নদীটার ওপর মাত্র একটাই সেতু এবং সেটা কাঠের। গণফৌজকে ওই নদী পেরিয়ে যেতে হবে। মিছিল যখন নদীর কাছাকাছি এসে পড়ল তখন চিয়াং কাইশেকের সৈন্যরা মেশিনগান সাজিয়ে বসে গেছে নদীর অন্যপাড়ে। এদিন চিয়াং–এর অপর বাহিনী ইঁদুরকচে মিছিলকে ঠেসে ধরবার জন্যে পেছন থেকে ধাওয়া করে এল। সেচুয়ানের পার্বত্য অঞ্চলে এই ভীষণ নদীটির ওপর পুরোন আমলের ভাঙ্গাচোরা কাঠের ঝলপুল পার হতে হবে গণফৌজকে। অপর পাড়ে যে মেশিনগানগুলো প্রস্তুত সে খবরও এসেছে।
প্রথম দল এগিয়ে চলল দৃঢ় পদক্ষেপে। সেতুর মাঝামাঝি আসতেই শুরু হয়ে গেল গুলীবর্ষণ। চোখের নিমেষে মানুষগুলো নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল, লাল হল তাতু নদীর জল। পরের দল বন্দুক ছুঁড়তে ছুঁড়তে এগোল ওই ছোট সেতুর ওপর দিয়ে কিন্তু মেশিনগান তাদের আলতো করে তুলে নিল এবারও। এবার গণফৌজ আরো মরিয়া হয়ে উঠল। মৃত্যু যেখানে অবশ্যম্ভাবী সেখানে মৃত্যুকেই ব্যবহার করা যাক জীবনকে অর্জন করতে। এবার কোন ছোট দল নয়, গণফৌজ নেমে পড়ল সার দিয়ে। মেশিনগানের আঘাতে মানুষ মরছে কিন্তু তার জায়গা নিয়ে পরের জন সেতুর ওপর আর একটু এগিয়ে আসছে। তার মৃতদেহ যেখানে পড়ছে তা থেকে পরবর্তী মুক্তিসেনা আরও কয়েক পা মিছিলকে এগিয়ে দিচ্ছে। এবার চিয়াং-এর বাহিনী নতুন অস্ত্র প্রয়োগ করল। ফ্রেম থ্রোয়ার ছুঁড়ে ওরা ঝুলনপুলের কাঠে আগুন ধরিয়ে দিল। দাউ দাউ করে জ্বলছে সেতু। মাঝপথেই পুড়ে নদীতে পড়ে গেল প্রথম সারির মানুষগুলো। কিন্তু পিছু হটলো না চীনের মুক্তিপৌঁজ, সেই লকে আগুনের সামনের দাঁড়িয়ে তারা এক অমানুষিক কাণ্ড করল। জ্বলন্ত পুলের ওপর দিয়ে অবিশ্রান্ত গুলীবর্ষণে টুপটাপ নদীর বুকে ঝরে যেতে যেতে প্রথম দলটা সেতু পার হল। চোখের সামনে ঝাঁকে ঝাঁকে জ্বলন্ত শরীর ছুটে আসছে দেখে চিয়াং–এর সৈন্যরা হতভম্ব। কতখানি আবেগ মানুষের বুকে পাহাড় হলে এইভাবে আত্মাহুতি দেওয়া যায় তার সন্ধান ওরা জানতো না। এই অতিমানবিক ঘটনা দেখে চিয়াংবাহিনীর সৈন্যরা ভয় পেল। তারা মেশিন গান ছেড়ে পালাতে লাগল এবার। দগ্ধ যারা তারা লুটিয়ে পড়ল মাটিতে। কিন্তু অর্ধদগ্ধ শ্রান্ত মুক্তিসেনারা এবার ওই পরিত্যক্ত মেশিনগানের গুলীর ছাতির আড়ালে নিরাপদ রেখে ওরা নদী পার করিয়ে নিয়ে এল।
পথে বাধা ছিল অনেক। হিংস্র চীনবিরোধী পার্বত্য উপজাতিদের গুপ্ত আক্রমণের ভয়, সুবিশাল চোরা গহ্বরসঙ্কুল তৃণভূমি অতিক্রম করার সমস্যা। মুক্তিফৌজ ওই পথ পেরিয়ে এল মাও সে তুং এর নেতৃত্বে। ষোল হাজার ফুট উঁচু পাহাড়ের বরফ ডিঙ্গিয়ে দুহাজার মাইলের সেই ভয়ঙ্কর তৃণভূমি মাড়িয়ে হিংস্র উপজাতিদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে উনিশশো পঁয়ত্রিশ সালের বিশে অক্টোবর গিয়ে পৌঁছালো পাও আন–এ। সৃষ্টি হল মুক্ত অঞ্চল। কোনসি প্রদেশের ইয়েনান হল সাতচল্লিশ সাল পর্যন্ত মুক্তিবাহিনীর রাজধানী। নব্বই হাজার মানুষ নিয়ে শুরু করা যাত্রা তখন তিরিশ হাজারে এসে ঠেকেছে কিন্তু সাফল্য তখন করায়ত্ত। তারপর সেই মুক্ত অঞ্চল ক্রমশ বিস্তৃত হতে লাগল। কিন্তু সেখানেও সমস্যা জমেছিল অনেক।
চিয়াং কাইশেকের শিক্ষিত সৈন্যরা মুক্ত এলাকা দখল করতে দৃঢ়প্রতিক্ষ। তারা আক্রমণ করছে। মুক্তিসেনাদের। পার্টির নেতৃত্বে আর যারা ছিলেন তাঁরা পিছু হটতে চাইলেন না। ভাবাবেগে বললেন, এত কষ্টে তৈরী করা এই মুক্ত অঞ্চরের এক ইঞ্চি জমিই বা আমরা ছাড়বো কেন? ঘরদুয়োর, জিনিসপত্র শত্রুকে দিয়ে পালিয়ে যাব? সব এলাকাতেই প্রতিরোধ করতে হবে। মাও সে তুংকে তারা বললেন, জঙ্গলে পাহাড়ে মার্কসবাদ বিকাশলাভ করে না।
মাও সে তুং এই মতকে মানলেন না। শুত্রপক্ষ যখন অনেক আধুনিক অস্ত্রে শক্তিশালী তখন মুখোমুখি লড়াই করা ঠিক নয়। বিনা বাধায় শত্রুকে মুক্তাঞ্চলে ঢুকতে দাও। তারপর আমাদের এলাকার মাঝামাঝি এসে যখন এই বিরাট বাহিনী ছাউনি গেড়ে বসবে তখন হঠাৎ আক্রমণ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করবো। সেই ছত্রভঙ্গ সেনাবাহিনীকে তারপর আলাদা আলাদা আক্রমণ করে নিশ্চিহ্ন করতে হবে।
ফল পাওয়া গেল হাতে হাতে। গেরিলাযুদ্ধের এই কৌশল বিপ্লবকে আর এক ধাপ এগিয়ে দিল। মার্কসবাদের প্রধান কর্মক্ষেত্র য়ুরোক থেকে এত দূরে এশিয়ার একটা দেশের পাহাড় জঙ্গলে মাকর্সবাদ লেনিনবাদের নির্দিষ্ট প্রয়োগে মাও সে তুং একটি জাতির জন্মান্তর সৃষ্টি করলেন।
লিফলেটের শেষ কথা এই সংগ্রাম আমাদের একমাত্র পথনির্দেশিকা থোক। অনিমেষ এখন চোখ বন্ধ করলেই সেই জ্বলন্ত ঝুলনপুলের ওপর ছুটে যাওয়া অগ্নিপুরুষদের দেখতে পাচ্ছিল। এই পথ, একমাত্র পথ।
প্রথম দল এগিয়ে চলল দৃঢ় পদক্ষেপে। সেতুর মাঝামাঝি আসতেই শুরু হয়ে গেল গুলীবর্ষণ। চোখের নিমেষে মানুষগুলো নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল, লাল হল তাতু নদীর জল। পরের দল বন্দুক ছুঁড়তে ছুঁড়তে এগোল ওই ছোট সেতুর ওপর দিয়ে কিন্তু মেশিনগান তাদের আলতো করে তুলে নিল এবারও। এবার গণফৌজ আরো মরিয়া হয়ে উঠল। মৃত্যু যেখানে অবশ্যম্ভাবী সেখানে মৃত্যুকেই ব্যবহার করা যাক জীবনকে অর্জন করতে। এবার কোন ছোট দল নয়, গণফৌজ নেমে পড়ল সার দিয়ে। মেশিনগানের আঘাতে মানুষ মরছে কিন্তু তার জায়গা নিয়ে পরের জন সেতুর ওপর আর একটু এগিয়ে আসছে। তার মৃতদেহ যেখানে পড়ছে তা থেকে পরবর্তী মুক্তিসেনা আরও কয়েক পা মিছিলকে এগিয়ে দিচ্ছে। এবার চিয়াং-এর বাহিনী নতুন অস্ত্র প্রয়োগ করল। ফ্রেম থ্রোয়ার ছুঁড়ে ওরা ঝুলনপুলের কাঠে আগুন ধরিয়ে দিল। দাউ দাউ করে জ্বলছে সেতু। মাঝপথেই পুড়ে নদীতে পড়ে গেল প্রথম সারির মানুষগুলো। কিন্তু পিছু হটলো না চীনের মুক্তিপৌঁজ, সেই লকে আগুনের সামনের দাঁড়িয়ে তারা এক অমানুষিক কাণ্ড করল। জ্বলন্ত পুলের ওপর দিয়ে অবিশ্রান্ত গুলীবর্ষণে টুপটাপ নদীর বুকে ঝরে যেতে যেতে প্রথম দলটা সেতু পার হল। চোখের সামনে ঝাঁকে ঝাঁকে জ্বলন্ত শরীর ছুটে আসছে দেখে চিয়াং–এর সৈন্যরা হতভম্ব। কতখানি আবেগ মানুষের বুকে পাহাড় হলে এইভাবে আত্মাহুতি দেওয়া যায় তার সন্ধান ওরা জানতো না। এই অতিমানবিক ঘটনা দেখে চিয়াংবাহিনীর সৈন্যরা ভয় পেল। তারা মেশিন গান ছেড়ে পালাতে লাগল এবার। দগ্ধ যারা তারা লুটিয়ে পড়ল মাটিতে। কিন্তু অর্ধদগ্ধ শ্রান্ত মুক্তিসেনারা এবার ওই পরিত্যক্ত মেশিনগানের গুলীর ছাতির আড়ালে নিরাপদ রেখে ওরা নদী পার করিয়ে নিয়ে এল।
পথে বাধা ছিল অনেক। হিংস্র চীনবিরোধী পার্বত্য উপজাতিদের গুপ্ত আক্রমণের ভয়, সুবিশাল চোরা গহ্বরসঙ্কুল তৃণভূমি অতিক্রম করার সমস্যা। মুক্তিফৌজ ওই পথ পেরিয়ে এল মাও সে তুং এর নেতৃত্বে। ষোল হাজার ফুট উঁচু পাহাড়ের বরফ ডিঙ্গিয়ে দুহাজার মাইলের সেই ভয়ঙ্কর তৃণভূমি মাড়িয়ে হিংস্র উপজাতিদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে উনিশশো পঁয়ত্রিশ সালের বিশে অক্টোবর গিয়ে পৌঁছালো পাও আন–এ। সৃষ্টি হল মুক্ত অঞ্চল। কোনসি প্রদেশের ইয়েনান হল সাতচল্লিশ সাল পর্যন্ত মুক্তিবাহিনীর রাজধানী। নব্বই হাজার মানুষ নিয়ে শুরু করা যাত্রা তখন তিরিশ হাজারে এসে ঠেকেছে কিন্তু সাফল্য তখন করায়ত্ত। তারপর সেই মুক্ত অঞ্চল ক্রমশ বিস্তৃত হতে লাগল। কিন্তু সেখানেও সমস্যা জমেছিল অনেক।
চিয়াং কাইশেকের শিক্ষিত সৈন্যরা মুক্ত এলাকা দখল করতে দৃঢ়প্রতিক্ষ। তারা আক্রমণ করছে। মুক্তিসেনাদের। পার্টির নেতৃত্বে আর যারা ছিলেন তাঁরা পিছু হটতে চাইলেন না। ভাবাবেগে বললেন, এত কষ্টে তৈরী করা এই মুক্ত অঞ্চরের এক ইঞ্চি জমিই বা আমরা ছাড়বো কেন? ঘরদুয়োর, জিনিসপত্র শত্রুকে দিয়ে পালিয়ে যাব? সব এলাকাতেই প্রতিরোধ করতে হবে। মাও সে তুংকে তারা বললেন, জঙ্গলে পাহাড়ে মার্কসবাদ বিকাশলাভ করে না।
মাও সে তুং এই মতকে মানলেন না। শুত্রপক্ষ যখন অনেক আধুনিক অস্ত্রে শক্তিশালী তখন মুখোমুখি লড়াই করা ঠিক নয়। বিনা বাধায় শত্রুকে মুক্তাঞ্চলে ঢুকতে দাও। তারপর আমাদের এলাকার মাঝামাঝি এসে যখন এই বিরাট বাহিনী ছাউনি গেড়ে বসবে তখন হঠাৎ আক্রমণ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করবো। সেই ছত্রভঙ্গ সেনাবাহিনীকে তারপর আলাদা আলাদা আক্রমণ করে নিশ্চিহ্ন করতে হবে।
ফল পাওয়া গেল হাতে হাতে। গেরিলাযুদ্ধের এই কৌশল বিপ্লবকে আর এক ধাপ এগিয়ে দিল। মার্কসবাদের প্রধান কর্মক্ষেত্র য়ুরোক থেকে এত দূরে এশিয়ার একটা দেশের পাহাড় জঙ্গলে মাকর্সবাদ লেনিনবাদের নির্দিষ্ট প্রয়োগে মাও সে তুং একটি জাতির জন্মান্তর সৃষ্টি করলেন।
লিফলেটের শেষ কথা এই সংগ্রাম আমাদের একমাত্র পথনির্দেশিকা থোক। অনিমেষ এখন চোখ বন্ধ করলেই সেই জ্বলন্ত ঝুলনপুলের ওপর ছুটে যাওয়া অগ্নিপুরুষদের দেখতে পাচ্ছিল। এই পথ, একমাত্র পথ।