অনিমেষ বাইরে বেরিয়ে এসে দেখল বিকেল শেষ হতে চলেছে। সামনে একদম ফাঁকা। কোন রকম ছাত্রছাত্রী ধারে-কাছে নেই। সাধারনত সে কলেজ স্ট্রীটের দরজা দিয়ে আসা-যাওয়া করে, আজ হেয়ার স্কুলের পাশে রাস্তাটা দিয়ে বেরুল। দরজার সামনেই বিরাট পোস্টার, সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা, বিয়েৎনাম থেকে হাত ওঠাও। পাশের ছবিতে দেখা যাচ্ছে একটা আমেরিকান বেয়নেটের ডগায় ভিয়েতনামী শিশুকে গেঁথে রাক্ষুসে হাসি হাসছে। ছবিটা অনেকক্ষণ দেখল অনিমেষ। ভিয়েনামের ঘটনা এতদিনে তার জানা হয়ে গেছে। হো চি মিন নামের একজন মানুষের নেতৃত্বে নিরক্ষর অসহায় ভিয়েনামীরা আজ এক হয়ে আমেরিকান মিলিটারীর বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। কোথায় আমেরিকা আর কোথায় ভিয়েতনাম, তবু সেখানে সাম্রাজ্য অটুট রাখার বাসনায় আমেরিকা পাশবিক শক্তি প্রয়োগ করে একটা দেশের স্বাধীনতাকামী মানুষকে দাবিয়ে রাখতে চাইছে। কেন? শুধু ক্ষমতার অহঙ্কার মানুষকে কতটা উন্মত্ত করতে পারে তার জ্বলন্ত উদাহরণ । ছবিটা মাথায় নিয়ে অনিমেষ হেঁটে প্রেসিডেন্সি কলেজের সামনে চলে এল। ততক্ষণে ওর পরমহংসের কথা মনে পড়ল। সেই সুদীপ যখন ওকে চাতালের দিকে ধরে নিয়ে গের তারপর আর ওর দেখা মেলেনি। তখন ওর ওপর খুব ক্ষেপে গিয়েছিল অনিমেষ কিন্তু এখন আর রাগটা নেই। পরমহংস তো ইচ্ছে করে তাকে বিপাকে ফেলবে বলে নাম ধরে ডাকেনি। ছেলেটার সঙ্গে আজই আলাপ কিন্তু বেশ ভাল লেগেছে অনিমেষের। খুব সহজ হয়ে ফটাফট কথা বলতে পারে। মনে পড়ল পরমহংস বলেছিল মিটিং থেকে বেরিয়ে কফি হাউসে যাবে, সেখান থেকে টিউশানি । ওর পোশাক দেখে অবস্থা খারাপ বলে মনে হয় না, তবু টিউশানি করে কেন? অনিমেষের মনে হল বাবার পাঠানো গোণাগুণতি টাকায় তাকে যখন খুব কষ্ট করে চালাতে হয় তখন সেও তা পরমহংসের মত টিউশানি করতে পারে। কিন্তু তাকে কে টিউশানি দেবে? কোলকাতায় এসে কোন পরিবারের সঙ্গে সে ঘনিষ্ঠ হয়নি এক দেবব্রতবাবু ছাড়া। পরমহংসকে বললে হয়। অবশ্য জীবনে সে কখনো কাউকে পড়ায়নি, কিন্তু একটু দেখে নিলে স্কুলের যে-কোন ছাত্রকে না পড়াতে পারার কোন কারণ নেই।
প্রেসিডেন্সি কলেজের ফুটপাথে দাঁড়িয়ে অনিমেষ দেখল ট্রাম-বাসে বেজায় ভিড়। অফিস ছুটি হয়ে গেছে। সাধারণত ও যখন ফেরা তকন ভিড় থাকে না। এখন এখান থেকে ট্রামে ওঠা অসম্ভব। ঠিক উলটো দিকে ইন্ডিয়ান কপি হাউসের সাইন বোর্ডটা চোখে পড়ল ওর। পরমহংসকে ওখানে গেলে পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু ছেলেটা যখন দেখল সে একটা বিপদে পড়েছে, তাকে টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তখন সে মিটিং মেষ না হওয়া অবধি ওর জন্য অপেক্ষা করর না কেন? কোলকাতায় বোধ হয় কেই কারো বন্ধু হতে পারে না। পরমহংসের ওপর একটু অভিমান জমতে না-জমইে হেসে ফেলল অনিমেষ। ছেলেদের সঙ্গে আজ দুপুরেই প্রথম আলাপ হল আর সে অনেক কিছু ভেবে বসছে। চট করে নিজের পছন্দ মত ভাবার এই স্বাভাবটা যে সে কবে ছাড়াতে পারবে!
ট্রামরাস্তা পেরিয়ে সে গলিটার মধ্যে চলে এল। কফি হাউসের দরজার পাশেই এক মাঝবয়সী মানুষ সিগারেট বিক্রি করছে। অনিমেষকে দেখে সে খুব পরিচিত হাসি হাসল। অবাক হল অনিমেষ, লোকটা তাকে চেনে নাকি, এমন ভঙ্গী করছে যেন আগেও দেখা হয়েছে। অনিমেষ মুখ নামিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে লাগল। দেওয়ালের দিকে তাকিয়ে ও অবাক হয়ে গেল। পর পর অনেকগুলো লিটল ম্যাগাজিনের বিজ্ঞাপন, প্রত্যেকেই এক একটা দারুণ বিস্ফোরণ সংখ্যা বের করছে বলে দাবি করছে। দোতলায় উঠতে মনে হল একটা বাজার কাছাকাছি রয়েছে। খুব চেঁচামেচি করে কেনাবেচা চলছে সেখানে। দরজার পঁড়িয়ে হকচকিয়ে গেল অনিমেষ। বিরাট হলঘর জুড়ে টেবিল–চেয়ার আর তাতে ভরতি মানুষ। এত বড় রেস্টুরেন্ট সে কখনো দ্যাখেনি। সবাই একসঙ্গে নিজেদের মধ্যে কথা বলছে, আর সেই শব্দরাশি অনেক উঁচু ছাদের তলায় পাক খেয়ে অদ্ভূত আওয়াজ তুলছে। অনিমেষ এই ভিড়ের মধ্যে পরমহংসকে দেখতে পেল না। চট কর কাউকে খুঁজে পাওয়া অসম্ভব। বোকার মত কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে সে ফিরে যাবে বলে ভাবছে, তকন লক্ষ্য করল কয়েকজন ছেলে ওর দিকে তাকিয়ে নিজেদের মধ্যে কি বলাবলি করছে। সে মুখ ঘোরাতেই একজন উঠে এসে জিজ্ঞাসা করল, বসবনে? নিজেদের টেবিলে দেখাল সে। একটু ঘাবড়ে গিয়ে অনিমেষ ঘাড় নাড়ল, না।
আপনাকে আজ মিটিং-এ দেখলাম। হাসল ছেলেটি। আপনার কোনো অসুবিধা হয় না? সে তার পায়ের দিকে ইঙ্গিত করল। অনিমেষ এই প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলতে চায় না, সে দ্রুত ঘাড় নেড়ে দরজার দিকে ফিরে গেল । খুব বিরক্তি লাগছিল তার, এখন থেকে কত রোককে যে এই প্রশ্নের জবাব দিতে হবে! নিজের কোন গোপন দুঃখ বা যন্ত্রণা যদ্দিন নিজের থাকে সে একরকম, কিন্তু সেটা জানাজানি হয়ে গেলেই তার ধার কমে যায়।
প্রেসিডেন্সি কলেজের ফুটপাথে দাঁড়িয়ে অনিমেষ দেখল ট্রাম-বাসে বেজায় ভিড়। অফিস ছুটি হয়ে গেছে। সাধারণত ও যখন ফেরা তকন ভিড় থাকে না। এখন এখান থেকে ট্রামে ওঠা অসম্ভব। ঠিক উলটো দিকে ইন্ডিয়ান কপি হাউসের সাইন বোর্ডটা চোখে পড়ল ওর। পরমহংসকে ওখানে গেলে পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু ছেলেটা যখন দেখল সে একটা বিপদে পড়েছে, তাকে টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তখন সে মিটিং মেষ না হওয়া অবধি ওর জন্য অপেক্ষা করর না কেন? কোলকাতায় বোধ হয় কেই কারো বন্ধু হতে পারে না। পরমহংসের ওপর একটু অভিমান জমতে না-জমইে হেসে ফেলল অনিমেষ। ছেলেদের সঙ্গে আজ দুপুরেই প্রথম আলাপ হল আর সে অনেক কিছু ভেবে বসছে। চট করে নিজের পছন্দ মত ভাবার এই স্বাভাবটা যে সে কবে ছাড়াতে পারবে!
ট্রামরাস্তা পেরিয়ে সে গলিটার মধ্যে চলে এল। কফি হাউসের দরজার পাশেই এক মাঝবয়সী মানুষ সিগারেট বিক্রি করছে। অনিমেষকে দেখে সে খুব পরিচিত হাসি হাসল। অবাক হল অনিমেষ, লোকটা তাকে চেনে নাকি, এমন ভঙ্গী করছে যেন আগেও দেখা হয়েছে। অনিমেষ মুখ নামিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে লাগল। দেওয়ালের দিকে তাকিয়ে ও অবাক হয়ে গেল। পর পর অনেকগুলো লিটল ম্যাগাজিনের বিজ্ঞাপন, প্রত্যেকেই এক একটা দারুণ বিস্ফোরণ সংখ্যা বের করছে বলে দাবি করছে। দোতলায় উঠতে মনে হল একটা বাজার কাছাকাছি রয়েছে। খুব চেঁচামেচি করে কেনাবেচা চলছে সেখানে। দরজার পঁড়িয়ে হকচকিয়ে গেল অনিমেষ। বিরাট হলঘর জুড়ে টেবিল–চেয়ার আর তাতে ভরতি মানুষ। এত বড় রেস্টুরেন্ট সে কখনো দ্যাখেনি। সবাই একসঙ্গে নিজেদের মধ্যে কথা বলছে, আর সেই শব্দরাশি অনেক উঁচু ছাদের তলায় পাক খেয়ে অদ্ভূত আওয়াজ তুলছে। অনিমেষ এই ভিড়ের মধ্যে পরমহংসকে দেখতে পেল না। চট কর কাউকে খুঁজে পাওয়া অসম্ভব। বোকার মত কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে সে ফিরে যাবে বলে ভাবছে, তকন লক্ষ্য করল কয়েকজন ছেলে ওর দিকে তাকিয়ে নিজেদের মধ্যে কি বলাবলি করছে। সে মুখ ঘোরাতেই একজন উঠে এসে জিজ্ঞাসা করল, বসবনে? নিজেদের টেবিলে দেখাল সে। একটু ঘাবড়ে গিয়ে অনিমেষ ঘাড় নাড়ল, না।
আপনাকে আজ মিটিং-এ দেখলাম। হাসল ছেলেটি। আপনার কোনো অসুবিধা হয় না? সে তার পায়ের দিকে ইঙ্গিত করল। অনিমেষ এই প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলতে চায় না, সে দ্রুত ঘাড় নেড়ে দরজার দিকে ফিরে গেল । খুব বিরক্তি লাগছিল তার, এখন থেকে কত রোককে যে এই প্রশ্নের জবাব দিতে হবে! নিজের কোন গোপন দুঃখ বা যন্ত্রণা যদ্দিন নিজের থাকে সে একরকম, কিন্তু সেটা জানাজানি হয়ে গেলেই তার ধার কমে যায়।