বনের ভেতর চৌকি পাতা। চৌকির উপর শীতলপাটি। সিদ্দিকুর রহমান শীতলপাটিতে শুয়ে আছেন। পাতার ফাঁক দিয়ে সূর্যের আলো এসে পড়েছে তার গায়ে। রোদটা ভালো লাগছে। চৌকির উপর কিছু ধান ছিটিয়ে রাখা হয়েছে। সিদ্দিকুর রহমানের ধারণা, পাখিরা ধান খেতে চৌকিতে এসে বসবে। তার ধারণা ঠিক হয় নি। কোনো পাখি আসছে না। তারা মানুষের প্রতি তাদের ভয় দূর করতে পারে নি।
বন্য কোনো ফুল কাছেই কোথাও ফুটেছে। তিনি ফুলের কড়া ঘাণ পাচ্ছেন। কাঁঠালাচাপার তীব্র ঘাণ। বনের ভেতরে কাঠালাচাপার কোনো গাছ তার চোখে পড়ে নি। গন্ধটা আসছে কোথা থেকে? তিনি শোয়া থেকে উঠে বসলেন। সুলেমান-লোকমান কেউ তার পাশে নেই। ইদানীং তিনি তাদের বনের ভেতর ঢুকতে দেন না। তারা এসে পাটি বিছিয়ে চলে যায়। বনের বাইরে অপেক্ষা করে। আজ কেউ আশেপাশে থাকলে ভালো হতো। কাঁঠালচাপা গাছে ফুল ফুটেছে কি-না দেখতে বলতেন।
সিদ্দিকুর রহমানের পেছনে খুটাখুটি শব্দ হচ্ছে। তিনি ঘাড় ফিরিয়ে খুবই অবাক হলেন। নীল রঙের একটা পাখি খুঁটে খুঁটে ধান খাচ্ছে। পাখির মাথায় ঝুটি আছে। ঠোঁট টিয়া পাখির ঠোঁটের মতো লাল। সিদ্দিকুর রহমান যে পাখিটার দিকে তাকিয়ে আছেন তা সে বুঝতে পারছে। কিন্তু ভয় পাচ্ছে না। খুঁট খুঁট শব্দে ধান খেয়ে যাচ্ছে। সিদ্দিকুর রহমান বললেন, কিরে তুই একা কেন? তোর সঙ্গীসাথিরা কই? হঠাৎ কথা শুনে পাখি সামান্য চমকে গেল। ডানা ঝাপ্টাল। আবার শান্ত হয়ে গেল। সিদ্দিকুর রহমান মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছেন। নীল পাখির একটি সঙ্গীকে তার মাথার উপর দিয়ে কয়েকবার উড়ে যেতে দেখা গেল। সে মনে হয় সাহস সঞ্চয় করছে। পরিস্থিতি বিবেচনা করছে।
তিনি আবারো শুয়ে পড়লেন। পাখিরা আসুক। কেউ কেউ এসে বসুক তার গায়ে।
ধর্মপাশা থানার ওসি সাহেব ঘোড়ায় চড়ে এসেছেন। সিদ্দিকুর রহমান সাহেবের সঙ্গে দেখা করবেন। জরুরি। লোকমান-সুলেমানের উপর দায়িত্ব কেউ যেন বনে ঢুকতে না পারে। ওসি সাহেবকে তারা সাহস করে এই কথা বলতে পারল না।
ওসি সাহেব বললেন, উনি বনের ভেতর কী করেন?
সুলেমান বলল, উনার শরীর খারাপ। উনি শুয়ে থাকেন।
শরীর খারাপ হলে বনের ভেতর শুয়ে থাকতে হবে কেন?
সুলেমান জবাব দিল না। এই প্রশ্নের জবাব তার কাছে নেই। ওসি সাহেব বললেন, জঙ্গলে কোথায় শুয়ে থাকেন?
ব্যবস্থা আছে।
কী ব্যবস্থা?
চলেন নিজের চোখে দেখবেন।
ওসি সাহেব যে দৃশ্য দেখলেন তার জন্যে তিনি প্রস্তুত ছিলেন না। সিদ্দিকুর রহমান শুয়ে আছেন, তাকে ঘিরে রাজ্যের পাখি। কিছু পাখি। আবার তার গায়ের উপর বসে আছে। পায়ের শব্দে সব পাখি উড়ে গেল। সিদ্দিকুর রহমান উঠে বসলেন। ওসি সাহেব বললেন, স্যার সাল্লামালিকুম। আমাকে চিনেছেন? ওসি ধর্মপাশা।
সিদ্দিকুর রহমান বললেন, কী ব্যাপার?
স্যার একজন লোক সম্পর্কে খোঁজ নিতে এসেছি। আনিস নাম। আপনার বাড়িতে জায়গির থাকত।
এখন সে নাই।
স্যার জানি। সে জেলে আছে। ঘুঘু লোক। পিস্তলসহ ধরা পড়েছে। কমিউনিস্ট পার্টি করত।
সিদ্দিকুর রহমান বললেন, আমি তাকে ভালো লোক হিসাবে জানি।
ভালো-মন্দের বিচার একেকজনের কাছে একেক রকম। আপনার কাছে যে ভালো, অন্যের কাছে সে খারাপ।
সিদ্দিকুর রহমান বললেন, যে ভালো সে সবসময় ভালো। সবের কাছে ভালো।
ওসি সাহেব বললেন, স্যার, এই বিষয়ে আপনার সঙ্গে তর্ক করব না। আপনার কাছে একটা অনুমতির জন্যে এসেছি। আনিস যে ঘরে থাকত সেই ঘরটা সার্চ করব। ঘরে কাগজপত্র কী আছে দেখব।
অনুমতি না দিলে সার্চ করবেন না?
অনমতি না দিলেও সার্চ করব। আমার সঙ্গে সার্চ ওয়ারেন্ট আছে।
তাহলে অনুমতি চাইলেন কেন?
ভদ্রতা করলাম স্যার। আমরা তো ব্রিটিশ সরকারের পুলিশ না। আমরা পাকিস্তান সরকারের পুলিশ। আমরা ভদ্র।
যান। সার্চ করেন।
সার্চটা আপনার সামনে করতে চাই।
আমি এখান থেকে যাব না। বাড়িতে আমার বড় মেয়ে আছে। নাম লীলা। সব কিছু এখন সে দেখে। সে থাকবে আপনার সঙ্গে।
স্যার, আরেকটা বেয়াদবি করব। আমরা শুধু আনিস যে ঘরে থাকত সেই ঘর সার্চ করব না। আমরা পুরো বাড়ি সার্চ করব। সরকারের হুকুম। আমরা হুকুমের গোলাম।
সিদ্দিকুর রহমান কিছু বললেন না। আবার চৌকিতে শুয়ে পড়লেন।
বন্য কোনো ফুল কাছেই কোথাও ফুটেছে। তিনি ফুলের কড়া ঘাণ পাচ্ছেন। কাঁঠালাচাপার তীব্র ঘাণ। বনের ভেতরে কাঠালাচাপার কোনো গাছ তার চোখে পড়ে নি। গন্ধটা আসছে কোথা থেকে? তিনি শোয়া থেকে উঠে বসলেন। সুলেমান-লোকমান কেউ তার পাশে নেই। ইদানীং তিনি তাদের বনের ভেতর ঢুকতে দেন না। তারা এসে পাটি বিছিয়ে চলে যায়। বনের বাইরে অপেক্ষা করে। আজ কেউ আশেপাশে থাকলে ভালো হতো। কাঁঠালচাপা গাছে ফুল ফুটেছে কি-না দেখতে বলতেন।
সিদ্দিকুর রহমানের পেছনে খুটাখুটি শব্দ হচ্ছে। তিনি ঘাড় ফিরিয়ে খুবই অবাক হলেন। নীল রঙের একটা পাখি খুঁটে খুঁটে ধান খাচ্ছে। পাখির মাথায় ঝুটি আছে। ঠোঁট টিয়া পাখির ঠোঁটের মতো লাল। সিদ্দিকুর রহমান যে পাখিটার দিকে তাকিয়ে আছেন তা সে বুঝতে পারছে। কিন্তু ভয় পাচ্ছে না। খুঁট খুঁট শব্দে ধান খেয়ে যাচ্ছে। সিদ্দিকুর রহমান বললেন, কিরে তুই একা কেন? তোর সঙ্গীসাথিরা কই? হঠাৎ কথা শুনে পাখি সামান্য চমকে গেল। ডানা ঝাপ্টাল। আবার শান্ত হয়ে গেল। সিদ্দিকুর রহমান মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছেন। নীল পাখির একটি সঙ্গীকে তার মাথার উপর দিয়ে কয়েকবার উড়ে যেতে দেখা গেল। সে মনে হয় সাহস সঞ্চয় করছে। পরিস্থিতি বিবেচনা করছে।
তিনি আবারো শুয়ে পড়লেন। পাখিরা আসুক। কেউ কেউ এসে বসুক তার গায়ে।
ধর্মপাশা থানার ওসি সাহেব ঘোড়ায় চড়ে এসেছেন। সিদ্দিকুর রহমান সাহেবের সঙ্গে দেখা করবেন। জরুরি। লোকমান-সুলেমানের উপর দায়িত্ব কেউ যেন বনে ঢুকতে না পারে। ওসি সাহেবকে তারা সাহস করে এই কথা বলতে পারল না।
ওসি সাহেব বললেন, উনি বনের ভেতর কী করেন?
সুলেমান বলল, উনার শরীর খারাপ। উনি শুয়ে থাকেন।
শরীর খারাপ হলে বনের ভেতর শুয়ে থাকতে হবে কেন?
সুলেমান জবাব দিল না। এই প্রশ্নের জবাব তার কাছে নেই। ওসি সাহেব বললেন, জঙ্গলে কোথায় শুয়ে থাকেন?
ব্যবস্থা আছে।
কী ব্যবস্থা?
চলেন নিজের চোখে দেখবেন।
ওসি সাহেব যে দৃশ্য দেখলেন তার জন্যে তিনি প্রস্তুত ছিলেন না। সিদ্দিকুর রহমান শুয়ে আছেন, তাকে ঘিরে রাজ্যের পাখি। কিছু পাখি। আবার তার গায়ের উপর বসে আছে। পায়ের শব্দে সব পাখি উড়ে গেল। সিদ্দিকুর রহমান উঠে বসলেন। ওসি সাহেব বললেন, স্যার সাল্লামালিকুম। আমাকে চিনেছেন? ওসি ধর্মপাশা।
সিদ্দিকুর রহমান বললেন, কী ব্যাপার?
স্যার একজন লোক সম্পর্কে খোঁজ নিতে এসেছি। আনিস নাম। আপনার বাড়িতে জায়গির থাকত।
এখন সে নাই।
স্যার জানি। সে জেলে আছে। ঘুঘু লোক। পিস্তলসহ ধরা পড়েছে। কমিউনিস্ট পার্টি করত।
সিদ্দিকুর রহমান বললেন, আমি তাকে ভালো লোক হিসাবে জানি।
ভালো-মন্দের বিচার একেকজনের কাছে একেক রকম। আপনার কাছে যে ভালো, অন্যের কাছে সে খারাপ।
সিদ্দিকুর রহমান বললেন, যে ভালো সে সবসময় ভালো। সবের কাছে ভালো।
ওসি সাহেব বললেন, স্যার, এই বিষয়ে আপনার সঙ্গে তর্ক করব না। আপনার কাছে একটা অনুমতির জন্যে এসেছি। আনিস যে ঘরে থাকত সেই ঘরটা সার্চ করব। ঘরে কাগজপত্র কী আছে দেখব।
অনুমতি না দিলে সার্চ করবেন না?
অনমতি না দিলেও সার্চ করব। আমার সঙ্গে সার্চ ওয়ারেন্ট আছে।
তাহলে অনুমতি চাইলেন কেন?
ভদ্রতা করলাম স্যার। আমরা তো ব্রিটিশ সরকারের পুলিশ না। আমরা পাকিস্তান সরকারের পুলিশ। আমরা ভদ্র।
যান। সার্চ করেন।
সার্চটা আপনার সামনে করতে চাই।
আমি এখান থেকে যাব না। বাড়িতে আমার বড় মেয়ে আছে। নাম লীলা। সব কিছু এখন সে দেখে। সে থাকবে আপনার সঙ্গে।
স্যার, আরেকটা বেয়াদবি করব। আমরা শুধু আনিস যে ঘরে থাকত সেই ঘর সার্চ করব না। আমরা পুরো বাড়ি সার্চ করব। সরকারের হুকুম। আমরা হুকুমের গোলাম।
সিদ্দিকুর রহমান কিছু বললেন না। আবার চৌকিতে শুয়ে পড়লেন।