চেতনা ফিরতে স্বপ্নেন্দু আবার উঠে বসলো। তার শরীরে কোথাও মাংস নেই, রক্ত নেই, চামড়া নেই। এমনকি শিরা উপশিরা পর্যন্ত নেই। শুধু শরীরের খাঁচাটা আস্ত রয়েছে। আর শুনছে হৃৎপিণ্ডের আওয়াজ। ঘড়ির মতো শব্দ করে চলছে সেটা। স্বপ্নেন্দুর মনে হলো সে দুঃস্বপ্নটা এখনও দেখে যাচ্ছে। একটু একটু করে উঠে দাঁড়িয়ে সে চলে এলো আয়নার সামনে। মেডিক্যাল কলেজে এইরকম কঙ্কাল দেখেছে সে। আয়নায় একটা কঙ্কালের ছবি ফুটে উঠেছে। ঘাড় ঘুরিয়ে এপাশ ওপাশ দেখছে কঙ্কালটা। আবার ঠিক কঙ্কালও না! কারণ বুকের খাঁচার মধ্যে ওটা কি। কালচে মতোন একটা হৃদপিণ্ড দেখতে পেলো সে। সে দেখতে পাচ্ছে কিন্তু তার চোখ নেই। ডান হাতটাকে ধীরে ধীরে ওপরে তুলে হৃৎপিণ্ডটাকে ছুঁতে যেতে সেটা শব্দ করে উঠল। সন্তর্পণে হাত বুলিয়ে বোঝা গেল কালচে হৃৎপিণ্ডটাকে একটা অদৃশ্য শক্ত বস্তু ঘিরে রয়েছে। নিরেট অথবা অদৃশ্য গোলকটির শরীরে আঘাত করল সে কিন্তু সে একটুও ব্যথা লাগল না। আয়নার খুব কাছে চলে এলো স্বপ্নেন্দু। একটি পাঁচ ফুট নয় ইঞ্চির কঙ্কাল তার সামনে দাঁড়িয়ে। তার কোথাও কোথাও কালচে চামড়া আটকে আছে। কিন্তু সামনে রক্তমাংসের চিহ্ন নেই।
চোখের গর্তে গর্ত আছে কিন্তু চোখ নেই। অথচ দেখতে সামান্য অসুবিধে হচ্ছে। সোজাসুজি ছাড়া বাকিটা অদৃশ্য থেকে যাচ্ছে। ডাইনে বাঁয়ে দেখতে হলে মুখ ঘোরাতে হচ্ছে। নাক আছে কিন্তু কোনো ঘ্রাণশক্তি নেই। জোরে নিশ্বাস ফেলল সে। হৃৎপিণ্ডের আরাম হলো কিন্তু কোনো গন্ধ পেল না।
মুখ হাঁ করল স্বপ্নেন্দু। জিভ নেই দাঁত আছে। অথচ দাঁতের গোড়ার মাংস না থাকায় সেগুলোকে নগ্ন বীভৎস দেখাচ্ছে। শরীরের নিম্ন অংশের দিকে তাকালো সে। তলপেট থেকে দুটো শক্ত মোটা হাড় দুপাশে ছড়িয়ে পা হয়ে নিচে নেমে গেছে। তার যৌন অঙ্গ ইত্যাদির চিহ্নমাত্র নেই।
স্বপ্নেন্দু এইসব ভাবতে ভাবতে কপালে হাত রাখল। তার মাথার মধ্যে কি চিন্তা করার নার্ভগুলো কাজ করছে? ব্রেইনবক্স কিংবা ক্ৰানিয়ামের ভেতরে কি মস্তিষ্ক অটুট আছে? নিশ্চয়ই আছে। তার ক্রানিয়াম মস্তিষ্ককে বাঁচিয়ে রেখেছে নইলে সে এতসব ভাবতে পারছে কী করে।
স্বপ্নেন্দু থর থর করে কেঁপে উঠল। এই কি সে? এই কালচে শুকনো চামড়া মাঝে মাঝে সেঁটে থাকা কঙ্কাল? খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সে নিজের মাথাটা দেখতে চেষ্টা করছিল। হ্যাঁ তাইতো। মা মারা যাওয়ার পর মাথা ন্যাড়া করেছিল। তখন আয়নার সামনে দাঁড়ালে মাথার আকৃতিটা যেমন দেখাত এখন অনেকটা সেইরকমই লাগছে। তবে আকারে ছোটো হয়ে গেছে কিন্তু আদলটা পাল্টায়নি।
বন্ধ দরজার দিকে তাকালো স্বপ্নেন্দু। তার হঠাৎ খুব ভয় করতে লাগল। সে মরে যায় নি কিন্তু এইভাবে কঙ্কাল হয়ে বেঁচে থাকার কথা সে কবে শুনেছে। পাঁচজনের সামনে বের হলে কী প্রতিক্রিয়া হবে সবার? স্বপ্নেন্দুর হৃৎপিণ্ড কেঁপে উঠে কান্নাটা ছিটকে এল। সামান্য শব্দ হলো। কিন্তু এক ফোঁটাও অশ্রু বের হলো না। চোখের জল নেই অথচ আলোড়িত হৃৎপিণ্ড ঠিক কেঁদে যাচ্ছে। শব্দটার কথা খেয়াল হতে সে সচকিত হলো। তার উদর নেই, পাকস্থলী নেই। তবু শব্দটা হলো। শব্দটা যে মুখ থেকে বের হয়নি এ ব্যাপার সে স্থির নিশ্চিন্ত। তাহলে? বিছানায় এসে বসল স্বপ্নেন্দু তারপর খুব সন্তর্পণে কথা বলার চেষ্টা করল স্বপ্নেন্দু। অবিকল নিজের গলাটা শুনতে পেল সে। শুনতে পেল কী করে? তার কি শ্রবণ ইন্দ্রিয় কাজ করছে? স্বরযন্ত্র যার নেই কথা বলে কি করে? বিশ্বাস হলো না ঠিক, স্বপ্নেন্দু আবার একটু জোরে চিৎকার করে ডাকলো, স্বপ্নেন্দু।
আঃ। সত্যি। সে কথা বলতে পারছে। স্বপ্নেন্দু বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করতে গিয়ে খেয়াল করলো তার অক্ষিগোলক নেই তাই চোখের পাতা থাকার কথা নয়। তার মানে কখনও ঘুমুতে পারবে না সে। ঘুমুতে পারবে না, কিন্তু কথা বলতে পারবে। আচ্ছা, তার কথা কি সামান্য নাকি নাকি শোনাচ্ছে! ছেলেবেলায় গল্পের বইতে কঙ্কালদের যেরকম চন্দ্রবিন্দু দিয়ে কথা বলতে দেখত সেইরকম? সে আর একবার শব্দ করল। খুব স্বাভাবিক শোনাচ্ছে না স্বর। প্রথমবার আনন্দে ঠাওর হয় নি কিন্তু এখন মনে হচ্ছে নাকি ভাব আছে। কিন্তু স্বরটা বের হচ্ছে কোত্থেকে? দ্বিতীয়বার পরীক্ষা করতে গিয়ে স্বপ্নেন্দুর কাছে ধরা পড়ল। ওই প্রচণ্ড শক্ত অথচ অদৃশ্য গোলাকার বস্তুটি যা বুকের খাঁচায় হৃৎপিণ্ডটাকে আড়াল করে রেখেছে, শব্দটা আসছে ওর ভেতর থেকে। সে কি শুনতে পাচ্ছে ওই গোলকটির কারণে? মাথাটাকে যতটা সম্ভব বুকের কাছাকাছি নামিয়ে সে কথা বলল। হ্যাঁ, এটাই সত্য। তার শরীরটাকে সচল রাখার সমস্ত জাদু ওই অদৃশ্য গোলকের মধ্যে রয়েছে। শরীর বলতে শুধু এই হাড়গুলো। অত্যন্ত যত্নে সে গোলকটির গায়ে হাত বোলাল। তারপর গুনগুন করে উঠলো, এই আকাশে আমার মুক্তি আলোয় আলোয়। কি চমৎকার! তার স্বরে সুর আছে। একেই তো গান বলে। অথচ এতকাল সে একটা লাইনও সুরে গাইতে পারেনি।
সারাটা দিন স্বেচ্ছাবন্দি হয়ে কাটিয়ে দিলো স্বপ্নেন্দু। মাঝে মাঝে বাইরে থেকে চিৎকার কান্না ভেসে আসছে! ব্যাপারটি কী জানার জন্যে তার কৌতূহল হলেও সে বিছানা ছাড়ল না। নিজের অতীতের শরীরটার জন্যে ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল। তার দাড়ি কামাতে খুব বিরক্ত লাগত একথা ঠিক কিন্তু কামানো হয়ে গেলে গালটা কি নরম লাগত! চিবুকের কাছটা কি আদুরে ছিল। শরীরের বিভিন্ন অংশের ছবি একটু একটু করে মনে পড়ায় স্বপ্নেন্দু আরও ভেঙে পড়ল। এত বছর ধরে সযত্নে লালিত শরীরটা আজ এক লহমায় উধাও, এখন শুধু একটা কঙ্কাল তার পরিচয়। কিছুক্ষণ কাটা ছাগলের মতো ছটফট করল সে। তারপর নেতিয়ে রইল বিছানায়।
বিকেলে হয়েছে কখন? এক ফোঁটা ঘুম আসেনি চোখে। খিদের কোনো চিহ্ন নেই। স্বপ্নেন্দু ধীরে ধীরে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়াতে নিজেকে খুব হালকা বোধ করল। তারপর কাছে এসে সন্তর্পণে পাল্লাটা খুলতে নির্জন রাস্তাটা চোখে পড়ল। একটাও মানুষ নেই। গাড়িঘোড়া চলছে না। এবং বাতাসে একটা ঘোলাটে ভাব। তারপরেই নজরে এল। ঠিক উল্টোদিকের বাড়িটার গায়ে বেশ ঝাঁকড়া বটগাছ ছিল। বিকেলবেলায় পাখিরা তাতে হাট বসাত। সেই বট গাছটাকে চেনা যাচ্ছে না। পাতা নেই, ছোটো ডালগুলো অদৃশ্য হয়েছে। শুধু মোটা খুঁড়িটা পুড়ে কালচে হয়ে রয়েছে। স্বপ্নেন্দুর অস্বস্তি হচ্ছিল। পৃথিবীটা পাল্টে গেল নাকি? সব কিছু কেমন অচেনা দেখাচ্ছে। এই সময় সে শক্ত হলো। একটা মানুষ আসছে। খুব দ্রুত হাঁটছে লোকটা। অনেকটা কমিক ফিল্মের মতো। চ্যাপলিন এইরকম হাঁটতেন। লোকটা কে? কাছে আসতেই লোকটাকে দেখে হতভম্ব হয়ে গেলো স্বপ্নেন্দু। পরনে ফুলপ্যান্ট, ওভারকোট কিন্তু মাথাটা ন্যাড়া। চুল নেই, মাংস নেই। স্রেফ একটা কঙ্কালের মাথা। পায়ের দিকে নজর দিতে সে দেখল কিছুই নেই সেখানে। লোকটা মুহূর্তেই চোখের আড়ালে মিলিয়ে গেল।
চোখের গর্তে গর্ত আছে কিন্তু চোখ নেই। অথচ দেখতে সামান্য অসুবিধে হচ্ছে। সোজাসুজি ছাড়া বাকিটা অদৃশ্য থেকে যাচ্ছে। ডাইনে বাঁয়ে দেখতে হলে মুখ ঘোরাতে হচ্ছে। নাক আছে কিন্তু কোনো ঘ্রাণশক্তি নেই। জোরে নিশ্বাস ফেলল সে। হৃৎপিণ্ডের আরাম হলো কিন্তু কোনো গন্ধ পেল না।
মুখ হাঁ করল স্বপ্নেন্দু। জিভ নেই দাঁত আছে। অথচ দাঁতের গোড়ার মাংস না থাকায় সেগুলোকে নগ্ন বীভৎস দেখাচ্ছে। শরীরের নিম্ন অংশের দিকে তাকালো সে। তলপেট থেকে দুটো শক্ত মোটা হাড় দুপাশে ছড়িয়ে পা হয়ে নিচে নেমে গেছে। তার যৌন অঙ্গ ইত্যাদির চিহ্নমাত্র নেই।
স্বপ্নেন্দু এইসব ভাবতে ভাবতে কপালে হাত রাখল। তার মাথার মধ্যে কি চিন্তা করার নার্ভগুলো কাজ করছে? ব্রেইনবক্স কিংবা ক্ৰানিয়ামের ভেতরে কি মস্তিষ্ক অটুট আছে? নিশ্চয়ই আছে। তার ক্রানিয়াম মস্তিষ্ককে বাঁচিয়ে রেখেছে নইলে সে এতসব ভাবতে পারছে কী করে।
স্বপ্নেন্দু থর থর করে কেঁপে উঠল। এই কি সে? এই কালচে শুকনো চামড়া মাঝে মাঝে সেঁটে থাকা কঙ্কাল? খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সে নিজের মাথাটা দেখতে চেষ্টা করছিল। হ্যাঁ তাইতো। মা মারা যাওয়ার পর মাথা ন্যাড়া করেছিল। তখন আয়নার সামনে দাঁড়ালে মাথার আকৃতিটা যেমন দেখাত এখন অনেকটা সেইরকমই লাগছে। তবে আকারে ছোটো হয়ে গেছে কিন্তু আদলটা পাল্টায়নি।
বন্ধ দরজার দিকে তাকালো স্বপ্নেন্দু। তার হঠাৎ খুব ভয় করতে লাগল। সে মরে যায় নি কিন্তু এইভাবে কঙ্কাল হয়ে বেঁচে থাকার কথা সে কবে শুনেছে। পাঁচজনের সামনে বের হলে কী প্রতিক্রিয়া হবে সবার? স্বপ্নেন্দুর হৃৎপিণ্ড কেঁপে উঠে কান্নাটা ছিটকে এল। সামান্য শব্দ হলো। কিন্তু এক ফোঁটাও অশ্রু বের হলো না। চোখের জল নেই অথচ আলোড়িত হৃৎপিণ্ড ঠিক কেঁদে যাচ্ছে। শব্দটার কথা খেয়াল হতে সে সচকিত হলো। তার উদর নেই, পাকস্থলী নেই। তবু শব্দটা হলো। শব্দটা যে মুখ থেকে বের হয়নি এ ব্যাপার সে স্থির নিশ্চিন্ত। তাহলে? বিছানায় এসে বসল স্বপ্নেন্দু তারপর খুব সন্তর্পণে কথা বলার চেষ্টা করল স্বপ্নেন্দু। অবিকল নিজের গলাটা শুনতে পেল সে। শুনতে পেল কী করে? তার কি শ্রবণ ইন্দ্রিয় কাজ করছে? স্বরযন্ত্র যার নেই কথা বলে কি করে? বিশ্বাস হলো না ঠিক, স্বপ্নেন্দু আবার একটু জোরে চিৎকার করে ডাকলো, স্বপ্নেন্দু।
আঃ। সত্যি। সে কথা বলতে পারছে। স্বপ্নেন্দু বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করতে গিয়ে খেয়াল করলো তার অক্ষিগোলক নেই তাই চোখের পাতা থাকার কথা নয়। তার মানে কখনও ঘুমুতে পারবে না সে। ঘুমুতে পারবে না, কিন্তু কথা বলতে পারবে। আচ্ছা, তার কথা কি সামান্য নাকি নাকি শোনাচ্ছে! ছেলেবেলায় গল্পের বইতে কঙ্কালদের যেরকম চন্দ্রবিন্দু দিয়ে কথা বলতে দেখত সেইরকম? সে আর একবার শব্দ করল। খুব স্বাভাবিক শোনাচ্ছে না স্বর। প্রথমবার আনন্দে ঠাওর হয় নি কিন্তু এখন মনে হচ্ছে নাকি ভাব আছে। কিন্তু স্বরটা বের হচ্ছে কোত্থেকে? দ্বিতীয়বার পরীক্ষা করতে গিয়ে স্বপ্নেন্দুর কাছে ধরা পড়ল। ওই প্রচণ্ড শক্ত অথচ অদৃশ্য গোলাকার বস্তুটি যা বুকের খাঁচায় হৃৎপিণ্ডটাকে আড়াল করে রেখেছে, শব্দটা আসছে ওর ভেতর থেকে। সে কি শুনতে পাচ্ছে ওই গোলকটির কারণে? মাথাটাকে যতটা সম্ভব বুকের কাছাকাছি নামিয়ে সে কথা বলল। হ্যাঁ, এটাই সত্য। তার শরীরটাকে সচল রাখার সমস্ত জাদু ওই অদৃশ্য গোলকের মধ্যে রয়েছে। শরীর বলতে শুধু এই হাড়গুলো। অত্যন্ত যত্নে সে গোলকটির গায়ে হাত বোলাল। তারপর গুনগুন করে উঠলো, এই আকাশে আমার মুক্তি আলোয় আলোয়। কি চমৎকার! তার স্বরে সুর আছে। একেই তো গান বলে। অথচ এতকাল সে একটা লাইনও সুরে গাইতে পারেনি।
সারাটা দিন স্বেচ্ছাবন্দি হয়ে কাটিয়ে দিলো স্বপ্নেন্দু। মাঝে মাঝে বাইরে থেকে চিৎকার কান্না ভেসে আসছে! ব্যাপারটি কী জানার জন্যে তার কৌতূহল হলেও সে বিছানা ছাড়ল না। নিজের অতীতের শরীরটার জন্যে ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল। তার দাড়ি কামাতে খুব বিরক্ত লাগত একথা ঠিক কিন্তু কামানো হয়ে গেলে গালটা কি নরম লাগত! চিবুকের কাছটা কি আদুরে ছিল। শরীরের বিভিন্ন অংশের ছবি একটু একটু করে মনে পড়ায় স্বপ্নেন্দু আরও ভেঙে পড়ল। এত বছর ধরে সযত্নে লালিত শরীরটা আজ এক লহমায় উধাও, এখন শুধু একটা কঙ্কাল তার পরিচয়। কিছুক্ষণ কাটা ছাগলের মতো ছটফট করল সে। তারপর নেতিয়ে রইল বিছানায়।
বিকেলে হয়েছে কখন? এক ফোঁটা ঘুম আসেনি চোখে। খিদের কোনো চিহ্ন নেই। স্বপ্নেন্দু ধীরে ধীরে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়াতে নিজেকে খুব হালকা বোধ করল। তারপর কাছে এসে সন্তর্পণে পাল্লাটা খুলতে নির্জন রাস্তাটা চোখে পড়ল। একটাও মানুষ নেই। গাড়িঘোড়া চলছে না। এবং বাতাসে একটা ঘোলাটে ভাব। তারপরেই নজরে এল। ঠিক উল্টোদিকের বাড়িটার গায়ে বেশ ঝাঁকড়া বটগাছ ছিল। বিকেলবেলায় পাখিরা তাতে হাট বসাত। সেই বট গাছটাকে চেনা যাচ্ছে না। পাতা নেই, ছোটো ডালগুলো অদৃশ্য হয়েছে। শুধু মোটা খুঁড়িটা পুড়ে কালচে হয়ে রয়েছে। স্বপ্নেন্দুর অস্বস্তি হচ্ছিল। পৃথিবীটা পাল্টে গেল নাকি? সব কিছু কেমন অচেনা দেখাচ্ছে। এই সময় সে শক্ত হলো। একটা মানুষ আসছে। খুব দ্রুত হাঁটছে লোকটা। অনেকটা কমিক ফিল্মের মতো। চ্যাপলিন এইরকম হাঁটতেন। লোকটা কে? কাছে আসতেই লোকটাকে দেখে হতভম্ব হয়ে গেলো স্বপ্নেন্দু। পরনে ফুলপ্যান্ট, ওভারকোট কিন্তু মাথাটা ন্যাড়া। চুল নেই, মাংস নেই। স্রেফ একটা কঙ্কালের মাথা। পায়ের দিকে নজর দিতে সে দেখল কিছুই নেই সেখানে। লোকটা মুহূর্তেই চোখের আড়ালে মিলিয়ে গেল।