What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected চাঁদের আলোয় কয়েকজন যুবক (1 Viewer)

Kaptan Jacksparoow

Community Team
Elite Leader
Joined
Apr 6, 2019
Threads
328
Messages
5,981
Credits
45,360
T-Shirt
Profile Music
Recipe sushi
Rocket
Euro Banknote
Butterfly
চাঁদের আলোয় কয়েকজন যুবক
লেখক: হুমায়ুন আহমেদ



০১.

শামসুল আলম।

সে তিন বছর আগে সোসিওলজিতে এম. এ. পাশ করেছে। তার বয়স পঁচিশ। একহারা গড়ন। লম্বাটে মুখ। চোখ দুটি বড় বড় বলেই সব সময় সে বিস্মিত হয়ে চেয়ে আছে—এরকম মনে হয়। কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে তাকে ডাকা হত খোকা বাবু বলে। এই নাম থেকেই বোঝা যাচ্ছে, তার চরিত্রে শান্ত ভাবটি প্রবল।

তিন বছর ধরে শামসুল আলম চাকরি খুঁজছে। এই তিন বছরে একবার সে চাকরির নিয়োগপত্র পেল। একটি প্রাইভেট কোম্পানির সেলস রিপ্রেজেনটেটিভ। চাকরির শর্ত হচ্ছে, নিয়োগের আগে দুজন গেজেটেড অফিসারের ক্যারেক্টর সার্টিফিকেট এবং জামানত হিসেবে নগদ কুড়ি হাজার টাকা জমা দিতে হবে। কুড়ি হাজার টাকার ব্যবস্থা না হওয়ায় চাকরি হল না। ভাগ্যিস হয় নি! কারণ কোম্পানিটা ছিল ভূয়া। আলমের পরিচিত এক জন কুড়ি হাজার টাকা জমা দিয়েছিল। তাকে কাগজপত্র দিয়ে চিটাগাং অফিসে যেতে বলা হল। দেখা গেল টিচাগাং-এর ঠিকানায় একটা রেস্টুরেন্ট চলছে। ঐ কোম্পানির নামও কেউ শোনে নি।

আলমের বাবা সাইফুদ্দিন সাহেব ছোটাখাটো মানুষ। তিনি একটি ইনস্যুরেন্স কোম্পানির মাঝারি ধরনের অফিসার। ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে যারা চাকরি করে, তারা সহজে কারো উপর রাগ করে না। সাইফুদ্দিন সাহেবও করতেন নাশান্তশিষ্ট নির্বিরোধী মানুষ ছিলেন তবে ইদানীং তাঁরও ধৈর্য-চ্যুতি হয়েছে। তিনি প্রায়ই বলছেন যে, আলমের মতো বড় গাধা তিনি তাঁর জীবনে দেখেন নি। তিন বছরে যে একটা চাকরি জোগাড় করতে পারে না সে তো গাধারও অধম। অবশ্যি এই কথাগুলো তিনি সরাসরি আলমকে বলেন না, কারণ, তাঁর বড় ছেলেকে তিনি বেশ পছন্দ করেন।

শেষ পর্যন্ত আলম একটা চাকরি পেল। কোনোরকম ইন্টারভ ছাড়াই চাকরি। ফরিদপুর আবু নসর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক। স্কুল কমিটির সেক্রেটারি তাকে জানালেন যে, স্কুলটি অতি মনোরম স্থানে অবস্থিত। স্কুলের আর্থিক অবস্থাও ভালো। প্রতি মাসের প্রথম সপ্তাহেই বেতন হয়। শিক্ষকদের থাকার জায়গা আছে। পল্লী বিদ্যুতায়ন প্রকল্পে অতিসত্বর স্কুলে বিদ্যুৎ চলে আসবে, ইত্যাদি।

আলমের এই চাকরি নেবার কোনো ইচ্ছা নেই। তার মন বলছে, একবার এই চাকরিতে ঢুকলে আর বের হওয়া যাবে না। তবে সাইফুদ্দিন সাহেব তাকে প্রবল চাপের মধ্যে রাখছেন। রোজই বোঝাচ্ছেন—স্কুল মাস্টারি খারাপ কী? এড়ুকেশন লাইন হচ্ছে বেস্ট লাইন, দেশের সেবা হবে। পড়াশোনা নিয়ে থাকবি। স্কুল টিচারদের এখন নানান রকম সুযোগ-সুবিধা। গ্রামের মধ্যে টাকা খরচের জায়গা নেই। বেতন যা পাবি সবটাই জমবে। শহরের পাঁচ হাজার টাকা আর গ্রামের দুহাজার টাকা হচ্ছে ইকুভেলেন্ট। তাছাড়া মাস্টারি করতে করতে বি. সি.এস-এর প্রিপারেশনও নিতে থাক। বইপত্র সঙ্গে নিয়ে যা। নিরিবিলিতে পড়বি। এদিকে খোঁজ খবরতো আমরা করছি। আমেরিকাতে তোর ছোট মামাকে বলা আছে, কোনো ব্যবস্থা করতে পারলে তাকে নিয়ে যাবে।

আমেরিকার ছোট মামা হচ্ছে আলমদের পরিবারের বাতিঘর। কোনো সমস্যা হলেই তাঁর কথা সবার মনে পড়ে। সবার ধারণা, তাঁকে চিঠি লিখলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। চিঠি লেখা হয়—কখনো কোনো সমস্যার সমাধান হয় না। ছোট মামা নববর্ষ উপলক্ষে চমৎকার সব কার্ড পাঠান। সেই সব কার্ডের কোণায় লেখা থাকে–কার কী লাগবে জানাও। এই পর্যন্তই।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top