জুলিয়েনের ওপর সমস্ত ভার দিয়ে অনিমেষ ট্রেনে চাপল। রিজার্ভড বার্থ কিংবা সিট নয়, বারোয়ারী কামরায় উঠল সবার নজর এড়াবার জন্যই। শিলিগুড়ি থেকে অনেকেই যাচ্ছে বোলপুরে। যতটা সম্ভব পরস্পরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া, কারণ বোলপুরে মিটিং অত্যন্ত গোপনে হচ্ছে। প্রথমে বসার জাগয়া পায়নি অনিমেষ। শেষে একটা বাকের ওপরে বাবু হয়ে বসতে পারল একসময়। এবং এই ট্রেনের দুলুনিতে হঠাৎ মনে হল খুব ক্লান্ত লাগছে। এই দিনগুলোয় নিঃশ্বাস ফেলার সময় পায়নি। কিন্তু যত দ্রুত ভাল কাজ হয়েছে বলে বোধ হচ্ছিল ঠিক ততটা কি হয়েছে? এতদিন এখানে রইল অথচ সে স্বৰ্গছেঁড়া বা জলপাইগুড়ির বাড়িতে যায়নি। প্রথম দিকে এড়িয়ে ছিল, শেষের দিকে সত্যি আর সময় হয়নি। অনিমেষ খবর পেয়েছে, মহীতোষ জেনে গেছেন সে উত্তর বাংলায় আছে। পরিচিতজনেরা নিশ্চয়ই খবরটা পৌঁছে দিয়েছে। স্বৰ্গছেঁড়া ছাড়া সব জায়গাতেই সে প্রকাশ্যে ঘুরেছে অতএব তাকে দেখতে পাওয়া অস্বাভাবিক নয়। খবরটা ওঁকে বিহ্বল কর দেবে। নিশ্চয়ই ভেবে কোন কিনারা করে উঠতে পারবেন না। যারা খবর দিয়েছে তারা নিশ্চয়ই তার রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপের কথাও জানিয়েছে। বাবার জন্যে অনিমেষের খারাপ লাগছিল। বাধা লাইনে তাকে ঘিরে যে আশা উনি করেছিলেন সেটা পূর্ণ করা সম্ভব হল না। কি প্রতিক্রিয়া হতে পারে ওঁর! অনিমেষ এ নিয়ে ভেবেছে। প্রথমে নিশ্চয়ই খুব ক্ষিপ্ত হয়ে উঠবেন, তারপর একসময় নির্লিপ্ত হয়ে কোন সম্পর্ক না রাখার জন্যে ছোটমাকে হুকুম করবেন। হয়তো জ্যাঠামশাইকে দাদু যেভাবে ত্যাজ্যপুত্র করেছিলেন সেইভাবে তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবেন। অনিমেষ জানে সে গিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে বুঝিয়ে বললে তা মহীতোষের কাছে আরো দুঃখজনক হবে। বরং তার নিজের কথা লিখে সে বাবাকে একটা চিঠি দেবে। পাশাপাশ সরিৎশেখরের মুখ মনে পড়লে অনিমেষের কিন্তু অস্বস্তি হয় না। সে যে সব ছেড়েছুঁড়ে সক্রিয় রাজনীতির অনিশ্চয়তায় ঝাঁপিয়ে পড়েছে এই খবর মোটেই সরিৎশেখরকে চিন্তিত করবে না। একটা মানুষ দীর্ঘজীবন যাপন করে শেষ পর্যন্ত কি লাভ করে তা সরিৎশেখরকে চেয়ে কেউ বেশি জানে না।
অনিমেষ এই রাতের ট্রেনে একা একা যেতে যেতে শুধু একজনের জন্যে অস্বস্তি অনুভব করছিল। মাধবীলতা তাকে ভালবাসে এবং তার মূল্য দিতে একটুও পিছপা নয়। অথচ অনিমেষ যে রাজনীতি করে তার ছায়ায় সে পা রাখছে না। অনিমেষের সঙ্গে জড়িয়েও সে আড়ালে আড়ালে থাকছে। একটি মানুষকে নিঃশর্তে ভালবেসে মাধবীলতারা সারাজীবন অপেক্ষা করতে পারে। তার কাজকর্মের সঙ্গে নিজের মানসিক সংযোগ না থাকলেও তা নিয়ে বিরক্ত করে না। কিন্তু উত্তর বাংলার দিনরাত এই অনিশ্চিত উত্তেজনায় কাটিয়ে আজ অনিমেষের মনে হচ্ছিল মাধবীলতাকে মুক্তি দেওয়া দরকার। এভাবে সে যদি তার জন্যে অপেক্ষা করে তাহলে নিজেকে কেমন যেন ছোট মনে হয়। একজন আমার মুখ চেয়ে রয়েছে অথচ আমি তার জন্যে কিছুই করতে পারছি না এই বোধ তাকে কিছুতেই শান্তি দিচ্ছিল না। মাধবীলতাকে কখনো বিয়ে করতে পারবে কিনা তা সে জানে না। শুধু শুধু মেয়েটাকে কষ্ট দিয়ে কি লাভ? অনিমেষ জানে, ভাল করে বুঝিয়ে বললেও মাধবীলতার কোন পরিবর্তন হবে না। ও সেই দলের মেয়ে নয় যারা প্রেমিক অক্ষম বুঝলেই সুড় করে বাবার আশ্রয়ে ফিরে গিয়ে অন্য কোথাও বিয়ে করে সংসারী হবে; মুশকিলটা এখানেই। তবু, অনিমেষ মনে মনে ঠিক করল এবার সে সরাসরি মাধবীলতাকে নিষেধ করবে তার জন্যে অপেক্ষা করতে। প্রয়োজেনে কঠোর হতে হবে। অন্তত ওই নরম মনের মেয়েটাকে বাঁচাবার জন্যে তাকে রূঢ় ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া তার নিজেরও মুক্তি নেই।
অনিমেষ এই রাতের ট্রেনে একা একা যেতে যেতে শুধু একজনের জন্যে অস্বস্তি অনুভব করছিল। মাধবীলতা তাকে ভালবাসে এবং তার মূল্য দিতে একটুও পিছপা নয়। অথচ অনিমেষ যে রাজনীতি করে তার ছায়ায় সে পা রাখছে না। অনিমেষের সঙ্গে জড়িয়েও সে আড়ালে আড়ালে থাকছে। একটি মানুষকে নিঃশর্তে ভালবেসে মাধবীলতারা সারাজীবন অপেক্ষা করতে পারে। তার কাজকর্মের সঙ্গে নিজের মানসিক সংযোগ না থাকলেও তা নিয়ে বিরক্ত করে না। কিন্তু উত্তর বাংলার দিনরাত এই অনিশ্চিত উত্তেজনায় কাটিয়ে আজ অনিমেষের মনে হচ্ছিল মাধবীলতাকে মুক্তি দেওয়া দরকার। এভাবে সে যদি তার জন্যে অপেক্ষা করে তাহলে নিজেকে কেমন যেন ছোট মনে হয়। একজন আমার মুখ চেয়ে রয়েছে অথচ আমি তার জন্যে কিছুই করতে পারছি না এই বোধ তাকে কিছুতেই শান্তি দিচ্ছিল না। মাধবীলতাকে কখনো বিয়ে করতে পারবে কিনা তা সে জানে না। শুধু শুধু মেয়েটাকে কষ্ট দিয়ে কি লাভ? অনিমেষ জানে, ভাল করে বুঝিয়ে বললেও মাধবীলতার কোন পরিবর্তন হবে না। ও সেই দলের মেয়ে নয় যারা প্রেমিক অক্ষম বুঝলেই সুড় করে বাবার আশ্রয়ে ফিরে গিয়ে অন্য কোথাও বিয়ে করে সংসারী হবে; মুশকিলটা এখানেই। তবু, অনিমেষ মনে মনে ঠিক করল এবার সে সরাসরি মাধবীলতাকে নিষেধ করবে তার জন্যে অপেক্ষা করতে। প্রয়োজেনে কঠোর হতে হবে। অন্তত ওই নরম মনের মেয়েটাকে বাঁচাবার জন্যে তাকে রূঢ় ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া তার নিজেরও মুক্তি নেই।