প্রশ্নটা শুনেই অনিমেষের চোখের সামনে মাধবীলতার মুখ ভেসে উঠল। যে মেয়ে তার জন্যে এক কথায় ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে তার সঙ্গে কথা বলাটা জরুরী ছিল। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে মনে হল আজ যদি সে পিছিয়ে আসতো তাহলে বাকী জীবনটা বেঁচে থাকার কোন কারণ থাকতো না। সে যাই করুক নিশ্চয় মাধবীলতা তাকে সমর্থন করবে। মাধবীলতা থেকে মোটেই ভিন্ন নয়। অনিমেষ উত্তর দিল, সুবাসদা, সেটা দেওয়া হয়ে গেছে।
সুবাসদা অবাক গলায় জিজ্ঞাসা করল, কার কাছে?
আমার নিজের কাছেই। অনিমেষ হাসছিল।
সুবাসদা জিজ্ঞাসা করল, সিগারেট আছে অনিমেষ?
অনিমেষ ঘাড় নাড়ল, না। তারপর চারপাশে চোখ ঘুরিয়ে সিগারেটের দোকান খুঁজতে লাগল। এখন নিশুতি রাত। স্টেশনের দিকে গেলে অবশ্যই দু একটা দোকান খোলা পাওয়া যাবে কিন্তু এ তল্লাটে কোথাও আলো জ্বলছে না। কাশীপুর ক্লাবের পাচিলের ওপর ছেলেদুটো কাজ করছে। এ দিকটায় লোকজনের ঘন বসতি নেই বলে কাজেরও সুবিধে। অনেকটা জায়গা নিয়ে লেখা হচ্ছে বন্দুকের নলই শক্তির উৎস। লক্ষ্য করছিল অনিমেষ, ছেলেটার হাতের এক একটা টানে কি সহজে রেখাগুলো জ্যান্ত অক্ষর হয়ে যাচ্ছিল।
ঠিক বারোটার সময় ওরা মিলিত হয়েছিল। দমদম স্টেশনের চতুরটা তখন বাজারের মত সরগরম। সুবাসদা একটু উতস্তত করছিল ওখানে কাজ শুরু করতে। প্রথমেই লোকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা উচিত হবে না। ওরা তাই একটু সরে এসে লেখা শুরু করেছে। ছেলেদুটোর হাত খুব ভাল, এরই মধ্যে দুটো লেখা হয়ে গেছে।
রঙের কৌটো মাটিতে রেখে ছেলেদুটির একজন বলল, বিড়ি খাবেন?
সুবাসদা হাত বাড়ালো, বেশী থাকলে দাও।
পকেট থেকে দুটো বিড়ি বার করে ওদের হাতে ধরিয়ে দিয়ে ছেলেটি কাজে ফিরে গেল। সুবাসদা নিজেরটা ধরিয়ে অনিমেষের মুখের সামনে হাতের আড়ালে বাঁচানো আগুন এগিয়ে ধরল। অনিমেষ বিড়িতে টান দিতেই একটা কটু গন্ধ জিভে গলায় ছড়িয়ে পড়ল। শরীর গুলোচ্ছিল প্রথমে কিন্তু ক্রমশ ঠিক হয়ে এল। সুবাসদা বলছিলো, বিড়িটা অভ্যেস করাই ভাল। প্রথম কথা পয়সা খরচ কম, আর সবচেয়ে উপকারী যেটা সেটা হল, ক্যানসার হয় না।
বিড়ি-খেলে ক্যানসার হয় না?
শুনেছি সিগারেটের কাগজটার ধোঁয়াই সবচেয়ে ক্ষতিকর। বিড়িতে সেই ধোঁয়াটা নেই। বাংলাদেশের গ্রামের মানুষের কজনার ক্যানসার হয়?
বিড়ির টান এখন ভাল লাগছে। অনিমেষ ভাবছিল এবার থেকে বিড়িই খাবে। পয়সা সাশ্রয়ের চিন্তাটাই মাথায় ছিল। হঠাৎ মনে হল মাধবীলতার সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে যদি সে বিড়ি খায় তাহলে কি প্রতিক্রিয়া হবে! সত্যি, আমরা কতগুলো ব্যাপার নিজেদের ইচ্ছেমতন সাজিয়ে নিই এবং তার ব্যতিক্রম হলেই আমাদের চোখে দৃষ্টিকটু লাগে। যেমন সিগারেট খাওয়ার বদলে বিড়িটার চল যদি শিক্ষিত মানুষের মধ্যেই স্বাভাবিক হতো তাহলে সে প্রতিক্রিয়ায় কথা ভাবতো না।
সামনের রাস্তা দিয়ে এখন কদাচই গাড়ি যাচ্ছে। নিস্তব্ধ এই রাত্তিরে দেওয়ালের গায়ে অক্ষরগুলো জন্ম নিচ্ছিল। বন্দুকের নলই শক্তির উৎস। লেখার ভঙ্গিতে একটা উদ্দাম বিদ্রোহের চেহারা আছে। বন্দুক শব্দটা দেখতে দেখতে অনিমেষের সামনে একটা ছবি ফুটে উঠল। কিউবার জঙ্গলে এগিয়ে যাওয়া বিপ্লবীসেনার হাতের বন্দুকের শেষ টোটা ফুরিয়ে যাওয়ার পরে মরিয়া হয়ে সে শত্রুকে আঘাত করছে লাঠির মত ব্যবহার করে। বন্দুকের বারুদের অভাব বুকের বারুদ পূর্ণ করেছে। সেই দেখা ছবিটাই এখন চোখের সামনে ভালস। বিপ্লবে বন্দুক অনিবার্য। অথচ সে কখনো বন্দুক স্পর্শ করেনি। অস্ত্র ব্যবহারে দক্ষতা না থাকলে শিক্ষিত প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হতে চাওয়া বোকামি ছাড়া কিছু নয়। দেশের সৈন্যবিভাগ শুধু এই ব্যাপারেই দীর্ঘকাল ধরে শিক্ষা পেয়ে এসেছে। তাদের বিরুদ্ধে একদম আনাড়ি হাতে বন্দুক ধরলে কয়েক মুহূর্তেই বিপ্লবের স্বপ্ন আকাশকুসুম হয়ে যাবে। তাহলে?
সুবাসদা অবাক গলায় জিজ্ঞাসা করল, কার কাছে?
আমার নিজের কাছেই। অনিমেষ হাসছিল।
সুবাসদা জিজ্ঞাসা করল, সিগারেট আছে অনিমেষ?
অনিমেষ ঘাড় নাড়ল, না। তারপর চারপাশে চোখ ঘুরিয়ে সিগারেটের দোকান খুঁজতে লাগল। এখন নিশুতি রাত। স্টেশনের দিকে গেলে অবশ্যই দু একটা দোকান খোলা পাওয়া যাবে কিন্তু এ তল্লাটে কোথাও আলো জ্বলছে না। কাশীপুর ক্লাবের পাচিলের ওপর ছেলেদুটো কাজ করছে। এ দিকটায় লোকজনের ঘন বসতি নেই বলে কাজেরও সুবিধে। অনেকটা জায়গা নিয়ে লেখা হচ্ছে বন্দুকের নলই শক্তির উৎস। লক্ষ্য করছিল অনিমেষ, ছেলেটার হাতের এক একটা টানে কি সহজে রেখাগুলো জ্যান্ত অক্ষর হয়ে যাচ্ছিল।
ঠিক বারোটার সময় ওরা মিলিত হয়েছিল। দমদম স্টেশনের চতুরটা তখন বাজারের মত সরগরম। সুবাসদা একটু উতস্তত করছিল ওখানে কাজ শুরু করতে। প্রথমেই লোকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা উচিত হবে না। ওরা তাই একটু সরে এসে লেখা শুরু করেছে। ছেলেদুটোর হাত খুব ভাল, এরই মধ্যে দুটো লেখা হয়ে গেছে।
রঙের কৌটো মাটিতে রেখে ছেলেদুটির একজন বলল, বিড়ি খাবেন?
সুবাসদা হাত বাড়ালো, বেশী থাকলে দাও।
পকেট থেকে দুটো বিড়ি বার করে ওদের হাতে ধরিয়ে দিয়ে ছেলেটি কাজে ফিরে গেল। সুবাসদা নিজেরটা ধরিয়ে অনিমেষের মুখের সামনে হাতের আড়ালে বাঁচানো আগুন এগিয়ে ধরল। অনিমেষ বিড়িতে টান দিতেই একটা কটু গন্ধ জিভে গলায় ছড়িয়ে পড়ল। শরীর গুলোচ্ছিল প্রথমে কিন্তু ক্রমশ ঠিক হয়ে এল। সুবাসদা বলছিলো, বিড়িটা অভ্যেস করাই ভাল। প্রথম কথা পয়সা খরচ কম, আর সবচেয়ে উপকারী যেটা সেটা হল, ক্যানসার হয় না।
বিড়ি-খেলে ক্যানসার হয় না?
শুনেছি সিগারেটের কাগজটার ধোঁয়াই সবচেয়ে ক্ষতিকর। বিড়িতে সেই ধোঁয়াটা নেই। বাংলাদেশের গ্রামের মানুষের কজনার ক্যানসার হয়?
বিড়ির টান এখন ভাল লাগছে। অনিমেষ ভাবছিল এবার থেকে বিড়িই খাবে। পয়সা সাশ্রয়ের চিন্তাটাই মাথায় ছিল। হঠাৎ মনে হল মাধবীলতার সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে যদি সে বিড়ি খায় তাহলে কি প্রতিক্রিয়া হবে! সত্যি, আমরা কতগুলো ব্যাপার নিজেদের ইচ্ছেমতন সাজিয়ে নিই এবং তার ব্যতিক্রম হলেই আমাদের চোখে দৃষ্টিকটু লাগে। যেমন সিগারেট খাওয়ার বদলে বিড়িটার চল যদি শিক্ষিত মানুষের মধ্যেই স্বাভাবিক হতো তাহলে সে প্রতিক্রিয়ায় কথা ভাবতো না।
সামনের রাস্তা দিয়ে এখন কদাচই গাড়ি যাচ্ছে। নিস্তব্ধ এই রাত্তিরে দেওয়ালের গায়ে অক্ষরগুলো জন্ম নিচ্ছিল। বন্দুকের নলই শক্তির উৎস। লেখার ভঙ্গিতে একটা উদ্দাম বিদ্রোহের চেহারা আছে। বন্দুক শব্দটা দেখতে দেখতে অনিমেষের সামনে একটা ছবি ফুটে উঠল। কিউবার জঙ্গলে এগিয়ে যাওয়া বিপ্লবীসেনার হাতের বন্দুকের শেষ টোটা ফুরিয়ে যাওয়ার পরে মরিয়া হয়ে সে শত্রুকে আঘাত করছে লাঠির মত ব্যবহার করে। বন্দুকের বারুদের অভাব বুকের বারুদ পূর্ণ করেছে। সেই দেখা ছবিটাই এখন চোখের সামনে ভালস। বিপ্লবে বন্দুক অনিবার্য। অথচ সে কখনো বন্দুক স্পর্শ করেনি। অস্ত্র ব্যবহারে দক্ষতা না থাকলে শিক্ষিত প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হতে চাওয়া বোকামি ছাড়া কিছু নয়। দেশের সৈন্যবিভাগ শুধু এই ব্যাপারেই দীর্ঘকাল ধরে শিক্ষা পেয়ে এসেছে। তাদের বিরুদ্ধে একদম আনাড়ি হাতে বন্দুক ধরলে কয়েক মুহূর্তেই বিপ্লবের স্বপ্ন আকাশকুসুম হয়ে যাবে। তাহলে?