দক্ষিণেশ্বর স্টেশন থেকে ট্রেন ধরেছিল অনিমেষ। মিনিট দুয়েক দাঁড়িয়েছিল গাড়ি। বেশির ভাগ কামরায় জানালা দরজা বন্ধ। এ লাইনে যারা যায় আসে তারা এই স্টেশনটি সম্পর্কে একটু আতঙ্কগ্রস্ত। ছিনতাইকারীরা নাকি লাইন দিয়ে প্ল্যাটফর্মের গায়ে দাঁড়িয়ে থাকে, ট্রেন ছাড়লেই ঘড়িটরি টেনে নেয়। কিন্তু অনিমেষ তাদের কাউকে দেখতে পায়নি। বরং কামরার দরজা খোলা না পেয়ে তার উঠতে কষ্ট হয়েছিল। একটু ছুটোছুটি করার পর সামনে যে দরজা পেয়েছিল তাতেই উঠে পড়েছিল সে। চলন্ত ট্রেনের দরজায় দাঁড়িয়ে ঘাড় ঘুরোতে ঘুরোতে মাধবীলতা অনেক দূরের মানুষ হয়ে গিয়েছিল।
বালীব্রিজের ওপর ট্রেনটা আসামাত্র গুম গুম শব্দ উঠল। ততক্ষণে ধাতস্থ হয়েছে অনিমেষ। ভারী ব্যাগটা নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারল খুব খাব হয়ে গেছে। এটা তৃতীয় শ্রেণীর কামরা নয়। মিলিটারীদের জন্য সংরক্ষিত যে কয়েকটা বগি প্রতি ট্রেনে থাকে এটি তার একটি। কামরাটা ফাঁকা। মাত্র জনা পাঁচেক পুরোদস্তুর ইয়ুনিফর্ম পরা মিলিটারী শুয়ে বসে থেকে দেখছে। মিলিটারীদের কামরায় সাধারণ মানুষ উঠে না, ভয়েই ওঠে না। বেআইনী তো বটেই, তাছাড়া অন্য একটা ভয়ও কাজ করে। কিন্তু এখন ট্রেন পূর্ণ গতিতে চলছে, সেই বর্ধমানের আগে কোন বিরতি নেই। সারারাত গা ঢাকা দিয়ে কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত নিজে থেকে ধরা পড়তে হল। অনিমেষের পেটের ভেতর চিনচিনে ব্যথাটা শুরু হয়ে গেল।
পাঁচজনই তার দিকে তাকিয়ে, সতর্কতা মেশানো কৌতূহল চোখগুলোতে। অনিমেষ হাত জোড় করে নমস্কার জানালো, মাফ করবেন, অমি বুঝতে পারিনি এটা জেনারেল কম্পার্টমেন্ট নয়।
ওদের মধ্যে যার কাঁধে ফিতে আঁটা সে উঠে বসল, হিন্দিমে বলিয়ে।
ম্যায় হিন্দি আচ্ছা নেহি বলনে সেকতা
কোই ফিকির নেই, ট্রাই করো।
এয় মিলিটারী কম্পার্টমেন্ট হ্যায় হাম নেহি জানতা থা। আপনোক মুঝে মাফি কি দিজিয়ে, নেক্সট স্টেশন মে উতার যাউঙ্গা।
লুক বিফোর ইউলিপ। দেখনা চাহিয়ে থা।
আই আ্যম সরি।
কাঁহা যানা হ্যায়?
শিলিগুড়ি।
টিকেট লে লিয়া ক্যা?
অনিমেষ পকেট থেকে টিকেটটা বের করে দেখালো।
হোয়াটস ইউর প্রয়েসন?
স্টুডেন্ট।
তো ঠিক হ্যায়, বৈঠক যাইয়ে। হাত বাড়িয়ে পাশের খালি জায়গা দেখিয়ে দিল লোকটা। এতটা আশা করেনি অনিমেষ। বিরাট মোচওয়ালা লোকটিকে মনে মনে ধন্যবাদ দিয়ে সিটের ওপর ব্যাগটা রেখে সন্তপর্ণে বসল সে। ট্রেন হু হু করে ছুটছে। অনিমেষ দেখল সব কটি চোখ তাকে লক্ষ্য করছে। ক্যা পড়তা হ্যায় আপ?
এম. এ।
সাবাস। বহৎ পড়িলিকি আদমী হ্যায় আপ। ম্যায় তো কলেজকা সাকল নেহি দেখা। ম্যায় ত্রিলোক সিং, আপকি শুভনাম?
অনিমেষ মিত্র।
সঙ্গীদের সঙে আলাপ করিয়ে দিল লোকটা। শক্ত হাতগুলো এগিয়ে এল হাত মেলাতে। কয়েক মিনিটের মধ্যে আড়ষ্টতা কেটে গেল। কিছুক্ষণের মধ্যেই অনিমেষ বুঝতে পারল লোকগুলো খুব হাসিখুশি, গল্প করতে ওস্তাদ। ভারতীয় সামরিক বিভাগে এরা নীচু তলায় কাজ করে। কিন্তু কোন রকম কমপ্লেক্স নেই। আমি একজন জোয়ান, দেশ রক্ষা আমার কর্তব্য এই বোধ প্রত্যেকের। এতদিন এই সব কথা শেখান বুলির মত মনে হতো অনিমেষের, কেউ বললে হাসি পেত। কিন্তু এখন এই বিশ্বাসী মুখগুলোর শেখানো বুলির মত মনে হতো অনিমেষের, কেউ বললে হাসি পেত। কিন্তু এখন
এই ত্রিলোক সিংকে জিজ্ঞাসা করল অনিমেষ, আপনার দেশ পাঞ্জাবে?
নেহি জি। হরিয়ানায়। গাঁওকা আদমী হাম।
কতদিন চাকরি করছেন?
বিশ সাল হয়ে গেল।
আপনাদের গ্রামের অবস্থা কেমন?
গ্রামের অবস্থা যেমন হয়, ভাল। আমরা তিন ভাই। আমি মিলিটারীতে, আর একজন দিল্লীতে ট্যাক্সি চালায় আর বড় ভাই ক্ষেতির কাজ করে। আমাদের গ্রামের প্রতিটি বাড়ির একজন ইন্ডিয়ান আর্মিতে কাজ করে।
আপনি বিয়ে থা করেছেন?
সঙ্গে সঙ্গে কামরায় হাসির রোল উঠল। প্রতিটি মুখের দাঁত দেখা যাচ্ছি। ত্রিলোক সিং-এর পাশের লোকটি বলল, আরে শাদির কথা কি বলছ, ওর মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। তাই নিয়েই তো আমাদের সমস্যা।
বালীব্রিজের ওপর ট্রেনটা আসামাত্র গুম গুম শব্দ উঠল। ততক্ষণে ধাতস্থ হয়েছে অনিমেষ। ভারী ব্যাগটা নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারল খুব খাব হয়ে গেছে। এটা তৃতীয় শ্রেণীর কামরা নয়। মিলিটারীদের জন্য সংরক্ষিত যে কয়েকটা বগি প্রতি ট্রেনে থাকে এটি তার একটি। কামরাটা ফাঁকা। মাত্র জনা পাঁচেক পুরোদস্তুর ইয়ুনিফর্ম পরা মিলিটারী শুয়ে বসে থেকে দেখছে। মিলিটারীদের কামরায় সাধারণ মানুষ উঠে না, ভয়েই ওঠে না। বেআইনী তো বটেই, তাছাড়া অন্য একটা ভয়ও কাজ করে। কিন্তু এখন ট্রেন পূর্ণ গতিতে চলছে, সেই বর্ধমানের আগে কোন বিরতি নেই। সারারাত গা ঢাকা দিয়ে কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত নিজে থেকে ধরা পড়তে হল। অনিমেষের পেটের ভেতর চিনচিনে ব্যথাটা শুরু হয়ে গেল।
পাঁচজনই তার দিকে তাকিয়ে, সতর্কতা মেশানো কৌতূহল চোখগুলোতে। অনিমেষ হাত জোড় করে নমস্কার জানালো, মাফ করবেন, অমি বুঝতে পারিনি এটা জেনারেল কম্পার্টমেন্ট নয়।
ওদের মধ্যে যার কাঁধে ফিতে আঁটা সে উঠে বসল, হিন্দিমে বলিয়ে।
ম্যায় হিন্দি আচ্ছা নেহি বলনে সেকতা
কোই ফিকির নেই, ট্রাই করো।
এয় মিলিটারী কম্পার্টমেন্ট হ্যায় হাম নেহি জানতা থা। আপনোক মুঝে মাফি কি দিজিয়ে, নেক্সট স্টেশন মে উতার যাউঙ্গা।
লুক বিফোর ইউলিপ। দেখনা চাহিয়ে থা।
আই আ্যম সরি।
কাঁহা যানা হ্যায়?
শিলিগুড়ি।
টিকেট লে লিয়া ক্যা?
অনিমেষ পকেট থেকে টিকেটটা বের করে দেখালো।
হোয়াটস ইউর প্রয়েসন?
স্টুডেন্ট।
তো ঠিক হ্যায়, বৈঠক যাইয়ে। হাত বাড়িয়ে পাশের খালি জায়গা দেখিয়ে দিল লোকটা। এতটা আশা করেনি অনিমেষ। বিরাট মোচওয়ালা লোকটিকে মনে মনে ধন্যবাদ দিয়ে সিটের ওপর ব্যাগটা রেখে সন্তপর্ণে বসল সে। ট্রেন হু হু করে ছুটছে। অনিমেষ দেখল সব কটি চোখ তাকে লক্ষ্য করছে। ক্যা পড়তা হ্যায় আপ?
এম. এ।
সাবাস। বহৎ পড়িলিকি আদমী হ্যায় আপ। ম্যায় তো কলেজকা সাকল নেহি দেখা। ম্যায় ত্রিলোক সিং, আপকি শুভনাম?
অনিমেষ মিত্র।
সঙ্গীদের সঙে আলাপ করিয়ে দিল লোকটা। শক্ত হাতগুলো এগিয়ে এল হাত মেলাতে। কয়েক মিনিটের মধ্যে আড়ষ্টতা কেটে গেল। কিছুক্ষণের মধ্যেই অনিমেষ বুঝতে পারল লোকগুলো খুব হাসিখুশি, গল্প করতে ওস্তাদ। ভারতীয় সামরিক বিভাগে এরা নীচু তলায় কাজ করে। কিন্তু কোন রকম কমপ্লেক্স নেই। আমি একজন জোয়ান, দেশ রক্ষা আমার কর্তব্য এই বোধ প্রত্যেকের। এতদিন এই সব কথা শেখান বুলির মত মনে হতো অনিমেষের, কেউ বললে হাসি পেত। কিন্তু এখন এই বিশ্বাসী মুখগুলোর শেখানো বুলির মত মনে হতো অনিমেষের, কেউ বললে হাসি পেত। কিন্তু এখন
এই ত্রিলোক সিংকে জিজ্ঞাসা করল অনিমেষ, আপনার দেশ পাঞ্জাবে?
নেহি জি। হরিয়ানায়। গাঁওকা আদমী হাম।
কতদিন চাকরি করছেন?
বিশ সাল হয়ে গেল।
আপনাদের গ্রামের অবস্থা কেমন?
গ্রামের অবস্থা যেমন হয়, ভাল। আমরা তিন ভাই। আমি মিলিটারীতে, আর একজন দিল্লীতে ট্যাক্সি চালায় আর বড় ভাই ক্ষেতির কাজ করে। আমাদের গ্রামের প্রতিটি বাড়ির একজন ইন্ডিয়ান আর্মিতে কাজ করে।
আপনি বিয়ে থা করেছেন?
সঙ্গে সঙ্গে কামরায় হাসির রোল উঠল। প্রতিটি মুখের দাঁত দেখা যাচ্ছি। ত্রিলোক সিং-এর পাশের লোকটি বলল, আরে শাদির কথা কি বলছ, ওর মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। তাই নিয়েই তো আমাদের সমস্যা।