What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected কৃষ্ণপক্ষ -উপন্যাস (1 Viewer)

‘তাহলে মনে করিয়ে দেই। ছেলেমেয়েদের নিয়ে খুব আগ্রহ করে মামা একদিন আমাকে দেখতে এলেন। তুমি এমন ভঙ্গি করলে যে এ কি যন্ত্রনা! মামা সোজা মানুষ তোমার এই ভঙ্গি ধরতে পারলেন না। মহানন্দে তিনি বাড়িঘর দেখতে লাগলেন। আনন্দে এবং বিস্ময়ে তিনি অভিভূত। বার বার বলছেন – “আমার জেবা মা‘র রাজকপাল।“ আমি জানি আমার “কি কপাল“। তবু মামার আনন্দ দেখে আমারো আনন্দ হল। তাঁরা যখন চলে গেলেন তুমি আমাকে এসে বললে, আমার রোলেক্স ঘড়িটা পাচ্ছি না। ড্রেসিং টেবিলের উপর ছিল। তুমি শুনলে আহত হতে পার। তবু বলছি, আমি নিশ্চিত তোমাদের বাড়ির কেউ কাণ্ডটা করেছে। আমি খোঁজ নেবার জন্যে লোক পাঠাচ্ছি।
মানুষ হিসেবে তোমার প্রতি আমার উঁচু ধারণা কখনোই ছিল না। তবুও এ-ধরনের চিন্তা তুমি করতে পার, তা ভাবিনি। আমি পাথর হয়ে গেলাম। একবার ভাবলাম তোমার পা জড়িয়ে ধরে বলি – এটা করো না। এই দয়াটা তুমি আমার প্রতি করো। শেষ পর্যন্ত তাও করা হল না। পা জড়িয়ে ধরতে ঘৃণা বোধ হল। তুমি চিঠি দিয়ে মামার কাছে লোক পাঠালে। মামা ছুঁটে এলেন এবং ব্যাকুল হয়ে কাঁদতে লাগলেন। মনে আছে?‘
‘ঘড়ি বিষয়ে খোঁজ নেয়া কি খুব অযৌক্তিক ছিল? অলগোল্ড রোলেক্স ঘড়ি, পঞ্চাশ হাজার টাকা দাম। তার চেয়ে বড় কথা এটা আমার দাদার দেয়া গিফট্‌, স্মৃতিচিহ্ন। আমি খোঁজ করব না? এতগুলি মানুষ ঐদিন এ-বাড়িতে এসেছে। দরিদ্র মানুষ। অভাবের তাড়নায় দরিদ্র মানুষের স্বভাব নষ্ট হয়। তাদের পক্ষে ঘড়ি নিয়ে যাওয়াটা কি খুব অস্বাভাবিক? আমি তো মনে করি, আমি ঐদিন যা করেছিলাম ঠিকই করেছিলাম। অযৌক্তিক কিছু করিনি।‘
‘তোমার সব কাজই যৌক্তিক। চমৎকার একজন যুক্তিবাদী মানুষ তুমি। উনিশ বছর ধরে তোমার যুক্তি শুনছি আর মুগ্ধ হচ্ছি। আর ইচ্ছা করছে না। এই যে আমি হাসপাতালে যাচ্ছি। এ-বাড়ি থেকে এটাই আমার বের হয়ে যাওয়া। আমি আর ফিরে আসব না।‘
‘কি বললে?‘
‘যা বলেছি তুমি ভালমতই শুনেছ। তারপরেও যদি শুনতে চাও আবার বলতে পারি। শুনতে চাও?‘
‘তোমার মেয়ে?‘
‘এই মেয়ে আমি তোমাকে দিয়ে গেলাম। তুমি তোমার মত করেই ওকে মানুষ কর। এর জন্ম আমাদের দুজনের ভালোবাসায় হয়নি। এর প্রতি আমার কোন আকর্ষণ নেই।‘
‘তুমি যেসব কথা বললে, তার জন্যে তোমার অনুতাপের কোন সীমা থাকবে না।‘
‘না থাকলে কি আর করা। অনুতাপ করব। তবে তোমার কাছ থেকে অনেক দূরে থেকে করব। তোমার মুখ দেখতে হচ্ছে না এই আনন্দ অনুতাপের চেয়ে লক্ষগুণ বেশি হবে। এই কথাটি সত্যি।‘
জেবা চেয়ার ছেড়ে উঠতে উঠতে বলল, তুমি হয়ত জান না, বুধবারে মুহিব গোপনে একটি মেয়েকে বিয়ে করেছে। বিয়েটা তাকে গোপনে করতে হয়েছে। আমাকেও সে জানায়নি কারণ তুমি। তার জীবনের চরম আনন্দের ঘটনায় আমি পাশে ছিলাম না। তার কারণও হচ্ছ তুমি। বেচারা ভয়ে আমাকে পর্যন্ত বলতে পারেনি। আমাকে বললে যদি তুমি শুনে ফেল। তোমার কাছ থেকে শেষ একটা সুবিধা নেই। তুমি কি তোমার ড্রাইভারকে বলে দেবে যেন আমাকে হাসপাতালে নামিয়ে দিয়ে আসে? আমি বললে তো হবে না। ড্রাইভারকে তুমি বলে রেখেছ গাড়ি বের করতে হলে সব সময় তোমাকে জিজ্ঞেস করে করতে হবে। ঠিক না?‘
শফিকুর রহমান উঠে দাঁড়ালেন। জেবা বলল, সব মন্দ দিকেরও একটা ভাল দিক থাকে। মুহিবের জীবন সংশয় না হলে আজ যেভাবে ঘর থেকে বের হয়ে যেতে পারছি তা পারতাম না। সারা জীবন থাকতে হত তোমার সঙ্গে।
জেবা থু করে কার্পেটে থু থু ফেলল।
‘তুমি অসম্ভব উত্তেজিত। উত্তেজিত অবস্থায় তুমি কি বলছ নিজেও জান না।‘
‘আমি কি বলছি আমি খুব ভাল জানি। এখন তোমাকে যা বললাম তার প্রতিটি শব্দ আমি মনে মনে লক্ষবার করে বলেছি।‘
‘আমার সম্পর্কে বলা যায় এমন ভাল কিছু কি নেই?‘
‘আছে, একটা আছে। বিয়ের পর তুমি আমাকে পড়াশোনা করিয়েছ। ইংরেজী সাহিত্যে আমি এম.এ. পাশ করেছি, তোমার জন্যেই করেছি। সংসারে ছেলেমেয়ে এলে পড়াশোনায় ক্ষতি হবে, কাজেই আমাদের মেয়ে সারার জন্ম হল বিয়ের ন‘বছর পর। খুব সাবধানে এই সব বিষয়ও তুমি লক্ষ্য করেছ। ওস্তাদ রেখে গান শিখিয়েছ। গায়িকা হিসেবে আমি মোটামুটি ধরনের। সেই গায়িকাকে আজ যে লোকে চেনে, উৎসাহী বালিকারা যে অটোগ্রাফ চায় তার কারণ তুমি বিস-র ধরাধরি করে আমাকে রেডিও, টিভিতে সুযোগ করে দিয়েছ। এটা অবশ্যই তোমার ভাল দিক। এই ভাল দিকেও কিন্তু ফাঁকি আছে। তুমি যা করেছ তা আমার জন্য করনি, তোমার নিজের জন্যে করেছ। লোকে বলবে তোমার স্ত্রী এম.এ. পাশ, লোকে বলবে তোমার স্ত্রী বিখ্যাত গায়িকা … ভুল বললাম?‘
 
শফিকুর রহমান জবাব দিলেন না। জেবার ঠোঁট হাসির ভঙ্গিমায় একটু উল্টে গেল। সে তার গলার স্বর খানিকটা নামিয়ে বলল, তুমি কি তোমার বিখ্যাত গায়িকা স্ত্রীর গান কখনো শুনতে চেয়েছ? বর্ষার রাতে কখনো কি তার ঘুম ভাঙ্গিয়ে তাকে বলেছ – “আজি ঝর ঝর মুখর বাদল দিনে“ এই গানটা একটু গাও তো শুনি?
‘সবার সব বিষয়ে উৎসাহ থাকে না।‘
‘ঠিক বলেছ। সবার সব বিষয়ে উৎসাহ থাকে না। তোমার একটি বিষয়েই উৎসাহ – স্ত্রীকে নগড়ব করে তার দিকে তাকিয়ে থাকা।‘
‘স্টপ ইট।‘
‘চেঁচিও না। চেঁচিয়ে কিছু হবে না।‘
জেবা আবার কার্পেটে থু ু ফেলল। পাশের ঘরে সারা কাঁদছে। সে হয়ত বাবা-মা‘র চিৎকার বা হৈচৈ শুনেছে। কিংবা কোন কারণে তার কাঁচা ঘুম ভেঙ্গে গেছে। দশ বছর বয়স হলেও এই মেয়ে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেলে খানিকক্ষণ কাঁদে। অন্য সময় হলে জেবা ছুটে যেত। আজ গেল না। কালো হ্যাণ্ডব্যাগ হাতে নিতে নিতে বলল, মেয়ের কাছে যাও। আমি বিদায় হচ্ছি। গাড়ি নেব না। এমন কিছু রাত হয়নি। আমি একটা রিকশা নিয়ে চলে যাব।
অনেকক্ষণ দরজা নক করার পর সারা দরজা খুলল। শফিক সাহেব বললেন, কাঁদছ কেন মা?
সারা চোখ মুছতে মুছতে বলল, মামার জন্য খুব খারাপ লাগছে।
‘খারাপ লাগাইতো স্বাভাবিক। কাঁদলে কি খারাপ লাগা দূর হবে?‘
‘কানড়বা এলে আমি কি করব?‘
‘নিজেকে সামলাতে হবে। যাও, বাথরুমে যাও, হাত মুখ ধুয়ে আস।‘
‘বাবা, আমি মামার কাছে যেতে চাই।‘
‘কি হবে সেখানে গিয়ে? তুমি তো ডাক্তার না। তুমি কোনভাবেই তাকে সাহায্য করতে পারবে না।‘
‘সাহায্য করার জন্য তো আমি যেতে চাচ্ছি না।‘
‘তাহলে কি জন্যে যেতে চাও?‘
‘আমি মামার বন্ধুদের মত ক্লিনিকের বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকব। আমার যদি কাঁদতে ইচ্ছে করে, আমি কাঁদব। মামার যে বন্ধুটা চিৎকার করে কাঁদছিল আমি সে-রকম চিৎকার করে কাঁদব।‘
‘সারা, মা তুমি বোকা মেয়ের মত কথা বলছ।‘
‘আমাকে সারা ডাকবে না বাবা। এই নাম আমার ভাল লাগে না। আমাকে প্রিয়দর্শিনী ডাকবে।‘
‘কে তোমাকে এসব বলতে শিখিয়েছে? তোমার মা?‘
‘যা শেখার আমি নিজে নিজে শিখি। কারো কাছ থেকে আমি কিছু শিখি না।‘
কোনদিন শফিকুর রহমান যা করেন না আজ তাই করলেন। মেয়ের গালে চড় বসিয়ে দিলেন। প্রিয়দর্শিনী কার্পেটে ছিটকে পড়ল তবে কেঁদে উঠল না। অদ্ভূত ভঙ্গিতে তাকিয়ে রইল বাবার দিকে।
 
॥ ৯ ॥
মুহিবের সব বন্ধুরাই এখনো আছে। চারজন ছিল, তার সঙ্গে আরো দুজন যুক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে একজনের নাম তোফাজ্জল। সে হাসপাতালের ডাক্তারদের বড় বিরক্ত করছে। দশ মিনিট পর পর হাত কচলাতে কচলাতে জিজ্ঞেস করছে, স্যার অবস্থা কি রকম দেখছেন? ইমপ্রুভমেন্ট বোঝা যায়? ব্লাড লাগবে কি-না একটু কাইণ্ডলি বলবেন? আমার আর মুহিবের সেম ব্লাড গ্রুপ – বি পজেটিভ।
শুরুতে ডাক্তাররা তার প্রশ্নের জবাব দিচ্ছিলেন। এখন দিচ্ছেন না। তাকে দেখামাত্র বিরক্ত হচ্ছেন। তোফাজ্জল এইসব বিরক্তি গায়ে মাখছে না। সে যে শুধু ডাক্তারদের বিরক্ত করছে তাই না, নার্সদেরও বিরক্ত করছে। বিশেষ করে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের নার্সদের। দরজায় টোকা দিয়ে বলছে – সিস্টার, একটু বাইরে আসবেন? জাস্ট ফর এ সেকেণ্ড। রুগীর অবস্থাটা একটু বলবেন? খুব টেনশান ফিল করছি। অবস্থা স্টেবল কি-না বলুন। ব্লাড লাগলে জানিয়ে দিলেই হবে। আমারো বি পজেটিভ। আপা কি মনে করেন, অবস্থাটা এখন ভালর দিকে না?
মুহিবের অবস্থা ভালর দিকে নয়। জ্ঞান এখনো আসেনি। সে আছে কোমার ভেতর। হার্টবিট নেমে গেছে। মাঝে মাঝে দু‘একটা বিট মিস করা শুরু করেছে। পায়ের পাতা হয়েছে হালকা নীল যার মানে ফুসফুস রক্ত তেমনভাবে পরিষ্কার করতে পারছে না। রক্তে অক্সিজেন
ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। বাইরে থেকে অক্সিজেন দিয়েও সেই ঘাটতি পুরণ হচ্ছে না। রিফ্লেক্স এ্যাকশান সর্ব নিু পর্যায়ে। চোখের মণিতে কড়া আলো ফেলার পরও মণি তেমনভাবে সংকুচিত হচ্ছে না।
রাত দশটায় রেসিডেন্ট ফিজিশিয়ান তোফাজ্জলকে তার ঘরে ডেকে নিয়ে গেলেন। শুকনো গলায় বললেন, রুগীর অবস্থা ভাল না।
তোফাজ্জল ক্ষীণ স্বরে বলল, একটু আগে একজন সিস্টার বললেন অবস্থা স্টেবল।
‘এখনো স্টেবল। স্টেবল মানেই ভাল তা তো না। অবস্থা খারাপ হওয়া শুরু করেছে।‘
‘ও।‘
‘আমাদের তেমন কিছু করণীয় নেই।‘
‘স্যার, পিজিতে কি ট্রান্সফার করব?‘
‘তাতে কোন উনিশ-বিশ হবে বলে মনে হয় না। পিজিতে যেসব ফেসিলিটি আছে আমাদেরও আছে। আমরা চেষ্টার ত্রুটি করছি না। একমাত্র অপেক্ষা করা ছাড়া এখন আর কিছু করার নেই। অপেক্ষা করুন এবং প্রার্থনা করুন।‘
‘ব্লাড কি লাগবে স্যার?‘
‘একটু পর পর ব্লাডের কথা জিজ্ঞেস করছেন কেন? লাগলে আপনাদের জানাতাম। রুগী আপনার কে হয়?‘
‘ভেরী ক্লোজ ফ্রেণ্ড স্যার।‘
বলতে বলতে তোফাজ্জল কেঁদে ফেলল। মুহিব তার বিয়ের সময় তাকে খবর দেয় নি। এই দুঃখেও সে একবার কেঁদেছে। এখন কাঁদছে সম্পূর্ণ ভিনড়ব রকম দুঃখে। বছর তিনেক আগে তোফাজ্জলের আলসার অপারেশন হল। দু‘ ব্যাগ রক্ত লেগেছিল। সেই দু‘ ব্যাগ রক্ত মুহিব দিয়েছে। রক্তের ঋণ শোধ হয় নি।
ডাক্তার সাহের অস্বাভাবিক কোমল গলায় বললেন, ভাই কাঁদবেন না। আপনি রুগীর আত্মীয় স্বজন সবাইকে খবর দিন। খুব খারাপ কিছুর জন্যে সবাইকে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে বলুন। আরেকটা কথা – আপনি ইনটেনসিভ ইউনিটের নার্সদের আর বিরক্ত করবেন না। প্লীজ। ওরা আপনার বিরুদ্ধে কমপে−ইন করেছে।
‘স্যার, আমি আর বিরক্ত করব না।‘
তোফাজ্জল ডাক্তারের ঘর থেকে বের হয়ে এল চোখ মুছতে মুছতে। তার বন্ধুরা তাকে কিছুই জিজ্ঞেস করল না। সেও কিছু বলল না। শুধু যখন জেবা এসে বারান্দায় দাঁড়াল তখন সে বলল, আপা, ডাক্তার সাহেব বললেন মুহিবের অবস্থা ভাল না। আত্মীয়-স্বজনদের খবর দিতে বললেন।
জেবা ক্লান্ত গলায় বলল, খবর দেয়ার আর কেউ নেই। ঐ মেয়েটা কি এসেছিল, অরু?
‘জ্বি-না।‘
‘ওর বাসার ঠিকানা কি তোমরা কেউ জান? আমি মেয়েটিকে নিয়ে আসব।‘
 
॥ ১০ ॥
রাহেলা বললেন, রাত তো অনেক হয়েছে, দশটা প্রায় বাজে খেয়ে যাও না। আবরার লজ্জিত ভঙ্গিতে বলল, জ্বি না। এখন উঠব। অনেক দেরি করে ফেললাম।
অরু বলল, উঠব বলে তো বসেই আছেন। উঠছেন তো না।
মীরু তাকাল শাসনের ভঙ্গিতে। চোখের ভাষায় বলার চেষ্টা – এসব কি হচ্ছে?
রাহেলা বললেন, বাবা তুমি পা তুলে আরাম করে বস। ঘরে যা আছে তাই খাবে। আমি খাবার দিতে বলে আসি।
মীরু বলল, আমরা কিন্তু খুব ঝাল খাই। আপনি ঝাল খেতে পারবেন তো?
‘চেষ্টা করে দেখি।‘
‘আবীরের বাবা আবার একদম ঝাল খেতে পারে না। কাঁচা মরিচ কিনতে গিয়ে দোকানদারকে কি বলে জানেন? বলে – এই যে ভাই, ঝাল নেই এমন কাঁচা মরিচ আছে?‘
‘উনি আছেন কেমন?‘
‘ভাল আছে। আজই কথা বললাম। অবশ্যি খুব ভাল বোধহয় নেই। আমার কাছে তার গলার স্বর একটু ভারি ভারি লাগল। মনে হয় ঠাণ্ডা লেগেছে। ঠাণ্ডা লাগলে গলার স্বর ভারি হয়ে যায় না?‘
আবরার হাসিমুখে বলল, ডাক্তারী শাস্ত্রে এমন কথা পড়ি নি। তবে হতে পারে।
‘জানেন মাঝে মাঝে ওর গলা আমি একদম চিনতে পারি না। একদিন কি হয়েছে জানেন, সে অফিস থেকে টেলিফোন করে আমাকে বলল, মীরু, কেউ কি আমার খোঁজ করেছিল? আমি একদম গলা চিনতে পারলাম না। আমি বললাম, কে? কে কথা বলছেন? ইন্টারেস্টিং না?‘
‘ইন্টারেস্টিং তো বটেই।‘
মীরু আরেকটা গল্প শুরু করতে যাচ্ছিল। রাহেলা তাকে রানড়বাঘরে ডেকে নিয়ে গেলেন। বিরক্ত স্বরে বললেন, তোর কি বুদ্ধি-সুদ্ধি একেবারেই নেই? ওকে অরুর সঙ্গে গল্প করতে দে। ও অরুর সঙ্গে কথা বলতে এসেছে। তোর বকবকানি শোনার জন্যে আসে নি। তখন থেকে আঠার মত লেগে আছিস।
মীরু আহত গলায় বলল, আঠার মত কখন লেগে রইলাম? বাবুর শরীর খারাপ। বাবুকে দেখাচ্ছিলাম।
‘দেখানো তো হয়েছে। এখন চুপচাপ আমার সামনে বস।‘
মীরু গম্ভীর মুখে বসল। তার মনটা খারাপ। আবীরের বাবা প্রসঙ্গে একটা মজার গল্প মনে হয়েছিল। গল্পটা বলা গেল না। খাবার টেবিলেও বলা যাবে না। বাবাও নিশ্চয়ই একসঙ্গে খেতে বসবেন। এইসব হালকা ধরনের গল্প বাবার সঙ্গে করা যায় না।
রাহেলা চাকচাক করে আলু কাটছেন। ঘরে খাবার তেমন কিছু নেই। আলু ভাজি করে দেবেন। একটা পদ বাড়বে। দুপুরের মাছ আছে, রাতে ডিমের তরকারী করা হয়েছে। মাছ, ডিমের তরকারী, আলুভাজা। ডাল রানড়বা হয়নি। অনেকে আবার ডাল ছাড়া খেতে পারে না।
একটু ডাল কি বসিয়ে দেবেন? আধ ঘণ্টার মত লাগবে। আচ্ছা লাগুক। এক রাতে একটু দেরি করে খেলে কিছু হবে না। মীরু কেমন মুখ কালো করে বসে আছে। রাহেলার মায়া লাগল, তিনি কোমল গলায় ডাকলেন, মীরু?
‘কি?‘
‘মুখ কালো করে বসে আছিস কেন? তুই কি রাগ করেছিস আমার কথায়?‘
‘না।‘
‘আচ্ছা তোর কাছে আবরার ছেলেটাকে কেমন লাগে?‘
‘ভাল।‘
‘কি রকম ভাল?‘
‘বেশ ভাল। ভদ্র। চেহারাও সুন্দর। অবশ্যি গায়ের রঙ শ্যামলা ধরনের। আবীরের বাবার পাশে দাঁড়ালে বেচারাকে রীতিমত কালো লাগবে। আমেরিকায় থেকে এখন নিশ্চয়ই আরো ফর্সা হয়েছে।‘
রাহেলা বিরক্ত মুখে বললেন, ফর্সা হবারই কথা।
‘তুমি তোমার দুই জামাইয়ের মধ্যে কাকে বেশি পছন্দ কর মা?‘
‘দ্বিতীয় জন জামাই এখনো হয়নি। হোক, তারপর দেখা যাবে।‘
‘ধর হয়েছে। হতে বাকিও বেশি নেই।‘
‘বড় জামাইকেই বেশি পছন্দ করব। বড়র মর্যাদাই আলাদা।‘
‘তোমার বড় জামাই তোমাকে খুব পছন্দ করে। প্রতি চিঠিতে তোমার কথা থাকে। লাস্ট চিঠিতে লিখল – মা‘র শরীরের দিকে লক্ষ্য রাখবে। ব্লাড প্রেসার এই বয়সে কন্ট্রোলে রাখতে হয়। তুমি খুব খেয়াল রাখবে। মা বুড়ো মানুষ – ওষুধ খাবার কথা হয়ত মনেই থাকবে না …‘
রাহেলা বিস্মত হয়ে বললেন, তুই কি চিঠি মুখস্থ করে ফেলেছিস না-কি?
মীরু লাজুক গলায় বলল, অনেকবার করে পড়ি তো। মুখস্থ হয়ে যায়। এই যে ওর চিঠিটা তোমাকে পড়ে শুনালাম এর মধ্যে একটা ইন্টারেস্টিং জিনিস লক্ষ্য করেছ?
‘না।‘
‘ইন্টারেস্টিং হচ্ছে সব জামাইরা শাশুড়িকে আম্মা ডাকে। ও কিন্তু তোমাকে ‘মা‘ ডাকে। মা ডাকটা অনেক আন্তরিক না?‘
রাহেলা কঠিন কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলেন না। তাঁর দাঁতব্যথা তীব্র হচ্ছে। বসে থাকতে পারছেন না।
 
অরু বলল, আপনি পা তুলে আরাম করে বসছেন না কেন? পায়ে ঠাণ্ডা লাগছে না? পায়ের উপর চাদর টেনে দিন।
আবরার বলল, তোমার মা‘র বিছানায় পা তুলে বসতে সংকোচ লাগছে।
‘এটা মা‘র বিছানা মোটেই না। এটা হচ্ছে গেস্ট বিছানা। বাবা-মা‘র ঝগড়া হলে মা এখানে ঘুমুতে আসেন।‘
‘এখন কি উনাদের ঝগড়া চলছে?‘
‘হ্যাঁ চলছে। সপ্তাহে তাঁরা আটবার ঝগড়া করেন। এমন সব তুচ্ছ বিষয় নিয়ে ঝগড়া যে মাঝে মাঝে তাঁদেরকে খুব ছেলেমানুষ মনে হয়। আজ কি নিয়ে তাঁদের ঝগড়া হয়েছে জানেন?‘
‘কি নিয়ে?‘
‘দাঁতব্যথা নিয়ে। মার দাঁত ব্যথা করছিল। বাবা বললেন লবণ-পানি দিয়ে কুলকুচা করতে। মা বললেন, এতে কিছু হয় না। বাবা রেগে গেলেন – তুমি কি করে দেখেছ যে হয় না? না করেই বললে, হয় না। যুক্তি এবং কাউন্টার যুক্তি চলতে লাগল। এক পর্যায়ে বাবা … থাক সেটা আর আপনাকে বলব না।‘
অরু মিটিমিটি হাসতে লাগল। আবরার মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে। এই মেয়ের কথা বলার ভঙ্গি এত সুন্দর। চোখ ফিরিয়ে নেয়া যায় না। মেয়েটা কি বলছে সেদিকে লক্ষ্য থাকে না – কি করে কথা বলছে তাই প্রধান হয়ে দাঁড়ায়। আবরার ঠিক করে রেখেছে সে বিয়ের পর অরুকে বলবে, তুমি প্রতি রাতে এক ঘণ্টা আমার সামনে বসবে এবং ননস্টপ কথা বলে যাবে। এক মুহূর্তের জন্যেও থামতে পারবে না।
‘অরু।‘
‘জ্বি।‘
‘তোমরা দু‘বোন সম্পূর্ণ দু‘রকম। চেহারায় মিল ছাড়াও জেনেটিক কারণে বোনে বোনে কিছু মিল থাকে। তোমাদের তাও নেই।‘
‘মিল আছে। দু‘জনের কাউকেই তো আপনি ভালমত জানেন না, তাই ধরতে পারছেন না।‘
‘মিলটা কি বল তো?‘
অরু শান্ত গলায় বলল, ভালবাসার ক্ষমতা আমাদের দু‘বোনেরই অসাধারণ। আমরা পাগলের মত ভালবাসতে পারি। আমার দুলাভাই প্রাণী হিসেবে খুবই নিুশ্রেনীর। তাকে যে কি পরিমান ভাল আপা বাসে তা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না।‘
‘এটা কি ভাল?‘
‘কেন ভাল না? ভালকে তো সবাই ভালবাসে। মন্দকে ক‘জন ভালবাসতে পারে?‘
আবরার আগের মত মুগ্ধ চোখে আবার তাকাল। সে ভেবে পাচ্ছে না তার এই মুগ্ধতা বিয়ের পরেও থাকবে কি-না। এই মেয়েটি খুব সহজ খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে কথা বলছে। এটিও একটি অস্বাভাবিক ব্যাপার। যার সঙ্গে অল্প ক‘দিন পর বিয়ে হবে তার সঙ্গে এত স্বাভাবিক ভঙ্গিতে কি কথা বলা যায়? লজ্জা, দ্বিধা, সংকোচ খানিকটা হলেও তো আসবে। এই মেয়েটার মধ্যে তা আসছে না কেন?‘
‘অরু?‘
‘জ্বি।‘
‘প্রায় তোমকে একটা কথা জিজ্ঞেস করতে চাই, মনে থাকে না।‘
‘এখন নিশ্চয়ই মনে পড়েছে।‘
‘হ্যাঁ। তুমি খুব সহজভাবে আমার সঙ্গে কথা বল, আমার ভাল লাগে। আমি আবার কারো সঙ্গে খুব সহজ হতে পারি না। সহজ হতে ইচ্ছা করে কিন্তু পারি না। আমি যখন আমার মা‘র সঙ্গে কথা বলি তখনো খানিকটা আড়াল থাকে।‘
‘এইতো এখন সহজভাবে কথা বলছেন। এখন কি কোন আড়াল বোধ করছেন?‘
‘না করছি না।‘
‘তাই বলুন।‘
আবরার ইতস্ততঃ করে বলল, তোমার সঙ্গে কি মুহিব নামের কোন ছেলের পরিচয় আছে? আমার দূর সম্পর্কের এক ভাগিড়ব দিন দশেক আগে হঠাৎ একগাদা কথা বলল …
আবরার থেমে গেল। অরু চুপ করে আছে। তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে। আবরার অস্বস্তির সঙ্গে বলল, আমি অবশ্যি কিছুই মনে করি না। পরিচয় থাকাটাই স্বাভাবিক। ছেলে-মেয়েরা এক সঙ্গে ইউনিভার্সিটিতে পড়ছে। মেয়েদের শুধু মেয়ে বন্ধু থাকবে ছেলে বন্ধু থাকবে না তা কি
হয়?‘
অরু আবরারকে থামিয়ে দিয়ে বলল, আপনার ভাগিড়ব ঠিকই বলেছে। মুহিব নামের একজনের সঙ্গে আমার খুব ভাল পরিচয় আছে।
আবরার চুপ করে আছে। প্রসঙ্গটা তোলায় সে নিজেই বিব্রত বোধ করছে। তবে অরুর মধ্যে বিব্রত বা অস্বস্তিবোধের তেমন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। অরু বলল, আর কিছু কি জানতে চান?
আবরার বলল, এই না না, কিছুই জানতে চাই না। যে সহপাঠি বন্ধুরা একসঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছে, হৈচৈ করছে – বন্ধুর মত সম্পর্ক। এটা আমার কাছে খুব হেলদি বলে মনে হয়। অরু, তুমি কখনো মনে করবে না যে বিয়ের পর আমি তোমাকে সবার কাছ থেকে আলাদা করে ক্ষুদ্র গণ্ডিতে বন্দি করে ফেলব। মনের এইটুকু ঔদার্য আমার আছে।
অরু বলল, আমি আপনাকে একটা চিঠি লিখেছি।
‘আবরার বিস্মিত হয়ে বলল, কি চিঠি?‘
‘আমি আপনার সঙ্গে খুব সহজ ভঙ্গিতে কথা বললেও আমার এমন কিছু কথা আছে যা সহজভাবে বলতে পারছি না। এই জন্যেই চিঠি লিখেছিলাম।‘
‘কোথায় সেই চিঠি?‘
‘চিঠিটা আমার পছন্দ হয়নি। আবার নতুন করে লিখব – আজ রাতেই লিখব। কাল আপনাকে আমি নিজের হাতে দিয়ে আসব।‘
‘বিষয়বস্থ কি জানতে পারি?‘
‘কাল জানবেন।‘
‘অরু, কোন সমস্যা আছে কি?‘
অরু ক্ষীণস্বরে বলল, আছে। সমস্যা আছে। বড় রকমের সমস্যা আছে।
আবরার তাকিয়ে আছে। অরুও তাকিয়ে আছে। তবে সে তাকয়ে আছে জানালার দিকে।
বাইরে বৃষ্টি নেমেছে। বারান্দায় বাতি জ্বলছে বলেই বৃষ্টির ফোটা চোখে পড়ছে। আলো পড়ে বৃষ্টির ফোটাগুলি মুক্তার মত ঝিকমিক করছে। অরুর কানড়বা পাচ্ছে। কানড়বা আটকে রাখতে কষ্ট হচ্ছে। মীরু এসে বলল, কি ব্যাপার, দু‘জন চুপচাপ কেন? খাবার দেয়া হয়েছে। আবরার লক্ষ্য করল, অরুর হাতে আংটি নেই। এমন কোন বড় ব্যাপার নয় তবু কেন জানি এক ধরনের অস্বস্তি বোধ হচ্ছে।হাতে আংটি নেই – অরু নিজেও কি এ-ব্যাপারটায় গুরুত্ব দিচ্ছে? হাত আড়াল করার চেষ্টা করছে কেন?
অরু খেতে বসল না। শুকনো মুখে বলল, আমার ক্ষিধে নেই।
রাহেলা বললেন, দুপুরেও তো কিছু খাসনি। কি ব্যাপার, জ্বর না-কি?
‘না জ্বর না।‘
‘দেখি, কাছে আয়। আশ্চর্য! জ্বর আছে তো?‘
অরু হাসতে হাসতে বলল, এত আশ্চর্য হবার কি আছে মা? মানুষের জ্বর হয় না?
‘অকারণে জ্বর হবে কেন?‘
‘সেটা আমাকে জিজ্ঞেস করছ কেন? ডাক্তার সাহেব আছেন। তাঁকে জিজ্ঞেস কর।‘ আবরার নিঃশব্দে খাচ্ছে। মীরু তার পে−টে খাবার উঠিয়ে দিচ্ছে। অরুদের খাবার টেবিলটা বেশ বড়। এত বড় টেবিলের এক কোণায় একজন মানুষ মাত্র খাচ্ছে। দৃশ্যটা চোখে পড়ার
মত। রাহেলা বললেন, তোমাকে একা খেতে হচ্ছে। তুমি কিছু মনে করো না বাবা। অরুর বাবা এখন খাবেন না। আমাকে তাঁর জন্যে অপেক্ষা করতে হবে। আর মীরু সন্ধ্যেবেলা দু‘টা রুটি খায়, রাতে আর কিছু খায় না।
আবরার বলল, আমার কিছু অসুবিধা হচ্ছে না। একা খেয়ে আমার অভ্যাস আছে। বাড়িতেও আমি একা খাই।
মীরু বলল, আমি সন্ধ্যাবেলা দু‘টা রুটি খাই কেন জানেন? আবীরের বাবার জন্যে। সে
চিঠিতে লিখেছে – “এ দেশের মেয়েদের বেশির ভাগ পেটুক। যা পায় গব গব করে খায়। বিয়ের পর এক একজন ফুলে কোলবালিশ হয়ে যায়। তুমি খাবার-দাবারের ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করবে। তোমার মোটার ধাত।“
অরু বলল, আপা, চুপ কর তো। পুরো চিঠি মুখস্থ বলতে হবে না। এমনিতে আপার স্মরণশক্তি খুব খারাপ কিন্তু দুলাভাইয়ের প্রতিটি চিঠি দাঁড়ি, কমা, কাটাকুটিসহ মুখস্থ।
আবরার হাসল। রাহেলাও হেসে ফেললেন। হাসি গোপন করার চেষ্টা করেও হাসি গোপন করতে পারলেন না। মীরু কঠিন গলায় বলল, স্বামীর চিঠি মুখস্থ করা কি অপরাধ?
‘না অপরাধ না। তবে সেই চিঠি কবিতার মত আবৃত্তি করে সবাইকে শুনানো একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।‘
মীরুর মুখ থমথম করছে। হয়ত সে কেঁদে ফেলবে। রাহেলা পরিস্থিতি সামলানোর জন্যে বললেন, মীরু তুই আবরারের জন্যে এক কাপ চা বানিয়ে আন। রাতে ভাত খাবার পর তুম কি চা খাও বাবা?
‘খাই না। তবে আজ খাব। বৃষ্টি হওয়ায় ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা লাগছে।‘
অরু বলল, মা, আমি আর বসে থাকতে পারছি না। তুমি তোমার গেস্টকে যতড়ব করে চা খাওয়াও। আমি আমার ঘরে যাচ্ছি। শরীর খুব খারাপ লাগছে। মনে হচ্ছে খুব ভালমত জ্বর আসছে।
 
মুহিবের অবস্থা মনে হয় খারাপ। একজন ডাক্তার ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট থেকে হঠাৎ ছুটে বের হলেন। দু‘জন ডাক্তার নিয়ে ফিরলেন। জেবা চুপচাপ দাঁড়িয়ে দেখছে। কাউকে কিছু জিজ্ঞেসও করছে না।
বজলু এসে বলল, আপা ঘরে গিয়ে বসুন। বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছেন।
জেবা একটু সরে দাঁড়াল। বৃষ্টির ছাটে শাড়ির অনেকখানি ভিজেছে, খেয়ালই হয় নি।
‘শীত লাগছে আপা?‘
‘একটু লাগছে। তোমার স্ত্রী কোথায়?‘
‘ওকে ভাইয়ের বাসায় রেখে এসেছি। খুব কানড়বাকাটি করছিল।‘
‘ভাল করেছ। সবাই মিলে কষ্ট করার কোন অর্থ হয় না।‘
‘আপা, আপনি কি কিছু খেয়েছেন?‘
‘না। তোমরা খেয়েছ?‘
‘জ্বি। লেয়াকত টিফিন কেরিয়ারে করে বাসা থেকে খাবার নিয়ে এসেছিল। এমন ক্ষিধে লেগেছিল …‘
‘ক্ষিধে লাগাই স্বাভাবিক। ক্রাইসিসের সময় ক্ষিধে পায়।‘
‘লিয়াকত চা-ও নিয়ে এসেছে। আপনাকে একটু চা দেব আপা?‘
জেবা স্বাভাবিক গলায় বলল, দাও। বজলু খুব অবাক হচ্ছে। কি শক্ত মেয়ে। কত সহজভাবে সমস্যা গ্রহণ করেছে। এখন পর্যন্ত একবারও কাঁদেনি। ‘বজলু।‘
‘জ্বি আপা।‘
‘মৃত্যু দেখে আমার অভ্যাস আছে। মা মারা গেলেন, বাবা মারা গেলেন, আমার ছোট একটা বোন ছিল রেবা, সেও মারা গেল। এরা তিনজনই সারারাত মৃত্যুযন্ত্রণা ভোগ করে ভোরবেলা মারা গেল। সবার প্র মে মারা গেলেন মা। মা‘র মৃত্যুতে কেঁদেছিলাম। তারপর আর কাঁদিনি। কানড়বা আসেনি।‘
জেবা চায়ের কাপে ছোট ছোট চুমুক দিচ্ছে। তার মুখ দেখে মনে হচ্ছে চা-টা ভাল লাগছে।
‘আমার কি মনে হয় জান বজলু? আমার মনে হয় মা-বাবা মৃত্যুর পর পরকালে একটা সংসার পেতেছেন। এক এক করে আমাদের সব ভাইবোনকে নিয়ে যাচ্ছেন। সবার আগে নিলেন রেবাকে। কারণ রেবা ছিল বাবা-মা‘র খুব পছন্দের মেয়ে। এখন অপেক্ষা করছেন
মুহিবের জন্যে। ‘এইসব আলোচনা থাক আপা।‘
‘কেন? তোমার শুনতে কি খারাপ লাগছে? আমার বলতে কিন্তু খারাপ লাগছে না। রেবার মৃত্যুর সময় কি হল শোন – খুব কষ্ট পাচ্ছিল। রাত দু‘টার সময় হঠাৎ করে যেন তার কষ্ট কমে গেল। স্বাভাবিকভাবে স্বাস নিতে লাগল। আমি তার মাথার কাছে বসে আছি। সে হঠাৎ শক্ত করে আমার দু‘হাত ধরে উত্তেজিত গলায় বলল, আপা দেখ দেখ। আম্মু এসেছে। আম্মু। সে আঙ্গুল দিয়ে দরজার দিকে দেখাতে লাগল।‘
জেবা চায়ের কাপ বজলুর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, আমকে আরেকটু চা দাও। আপনি টুলটায় বসুন।
জেবা বসতে বসতে বলল, আমার কি ধারণা জান বজলু? আমার ধারণা, আজও বাবা-মা, রেবা এসেছে। তারা মুহিবের খাটের পাশে বসে আছে।
‘এসব আলোচনা থাক আপা।‘
‘আচ্ছা থাক। বজলু একটা কথা বল – মুহিব তো তোমার অনেক দিনের বন্ধু -‘
‘জ্বি।‘
‘আমার সম্পর্কে নিশ্চয়ই সে অনেক কিছু তোমাদের বলতো। কি বলতো বলতো?‘
‘সব সময় বলত এই পৃথিবীতে আপনার মত ভাল মেয়ে অতীতে কখনো জন্মায়নি। বর্তমানে নেই – ভবিষ্যতেও জন্মাবে না।‘
জেবার চোখে পানি এসে গেল। সে চোখ মুছতে মুছতে বলল, আমি জানতাম সে এই কথাই বলবে। তবু তোমার কাছে শুনতে চেয়েছি ভালই করেছি। অনেকক্ষণ ধরেই কাঁদতে চাচ্ছিলাম, পারছিলাম না। এখন পারছি। তুমি ভাগ্য বিশ্বাস কর বজলু?
বজলু কিছু বলল না।
জেবা বলল, আমি বিশ্বাস করি। এত বড় একসিডেন্ট হল। এতগুলি মানুষ গাড়িতে, কারোই কিছু হল না – মারা যাচ্ছে শুধু একজন। সেই একজন মাত্র একদিন আগে তার বিয়ে হয়েছে। মৃত্যুটা দু‘দিন আগে কেন হল না বলতো? ওর মৃত্যুর পর কি হবে জান? –চারদিক থেকে শুধু সান্ত্বনার বাণী শুনব। সুন্দর সুন্দর সব বাণী, চমৎকার সব কথা। “ইহকাল কিছুই না। ইহকাল হচ্ছে মায়া। আসল হচ্ছে পরকাল। প্রকৃতির নিয়ম-কানুন মানুষের বোঝার উপায় নেই।“ কি কি কথা শুনব সব আমি তোমাকে লিখে দিতে পারি। আগেও তিনবার শুনেছি। জেবা হয়ত আরো কিছু বলত – কথা থামিয়ে দিল। ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট থেকে দু‘জন ডাক্তার বেরুচ্ছেন। দু‘জনের মুখই জ্যোতিহীন। তাঁদের মুখের দিকে তাকিয়ে পরিষ্কার বলে দেয়া যায় – মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধে এরা পরাজিত।
জেবা উঠে দাঁড়াল। ক্লান্ত গলায় বলল, আমি ওকে দেখে আসি।
নার্স ছাড়াও একজন ডাক্তার মুহিবের পাশে আছেন। জেবা পায়ের কাছে দাঁড়াল। ক্ষীণ স্বরে বলল, ওর নিঃশ্বাসে এ-রকম শব্দ হচ্ছে কেন? ডাক্তার সাহেব ওর কি নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট
হচ্ছে?
ডাক্তার সাহেব কিছু বললেন না।
জেবা বের হয়ে এল।
 
শফিকুর রহমান সাহেব এসেছেন। বাবার হাত ধরে প্রিয়দর্শিনী দাঁড়িয়ে আছে। দু‘জনই চুপচাপ বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। জেবা তাদের দেখল, কিছু বলল না।
শফিকুর রহমান সাহেব বললেন, প্রিয়দর্শিনী তার মামাকে দেখার জন্যে খুব কানড়বাকাটি করছিল। ওকে নিয়ে এসেছি।
এই প্রথম শফিকুর রহমান তাঁর মেয়েকে প্রিয়দর্শিনী নামে ডাকলেন। নাম উচ্চারণ করলেন স্পষ্ট করে, সুন্দর করে।
জেবা বলল, তোমার মামাকে এখন দেখে তোমার ভাল লাগবে না মা। না দেখাই ভাল।
প্রিদর্শিনী কঠিন স্বরে বলল, আমি দেখব।
‘এসো আমার সঙ্গে।‘
‘আমি একা যাব।‘
প্রিয়দর্শিনী ছোট ছোট পা ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে। ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের দরজায় হাত রেখে মিষ্টি রিণরিণে গলায় বলল, আমি কি দু‘মিনিটের জন্যে ভেতরে আসতে পারি?
শফিকুর রহমান সাহেব ভয়ংকর অস্বস্তি বোধ করছেন। স্ত্রীর দিকে চোখ তুলে তাকাতেও পারছেন না। স্বাভাবিক থাকার প্রাণপণ চেষ্টা করতে করতে বললেন, জেবা, ওর অবস্থা কেমন?
জেবা বলল, অবস্থা ভাল না। ডাক্তাররা কিছু বলছেন না, কিন্তু আমি বুঝতে পারছি। ওর গলা দিয়ে ঘড় ঘড় শব্দ হচ্ছে। প্রিয়দর্শিনী একা একা গিয়েছে। ও ভয় পাবে। শফিকুর রহমান বললেন, ও শক্ত মেয়ে, এতটুকুও ভয় পাবে না। আরেকটা কথা জেবা, তুমি নাকি চাও যে মেয়েটার সঙ্গে মুহিবের বিয়ে হয়েছে তাকে এখানে নিয়ে আসতে?
‘হ্যাঁ।‘
‘সেটা কি ঠিক হবে জেবা? এই ভয়ংকর ঘটনাটা মেয়ের আড়ালেই হওয়া কি ভাল না? মেয়েটাকে তো একটা নতুন জীবন শুরু করতে হবে। তাকে যদি এখন এখানে নিয়ে আস তাহলে নতুন করে জীবন শুরু করা তার জন্যে খুব সহজ হবে না। সবচে‘ ভাল হয় কি জান?
যদি কেউ কোনদিন না জানে যে মেয়েটার বিয়ে হয়েছিল। আমি খুব প্রাকটিক্যাল কথা বললাম জেবা। লিভ হার এলোন।‘
জেবা বলল, তুমি মুহিবের দিকটা দেখবে না? তুমি কি মনে কর না মৃত্যুর সময় স্ত্রীকে পাশে পাবার অধিকার তার আছে?
শফিকুর রহমান জবাব দিলেন না। কোন জবাব তাঁর মাথায় এল না।

অরু জেগেই ছিল।
সে জানত আবরার যাবার আগে তার ঘরে একবার উঁকি দেবে। জ্বর কেমন জানতে চাইবে। কপালে হাত রেখে উত্তাপ দেখবে। সেটাই তো স্বাভাবিক। যা স্বাভাবিক আবরার তা করল না। জ্বর দেখতে চাইল না। লাজুক মুখে বলল, তোমাকে একটা কথা বলতে এসেছি –
আজ আমার জন্মদিন। খুব ইচ্ছা ছিল তোমাকে নিয়ে বেড়াতে যাব।
অরু বলল, আগে বললেন না কেন? বললেই হত। কোথাও বেড়াতে যেতাম।
‘লজ্জা লাগল।‘
‘তখন লজ্জা লাগল তো এখন লাগছে না কেন?‘
আবরার বলল, বুঝতে পারছি না। একটু বসি তোমার ঘরে?
‘বসুন।‘
মীরু এসে বলল, অরু তোর টেলিফোন।
অরু বলল, কে?
‘জানি না কে? একজন মহিলা। বললাম তোর অসুখ। শুয়ে আছিস। তারপরেও চাচ্ছেন। খুব না-কি জরুরি।‘
অরু উঠে দাঁড়াল। আবরারকে বলল, আপনি কিন্তু নড়বেন না। আমি এক্ষুনি আসছি।
‘হ্যালো, কে?‘
‘আমাকে তুমি চিনবে না। আমার নাম জেবা। আমি মুহিবের বড় বোন?‘
অরু হকচকিয়ে গিয়ে বলল, স−ামালেকুম আপা।
‘তুমি কি এক্ষুণি, এই মুহূর্তে আসতে পারবে?‘
‘কোথায়?‘
‘ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।‘
‘কি ব্যাপার আপা?‘
‘মুহিব একসিডেন্ট করেছে।‘
‘অনেকক্ষণ চুপ করে থাকার পর অরু বলল, ওর কি জ্ঞান আছে?‘
‘না, জ্ঞান নেই।‘
‘অরু ক্ষীণ গলায় প্রায় অস্পষ্ট ভাবে বলল, ওর অবস্থা খুব খারাপ, তাই না আপা?‘
‘হ্যাঁ।‘
‘আমি আসছি।‘
‘আমি কি আসব তোমাকে নিতে?‘
‘আপনাকে আসতে হবে না।‘
জামিল সাহেব শোবার আয়োজন করছিলেন। অরু এসে দরজা ধরে দাঁড়াল। জামিল সাহেব বললেন, কি হয়েছে মা? অরু ছুটে এসে বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলল, তুমি আমাকে নিয়ে চল বাবা। আমি একা যেতে পারব না। আমি কিছুতেই একা যেতে পারব না।

অরু হাঁটু গেড়ে মুহিবের পাশে বসে আছে। তার সমস- শরীর থর থর করে কাঁপছে। সে চাপা গলায় বলল, ডাক্তার সাহেব, আমি কি ওর হাত একটু ধরতে পারি?
বৃদ্ধ ডাক্তার কোমল গলায় বললেন, অবশ্যই ধরতে পার মা, অবশ্যই পার।
‘আমি যদি ওকে কোন কথা বলি তাহলে ওকি তা শুনবে?‘
‘জানি না মা। কোমার ভেতর আছে, তবে মস্তিষ্ক সচল শুনতেও পারে। মৃত্যু এবং জীবনের মাঝামাঝি জায়গাটা খুব রহস্যময়। আমরা ডাক্তাররা এই জায়গা সম্পর্কে তেমন কিছু জানি না।‘
ডাক্তার সাহেব আমি ওকে কয়েকটা কথা বলব। আপনি কি আমকে কিছুক্ষণের জন্যে ওর পাশে থাকতে দেবেন?
ডাক্তার সাহেব ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। ঘরে অরু একা। ছোট্ট ঘরটাকে তার সমুদ্রের মত বড় মনে হচ্ছে। মুহিবের বিছানায় সাদা চাদরের জন্যে বিছানাটাকে মনে হচ্ছে সমুদ্রের ফেনা। সেই ফেনা অবিকল ঢেউয়ের মত দুলছে।
অরু দুহাতে মুহিবের ডান হাত ধরে আছে। সে খুব স্পষ্ট করে ডাকল, এই তুমি তাকাও। তোমকে তাকাতেই হবে। আমি সব কিছুর বিনিময়ে তোমাকে চেয়েছিলাম। তোমাকে পেয়েছি। আমি তোমাকে চলে যেতে দেব না।
তোমাকে তাকাতেই হবে। তাকাতেই হবে।
 
॥ ১১ ॥
পঁচিশ বছর পরের কথা।
অরুর বড় মেয়ে রুচির আজ বিয়ে। বিরাট আয়োজন। ছাদে প্যাণ্ডেল হয়েছে। পাঁচশ‘র মত মানুষ দাওয়াত করা হয়েছিল – ভাবভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে হাজারের ওপর দাওয়াতী মেহমান এসে পড়েছে। সমস্যা হচ্ছে আকাশের অবস্থা ভাল না। সারাদিন ঝকঝকে রোদ গিয়েছে। সন্ধ্যা থেকেই আকাশ মেঘলা। ঘন ঘন বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। অরুর স্বামী আবরার সাহেব চিন্তায় অস্থির হয়ে পড়েছেন। খাওয়া কম পড়ে গেলে সমস্যা হবে। হোটেলে লোক পাঠিয়েছেন। খবর দিয়ে রাখা – প্রয়োজনে যাতে খাবার চলে আসে।
কিছু মেহমান খাইয়ে দিলে ভিড় পাতলা হত। খাওয়ানো যাচ্ছে না। কারণ বর এখনো আসেনি। বড় দেরি করছে। সন্ধ্যা সাত‘টার সময় চলে আসার কথা – এখন বাজছে আটটা। আকাশের অবস্থাও আরো খারাপ করেছে। বৈশাখ মাস, ঝড়ুবৃষ্টির কাল। তিরপল দেয়া আছে।
ভারি বর্ষণ হলে তিরপলে কাজ হবে বলে মনে হয় না। এই নিয়েও আবরার সাহেব দুঃশ্চিন্তা করছেন। তাঁর প্রেসারের সমস্যা আছে। সামান্য দুঃশ্চিন্তাতেও তাঁর প্রেসার বেড়ে যায়। বর আসতে এত দেরি হবার কথা নয়। এত দেরি হচ্ছে কেন?
বর এল রাত সাড়ে আটটায়।
অরুর মেজো মেয়ে কান্তা ছুটে এসে তার মা‘কে বলল, বর এসেছে মা। কি কুৎসিত রুচি দেখলে তুমি বমি করে দেবে। কটকটের হলুদ রঙের একটা পাঞ্জাবী পরে এসেছে। গরম খুব, এই জন্যে না-কি সে আচকান পড়ে নি। পাঞ্জাবী দেখে আমার সব বন্ধুরা হাসাহাসি করছে।
অরু হাতের কাজ ফেলে বর দেখতে গেলেন। বরে মুখের দিকে তিনি তাকালেন না। তাকিয়ে রইলেন কটকটে হলুদ রঙের পাঞ্জাবীর দিকে। তাঁর মাথা ঝিম ঝিম করতে লাগল। কান্তা বলল, কি হয়েছে মা, এ রকম করছ কেন?
তিনি অস্পষ্ট স্বরে বললেন, শরীরটা ভালো লাগছে না মা। আমাকে বিছানায় নিয়ে শুইয়ে দে তো।
বিয়েবাড়ির আনন্দ কোলাহল থেকে তিনি দূরে সরে গেলেন। ঘর অন্ধকার করে শুইয়ে রইলেন চুপচাপ। আবরার সাহেব খবর শুনে স্ত্রীর পাশে এসে বসলেন। হাত রাখলেন মাথায়।
অরু বললেন, হাজারো কাজের সময় তুমি এখানে বসে আছ কেন? আমি ভাল আছি। মাথাটা কেন জানি একটু ঘুরে উঠল।
আবরার সাহেব বললেন, কোন অসুবিধা নেই। আমি না গেলে কাজ আটকে থাকবে না।
‘ঝড়ুবৃষ্টি হচ্ছে। তিরপল না-কি ঝড়ে উড়ে গেছে। তুমি খোঁজ-খবর করবে না?‘
‘খোঁজ-খবর করার লোক আছে। তুমি চুপচাপ শুয়ে থাকো তো।‘
‘এত সব সমস্যা আর তুমি বসে আছ আমার ঘরে। লোকে হাসাহাসি করবে তো।‘
‘করুক হাসাহাসি।‘

রাত একটার মত বাজে। বিয়েবাড়ি মোটামুটি শান্ত হয়েছে। বরযাত্রীরা চলে গেছে। শুধু বর আর তার কিছু বন্ধু-বান্ধব রয়ে গেছে। এই বাড়িতে বাসর হবে। অল্পবয়স্ক মেয়েদের উৎসাহের সীমা নেই। তারা অকারণে চিৎকার ছোটাছুটি করছে।
কান্তার উৎসাহই সবচে‘ বেশি। যেন বাসরের যাবতীয় খুটি-নাটি সংবাদ চারদিকে ছড়িয়ে দেবার পুরো দায়িত্ব তার উপর। তার বার বছরের জীবনে এমন উত্তেজনার মুহূর্ত আসেনি। সে ছুটতে ছুটতে মা‘র ঘরে এসে ঢুকল। হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, এখন খুব মজা হবে মা। আপা করছে কি দুলাভাইয়ের পাঞ্জাবী আগুন দিয়ে পুড়াচ্ছে। ‘বন ফায়ার‘ হবে। সবার সামনে আগুন দিয়ে পুড়ানো হবে।
অরুর চোখে জল এসে যাচ্ছে। তিনি সেই জল সামলাবার প্রাণপণ চেষ্টা করছেন। আজ তাঁর মেয়ের বিয়ে। এমন আনন্দের দিনে কি আর চোখের জল ফেলতে আছে?

॥ সমাপ্ত ॥
 

Users who are viewing this thread

Back
Top