What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected কালবেলা- সমরেশ মজুমদার (2 Viewers)

ধীরে ধীরে নীচে নেমে এল অনিমেষ। দারোয়ানের সাহায্য লাগল না। কিন্তু নীচে নামার পর থাই টনটন করেত লাগল। অনিমেষ আশঙ্কা করছিল এই বুঝি আবার যন্ত্রণাটা শরু হল । সিঁড়ির মুখে একটু সময় নিল সে। ওপর থেকে নীচে নামার চেয়ে নীচে থেকে ওপরে ওঠায় কষ্ট বেশী হবে। এই হোস্টেলের খুব কড়া নিয়ম কোন মেয়েকে কারো ঘরে গিয়ে দেখা করতে দেওয়া হবে না। এমন কি, তিনি যদি কোন আবাসিকের মা হন তবুও নয়। নিয়মটা হয়তো ভালো কিন্তু বিশেষ ক্ষেত্রে ব্যাতিক্রম হওয়া উচিত–এই মুহূর্তে অনিমেষ অনুভব করল, পরক্ষণেই থম্বোটার বন্ধুর কথা মনে পড়ায় হেসে ফেলল সে। তারপর আস্তে আস্তে দরজার দিকে এগিয়ে গেল । আধভেজানো গেটের সামনে কেউ নেই। মেঘের ছায়ামাখা রোদ সেখানে নেতিয়ে আছে। এই ভরদুপুরে কলকাতা ভীষণ নির্জন হয়ে যায়, কেমন ভার হয়ে থাকে চারধার। অনিমেষ দারোয়ানের দিকে জিজ্ঞাসু চোখে তাকাতেই সে গেস্টরুমটা দেখিয়ে দিল। কয়েক পা এগিয়ে ডান দিকে ঘুরতেই গেস্টরুমের খোলা দরজা দিয়ে যাকে অনিমেষ দেখতে পেল ক্ষীণতম কল্পনাতেও তাকে আশা করেনি সে। হতভম্ব হয়ে যাওয়ার ভাবটা লুকোতে পারল না অনিমেষ। তারপর সন্তর্পণে পা ফেলে গেস্টরুমের দরজায় দাঁড়িয়ে সে জিজ্ঞাসা করল, আপনি?

উঠে দাঁড়ালেন মহিলা, দেখতে এলাম, পা কেমন আছে?

অনিমেষের সব গোলমাল হয়ে গেল। শীলা সেনের দিকে সে একদৃষ্টে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল। গতকাল সন্ধ্যায় ট্যাক্সিতে সামান্য আলাপ আর সেইটুকুনিতেই তিনি ছুটে এসেছেন তার শরীরের খবর নিতে। কলকাতার মানুষ মাত্রই যে স্বার্থপর নয় এটা বোধ হয় তার একটা নজির। ওঁর মতন সুন্দরী মহিলা, যিনি নিজের সৌন্দর্য সম্পর্কে অত্যন্ত ওয়াকিবহাল, এতটা করবেন ভাবা যায় না । স্লিভলেস জামার বাইরে মাখনের মত দুটো স্বপ্নের ডানার দিকে তাকাল অনিমেষ। ভেতরে ভেতরে যখন আলোড়ন ওঠে তখন মুখে কথাগুলো মিলিয়ে যায়। চেষ্টা করলেও সে সময় শব্দ আসে না। আবেগটা কমাতে লাগল তার।

মহিলা একটু বিস্মিত হলেন, আমি কি এসে অন্যায় করলাম কিছু?

দ্রুত ঘাড় নাড়ল অনিমেষ, না, না, এ কথা ভাবছেন কেন? আপনি বসুন। গেস্টরুমটা মোটেই সাজানো নয়। কিছু চেয়ার–টেবল এদিক–ওদিকে ছড়ানো। অনিমেষ চৌকো টেবিলের গা ঘেঁষে থাকা চেয়ারটা দিয়ে নিজে আর একটায় বসল। বসে বলল, আপনি সত্যি আমাকে অবাক করে দিয়েছেন।

শীলা সেনের দুই ভ্রুর মাঝখানে চট করে কয়েকটা আঁচড় জাগল, কেন? আমি এলাম তাই? আশ্চর্য! কালকে যাকে অমন অসুস্থ দেখে গেলাম তার খোঁজ নেব না?

অনিমেষ আপ্লুত গলায় বলল, সচরাচর তো দেখা যায় না এমন!

শীলা সেন তাঁর টান-টান খোলা চুলের রাশটাতে সামান্য ঢেউ তুলে বললেন, আমি অন্যরকম। তা আমার প্রশ্নটার উত্তর পেলাম না কিন্তু?

এখন ভাল আছি। এই তো ওপর থেকে হেঁটে নীচে এলাম। অনিমেষ জানাল। নিজের শারীরিক দুর্বলতা নিয়ে অন্যের সঙ্গে আলোচনা করতে সঙ্কোচ হচ্ছিল ওর।

কিন্তু কালকে কি হয়েছিল, একা হাঁটতে পারা যাচ্ছিল না দেখলাম। শীলা সেনের মুখের প্রতিটি রেখায় আন্তরিকতার ছাপ।

শিরায় টান পড়েছিল, প্রথমে বুঝতে পারিনি। এমন কিছু নয়।

সামান্যও নয়, নইলে আজ কলেজ যাওয়া হতো। শীলা সেন ভ্রূভঙ্গীতে সন্দেহটা জানিয়ে দিলেন, যাক বাবা, নিশ্চিন্ত হলাম। কালকে বাড়িতে ফেরার পর বারবার করে মনে হচ্ছিল বিদেশ বিভূঁইয়ে থাকা হয় জেনেও আমি কিছু করলাম না। কারো কষ্ট হলে এত খারাপ লাগে, মনটা কেমন হয়ে যায়।
 
এই ভরদুপুরে অনিমেষ মহিলাকে ভাল করে দেখ। কলকাতা শহরের মধ্যবিত্ত কোন বাঙ্গালী মহিলার একজন নিগ্রো যুবকের সঙ্গে এমন যোগাযোগের সম্ভাবনা নেই যার ফলে ছেলেটি আসক্ত হতে পারে। এক্ষেত্রে তাই হয়েছে। শীলা সেন কি তা হলে মধ্যবিত্ত নন? উনি যে পাড়ায় এবং যে বাড়িতে বাস করেন সেটাকে কিছুতেই অতি আধুনিক বলা যায় না। উনি এখন যে ভাষায় কথা বলছেন তা কোন সোসাইটি মেয়ে বলে কিনা অনিমেষের জানা নেই। তবু থম্বোটোর বন্ধু এর বাড়িতে যাওয়ার প্রস্তাব করার সাহস রাখে। তা হলে ইনি কি? গত কাল মুহূর্তের জন্য হলেও অনিমেষের মনে হয়েছিল শীলা সেনের পুরুষধরা জীবিকা। গতকাল ট্যাক্সিতে একে খুব রহস্যময়ী এবং মোহিনী বলে মনে হয়েছিল। আজ এই দুপুরে সামনাসামনি বসে অবশ্য কোন রহস্য দেখতে পাচ্ছে না সে, কিন্তু, মহিলা দুহাতে টান-টান করে সৌন্দর্যের লাগাম ধরে রেখেছেন। বয়সে নিশ্চয়ই বছর দশেকের বড় হবেন, কিন্তু লাবণ্য হল এমন একটা জিনিস যা সহজেই নীচু হয়ে দশ বছর নেমে আসতে পারে।

অনিমেষ বলল, আপনি এসেছেন জানলে থম্বোটোর বন্ধু অবাক হয়ে যাবে।

শীলা সেন বললেন, থম্বোটার বন্ধু। ও, মোসাম্বার কথা বলা হচ্ছে? সে আছে নাকি হোস্টেলে?

অনিমেষ বলল, আমি ঠিক জানি না। সকাল থেকে দেখা হয়নি। খোঁজ করব?

শীলা সেন হেসে উঠে দ্রুত ঘাড় নাড়লেন, না, না, তার রিজন বুঝতে চায় না।

বলি বলি করে অনিমেষ বলে ফেলল, একটা কথা জিজ্ঞাসা করব যদি কিছু মনে না করেন?

আবার ভ্রূভঙ্গী হল, মনে করার হলে নিশ্চয়ই মনে করব।

তা হলে থাক।

উম্! বেশ, কথাটা কি?

অনিমেষ প্রশ্নটা সাজাতে সময় নিচ্ছিল। সেই ফাঁকে শীলা সেন হেসে উঠলেন, নিশ্চয় বলা হবে কি করে ওর সঙ্গে আলাপ হলো, আমি কি করি–এই সব তো? ঠিক আছে, আমিই জবাব দিয়ে দিচ্ছি প্রশ্ন করতে হবে না। আমি একটা ট্রাভেল এজেন্সিতে আছি যাদের সঙ্গে ওই সব আফ্রিকান কানট্রিগুলোর ভাল রিলেশন আছে। দেশ থেকে যেসব ছেলে এখানে পড়তে আসে আমরা তাদেরও ব্যবস্থা করি। আর এই সব করতে গেলে শুচিবাই হলে চলে না। কিছু বোঝা গেল?

অনিমেষ স্বীকার করল, না, এত কথাতেও তার কাছে কিছুই স্পষ্ট হল না। শুধু চাকরি করতে গিয়ে কেই কি এরকম প্রশ্রয় দেয় অচেনা পুরুষকে। তা ছাড়া শীলা সেন মোসাম্বার কাছে তাঁর এই উপস্থিতি লুকিয়ে রাখতে চান। সেটাও কি স্বাভাবিক? সে মহিলার মাথার দিকে তাকাল। সিঁথি দেখে ও কিছুতেই বুঝতে পারে না কেউ বিবাহিতা কিনা। স্বৰ্গছেঁড়া কিংবা জলপাইগুড়ির মত সিঁথিতে গাঢ় সিঁদুর এখানকার মেয়েরা পরে না। চুলের আড়ালে যদি কোন সিঁদুর টিপ থেকেও থাকে তবে তা খালি চোখে দেখা যায় না। শীলা সেন বিবাহিতা কিনা জিজ্ঞাসা করা অশোভন। হঠাৎ অনিমেষের মনে হল সে এত কৌতূহলী হচ্ছে কেন? এই মহিলার সঙ্গে তার সম্পর্কটা কিছুই না। মাত্র এক দিনের আলাপ। তার মত সাধারণ অবস্থার ছেলের পক্ষে এইরকম মহিলার সঙ্গে সম্পর্ক রাখার কোন যুক্তি থাকতে পারে না। কথাটা ঘুরিয়ে বলার চেষ্টা করল অনিমেষ, কিন্তু আপনি এসেছেন এ কথা জানতে পারলে মোসাম্বা খুব আহত হবে। তার চেয়ে….।

চোখ বন্ধ করে মাথা নাড়লেন শীলা, আই অ্যাম ফেড আপ। ছিনে জোঁকের মত লেগে আছে আমার পেছনে। ও সব কথা ছেড়ে দেওয়া যাক। আমরা বরং চা-বাগানের গল্প করি । একটা চা-বাগান অনেকখানি জায়গা নিয়ে হয়, না?
 
অনিমেষ ব্যাপারটা বুঝতে চেষ্টা করছিল, অন্যমনস্ক গলায় বলল, হ্যাঁ, আট-দশ মাইল জায়গা নিয়েও একটা চা-বাগান হতে পারে।

বাব্বা! তা অনেক টাকার দরকার হয়, তাই না?

হ্যাঁ। আগে বিভিন্ন বিদেশী কোম্পানি এক-একটা চা-বাগানের মালিক ছিল। স্বাধীনতার পর ওরা দেশী কোম্পনীর কাছে বাগানগুলো বিক্রি করে দিয়েছে। ব্যাক্তিগত মালিকানায় কিছু চা-বাগান আছে। অনিমেষ তথ্যটা জানাল।

শীলা সেন বললেন, সত্যি, আমার কিছুই খবর রাখি না। রোজ সকালে এক কাপ চা না খেলে চলে না অথচ সেটা কি করে তৈরি হচ্ছে সে খবর রাখার প্রয়োজন অনুভব করি না। যে জায়গায় থাকা হয় তার চারধারে শুধু পাহাড়, তাই না?

অনিমেষ হেসে ফেলল।

সঙ্গে সঙ্গে ভ্রূভঙ্গী হল, হাসা হল কেন?

আপনি আমাকে তুমি বলুন। ওভাবে কথা বললে অস্বস্তি হয়।

ও মা, তাই নাকি! আমি ভাবলাম তুমি বললে রাগ হয়ে যাবে। আজকাল ছেলেরা ভীষণ অভিমানী হয়ে গেছে, আত্মসম্মান আত্মসম্মান করেই মরল। তোমাকে তুমি বলতে পেরে আমি বেঁচে গেলাম।

তৃপ্তির ছাপ ওঁর চোখে।

অনিমেষ বলল, আমাদের ওখানে কাছাকাছি কোন পাহাড় নেই, তবে পাহাড়ী আবহাওয়া মাঝে মাঝে পাওয়া যায়। আর সারা দিন আমরা এমন কত জিনিস ব্যবহার করি যার সম্বন্ধে খোঁজ নেবার খুব প্রয়োজন পড়ে না। এই যেমন আমি এখনও জানি না টেলিফোনের সিস্টেমটা সঠিক কি! এরকম তো কত কিছু আছে! তাই চা তৈরির সেস্টেমটা না জেনেও অনেকে খুব চমৎকার চা তৈরি করতে পারেন, তাই না?

দাঁতে ডান গাল কামড়ে আলতো করে ছেড়ে দিলেন শীলা সেন, তুমি তো খুব সুন্দর গুছিয়ে কথা বলতে পার। তোমার কি এখন কোন কাজ আছে?

অনিমেষ মাথা নেড়ে না বলল।

তা হলে চল আমার সঙ্গে একটু বেড়িয়ে আসবে। শীলা সেন উঠে দাঁড়ালেন।

কিন্তু আমার তো হাঁটতে কষ্ট হবে। কালকে অমন হলো, আমি আজ বেরুতে চাই না। অনিমেষ আপত্তি জানাল।

শীলা সেনের কথাটা একদম পছন্দ হল না, ইস, জোয়ান ছেলের এত ভয় করলে চলে! আর কিছু হলে তো আমি আছি। আচ্ছা বাবা তোমাকে এক পাও হাঁটতে হবে না। বাইরে ট্যাক্সি দাঁড়িয়ে আছে।

অনিমেষ হকচকিয়ে গেল। উনি এতক্ষণ এখানে বসে আছেন বাইরে ট্যাক্সি দাঁড় করিয়ে রেখে! আশ্চর্য ব্যাপার! এতক্ষণে তো প্রচুর মিটার উঠে গেছে। কিন্তু যেতে যে তার একটুও ইচ্ছে করছে না। সে হেসে বলল, আজকে আমাকে ভীষণ আলসেমিতে পেয়েছে। আজ থাক।

শীলা সেন সর্বাঙ্গে তাকে দেখলেন তারপর খুব আস্তে আস্তে বললেন, জানো, আজ অবধি কেউ আমার আমন্ত্রণ উপেক্ষা করেনি। শুধু সবাই যেচে এসে আমাকে এইরকম আমন্ত্রণ জানায়, আমি রাজী হলে কৃতার্থ হয়ে যায়। আর নিজে থেকে যদি কাউকে বলি সে আকাশ হাতে পায়। তুমি যে বলতেই আমার কথায় রাজী হলে না এতে তোমার ওপর আমার অন্যরকম ধারণা হল। আচ্ছা, আজ তা হলে চলি ভাই, তোমার যখনই ইচ্ছে হবে আমাকে টেলিফোন করো, সারাটা সকাল আমি বাড়িতে থাকি। শীলা সেনের পেছন গেট অবধি এল অনিমেষ। ট্যাক্সি ড্রাইবার সিটের ওপর শরীর এলিয়ে শুয়েছিল। ওকে দেখে সোজা হয়ে বসল।

গাড়িতে ওঠার সময় শীলা সেন ঘাড় বেঁকিয়ে বললেন, টেলিফোন নম্বরটা মনে আছে তো? থি ফাইভ আর চারটে শূন্য।
 
নির্জন গলি দিয়ে ট্যাক্সিটাকে বেরিয়ে যেতে দেখল অনিমেষ। এতক্ষণ কথা বলেও মহিলাকে সে একটুও বুঝতে পারল না। উনি কেন ওর কাছে এলেন, কেন বারেবারে টেলিফোন নম্বর দিচ্ছেন উদ্দেশ্য কি হতে পারে? নিছক ভদ্রতায় কেউ এতটা করে না। অনিমেষের সন্দেহ হল উনি তাকে এমন কিছুতে জড়াতে চাইছেন যাতে ওঁর কোন স্বার্থসিদ্ধি হতে পারে। সেটা কি তা জানা যাচ্ছে না কিন্তু তার মত আদার ব্যাপারীর জাহাজের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার কোন কারণ থাকতে পারে না। মহীতোষ বা সরিৎশেখর এরকম মহিলার সঙ্গে অপ্রয়োজনে তার আলাপের কথা শুনলে আঁতকে উঠবেন। কিন্তু এতক্ষণ ভাবা সত্ত্বেও অনিমেষ অনুভব করল শীলা সম্পর্কে তার কৌতূহল কিছুতেই কমছে না।

ফিরে আসার জন্য অনিমেষ ঘুরে দাঁড়াতেই দারোয়ানের সঙ্গে চোখাচোখি হল। লোকটা যে মিটিমিটি হাসছে এটা বুঝতে কোন অসুবিধা হল না। প্রায় চার-পাঁচ বছর সে লোকটাকে দেখছে কিন্তু এরকম মুখ করতে কোন দিন দেখেনি। অনিমেষ জিজ্ঞাসা করল, কিছু, বলবে?

মেয়েছেলেটা আপনার কে হয়, বাবু?

চেনাশোনা, কেন?

একটু ইতস্তত করল দারোয়ান, তারপর বলে ফেলল, ও মেয়েছেলেটা ভাল না।

কেন?

ও মেয়েছেলেটা নিগ্রোসাহেবের সঙ্গে খুব ঢলাঢলি করে। একদিন আটটার পর নিগ্রো সাহেব জোর করে ওকে নিয়ে ঢুকতে চেয়েছিল ঘরে। আর মেয়েছেলে হলে রাজী হব কেন? তা ছাড়া একদিন মাল খেয়ে এসেছিল।

মাল খেয়ে নেশা করেছিল। অনিমেষ অবাক।

হ্যাঁ বাবু, নিগ্রো সাহেবও মাল খেয়েছিল। সেদিন অবশ্য মেয়েছেলেটা ট্যাক্সি থেকে নামেনি, কিন্তু আমার চোখ এড়াতে পারেনি।

তুমি কি করে বুঝলে উনি মদ খেয়েছেন?

এ আপনি কি কথা বললেন বাবু। আমি শুকনো নেশা করি বলে ভিজে নেশার গন্ধ টের পাব না! হে হে হে।

শীলা সেন মদ খান কি না খান, ভাল মেয়ে কি খারাপ মেয়ে তাতে তার কি এসে যায়। একটা ব্যাপার সে অনুভব করতে পেরেছে, শীলা সেন তাকে খুঁজতে এই হোস্টেলে হয়তো আর আসবেন না। কিন্তু তিনি অনিমেষের টেলিফোনের প্রতীক্ষায় থাকবেন। ফাঁদ হোক বা নাই হোক, অনিমেষ আর সেখানে পা বাড়াচ্ছে না।

সিঁড়ি ভেঙ্গে ওপরে উঠে আসতে কষ্ট হল না। এতক্ষণে কালকের হারানো মনের জোরটা আবার ফিরে এসেছে। শরীরে যে আলসেমি ঘুম-ঘুম ভাবটা কিছুক্ষণ আগে এসেছিল সেটা আর নেই। জানলার ধারে এসে দাঁড়াতেই ফাঁকা ছাদগুলো আর সীসে রঙা আকাশটা দেখতে পেল। এইরকম শূন্য দুপুরে কেমন ফাঁকা লাগে কলকাতায়। নীলা নিশ্চয়ই এতক্ষণে বাসস্টপে এসে ওর জন্য অপেক্ষা করছে। কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকতে থাকতে অনিমেষের অস্বস্তি আরম্ভ হল। শীলা সেনের আসার আগে তার এমনটা হয়নি। পরিষ্কার পাজামার ওপর একটা হ্যান্ডলুমের পাঞ্জাবি পরে বেরিয়ে এল সে। দরজায় তালা দিয়ে নামতে খেয়াল হল ত্রিদিবরা এসে তাকে না দেখে নিশ্চয়ই অবাক হয়ে যাবে। কিন্তু একটা মেয়ে তার জন্যে বাসস্টপে অপেক্ষা করে আছে আর সে ঘরে বসে থাকবে? তার পা এখন যথেস্ট সুস্থ, শীলা সেনের সঙ্গে দেখা করতে সে যদি অতগুলো সিঁড়ি ভেঙ্গে নীচে নেমে যেতে পারে তা হলে নীলা কি দোষ করল!

ট্রামে ওঠার পর অনিমেষের মনে হল সে বোধ হয় একটু দুঃসাহসের কাজ করে ফেলেছে। কারণ, এখন পা বেশ ভার-ভার ঠেকছে। ও নিজেকে প্রবোধ দিল এটা শুধু মানসিক ব্যাপার। স্কুলে মন্টু একটা থিওরি দিয়েছিল। এক হাতে খুব যন্ত্রণা হলে সেটা কমাতে অন্য হাতে খুব জোরে চিমটি কাটতে হয়। নতুন জায়গায় ব্যথা হলে পুরোনোটা ধার কমে যায়। ব্যাপারটা করলে কেমন হয়! কিন্তু অনিমেষ সাহস পেল না।


যুনিভাসিটির সামনের স্টপে নেমে পড়ল অনিমেষ। চকিতে মুখ ঘুরিয়ে চারদিকে চোখ বুলিয়ে নীলাকে খুঁজল! না, নীলা নেই। তাকে আসতে বলে নীলা চলে যাবে? অনিমেষের বুকে অভিমান জমতে শুরু করতেই সে একজনের হাতের ঘড়ি দেখতে পেল। চারটে বাজতে সামান্যই দেরি এখন। তা হলে নীলা এতক্ষণ অপেক্ষা করে করে নিশ্চয়ই চলে গেছে। অতিমান চেহারা পালটে ফেলল আচমকা। নিজেকে খুব অসহায় এবং হৃতসর্বস্ব বলে মনে হচ্ছে। যদি নীলা তার জন্যে অপেক্ষা করে কোথাও চলে যায় তবে সেটা নিশ্চয়ই খুব বেশী সময় আগে ন। নীলা এখন কোথায় থাকতে পারে? পর পর যে জায়গাগুলো চোখে ভাসল সেগুলো হল কফি হাউস, লাইব্রেরী কিংবা ওর নিজের বাড়ি।

এমনও হতে পারে ও চলে গিয়েও আর একবার ফিরে আসতে পারে অনিমেষ এল কিনা দেখবার জন্য। চিন্তাটা সঙ্গে সঙ্গে বাতিল করে দিল সে। নীলার মত মেয়ে তা করবে না। সময়মত না আসায় অনিমেষকে ও আর আশা করবে না।

অদ্ভূত নিঃসঙ্গতা নিয়ে অনিমেষ দাঁড়িয়ে ছিল। চারধারে মানুষের ব্যস্ততা, ট্রামবাসের আওয়াজ, ছেলে–মেয়েরা হেঁটে যাচ্ছে, অনিমেষ একা চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকল। আধ ঘন্টা আগেও নীলার সঙ্গে দেখা করা জন্য তার ব্যস্ততা ছিল না। কিন্তু এখন সেই নীলাকে দেখতে না পেয়ে সব কিছু ফাঁকা মনে হচ্ছে। অনিমেষের মনে হচ্ছিল এই পৃথিবীতে সব কিছুই তার জন্যে অপেক্ষা করবে কিন্তু সে সময়মত সেই অপেক্ষার জায়গায় পৌঁছাতে পারবে না। আর এসব কথা কাউকে বলা যায় না, শুধু বুকের মধ্যে বয়ে বেড়াতে হয়।
 
অন্যমনস্ক হয়ে আংটিটা ঘোড়াচ্ছিল অনিমেষ। ঘোরাতে সচেতন হতেই সেটায় নজর গেল। আঙ্গুলের যে অংশটায় ওটা চেপে সাদা হয়ে গেছে কখন। ঘাসের ওপর কিছু চাপা থাকলে রঙ কিছু দিন পর যেরকম হয়। চট করে দেখলে জায়গাটা নিজের বলে মনে হয় না। দীর্ঘকার কোন কিছু আবদ্ধ থাকলে এমনি করে স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলে? হাতের অন্য অংশের চেয়ে এই জায়গাটা বেশ ফরসা ফরসা লাগছে, কিন্তু সেটা যে দৃষ্টিকটু তা মানতেই হয়। জীবনের সব ক্ষেত্রে বোধ হয় এইরকম বোধ কাজ করে। যা সহজ তা সব সময়েই শ্রেয়, যা চেপে বসে তার ফলশ্রুতি যতই মনোরম হোক তাকে মেনে নেওয়া যায় না। আংটির মাঝেখানে ছোট্ট অথচ নিটোল অক্ষরটাকে দেখলো সে। এত দিন ধরে আংটিটা আঙ্গুলে আছে কিন্তু এমন সতর্ক চেখে দেখা হয় না। অ অক্ষরটা সুন্দর করে লেখা। অ মানে না। সব কিছুতেই না? না মানে বিদ্রোহ। তবু সব কিছু মেনে নিতে হয়। ছোট মা পরিচয় দিয়েছিল এইটে। এখনও এতদিন পরে সেই দিনটার উত্তাপ অনুভব করতে পারল অনিমেষ। কেমন একটা সঙ্কোচ এবং আদরের সঙ্গে ছোট মা ওর আঙ্গুলে পরিয়ে দিয়েছিল আংটিটা। নিজের মায়ের মুখ এখন ঝাপসা হয়ে গেছে অনিমেষের কাছে, বুকের মধ্যে সেই টনটনানি ভাবটা কখন হারিয়ে গেছে। ছোটমা যখন এল তখনকার সব কিছু ওর স্পষ্ট মনে আছে। সৎমা বা ওই জাতীয় কোন মনোভাবের কথা ভাবলেই হাসি পায়। একটু একটু করে কখন ছোটমা মাছবাবু কি রোগা হয়ে গেছে! অনিমেষ মানে যেহেতু মাছ তাই মাছবাবু। ছোটমা ওকে ক্ষ্যাপায় তুমি তো মাছেরই মত, কোন কিছু তোমাকে স্পর্শ করে না। পাঁকাল মাছ।

পরে অনিমেষ ভেবেছে কথাটা একদম মিথ্যে নয়। ইদানিং তার মনের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্কগুলো খুব বড় হয়ে থাকছে না। এই যেমন দাদু সরিৎশেখরকে ও এত ভালবাসে, হেমলতার কাছে সেই ছেলেবেলা থেকে মানুষ হল, কলকাতায় থাকতে থাকতে এমনও হয়েছে দীর্ঘকাল ওঁদের কথা চিন্তায় আসেনি। দাদু তাকে নিয়মিত চিঠি দিয়ে যাচ্ছেন কিন্তু উত্তর দেব দেব করে এত দেরি হয়ে যায় যে সেই আবেগের দিনটা ধরা পড়ে যায়। তার মানে এই নয় যে সে শ্রদ্ধা কম করে বা ভাল বাসে না, ওই লেখা হয়ে ওঠে না এই মাত্র। ক্রমশ সব কিছু থেকে সে বিচ্ছিন্ন হয়ে আসছে একটু একটু করে। মাছেরই মত। আংটিটার দিকে তাকাতেই স্বৰ্গছেঁড়ার সেই মাঠ, মাঠে ছোটমার সঙ্গে হেঁটে আসা এবং তার পরই সীতার বিয়ে মনে পড়তেই হেসে ফেলল অনিমেষ। সীতার কথা ওর একদম মনে ছিল না। কেমন আছে, কোথায় আছে মেয়েটা? তার প্রথম প্রেম অথচ সে-কথা ওরা কেউ মুখে বলেনি। সেই বালক বয়সেই প্রথম না হয়েছিল, না মানে অ, অ থেকে অনিমেষ।

শুয়ে থাকলেই যত রাজ্যের গপ্পো মাথায় আসে। বিশেষ করে জানলাটা দিয়ে যদি আকাশ দেখা যায় আর ঘরে কেউ না থাকে। খাট থেকে উঠে চেয়ারে গিয়ে বসল অনিমেষ। বইপত্র তেমন কিছু কেনা হয়নি, এম এ-তে যে কটি নেহাত না কিনলে নয় তার বেশী কেউ কেনেও না। এখন থেকে লাইব্রেরীতে যাওয়া অভ্যাস করতে হবে। আজ রবিবার। ত্রিদিব সেই ভাত খেয়েই প্রিয়ায় ম্যাটিনি শো দেখতে গেছে। এই উত্তর থেকে সেই দক্ষিণে। ইদানিং ত্রিদিবের দক্ষিণমুখো মন, উত্তর কলকাতা ওর ঠিক বাসযোগ্য মনে হচ্ছে না। প্রায়ই বলে, দক্ষিণের ছেলেমেয়েদের মনে অনেক ডেপথ আছে, কথাবার্তা বললে সুখ পাওয়া যায়। আর কিছু না হোক, গড়িয়াহাটার মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকলেই সময়টা কখন টুপ করে চলে যায় যে টের পাবে না। তা ছাড়া ওদিকের বাবা-মারা অনেক বেশী উদারচেতা, মানিয়ে চলতে পারে।

অতএব দুপুরে একা একা কাটাচ্ছিল অনিমেষ। আর একা থাকলেই যত রাজ্যের চিন্তা মাথায় ভিড় করে। মানুষ যদি তার সব স্মৃতি, জ্ঞান হওয়া অবধি সে যা করেছে, যত লোকের সঙ্গে দেখা হয়েছে সব মনে রাখতে পারত, ভাবতেই হাসি পেল। জমতে জমতে একসময় পাত্র ফেটে যাবে, তাই আপনার থেকে প্রকৃতির নিয়মে বিস্মৃতি আসে, বাঁচিয়ে দেয়।
 
রোদ্দুরের রঙ দেখে অনিমেষের খেয়াল হল। আজ ঠিক চারটের সময় বি কে পাল এভিন্যুতে পৌঁছাতে হবে। অথচ নিজের সঙ্গে আড্ডা মারতে গিয়ে সে কথা খেয়ালই নেই। তাড়াতাড়ি জামাকাপড় পালটে সে বেরিয়ে এল হোস্টেল থেকে। নীচের বাস্কেটবল লনে কয়েকটা ছেলে বল নিয়ে দাপাদাপি করছে। গেটে মোসাম্বার সঙ্গে দেখা। একটা ছোট্ট শর্টস পরে খালি গায়ে দারোয়ানকে টাকা দিয়ে কিছু আনতে বলেছে। এ অবস্থায় কিছুতেই অনিমেষ বাইরে আসতে পারত না। অথচ মোসাম্বার কোন প্রতিক্রিয়া নেই। অনিমেষকে দেখে মোসাম্বা চিৎকার করল, হাই।

অনিমেষ হাসল, হ্যালো। ভাগ্যিস সামনে গেটটা পুরো খেলা নেই, তাই রাস্তা থেকে কেউ এই উত্তম শরীর দর্শন করতে পারছে না।

হাত তুলে একটু দাঁড়াতে বলে ও দারোয়ানকে বুঝিয়ে দিয়ে কাছে এল। এসে চকচকে দাঁত বের করে মুসল, আজকাল তোমাকে দেখাই যায় না! সেদিনের ঘটনার পর তুমি কিন্তু আমার ঘরে আর আসোনি।

এ্যা। হো হো করে হেসে উঠল থোম্বোটোর বন্ধু, তোমরা বাঙ্গালীরা সব সময় কমপেয়ার না করে কথা বলতে পার না। ইউ নো শীলা, তারও এই এক হ্যাবিট।

মিসেস সেনের সঙ্গে দেখা হচ্ছে? অনিমেষ কৌতুক বোধ করল।

ও না থাকলে কলকাতায় থাকতে পারতাম? একটা চোখ ছোট করল ছেলেটা, সী ইজ মাই হেভেন অর হেল তার এনিথিং-এনিথিং অ্যান্ড ও এভরিথিং। সুর করে গেয়ে উঠল সে, বাট হোয়ার আর ইউ গোয়িং?

এক মুহূর্ত ভেবে সত্যি কথাটা বলল অনিমেষ, একটা টিউশনি পাব, সে ব্যাপারে কথাবার্তা বলতে যাচ্ছি।

টিউশনি! হোয়াই ফর?

টাকার দরকার। আচ্ছা, চলি। অনিমেষ দেখল মোসাম্বার মুখ কেমন হতভম্ব দেখাচ্ছে। বি কে পাল এভিন্যু পর্যন্ত হেঁটে আসা কিছু নয়। কিন্তু সময় বাঁচাতে সেকেন্ড ক্লাস ট্রামে চেপে চলে এল সে। হাতিবাগান থেকে বাকী রাস্তাটুকু হেঁটে নির্দিষ্ট জায়গায় এসে দেখল বিরক্ত পরমহংস ওর দিকে তাকিয়ে আছে।

শালা যার বিয়ে তার হুঁশ নেই আর পাড়াপড়শীর ঘুম নেই, না? সেই চারটে থেকে দাঁড়িয়ে আছি। সেইজন্য বিদ্যাসাগর বলেছিলেন, কখনও কারও উপকার করো না। খেঁকিয়ে উঠল পরমহংস।

হেসে ফেলল অনিমেষ, সত্যি দেরি করে ফেলেছি। কিন্তু তুমি এরকম আংসাং কোটেশন দিও না। রেকর্ডেড হয়ে গেলে মুশকিল হবে।

মানে?

বিদ্যাসাগর ও কথা বলেননি। কেউ ওঁর নিন্দা করলে মন্তব্য করেছিলেন,–খোঁজ নিয়ে দেখ হয়তো কোন দিন ওর উপকার করেছিলাম।

তোমাদের ওই হল দোষ। মুখের কথাই শোন, অন্তরে ব্যথা বোঝ না। মুখে না বললেও বিদ্যাসাগর তাই মিন করেছিলেন। ঠিক আছে, এখন যা বলছি তা মন দিয়ে শোন। যে বাড়িতে আমরা যাচ্ছি সেটা খুব কনজারভেটিভ বাড়ি। বাইরের লোক বৈঠকখানা পার হয়ে কোন দিন ভেতরে ঢোকেনি। বুড়ো মনে করে পৃথিবীটা রসাতলে যাচ্ছে তাই তিনি নিজের ঘর সামলে রাখতে চান। মেয়েরা সিনেমায় যায় ঝি-এর সঙ্গে এবং ম্যাটিনি শো। আরও অনেক নিয়মকানুন আছে, সে গেলেই দেখতে পাবে। মোদ্দা কথা হল একদম উত্তর কলকাতার খাঁটি ঘটিদের বাড়ি।

তুমি এদের খবর পেলে কি করে? অনিমেষের অস্বস্তি হচ্ছিল।

আমার মাসীমার ননদের বিয়ে হয়েছে ওখানে। আগে একটা আশি বছরের বুড়ো পড়াত। সে ব্যাটা পটল তুলতে তিন মাস ভ্যাকান্ট আছে। এদিকে ক্লাস এগিয়ে গেছে, মেয়েটার ক্ষতি হচ্ছে।

মেয়ে? আমাকে ছাত্রী পড়াতে হবে নাকি?

আপত্তি থাকলে যেও না। তবে মেয়ে বলে গলেও যেও না। এইসব ঘটি মেয়েগুলো এক-একটা কাঁকড়া বিছে। বেচাল হলে থানা-পুলিশ করিয়ে ছাড়বে। প্রাইভেট টিউটার-ছাত্রী মার্কা প্রেমের ধান্দা একদম করো না, করলে বিপদে আমি থাকব না। পরমহংস জানাল।
 
পরমহংসের সঙ্গে তাল রেখে হাঁটতে অসুবিধে হচ্ছে অনিমেষের। বেঁটেখাটো শরীর অথচ হরিণের মত ছটফটিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। আগে হলে অন্য কথা ছিল, এখন অস্বাভাবিক কিছু করলেই পায়ে টান লাগে, টনটন করতে থাকে থাই। কিন্তু অনিমেষ তাল দিতে চেস্টা করল।

শোভাবাজার/চিৎপুরের এই অঞ্চলটায় এর আগে কখনো আসা হয়নি। এখন ঠিক সন্ধ্যে নয়, তবে বিকেল শেষ হয়ে আসছে। দুপাশে দোকানপাট মানিকতা-শ্যামবাজারের তুলনায় অনেক কম। কেমন একটা আলস্য চারদিকে মাখানো। অনিমেষ নজর করল দু পাশের বাড়ির রকগুলোতে যারা গা এলিয়ে বসে আছে তারা বেশ বয়স্ক। বেশির ভাগই ধুতি এবং ফতুয়া টাইপের জামা পরে রয়েছে এবং ধুতি পরার ধরনটা কেমন আলাদা। একটা রকে আড্ডা দিচ্ছে যারা তাদের বয়স আশির কাছাকাছি তো বটেই। এ দৃশ্য কলকাতার অন্য কোন অঞ্চলে দেখা যাবে না। এটা একদম খাস ঘটিপাড়া ।

পরমহংস বলল, এসে গেছি। খুব বিনীত বিনীত মুখ করবে। বাড়িটার দিকে তাকালে বয়স ঠাওর করা অসম্ভব। বেশিরভাগ ইট মুখ বের করে রয়েছে। এবং এই বাড়ির বিশেষত্ব যে বাইরে কোন আড্ডা দেবার রক নেই। দরজায় ধাক্কা দিতে ভেতর থেকে ধমকের সুরে একটা চিৎকার ভেসে এল।

এবার একটু নরম শব্দ তুলতেই দরজাটা খুলে গেল। খুব রোগা, বেঁটে এবং কুৎসিত চেহারার একটি ছেলে জিজ্ঞাসা করল, কি চাই? দরজা ভাঙ্গবে না? কথাগুলো জড়ানো এবং অনিমেষ লক্ষ্য করল বলার সময় দুগাল বেয়ে লালা গড়িয়ে এল।

পরমহংস মিষ্টি গলায় জিজ্ঞাসা করল, তালুইমশাই আছেন? তুমি আমাইয় চিনতে পারছ না? আমি। সঙ্গে সঙ্গে ছেলেটি ঘুরে দাঁড়াল, বাব্বা–বাব্বা তোমাকে ডাকছে, বাইরের নোক, কি করব? বসতে বলব, না দাঁড়িয়ে রাখব?

চট করে সাড়া পাওয়া গেল না। অনিমেষ দেখল সামনে একটা লম্বা প্যাসেজ এবং সেটা চমৎকার পরিষ্কার। সবে বোধ হয় ধোয়া হয়েছে। একটু বাদেই ওপর থেকে বাজখাই গলা ভেসে এল, কে?

শব্দ লক্ষ্য করে ওপরে তাকাতেই দেখা গেল এক ভদ্রলোক দোতলার রেলিং-এ ঝুঁকে ওদের দেখছেন। যেটুকু দেখা যায় তাতেই বোঝা গেল পঞ্চাশোর্ধ মানুষটি এখন খালি গায়ে একটা গামছা জড়িয়ে রয়েছেন।

পরমহংস মুখ তুলে বলল, আমি ঝুনু!

অ! তুমি এয়চো! সঙ্গে ওটি কি?

আমার সহপাঠী, ওই যে যার কথা বলেছিলাম!

অ! ঠিক আছে।

ভুলু, ওদের বাইরের ঘরে বসা। শরীরটি অন্তর্হিত হল।

জুতো খুলে এদিকে আসুন।

পরমহংসের দেখাদেখি সেই বাইরের দরজার পাশেই জুতো খুলে ভেজা প্যাসেজ থেকে দালানে উঠে এল অনিমেষ । ডাকদিকের প্রথম ঘরটার দরজা খুলে দিয়ে ভুলু নামে ছেলেটি বলল, আপনারা কি অনেকক্ষণ থাকবেন?

পরমহংস কিছু বলার আগেই অনিমেষ জিজ্ঞাসা করল, কেন? প্রশ্নটার ধরনে ওর ব্রহ্মতালু জ্বলে উঠেছিল । আচ্ছা অভদ্র তো!

তাড়াতাড়ি চলে গেলে বাইরের দরজা বন্ধ করব না। ছেলেটি লালা চাটল।

অনিমেষের গলার স্বরে সতর্ক হয়েছিল পরমহংস, সামাল দিতে সে বলে উঠল, কথাবার্তা শেষ হতে বোধ হয় সময় লাগবে, তুমি বরং বন্ধ করে দিয়ে যাও ভূলু।

ছেলেটি অদ্ভূতভাবে শরীর দুলিয়ে দরজা বন্ধ করতে গেল।

অনিমেষের মুখের দিকে তাকিয়ে পরমহংস বলল, দেখতেই পাচ্ছ ছেলেটা হাবাগোবা, কি কথা কিভাবে বলবে জানে না!

ঘরের জানলাগুলো বন্ধ। এবং এটা যদি বসার ঘর হয় তা হলে বলতে হবে অনেক কাল কেউ এখানে বসেনি। নীচে ধুলোটুলো নেই বটে, কিন্তু এমন অগোছালো জীর্ণ হয়ে আছে ঘরের জিনিসপত্র যে এদিকে নজর দেবার প্রয়োজন আছে বলে কেউ মনে করে না। গোটা চারেক লম্বা প্রাচীন আমলের কাঠের চেয়ার আর একটা গোল রঙচটা টেবিল, এক পাশে একটা তক্তাপোশের ওপর কালো মাদুর পাতা, ঘরের দেওয়ালে শেষ কবে রঙ বোলানো হয়েছিল বোঝা যাচ্ছে না।

চেয়ারে বসার কয়েক মিনিটের মধ্যেই অনিমেষ টের পেল তাকে ছারপোকা আক্রমণ করছে। ব্যাপারটা বলতে গিয়েও চুপ করে গেল সে। হাজার হোক এ বাড়ি পরমহংসের আত্মীয়দের বাড়ি । দরজার দিকে মুখোমুখি বসার অছিলায় চেয়ার পালটেও অবস্থার কোন পরিবর্তন হল না।

পরমহংস বলল, বাড়িটা একটু কনজারভেটিভ, কিন্তু তাতে কি হয়েছে। তোমার পড়ানো নিয়ে কথা, পড়িয়ে টাকা পেলেই হল, কি বল?

অনিমেষ বুঝতে পারল পরমহংস পরিস্থিতিটা স্বাভাবিক করে তুলতে চাইছে। সে হাসল, তোমার ডাকনামটা জানা গেল আজ।

পরমহংস বলল, ওই আর কি! এরকম তো সবারই থাকে। আমরটা তবু ভাল, এ বাড়ির কর্তাদের কি রকম?

আমার মাসীমা ননদের বড় শ্বশুরের নাম ছিল বাঘ, মেজ শ্বশুর সিংহী, আর ছোটজনের নাম শিয়াল । মনে হয় ওদের বাবা খুব জীবজন্তু পছন্দ করতেন। খানিক দূরেই তো রাজেন মল্লিকের চিড়িয়াখানা।

হাঁ হয়ে গেল অনিমেষ। এরকম নাম কেউ রাখতে পারে! পাড়ার ছেলেরা খ্যাপাতো না? পেটের ভেতলে গুড়গুড় করছে, কোন রকমে সামাল দিয়ে জিজ্ঞাসা করল, যিনি কথা বললেন তিনি কে?

শিয়াল। বাঘ-সিংহী দেহ রেখেছেন। আমরা আড়ালে শিয়ালতালুই বলি। অবিশ্যি ওঁর মা এখনও শিয়াল বলেই চেঁচান।
 
কথা শেষ হওয়ার পরেই শব্দ উঠল। শব্দটা জুতোর বোঝা গেল কাছাকাছি হাতেই, শিয়ালতালুই খড়ম পরে আসছেন। লম্বা, দাড়িরে মত পাকাটে চেহারা, গালের গলার চামড়া কোঁচকানো, নাক বেশ, সাজগোজ করে এসেছেন। কাছাকাছি হতেই একটা অম্বুরীতামাক মার্কা গন্ধ পাওয়া গেল ।

পরমহংসের দেখাদেখি উঠে প্রণাম করতে গিয়ে থমকে গেল অনিমেষ। লোকটা বয়স্ক কিন্তু চেনাশোনাজানা নেই, ফট করে প্রণাম করবে? হাত তুলে সে নমস্কার করতেই ভদ্রলোকের কপালে ভাঁজ পড়ল। গম্ভীর গলায় বললেন, বসো তোমরা। ওই শরীর থেকে অমন ভারী আওয়াজ বেরুতে পারে না শুনলে বিশ্বাস করা মুশকিল।

অনিমেষের ছেড়ে-আসা চেয়ারটায় বসলেন শিয়ালতালুই, বসে বললেন, ভর সন্ধ্যেতে কথা বলতে এলে, তা যাক এসে পড়েছ যখন তখন আর কি করা যাবে! তা ঝুনু, তোমার বাবা কেমন আছেন?

পরমহংস ঘাড় নাড়ল, ভাল, তালুই মশাই।

মা?

ভাল।

ঠাকুমা?

ভাল।

ভাইবোন?

প্রশ্নের ধরন দেখে অনিমেষ কোনরকমে হাসি চাপল। ভদ্রলোক খুব সিরিয়াস মুখ করে জিজ্ঞাসা করে যাচ্ছেন আর বেচারা পরমহংসের অবস্থা খাঁচায় বন্ধ ইঁদুরের মত। শেয়াল তালুই শেষ করলেন, আজকাল যা যুগের অবস্তা, কেউ ভালো আছে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয় না। তা তুমি যখন বলো ভালো তা হলে নিশ্চয়ই ভালো আছেন ওঁরা। আমার কথা জিজ্ঞাসা করলে ওঁদের বলো আমি ভাল নেই। কথার শেষে একটা বড় রকমের নিশ্বাস পড়ল।

কেন কি হয়েছে তালুই মশাই! পরমহংসকে উদগ্রীব দেখাল।

মামলা, বুঝলে, মামলাতে শেষ হয়ে গেলাম। আজকালকার ভাড়াটেরা তো এক একটা নবাবপুর, ভাড়া দেবেন না কিন্তু চোখ রাঙাবেন। আরে, তোরা ভাড়া না দিলে কি আমি না খেয়ে থাকব? জীবনে পরের গোলামি করিনি, বাড়িভাড়ার টাকায় খাই–দশটা মামলা একসঙ্গে চলচে। যদি জিততে পারি তবে আয় দশগুণ হয়ে যাবে। বেনেটোলা মত জায়গায় দশখানা ঘরের ভাড়া দেয় ত্রিশ টাকা, ভাবতে পারো? তাই-ই আদায় হয় না। বাড়িঘরদোর করে সুখ নেই, বুঝলে! কথা বলতে বলতে বা দিকের পকেট থেকে একটা টিনের ডিবে বের করে তা থেকে এক চিমটে নস্যি নিয়ে দুই নাকে খুঁজে চোখ বন্ধ করলেন শিয়ালতালুই। তারপর একটা নোংরা নস্যি রুমালে সন্তর্পণে নাক মুছলেন। অনিমেষ দেখছে যারা নস্যি নেয় তাদের গলার স্বরে একটু নাকী ভাব এসে যায়। এ ভদ্র লোকের বেলায় সেটা হয়নি। একটু ধাতস্ত হয়ে শিয়ালতালুই জিজ্ঞাসা করলেন, হ্যাঁ, এবার কাজের কথা বলি, এসেছো কেন?

ওই যে আপনি বলেছিলেন একজন ভাল মাস্টার চাই।

অ। তা এটি তো একদম ছোকরা–এ পড়াবে?

হা তালুইমশাই, খুব ভাল ছেলে, মেরিটোরিয়াস।

অ। কিন্তু এত ছোঁড়া মাস্টার রাখার কথা তো ভাবিনি। আগে যিনি পড়াতেন তার বয়স আশির ওপারে ছিলো, দিনকাল তো ভাল নয়, বুঝলে!

না, না, সেসব ব্যাপারে কোন চিন্তা করবেন না। আপনি আমার মত বিশ্বাস করতে পারেন ওকে। পরমহংস বোঝাবার চেষ্টা করল।

তোমার সহপাঠী বললে না?

হ্যাঁ।

কত বয়স?

একুশ-বাইশ, তাই না অনিমেষ? পরমহংসের প্রশ্নের নীরবে ঘাড় নাড়ল অনিমেষ।

শিয়ালতালুই ওর দিকে এখন একদৃষ্টে তাকিয়ে আছেন। বোধ হয় ওর ভেতরটা পর্যন্ত পড়ে ফেলেছেন এর মধ্যে। এরকম অস্বস্তিতে এর আগে কখনো পড়েছে বলে মনে হয় না।

কি নাম তোমার? প্রশ্নটা এতক্ষণে সরাসরি করা হল।

অনিমেষ।

আঃ, নাম জিজ্ঞাসা করলে পদবীটাও বলতে হয়।

পরমহংস বলল, ওরা মিত্তির তালুইমশাই।

অ। মিত্তির!

কাদের বাড়ির ছেলে তুমি? শ্যামপুকুর, না ঝামাপুকুর?

আমাদের বাড়ি জলপাইগুড়িতে। অনিমেষ জানালো।

জলপাইগুড়ি! ওখানে–মানে, তোমরা কি বাঙাল? না, না, বাঙাল মাস্টার আমি রাখবো না। শিয়ালতালুই সোজা হয়ে বসলেন।
 
পরমহংস বলে উঠল, ওরা বাঙাল নয়, তালুইমশাই। তা ছাড়া জলপাইগুড়ি তো পশ্চিমবঙ্গেই।

শিয়ালতালুই ঘাড় নাড়লেন, আমাকে শেখাতে এসো না তুমি। রাজশাহী রংপুর জলপাইগুড়ি সব এক গোত্রের। আমাদের পশ্চিমবঙ্গীয় চালচলনের সঙ্গে কোন মিল নেই। ভাতের থালা খাটের ওপর তুলে খায় সব।

ইচ্ছে করছিল না, তবু অনিমেষ বলল, আমার ঠাকুর্দা নদীয়া জেলা থেকে ওখানে গিয়ে সেটল করেছিলেন।

অ। তাই বলো। তোমরা নদে জেলার লোক। এখানে থাকা হয় কোথায়?

হোস্টেলে।

টাকাপয়সার অভাব বুঝি?

হ্যাঁ।

কদ্দূর পড়েছ? ওহহ, তুমি তো আবার ঝুনুর সহপাঠী । তা অঙ্ক–টঙ্ক পড়াতে পারবে?

কোন ক্লাস?

সেভেন। যাদব চক্কোত্তি ভাল জানা না থাকলে পড়ানো কঠিন।

পারবো।

অ। মাইনে নেবে কত?

এবার অনিমেষ পরমহংসের দিকে তাকালো। আগে থেকে এ ব্যাপারে কিছু ঠিক করে আসেনি ওরা, খুব ভুল হয়ে গেছে। পরমহংস নির্বিকার মুখে বসে রয়েছে দেখে অনিমেষ বলল, আপনি কি ঠিক করেছেন?

শিয়ালতালুই বললেন, দেখ, আজকাল তো পড়াশুনা হয় না, শুধু টাকার শ্রাদ্ধ। আগের মাস্টারের সঙ্গে কড়ার ছিল যে তিনি অর্ধেকটা মাসকাবারে নেবেন, বাকী অর্ধেক একসঙ্গে রেজাল্ট বেরুলে পেয়ে যাবেন। তা তুমি তাও করতে পারো।

কাটা কাটা গলায় অনিমেষ বলল, আমার প্রতি মাসে পেলেই ভাল হয়।

অ। চা-জলখাবার সহ পড়ালে পনের টাকা পাবে, বাদ দিলে কুড়ি। কোনটা করবে? তা জলখাবার বলতে কোন দিন বিস্কুট, কোন দিন মুড়ি, মানে ঘরে যা হয় এইসব।

আমাকে চা দিতে হবে না।

তার মানে কুড়ি। বেশ, বেশ। ভালভাবে পড়াও, মন দিয়ে পড়াও, রেজাল্ট ভাল করুক, দেখবে চড়বড় করে মাউনে বাড়িয়ে দেব। জানো, হাতিবাগানের একটা চার ঘরওয়ালা বাড়ি থেকে আমি কুড়ি টাকা ভাড়া বাবদ পাই, কি দুরবস্থা! তা আজ হল গিয়ে ষোল তারিখ–বেশ, বেশ, তুমি আজ থেকেই শুরু করে দাও। এ মাসে অর্ধেক পাবে। আর একটা কথা, তুমি অল্প বয়সের ছেলে, দেখো, আমার মেয়েকে নিয়ে কোন গোলমাল করো না, বুঝলে?

পরমহংস বলল, সে ব্যাপারে আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন, তালুইমশাই।

তা হলে তোমরা কথা বল, আমি একটু তোমার মাসীমার সঙ্গে শলা–পরামর্শ করে আসি। হাজার হোক, মেয়েছেলের ব্যাপার।

শিয়ালতালুই খড়মের শব্দ তুলে চলে যেতেই অনিমেষ উঠে দাঁড়াল।

পরমহংস জিজ্ঞাসা করল, কি হল?

ইম্পসিব্‌ল । আমার দ্বারা এখানে পড়ানো হবে না। চলো কাটি।

সে কি! সব ঠিক হয়ে গেল যখন।

কিস্যু ঠিক হয়নি। এরকম চশমখোর ব্যবসাদারের সঙ্গে আমার যে বনবে না তা বুঝতে পেরেছি। কবে যে ঠোকাঠুকি লেগে যাবে সামনাসামনি, মেজাজ সমালাতে পারবো না, তোমার বদনাম হয়ে যাবে।

ধ্যাত। পরমহংস ওকে হাত ধরে আবার বসাল, তোমার দ্বারা কিস্যু হবে না। যুদ্ধ কিংবা প্রেম, এ দুটো ব্যাপারে মাথা ঠাণ্ডা করে থাকলে আখেরে লাভ হয়। আরে, এ বাড়িতে তোমার এমন কিছু এক্সপিরিয়েন্স হয়েও যেতে পারে যা কল্পনা করতে পারনি। শেষটা দেখে যাও। এই সময় খড়মের শব্দ আবার ভেসে এল । শিয়ালতালুই ফিরে এসে দরজায় দাঁড়ালেন, বুঝলে ঝুনু, তোমার মাসীমার আপত্তি ছিলো, কিন্তু তোমার বন্ধু বলে শেষ পর্যন্ত রাজী হয়ে গেলেন! কিন্তু এ ঘরে পড়ালে তো চলবে না। আমাদের আত্মীয়স্বজনদের তো জানো, মুখে বদনাম ছড়িয়ে যাবে। তুমি বরং উঠে এসো–ভুলু, ওকে ভেতরের ঘরে নিয়ে যা। না, না ঝুনু, তুমি যাচ্ছ কোথায়? তুমি বসো, তোমার সঙ্গে আমার অনেক কথা আছে।
 
এই গল্পটা পড়ে অনেক আনন্দ পেলাম। আরো আপডেট চাই
 

Users who are viewing this thread

Back
Top