অনিমেষ বাবার দিকে তাকাল। খুব বিচলিত দেখাচ্ছে ওঁকে। বাবাকে দেখার পরই যে সঙ্কোচটা এসেছিল এখন সেটা অনেক কম। বরং বাবার অদ্ভূত ব্যবহারে সে খুব অবাক হয়ে যাচ্ছিল। ওর আহত হবার পর যিনি জলপাইগুড়ি থেকে ছুটে এলেন তিনি। এসে অবধি একটাও কথা বলেননি, কি করে ঘটনাটা ঘটল জিজ্ঞাসাও করেননি। গম্ভীর মুখে অনিমেষ মহীতোষের প্রশ্নটার উত্তর দিল, হ্যাঁ।
অনিমেষ বললেন, চলুন দেখি। তবে আপনি যা চাইছেন তা হবে না।
অন্যমনস্ক মহীতোষ বললেন, মানে?
ওই যে তখন বলছিলেন না, ছেলেকে নিয়ে ফিরে যাবেন, সেটা অসম্ভব। দেখেই বুঝতে পারছেন নিশ্চয়ই। তার ওপর আপনাদের বিখ্যাত মণিহারীঘাট পার হয়ে যাওয়া–কিছু হয়ে গেলে সারাজীবন আফসোস করতে হবে।
কিন্তু এখানে রাখা মানে আপনার ওপর অত্যাচার করা। তা ছাড়া, এ বছর যখন নষ্ট হচ্ছেই, চলুন, আগে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে দেখি–। অনিমেষকে কিছু না বলে ওঁরা বেরিয়ে গেলেন।
কথাগুলো শোনামাত্র অনিমেষের কপালে ভাঁজ পড়েছিল। মহীতোষ এসেছেন তাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে? এটা ঠিক, হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকতে ভাল লাগছে না। কিন্তু জলপাইগুড়িতে ফিরে গেলে নিশ্চয়ই এখানকার কলেজে আর ভর্তি হওয়া যাবে না। একটা বছর চুপচাপ বৃথায় চলে যাবে এবং উনি সেটা মেনে নিয়েছেন। অনিমেষের মনে হচ্ছিল সে যদি একবার এখান থেকে জলপাইগুড়ি ফিরে যায় তাহলে আর কখনো কলকাতার কলেজে পড়া হবে না। কিন্তু সে এখন তো কিছুই করতে পারে না। যার বিছানা থেকে এক ইঞ্চি উঠে বসার সামর্থ্য নেই তার কথা কেউ শুনবে কেন? যদি দাদু থাকতেন কাছে, অনিমেষ সরিৎশেখরের অভাব ভীষণভাবে অনুভব করল। দাদুর কথায় বাবা না বলতে পারতেন না আর দাদুকে রাজী করানো নিজেকে রাজী করানোর মতই সহজ। এখনও সে ভালভাবে কলকাতার রাস্তায় হাঁটেনি, কলকাতার কিছুটা দ্যাখেনি, বিছানায় শুয়ে শুয়ে ট্রামের চাকার ঘরঘর শব্দ ছাড়া কলকাতা ওর কাছে অচেনা, তবু অনিমেষের মনে হচ্ছিল, কলকাতা ছেড়ে চড়ে গেলে তার সব কিছু শেষ হয়ে যাবে।
অনিমেষ চোখ বন্ধ করে ছিল। হঠাৎ সে অনুভব করল কেউ যেন খাটের পাশের টুলটায় এসে বসেছে। সে চোখ খুলল না। খানিক বাদে সে মহীতোষের গলা শুনতে পেল। গলা অদ্ভূত বিষণ্ণ এবং কেমন ভাঙ্গা ভাঙ্গা। এরকম গলায় বাবাকে কখনো কথা বলতে শোনেনি সে। মহীতোষ বললেন, খুব কষ্ট হচ্ছে, খোকা?
চোখ খুলল না অনিমেষ। এতক্ষণ কোথায় ছিল জানা নেই, অভিমানের সুতোটা টানটান হয়ে যেতে আলতোভাবে পায়ের ওপর স্পর্শ পেল অনিমেষ। ওর অপারেশনের জায়গায় হাত রেখে মহীতোষ জিজ্ঞাসা করলেন, খোকা, খুব ব্যথা করছে রে?
সামান্য স্পর্শ কিন্তু অনিমেষের মনে হল, কেউ করাত দিয়ে ওর পা কাটছে। অন্য সময় হলে আর্তনাদ করত কিন্তু এখন শারীরিক যন্ত্রণাটাকে দাঁতে চাপল সে। প্রাণপণে, স্বাভাবিক গলায় সে বলার চেষ্টা করল, না বাবা।
অনিমেষ বললেন, চলুন দেখি। তবে আপনি যা চাইছেন তা হবে না।
অন্যমনস্ক মহীতোষ বললেন, মানে?
ওই যে তখন বলছিলেন না, ছেলেকে নিয়ে ফিরে যাবেন, সেটা অসম্ভব। দেখেই বুঝতে পারছেন নিশ্চয়ই। তার ওপর আপনাদের বিখ্যাত মণিহারীঘাট পার হয়ে যাওয়া–কিছু হয়ে গেলে সারাজীবন আফসোস করতে হবে।
কিন্তু এখানে রাখা মানে আপনার ওপর অত্যাচার করা। তা ছাড়া, এ বছর যখন নষ্ট হচ্ছেই, চলুন, আগে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে দেখি–। অনিমেষকে কিছু না বলে ওঁরা বেরিয়ে গেলেন।
কথাগুলো শোনামাত্র অনিমেষের কপালে ভাঁজ পড়েছিল। মহীতোষ এসেছেন তাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে? এটা ঠিক, হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকতে ভাল লাগছে না। কিন্তু জলপাইগুড়িতে ফিরে গেলে নিশ্চয়ই এখানকার কলেজে আর ভর্তি হওয়া যাবে না। একটা বছর চুপচাপ বৃথায় চলে যাবে এবং উনি সেটা মেনে নিয়েছেন। অনিমেষের মনে হচ্ছিল সে যদি একবার এখান থেকে জলপাইগুড়ি ফিরে যায় তাহলে আর কখনো কলকাতার কলেজে পড়া হবে না। কিন্তু সে এখন তো কিছুই করতে পারে না। যার বিছানা থেকে এক ইঞ্চি উঠে বসার সামর্থ্য নেই তার কথা কেউ শুনবে কেন? যদি দাদু থাকতেন কাছে, অনিমেষ সরিৎশেখরের অভাব ভীষণভাবে অনুভব করল। দাদুর কথায় বাবা না বলতে পারতেন না আর দাদুকে রাজী করানো নিজেকে রাজী করানোর মতই সহজ। এখনও সে ভালভাবে কলকাতার রাস্তায় হাঁটেনি, কলকাতার কিছুটা দ্যাখেনি, বিছানায় শুয়ে শুয়ে ট্রামের চাকার ঘরঘর শব্দ ছাড়া কলকাতা ওর কাছে অচেনা, তবু অনিমেষের মনে হচ্ছিল, কলকাতা ছেড়ে চড়ে গেলে তার সব কিছু শেষ হয়ে যাবে।
অনিমেষ চোখ বন্ধ করে ছিল। হঠাৎ সে অনুভব করল কেউ যেন খাটের পাশের টুলটায় এসে বসেছে। সে চোখ খুলল না। খানিক বাদে সে মহীতোষের গলা শুনতে পেল। গলা অদ্ভূত বিষণ্ণ এবং কেমন ভাঙ্গা ভাঙ্গা। এরকম গলায় বাবাকে কখনো কথা বলতে শোনেনি সে। মহীতোষ বললেন, খুব কষ্ট হচ্ছে, খোকা?
চোখ খুলল না অনিমেষ। এতক্ষণ কোথায় ছিল জানা নেই, অভিমানের সুতোটা টানটান হয়ে যেতে আলতোভাবে পায়ের ওপর স্পর্শ পেল অনিমেষ। ওর অপারেশনের জায়গায় হাত রেখে মহীতোষ জিজ্ঞাসা করলেন, খোকা, খুব ব্যথা করছে রে?
সামান্য স্পর্শ কিন্তু অনিমেষের মনে হল, কেউ করাত দিয়ে ওর পা কাটছে। অন্য সময় হলে আর্তনাদ করত কিন্তু এখন শারীরিক যন্ত্রণাটাকে দাঁতে চাপল সে। প্রাণপণে, স্বাভাবিক গলায় সে বলার চেষ্টা করল, না বাবা।