাল।

ততক্ষণে মাধবীলতা পার্স খুলে দুটো দশ টাকার নোট বের করে রিকশাওয়ালাকে বলল, ওকে দিয়ে এসো তো!

৬৭

নোট দুটো হাতে নিয়ে অনিমেষ বলল, থ্যাঙ্ক ইউ।

কথা না বাড়িয়ে মাধবীলতা রিকশাওয়ালাকে বলল, চলো।

.
 
মিনিট পনেরো পরে অনিমেষ কদমতলায় রিকশা থেকে নামল। সামনেই চৌধুরী মেডিকেল স্টোর্স। রামদার এই দোকানে এককালে দিনের পর দিন আড্ডা মেরে গিয়েছে সে। অত্যন্ত সুদর্শন পুরুষ রামদা, রাম চৌধুরী। কথা বলার ভঙ্গি ছিল বেশ মিষ্টি। রামদা কি বেঁচে আছেন? দোকানের সামনে এসে দাঁড়াল অনিমেষ। দুজন কর্মচারীকে নিয়ে একজন যুবক দোকান সামলাচ্ছে। তারই ফাঁকে তাকে দেখতে পেয়ে যুবক জিজ্ঞাসা করল, কী ওষুধ নেবেন?

ওষুধ নয়। আমি বাহান্ন বছর বাদে এসেছি। এটা তো রাম চৌধুরীর দোকান?

হ্যাঁ। উনি আমার বাবা। যুবক হাসল।

উনি?

খুব অসুস্থ, শরীর ভাল থাকলে মাঝে মাঝে দোকানে আসেন। বলেই যুবক চোখ ছোট করল। আপনি কিছু মনে করবেন না ভুল হলে, আপনি কি অনিমেষ কাকু?

হ্যাঁ, ভাই। অনিমেষ জবাব দিল।

আরে। আসুন আসুন, ভেতরে আসুন। বলতে বলতে যুবক বেরিয়ে এসে অনিমেষের হাত ধরল।

না না। এখন তোমাদের কাজের সময়।

ছাড়ুন তো, ছেলেবেলায় আপনাকে দেখেছি এখানে বাবার সঙ্গে গল্প করতে। বাবা আপনার কথা খুব বলেন। এই, ভাল করে চা নিয়ে এসো তো! কর্মচারীকে আদেশ দিয়ে টেলিফোনের নাম্বার ঘোরাতে লাগল যুবক।

আহা! আবার চা কেন?

ওপাশ থেকে সাড়া পেয়ে যুবক বলল, বাবা, অনিমেষ কাকা এইমাত্র দোকানে এসেছেন। হ্যাঁ, হ্যাঁ, তিনিই। তুমি পারবে? ঠিক আছে। সাবধানে এসো। হাঃ হ্যাঁ। চা বলে দিয়েছি।

যুবক রিসিভার নামিয়ে হাসল, বাবা আসছেন। দেখুন, আপনার নাম শুনেই উনি জিজ্ঞাসা করলেন, চা দিতে বলেছি কিনা!

উনি যখন অসুস্থ তখন আসার কী দরকার ছিল?

জানি না। আপনার নাম শুনেই বাবা বোধহয় অসুস্থতা ভুলে গেলেন।

তোমার নাম কী?

ছেলেটি জবাব দেওয়ার আগেই চা এসে গেল। তাই পরিবেশন করতে করতে খদ্দের সামলাতে হল। চায়ের কাপ মুখে তুলে অনিমেষ দেখল চিনি নেই বললেই চলে। মাধবীলতা আজকাল চায়ে চিনি তো কমই, দুধও দিতে চায় না। এরকম চা একদম পছন্দ নয় অনিমেষের। চা খেতে খেতে অনিমেষ ছেলেটির দোকানদারি দেখছিল। চল্লিশ বছর আগে সে যখন এই দোকানে এসে বসত, তখন রামদা ওইভাবে দোকান সামলাতেন। খদ্দের না থাকলে সামনের চেয়ারে এসে বলতেন, বলেন? আবার চা বলি?

সেসময় এই দোকানে বসে সে অনেক ওষুধের নাম শিখে গিয়েছিল। লক্ষ করেছিল, খদ্দেরদের অনেকেই যেমন ডাক্তারের লেখা প্রেসক্রিপশন নিয়ে দোকানে ওষুধ কিনতে আসে, তেমনি ডাক্তারের কাছে না গিয়ে সোজা দোকানে এসে কেউ কেউ বলেন তাঁর অসুবিধের কথা। সেটা খুব গুরুতর না হলে দোকান থেকেই ওষুধ দিয়ে দেওয়া হয়।

চা শেষ হলে রিকশাটা এসে দাঁড়াল দোকানের সামনে। রিকশাওয়ালা হাত ধরে অতিবৃদ্ধ যে মানুষটিকে নামাল তাকে রামদা বলে চেনা মুশকিল। রিকশার ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে স্থবির পা ফেলে কোনওমতে দোকানে ঢুকলেন বৃদ্ধ। অনিমেষ উঠে দাঁড়াল। যুবক ইতিমধ্যে ছুটে এসেছে, কোনও কষ্ট হয়নি তো?

হাত নেড়ে না বললেন বৃদ্ধ। তারপর অনিমেষের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে বললেন, আর কোনওদিন দেখা পাব ভাবিনি। বলেন, কেমন আছেন?

আছি। আপনি?

কিছুক্ষণ বাঁচি, দিনের বাকি সময়টায় মরে থাকি। বসুন। বৃদ্ধ বসলেন।

চেয়ারে বসে অনিমেষ বলল, বুঝলাম না।
 
হাসলেন বৃদ্ধ। আজকাল শুধু ঘুম পায়। জেগে থাকি আর কতটুকু। একদিকে ভাল। ঘুমাতে ঘুমাতে চলে যাব। আমি তো আর এই দোকানে আসতে পারি না। নিজে নিজে রিকশায় ওঠা-নামাই করতে পারি না। ওঃ, কতদিন পরে আপনাকে দোকানে দেখছি। কবে এসেছেন? কতদিন থাকবেন?

কাল এসেছি। কবে যাব জানি না। টিকিট কাটা হয়নি।

উদ্দেশ্য আছে কিছু?

ছিল না, আসার পর হয়েছে। আমার দ্বিতীয় মা বাড়িতে একা থাকেন। তিনি আর পারছেন না। বাড়ি বিক্রি করে দিতে বলছেন। বাড়িটাও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মোটামুটি দাম পেলে বাড়িটা বিক্রি করে দিতে চাই। অনিমেষ বলল।

অনিমেষবাবু, এখন চাই বললেই তা করা যায় না। আপনি তো বিপ্লব করতে চেয়েছিলেন, পেরেছেন? এখন বাড়ি করা যেমন কঠিন ব্যাপার, বিক্রিও তেমনি। এই, চা দিয়েছিস?

অনিমেষ হাত তুলল, দোকানে ঢোকামাত্র চা বলে দিয়েছিল আপনার ছেলে।

রামদা হাসলেন, ও, কতদিন পর!

অনিমেষ লক্ষ করল কথাগুলো বলার পরেই যেন ঝিমিয়ে গেলেন রামদা। তার চোখ বন্ধ হল, মাথা একটু সামনে ঝুঁকল। ওঁর কিছু হয়ে যেতে পারে এই ভয় পেয়ে সে হাত বাড়িয়ে বৃদ্ধের হাত স্পর্শ করতেই তিনি আবার আগের মতো সোজা হয়ে বসলেন, হ্যাঁ, কী যেন বলছিলেন? ওহো, বাড়ি বিক্রি করবেন। কিছু ভেবেছেন?

ভেবেছিলাম কাগজে বিজ্ঞাপন দেব। কিন্তু কাল অনেকদিন পরে এক সহপাঠীর সঙ্গে দেখা হয়েছিল। তার মুখে শুনলাম এই কদমতলায় জগদীশবাবু নামে এক ভদ্রলোক আছেন যিনি বাড়ি কেনাবেচার ব্যাপারে সাহায্য করেন। ভাবছি তার সঙ্গে কথা বলব।

জগু? খুব ভাল। ওর অনেকদিনের মনোহারি দোকান থাকলেও বাড়ির দালালিও করে। রামদা বললেন।

অনেকদিন মানে? ষাট-পঁয়ষট্টি সালেও ছিল?

না না। তার কিছু পরে। আপনি দেখেছেন বলে মনে হয় না। কিন্তু শুনেছি ওর ব্যবহার ভাল, কেউ ওকে ঠকানোর অপবাদ দেয়নি। কথাগুলো বলে রামদা ছেলেকে বললেন, দ্যাখ তো, জগু দোকানে আছে কি না, থাকলে একবার আসতে বল।

যুবক একজন কর্মচারীকে পাঠাল জগদীশবাবুর সন্ধানে।

অনিমেষ জিজ্ঞাসা করল, তোমার নামটা জানা হল না ভাই।

সুদীপ। যুবক বলল।

রামদা বললেন, পুরো নাম বলতে হয়।

সুদীপ চৌধুরী, বলে যুবক আর একজন খদ্দেরকে ওষুধ দিতে গেল।

আপনার ছেলেটি বেশ ভদ্র, চটপটে।

লেট ম্যারেজ আমার। ঠিক সময়ে বিয়ে হলে ওই বয়সের নাতি হওয়াই উচিত ছিল। চোখ বন্ধ করলেন বৃদ্ধ, বুঝলেন, এখন চোখ বন্ধ করে থাকতেই ভাল লাগে। কেন জানেন? চোখ বন্ধ করলে সারাজীবনে যত ঘটনা ঘটেছিল তা সিনেমার মতো দেখতে পাই। তখন তো প্রায়ই রূপশ্রী নয় আলোছায়াতে নাইট শো দেখতে যেতাম। যেসব শিল্পীরা অভিনয় করতেন তাঁদের প্রায় সবাই চলে গেছেন। এই যে শহর, বীরেন ঘোষ, এস পি রায়, চারু সান্যাল কী দারুণ জীবন্ত মানুষ ছিলেন। আজ তারা নেই। কিন্তু চোখ বন্ধ করলেই তাদের দেখতে পাই। কেন পাই?

রামদা হাসিহাসি মুখ করে তাকালেন।

আপনার মুখেই শুনি! অনিমেষ বলল।

কারণ এখন আমার চোখে আগামীকালের কোনও স্বপ্ন নেই। আগামী বছর দূরের কথা, আগামী সপ্তাহে কোথাও যাব, কিছু করব, তা ভাবতেই পারি না। তাই যেদিন চলে গিয়েছে তার স্মৃতিতে ডুবে থাকি। বৃদ্ধের কথা শেষ হতেই সুদীপ জিজ্ঞাসা করল, আর একটু চা বলি কাকা?

অনিমেষ মাথা নেড়ে না বলল।

সুদীপ বলল, বহুদিন পরে বাবাকে এত কথা বলতে শুনছি। বাড়িতে তো কথাই বলতে চান না আজকাল। আপনাকে দেখে–!

রামদা হাসলেন, ওর নাম যেই তুই টেলিফোনে বললি অমনি আমি পুরনো দিনে চলে গেলাম। বুকের ভেতর কেমন করে উঠল। আমার তখন পঁচিশ কি ছাব্বিশ, উনি এসে ভেতরে বসতেন, চা খেতেন, সিগারেট খেতে হলে পেছনের স্টোর রুমে যেতেন। তখন ওঁর কত বয়স, ষোলো কি সতেরো।
 
অনিমেষ প্রতিবাদ করল, না রামদা, অত কম বয়সে সিগারেট খেতাম না। খেলে বন্ধুদের সঙ্গে তিস্তার চরে, কাশবনের মধ্যে লুকিয়ে লুকিয়ে একটা সিগারেট চারজন মিলে টানতাম।

আহা সতেরো না হোক, কুড়ি। খেতেন তো!

সুদীপ জিজ্ঞাসা করল, তখনও কি ধূমপানের ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল? দোকানে বসে খাওয়া যাবে না তাই স্টোর রুমে যেতেন?

দূর! এখানে বসে খাবেন কী করে? মামা কাকা জ্যাঠারা আসছেন ওষুধ কিনতে। তারা দেখতে পাবেন না? তখন বড়দের সামনে সিগারেট খাওয়ার কথা ভাবা যেত না। যদিও আমি ওঁর চেয়ে বয়সে বড় কিন্তু আপত্তি করিনি। বৃদ্ধ হাসলেন।

এই শহরে আপনার অনেক আত্মীয় বুঝি?

অনিমেষ মাথা নাড়ল, একমাত্র ঠাকুরদা ছাড়া এই শহরে আমার কোনও বয়স্ক আত্মীয় ছিলেন না। কিন্তু তখন যে-কোনও বয়স্ক মানুষকে আমরা মামা-কাকা-জ্যাঠা বলেই ভাবতাম। তাদের সামনে সিগারেট খেতাম না।

আপনি দোকানে এসেছেন শুনে খুব ভাল লাগল দাদা। বলতে বলতে এক প্রৌঢ় এসে ভেতরে ঢুকলেন। ভদ্রলোকের পরনে হ্যান্ডলুমের পাঞ্জাবি এবং ধুতি, মুখে দুদিন না কামানো দাড়ি।

এসো জগু। বসো। মন চাইলেও শরীর নড়ে না ভাই। এই ইনি এসেছেন। শুনে কোনওরকমে শরীরটাকে বয়ে নিয়ে এলাম। রামদা বললেন।

বলুন, কী ব্যাপার? জগদীশবাবু বললেন।

আমার নাম অনিমেষ মিত্র। হাকিমপাড়ার বাঁধের কাছে বাড়ি। কলকাতায় থাকি। ওই বাড়িতে যারা থাকতেন তারা একে একে চলে গেছেন, একজন ছাড়া। তাই বাড়িটাকে বিক্রি করে দিতে চাই। অনিমেষ বলল।

কোন বাড়িটা বলুন তো? জগদীশবাবু চোখ বন্ধ করলেন।

অনিমেষ বাড়ির লোকেশন বুঝিয়ে দিতে চোখ খুললেন ভদ্রলোক, বেশ বড় বাড়ি। আপনার ঠাকুরদা কি সরিশেখর মিত্র?

হ্যাঁ।

তাকে ছেলেবেলায় দেখেছি। কিন্তু বাড়ি বিক্রি করার আগে আপনাকে কয়েকটা সমস্যার সমাধান করে নিতে হবে।

বলুন।

দাদার সামনে বলতে খারাপ লাগছে। কিন্তু এখন যা নিয়ম তা না মেনে উপায় কী! প্রথমে আপনাকে আপনার পাড়ার সিপিএমের কাউন্সিলারের কাছে গিয়ে তাকে তুষ্ট করে অনুমতি নিতে হবে। আপনাদের পাড়ায় সিপিএমের ছেলেদের যে ক্লাব আছে তাদের সঙ্গে কথা বলুন। ওদের আপত্তি না থাকলে আমি সাতদিনে বাড়ি বিক্রি করে দিতে পারব। জগদীশবাবু হাত কচলাচ্ছিলেন কথা বলতে বলতে।

.
 
অনিমেষ রামদার দিকে তাকাল। আবার চোখ বন্ধ হয়ে গেছে বৃদ্ধের। সে জগদীশবাবুকে বলল, এখন এখানে এই নিয়ম চলছে?

এখানে? ও দাদা, শুনছেন? গলা তুললেন জগদীশবাবু।

চোখ খুললেন রামদা, সব কানে যাচ্ছে। চোখ বন্ধ দেখে ভাববেন না যে কান ঘুমাচ্ছে। ওই আপনাদের কলকাতাকে বাদ দিলে গোটা বাংলায় নাকি এই নিয়ম এখন চালু হয়েছে।

জগদীশবাবু বললেন, নাকি নয়। এটাই ঘটনা!

আমি যদি আমার বাড়ি নিজের ইচ্ছেমতো বিক্রি করতে চাই ওরা কী করতে পারে?

বিক্রি করবেন কার কাছে? কেউ কিনবে না।

কেন?

আগে অনুমতি নিলে আপনাকে যতটা প্রণামী দিতে হত তা না দিলে যিনি কিনবেন তাকে ওই প্রণামী দিতে হবে। তা আপনার করা অন্যায়ের শাস্তি তিনি ভোগ করবেন কেন বলুন? জগদীশবাবু জানবেন।

এটা তো ভয়ংকর ব্যাপার। কলকাতায় বসে আমরা তো এসব খবর পাই না। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ওরা কেড়ে নিয়েছে?

কিছু মনে করবেন না, আপনার কথা শুনে অল্পবয়সে পড়া একটা গল্পের কথা মনে হল। নাম ভুলে গিয়েছি। সেই যে একটা লোক ঘুমিয়ে পড়েছিল। ঘুম যখন ভাঙল তখন বহু বছর কেটে গিয়েছে। লোকটা কিছুই চিনতে পারছে না। তাই জিজ্ঞাসা করছি, এতদিন কি আপনি ঘুমাচ্ছিলেন? জগদীশবাবু জিজ্ঞাসা করলেন।

হ্যাঁ, আমার জানা উচিত ছিল। পাড়ায় ওদের দাদাগিরি দেখেছি। ভেবেছি ক্ষমতায় দীর্ঘদিন থাকলে যেসব অন্যায় অভ্যেস তৈরি হয়ে যায় এটাও তেমনি। মার্কসবাদ আমার পড়া আছে। এখন মার্কসবাদীরা যা করছে তা জানলে উনি কবরেও কেঁপে উঠতেন। কিন্তু ক্ষমতা হাতে থাকায় ওরা এই পর্যায়ে চলে যাবে তা কল্পনা করিনি। আচ্ছা, মানুষ, পাড়ার মানুষ এক হয়ে আপত্তি করলে তো ওরা এত সাহস পেত না। অনিমেষ তাকাল।

মানুষ? কখনও দেখেছেন জল ঢালুর দিকে না গড়িয়ে ওপরে উঠছে? দুটো কারণে মানুষ মুখ খুলবে না। এক, ভয়ে। প্রতিবাদ করলে পাড়াছাড়া হতে হবে। মারধর তো বটেই, প্রাণও যেতে পারে। দুই, লোভ। প্রতিবাদ না করলে ছিটেফোঁটা হলেও চাইলে কিছু পাওয়া যেতে পারে। জগদীশবাবু ঘড়ি দেখলেন, এবার আমাকে উঠতে হবে।

পুলিশও কি ঘুমিয়ে আছে?

অন্ধদের দেশে গেলে চোখ খুলে হাঁটতে খুব খারাপ লাগবে আপনার। তখন চোখে ব্যান্ডেজ বেঁধে নিলে বেশ স্বচ্ছন্দ বোধ করবেন। পুলিশের তাই অবস্থা। উঠে দাঁড়ালেন জগদীশবাবু, সরকারকে চটিয়ে তো দেশে থাকা যায় না। আপনার পাড়ার কাউন্সিলারের সঙ্গে আলাপ আছে?

তিনি কে, কী নাম, কিছুই জানি না। অনিমেষ গম্ভীর হল।

হরু সেন, এই নামেই সবাই চেনে। ভাল নাম, হরেন্দ্রনাথ সেন। চিনতে পারছেন?

একটু ভাবল অনিমেষ। না, স্মৃতিতেও ওই নামের কেউ উঁকি দিচ্ছে না।

চোখ খুললেন রামদা, আঃ জগু, তখন থেকে কেবলই এক কথা বলে যাচ্ছ! তোমার সঙ্গে তো লোকটার পরিচয় আছে। তুমিই অনিমেষবাবুকে সঙ্গে নিয়ে যাও। দেরি করার দরকার নেই। আজ বিকেলেই যাও।

জগদীশ হাসল, ঠিক আছে, আপনি বলছেন যখন, তখন যাব। তারপর অনিমেষের দিকে তাকিয়ে বললেন, আপনার বাড়ি থেকে মিনিট পাঁচেকের দূরত্ব। আমি সন্ধে ছটা নাগাদ আপনাকে ডেকে নেব। তার আগে তো ওকে পাওয়া যাবে না। চলি। জগদীশবাবু বেরিয়ে গেলেন।

রামদা মাথা নাড়লেন, এখন যে পুজোর যা মন্ত্র না আউড়ে উপায় নেই। কথা বলে দরাদরি করা ছাড়া তো কোনও উপায় নেই।

.
 
রিকশায় চেপে বাড়ি ফিরছিল অনিমেষ। বেশ বেলা হয়ে গিয়েছে। রাস্তায় লোকজন এখন কম। রূপশ্রী সিনেমাহলের সামনে দিয়ে আসার সময় মনে হল, এখন কোনও ছবি দেখানো হচ্ছে না। গেট বন্ধ, কী ব্যাপার কে জানে! বাঁ দিকে রুচি বোর্ডিং-এর গলি, ডানদিকে যোগমায়া কালীবাড়ি। চোখ বন্ধ করলেও সে এইসব রাস্তার ম্যাপ এঁকে দিতে পারে।

রামদার শরীরের অবস্থা দেখে মন খারাপ হয়ে গেল। রিকশায় ওঠার আগে রামদা হাত ধরে বলেছিলেন, যে কটা দিন এখানে আছেন, একটু খোঁজখবর নেবেন। এরপরে তো আর দেখা হবে না।

অন্য কেউ হলে প্রতিবাদকরত অনিমেষ, আজ পারেনি। মানুষটার অর্ধেকটা যেন পৃথিবীতে নেই। স্মৃতিগুলো যেন আচমকা নিজেদের মধ্যে মারপিট শুরু করে দিল। থানার সামনে রিকশা দাঁড় করিয়ে অনিমেষ রিকশাওয়ালাকে বলল, ওই দোকান থেকে সিগারেট কিনে এনে দেবে ভাই?

কী সিগারেট?

ফিল্টার উইলস। বলেই খেয়াল হল, প্যাকেট নয়, তুমি একটা নিয়ে এসো, সঙ্গে দেশলাই। টাকা নিয়ে চলে গেল রিকশাওয়ালা। বেশ কিছুদিন সে সিগারেট খাওয়া বন্ধ করেছে। বলা যেতে পারে মাধবীলতা তাকে বাধ্য করেছে। একেবারে পুঁদে গোয়েন্দার মতো পেছনে লেগে থাকত, টিকটিক করত। শেষে ধুত্তোরি বলে খাওয়া বন্ধ করেছিল সে। আজ যদি প্যাকেট নিয়ে বাড়িতে ফেরে তা হলে আর রক্ষা থাকবে না। কিন্তু অনিমেষের মনে হচ্ছিল, এসবের থেকে বেরিয়ে আসতে তার সিগারেট খাওয়া প্রয়োজন। এটা মাধবীলতা বুঝবে না। রিকশাওয়ালা সিগারেট, দেশলাই এবং ফিরতি পয়সা ফেরত দিল। সিগারেট ধরিয়ে দেশলাইটা রিকশাওয়ালাকে দিয়ে দিল সে, এটা তুমিই রাখো। আর হ্যাঁ, যতটা পারো আস্তে রিকশা চালাও।

বাবু আস্তে চালালে আমার রোজগার কমে যাবে। পুষিয়ে দেবেন তো?

রিকশাওয়ালার কথা শুনে হাঁ হয়ে গেল অনিমেষ। সদ্য টানা ধোঁয়া গলায় আটকে গেল। খক খক করে কাশতে কাশতে অনিমেষ ইশারা করল জোরে চালাতে।

.

দুপুরের খাওয়ার সময় ছোটমা ছিলেন না। প্রশ্ন করতে মাধবীলতা তথ্য দিল, উনি এখনও পুজোর ঘরে।

সেকী! খাবেন না?

বললেন, তোমরা খেয়ে নাও।

পিসিমার পথে হাঁটছেন নাকি! তিনি দুপুরের খাবার খেতেন বিকেল সাড়ে তিনটের সময়। ফলে অ্যাসিড হত, বলতেন অম্বল হয়ে গেছে। তাই রাত্রে একটু মুড়ি ছাড়া কিছু খাওয়ার ইচ্ছে হত না। অনিমেষ বলল।

এত রোগা কেন হয়ে যাচ্ছেন তা তো বোঝাই যাচ্ছে। মাধবীলতা গম্ভীর।

পয়সা বাঁচানোর জন্যে এটা করছেন না তো?

মাধবীলতা মাথা নাড়ল, জানি না। এ কথা তো জিজ্ঞাসা করা যায় না।

একটা কিছু করা দরকার।

পথ তো একটাই। এই বাড়ি বিক্রি করে ওঁকে একটা ভাল জায়গায় রাখার ব্যবস্থা করা। তোমাকে সেটাই করতে হবে। মাধবীলতা বলল।

অসম্ভব। জোর গলায় বলল অনিমেষ।

তার মানে? মাধবীলতা অবাক।

অনিমেষ জগদীশবাবুর বলা কথাগুলো মাধবীলতাকে জানাল। বলল, আমার পক্ষে বেআইনি কাজ করা সম্ভব নয়।

বেআইনি মানে?

আমার বাড়ি আমি বিক্রি করতে পারব না। তার জন্যে সিপিএমের কাউন্সিলারের অনুমতি নিতে হবে। তাদের ক্যাডারদের ক্লাবে গিয়ে হাতজোড় করতে হবে। কেন? আমার বাড়ি তো তাদের সম্পত্তি নয়। অনিমেষ উত্তেজিত।

ওদের কাছে না গিয়ে সরাসরি বিক্রি করার চেষ্টা করো।
 
শুনলাম কেউ কিনতে চাইবে না। সবাই জানতে চাইবে অনুমতি নিয়েছি কিনা। আমরা যখন রাজনীতি করতাম তখন কোনও বামপন্থী পার্টি এসব করার কথা চিন্তাও করত না। এমন ভয়ংকর পরিবর্তন মানুষ বেশিদিন মেনে নিতে পারে না।

মাধবীলতা বলল, একটা কথা আমি বুঝতে পারছি না। এখন কি কলকাতার জন্যে এক নিয়ম আর বাকি পশ্চিমবঙ্গে অন্য নিয়ম চলছে। এই তো, আমার সঙ্গে কাজ করতেন শীলাদি, বাগবাজারের বাড়ি বিক্রি করে ছেলের কাছে থাকতে দিল্লি চলে গেলেন। কই, তাকে তো কারও কাছে অনুমতি নিতে হয়নি। তুমি যা শুনেছ তা সত্যি নাও হতে পারে। তোমাদের এই পাড়ায় যিনি কাউন্সিলার তাঁকে চেনো?

না। লোকটা কে তাই জানি না।

একবার যাও না ওঁর কাছে।

কোনও দরকার নেই। থাক পড়ে বাড়ি। ছোটমাকে রাজি করাও কলকাতায় গিয়ে আমাদের সঙ্গে থাকতে। অনিমেষ বলল।

আশ্চর্য! আমাদের তো দুটো ঘর। উনি কোথায় থাকবেন? ওঁর ঠাকুর কোন ঘরে থাকবেন? অন্তত চার ঘরের ফ্ল্যাট দরকার। কত ভাড়া জানো?

বিকেল চারটে নাগাদ লছমনের গলা শোনা গেল, বাবু!

শুয়ে ছিল অনিমেষ। ক্র্যাচ নিয়ে বারান্দায় বেরিয়ে এলে লছমন বলল, একবার দেখে নিন বাবু। যদি বলেন নীচের ঘাসগুলো কাল এসে তুলে দিয়ে যেতে পারি।

অনিমেষ বাগানটার দিকে তাকাল। একমাথা ঝাকড়া চুলের কোনও মানুষকে কদমছাঁট দিলে যেমন দেখাবে বাগানটাকে তেমনই দেখাচ্ছে। বুনো ঝোঁপ পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে, কিছু গাছের বাড়তি ডাল কেটে ফেলেছে লছমন। ওদিকে যে দুটো নারকোল গাছ প্রায় আড়ালে পড়ে গিয়েছিল তারাও অনেক নারকোল নিয়ে দৃশ্যমান। সুপুরি গাছগুলো এখন ছিমছাম।

ফুলের গাছগুলো কেটে ফেলোনি তো?

না বাবু। মাসিমা মেরে ফেলবেন। লছমন হাসল।

বাগানে নেমে এল অনিমেষ। এত অল্পসময়ে এই দুজন যে কাজ করেছে তা সত্যি প্রশংসনীয়। নীচের ঘাসগুলো তুলে ফেললে দেখতে হয়তো ভাল লাগবে কিন্তু বৃষ্টি পড়লেই কাদা হয়ে যাবে।

লছমন বলল, শেয়ালটা বাচ্চাদের সরিয়ে নিয়ে ওই ওধারে গেছে।

যেদিকটা হাত দিয়ে লছমন দেখাল সেদিকটা বাড়ির পিছন দিকে। বেশ ঝোঁপ রয়েছে।

অনিমেষ বলল, বাঃ, ভাল হয়েছে।

কিন্তু দেখবেন, রাত্রে ও বাচ্চাদের এখানে নিয়ে আসবে।

কী করে বুঝলে?

মাসিমা যে সন্ধের সময় ওকে খেতে দেয়।

বড়পিসিমার কথা মনে পড়ে গেল। একজন চলে গিয়েছেন, অন্যজন তার অভ্যেসগুলো রপ্ত করেছেন।

লছমন এগিয়ে গিয়েছিল তারের বেড়ার কাছে, বাবু, দেখুন।

অনিমেষ কাছে পৌঁছে দেখতে পেল গোটা চারেক কালো রঙের বড় সাপ, সঙ্গে অনেকগুলো বাচ্চার মৃত শরীর পড়ে আছে। সে অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল, কী করে ওদের মারলে?

আমি মারিনি, ও মেরেছে। দুরে দাঁড়ানো তরুণকে দেখাল।

বাব্বা! দারুণ সাহস তো, এসব খুব বিষধর সাপ। খুব ঝুঁকি নিয়েছে ও। কামড়ালে বাঁচানো খুব কষ্টকর হত। অনিমেষ বলল।

লছমন হাসল, ও এর আগেও সাপ মেরেছে। বাগানে আর সাপ নেই। আপনারা নিশ্চিন্তে থাকতে পারবেন।

হঠাৎ অনিমেষের মনে হল লছমন বলতে পারে। সে জিজ্ঞাসা করল, আচ্ছা লছমন, তোমাদের এই পাড়ার কাউন্সিলার কে জানো?

হ্যাঁ। ভোম্বলবাবু।

কোথায় থাকেন?

জেলা স্কুলের পেছনের রাস্তায়।

ভোম্বল তো কারও ভাল নাম হতে পারে না। আসল নাম কী?

তা জানি না। ছেলেবেলা থেকে শুনেই লোকে ওঁকে ওই নামে ডাকে। টাউন ক্লাবে ফুটবল খেলতেন ওঁর দাদা। তার নাম ছিল কমল।

কমল? অনিমেষের মনে পড়ল সে যখন স্কুলে পড়ত তখন টাউন ক্লাবে ব্যাক খেলত কমল নামে এক তরুণ যার বাড়ি ছিল সেনপাড়ায়।

লছমন বলল, বাবু, কাজ তো হয়ে গেছে, যদি আমাদের ছেড়ে দেন।

দাঁড়াও।

মাধবীলতার কাছ থেকে টাকা এনে লছমনকে দিল অনিমেষ। তারপর বলল, তুমি যদি আজ রিকশা বের করে তা হলে একবার এসো তো!

আপনি কোথাও যাবেন?

হ্যাঁ। ওই ভোম্বলবাবুর কাছে যেতে হবে।

ঠিক আছে। আমি পনেরো মিনিটের মধ্যে নিয়ে আসছি। সঙ্গে নিয়ে আসা সরঞ্জাম নিয়ে লছমন আর তরুণ চলে গেল।

মাধবীলতা দাঁড়িয়ে ছিল বারান্দায়। ছোটমা বেরিয়ে এলেন। মুখে আঁচল চাপা। অনিমেষ জিজ্ঞাসা করল, কী হয়েছে?

কিছু না। আঁচল না সরিয়ে বললেন ছোটমা, মাঝে মাঝে দাঁতে ব্যথা হয়।

ডাক্তার কী বলছে?

দূর! ছোটমা আবার তার ঘরে চলে গেলেন।

অনিমেষ মাধবীলতাকে বলল, বোঝো!

মাধবীলতা কথা ঘোরাল, তুমি তা হলে কাউন্সিলারের কাছে যাচ্ছ। মাথা ঠান্ডা রেখে কথা বলবে। যদি চাও তা হলে আমি সঙ্গে যেতে পারি।

না, আমি একাই যাই। গিয়ে শুনি কী বলেন তিনি!
 
কুড়ি মিনিট পরে লছমন একটি সুন্দর দোতলা বাড়ির সামনে রিকশা থামিয়ে বলল, এইটা ভোম্বলদার বাড়ি।

পাশেই জেলা স্কুল। ছেলেবেলায় এই পাড়াটায় দোতলা বাড়ি দেখেনি অনিমেষ। বোঝাই যাচ্ছে পরে চেহারা বদলেছে। লছমনের সাহায্যে সে রিকশা থেকে নেমে গেট খুলে বাগানের ভেতরে ঢুকল। দোতলার বারান্দা থেকে একজন মহিলা জিজ্ঞাসা করলেন, কাকে চাই?

ভোম্বলবাবু আছেন?

এখন বিশ্রাম নিচ্ছেন। পরে আসুন।

অনিমেষ ইতস্তত করছিল, এই সময় একজন বৃদ্ধ গেট খুলে ভেতরে ঢুকলেন। বয়স বাড়লেও মুখটা বদলায়নি। অনিমেষ জিজ্ঞাসা করল, কমলবাবু–?

হ্যাঁ। আপনি?

আমি অনিমেষ মিত্র। জেলাস্কুলের ছাত্র ছিলাম।

অনিমেষ, অনিমেষ, নাঃ, মনে পড়ছে না। ডোম্বলের কাছে এসেছেন?

হ্যাঁ। কিন্তু উনি বিশ্রাম নিচ্ছেন।

আসুন। নীচের একটি ঘরে অনিমেষকে বসিয়ে কমলবাবু চলে গেলেন। তার মিনিট পাঁচেক বাদে টাক মাথা, লম্বা যে লোকটি ঘরে এলেন তিনি পান চিবোচ্ছেন। চেয়ারে বসে চোখ ছোট করে বললেন, আরে কী খবর? কেমন আছেন?

আপনি আমাকে চিনতে পারছেন? অনিমেষ জিজ্ঞাসা করল।

হে হে। এতবছর রাজনীতি করছি ব্রেনটা তো এমনি এমনি স্ট্রং হয়নি। আমাদের এই পাড়ার কাউকে ক্রাচ হাতে চলতে দেখিনি। গতকালই শুনলাম এক ভদ্রলোক এসেছেন যাকে ওইটের ওপর নির্ভর করে হাঁটতে হয়। কে ভদ্রলোক? না, তিনি আমাদের পাড়ার মিত্তির বাড়িতে উঠেছেন। তখনই মনে পড়ে গেল। আমাদের বঙ্কিমদার মুখে শুনেছিলাম, মিত্তিরবাড়ির একজন আমাদের পার্টি করতেন, পরে নকশাল হয়ে গিয়ে জেলে যান, পুলিশের অত্যাচারে একটা পা খোয়া যায়। সেটা অবশ্য সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের আমল। আমরা ক্ষমতায় এসে আপনাদের জেল থেকে ছেড়ে দিই। কী? ঠিকঠাক বলছি কি না? ভোম্বলবাবু হাসলেন।

তথ্যে একটু ভুল থেকে গেল!

কীরকম? কীরকম?

বামফ্রন্ট আমাদের ছেড়ে দেয় বন্দিমুক্তি আন্দোলন হয়েছিল বলে!

দুর মশাই। আন্দোলন ফান্দোলন করে কিছু পাওয়া যায় নাকি? সরকার যদি বলে আমি রাজি নই, কোনও আন্দোলনই তাকে রাজি করাতে পারবে না। ভোম্বলবাবু বললেন।

কী আশ্চর্য। আপনি কমিউনিস্ট হয়েও এমন কথা বলছেন?

না না ভুল কথা। আমি কমিউনিস্ট নই। আমি পার্টির একজন সাধারণ কর্মী। যাক গে, নকশাল আন্দোলন করে জেল থেকে বের হওয়ার পর আপনি বসে গিয়েছেন?

আমি এখন আর রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নই।

কেন? শরীরের জন্যে?

না। মন নিতে পারছে না।

যাক। কেন এসেছেন সেটা শোনা যাক।

এখানকার বাড়িতে আমার মা ছাড়া আর কেউ থাকেন না। তার বয়স হচ্ছে, আর একা থাকা সম্ভব হচ্ছে না। অবশ্য একটি পরিবার ভাড়াটে হিসেবে আছে, তাতে কোনও সুরাহা হচ্ছে না। আপনি বোধহয় জানেন, উনি বাড়িটা বিক্রি করে দিতে চান। অনিমেষ যতটা সম্ভব সবিনয়ে জানাল।
 
বিলক্ষণ জানি। আমি তো গিয়েছিলাম মাসিমার কাছে, বলেছিলাম, আপনার থাকা-খাওয়ার সব দায়িত্ব আমার। প্রতিদিন দুবেলা আমার লোক এসে জেনে নেবে আপনার কী কী দরকার। এ পাড়ার কোনও মা একা থাকতে পারছেন না বলে বাড়ি বিক্রি করে চলে যাবেন, এ তো আমারই লজ্জা। তা উনি রাজি হলেন না। ভোম্বলবাবু আপশোসের ভঙ্গি করলেন।

অনিমেষ বলল, কীভাবে বাড়িটা বিক্রি করা যায়?

ডিফিকাল্ট। গম্ভীর হলেন ভোম্বলবাবু।

কেন?

মিউনিসিপ্যালিটির কমিশনার হিসেবে আমি জানি, গত বারো বছর ধরে আপনারা বাড়ির ট্যাক্স দেননি। জমতে জমতে সুদে আসলে ঠিক কী পরিমাণে পৌঁছেছে তা খোঁজ নিয়ে জানতে হবে। এতদিন দেননি বলে মিউনিসিপ্যালিটি পেনাল্টিও করতে পারে। এই অবস্থায় কে বাড়ি কিনবে বলুন?

এই ব্যাপারটা আমি জানতাম না।

ঠিক আছে, আপনি আমার বাড়িতে এসেছেন, আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি।

বাড়ির ট্যাক্স কি খুব বেশি?

না, না। সামান্য। ওটা আমার ওপর ছেড়ে দিন।

তা হলে–!

শুনুন। আমাদের পাড়ায় মা-কালীর কোনও মন্দির নেই। মানুষকে এখনও অনেকটা হেঁটে যোগমায়া কালীবাড়িতে যেতে হয়। তাই সবাই চাইছে একটা মন্দির তৈরি করতে। এর জন্যে আমার বাড়ির কাছাকাছি একটা জমিও পেয়ে গেছি। কিন্তু শুধু জমি পেলেই তো মন্দির হয় না। বলুন হয়?

নীরবে মাথা নাড়ল অনিমেষ।

আর চারটে দেওয়ালের ওপর ছাদ করে তার মধ্যে তো মাকে ঢুকিয়ে দিতে পারি না। লোকে বলবে ভোম্বলবাবু দায়সারা কাজ সারল। এমন একটা মন্দির তৈরি করতে হবে যার প্রশংসা পুরো নর্থ বেঙ্গলের মানুষের মুখে মুখে ছড়াবে। আর শুধু মন্দির করলেই তো হল না, মায়ের মূর্তিটাও ফাটাফাটি হওয়া চাই। প্রচুর খরচ। লোকে অবশ্য চাঁদা দিচ্ছে। তা, আপনি যদি সাহায্য করেন। ভোম্বলবাবু হাত জোড় করলেন।

আপনি বললেন কমিউনিস্ট পার্টিকে সমর্থন করেন, পার্টির কর্মী। আপনি কী করে কালীমন্দির তৈরির সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন? অনিমেষ জিজ্ঞাসা না করে পারল না।

কিছু মনে করবেন না অনিমেষবাবু, অনিমেষই তো, হা, দুঃখ হয় যখন দেখি আপনারা এখনও একশো বছর পিছিয়ে আছেন। গঙ্গা দিয়ে কত জল বয়ে গেল, কিন্তু আপনাদের কোনও পরিবর্তন হল না। আপনারা বলেছিলেন, চিনের চেয়ারম্যান নাকি আপনাদের চেয়ারম্যান। পাবলিক আপনাদের অ্যাকসেপ্ট করেনি। কিন্তু যদি বলতেন, চৈতন্যদেব আপনাদের চেয়ারম্যান– বাংলা-ওড়িশা আপনাদের মাথায় করে রাখত। মার্কস সাহেব তার দেশে বসে কমিউনিজম নিয়ে ভেবেছেন, সেটা যেসব দেশ আঁকড়ে বসে ছিল সেখান থেকে কমিউনিজম হাওয়া হয়ে গিয়েছে। প্রত্যেক দেশের নিজস্ব পরিমণ্ডল আছে, মানুষের মানসিকতাও আলাদা। আমি আপনি রাতারাতি বদলাতে পারব? পারব না। তাই আমাদের আদর্শকে সেই মাটির সঙ্গে মিশিয়ে তৈরি করতে হবে। তা ছাড়া একটা মন্দিরকে আপনি অন্ধ সংস্কারের প্রতীক হিসেবে দেখছেন কেন? তাকে ঘিরে হাজার হাজার মানুষ জমায়েত হবে, তাদের কাছে পৌঁছোবার জন্যেও তো আমরা মন্দিরটাকে ব্যবহার করতে পারি।

ভোম্বলবাবু এতক্ষণ বক্তৃতার ঢঙে বলে যাচ্ছিলেন। তারপর একগাল হেসে বললেন, আপনি আমার সঙ্গে সহযোগিতা করুন, আমি অল আউট করব।

কীভাবে?

আপনাদের বাড়িটা বিক্রি করলে কত পাবেন? অনেকটা জমিও তো আছে!

আমার কোনও ধারণা নেই। অনিমেষ বলল।

চোখ বন্ধ করে একটু ভাবলেন ভোম্বল রায়, অ্যারাউন্ড টোয়েন্টি। আঠারো তো পাবেনই। একটা কথা জিজ্ঞাসা করছি। এই টাকা কীভাবে খরচ হবে?

মায়ের নামে ব্যাঙ্কে থাকবে, ওঁর যা ইচ্ছে তাই করবেন।

উনি থাকবেন কোথায়?

এখনও জিজ্ঞাসা করিনি। ইচ্ছে হলে আমাদের সঙ্গে থাকতে পারেন। নইলে সুদের টাকায় স্বচ্ছন্দে একটা ছোট ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকবেন।

খুব ভাল কথা। উনি তো সন্তানহীনা। ওঁর যা কিছু তা আপনিই পাবেন। দেখুন অনিমেষবাবু, এই বাড়ি বিক্রি না হলে আপনি কিছুই পেতেন না। আর একটা সমস্যা আছে। শুনেছি বাড়ি বানিয়েছিলেন আপনার ঠাকুরদা। তিনি আপনার বাবাকে আইনসম্মতভাবে দিয়ে গিয়েছেন? আপনার বাবা কি কোনও উইল করে মাসিমাকে বাড়ি জমি দিয়েছেন? ভোম্বলবাবু তাকালেন।

আমি ঠিক জানি না। অনিমেষ মাথা নাড়ল।

তা হলে খোঁজ করুন, কোনও উইল আছে কিনা? না থাকলে মাসিমা এবং আপনি উত্তরাধিকারী হবেন। অবশ্য সেটা আইনসম্মত করে নিতে হবে। এমন কিছু সমস্যা নয়। কিন্তু উইলে যদি আপনার বাবা আপনাকে বঞ্চিত করে যান তা হলে মাসিমার অবর্তমানে তার সম্পত্তি আপনি পেতে পারেন না। আশা করি তা হয়নি। হ্যাঁ, প্রায় পড়ে পাওয়া চৌদ্দো আনার মতো আপনি লক্ষ লক্ষ টাকা পেয়ে যাচ্ছেন। আমার অনুরোধ, তার অতি সামান্য অংশ দিয়ে মায়ের মূর্তিটি আপনি কিনে দিন। খাস ফেললেন ভোম্বলবাবু।

মায়ের মূর্তি? অনিমেষ অবাক।

হ্যাঁ, মন্দিরের ভেতরে যে মা কালীর মূর্তি থাকবে, যাঁকে লক্ষ লক্ষ মানুষ পুজো করবে, তা আপনি দিয়ে পুণ্য অর্জন করুন। মাথায় দুটো হাত ঠেকালেন ভোম্বলবাবু।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top