What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected কালবেলা- সমরেশ মজুমদার (1 Viewer)

ঘুমন্ত একটা লোকবসতির কাছে এসে গাড়িটা থেমে যেতেই ওরা নেমে এল। ড্রাইভারের সঙ্গে একটাও কথা হয়নি ওদের। কয়েক সেকেন্ড থামার পর গাড়িটা সোজা বেরিয়ে গেল। এখানে ঠান্ডা খুব। বেশ হিম পড়ছে। আলোয়ান মুড়ি দেওয়া সত্ত্বেও একটা কাঁপুনি অনুভব করল অনিমেষ। বারীনদা দ্রুত পায়ে হাঁটছেন। সামনে অনেকগুলো কাঠের বাড়ি। এক নজরে অনিমেষ বুঝল টিম্বার মার্চেন্টদের এলাকা এটা।

পেছনের সারির একটা বাড়ির কাছাকাছি যেতেই হঠাৎ অন্ধকার ফুঁড়ে একটি লোক ওদের সামনে এসে দাঁড়াল, বারীনদা!

হ্যা ভাই।

আসুন।

লোকটি ওদের পথ দেখিয়ে একটা কাঠের সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় নিয়ে গেল। দরজাটা ভেজানো ছিল, খুলতেই আলো চোখে পড়ল। লোকটি বলল, বারীনদারা এসে গেছেন।

ওদের পেছন পেছন অনিমেষ ভেতরে ঢুকল। মাঝখানে একটা লণ্ঠন জ্বলছে। সেটাকে ঘিরে জনা দশেক মানুষ বসে আছেন। ওদের দেখে দুজন একসঙ্গে বলে উঠলেন, আসুন আসুন বারীনবাবু, উনি এসেছেন?

বারীন বললেন, হ্যাঁ, টেম্পোয় শুইয়ে নিয়ে এলাম। এই হল অনিমেষ মিত্র, জলপাইগুড়ির স্বৰ্গছেঁড়া চা বাগানের ছেলে, এখন কলকাতা থেকে পাঠানো হয়েছে।

অনিমেষ নমস্কার করল কিন্তু এ ধরনের সৌজন্যবোধ প্রত্যেকের কাছে পাওয়া গেল না। যে দুজন ভদ্রলোক প্রথমে কথা বলছিলেন তাদের একজন উঠে এসে ওর দুহাত জড়িয়ে ধরলেন, আসুন, আসুন ভাই। আমরা আপনার জন্যে এতক্ষণ অপেক্ষা করছিলাম। সিলিগুড়িতে পৌঁছে গেছেন সে খবর আমরা অবশ্য আগেই পেয়ে গেছি। ভদ্রলোক ওকে মাঝখানে নিয়ে গিয়ে বসালেন। অনিমেষ দেখল ঘরের সবাই খুব সতর্ক চোখে তাকে দেখছে। যে সব মুখ এখানে আছে তাদের সবাই বাঙালী নয়। বয়সের পার্থক্যটাও স্পষ্ট। পাশে যিনি বসেছেন তিনি বললেন, আপনার তো কলকাতা থেকে আসতে কোন আসুবিধে হয়নি! মিলিটারী কম্পার্টমেন্টে এসেছেন।

অনিমেষ অবাক হল। কলকাতা থেকে সে কিভাবে এসেছে এ খবরও এখানে পৌঁছে গেছে! গম্ভীর গলায় সে বলল, না, কোন অসুবিধা হয়নি। ভুল করে ওদের কামরায় উঠে পড়ে লাভই হয়েছে। তারপরই ওর নজরে পড়ল বারীন এখনও দাঁড়িয়ে আছেন। সে ডাকল, আপনি বলতে গিয়ে সামলে নিয়েই বলল, এসো বারীনদা, দাঁড়িয়ে আছ কেন?

মাথা নাড়লেন বারীন, দুর! ওখানে বসার যোগ্যতা আমার আছে নাকি! সাইনবোর্ড এঁকে খাই, তাই করতে দাও। তোমাকে পৌঁছে দেবার দায়িত্ত ছিল, দিলাম। আমি এবার চলি। তোমার থাকার ব্যবস্থা এখানেই হবে। তোমার জিনিসপত্র পৌঁছে যাবে ঠিক সময়ে। চলি ভাই, তোমরা কাজ করো। বারীন আর দাঁড়ালেন না। দ্রুত পায়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। অনিমেষ বিস্মিত চোখে ওঁর যাওয়া দেখল। বারীন তাহলে সক্রিয়ভাবে যোগ দেয়নি অথচ গোপনে তাদের সাহায্য করছে। লোকটির প্রতি ওর সমর্থন আরো বেড়ে গেল।
 
একটু পরেই কাজের কথা আরম্ভ হল। কথা বলতে বলতেই অনিমেষ এদের অনেকের নাম জেনে গেল। মোটামুটি উত্তর বাংলার বিভিন্ন জেলার সক্রিয় কর্মীরা আজকের সভায় উপস্থিত। আন্দোলনের প্রথম ধাপ কিভাবে সংগঠিত করা হবে, এ ব্যাপারে কলকাতার কি নির্দেশ তা নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা। হল। কৃষকদের সংগঠিত করতে হবে। এলাকায় এলাকায় আরো বেশী ক্যাডার ছড়িয়ে দিতে হবে। তারা কৃষকদের বোঝাবে। যখনই সবুজ সংকেত পাওয়া যাবে তখনই অ্যাকশন শুরু হবে। ওপাশে ফাঁসিদেওয়া, নকশারবাড়িতে ক্রমশ আবহাওয়া গরম হয়ে উঠেছে। একজন অবাঙালী মানুষের কথা অনিমেষকে ভীষণ আকৃষ্ট করল। তিনি বললেন, আমার ছেলেরা প্রস্তুত। কিন্তু সেটা শুধু আমার এলাকায়, অন্য এলাকাগুলো একসঙ্গে তৈরী না হলে কোন রকম প্রতিরোধ টিকবে না। প্রস্তুতির কাজ খুব দ্রুত এগিয়ে নেয়া উচিত।

অনিমেষ তাকে সমর্থন করে বলল, আমরা শুধু কৃষকদের কথাই বলছি। জমি দখলের ব্যাপারটা তাদের দিয়েই করতে হবে। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না উত্তর বাংলার গরীব মানুষের ষাট ভাগই কৃষিজীবী নয়। এতগুলো চা বাগানে ছড়িয়ে থাকা মদেসিয়া ওঁরাও মানুষগুলোকে সঙ্গে পাওয়া দরকার। সরাসরি পুলিশ কিংবা মিলিটারীদের সঙ্গে আমরা পেরে উঠব না। গেরিলা যুদ্ধই আমাদের একমাত্র রাস্তা। আর তা করতে হলে কৃষক ছাড়া অন্য শ্ৰমিকদেরও উৎসাহিত করা দরকার। আপনারা এইদিকটা দেখেছেন?

সবাই স্বীকার করল, তা দেখা হয়নি। বিভিন্ন চা বাগানের শ্রমিকরা কংগ্রেসী বা আর. এস. পি. যুনিয়নের সঙ্গে যুক্ত। সেখানে গিয়ে কাজ করার অসুবিধে আছে। তাছাড়া জমি দখল করে তার অধিকার নেওয়ার ব্যাপারে কৃষকদের যত সহজে উদ্বুদ্ধ করা যাবে শ্ৰতিকদের তো তা যাবে না। তাদের সামনে পাওয়ার প্রত্যাশা কিছু রাখা যাচ্ছে না।

অনিমেষ উত্তপ্ত হল, আপনারা এদেশের কম্যুনিস্ট পার্টিগুলোর লাইনে কথা বলছেন। সাধারন মানুষ কি শিশু যে তাদের ললিপপের লোভ দেখিয়ে কাজ করাবেন? সেটা পাওয়া হয়ে গেলেই আমাদের সম্পর্কে ওদের আগ্রহ মিটে যাবে। এভাবে দেশে বিপ্লব হবে না।

একজন বললেন, কিন্তু আমাদের নেতা বলছেন এই বিপ্লব হল কৃষি বিপ্লব। জোতদারের কাছ থেকে জমি জবরদখল করা নিয়ে তার সূত্রপাত হবে। অতএব সেই দিকটায়ই জোর দেওয়া হচ্ছে।

কিন্তু বিপ্লব তো শুধু কৃষকরাই করবে না, শ্রমিকরা যখন সংখ্যায় ভারী তখন তাদেরও দলে থাকা দরকার।

অনিমেষের এই কথাটাকে আবাঙ্গীলী ভদ্রলোক সমর্থন করলেন। উত্তর বাংলায় প্রাকৃতিক পরিবেশ এমন যে গেরিলা যুদ্ধের পক্ষে এর চেয়ে ভাল এলাকা পাওয়া যাবে না। চা বাগানগুলো বেশির ভাগই জঙ্গলে ঘেরা এবং একটার থেকে আর একটা বেশ দূরে দূরে। এই ব্যাপক এলাকায় মিলিটারীকে লুকিয়ে থেকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলা সম্ভব।

প্রায় চারটে অবধি আলোচনা চলল। অনিমেষের ওপর দায়িত্ব পড়ল চা বাগানগুলো দেখার। এটা যে হবে তা সে কলকাতা থেকেই অনুমান করেছিল। অবাঙালী ভদ্রলোক তাকে এ ব্যাপারে সাহায্য করবেন। খুব দ্রুত ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে হবে। যাতে চূড়ান্ত মুহূর্ত এলে আর কোন জড়তা না থাকে। যে যার কাজের এলাকা ভাগ করে নিল। শিলিগুড়ির এই তল্লাটা অনিমেষের পরিচিত নয়। সে তিস্তার অপর পারে চা বাগানগুলোর শ্রমিক সংগঠনের দায়িত্ব নিল।

এই সিদ্ধান্তের পর আর এখানে থাকার কোন মানে হয় না। অনিমেষ ভোর হওয়ামাত্র ট্রাক ধরে শিলিগুড়িতে চলে এল। সেই অবাঙালী ভদ্রলোক ওর সঙ্গে এলেন। অনিমেষ জানতে পারল, প্রচুর অস্ত্র আসছে সীমান্ত পেরিয়ে। পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধের সময় যে সব অস্ত্র চোরাই পথে এসেছিল সেগুলো সংগ্রহ করা হচ্ছে। এর জন্য অর্থ দরকার। স্বদেশীরা তো বলপ্রয়োগ করতো, এক্ষেত্রে তাই করতে হবে। এইভাবে যদি কিছুদিন চলে তাহলে পুলিশের মোকাবিলা করতে কোন অসুবিধা হবে। অবশ্য কৃষকরা তীর ধনুক নিয়েই মরিয়া হতে পারে। অনিমেষ ভাবছিল, এসবই ঠিক, অস্ত্র প্রচুর থাকতে পারে, কিন্তু সেগুলো যারা ব্যবহার করবে সেই মানুষগুলোকে অবিলম্বে তৈরী করা দরকার।
 
মাধবীলতা,
তোমার নাম লিখতে গিয়ে অদ্ভুত এক অনুভূতি হল। আদ্যক্ষরটি তোমার মিলেমিশে এমন জড়িয়ে আছে, কি জানি তাই তোমাকে এত ভাল লাগে হয়তো! তোমাকে এই প্রথম চিঠি লিখলাম লিখতে গিয়ে টের পেলাম প্রতিটি শব্দ লেখার সময় আমি তোমার স্পর্শ পাচ্ছি।

আমি তোমাকে চিঠি লিখছি স্বৰ্গছেঁড়া চা বাগান থেকে আট মাইল দূরে একটা গ্রামে বসে। অবশ্য গ্রাম বললেও বোধহয় জায়গাটাকে বেশি সম্মান দেওয়া হবে। স্বৰ্গছেঁড়ার এত কাছে আছি কিন্তু এখনও ছোটমার সঙ্গে দেখা করার সময় পাইনি। কথাটা পড়লেই তোমার ভ্রূ কুঁচকে যাবে জানি, কিন্তু বিশ্বাস করো, এখানে এসে নিঃশ্বাস ফেলার সময় পাচ্ছি না। তবে দেখা করার সময় না পেলও তাঁর দেখা আমি পেয়েছি। সেদিন গাড়িতে ময়নাগুড়ি থেকে ফিরছিলাম। ডুডুয়া নদী পার হয়ে আংরাভাসার ওপর দিয়ে রাস্তাটা বাঁক নিয়ে যখন চা-বাগানের শরীর জড়িয়ে আমার বুকের মধ্যে মিশে থাকা কোয়ার্টারগুলোর সামনে দিয়ে চলে আসছে তখন দেখলাম ছোটমা আমাদের সেই বাড়িটার সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে দূরের দিকে তাকিয়ে কি যেন দেখছে। এক পলক মাত্র, তার মধ্যেই গাড়িটা হুস করে বেরিয়ে এল। দূরত্বটা এমন যে চিৎকার করলেও বোধহয় শোনা যেত না।

এই প্রথম উত্তরবাংলায় এসে নিজের অস্তিত্বকে গোপন রাখতে হচ্ছে। জলপাইগুড়ির এপাশে এখনও পুলিশী তৎপরতা শুরু হয়নি। নিশ্চিন্তে কাজ করা যাচ্ছে। তবে চারধারে এত সাপের মুখ যে ছোবল আসতে কতক্ষণ! সতর্ক থাকাই মঙ্গল।

এখানে এসে বেশ কিছুদিন রয়েছি। নিজের সম্পর্কে একটা গোপন সত্য আবিষ্কার করেছি। জানো, ছোটবেলায় আমি খুব রোম্যান্টিক ছিলাম। ভীষণ ভাবপ্রবণ। এই স্বৰ্গছেঁড়াকে আমি ভীষণ ভালবাসতাম। এর গাছপালা এমন কি বাতাসকেও আমি অনুভব করতাম। মনে আছে প্রথম যখন দাদুর সঙ্গে এই জায়গা ছেড়ে যাই তখন রুমালে স্বৰ্গছেঁড়ার মাটি বেঁধে নিয়ে গিয়েছিলাম। জলপাইগুড়ির বাড়ির উঠোনে সেই মাটি রেখে রোজ দেখতাম আর ভাবতাম স্বৰ্গছেঁড়ায় আছি। কিংবা স্বৰ্গছেঁড়ার সেই কাঁঠাল গাছ, তালগাছ, চা-বাগানের মধ্যে ঘুঘুর ডাক, যা কিনা পৃথিবীর যে কোন ঐশ্বর্যের বিনিময়েও ছাড়তে কষ্ট হত, এখানে এসে দেখলাম তারা সবাই একই রকম আছে, ঠিক যেমনটি রেখে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমি আমার সেই মনটাকে কিংবা চোখটাকে হারিয়ে ফেলছি। আমি এখন সেইসব ভাবপ্রবণতার কথা ভেবে হাসি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, সমস্যার সঙ্গে সঙ্গে জীবনটা বড় দ্রুত পালটে যায়। দৃষ্টিও। আমার সেই আমিটা সম্পর্কে শুধু মমতাই দেখানো যায় কেননা বাস্তবে সে অচল। যে চা-বাগানের গলিতে দুপুর বিকেলের চুপচাপ পাখির আওয়াজ শুনে কাটাতে ভাল লাগত সেটা ছিল নিতান্তই অর্থহীন। এখন সেই শূন্যগর্ভ ভাললাগা নয়, কাজের গতি যদি একবার রক্তে মেশে তখন নতুন চোখ খুলে যায়, কিংবা পুরনো চোখ অন্ধ হয়ে যায়। না হলে কাজ হয় না।

জানো, আমি আর একটা জিনিস ক্রমশ টের পাচ্ছি। মনে হচ্ছে আমি খুব নির্লিপ্ত হয়ে যাচ্ছি। কোন কিছুই আমাকে তেমন স্পর্শ করে না। যেমন ধরো, এই স্বর্গছেঁড়া, এককালে জননী এবং জন্মভূমি স্বর্গের চেয়ে বড় বলে যে ভাবালুতায় ভুগতাম তা আর নেই। এতবার ওর ওপর দিয়ে যাওয়া আসা করছি কিন্তু বুকের মধ্যে কোন কাঁপুনি হয় না। চা-বাগানের গলিকে গেরিলা যুদ্ধের পক্ষে নিরাপদ জায়গা বলে ভাবছি। আংরাভাসা নদীর ধার দিয়ে সে খুঁটমারীর জঙ্গল লাল সূর্যের বলটাকে মাথায় নিয়ে সারাদিন দাঁড়িয়ে থাকে, তার মত গোপন শেল্টার আর কিছু নেই। মিটিং বলো, গোপন গেরিলা ট্রেনিং বলো এই জঙ্গল মায়ের মত আশ্রয় দেবে।
 
ছোটমা কিংবা আমার বাবা শ্রীযুক্ত মহীতোষ মিত্র মাত্র কয়েক মাইল দূরে আছেন। দশ মিনিটেই পৌঁছে যেতে পারি। পুলিশ আমার অস্তিত্ব জেনে যেতে পারে এই আশংকার কথা ছেড়ে দিলেও দেখা করতেই হবে এমন টান বোধ করি না। খুব খারাপ শোনাচ্ছে কথাটা কিন্তু সত্যি কথা এটাই। ছোটমা কিংবা বাবা তো সে অর্থে আমার বাল্যকালে দূরের মানুষ ছিলেন, জলপাইগুড়ির শহর থেকে আমার বর্তমান ডেরার অবস্থান ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যেই। কই, একদিনও তো দাদু ও পিসীমাকে দেখতে যাবার কথা আমার মনে পড়ল না। এই দুটি মানুষ তো আমার এই শরীরকে তিল তিল করে বড় হতে সাহায্য করেছেন। এইসব আত্মীয়স্বজন, চেনা জায়গা কিংবা তার মত অন্তরঙ্গ ছবি সম্পর্কে অদ্ভুত উদাসীনতা আজকাল আমকে নির্লিপ্ত করেছে।

মাধবীলতা, কথাটা কি তোমার সম্পর্কেও খাটে না? তুমি আমাকে ভালবেসেছ। আমি জানি তুমি কতখানি আন্তরিক। এই আমার জন্যেই তুমি একটানে সমস্ত পারিবারিক সম্পর্ক ছিন্ন করে বেরিয়ে এসেছ, হোস্টেলে রয়েছ। কিন্তু কি আশায়? পৃথিবীর যে কোন যুবতীর মত তোমার বাসনা হওয়া উচিত একটি সাজানো সুন্দর গৃহের। আমাকে নিয়ে। কিন্তু প্রতিটি দিন আসছে আর আমি সেই গৃহ থেকে একটু একটু করে দূরে সরে যাচ্ছি। তোমাকে ভালবেসেছি অথচ তোমাকে শান্তি দেবার বদলে অথৈ উদ্বেগে রেখে এসেছি। কাউকে ভালবাসলে এভাবে দূরে চলে যাওয়া যায়? তাহলে ভালবাসতে গেলামই বা কেন?

এইসব ভেবেচিন্তে মনে হয় আমি বোধহয় এখন স্বার্থপর হয়ে গেছি। স্ব অর্থে পর। জীবন একটা বিছিন্ন দ্বীপের মত চেহারা নিয়েছে। আর এত বুঝেও এ থেকে বেরিয়ে আসার অভ্যেসটাই নষ্ট হয়ে গেছে।

ভীষণ একা লাগছিল, তোমাকে চিঠি লিখলাম তাই। এত বড় চিঠি কখনও লিখিনি। আমার সব সময় ভয় যে আমাকে ভালবেসেছ, শুধু এই কারনে তুমি আরো বড় বিপদে না পড়। হয়তো সত্যি যদি পড় তখনও আমি কিছুই করতে পারব না। সময় আমাদের সবকটা আঙ্গুল ক্ষইয়ে দিয়েছে। আমরা কারো হাত জড়িয়ে ধরতে পারি না, শুধু ঠেকাই মাত্র।

আবার কখন লিখব জানি না। যদি বেঁচে থাকি তাহলে বর্ধমান স্টেশনে দেখা করব পৌষমেলার দিন। যদি দ্যাখো নির্দিষ্ট সময়ে আমি এলাম না হলে তুমি কখনো বোলপুরে যাবে না।

জানি, নিজের নিরাপত্তার জন্যেই এত বিশদ ভাবে লেখা আমার অন্যায়য় হল। হয়তো নিয়ম ভাঙলাম। এবং জেনেশুনেই।

তাই এই চিঠি জমিয়ে রেখ না।
—তোমার অনিমেষ
পুন। এখনও তোমার দেওয়া টাকা শেষ হয়নি।

একটানে চিটিটা শেষ করল অনিমেষ। হাত টনটন করছিল। এখন রাত গভীর। শুধু টি-উ-প টি-উ-প একটি শব্দ কোন পাখির গলায় সমানে বেজে যাচ্ছে। চিঠিটা ভাঁজ করে বুকপকেটে রাখতে না রাখতেই দরজায় শব্দ হল। ভেজানো দরজা খুলে একটি কৃষ্ণকায় যুবক ঘরে ঢুকে পরিষ্কার হাসল। লণ্ঠনের আলোয় তার চকচকে দাঁত দেখতে পেল অনিমেষ। যুবকটির নাম সিরিল ওঁরাও। শুকনা থেকে আসার সময় সেই অবাঙালী ভদ্রলোকের পরিচয়ে অনিমেষ এর সন্ধান পেয়েছে। আপাতত এরই আশ্রয়ে। অত্যন্ত কাজের ছেলে। সিরিল বলল, চলুন।
 
অনিমেষ বাইরে বেরিয়ে এল। খুব ঠান্ডা পড়েছে। বারীনকে আলোয়ান ফেরত দেওয়া হয়নি কিন্তু তাতেও শীত মানছে না। সোয়েটার তলায় আছে। অনিমেষ দেখল আশেপাশে কোথাও আলো নেই। বাইরে ঘরের দেওয়ালে দুটো সাইকেল হেলান দিয়ে রয়েছে। সাইকেলে কাঁচা রাস্তা মিনিট তিনেক গেলেই ফুরিয়ে গেল। খুঁটিমারীর জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে সুন্দর পিচের রাস্তা যেটা নাথুয়া থেকে এসেছে সেখানে সাইকের চালনা খুব স্বচ্ছন্দের। রাস্তাটা একটু ঢালু চাকা গড়গড়িয়ে ছুটে যাচ্ছে। আর এই গতির জন্যেই হাওয়ার কামড়ে কাঁপুনি আসছিল শরীরে। দাঁতে দাঁতে ধরে রাখতে পারছিল না অনিমেষ। রাত্তিরের জঙ্গলে একধরনের অচেনা শব্দ হয়। ওরা দুজনে নিঃশব্দে সেই শব্দ শুনতে শুনতে প্যাডেল ঘোরাচ্ছিল। হঠাৎ সিরিল আচমকা ব্রেক কষে দাঁড়িয়ে পড়ল। অনিমেষ এগিয়ে এসেছিল কিছুটা, ওকে দাঁড়াতে দেখে অবাক হয়ে বেশ কিছুটা দূরে এসে সাইকেল থামাল। ততক্ষণে সিরিল তার কাছে চলে এসেছে। তারার আলোয় ওর মুখটাকে বেশ উত্তেজিত দেখাচ্ছিল। চাপা গলায় সে বলল, সামনের রাস্তা দিয়ে যাওয়া যাবে না।

অনিমেষ কুঁচকে সামনের পথটাকে দেখল। রাত্রেরও নিজস্ব একটা আলো থাকে। চাঁদ না থাকলে সেই আলো আরো মোহিনী হয়। অনিমেষ দেখল পথটা ওপাশের জঙ্গলের আড়ালে চলে গেছে কিন্তু কোন বিপদ রয়েছে বলে বোঝা যাচ্ছে না। সিরিল নীচু গলায় বলল, হাতি বেরিয়েছে।

হাতি?

হ্যাঁ। কিছুদিন হল ভুটান থেকে একদল এই অঞ্চলে নেমে এসেছে। অত্যন্ত মারকুটে এই দলটা। মনে হচ্ছে সামনের মেছুয়া পুলের মুখটায় ওরা রয়েছে।

কি করে বুঝলেন? অনিমেষের কাছে পুরো ব্যাপারটাই কেমন ভৌতিক বলে মনে হচ্ছিল। চোখে দেখা যাচ্ছে না, এমন কি কোন শব্দও নেই।

ওই দিকে তাকান। সিরিল আঙুল তুলে দেখাল। সদ্য ত্যাগ করা বিষ্ঠা রয়েছে রাস্তার একপাশে। তার আয়তন এবং পরিমাণ দেখা বুঝতে অসুবিধা হয় না যে এই পথ দিয়ে হাতি গেছে। আমরা আর একটু হলে ওদের সামনে গিয়ে পড়তাম। তাহলে আর দেখতে হতো না। খুব জোর বেঁচে গেছি।

তাহলে যাব কি ভাবে! আর কোন রাস্তা আছে?

আছে। হাতি বেরিয়েছে বলেই সেই রাস্তায় যাওয়া যায়। তার আগে চলুন সাবধনে গিয়ে সন্দেহটাকে মিটিয়ে আসি। সিরিলের সঙ্গে খুব আস্তে আস্তে সাইকেল চালাতে লাগল অনিমেষ। যে কোন মুহূর্তে দিক পরিবর্তনের জন্যে দুজনেই তৈরী। রাস্তার বাঁকে এসে ওরা আরো ধীর হল। তারপরই দুজনে এসসঙ্গে দাঁড়িয়ে গেল।

সামনেই মেছুয়া পুল। পুলটার গায়ে ছোট ছোট কালো ঢিলা নড়ছে। অন্তত গোটা কুড়ি হবে। অনিমেষের মনে হল চাপ চাপ অন্ধকার রাস্তাটাকে ঢেকে দিয়েছে। নিঃশ্বব্দে সরে এল ওরা। একটু পিছু হটে জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে পড়ল। জিপ যাওয়া-আসার জন্যে ফরেস্ট ডিপার্টমেন্ট থেকে এই কাঁচা পথগুলো তৈরী করা হয়েছে। দুপাশে ঘন জঙ্গলের গায়ের গন্ধ টের পাচ্ছিল অনিমেষ। অবিরাম শিশির পড়ছে এখানে। সিরিল, অন্য সময় হলে ভয় পেতাম এই রাস্তায় যেতে। কিন্তু হাতি বেরিয়েছে যখন তখন মাইন দুয়েকের মধ্যে কোন বন্যজন্তু থাকবে না। একটু ঘুর হবে তবু এছাড়া উপায় কি? বন্যজন্তু! এখন এখনও বাঘ আছে নাকি?

মাঝে মাঝে আসে যায়। কখন থাকে বলা যায় না।

অনিমেষ প্রায় আধঘণ্টা প্যাটেল ঘুরিয়ে জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এল। সামনে ধানক্ষেত। সাইকেল চালানো যাবে না, ওরা হাতে করে হেঁটে এল। তারপরেই নদী। মেছুয়াপুলের তলা দিয়ে যেটা বয়ে এসেছ সেটা এখানে বেশ চওরা। সেদিকে তাকিয়ে সিরিল বলল, এক কাজ করুন, আপনি এখানে থাকুন, আমি ওঁকে ডেকে নিয়ে আসছি। সাইকেল মাটিতে রেখে সে প্যান্ট গোটাচ্ছিল।

অনিমেষ বলল, আমার যেতে কোন অসুবিধে হবে না। চলুন। না।

ঝুঁকি নিয়ে কি লাভ?

ঝুঁকি? আপনি কি আমাকে খুব বাবু ভাবছেন? একটু উষ্ণ হল অনিমেষ।

না, না। আমি আপনার কথা বলছি না। দুজনে যদি যাই তাহলে এসে হয়তো দেখবো এই সাইকেল দুটোই নেই। কিছু তো বিশ্বাস নেই। যত রাতই হোক কেউ হয়তো কোন কারণে বাইরে এসে দেখল লোকজন নেই আর এই দুটো পড়ে আছে, সে কি হাত গুটিয়ে থাকবে?

তাহলে এদের নিয়ে গেলেই হয়!

পারবেন না। স্রোত কিরকম দেখতে পাচ্ছেন? আমি আসছি। সিরিল জলের নেমে গেল। স্রোত যে খুব জোরদার তা বোঝা যাচ্ছিল। একেকবার হোঁচট খেয়ে অনেকটা পিছু হটে ওকে ওপারে উঠতে হল। তারপর প্রায় দৌড়েই মিলিয়ে গেল সে।
 
মিনিট পনের অপেক্ষা করতে হল অনিমেষকে। ঠান্ডায় জমে যাওয়ার অবস্থা তার। হাত পা নেড়ে শরীর গরম করার চেষ্টা করে যাচ্ছে সে সমানে। দৃশ্যটা ভাবতেই হাসি পেল। এই নির্জন রাতের ফাঁকা মাঠে একটা লোক পাগলের মত নাচছে একা একা। কেউ দেখছে না জানলে আমাদের লজ্জাবোধ অনেক কমে যায়।

আবছা অন্ধকারে অনিমেষ ওদের দেখতে পেল। খুব দ্রুত দুটো মানুষ আসছে। ওরা অনেকটা এগিয়ে জলে নেমে স্রোতের টানে টানে নদী পার হয়ে এপারে এল। সাইকেল ছেড়ে অনিমেষ এগেয়ে গিয়ে দেখল ঠান্ডা জল থেকে উঠে এসে ওরা ঠকঠক করে কাঁপছে। সেই অবস্থায় প্যান্ট ঠিক করতে করতে সিরিল বলল, বেশি দেরি হয়নি তো?

না, না, ঠিক আছে।

এঁকে আপনি চেনেন?

অনিমেষ দেখল ওর সঙ্গের মানুষটি মুখ টিপে হাসছেন। বয়স হয়েছে কিন্তু শরীর খুব মজবুত। কিছুক্ষণ মুখের দিকে তাকিয়ে অনিমেষ হাত বাড়িয়ে দিল, কেমন আছেন?

চলছে। আমাকে চিনতে পেরেছেন মনে হচ্ছে?

নিশ্চয়ই।

আমি কিন্তু খবরটা পেয়ে খুব অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। সন্দেহ ছিল আপনি হয়তো চিনতে পারবেন না। অনেক বছর আগে সামান্য সময়ের জন্য আমাদের দেখা হয়েছিল।

হ্যাঁ, সেদিন আমার আত্মরক্ষার জন্যে চা-বাগানের ভেতরে গিয়ে লুকিয়েছিলাম। কিন্তু সিরিল একবারও আপনার নাম বলেনি।

এটুকু সাসপেন্সে রাখা হয়েছিল। দেখছিলাম আপনার স্মৃতি কেমন? আপনি এখানে আছেন মহীবাবু জানেন না নিশ্চয়ই।

না।

জুলিয়েন বললেন, চলুন, এই ঠান্ডায় না দাঁড়িয়ে কোথাও বসে কথা বলা যাক। ঠান্ডাটা খুব পড়েছে আজ।

এখানে বসার জায়গা আছে?

আছে। আমার সঙ্গে আসুন।

জুলিয়েনের পেছনে ওরা সাইকেল নিয়ে হাঁটছিল। যেতে যেতে জুলিয়েন বললেন, আপনি এখানে এসেছেন খবর পেয়েছিলাম। কিন্তু দিনদুপুরে আপনার সঙ্গে দেখা করতে গেলে আপনার গোপনীয়তা থাকত না। তাই এই ব্যবস্থা।

আপনি একটু বেশী ভয় পেয়েছেন মনে হচ্ছে।

মোটেই না। আমার ওপর ভাল নজর রাখা হয়েছে।

কথা বলতে বলতে ওরা একটা বসতি এলাকায় চলে এসেছিল। জঙ্গলের পাশে কয়েকঘর মানুষের অস্থায়ী ডেরা এটা। তারই একটির দরজায় গিয়ে জুলিয়েন টোকা দিলেন। কোন সাড়া এল না। কয়েকবার নিষ্ফল চেষ্টা করে বলপ্রয়োগ করলেন জুলিয়েন। মাটির ঘর, ছ্যাঁচার বেড়ার দরজা অল্পেই খুলে গেল। জুলিয়েন মদেসিয়াদের ভাষায় জিজ্ঞাসা করলেন, বুধুয়া আছিস?

এবার একটি স্ত্রীকণ্ঠ কথা বলল। ঘুম জড়ানো বিরক্তি। জুলিয়েন নিজের পরিচয় দিতেই একটা টিবড়ি জ্বলে উঠল। জুলিয়েন আবার প্রশ্ন করতে জানা গেল বুধুয়া ঘরে নেই। জুলিয়েন ওদের ভেতরে আসতে ইঙ্গিত করলেন। অনিমেষ সাইকেল বাইরে রাখছিল কিন্তু সিরিল তাকে নিষেধ করল। বাইরে থেকে দেখলে যে কেউ সন্দেহ করবে। অনিমেষ ভেতর ঢুকে দেখল ঘরটা নেহাত ছোট নয়। বাইরের আকাশের নীচ থেকে এ ঘরে এসে খুব আরাম লাগল তার। অনিমেষ দেখল এ ঘরের বাসিন্দাদের অবস্থা অত্যন্ত জীর্ণ। আসবাব বলে কিছু নেই। বাঁশের খাটিয়ার ওপর একটা তেলচিরকুটে বিছানায় নিশ্চয়ই ওই স্ত্রীলোকটা এতক্ষণ শুয়েছিল। একটি কালো শিশু এখনো সেখানে ঘুমিয়ে। স্ত্রীলোকটি মধ্যবয়সী এবং বা চোখের ওপর বড় আব আছে। ওদের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকাচ্ছিল সে।

জুলিয়েন বললেন, তুই শুয়ে পড়। আমরা এখানে বসে একটু কথা বলে চলে যাব।

স্ত্রীলোকটি ঘাড় নেড়ে আবার খাটিয়ায় ফিরে গেল। তারপর সেখান থেকে একটা ময়লা কাপড় তুলে এনে মাটিতে বিছিয়ে দিল।

জুলিয়েন জিজ্ঞাসা করলেন, বুধুয়া কি এখন রোজ রাত্রে বের হচ্ছে?

নীরবে ঘাড় নেড়ে স্ত্রীলোকটি খাটিয়ায় ফিরে যেতেই বাচ্চাটি ককিয়ে উঠল। আর সঙ্গে সঙ্গে স্ত্রীলোকটি বুকের আঁচল সরিয়ে তার মুখে স্তন গুঁজে দিল কোলে তুলে নিয়ে। চোখ সরিয়ে নিতে গিয়ে অনিমেষের খেয়াল হল এই শীতেও ওদের শরীরে কোন গরম জামাকাপড় নেই।
 
ওরা তিনজনে কাপড়টার ওপর বসতেই টের পেল মাটি থেকে ঠান্ডা উঠছে। জুলিয়েন বললেন, এই পরিবারটি চা-বাগানের কর্মী ছিল। বুধুয়া লোকটা খুব রগচটা। বছর তিনেক আগে স্ট্রাইকের সময় ম্যানেজারের কুঠিতে ঢিল ছোঁড়ার অপরাধে ওর চাকরি যায়।

অনিমেষ জিজ্ঞাসা করল, প্রমাণ করল কি করে?

খুব সহজেই। গুদাম থেকে যখন কাজ করে বের হচ্ছে তখন ওর থলিতে কিছু চা প্যাকেট ভরে দেওয়া হয়েছিল। বেচারা তা জানত না। গেটে ধরা পড়ে চুরির অপরাধেই চাকরি গেল। আসল রাগটা এখানে অন্যভাবে মেটানো হয়।

য়ুনিয়ন থেকে কিছু করা হয়নি?

না। আমরা আজ এই য়ুনিয়ন থেকে সরে দাঁড়িয়েছি। আমাদের জন্যে ওরা ফালতু ঝামেলায় জড়াবে কেন? আর প্রমাণ তো হাতেনাতেই পেয়েছিল। ছমাসের মধ্যে ওকে কোয়র্টার ছেড়ে এখানে চলে আসতে হল। ব্যবস্থা তো দেখতে পাচ্ছেন। কাজকর্ম পাচ্ছে না অথচ পেট মানবে না। রোজ রাত্রে শেষ পর্যন্ত সহজ উপায়টা বেছে নিয়েছে।

মানে?

চুরি। যেদিন ধরা পড়বে এরা ভেসে যাবে।

আপনারা কিছু করছেন না কেন?

জুলিয়েন বড় বড় চোখ মেলে অনিমেষকে দেখলেন। তারপর বললেন, আমাদের হাতপাগুলো খুব ছোট অনিমেষবাবু। আর এরকম বুধুয়া তো সারা দেশে ছড়িয়ে যাচ্ছে। আপনি কজনের জন্যে করতে পারেন?

এইসময় সিরিল কথা বলল, জুলিয়েন এখন সাসপেনশনে আছে।

অনিমেষ অবাক হল। এতক্ষণ লোকটির সঙ্গে কথা বলে এই বিপদের একটুও আঁচ পায়নি সে। স্বৰ্গছেঁড়ার শ্রমিকনেতা জুলিয়েনের সেই চেহারাটা এখন সে স্পষ্ট মনে করতে পারে। কুলিদের বিক্ষোভ থেকে বাঁচতে ছোটমা আর বাবার সঙ্গে সে চা-বাগানের ভেতরে আশ্রয় নিয়েছিল। সেখান থেকে বেরিয়ে এই জুলিয়েনের মুখোমুখি হয়েছিল। খুব ভদ্র ব্যবহার করেছিল সেদিন জুলিয়েন। মিশনারীর স্কুলে পড়ে আসা এই মদেসিয়া যুবকটির প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল সেদিন অনিমেষ। তখন তো সবাই এঁর কথা মানত। আর আজ তো একদম অন্য কথা শুনছে সে।

জুলিয়েন বললেন, কলকাতার খবর বলুন।

অনিমেষ একটু একটু করে প্রস্তাবিত দেশব্যাপী আন্দোলনের কথা বলল জুলিয়েনকে। এবার সংগ্রাম মুখোমুখি। সৈনিক চাই। ভারতবর্ষের মানুষের মেরুদন্ডটি ফিরিয়ে আনার জন্য একটা ব্যাপক চেষ্টা করতে হবে। জুলিয়েন বললেন, এসব কথা আমরা জানি অনিমেষবাবু। কিন্তু এখানে অবিলম্বে সংগঠন করা দরকার। আপনারা কবে নাগাদ মুখোমুখি হবার কথা ভাবছেন?

সামনের মাষে বোলপুর থেকে ঘুরে এসে বলতে পারব।

জুলিয়েন বললেন, ব্যাপারটা এখন আর গোপন নেই। তবে মজার ব্যাপার হল, যে শুনছে সে বিশ্বাস করছে না। পুলিশকে আমার ভয় নেই। কিন্তু সক্রিয় হয়ে কেউ কিছু করলে সর্ব প্রথম বাধা দেবে অন্য পার্টির লোকজন। বিপদটা এখানে। আমরা যদি সবাই এক সঙ্গে কাজ করতে পারতাম তাহলে একদিনে সারা দেশের বুর্জোয়া ক্যাপিটালিস্টদের সমুদ্রে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া যেত। কিন্তু তা হওয়ার নয়।

অনিমেষ বলল, আপনার সঙ্গে আমার নিয়মিত যোগাযোগ থাকা দরকার। কিভাবে হবে?

জুলিয়েন বললেন, এই ঘরে। এখানে দেখা হওয়া দুজনের পক্ষেই মঙ্গল।

অনিমেষ বলল, প্রত্যেকটা চা বাগানে স্কোয়াড তৈরী করতে হবে। খুব নির্ভরযোগ্য কিছু ছেলেকে ব্যাপারটা বোঝাতে হবে।

জুলিয়েন বললেন, কী ধরনের অ্যাকশন এখানে করার কথা ভাবছেন?

দেখুন, কৃষকরা জোতদারের কাছ থেকে জমি দখল করবে, এটা করতে তারা স্বভাবতই উত্তেজিত হবে। কিন্তু আমরা শ্রমিকদের বলতে পারি না যে তোমরা চা বাগান দখল কর। ফ্যাক্টরি দখল করে সাতদিনও তারা চালাতে পারবে না। তাদের ব্যক্তিগতভাবে উত্তেজিত করে কিছু করা যাচ্ছে না। কিন্তু এমন কাজ করতে হবে যাতে সাধারণ মানুষ চমকে যায়। প্রত্যেকের অন্ধ বিশ্বাসের ভিত যেন নড়ে যায়। কাজগুলো করতে হবে জনসাধারণের স্বার্থবিরোধী মানুষের বিপক্ষে। ফলে পুলিশ যদি অ্যাকশনে নামে তাহলে আমরা সাধারণ মানুষের সমর্থন পাব। এক সময় তারা এগিয়ে আসবে পাশে এসে দাঁড়াবে।
 
সিরিল হঠাৎ উত্তেজিত গলায় বলল, তাহলে পানিরামের গাদ-লুঠ করলে হয়। শালা রক্তচোষা। এই বাগানের অনেক মানুষ ওর কাছে ধার নিয়ে মাথা বিকিয়ে আছে সুদ দিতে দিতে সবার মাইনে খতম হয়ে যায়।

অনিমেষ বলল, পানিরামের তো ভাটিখানা ছিল।

জুলিয়েন বললেন, এখনও আছে। টাকার পাহাড়ে বসে আছে লোকটা। এই চা বাগানের মানুষগুলোকে কিনে রেখেছে।

ওর গুদামে টাকা থাকে?

থাকে। সোমবার সকালে ব্যাঙ্কে যায় ওর গাড়ি। আমাদের এখন প্রচুর টাকার দরকার।

জুলিয়েন বললেন, সিরিল ঠিক বলেছে। সাধারণ মানুষের ধারনা পানিরাম শয়তানের চেয়ে শক্তিশালী। পুলিশ ওর কেনা। সেই পানিরামকে যদি লুঠ করা যায় তাহলে লোক ধাক্কা খাবে। সাহস পাবে।

অনিমেষ বলল, কিন্তু সাধারণ মানুষকে বুঝতে দিতে হবে এটা কজন সাধারণ ডাকাতের কাজ নয়। সারা দেশ জুড়ে আগামীকালের বিপ্লবের পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ মানুষের এটা প্রতিবাদ। অ্যাকশনের সময় এ-সব কথা সেখানে লিখে আসতে হবে।

কিন্তু পানিরামের বন্দুক আছে। সিরিল বলল, ও তো বাধা দেবেই।

বাধা দিলে জোর খাটাতে হবে। অনিমেষ খুব শান্ত গলায় বলল, যদি কোন উপায় না থাকে তাহলে পানিরামকে সরিয়ে ফেলতে হবে।

সঙ্গে সঙ্গে জুলিয়েন আর সিরিল অনিমেষের দিকে তাকাল।

জুলিয়েন সম্মতির মাথা নাড়লেন। তারপর বললেন, ঠিকই বলেছেন। একজন রক্তচোষাকে মেরে ফেললে আরো দশটা ভয় পেয়ে যাবে। এই লোকটাকে চা বাগানের সমস্ত শ্রমিক দুবেলা মেরে ফেলার কথা ভাবে। কিন্তু আমাদের এই গরীব মানুসের বুকে অসহায়তা ছাড়া কিছু নেই। ওরা শুধু কল্পনা করতেই পারে। কিন্তু কেউ যদি ওদের করতে না পারা কাজটা করে দেখায় তাহলে সে ওদের আপনজন হয়ে যাবেই। আপনি ঠিক বলেছেন।

অনিমেষ জুলিয়েনের এই ব্যাখ্যায় খুব খুশি হল। সে বলল, কিন্তু পানিরামের মত মানুষ খুন হলে যে পুলিশী তৎপরতা শুরু হবে তা সামলাতে আমাদের প্রস্তুত থাকে হবে।

জুলিয়েন হেসে দুটো হাত ছড়িয়ে দিলেন, আমাদের চারপাশে এত জঙ্গল। পুলিশের ক্ষমতা কি খুঁজে বের করে সেখান থেকে। আর থানাগুলো এত দূরে দূরে যে পুলিশ আসার আগেই আমরা খবর পেয়ে যাব। কিন্তু আসল ব্যাপারটার কথা কি ভাবছেন?

অনিমেষ বলল, কি ব্যপার? অ্যাকশন স্কোয়াড তৈরী করা?

জুলিয়েন মাথা নাড়লেন, না। এতে আমাদের খুব কষ্ট হবে না। কারণ, এই সমাজব্যবস্থার প্রতি বিরক্ত ছেলের অভাব নেই এদেশে। আর যৌবনে মানুষ এরকম কাজ করার জন্যে সব সময় উত্তেজিত হয়। আমি সে-কথা ভাবছি না। আমি অস্ত্রের কথা ভাবছি। এ-সব কাজ তো আর ছুরি কাটারি নিয়ে হয় না। আমাদে প্রচুর অস্ত্র দরকার।

অনিমেষ বলল, ব্যাপারটা নিয়ে ভাবনা-চিন্তা হচ্ছে। কিন্তু অস্ত্র তো আর এমনি পাওয়া যাবে না। সেগুলো কিনতে হবে আর আর তার জন্যে টাকা দরকার। পানিরামের কাছ থেকে মেরে বা ভয় দেখিয়ে সেই টাকা আমাদের পেতে হবে। একটা পানিরাম খুন হলে দেখবেন অন্য পানিরামরা ভয়েই টাকা দিয়ে দেবে।

সিরিল বলল, আর একটা সহজ উপায় আছে।

জুলিয়েন জিজ্ঞাসা করলেন, কি উপায়?
 
সব চা বাগানের সাহেব কন্ট্রাকটারবাবু আর বড় ব্যবসায়ীদের কাছে বন্দুক পিস্তল রাইফেল আছে আমরা যদি সেগুলো গায়ের জোরে ছিনিয়ে নিয়ে আসি, তাহলে আমদের অনেক অস্ত্র হয়ে যাবে। সিরিল একটা উপায় বার করতে পেরেছে বলে খুশিতে হাসল।

অনিমেষ বলল, মন্দ বলেননি। প্রথম দিকটায় আমরা এইভাবে চালাতে পারি। তাহলে ডুয়ার্সে কার কার কাছে আগ্নেয়াস্ত্রে আছে তার একটা লিস্ট করা দরকার। তাই না?

খুব সহজ। সদরের সরকারি অফিসে ওই লিস্ট আছে।

অনিমেষ বলল, তাহলে আমরা তৈরী হই। তবে আমি বোলপুর থেকে ফিরে এসে কাজ আরম্ভ করলেই ভাল হয়।

জুলিয়েন বললেন, ঠিক আছে। এখন আপনি কি করবেন?

আপনার ডুয়ার্সে যেতে হবে। ওদিকে আপনার জানাশোনা কেউ আছে?

নিশ্চয়ই। আপনি কবে যাবেন?

ধরুন কালকেই।

জুলিয়েন কিছুক্ষণ চিন্তা করলেন। তারপর হেসে বললেন, আপনার সাহস আছে। এইভাবে একা একা ঘুরছেন, যদি সঠিক মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ না হয় তাহলে বিপদে পড়তে পারেন। ঠিক আছে, আমি আপনার সঙ্গে যাব।

আপনি যাবেন? অনিমেষ বিস্মিত, বাড়ির লোকজন?

ছাড়তেই হবে যখন তখন একটু আগেই ছাড়ি। অবশ্য এখনই কাউকে কিছু বলছি না। জুলিয়েন কথা শেষ করতেই অনিমেষ হাত বাড়াল। ওরা যখন খুব আন্তরিক করমর্দন করছে ঠিক তখনই দরজাটা ধীরে ধীরে ফাঁক হল। ওরা তিনজনেই ঘাড় ঘুরাতেই একটি মুখ উঁকি দিয়েই সরে যাচ্ছিল। জুলিয়েন ডাকল, বুধুয়া!

কিছুক্ষণ চুপচাপ, তারপর একটি মানুষ আরশোলার মত হেঁটে এল ভেতরে। অনিমেষ দেখল লোকটার কপাল থেকে রক্ত বের হচ্ছে, হাতে একটা বোচকা। এই লোকটাই চুরি করতে গিয়েছিল।

জিজ্ঞাসা করলেন, মাথা ফাটল কি করে?

বুধুয়া মুখ নীচু করল। জুলিয়েন উঠে ক্ষতটা পরীক্ষা করে বললেন, তেমন কিছু নয়। বিশল্যকরণী পাতার রস লাগিয়ে নে! আর এই ব্যবসা ছাড়তে হবে।

খুব নিরীহ গলায় লোকটা বলল, খাব কী?

জুলিয়েন এবং অনিমেষ পরস্পরের দিকে তাকাল। সিরিল জিজ্ঞাসা করল, আজ কার সর্বনাশ করলে?

সঙ্গে সঙ্গে হাসল বুধুয়া, সর্বনাশ আর কোথায় করতে পারলাম। পানিরামের ঘরে গিয়েছিলাম আজ। দুটো থালা নিয়ে এসেছি।

নামটা উচ্চারণ করা মাত্র অনিমেষরা চমকে উঠল।

ওরা খোলা আকাশের নীচে বেরিয়ে এল। কিছুক্ষণ হেঁটে জুলিয়েন বিদায় নেবার জন্য দাঁড়ালেন। অনিমেষ বলল, এ-সব চুরি ছ্যাঁচড়ামিতে ওদের গা সয়ে গেছে, এবার আমাদের ডাকাতি করতে হবে।
 
খুব দ্রুত কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। এতটা হবে অনিমেষ ভাবেনি। যারা এর আগে কখনও রাজনীতির সঙ্গে সামান্যও যুক্ত ছিল না তারাও দলে আসতে শুরু করেছ। এক ধরনের ছেলে থাকে পরিবারে তারা ঠিক আমল পায় না নানান রকম ব্যর্থতার জন্যে, কিন্তু তাদের মধ্যে একটা অ্যাডভেঞ্চার-প্রিয় মন আছে। সেই মনই তাদের টেনে আনছে। আগে হয় অনিমেষ এ নিয়ে সূক্ষ্মবিচারে বসত, এরকম উচ্ছ্বাসকেই হাউই বরে বাতিল করত। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে অনেকে সময় মরা মরা বলতে বলতেও তো রাম শব্দটা বেরিয়ে পড়ে। অ্যাডভেঞ্চার করা হোক কিংবা তাৎক্ষণিক উচ্ছাসই হোক, এই করতে সুবিধে হচ্ছে। দীর্ঘকাল এদিকে য়ুনিয়ন করায় ডুয়ার্সের চা-বাগানগুলোতে জুলিয়েন বেশ পরিচিত। চা শিল্পের সঙ্গে যারা জড়িত, হপ্তার বা মাসের মাইনেতে যাদের সংসার চলে তাদের জুলিয়েন সরিয়ে রাখছিলেন। বলেছিলেন, এই সব মানুষ সুখে নেই কিন্তু নিশ্চিত আয় থেকে সরে আসার ঝুঁকি কেউ নেবে না। বরং চা বাগানে যারা নানান করণে অবস্থিত তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা দরকার।

বাঙালীদের সম্পর্কে ইতিমধ্যেই অনিমেষের একধরনের বিরক্তি এসে গেছে। তারা যেন নেতা হতেই জন্মেছেন। দলে কজন এসেছেন তারা শুধু নানান ধরনের যুক্তি তুলে জ্ঞান দিতে চান। কাজ করবার খুব উদ্যম তাঁদের মধ্যে দেখা যায় না। বরং দলের মধ্যে একটা উপদল গঠন করার ব্যাপারে বেশ তৎপরতা চোখে পড়ে।

শিলিগুড়ির সঙ্গে অনিমেষের নিয়মিত যোগাযোগ আছে। প্রায়ই তাকে যেতে হচ্ছে সেখানে। বড় বড় নেতাদের সঙ্গে আলাপ হয়েছে। এদিকে নির্বাচন এগিয়ে এসেছে। বিভিন্ন পার্টি থেকে প্রচার শুরু করার আয়োজন চলছে। অনিমেষদের দল নির্বাচন বয়কট করার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। নির্বাচন বুর্জোয়া ফ্যাসীবাদীদের একটা নতুন ধরনের খেলনা মাত্র কিংবা এমন একটা মাদকদ্রব্য যা দিয়ে দেশবাসীকে পাঁচ বছরের জন্যে বুঁদ করে রেখে দেওয়া যায়। অবশ্য নির্বাচনকে প্রতিরোধ করার কোন নির্দেশ এখন পর্যন্ত পার্টি থেকে আসেনি।

এই যে প্রস্তুতি চলছে সেটা আর এখন গোপন নেই। বিভিন্ন পার্টি থেকে তাদের হঠকারী উগ্রপন্থী ইত্যাদি বিশেষণ দেওয়া হলেও সরাসরি সংঘর্ষে এমনও ওরা লিপ্ত হয়নি। কিন্তু হাওয়া গরম হয়ে উঠছে দ্রুত। অনিমেষের আশঙ্কা, পুলিশের আগে তাদের হয়তো অন্য পার্টিগুলোর সঙ্গে লড়তে হবে। সংগঠন যত জোরদার হচ্ছে অন্য পার্টিগুলো ততই নিজেদের অস্তিত্ব বিপন্ন বোধ করছে। এই সঙ্গে আর একটা সমস্যা মাথা চাড়া দিচ্ছে। যে সব ছেলেকে ওরা দলে টানছে তাদের কোন কাজ না দিয়ে কতদিন আর চুপচাপ বসিয়ে রাখা যায়। মার্কসবাদের ব্যাখ্যা বা গেরিলাযুদ্ধের প্রকরণ শোনার মত মানসিক ধৈর্য এদের নেই। জোর করে বেশিদিন ধরে রাখা সম্ভব হবে না। শুধু ডুয়ার্স সারা পশ্চিমবাংলায় পার্টিতে এই ধরনের হুলিগান ঢুকছে। নেতাদের বক্তব্য, ভাঙচুর পাথরের টুকরো গড়াতে গড়াতেই মসৃণ হয়। কিন্তু এদের সামলে রাখা যে খুব মুশকিল তা অনিমেষ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।

কিন্তু যে জিনিসটা অনিমেষকে ভীষণ বিচলিত করছিল তা হলে বিভিন্ন জায়গায় ছোট ছোট দল গঠন করার মধ্যেই তাদের সময় ব্যয় হয়ে যাচ্ছিল। সাধারণ মানুষের সঙ্গে এখন অবধি কোন যোগাযোগ করা যায়নি। দেশে বিপ্লব দরকার, কেন দরকার কিভাবে সেটা সম্ভব এইসব কথা যাদের বোঝাতে হবে তাদের কাছে এখনও পৌঁছানো যায়নি। তার একটা বড় কারণ যে এতে হিতে বিপরীত হবে পারে। সরাসরি প্রচার করতে গেলে পলিটিক্যাল পার্টিগুলো বাধা দেবে। তাছাড়া সরকারের বিরুদ্ধে কিছু করা যায় তা সাধারণ মানুষ বিশ্বাসই করবে না। এবং এই সরকার তো তারে চেনাশোনা মানুষই চালাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে লড়ার ব্যাপারে খুব একটা মানসিক জোর পাবে বলে মনে হয় না। লোকাল কমিটির বক্তব্য, স্রোত যদি জোরদার হয় তাহলে জল নিজেকে ধরে রাখতে পারে না। এখনই তাড়াহুড়ো করার বোকামি না করে উপযুক্ত সময়ের জন্যে অপেক্ষা করা দরকার।

বিপ্লব হলে সাধারণ মানুষ নিজের স্বার্থেই পথে নামবে। হয়তো ঠিক, তবু অনিমেষের অস্বস্তিটা যাচ্ছিল না।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top