অনিমেষদের পার্টি থেকে যে ভদ্রলোক প্রার্থী হয়েছেন তিনি মুসলমান। জনসংখ্যার হিসেবে ত্রিশ শতাংশ হিন্দু হলেও উভয়পক্ষই হিন্দু প্রার্থী দিতে সাহস করেননি। কংগ্রেসের ক্ষেত্রে সে প্রশ্ন ওঠে না। মালদার একজন সম্ভ্রান্ত বংশীয় মুসলমান দীর্ঘকাল পশ্চিম দিনাজপুরের এই প্রান্তদেশ থেকে সম্মানের সঙ্গে নির্বাচিত হয়ে আসছিলেন। এবার তার ছেলে দাঁড়িয়েছেন। গতবার কম্যুনিস্ট পার্টি থেকে যিনি দাঁড়িয়েছিলেন তিনি হিন্দু ছিলেন বলেই কম ভোট পেয়েছিলেন–এমন কথা শোনা যায়। ব্যাপারটা চিন্তা করতেই ধাক্কা খেল অনিমেষ। তার মানে কোন মতবাদ বা আদর্শ এখানে কাজ করছে না? মানুষগুলোর ধর্মান্ধতার সুযোগ নিয়ে প্রার্থী নির্বাচন করা হচ্ছে। তাহলে কংগ্রেসের সঙ্গে কমুনিস্ট পার্টির কি পার্থক্য থাকল? কথাটা সৌমেনবাবুকে বলতেই তিনি কিছুক্ষণ অনিমেষের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলেন, মাও সে তুং–এর একটা থিওরী হল, দুপা এগিয়ে যেতে মাঝে মাঝে এক পা পিছিয়েও যেতে হয়।
এখন বর্সার চলে যাওয়ার সময়। তবু উত্তর বাংলায় বর্ষা কি সহজে যেতে চায়। হুড়মুড় করে কিছুক্ষণ জল ঝরিয়ে আকাশ বেশ কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে থাকে। ভোর হতেই দাসপাড়া থেকে ওরা বেরিয়ে পড়ে গ্রামগুলোতে চলে যেত। তখন মাঠের কাজ ছিল না। গ্রামগুলোতে সকাল হতো দেরীতে, অদ্ভুত ঢিমে চালে ওরা দিন শুরু করে। এভাবে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায় গ্রামের মানুষ দেখা অনিমেমের একটা নেশার মত হয়ে গেল। এক–একটা গ্রাম যেন একটি বাড়িকে কেন্দ্র করেই বেঁচে আছে। জমিদাররা আর বাংলাদেশে নেই, কথাটা কলকাতায় বসে শোনা ছিল। কিন্তু এখানে এসে মনে হল কথাটা একদম মিথ্যে। জমিদারের চেহারা পালটে গেছে কিন্তু চরিত্র একই রকম আছে। জোতদারের সঙ্গে তার মৌলিক পার্থক্য নেই। সেই জোতদারের বাড়িতে আগে যেতে হত ওদের।
মোটামুটি পাকা বাড়ি, টিনের চাল। জোতদার ওদের দেখলে ব্যস্ত হয়ে বেরিয়ে আসতেন, আসনে আসেন বাবুরা, কি সৌভাগ্য, এ গ্রামের কি সৌভাগ্য যে আপনাদের পদধূলি পড়ল। বসতে আজ্ঞা হোক, বসতে আজ্ঞা হোক।
তিন-চারটে মাদুর পাতাই থাকে বোধ হয় সবসময় তাঁর দাওয়ায়। অনিমেষরা বসতেই ভদ্রলোক বললেন, বলুন, কি সেবা করতে পারি?
অনিমেষরা তিনজন এই দলে ছিল। সৌমেনবাবুরা অন্য গ্রামে গেছেন। ভদ্রলোকের মুখের ভাবভঙ্গি অনিমেষের ভালো লাগছিল না। এর একটা কারণ এখানে আসতে যে ঘরগুলো ওর চোখে পড়েছিল তার জরাজীর্ণ দশার তুলনায় এই গৃহটি প্রাসাদ বলে মনে হচ্ছে। শোষক এবং শোষিতের পার্থক্যটা বড় স্পষ্ট। গ্রামে এসে বক্তৃতা করার আগে এই ভদ্রলোকের সঙ্গে ভাব জমালে অধিকতর কাজ হবে বলা হয়েছিল।
অনিমেষ বলল, আপনি তো জানেন, নির্বাচন এসে পড়েছে। আমরা নির্বাচনের কাজেই এই গ্রামে এসেছি।
ভদ্রলোক বললেন, শহরে গিয়ে শুনেছিলাম বটে। তা কোন পার্টির মানুষ আপনারা? আগে তো কখনো দেখিনি
অনিমেষ বলল, আমরা মহম্মদ চৌধুরীর পক্ষে প্রচার করতে এসেছি।
চৌধুরী? অ! তাহলে আপনারা গিয়ে হলেন কম্যুনিস্ট। হুম্। এবার কম্যুনিস্টরা খুব চাল দিয়েছে, ভাল ভাল। চৌধুরীকে দাঁড় করিয়ে নবাব সাহেবের ছেলেকে বিপদে ফেলেছে জব্বর। তা আপনাদের পরিচয় জানলাম না তো। শহরেও মনে হয় দেখিনি।
এখন বর্সার চলে যাওয়ার সময়। তবু উত্তর বাংলায় বর্ষা কি সহজে যেতে চায়। হুড়মুড় করে কিছুক্ষণ জল ঝরিয়ে আকাশ বেশ কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে থাকে। ভোর হতেই দাসপাড়া থেকে ওরা বেরিয়ে পড়ে গ্রামগুলোতে চলে যেত। তখন মাঠের কাজ ছিল না। গ্রামগুলোতে সকাল হতো দেরীতে, অদ্ভুত ঢিমে চালে ওরা দিন শুরু করে। এভাবে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায় গ্রামের মানুষ দেখা অনিমেমের একটা নেশার মত হয়ে গেল। এক–একটা গ্রাম যেন একটি বাড়িকে কেন্দ্র করেই বেঁচে আছে। জমিদাররা আর বাংলাদেশে নেই, কথাটা কলকাতায় বসে শোনা ছিল। কিন্তু এখানে এসে মনে হল কথাটা একদম মিথ্যে। জমিদারের চেহারা পালটে গেছে কিন্তু চরিত্র একই রকম আছে। জোতদারের সঙ্গে তার মৌলিক পার্থক্য নেই। সেই জোতদারের বাড়িতে আগে যেতে হত ওদের।
মোটামুটি পাকা বাড়ি, টিনের চাল। জোতদার ওদের দেখলে ব্যস্ত হয়ে বেরিয়ে আসতেন, আসনে আসেন বাবুরা, কি সৌভাগ্য, এ গ্রামের কি সৌভাগ্য যে আপনাদের পদধূলি পড়ল। বসতে আজ্ঞা হোক, বসতে আজ্ঞা হোক।
তিন-চারটে মাদুর পাতাই থাকে বোধ হয় সবসময় তাঁর দাওয়ায়। অনিমেষরা বসতেই ভদ্রলোক বললেন, বলুন, কি সেবা করতে পারি?
অনিমেষরা তিনজন এই দলে ছিল। সৌমেনবাবুরা অন্য গ্রামে গেছেন। ভদ্রলোকের মুখের ভাবভঙ্গি অনিমেষের ভালো লাগছিল না। এর একটা কারণ এখানে আসতে যে ঘরগুলো ওর চোখে পড়েছিল তার জরাজীর্ণ দশার তুলনায় এই গৃহটি প্রাসাদ বলে মনে হচ্ছে। শোষক এবং শোষিতের পার্থক্যটা বড় স্পষ্ট। গ্রামে এসে বক্তৃতা করার আগে এই ভদ্রলোকের সঙ্গে ভাব জমালে অধিকতর কাজ হবে বলা হয়েছিল।
অনিমেষ বলল, আপনি তো জানেন, নির্বাচন এসে পড়েছে। আমরা নির্বাচনের কাজেই এই গ্রামে এসেছি।
ভদ্রলোক বললেন, শহরে গিয়ে শুনেছিলাম বটে। তা কোন পার্টির মানুষ আপনারা? আগে তো কখনো দেখিনি
অনিমেষ বলল, আমরা মহম্মদ চৌধুরীর পক্ষে প্রচার করতে এসেছি।
চৌধুরী? অ! তাহলে আপনারা গিয়ে হলেন কম্যুনিস্ট। হুম্। এবার কম্যুনিস্টরা খুব চাল দিয়েছে, ভাল ভাল। চৌধুরীকে দাঁড় করিয়ে নবাব সাহেবের ছেলেকে বিপদে ফেলেছে জব্বর। তা আপনাদের পরিচয় জানলাম না তো। শহরেও মনে হয় দেখিনি।