What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected কালবেলা- সমরেশ মজুমদার (1 Viewer)

অনিমেষের মনে হল ওর বুকের মধ্যে একটা লোহার বল আচমকা লাফিয়ে শ্বাস রুদ্ধ কর দিয়েছে। নিজের চোখকে বিশ্বাস হচ্ছে না তার। কোন রকমে শরীরটাকে টেনে নিয়ে গেল সে কোণায় রকের দিকে। বৃদ্ধ নিজেকে গুটিয়ে থামের গায়ে ঠেস দিয়ে চোখ বন্ধ করে ছিলেন। তাঁর পাশে দুটো বড় ঝোলা, ময়লা ধুতির ওপর একটা সুতির কোট যার অবস্থা মোটেই সুবিধের নয়। মাথা পরিষ্কার করে কামানো বলে মুখের চেহারাটা একদম বদলে গেছে। অনিমেষ কিছুতেই মেলাতে পারছিল না। কোন রকমে সে উচ্চারণ করল, আপনি?।

বৃদ্ধ চোখ মেললেন, ঘোলাটে চোখ। দৃষ্টি যে স্বাভাবিক নয় বোঝা যায় এবং শরীরের কাঁপুনিটা স্পষ্ট। অনিমেষ একটু সচেতন হয়ে ঝুঁকে প্রণাম করতে যেতেই একটা হাত ইঙ্গিত তাকে থামিয়ে দিল, না, অসুস্থ মানুষকে প্রণাম করতে নেই।

অনিমেষ সোজা হয়ে দাঁড়াতেই শরীর শিহরিত হল। যেন অকস্মাৎ কেউ একটানে সমস্ত ছেলেবেলাটাকে তার সামনে হাজির করল। এই শরীরের সঙ্গে কোন মিল নেই, কিন্তু ওই কথাগুলো শুধু সরিৎশেখরই অমন ভঙ্গিতে বলতে পারেন। কিন্তু দাদুর এ কি চেহারা হয়েছে। গত দু-তিন সপ্তাহ সে জলপাইগুড়ি কিংবা স্বৰ্গছেঁড়া থেকে কোন চিঠিপত্র পায়নি। কিন্তু সরিৎশেখরের মত মানুষ দুটো ঝোলা নিয়ে মাথা কামিয়ে এমন নোংরা পোশাকে ঘুরে বেড়াবেন–কল্পনাতেও আসে না। অনেকগুলো প্রশ্ন এখন জিভে কিন্তু অনিমেষ নিজেকে সামলে নিল। সে গম্ভীর গলায় বলল, আপনি হাঁটতে পারবেন?

আমি তো হেঁটেই এলাম, সরিৎশেখর জানালেন।

অনিমেষ জানে শত অসুস্থ হলেও দাদু তা নিয়ে ইনিয়ে-বিনিয়ে কিছু বলার মানুষ নন। সে দুটো ঝোলা কাঁধে নিয়ে দাদুর হাত ধরল, উঠুন!

সরিৎশেখর ক্লান্ত চোখে তাকালেন, তোমার ঘর কদ্দূর?

ততক্ষণে সরিৎশেখরের শরীরের কম্পন অনিমেষ প্রবলভাবে অনুভব করছে। এ অবস্থায় ওঁকে তিনতলায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে? কিন্তু এছাড়া এ হোস্টেলে অন্য ব্যবস্থা নেই।

অনিমেষ বলল, তিনতলায়। আপনি আস্তে আস্তে উঠুন

হাতের মুঠোয় উত্তাপ লাগছে, সরিৎশেখরের জ্বর এসেছে অবশ্যই। এই শরীর নিয়ে অনিমেষের হোস্টেল খুঁজে এলেন কি করে সেটাই বিস্ময়ের কথা। উনি আসবেন এ খবর কেউ তাকে জানায়নি । অনিমেষের মনে হল এমন কিছু ব্যাপার ঘটেছে যার জন্যে সরিৎশেখর চুপচাপ বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন। কিন্তু মাথা ন্যাড়া কেন? আর যে লোকটি কলকাতায় দীর্ঘকাল আসেনি তার পক্ষে তার হাঁটা সম্ভব নয়। সেই লম্বা-চওড়া শরীরটা এখন কেমন গুটিয়ে ছোট হয়ে এসেছে। যাকে একদিন বিশাল মনে হত এখন তিনি অনিমেষের কাঁধের নীচে মুখ নামিয়েছেন। অদ্ভুত একটা কষ্ট হচ্ছিল অনিমেষের। হোস্টেলের যারা নীচে এসেছিল বিভিন্ন দরকারে তারা অবাক হয়ে ওদের দেখছে।

একটি ছেলে এগিয়ে এসে বলল, অনিমেষবাবু ওঁকে কি আপনার ঘরে নিয়ে যেতে চাইছেন?

অনিমেষ দেখল ওর পাশের ঘরের ছেলে তমাল খালি গায়ে লুঙ্গি পরে দাঁড়িয়ে। সে বলল, হ্যাঁ।

কিন্তু উনি কি ওপরে উঠতে পারবেন?

সঙ্গে সঙ্গে অনিমেষ সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল। সে ঝোলা দুটো তমালের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, এটা ধরুন, প্লিজ।

তমাল ঝোলা দুটো নিতেই সে একটু ঝুঁকে সরিৎশেখরকে দুহাতে তুলে নিল। ব্যাপারটা এমন ঘটল যে সরিৎশেখর চমকে উঠে প্রতিবাদ করলেন, আরে, তুমি ভেবেছ কি? আমি ঠিক যেতে পারব।

হাঁটতে হাঁটতে অনিমেষ বলল, পারতেন, কিন্তু এভাবে যাওয়া আরো সহজ হবে। আপনি চুপ করে শুয়ে থাকুন।

অতবড় মানুষটাকে কোলে করে তুলতে অনিমেষের নিঃশ্বাস অস্বাভাবিক হয়ে আসছিল। এককালের দশাসই চেহারাটা এখন যতই গুটিয়ে যাক তবু তার ওজন কম নয়। সিঁড়ি ভেঙে ওঠার সময় অনিমেষ নিজের পায়ে আবার সেই যন্ত্রণা বোধ করল। মাঝে মাঝে জিরিয়ে নেওয়ার ইচ্ছে হচ্ছে খুব কিন্তু সেটা করতে গেলে দাদুর কাছে ধরা পড়ে যাওয়ার আশংকা আছে। সেটা সে কোনমতেই হতে দিতে রাজী নয়।
 
সরিৎশেখর নাতির হাতে নিজেকে ছেড়ে দিয়েছিলেন। তাঁর বোধ ক্রমশ আচ্ছন্ন হয়ে আসছিল। অনেক পথ এই শরীর নিয়ে ভ্রমণের ফলে তার চিন্তাশক্তি শিথিল হয়ে পড়ছিল। অনিমেষের হাতে তিনি নিরাপদ এই বোধটুকু তাকে আরো নিশ্চিত করে ফেলায় তিনি বললেন, একটা কাল ছিল যখন তুমি আমার কোলে ধামসাতে, আমার কাঁধে চেপে ঘুরে বেড়াতে, আর এমন একটা কাল এল যখন আমি তোমার কোলে চেপে ওপরে উঠেছি। বিধাতার কি নিয়ম, সব শোধবোধ হয়ে গেল।

নিজের বিছানায় দাদুকে শুইয়ে না দেওয়া পর্যন্ত অনিমেষের পক্ষে কথা বলা সম্ভব ছিল না। হালকা হলে মনে হল, ওর বুক টনটন করছে, ঘন ঘন বাতাস নিচ্ছিল সে। নিতে গিয়ে লক্ষ্য করল সমস্ত ঘর অগোছালো, ময়লা জামা-প্যান্ট থেকে শুরু করে কাগজপত্র এলোমেলো ছড়ানো। এ রকম ঘরে সরিৎশেখর কখনো বাস করেননি। এবং চেতনা ঠিক হলেই তিনি অনিমেষকে অবশ্যই এর জন্যে ভর্ৎসনা করবেন। সেই অবস্থাতেই দ্রুত হাতে ঘরটাকে ঠিক করে ফেলল অনিমেষ। সরিৎশেখর বোধ হয় দীর্ঘদিন পর বিছানা পেয়ে আরাম বোধ করছেন। কারণ বালিশে মাথা রাখা মাত্রই তিনি নেতিয়ে গেলেন। চোখ বন্ধ, ঘুম ঘুম ভাবটা বোঝা যায়। কপালে হাত রেখে অনিমেষ এবার নার্ভাস হয়ে পড়ল। থার্মোমিটার সঙ্গে নেই কিন্তু জ্বরটা যে বেশ জোরালো তা বুঝতে অসুবিধে হয় না। তমাল ঝোলা দুটো টেবিলে রেখে চুপচাপ দেখছিল। এবার জিজ্ঞাসা করল, জ্বর নাকি?

হ্যাঁ। দুই তিন হতে পারে। অনিমেষ অন্যমনস্ক হয়ে বলল।

আপনার কেউ হন উনি?

মাথা নাড়ল অনিমেষ, হ্যাঁ আমার ঠাকুর্দা।

তমাল ব্যস্ত হল, তাহলে আর দেরী করা ঠিক নয়। আপনি ডাক্তার ডেকে আনুন। এই হোস্টেলেও একজন বাঁধাধরা ডাক্তার আছেন। অমনোযোগী হওয়ার ফলে তার সম্পর্কেও ছেলেদের বিস্তর নালিশ । কিন্তু বিনাপয়সায় দেখানো যায় বলে ব্যবস্থাটা সকলে মেনে নিয়েছে। তাঁকে খবর দিলে আসতে কত বেলা করবেন সে জানে। তার চেয়ে হোস্টেলের পাশেই গ্রে স্ট্রীটের মোড়ে একজন ডাক্তারকে প্রায়ই সে লক্ষ্য করে থাকে, তাকেই ডাকলে ভাল হয়। ভদ্রলোকের চেম্বারে বেশ ভিড় হয় যখন তখন তিনি নিশ্চয়ই ভাল ডাক্তার। কিন্তু দাদুকে এ অবস্থায় একা ফেলে যেতে মন চাইছে না। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে তমাল বলল, আমি আছি, আপনি তাড়াতাড়ি করুন।

কৃতজ্ঞ হল অনিমেষ। মানুষকে বিচার করে একটা সিদ্ধান্তে আসা কখনই উচিত নয়। একটা মানুষের অনেকগুলো মুখ থাকে আর প্রতিটি স্বতন্ত্র ধরনের। একটিকে দেখে অন্যটিকে ধারণা করতে গেলে ঠকতে হয়। তমাল ডিগবয়ের ছেলে। অবস্থাপন্ন। পাউডারসেন্ট ছাড়া কোনদিন ওকে বেরুতে দেখেনি অনিমেষ। হোস্টেলের চাকরবাকরদের টাকা ছড়িয়ে হাতে রেখেছে। ও রকম বড়লোকের দুলালদের আদৌ পছন্দ করত না অনিমেষ। তাই যত সম্ভব ওকে এড়িয়ে যেত। প্রায় সমবয়সী হলেও তমাল তাকে বাবু বলে সম্বোধন করে ডাকটা কানে লাগে, বোধ হয় নৈকট্য-স্থাপন করতে না চাওয়ার এটা একটা চেষ্টা। অথচ আজ দাদুকে নিয়ে সে যখন বিব্ৰত তখন অন্য ছেলেদের আগে তমলই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল।
 
ডাক্তার সেনের চেম্বারে এই সকালে তিন চারজন লোক প্রতীক্ষায় বসে। ভদ্রলোক এখনও আসেননি। অনিমেষ অধৈর্য হয়ে পড়ছিল। হঠাৎ ওর খেয়াল হল তার নতুন হোস্টেলের ঠিকানায় দাদু পেলেন কি করে। মহীতোষ জানেন খুবই সম্প্রতি এবং জেনেই তিনি সরিৎশেখরকে জানিয়ে দেবেন এতটা ভাবা যায় না। ইদানিং দাদুকে সে অনিয়মিত চিঠি দিচ্ছিল। কেন আগের হোস্টেল ছাড়তে হল সে বিষয় সবিস্তারে জানিয়ে চিঠি দেবে দেবে করছিল কিন্তু দেওয়া হয়ে ওঠেনি। মহীতোষের পাঠানো আগের মাসের টাকাটা পুরোন হোস্টেলের ঠিকানায় এসেছে। তাহলে? দাদু কি ওখানে গিয়েছিলেন? তার নতুন ঠিকানা ওখান থেকে সংগ্রহ করে এখানে এসেছেন? অনিমেষের খুব অস্বস্তি হচ্ছিল।

এর মধ্যে চেম্বারে রোগীদের উপস্থিতি বেড়ে গেছে। খবরের কাগজের পাতা এবং বিভিন্ন জার্নাল অনেকের হাতে হাতে। কিছু পরে এক প্রৌঢ় ভদ্রলোককে ঢুকতে দেখে সবাই ব্যস্ত হয়ে উঠল। তিনি কোনদিকে না তাকিয়ে ভেতরের ঘরে ঢুকে গেলেন।

অনিমেষ উঠে তার সঙ্গে কথা বলার জন্যে পা বাড়াতেই একটা লোক বাধা দিল, অপেক্ষা করুন, উনি শ্লিপ অনুযায়ী ডাকবেন।

শ্লিপ! অনিমেষের খেয়াল হল রোগীরা এসেই নিজের নাম লেখা কাগজ এই লোকটির হাতে ধরিয়ে দিচ্ছিল। সেটার যে এতখানি প্রয়োজন তখন খেয়াল করেনি। তিন-চার জনের পরেই সে এখানে এসেছে, নতুন করে শ্লিপ দিতে গেলে অনেক পিছিয়ে যেতে হবে।

ব্যাপারটা বলতেই লোকটি জানাল, কিন্তু আমি কি করব বলুন। কেউ যাতে রাগ না করতে পারে তাই ডাক্তারবাবু এ নিয়ম করেছেন।

কিন্তু আপনি তো দেখেছেন যে আমি অনেক আগে এসেছি।

সে কথা অন্য লোক মানতে চাইবে কেন?

বেশ, আমি তো রোগ দেখাতে আসিনি। ওঁকে আপনি বলুন আমি শুধু একটা কথা বলব। অনিমেষ আবেদন করল।

না মশাই, ওসব ভাঁওতা দিয়ে ঢুকে অনেকেই রোগের কথা বলে। লোকটা সামনে থেকে সরে গিয়ে শ্লিপ সাজাতে লাগল।

সঙ্গে সঙ্গে মাথার রক্ত চড়ে গেল অনিমেষের। দ্রুত পা চালিয়ে ছোট ঘরটার ভেতরে ঢুকে পড়ল সে। পেছনের লোকটা প্রথমে হকচকিয়ে গিয়ে শেষতক সামলে নিয়ে হাঁ হাঁ করে ছুটে এল। অনিমেষ ব্যাপারটাকে আমল না দিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখল প্রৌঢ় ভদ্রলোক ধুপকাঠি জ্বেলে চোখ বন্ধ করে কিছু আওড়াচ্ছেন। ব্যবসা শুরু করার আগে ঠাকুরপ্রণাম বোধ হয়।

অনিমেষ একটু অপেক্ষা করে বলল, মাফ করবেন, আমি তিনজনের পর এসেছি কিন্তু শ্লিপ দেওয়ার নিয়মটা জানতাম না। অথচ একজন ডাক্তারের প্রয়োজন খুবই। তাই আইনটা ভাঙতে হল।

ভদ্রলোক বিস্মিত হয়ে একবার দেখে শেষে মাথা নেড়ে লোকটিকে জিজ্ঞাসা করলেন, ব্যাপার কি? লোকটি বলতে যাবার আগেই অনিমেষ বলল, আমার দাদু অত্যন্ত অসুস্থ, কাছেই, আপনাকে একবার যেতে হবে।

ইম্পসিব্‌ল। প্রৌঢ় খুব বিরক্ত হলো, সকালে এত রোগী ফেলে আমি কলে যেতে পারব না। ইউ ফাইন্ড সাম আদার ডক্টর।

আপনার দশ মিনিটও ব্যয় হবে না। অনুগ্রহ করে চলুন। এখানে আর কে ডাক্তার আছেন জানি ।

কেন সময় নষ্ট করছেন? দশ মিনিটে আমি তিনটে পেশেন্ট দেখতে পারব। প্লিজ গো আউট। হাত বাড়িয়ে দরজা দেখিয়ে দিলেন ডাক্তার।

জেদ চেপে গেল অনিমেষের। সে টেবিলের প্রান্তে দুহাত ধরে বলল, কিন্তু আমার দাদু খুব অসুস্থ, আপনাকে যেতে হবে।

যেতে হবে? গায়ের জোর দেখাচ্ছেন? ডাক্তারের কপালে ভাঁজ পড়ল।

যদি তাই মনে করেন

আমি আপনাকে পুলিশে হ্যান্ডওভার করতে পারি তা জানেন? আপনি আমার কাজে বাধা সৃষ্টি করে ভয় দেখাচ্ছেন।
 
আপনি যাই ভাবুন কিন্তু সেটা পরে ভাববেন। দশ মিনিট যদি ব্যয় করেন তাহলে এমন কিছু মহাভারত অশুদ্ধ হবে না। আপনি যদি চান তাহলে বাইরের ভদ্রলোকদের কাছে আমি সময়টা চেয়ে নিতে পারি।

নো, নেভার। একবার কলে গেলে সেটা উদাহরণ হয়ে থেকে যাবে। আমি দুপুরে খাওয়ার সময় যেতে পারি।

তখন যতি পেশেন্ট মরে যায়।

কান্ট হেল্প।

আপনি কিন্তু আমাকে উত্তেজিত করছেন। অনিমেষের চোখমুখ লাল হয়ে উঠল, হোস্টেলের ছেলেরা জানলে আপনি বিপদে পড়বেন।

হোস্টেল! এর মধ্যে হোস্টেল আসছে কোত্থেকে?

আমি হোস্টেলে থাকি। সেখানেই আপনকে যেতে হবে। চিরকাল যেভাবে টাকা রোজগার করে এসেছেন এবার তার ব্যতিক্রম করতে হবে।

সমাজ সংস্কারক মনে হচ্ছে! কম্যুনিস্ট নাকি?

আপনি মিছিমিছি কথা বাড়াচ্ছেন।

কি আশ্চার্য। এত ডাক্তার থাকতে আমাকে নিয়ে–তা কি হয়েছে আপনার পেশেন্টের? সিরিয়াস ব্যাপার হলে হাসপাতালে রিমুভ করুন।

সেটা ওঁকে দেখে আপনি বলবেন। বয়স হয়েছে, খুব জ্বর আর মানে হচ্ছে ভীষণ দুর্বল। রোগটা বুঝতে পারলে আপনার কাছে আসব কেন? নিন, উঠুন। প্রায় ধমকের গলায় কথাটা বলতে ভদ্রলোক নার্ভাস হয়ে গেলেন। অনিমেষ ততক্ষণে চেম্বার ছেড়ে ভিজিটার্স রুমে এসে দাঁড়িয়েছে। ওদের উত্তেজিত কথাবার্তা এখানকার মানুষগুলো নিশ্চয়ই শুনেছেন কারণ তারা অবাক চোখে অনিমেষকে দেখছেন। অনিমেষ হাতজোড় করে বলল, দেখুন, আমি আপনাদের কাছ থেকে দশ মিনিটের জন্য ডাক্তারবাবুকে নিয়ে যাচ্ছি। আমার দাদু অত্যন্ত অসুস্থ। হয়তো আপনাদের একটু অসুবিধে হবে কিন্তু দয়া করে মার্জনা করবেন।

কেউ কেউ উসখুস করলেও মুখে আপত্তি প্রকাশ করল না।

মিনিট দুয়েকের মধ্যে অনিমেষ ডাক্তারবাবুকে নিয়ে হোস্টেলে পৌঁছে গেল। ভদ্রলোক শেষ পর্যন্ত চেম্বার থেকে বেরুবেন কিনা এ সন্দেহ ছিল কিন্তু হোস্টেলের নাম করতে যে এতটা কাজ হবে বোঝা যায়নি।

হাঁটতে হাঁটতে ভদ্রলোক বলেছিলেন, হোস্টেলে থাকেন সে কথা প্রথমে বললেই তো হতো।

কেন?

কিছু মনে করবেন না, হোস্টেলের ছেলেরা দলবদ্ধ হয়ে খুব রাগারাগি করে। আপনাদের তো একজন ডাক্তার আছে!

তিনি এত তাড়াতাড়ি আসতে পারতেন না।

ঘরে ঢুকে অনিমেষ অবাক হল। তমাল সরিৎশেখরের কপালে জলপট্টি লাগিয়ে পাশে বসে মাথায় পাখার হাওয়া করে যাচ্ছে। ওদের দেখে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, মনে হচ্ছে জ্বরটা আরো বেড়ে যাচ্ছে। কালবিলম্ব না করে ডাক্তার পরীক্ষা করতে বসে গেলেন।

ওরা চুপচাপ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকল। অনিমেষ ভাবল এবার তমালকে ছুটি দেওয়া উচিত। কথা বলতে গিয়েও সঙ্কোচ হল। কেউ যদি খুব আন্তরিক হয় তার সঙ্গে ভদ্ৰতা করাটা অনেক সময় অত্যন্ত বেমানান দেখায়।

ডাক্তার বেশ কিছুক্ষণ পরীক্ষা করার পর ব্যাগ খুলে একটা সিরিঞ্জ বের করে ইঞ্জেকশন দিলেন। সামান্য যে ব্যথাটুকু লাগল তাতেই দাদু চোখ খুলে,আবার চোখ বন্ধ করলেন।
 
অনিমেষ বুঝতে পারছিল যে ওঁর চেতনা আর দেখলে নেই। হঠাৎ খুব ভয় করতে লাগল অনিমেষের। যদি কিছু হয়ে যায়? দাদু নেই একথা ভাবতেই বুকে কাঁপুনি এসে গেল। এই মানুষটার কাছে সে এমন ঋণবদ্ধ যে এঁকে ছাড়া কিছু ভাবা অসম্ভব। তার সমস্ত ছেলেবেলা এই মানুষটা নিজের ইচ্ছে মত সাজিয়ে দিয়েছেন। তার চিন্তা, মানসিক প্রকাশ এর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়েছিল এক সময় । এখন এটা যতই নিজের পথে চলুক, মুল ব্যাপারটায় দাদু এখনও জড়িয়ে আছেন। অনেকদিন পরে সেই ছেলেবেলার স্মৃতিটা ভেসে এল। কোন আশঙ্কার সামনে দাঁড়ালে একটা লাইন স্মরণ করে কপালে তিনবার মা অক্ষর লিখে চোখ বন্ধ করে প্রণাম করত। ছেলেবেলায় এটা দারুণ কাজ করত। নিজের অজান্তে অনিমেষ এতদিন পরে তার পুনরাবৃত্তি করল। ওঁ, ভগবতে শ্রীরামকৃষ্ণায় নমঃ। রামকৃষ্ণদেব সম্পর্কে তাঁর আগ্রহ বা ভক্তির কোন প্রকাশ কলকাতায় এসে ঘটেনি। দক্ষিণেশ্বরে যাওয়ার কোন প্রয়োজন সে অনুভব করেনি। মার্কস কিংবা লেনিন পড়ার সময় এই সব সংস্কারগুলাকে সে নির্মমভাবে সরিয়ে দিয়েছে। একজন মাও সে-তুং কিংবা হো চি মিনের জীবনে অন্ধ ধর্মবিশ্বাসের কোন প্রয়োজন নেই। অথচ রক্তে ডুবে থাকা এই সংস্কার হঠাৎ নিজের অজান্তে ভুস করে মাথা তুলল। কাঁধে হাতের স্পর্শ পেতেই সজাগ হল অনিমেষ। তমাল বলল, ভয় পাবেন না, উনি জলে পড়ে নেই।

ডাক্তার কোন কথা বলছিলেন না। এর মধ্যে প্রায় পনের মিনিট সময় চলে গেছে। শেষ পর্যন্ত পালস্ দেখে ভদ্রলোক সহজ হয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে অনিমেষকে বললেন, মনে হয় খুব টর্চার করেছেন। ইঞ্জেকশনটায় কাজ হয়েছে, এখন স্বাভাবিকভাবে ঘুমোবেন। আমি যে ওষুধ লিখে দিচ্ছি সেগুলো খাইয়ে কাল রিপোর্ট করবেন।

প্রেসক্রিপশন লেখার সময় অনিমেষ জিজ্ঞাসা করল, ভয়ের কিছু আছে?

ডাক্তার লেখা শেষ করে বললেন, ছিল। হরলিক্স, বিস্কুট আর মিষ্টি ফল ছাড়া আজকে কিছু দেওয়ার নেই। মনে হচ্ছে তিন-চারদিন কিছুই খাননি আর খুব পরিশ্রম করেছেন। আচ্ছা চলি। প্রেসক্রিপশন হাতে নিয়ে অনিমেষ ড্রয়ার খুলে টাকা বের করে জিজ্ঞাসা করল, আপনার ফিস কত আমি ঠিক জানিনা।

ভদ্রলোক খানিকক্ষণ তাকিয়ে বললেন, পড়ো না চাকরি করো?

পড়ি।

আমি চেম্বার বত্রিশ টাকা নিই । কলে গেলে ডাবল হয়। আমাকে টাকা দেখাতে এসো না ছোকরা। দশ টাকা দাও। বিস্মিত অনিমেষের হাত থেকে একটা দশ টাকার নোট তুলে নিয়ে বললেন, ক্লাস কামাই করো। অন্তত একটা দিন এঁকে সব সময় চোখে রাখা দরকার। ঘর থেকে বেরুতে গিয়ে বললেন, আর হ্যাঁ, তোমার রাস্তাটা সবাইকে শিখিয়ে দিও না।

তমাল ওঁকে পৌঁছতে নীচে নেমে গেলে অনিমেষ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকল। আর একবার মানুষের মুখ দেখল সে।

ওষুধপত্র আনিয়ে অনিমেষ দাদুর পাশে বসে বাতাস করছিল। সকালে যে সময়টা কাটছিল না সেটা এখন দৌড়ে যাচ্ছে। এখন দুপুর । হোস্টেল ফাঁকা। বারোটার ক্লাসটা করা হল না। আজ সকালে যে তাগিদ বুকের মধ্যে ছটফট করছিল সেটা এখন মিইয়ে গেছে। মাধবীলতাকে দেখার ইচ্ছের চেয়ে এই বৃদ্ধের পাশে বসে থাকতে বড় আরাম হচ্ছিল। দাদুর কথাটা মনে পড়ল, সব শোধবোধ হয়ে গেল। মাথা নাড়ল অনিমেষ, না, কখনই শোধ হয় না। দুপুর ঘন হলে সরিৎশেখর চোখ খুললেন। নাতিকে দেখে ধীরে ধীরে বললেন, অনি, তোমাকে খুব কষ্ট দিলাম, না?

অনেকদিন পর অনিমেষ ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল।
 
সন্ধ্যে নাগাদ সরিৎশেখরকে খানিকটা সুস্থ দেখাচ্ছিল। সারাদিন জল আর বিস্কুট ছাড়া কিছু খাননি । অনিমেষ জোর করে একটা সন্দেশ খাইয়ে দিলে বৃদ্ধের গলায় স্বর একটু স্বাভাবিক হল । সরিৎশেখর বললেন, একটু বাথরুমে যাবেন।

সারাটা দিন শুয়েই কাটিয়েছেন তিনি, ওঠার কোন কারণও ছিল না। ওরকম জ্বরো রোগী যে হেঁটে চলে বেড়াবে না এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ততক্ষণে অনিমেষের খেয়াল হল যে দাদু একবারও বাথরুমে যাননি। এবং কথাটা শোনামাত্র সে বিচলিত হয়ে পড়ল। ওদের এই হোস্টেলের বাথরুম-পায়খানা খুব সভ্য ধরনের হয়। এতগুলো মানুষের প্রয়োজন মেটাতে হয়তো কিছু সুবন্দোবস্ত করা যেত কিন্তু তার সুরক্ষা সম্ভব নয়। প্রতি তলায় একটা করে ঘেরা জায়গা আছে ক্ষুদ্র প্রয়োজনের জন্যে কিন্তু বৃহৎ ব্যাপারের ব্যবস্থা নীচে। জায়গাটা যেমন অন্ধকার তেমন স্যাঁতসেঁতে। আগের হোস্টেলটা এসব ব্যাপারে অনেক ভদ্র ছিল। কিন্তু এই বাড়িটা এত প্রাচীন এবং কিছুটা রহস্যময় ভঙ্গিতে গঠিত যে এর উন্নতি করা অসম্ভব। জলপাইগুড়ি থাকতে যে মানসিক গঠন ও অভ্যাস অনিমেষের ছিল কলকাতার হোস্টেলে থাকতে এসে তা কিছুটা লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছিল। ওটা এমন বয়স যা সব কিছু মানিয়ে নিতে পারে। এখন এগুলোর গুরুত্ব সারাদিনের জীবনে এত কম যে তা নিয়ে মাথা ঘামানোর কোন দরকার বোধ করেনি অনিমেষ। মনে পড়ে, প্রথম দিন এক ঘরে অপরিচিত ছেলের সঙ্গে থাকতে হবে জেনে চোখে জল এসে গিয়েছিল। সারাটা ছেলেবেলা সে কারো সঙ্গে ভাগ করেনি, কিন্তু পরবর্তীকালে তো তাও অভ্যেস হয়ে গেল।

কিন্তু সরিৎশেখর কি করে এই রকম ব্যবস্থা মেনে নেবেন? সারাটা জীবন যে মানুষ সাহেবদের সঙ্গে কাটিয়ে মানসিকভাবে কতগুলো রুচি মেনে চলেন, তার পক্ষে এই ধরনের বাথরুম ব্যবহার করা অসম্ভব। হয়ত, ভেতরে ঢুকেই বেরিয়ে আসবেন। কী করা যায় বুঝতে পারছিল না অনিমেষ।

সরিৎশেখর বললেন, তুমি কি আমার কথা শুনতে পাওনি?

অনিমেষ ব্যস্ত হয়ে উঠল। তারপর দাদুকে সযত্নে ধরে ধরে সামনের ছাদে নিয়ে গেল। কোণার দিকে দুটো দিক দেওয়াল ঘেরা জায়গাটায় পৌঁছে বলল, এখানেই সেরে নিন।

ভেতরে দুটো সিমেন্ট লাগানো ইট ছাড়া কিছু নেই।

অনিমেষ যা আশঙ্কা করছিল তাই হল, সরিৎশেখর বেরিয়ে এসে বললো, এখানে জলের কল নেই?

না। মানে, এটা খুব প্রয়োজনের জন্যে। রোজ জমাদার এসে ধুয়ে দিয়ে যায়। অনিমেষ দাদুর দিকে তাকাল।

কিন্তু জল না হলে হাত পোব কি করে? সরিৎশেখর অবাক।

অনিমেষ বলল, আপাতত এই জলে কাজ মিটিয়ে নিন, আমি ভাল করে ধুয়ে রাখব। ঘরে ঢুকে সরিৎশেখর বললেন, শিক্ষা মানুষকে এমন নোংরা করে ভাবতে পারি না। তোমাকে এতদিন আমি কি শেখালাম!

অনিমেষ বলল, এখানে আমি একা কি করব? যেমন পরিবেশ তেমন ভাবেই চলতে হচ্ছে।

তোমরা হোস্টেলের মালিককে বলো না কেন? কেউ এ নিয়ে মাথা ঘামায় না দাদু!

বাঃ, চমৎকার। সভ্য সমাজের মিনিমাম প্রয়োজন সম্পর্কেও তোমরা এত উদাসীন? মাঝরাতে পেট খারাপ হয় না কারো? সরিৎশেখর কড়া চোখে নাতিকে দেখলেন।
 
আপনি এ রকম পরিবেশে তো কখনো থাকেননি তাই চোখে লাগছে। কলকাতা শহরের লোক এসবে অভ্যস্ত। জবাবদিহি করার ভঙ্গিতে বলল অনিমেষ। কিন্তু বলার সময়েই সে বুঝতে পারছিল দাদু তার এসব কথায় কোন আমল দেবেন না। বাথরুমে এই, পায়খানায় ঢুকতে গেলে দাদুর যে কি কান্ড করবেন ভাবতেই শক্ত হয়ে গেল। আসলে এসব খামতি নিজের চোখে ঠেকেনি কিংবা ঠেকলেও পাত্তা পায়নি।

সরিৎশেখর বললেন, এই ঘরে তুমি থাক?

অবাক হল অনিমেষ। এ কি রকম কথা? অন্যের ঘরে কি সে দাদুকে থাকতে বলবে? তবু স্বাভাবিক ভঙ্গিতে সে ঘাড় নাড়ল।

এভাবে তোমার থাকতে ইচ্ছে করে?

অনিমেষ ঘরটার দিকে তাকাল। রোজ দেখে অভ্যস্ত চোখে ঘরটা একই আছে। সে বলল, এই ঘরটাই সবচেয়ে নিরিবিলি।

আমি সেকথা বলছি না। বিছানার চাদরটা কমাস কাচোনি? বালিশের ওয়াড়টার চেহারা দেখেছে? ওখানে মুখ রাখতে তোমার প্রবৃত্তি হয়। বইপত্র স্তুপ করে ছড়ানো, এখানে ওখানে জামা ঝুলছে, দেওয়ালে ঝুল। একটা মানুষের রুচি তার শোওয়ার জায়গায় ফুটে ওঠে। তাই না? সরিৎশেখর নিজের ঝোলাটা এগিয়ে দিলেন, এতে একটা চাদর আছে, তাই পেতে দাও।

অনিমেষ খুব অসহায় বোধ করছিল।

সে যতটা সম্ভব গোছগাছ করেছিল কিন্তু তা সত্ত্বেও দাদু এগুলো আবিষ্কার করলেন। বিছানার চাদর তার দুটো, আর এক বালিশের ওয়াড় ধোব করে ধোওয়া হয়নি। অনিমেষের চোখে এগুলো তেমন নোংরা নয়। এ হোস্টেলেরই অনেক ছেলে খুব সাজ গোজ করে থাকে। এমন কি ফুলদানি এবং ধুপ জ্বালার শখও আছে অনেকের। ওরকম মেয়েলী স্বভাব অনিমেষ রপ্ত করতে পারিনি।

মোটামুটি একটা ব্যবস্থা করে দাদুকে শুইয়ে দিয়ে অনিমেষ বলল, আপনি একটু বিশ্রাম নিন, আমি ঘুরে আসছি।

সরিৎশেখর বললেন, আজ তো তোমাকে ক্লাস করতে দিলাম না, সন্ধ্যেবেলায় পড়তে বসবে না?

কথাটা শুনে অনিমেষের মজা লাগল। কলকাতায় আসার পর তাকে কেউ পড়তে বসার কথা বলেনি। অথচ একটা কথায় দাদু সমস্ত ছেলেবেলাটাকে সামনে এনে দিলেন। এই মানুষই সন্ধ্যেবেলায় চিৎকার করে না পড়লে এমন শাসন করতেন যে অনিমেষ তটস্থ থাকতো। দাদুকে সে এখন কি করে বোঝায় যে পড়াশুনা ব্যাপারটা সময় মেপে করার অভ্যেসটা আর নেই। প্রয়োজনমত সেটা করতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে সে।

অনিমেষ মুখে কিছু বলল না। হাত বাড়িয়ে সরিৎশেখরের কপাল স্পর্শ করে বলল, নাইন্টি নাইনের বেশী হবে না। এখন চুপ করে শুয়ে থাকুন। অনেক কথা বলেছেন। আমি ডাক্তারকে রিপোর্ট দিয়ে আসি।

সরিৎশেখর বললেন, বড় কড়া ওষুধ এনেছ, মাথা ঝিম ঝিম করছে।

অনিমেষ বলল, ডাক্তারকে বলব। ঘরের দরজা ভেজিয়ে সে ভাবল তমালকে একবার খোঁজ করবে কি না। বুড়ো মানুষটাকে একদম একা রেখে যেতে মন চাইছে না। তারপর মত পালটালো। এই সন্ধ্যেছোঁয়া সময়টা কোন জোয়ান ছেলে হোস্টেলে পড়ে থাকে না। আর থাকলেও তাকে এক অসুস্থ বৃদ্ধের সঙ্গে জোর করে বসিয়ে রেখে যাওয়া অন্যায় হবে। তমাল নিজে আজ সকালে যা করেছে তাই অনেক।
 
নীচের গেটে সুপারিনটেনডেন্টের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। এই প্রবীণ অধ্যাপকটির ওপরে যদিও হোস্টেলের দায়িত্ব কিন্তু কোন ব্যাপারে নাক গলান না। এমন কি খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থাও ছেলেদের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। প্রতি মাসে একজন করে ম্যানেজার ঠিক করে দেন, সেই চালায়। দাদু ওর ঘরে আছেন এই খবরটা নিজে থেকে ভদ্রলোককে দেওয়া উচিত, যদিও এরকম চালু আইনটা কেউ বড় একটা মানে না। অনিমেষকে দাঁড়াতে দেখে ভদ্রলোক জিজ্ঞাসা করলেন, কিছু বলবে? ও হ্যাঁ, তোমার ঘরে একজন অসুস্থ বৃদ্ধ এসেছেন শুনলাম। তিনি কে হন তোমার?

আমার ঠাকুর্দা।

কেমন আছেন এখন?

ভাল।

ওঁর তো এখানে থাকতে অসুবিধে হবে। তোমার কলকাতা শহরে আর কোন আত্মীয় নেই?

না। উনি একটু সুস্থ হলেই চলে যাবেন। আপনার আপত্তি নেই তো?

ঠিক আছে। ভদ্রলোক চলে যেতে অনিমেষের খেয়াল হল সারাদিনে দাদুকে জিজ্ঞাসাই করা হয়নি, কী কারণে তিনি মাথা ন্যাড়া করে একা একা কলকাতায় এলেন? আশ্চর্য! সে যে কেন একটুও প্র্যাকটিক্যাল হতে পারল না আজও!

ডাক্তার চেম্বারেই ছিলেন। ভদ্রলোকের পশার খুব জমজমাট। কলকাতা শহরের মানুষের রোগ বোধ হয় লেগেই থাকে। এবং এতে ডাক্তাররা খুশীই হন। অপেক্ষারত মানুষগুলোকে দেখতে দেখতে অনিমেষের মনে হল, আচ্ছা, যদি আজ এদের সবাই সুস্থ থাকতেন তাহলে ডাক্তারের মন কেমন থাকতো? অর্থের জন্যে মানুষের মন সব সময় নিম্নগামী হয়।

সকালে যে লোকটা তাকে আটকেছিল সে দেখতে পেয়ে এগিয়ে এল। বেশ খাতিরে গলায় জিজ্ঞাসা করল, ডাক্তারবাবুর সঙ্গে দেখা করবেন?

এইসব ন্যাকামো অনিমেষের সহ্য হচ্ছে না আজকাল। সে এখানে বেড়াতে আসেনি জেনেও এ ধরনের প্রশ্নের কোন মানে আছে? বাজারের থলে হাতে দেখেও কেউ যদি জিজ্ঞাসা করে, কি, বাজারে যাচ্ছেন, তখন ন্যাকামো ছাড়া আর কি বলা যেতে পারে। অনিমেষ মুখে কিছু না বলে ঘাড় নাড়লো।

পাঁচ মিনিট দাঁড়ান। ডাক্তার বাবুর একজনকে চেক করছেন, মেয়েছেলে তো! বসুন না, ওখানে বসুন।

লোকটা ব্যস্ততা দেখাল।

ঠিক আছে। অনিমেষ ওকে এড়াতে সামনের টেবিল থেকে ম্যাগাজিন তুলে চোখ রাখল। আজ সকালে এই লোকটা তাকে পাত্তা দিতে চায়নি আর এখন খাতির করছে কেন? ঘর এখন কমসে কম বারো জন লোক, সিরিয়ালি এলে ঘন্টা দুই অপেক্ষা করতে হতে পারে, অথচ লোকটা বলল পাঁচ মিনিট দাঁড়ান! তার মানে নিয়ম ভাঙবে লোকটা। তখন যদি সবাই প্রতিবাদ করে। অনিমেষ ঠিক করল কেউ কিছু বললে সে ভেতরে ঢুকবে না। ঘন্টা দুই পরে ঘুরে আসবে।

কিন্তু ভদ্রমহিলা চেম্বার থেকে বেরিয়ে আসতেই লোকটা যখন হাত নেড়ে তাকে ভেতরে যেতে বলল তখন কেউ আপত্তি করল না। গতকাল শুনে এসেছে অসুস্থতা মানুষকে অধৈর্য করে, কিন্তু এঁরা বেশ চুপচাপ।

পরিশ্রম করে ডাক্তার একটু আরাম করছিলেন সিগারেট ধরিয়ে, অনিমেষকে দেখে ভ্রূ কোঁচকালেন, ও তুমি! কতক্ষণ এসেছ?

এইমাত্র। অনিমেষ বসল না। কারণ বসার মত সময় নেওয়ার কোন মানে হয় না।

ডাক্তার জিজ্ঞাসা করলেন, উনি কেমন আছেন?

এখন একটু ভাল । জ্বর কম কিন্তু দুর্বল বোধ করছেন। ওষুধগুলো খুব কড়া বলছিলেন। অনিমের জানাল।

পেচ্ছাপ হয়েছে?

একবার, বিকেলে।

শোন ওর বয়স হয়েছে। আজ যদি জ্বর চলে যায় তো ভাল কিন্তু আবার যদি আসে তাহলে তুমি ম্যানেজ করতে পারবে না। ভিটামিন ডেফিসিয়েন্সি তো আছেই, মনে হয় কদিন কিছু খাননি। আবার যদি জ্বর আসে ব্লাড আর ইউরিন পরীক্ষা করিয়ে নেবে। প্রেসক্রিপশনটা দাও। হাত বাড়ালেন ডাক্তার।
 
অনিমেষ পকেট থেকে কাগজটা বের করে এগিয়ে দিতে তাতে খস খস করে কয়েকটা শব্দ লিখে ফেরত দিলেন, দুটো ওষুধ চেঞ্জ করে দিলাম। আজ রাত্রে হরলিক্স আর সন্দেশ দেবে; দুধ সহ্য নাও হতে পারে। কাল যদি জ্বর না থাকে এই ফুডগুলো দেবে। ঠিক আছে। মাথা নেড়েওকে বিদায় করতে চাইলেন ডাক্তার।

অনিমেষ ওষুধগুলোয় চোখ বুলিয়ে নিতে গিয়ে ভাবছিল, যেগুলো সকালে কেনা আছে সেগুলো কী করবে জিজ্ঞাসা করা উচিত কিনা!

ওকে অন্য কোথাও শিফট কর। আর আমার চেম্বারে একটা ফোন আছে। এ ভাবে হুটহাট চলে আসার চেয়ে টেলিফোনে কথা বললে ভাল হয়।

কথাটা চুপচাপ শুনল অনিমেষ। অন্যায় কিছু বলেনি ডাক্তার। অন্য সময় সে কী করত বলা যায় না, এখন মাথায় অন্য চিন্তা ঢুকেছে। আজ সকালে ওষুধপত্র কিনতে বেশ কিছু খরচ হয়ে গেছে। বাবা যে টাকা পাঠান তাতে সব খরচ মিটিয়ে সামান্যই নিজের জন্যে থাকে। এখানে আসার পর কোন বড় রকমের অসুখবিসুখ করেনি তার, বাড়তি খরচের প্রশ্ন ওঠেনি। অনেকে বাড়ি থেকে পাঠানো টাকার কিছু কিছু প্রতি মাসে জমিয়ে রাখে। অনিমেষের ক্ষেত্রে সে কথা ওঠে না।

চেম্বার থেকে বেরিয়ে সামনের ওষুধের দোকানে গিয়ে প্রেসক্রিপশনটা দেখাতে আরো কিছু টাকা চলে গেল। তার কাছে বড় জোর কুড়িটা টাকা পড়ে আছে। মাসের একেবারে শেষ হলে দুটো টাকাও থাকতো না। অনিমেষ ভাবছিল, দাদু নিশ্চয়ই বেশীদিন থাকবেন না। কিন্তু বাকী মাসটা কিভাবে চালাবে! বাবার কাছে নতুন করে টাকা চেয়ে চিঠি দেওয়া তার পক্ষে অসম্ভব।

ব্যাপারটা নিয়ে আর একটু চিন্তু করতে গিয়ে অনিমেষ একটা ব্যাপার আবিষ্কার করে থতমত হয়ে গেল। পৃথিবীতে তার যদি সবচেয়ে আপন বলে কেউ থাকে তাহলে সরিৎশেখর। ছোটবেলায় এই মানুষটিকে ঘিরে সে কত রকমের স্বপ্ন দেখত। বাবা, ছোটমা কিংবা পিসীমা হেমলতাও সেই স্বপ্নের ধারেকাছে আসতে পারেননি কখনো। আর আজ অসুস্থ সরিৎশেখর মাত্র একটা দিন তার কাছে এসে ওঠায় সে দিশেহারা হয়ে পড়ছে। অনিমেষ নিজেকে শাসন করল। দাদু এত জায়গা থাকতে তার কাছে সে উঠেছেন এটাই ভাগ্যের কথা। তার জন্যে যদি খরচ হয় তো হোক। নিজের কাছে না থাকলে হোস্টেলের ছেলেদের কাছে ধার করলে চলবে। আর কেউ না থাক পরমহংস আছে। টিউশনির টাকা জমিয়ে রাখে ও। চাইলে নিশ্চয়ই দেবে। কিন্তু এই ঘটনা থেকে একটা সত্য খুব জোরালো হল অনিমেষের কাছে। না, আর ঢিলেমি নয়, এবার কিছু টাকা রোজগার করতেই হবে। টিউশনির কপাল সবার থাকে না। তাছাড়া অন্য লোকের বাড়ির মরজি মতন পড়ানো তার পক্ষে সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।

হাতিবাগানের মোড়ে দাঁড়িয়ে এইসব কথা ভাবছিল অনিমেষ। এখন, এই সন্ধ্যেবেলায় বেশ ভিড় হয়। মেয়েরাই কেনাকাটা করতে অথবা দোকান দেখতে বেরিয়ে পড়েছে। অনিমেষের এসব দিকে খেয়াল ছিল না। কিছু একটা গম্ভীরভাবে চিন্তা করতে গেলেই এ রকম হয়। আশেপাশের সব কিছু অস্পষ্ট হয়ে যায়। ওই অবস্থায় মনে হল কেউ যেন তাকে ডাকছে। তারপর আচমকা কারো হাতের ঝাঁকুনিতে ও সজাগ হল। চমকে যাওয়া ভাবটা সামলে পেছন ফিরে ও সত্যি অবাক হল।

তুমি কি তোমার মধ্যে ছিলে? কি ভাবছিলে এত?

একি সারপ্রাইজ সুবাসদা। কোত্থেকে এলে?

বেলগাছিয়ায় গিয়েছিলাম। ট্রাম থেকে তোমাকে দেখতে পেয়ে নেমে এলাম। তখন থেকে নাম ধরে চেঁচাচ্ছি কোন সাড়া নেই। অসুখ-টসুখ আছে নাকি?

অনিমেষ লজ্জা পেল, না, না। আসলে একটু অন্যমনস্ক হয়ে গেছিলাম এই আর কি! আঃ, অনেকদিন পরে তোমার সঙ্গে দেখা হল। কিন্তু যে কলকাতায় আছ তাই জানতাম না। বিমানদা বা, সুদীপ কেউ তো বলেনি।

বলেনি, হয়তো বলতে ইচ্ছে হয়নি কিংবা ভুলে গেছে। সুবাস যেন হাসল।

কথাটা কেমন বেসুরো লাগলো কোন, অনিমেষ বলল, আমি ঠিক বুঝতে পারছি না।

সব কথা না বোঝাই ভাল। অনেক সময় বুঝতে না চাইলে উপকার হয়। তার চেয়ে চল আমরা একটু চা খাই। সেই বিকেল থেকে ঘুরছি, গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। ওই তো একটা চায়ের দোকান, চল। সুবাস অনিমেষের হাত ধরে রাস্তা পার হবার জন্য এগোল।

সুবাসদার কথাবার্তা একটু অন্য রকম। অনিমেষের মনে হচ্ছিল কিছু একটা হয়েছে। সুবাসদাকে ওর ভাল লাগে। বলতে গেলে কলকাতায় পা দিয়েই সুবাসদার সঙ্গে তার যোগাযোগ। বোধ হয় নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে তাকে সেদিন বাঁচিয়েছিল সুবাসদা। লোকটা খুব চাপা এবং কারো ব্যাপারে নাক গলাতে ভালবাসে না।
 
কিন্তু এখন চায়ের দোকানে বসলে হোস্টেলে ফিরতে রাত হয়ে যাবে। যদিও এর পরে দাদুকে ওষুধ দিতে হবে রাত দশটা নাগাদ তবু অতক্ষণ একা একা থাকতে ওঁর অসুবিধে হতে পারে। কাউকে বলেও আসা হয়নি। দেরী করে হোস্টেলে ফিরলে দাদু অসন্তুষ্ট হবেন। ভাববেন এই রকম সময়ে ফেরা ওর নিয়মিত অভ্যেস।

রাস্তা পার হতে হতে অনিমেষ মনে মনে হেসে ফেলল। স্কুলে পড়ার সময় দাদুর ভয়ে সন্ধ্যের আলো জ্বলবার আগেই খেলার মাঠ থেকে দৌড় শুরু করত বাড়িতে ফেরার জন্যে। আলো জ্বলে গেলে বুক ধড়াস ধড়াস করত শাস্তি পাওয়ার ভয়ে। সেই ব্যাপারটাই যেন এতদিন বাদে কলকাতায় তার কাছে ফিরে এসেছে। কিন্তু সুবাসদাকে ছেড়ে যেতেও ইচ্ছে করছে না। আচ্ছা, এমনও তো হতে পারত সে ডাক্তারের দেখা পেয়েছে স্বভাবিকভাবে দুঘণ্টা অপেক্ষার পর। তাহলে তো সেই দেরী হতোই যাব জন্যে কিছু করার ছিল না তার। মনে মনে একটু স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করল অনিমেষ। অন্তত ঘণ্টাখানেক দেরী করে ফিরলেও ম্যানেজ করা যায়।

রেস্টুরেন্টে বেশ ভিড়। একটু দাঁড়িয়ে থেকে দুটো বসার জায়গা জোগাড় করল ওরা। একই টেবিলে অন্য লোক রয়েছে। তারা যে কথা বলছে তা স্বাভাবিকভাবে এমন চেঁচিয়ে বলার নয় তবু অনর্গল বলে যাচ্ছে। এ রকম ব্যাপার প্রায়ই লক্ষ্য করেছে অনিমেষ। ট্রামে বাসে মানুষেরা এমন স্বচ্ছন্দে পারিবারিক গল্প করে যে মনে হয় সেখানে তারা ছাড়া আর কেউ নেই। ট্রাম-বাসের ঠাস ঠাস ভিড় যেন নির্জন গাছের মত।

দুটো চা বলে সুবাসদা নীচু গলায় বলল, এখন কি করছ?

কী উত্তর দেবে বুঝতে পারল না অনিমেষ। ছাত্র হিসেবে তার এখন পড়াশুনা করার কথা। তবু এই প্রশ্নটা নিশ্চয়ই অকারণ নয়। ইঙ্গিতটা অনুমান করলেও এড়িয়ে গেল অনিমেষ। মুখে কিছু না বলে হাসল।

সিগারেট ধরিয়ে সুবাসদা বলল, তোমাদের য়ুনিয়নের কাজ কর্ম কেমন চলছে?

ভালই। আসলে ছাত্রদের দাবীদাওয়া নিয়ে মাঝে মাঝে ভি, সি-র কাছে যাওয়া শ্লোগান দেওয়া ছাড়া য়ুনিয়নের কাজকর্ম আর কি আছে বলুন?

দিয়ে-যাওয়া চায়ে চুমুক দিল অনিমেষ । দিয়ে মনে পড়ল আজ বিকেলে তার চা খাওয়ার কথা খেয়ালই ছিল না।

তুমি পার্টির অফিসে যাচ্ছ না?

দুতিন দিন গিয়েছিলাম; ওখানে গিয়ে চুপচাপ বসে থাকতে ভাল লাগে না, আমি বোধ হয় গায়ে পড়ে আলাপ করতে পারি না–তাই।

কয়েকদিন আগে পুলিশের গুলীতে দুজম কমরেড খুন হয়। তোমরা এর প্রতিবাদে ছাত্র ধর্মঘট করেছিলে, কেমন হয়েছিল।

সাকসেসফুল। আসলে এসব ছুতো পেলে ছাত্ররা ক্লাসে ঢোকার দায় থেকে বাঁচে, তা সে যেই ডাকুক না কেন! অনিমেষ বলল।

কিন্তু ধর্মঘটটা করলে কেন?

অনিমেষ হকচকিয়ে গেল, মানে?

কত লোক তো প্রতিদিন খুন হচ্ছে সেজন্যে তো তোমরা ধর্মঘট করছ না এই সেদিন প্রাক্তন বিপ্লবী খুন হলেন, তোমরা কোন প্রতিবাদ করো নি, এখন করলে কেন?

অনিমেষ সুবাসদার মুখের দিকে তাকিয়ে অর্থটা ধরতে চেষ্টা করল কিন্তু বিফল হল। সে বলল, এ তো সোজা কথা। যে দুজন মারা গেছে তারা পার্টির লোক আর আমাদের ছাত্র সংগঠন সেই পার্টির মতবাদে বিশ্বাস করে তাই প্রতিবাদ জানানো দরকার ছিল।

বেশ বেশ, আমি এই কথাটাই শুনতে চাইছিলাম। ছাত্ররা এখন আর দেশের বৃহত্তম শক্তি হিসেবে কেন গণ্য হবে না সে সন্দেহ কেউ করবে না। দেখা যাচ্ছে প্রতিটি ছাত্র সংস্থা বিশেষ রাজনৈতিক দলের কর্মপন্থা অনুসরণ করে। অন্যভাবে বলতে গেলে ছাত্র সংস্থাগুলো রাজনৈতিক দলের একটা শাখা। তাই তো?

এ কথা সবাই জানে সুবাসদা। তুমি কি বলতে চাইছ।

পার্টি যদি ভুল করে এবং সেই ভুলটা ছাত্রদের ওপর চাপিয়ে দেয় তাহলে তুমি কি সেটা সমর্থন করবে? অনিমেষের মুখের দিকে তাকাল সুবাস সেন।

অনিমেষ ধীরে ধীর মাথা নাড়ল, তা কেন? পার্টি যদি ভুল কর তাহলে সেটা দেখিয়ে দিয়ে সংশোধন করা উচিত।

কিন্তু নেতারা যদি জেনেশুনে ভুল করেন, তাহলে?

তা কেন করবে?

করবে এবং করছে। এটাও এক ধরনের রাজনীতি।

কি করে সম্ভব সুবাসদা! প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দলের নির্দিষ্ট আদর্শ আছে। না হলে একটার সঙ্গে আর একটার কোন পার্থক্য থাকবে না। নেতারা যদি সেই আদর্শ মানতে না চান তাহলে তার প্রতবাদ দল থেকেই উঠবে। যারা কর্মী তারা চুপ করে থাকবে কেন?

চুপ করে থাকবে স্বার্থের জন্য।

না, একথা আমি মানি না।

আমি মানি।

কারণ?

কারণ এই প্রতিবাদ করার জন্যে আমাকে দল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। আমরা যে কজন বেরিয়ে যেতে বাধ্য হলাম তারা ছাড়া আর কেউ একটা কথা বলে নি। এমন কি আমাদের ওপর যে আচরণ করা হল তার সমালোচনা করার সাহস কেউ করে নি।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top