০৩.
কুয়াশা ভেঙে রোদ উঠেছে। মোহনগঞ্জের ট্রেন চলে এসেছে। আজ তুলনামূলকভাবে ভিড় কম। ছাদের উপর মানুষ নেই। দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেন দেখার আনন্দই আলাদা। লোকজন উঠছে নামছে, হৈ চৈ হচ্ছে। পানওয়ালা, চা-ওয়ালা, নিম টুথ পাউডার, জামে মসজিদের চাঁদার খাতা হাতে মৌলানা, ফকির-মিসকিন কত ধরনের মানুষ এ কামরা থেকে ও কামরায় যাচ্ছে। কতগুলো মানুষের রুটি রোজগার এই ট্রেনের উপর নির্ভর করছে। কি বিরাট কর্মকাণ্ড। ভালো লাগে। দেখতে ভালো লাগে।
জয়নাল গাঢ় স্বরে ডাকল, ও বজলু?
জ্বি।
কোনহানে এই ট্রেন যাইব ক দেহি?
জানি না।
মোহনগঞ্জ। এইসব জানা দরকার বুঝলি। আমরা যারা ইস্টিশনে থাকিট্রেন হইল আমরার রুটি রোজগারের মালিক। হেই মালিকের খোঁজ-খবর না রাখলে জিনিসটা অন্যায় হয়। ঠিক কইলাম না?
বজলু হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল।
জয়নাল গম্ভীর গলায় বলল, ট্রেইনের সাথে রুটি রোজগার বান্দা এমন মানুষ হইল দুই কিসিমের। চলন্তি মানুষ আর বসন্তি মানুষ। যারা ট্রেইনের লগে-লগে চলে তারা চলন্তি। আর যারা ট্রেইনের লগে চলে না তারা বসতি। ইজ্জত বেশি বসন্তি মানুষের।
অনেকক্ষণ পর স্টার সিগারেটের প্যাকেট খুলে জয়নাল সিগারেট ধরাল। আগে। কত সিগারেট খেয়েছে, এত ভালো লাগে নি, তখন সব সময় একটা আতংক ছিল এটা শেষ হলেই আরেকটা কখন জোগাড় হবে কীভাবে জোগাড় হবে? এখন এই অবস্থা না। নটা সিগারেট পকেটে আছে। একটা শেষ হবার সঙ্গে-সঙ্গে সে ইচ্ছা করলে আরেকটা ধরাতে পারে। কারোর কিছু বলার নেই।
জয়নাল মোহনগঞ্জ লাইনের গাডিটার মখোমখি হয়ে রোদে বসল। সারাদিনে গায়ে প্রচুর রোদ লাগিয়ে রাখলে রাতে শীত কম লাগে। এইসব জ্ঞানের কথা সে অনেক ভেবেচিন্তে বের করেছে। বজলুকে শিখিয়ে যাবে। এই ছেলে কাজে লাগবে। ছেলেটির প্রতি সে যথেষ্ট মমতা বোধ করছে।
ও বজলু?
জ্বি।
এই ইস্টিশনে আমি যখন পরথম আসি তখন আমি তার মতো আছিলাম। আমরা তিনজন আইস্যা উঠলাম। আমি, আমার বাপজান আর আমার ভইন শাহেদা। তিনজনের মধ্যে আমি টিকলাম। বাপজান পরথম বছরই শেষ। শাহেদারে ইস্টিশন মাস্টার বাসার কাম দিল। তারপর যখন বদলি হইল সাথে নিয়া গেল। এখন কই আছে জানে আল্লাহ মারুদ। তর দিা লাগছে?
না।
তুই থাক বইয়া। একটা মালাই চা খাইয়া আসি। শইলডা জুইত লাগছে না। কম্বল সাবধান। ধর এই টেকাড়া পকেটে রাখা বাদাম-টাদাম মনে চাইলে খাইবি। বাদামের বড় গুণ কি জানস?
না।
বাদাম হইল ক্ষিদার যম। এক ছটাক বাদাম আর দুই গেলাস পানি হইলে পুরা একটা দিন পার করন যায়। মানুষের রোজগার পাতি সবদিন সমান হয় না তখন এইসব বিদ্যা কাজে লাগে।
জয়নাল উঠে দাঁড়াল। পাটা আবার যন্ত্রণা দিচ্ছে। যন্ত্রণাকে সে আমল দিল না। শরীরের ব্যথা-বেদনা, পেটের ক্ষিধা এইসব জিনিসকে আমল দিলেই এরা পেয়ে বসে। এদের সবসময় তুচ্ছ জ্ঞান করতে হয়।
কুয়াশা ভেঙে রোদ উঠেছে। মোহনগঞ্জের ট্রেন চলে এসেছে। আজ তুলনামূলকভাবে ভিড় কম। ছাদের উপর মানুষ নেই। দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেন দেখার আনন্দই আলাদা। লোকজন উঠছে নামছে, হৈ চৈ হচ্ছে। পানওয়ালা, চা-ওয়ালা, নিম টুথ পাউডার, জামে মসজিদের চাঁদার খাতা হাতে মৌলানা, ফকির-মিসকিন কত ধরনের মানুষ এ কামরা থেকে ও কামরায় যাচ্ছে। কতগুলো মানুষের রুটি রোজগার এই ট্রেনের উপর নির্ভর করছে। কি বিরাট কর্মকাণ্ড। ভালো লাগে। দেখতে ভালো লাগে।
জয়নাল গাঢ় স্বরে ডাকল, ও বজলু?
জ্বি।
কোনহানে এই ট্রেন যাইব ক দেহি?
জানি না।
মোহনগঞ্জ। এইসব জানা দরকার বুঝলি। আমরা যারা ইস্টিশনে থাকিট্রেন হইল আমরার রুটি রোজগারের মালিক। হেই মালিকের খোঁজ-খবর না রাখলে জিনিসটা অন্যায় হয়। ঠিক কইলাম না?
বজলু হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল।
জয়নাল গম্ভীর গলায় বলল, ট্রেইনের সাথে রুটি রোজগার বান্দা এমন মানুষ হইল দুই কিসিমের। চলন্তি মানুষ আর বসন্তি মানুষ। যারা ট্রেইনের লগে-লগে চলে তারা চলন্তি। আর যারা ট্রেইনের লগে চলে না তারা বসতি। ইজ্জত বেশি বসন্তি মানুষের।
অনেকক্ষণ পর স্টার সিগারেটের প্যাকেট খুলে জয়নাল সিগারেট ধরাল। আগে। কত সিগারেট খেয়েছে, এত ভালো লাগে নি, তখন সব সময় একটা আতংক ছিল এটা শেষ হলেই আরেকটা কখন জোগাড় হবে কীভাবে জোগাড় হবে? এখন এই অবস্থা না। নটা সিগারেট পকেটে আছে। একটা শেষ হবার সঙ্গে-সঙ্গে সে ইচ্ছা করলে আরেকটা ধরাতে পারে। কারোর কিছু বলার নেই।
জয়নাল মোহনগঞ্জ লাইনের গাডিটার মখোমখি হয়ে রোদে বসল। সারাদিনে গায়ে প্রচুর রোদ লাগিয়ে রাখলে রাতে শীত কম লাগে। এইসব জ্ঞানের কথা সে অনেক ভেবেচিন্তে বের করেছে। বজলুকে শিখিয়ে যাবে। এই ছেলে কাজে লাগবে। ছেলেটির প্রতি সে যথেষ্ট মমতা বোধ করছে।
ও বজলু?
জ্বি।
এই ইস্টিশনে আমি যখন পরথম আসি তখন আমি তার মতো আছিলাম। আমরা তিনজন আইস্যা উঠলাম। আমি, আমার বাপজান আর আমার ভইন শাহেদা। তিনজনের মধ্যে আমি টিকলাম। বাপজান পরথম বছরই শেষ। শাহেদারে ইস্টিশন মাস্টার বাসার কাম দিল। তারপর যখন বদলি হইল সাথে নিয়া গেল। এখন কই আছে জানে আল্লাহ মারুদ। তর দিা লাগছে?
না।
তুই থাক বইয়া। একটা মালাই চা খাইয়া আসি। শইলডা জুইত লাগছে না। কম্বল সাবধান। ধর এই টেকাড়া পকেটে রাখা বাদাম-টাদাম মনে চাইলে খাইবি। বাদামের বড় গুণ কি জানস?
না।
বাদাম হইল ক্ষিদার যম। এক ছটাক বাদাম আর দুই গেলাস পানি হইলে পুরা একটা দিন পার করন যায়। মানুষের রোজগার পাতি সবদিন সমান হয় না তখন এইসব বিদ্যা কাজে লাগে।
জয়নাল উঠে দাঁড়াল। পাটা আবার যন্ত্রণা দিচ্ছে। যন্ত্রণাকে সে আমল দিল না। শরীরের ব্যথা-বেদনা, পেটের ক্ষিধা এইসব জিনিসকে আমল দিলেই এরা পেয়ে বসে। এদের সবসময় তুচ্ছ জ্ঞান করতে হয়।