What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected চাঁদের আলোয় কয়েকজন যুবক (3 Viewers)

বাইশ বছর পর দেশের কী হয়েছে তিনি দেখতে এসেছেন। ভালো সুযোগ পাওয়া গেল প্রথম রাতেই। তবে তিনটি যুবককে দিয়ে পুরো দেশ সম্পর্কে আঁচ করা যায় না। এই তিনটি যুবক হচ্ছে র্যান্ডম স্যামপ্লিংয়ের একটি স্যাম্পল। বাইশ বছর আগেও এরকম যুবকরা চাঁদের আলোয় শহরের পথে পথে ঘুরত। হাতে অবশ্যি ক্ষুর থাকত না। তিনি নিজেই কত রাতে বন্ধুদের সঙ্গে হেঁটে হেঁটে আনন্দ করেছেন। এরা যা করছে তাও এক অর্থে আনন্দ। তাঁদের রাতে হাঁটা বাতিক হয়েছিল ইউনিভার্সিটিতে ঢাকার পর। এগারটার সময় চা খেতে যাওয়া হত নীলক্ষেতে। সামান্য এক কাপ চা খেতে লগত এক ঘন্টা। চা শেষ করার পর কেউ-না-কেউ বলতখানিকক্ষণ হাঁটাহাঁটি করলে কেমন হয়? দুটো দল হয়ে যেত সঙ্গে-সঙ্গে। এক দল ফিরে গিয়ে পড়াশোনা করতে চায়। অন্যদল হাঁটতে যেতে চায়। শেষ পর্যন্ত সবাই মিলেই হাঁটতে যেত। এক সময় ক্লান্ত হয়ে রেসকোর্সের মাঠে লম্বা হয়ে শুয়ে থাকা। শুয়ে থাকতে থাকতে ঘুম এসে যেত। বদরুল একবার পুরোপুরি ঘুমিয়ে পড়ল। মজা করবার জন্যে তাকে ফেলে রেখে সবাই চলে এসেছিল।

এখনকার ছেলেরা কি এরকম করে? তিনি জানেন না। দেশের সঙ্গে তাঁর প্রায় কোনো যোগাযোগ নেই। মামাদের সংসারে মানুষ হয়েছিলেন। তিন মামার কেউই তাঁকে সহ্য করতে পারতেন না। স্কুলের বেতন, নতুন বই-খাতা, পরীক্ষার ফিস, এইসব যোগাড় করবার জন্যে একেক মামার কাছে তিনবার চারবার করে যেতে হত। পরীক্ষার ফিস হয়ত তিরিশ টাকা। এক সময় বড় মামা বিশ টাকার একটা নোট ফেলে দিয়ে বলতেন, যা-যা আর বিরক্ত করি না। টাকার দরকার হলেই বড় মামা। মামা কি আর নেই নাকি? আরেকবার আমার কাছে আসলে টান দিয়ে কান ছিঁড়ে ফেলব হারামজাদা। বাকি দশটা টাকার তখনও যোগাড় হয় নি। কী ভাবে হবে বা শেষ পর্যন্ত হবে কি-না কে জানে। ছেলেবেলার জীবনটা তাঁর অসম্ভব দুঃখ-কষ্টে কেটেছে। তবে মামারা তাকে পুরোপুরি ত্যাগ করেন নি। আমেরিকা যাবার ভাড়া এগার হাজার টাকা তাঁরাই যোগাড় করলেন। সেই জন্যে মেজো মামীর কানের দুল বিক্রি করতে হল। বড় মামী তার বাবার কাছ থেকে ছহাজার টাকা ধার আনলেন। যাবার দিন তিন মামাই এয়ারপোর্টে এলেন। বড় মামা এক ফাঁকে তাকে আড়ালে ডেকে নিয়ে বললেন, মনের মধ্যে কিছু পুষে রাখিস না। অনেক যন্ত্রণা দিয়েছি। সুখে থাকিস। এই বলেই ভীষণ কান্নাকাটি করতে লাগলেন। দরিদ্র মামাদের ঋণ মির্জা সাহেব শোধ করতে পারেন নি। সব কিছু কেমন এলোমেলো হয়ে গেল। চিঠি দিলে মামারা কেউ জবাব দেন না। বিদেশে চিঠি পাঠানোর বাড়তি খরচটা কেউ করতে চান না বোধ হয়। এক সময় তাঁরা তাঁদের ঝিকাতলার বাড়ি বিক্রি করে ফেললেন। টাকা ভাগাভাগি করে আলাদা হয়ে পড়লেন। মির্জা সাহেবও কয়েকবার ঠিকানা বদল করলেন। যোগাযোগ কিছুই রইল না। দেশ থেকে আসা এক জনের কাছে শুনলেন মেজো মামী মারা গেছেন। মেজো মামার মাথার দোষ হয়েছে। আমাদের এই সংসার জলে ভেসে যাচ্ছে। বড় দুই ছেলে গুণ্ডামি মাস্তানি করে। তাদের পড়াশোনা কিছুই হয় নি।

মির্জা সাহেব সাহায্য করবার জন্যে প্রস্তুত ছিলেন কিন্তু তাঁর সঙ্গতি ছিল না। নিজেরই তখন ঘোর দুৰ্দিন। পাশ করে বসে আছেন। চাকরি জোটাতে পারছেন না। গ্রিন কার্ড নেই। বিদেশিদের চাকরি দেবার ব্যাপারে খুব কড়াকড়ি। ভিসার মেয়াদও গেছে। শেষ হয়ে। লুকিয়ে লুকিয়ে থাকতে হয়। এই বন্ধুর বাড়িতে কিছু দিন ঐ বন্ধুর বাড়িতে কিছু দিন। সেই সময় কেরোলিনের সঙ্গে পরিচয়। পরিচয় থেকে বিয়ে। আমেরিকার অর্থনৈতিক মন্দার সময় তখন। গ্রিন কার্ড পাওয়ার পরও চাকরি হয় না। গুছিয়ে উঠতে উঠতে অনেক সময় চলে গেল। দেশের কে কোথায় তা নিয়ে ভাববার অবকাশই হল না।

এখন ভাববেন। কাল ভোরেই তিনি আমাদের খোঁজে বের হবেন। খুঁজে বের করা খুব একটা জটিল সমস্যা হবে না।

মির্জা সাহেব বললেন, আমরা কোথায় যাচ্ছি? বেঁটে যুবকটি বলল, নো কট। সঙ্গে-সঙ্গে তিনি সাংকেতিক ভাষার অর্থ উদ্ধার করলেন। ছেলেটি উল্টো করে বলছে। নো কট হচ্ছে—নো টক। বেঁটে ছেলেটির নামও তিনি জেনেছেন। তার নাম মজিদ। লম্বা ছেলেটি আলম। অন্যজনের নাম তিনি এখনো জানেন না।

নাম না জানা ছেলেটি বলল, সিগারেট দরকার। সিগারেট শেষ হয়ে গেছে।

মজিদ মির্জা সাহেবকে বলল, আপনার কাছে সিগ্রেট আছে?

না।

ধূমপান করেন না?

এককালে করতাম। এখন করি না।

ক্যানসারের ভয়ে?

হ্যাঁ।

এত বেঁচে থাকার শখ?
 
মির্জা সাহেব দুটি ব্যাপার লক্ষ করলেন, ছেলেটা কথার ধরন বদলেছে। ভদ্র স্বর বের করেছে। তাই হয়ে থাকে। পাশাপাশি কিছু সময় থাকা মানেই পরিচয়। নিতান্ত অপরিচিত এক জনের সঙ্গে খুব খারাপ ব্যবহার করা যায় কিন্তু পরিচিত কারোর সঙ্গে করা যায় না। সাইকোলজিস্টরা যে কারণে বলেন, খারাপ প্রকৃতির মানুষের হাতে। পড়লে মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হবে। তারা যা বলে তাতেই রাজি হতে হবে। এবং চেষ্টা করতে হবে কথা বার্তা বলার। তাদের কেউ যদি বলে, আমরা এখন তোমাকে গুলি করে মারব, তখন ভয়ে অস্থির হওয়া চলবে না। ভয় খুব সংক্রামক। তোমার ভয় দেখে সেও ভয় পাবে। একজন ভীতু মানুষ ভয়ংকর কাণ্ড করে। পৃথিবীতে হত্যার স্টেটিসটিকস নিলে দেখা যাবে যে বেশিরভাগ খুনগুলো করেছে ভীতু মানুষেরা। কাজেই কেউ তোমাকে হত্যা করতে চাইলে তুমি সময় চাইবে। যাকে বলে কালক্ষেপণ। শুধু কথা বলবে। তুমি যদি নন স্মোকারও হও তবু বলবে, আমাকে মেরে ফেলতে চান, আমার কিছু করার নেই। দয়া করে আমাকে একটা সিগারেট দিন। একটা সিগারেট হাতে পাওয়া মানে পাঁচ মিনিট সময় বেশি পাওয়া। খেয়াল রাখবে, পাঁচ মিনিট অনেক সময়। এই সময়টা কাজে লাগাবে। এমন ধরনের কথা বলবে যার জন্যে হত্যাকারী প্রস্তুত নয়। যেমন, তুমি তার শার্টের দিকে তাকিয়ে বলতে পারআপনার এই হাওয়াই শার্টের রঙটা চমৎকার। আমার অবিকল এরকম একটা ছিল। এক লোকের হাতের জ্বলন্ত সিগারেটে শার্টটা ফুটো হয়ে গেছে। তোমার কথায় লোকটা হকচকিয়ে যাবে। তার শার্টের মতো তোমারও একটা শার্ট ছিল এটা শোনার পর তার সঙ্গে তোমার একটি সূক্ষ্ম বন্ধন তৈরী হবে। তোমার শার্টটি নষ্ট হয়ে গেছে। এতে সে তোমার প্রতি খানিকটা সহানুভূতি বোধ করবে। এই সহানুভূতি খুবই সূক্ষ্ম। তবে সূক্ষ্ম হলেও কাজের।

মির্জা সাহেব বললেন, একটা দোকান খোলা দেখা যাচ্ছে। ওখানে কি সিগারেট পাওয়া যাবে?

তারা জবাব দিল না কিন্তু খোলা দোকানটির দিকে হাঁটতে লাগল। দোকানের নাম। রূপা স্টোর। সাড়ে বত্রিশ ভাজা ধরনের দোকান। বিদেশি কসমেটিকস থেকে আইসক্রিম পর্যন্ত আছে। সঙ্গে কনফেকশনারি। দুজন কর্মচারী। এরা দুজনই দোকান বন্ধ করায় ব্যস্ত। তারা ঢাকা মাত্র বিরক্ত গলায় বলল, দোকান বন্ধ।

মাহিন বলল, পুরোপুরি বন্ধত এখনো হয় নাই ভাই। এক প্যাকেট সিগারেট নিব। ফাইভ-ফাইভ আছে।

আছে বিক্রি হবে না।

কেন হবে না?

একবার বললাম শুনলেন না, দোকান বন্ধ করে দিয়েছি।

মজিদ তীব্র চোখে তাকিয়ে রইল। কিছু বলল না। আলম বলল, ভাই রাত হয়ে গেছে সিগারেট পাওয়া যাবে না। আপনার কাছে আছে দিয়ে দেন চলে যাই।

সারাদিন বেচাকেনা করে কর্মচারী দুজনেরই মেজাজ খুব খারাপ। রোগা হাড় জিজিড়ে যে জন, সে-ই কটকট করছে। অন্যজন বেশ বলশালী। সে এতক্ষণ কথা বলে নি। এখন বলল, মালিক ক্যাশ নিয়ে দোকান বন্ধ করতে বলে দিয়েছে। আপনারা সিগারেটের দাম দিবেন আমি ভাংতি দিতে পারব না।

মাহিন বলল, যা দাম হবে তাই দিব ভাংতি দিতে হবে না।

মোটা কর্মচারী এক প্যাকেট সিগারেট বের করে বলল, পঞ্চাশ টাকা দেন।

মাহিন বলল, বাজারেত পঁয়তাল্লিশ টাকা, আপনি পঞ্চাশ চাচ্ছেন কেন?

বাজারে পয়তাল্লিশ হলে বাজার থেকে নেন।

সে প্যাকেট ঢুকিয়ে রাখল। আলম বলল, প্যাকেটটা ঢুকিয়ে রাখলেন কেন ভাই সাহেব? কিনব না এমন তো বলি নাই। হয়তো পঞ্চাশ টাকা দিয়েই কিনব।

আলম পঞ্চাশ টাকার নোটটা এগিয়ে দিল।

রোগা কর্মচারীটি সঙ্গে-সঙ্গে বলল, নোটটা বদলে দেন ছেড়া আছে।

কোথায় ছেড়া?

এই যে দেখেন স্কচ টেপ মারা।
 
মির্জা সাহেব এক দৃষ্টিতে আলমের দিকে তাকিয়ে আছেন। তিনি খুব অস্বস্তি নিয়ে লক্ষ করলেন, ছেলেটির ফর্সা মুখ লাল হয়ে উঠছে। যতদূর মনে হচ্ছে এর কাছে এই পঞ্চাশ টাকার নোটটা ছাড়া আর কিছু নেই। সম্ভবত তার বন্ধুদের কাছেও নেই। মির্জা সাহেব পরিষ্কার বুঝলেন ঘটনা এখন অন্যদিকে মোড় নেবে। তিনি কি কিছু করতে পারেন? তার কাছে বাংলাদেশি টাকা নেই। টাকা থাকলে চকচকে একটা পঞ্চাশ টাকার নোট কাউন্টারে রেখে দিতেন। এতে অবশ্যই কাজ হত।

আলম বলল, এই নোট রাখবেন না?

বলতে গিয়ে তার গলা কেঁপে গেল। মোটা কর্মচারীটি বলল, রেখে দেরে লিটু। ঝামেলা শেষ কর।

তার কথা শেষ হবার আগেই লিটু উলটে পড়ে গেল। আলম প্রচণ্ড একটা ঘুসি বসিয়ে দিয়েছে। ব্যাপারটা এত দ্রুত ঘটেছে যে আলম নিজেও ঠিক বুঝতে পারল না, কী ঘটে গেল। সে তাকিয়ে দেখল লিটু নামের লোকটা দুহাতে তার নাক চেপে ধরে আছে। তার আঙুলের ফাঁক দিয়ে গল গল করে রক্ত পড়ছে।

মোটা লোকটা বলল, এইটা কী করলেন?

মজিদ ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় বলল, হারামজাদা তুই কানে ধর।

কী কন আপনে?

হারামী কানে ধর।

খুট করে শব্দ হল। মজিদ খাপ থেকে তার ক্ষুর বের করে ফেলেছে। মোটা লোকটি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে। মজিদ হিসহিস করে বলল, কানে ধর কানে ধর।

মোটা কর্মচারীটির চোখে ভয় ঘনিয়ে এল। ভয় ঘনিয়ে আসাই স্বাভাবিক। মজিদের পুরো চেহারা পাল্টে গেছে। তার চোখে উন্মাদ দৃষ্টি। এই দৃষ্টি চিনতে কারোর ভুল হবার কথা নয়।

আলম লিটুর দিকে এখনো তাকিয়ে আছে। হাতের আঙুলের ফাঁক দিয়ে রক্ত পড়ছে। এই দৃশ্য তাকিয়ে দেখা যাচ্ছে না আবার দৃষ্টিও ফিরিয়ে নেয়া যাচ্ছে না। লিটু বিড়বিড় করে কি যেন বলল, মজিদ তার দিকে তাকিয়ে ক্রুদ্ধ গলায় বলল, নখু, রেক বলফে।

লিট্‌ কিছুই বুঝল না। কিন্তু মির্জা সাহেবের গায়ের রক্ত হিম হয়ে গেল। মাহিন কাউন্টারের এক পাশে রাখা ক্রিকেট ব্যাটের স্তুপের দিকে এগিয়ে গেল। প্রায় সঙ্গে-সঙ্গেই বিকট শব্দ হল। সে ব্যাট দিয়ে বাড়ি মেরে কাউন্টারের কাচের দেরাজ গুড়িয়ে ফেলেছে। ঘরময় কাচের টুকরা।

মোটা কর্মচারীটি প্রায় ফিসফিস করে বলল, মাফ করে দেন ভাইজান। মাফ চাই। মাফ…

মজিদ চাপা গলায় বলল, নখু রেক বলফে। মোটা কর্মচারী আবার বলল, ভাইজান মাফ করে দেন। ও লিটু ভাইজানের পায়ে ধরে মাফ চা।

লিটু সঙ্গে-সঙ্গেই রক্তমাখা হাতে মজিদের প্যান্ট চেপে ধরল। মজিদ প্রচণ্ড লাথি। দিয়ে তাকে কাচের টুকরোর উপর ফেলে দিল। আবার একটি শব্দ হল। মাহিন কাচের আরেকটি দেরাজ ভেঙ্গেছে।

মোটা কর্মচারীটি ভীতু গলায় বলল, লা-ইলাহা ইল্লা আন সোবাহানাকা ইনি কুন্তু মিনাজজুয়ালেমিন। লাই লাহা ইল্লা আনতা সোবাহানাকা ইন্নি কুন্তু মিনাজজুয়ালেমিন।

মজিদ চড়া গলায় বলল, নখু রেক বলফে।

ভাইজান মাফ করে দেন। ভাইজান মাফ করে দেন।

নখু রেক বলফে।

জানে মাইরেন না ভাইজান। আমার ছোট-ছোট দুইটা বাচ্চা।

মোটা কর্মচারীটি কেঁদে ফেলল। মির্জা সাহেবের আত্মা কেঁপে উঠল। লোকটি ভয় পাচ্ছে। অসম্ভব ভয় পাচ্ছে। এই ভয় সংক্রামক। এই ভয় ঢুকে যাবে মজিদের ভেতর তখন ভয়ংকর কিছু হয়ে যাবে।

মাফ করে দেন ভাইজান। মাফ করে দেন।

আর কোনো দিন কাস্টমারের সাথে খারাপ ব্যবহার করবি?

না ভাইজান না।

এরপর থেকে কাস্টমাররে বাপ ডাকবি?

জ্বি ভাইজান ডাকব।

আর মেয়ে কাস্টমার হইলে মা ডাকবি?

জ্বি ভাইজন ডাকমু।
 
ওরা বেরিয়ে এল। মির্জা সাহেব পেছনে পেছনে বেরিয়ে এলেন, যদিও তাঁর ধারণা তার কথা এখন আর তাদের মনে নেই। তারা কিছু দূর এগিয়ে একটা লাইট পোস্টের নিচে দাঁড়াল। এখন বেশিরভাগ লাইট পোস্টেই সোডিয়াম ল্যাম্প। এইটির তা নয়। সাদা টিউব লাইট জ্বলছে।

আলম বলল, মজিদ তোর সারা গায়ে রক্ত। এত রক্ত এল কোত্থেকে?

মজিদ তাকিয়ে দেখল, সত্যি রক্তে প্রায় মাখামাখি। সে শীতল গলায় বলল, দেখি সিগারেট দে।

আলম বলল, সিগারেটের প্যাকেটতো আনা হয় নি। আসল জিনিসই রয়ে গেছে। আবার যাবি?

মজিদ জবাব দিল না।

মির্জা সাহেব বললেন, আবার যাওয়া ঠিক হবে না। এতক্ষণে খবর হয়ে গেছে। লোজন চলে এসেছে।

মজিদ তীব্র গলায় বলল, আসুক না। ভয় পাই না-কি। আবদুল মজিদ কোনো শালাকে ভয় পায় না। উল্টো সব শাল আবদুল মজিদকে ভয় পায়।

আলম বলল, ক্ষুরটা খাপে ঢুকিয়ে রাখ মজিদ। দেখে ভয় ভয় লাগছে।

লাগুক ভয়। এই ক্ষুর দিয়ে আজ কোনো এক শালাকে আমি কাটব। না কাটলে মনে শান্তি হবে না। এই যে চাচা মিয়া আপনার নাম কি?

আমার নাম মির্জা।

তোমাকে আমি কাটব। কাটাকুটি খেলা হবে।

আমি অপরাধটা করেছি কী?

তুই শালা গরমের মধ্যে কোট পরেছিস। শালা ফুটানি দেখাচ্ছিস।

তোমরা যদি বল তাহলে কোট খুলে ফেলি।

শালা আবার তুমি করে বলে। মজিদ আচমকা এক চড় বসিয়ে দিল।

মির্জা সাহেব প্রথমবারের মতো সত্যিকার অর্থে ভয় পেলেন। তাঁর মনে হল দোকানে ঢুকবার আগে এরা যা ছিল এখন তা নেই। এখন তার সামনে অন্য একদল ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। এরা যে কোনো মুহূর্তে ভয়ংকর কিছু করতে পারে।

মজিদ বলল, চল করিমের ওখানে যাই।

আলম বলল, করিমের ওখানে কেন?

ঐখানে গিয়ে এই চাচামিয়াকে কোরবাণী দিয়ে দিব। চাচা মিয়া কোট পরে ফুটানি দেখাচ্ছে।

আলম জবাব দিল না।

দলটি হাঁটতে শুরু করল। মীর্জা সাহেব লক্ষ করলেন মজিদ ছেলেটি এখন আর খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাটছে না। অর্থাৎ সে এই মুহূর্তে কোনো শারীরিক ব্যথা-বেদনা অনুভব করছে না। তিনি ঘড়ি দেখলেন। তাঁর ঘড়িতে এখন তিনটা বাজে। অর্থাৎ মাত্র আধা ঘন্টা সময় পার হয়েছে। এদের সঙ্গে যখন দেখা হয় তখন বেজে ছিল আড়াইটা। বাংলাদেশ সময় এখন কত? আলম ছেলেটির হাতে ঘড়ি আছে। তাকে কি সময় জিজ্ঞেস করবেন? জিজ্ঞেস করাটা কি ঠিক হবে?

মির্জা সাহেব আলমের দিকে তাকিয়ে বললেন, কটা বাজে?

উত্তর দিল মজিদ। চাপা গলায় বলল, চুপ।

মির্জা সাহেব নিঃশব্দে হাঁটতে লাগলেন। আকাশের চাঁদ জোছনার ফিনকি ছড়াচ্ছে। চারদিকে দিনের মতো আলো।
 
০৬.
মজিদ বলল, রেসকোর্সের মাঠে যাবি না-কি?

কেউ জবাব দিল না। মনে হচ্ছে সবাই কিছুটা ক্লান্ত। মাহিন বেশ খানিকটা পিছিয়ে পড়েছে। তার পিছিয়ে পড়াটা ইচ্ছাকৃত। সিগারেট খেতে হবে প্যান্টের পকেটে চারটা ইমার্জেন্সি সিগারেট আছে। তারই একটা সে ধরাল। অন্যরা টের পেলে মুশকিল হবে। মাহিন সিগারেটের আগুন হাত দিয়ে আড়াল করে টানছে। তেমন আরাম পাওয়া যাচ্ছে না। সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকতে হচ্ছে। মজিদ টের পেলে খ্যাচাং শুরু করবে।

মজিদ বলল, কি তোরা যাবি রেসকোর্সের মাঠে?

আলম বলল, ঐখানে আছে কি?

মজিদ চাপা গলায় বলল, ফুর্তির জায়গাই হচ্ছে রেসকোর্সের মাঠ। গাছ বড় হয়েছে। অন্ধকার-অন্ধকার ভাব। এই সব অন্ধকারে মজার মজার জিনিস দেখবি।

দূর বাদ দে।

বাদ দেব কেন? ঢাকার লাইফ দেখব না? আমাদের সঙ্গে ফরেন চাচামিয়া আছে। ফরেন চাচামিয়াকে দেখিয়ে দেই। কি ফরেন চাচামিয়া, দেখতে চান না?

মির্জা সাহেব সহজ গলায় বললেন, না।

বিলাতি মেম সাহেব ছাড়া মন বসে না? নিচে কার্পেট উপরে ঝাড়বাতি। মেম সাহেবের কোমরে হাত দিয়ে নাচ।

সবাই যে এ রকম করে তা কিন্তু না।

চাচামিয়া বুঝি করেন না?

না।

চাচামিয়া কি মৌলানা না-কি?

মির্জা সাহেব জবাব দিলেন না। দলটি রেসকোর্সের দিকে এগুতে লাগল। মজিদ এখন দলপতি। পছন্দ না করলেও সবাই তার পেছনে-পেছনে যাবে। ভিন্ন অবস্থায় ভিন্ন পরিস্থিতিতে হয়ত এদের মধ্যে অন্য কেউ দলের নেতৃত্ব নেবে। তবে আজকের রাতটা মজিদের। সময় নেতা তৈরি করে। ঠিক সময়ে ঠিক নেতা এই কারণেই বের হয়ে আসে।

আলম বলল, পানির তৃষ্ণা হচ্ছে। খাওয়ার পানি আছে না-কি।

মজিদ বলল, রেসকোর্সে পুকুর আছে।

ঐ জার্ম ভর্তি পানি আমি খাব, বলিস কি?

দরকার হলে খাবি। সে রকম তৃষ্ণা হলে সব খাওয়া যায়।


মির্জা সাহেব লক্ষ করলেন মজিদ ছেলেটা অনেকক্ষণ উল্টো করে কথা বলছে না। সে কি স্বাভাবিক হয়ে আসছে। ঘোর কেটে যাচ্ছে? সব বড় ক্ৰাইম এক ধরনের ঘোরের মধ্যে করা হয়। ঘোর কেটে গেলে ক্রিমিন্যালরা কিছু করতে পারে না। তাদের মন সাধারণ মানুষের চেয়েও তরল অবস্থায় চলে যায়, অল্পতেই তারা আবেগে অভিভূত হয়। মন্টানা শহরের সেই কুখ্যাত খুনীর কথাই ধরা যাক। কী নাম ছিল যেন-জন-রেমন্ড? নাকি জেনি-রে। জেনি-রেই হবে। মেয়েলি ধরনের নাম। ঘঘরের মধ্যে চলে গেলে গলায় বেল্ট পেঁচিয়ে খুন করত। নারী-পুরুষ-শিশু-বৃদ্ধ কোনো বাছ বিচার ছিল না। ধরা পড়বার পর পুলিশ যখন জানতে চাইল, কেন খুন করতে? সে পাইপ টানতে-টানতে হাসিমুখে বলেছিল, মরবার সময় লোকগুলি কেমন অদ্ভুত চোখে তাকাত, দেখতে বড় ভালো লাগত।

অদ্ভুত চোখ বলতে তুমি কী বোঝাতে চাইছ?

তাদের চোখের দৃষ্টিতে ভালবাসা মাখানো থাকত।

ভালবাসা?

হ্যাঁ। ভালবাসা। গভীর ভালবাসা। তুমি না দেখলে বুঝতে পারবে না। মৃত্যু পথযাত্রীর চোখ বড় মায়াময়।

এই জেন-রেই সুস্থ থাকা অবস্থায় লাল নীল কাগজে মজার মজার ছড়া লিখে ছোট-ঘোট বাচ্চাদের বিলাত।

Dick dick dick
My dog is sick
Her dog is long
Sing sing a song.

এক পাবলিশার আবার এই সব ছড়া জোগাড় করে এক বই ছাপিয়ে ফেলল। বইটির নাম Black Rhymes- কালো ছড়া। আমেরিকা হচ্ছে পাগলের দেশ।

মাহিনের সিগারেট শেষ হয়েছে। সে এসে দলে যোগ দিয়েছে। তার একা-একা সিগারেট খাওয়ার ব্যাপারটা কেউ লক্ষ করে নি দেখে সে বেশ খুশি। সে ফুর্তিবাজের গলায় বলল, কি মারাত্মক চাঁদ উঠেছে দেখেছিস নাকি রে মজিদ?

মজিদ জবাব দিল না। আকাশের দিকে তাকালও না। এক দল থুথু ফেলল। মাহিন বলল, সুকান্ত বেঁচে থাকলে এই চাঁদ দেখে আরেকটা বিপ্লবী কবিতা লিখে ফেলত। থ্যাংক গড যে মারা গেছে।

মজিদ এবারো জবাব দিল না। আবার এক দল থুথু ফেলল, মাহিন বলল, কথা বলছি না কেন?

স্বার্থপর হোটলোকের বাচ্চার সঙ্গে আমি কথা বলি না।

আমি স্বার্থপর?

ইচ্ছা করে পেছনে পড়ে গেলি হারামজাদা ছোটলোক।

আরে একটা সিগারেট কেমন করে জানি পকেটে ছিল আমি জানতাম না-আপ অন গড।

আবার মিথ্যা কথা বলছিস? প্যাকেট থেকে সিগারেট বের করে আবার প্যাকেটে রেখে দিলি…

একটাই সিগারেট ছিল। বিশ্বাস কর খালি প্যাকেট। আপ অন গড।

খালি প্যাকেট কোনো শালা পকেটে রাখে?

মির্জা সাহেব বিস্মিত হলেন। মজিদের মধ্যে নেতার গুণাবলি চলে এসেছে। দলের সবার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখছে। কে কী করছে না করছে তা সে এখন জানে।

মাহিন থমথমে গলায় বলল, সিগারেট যদি প্যাকেটে থেকেই থাকে তাতে অসুবিধা কি? আমি কি তোর পয়সায় সিগারেট কিনেছি। গালাগালি করছিস কেন? ফস করে হারামজাদা বলে ফেললি। শালা তুই হারামজাদা বানান জানিস?

আলম বিরক্ত মুখে বলল, কী শুরু করলি তোরা। চল হাঁটি।

মাহিন বলল, আমি হাঁটাহাটির মধ্যে নেই। বাসায় চলে যাব।

আলম বলল, এখন বাসায় যাবি কি? মাত্র বারটা চল্লিশ বাজে। নাইট ইজ স্টিল ইয়াং।

বারটা চল্লিশ বাজুক বা তেরটা চল্লিশ বাজুক আমি চললাম।

সত্যি যাচ্ছি?

হ্যাঁ সত্যি।

আলম বলল, চল সবাই মিলে চলে যাই। পুলিশে ধরলে মুশকিল। হাজতে চালান করে দিবে। মজিদ, চল যাওয়া যাক।

তোরা যেতে চাইলে যা।

তুই একা-একা কী করবি?

বললাম না একটা খুন করব। দাঁড়িয়ে আছিস কেন চলে যা।

তুই যাবি না?

না।

আর এই ভদ্রলোককে কী করবি?

নখু বরক, নখু বরক।

মির্জা সাহেব চমকে উঠলেন। উল্টো কথা আবার ফিরে এসেছে। ছেলেটা কথাও বলছে তীক্ষ্ণ স্বরে, আগের পাগলামী কি আবার ফিরে আসছে। সঙ্গের ছেলে দুটি চলে গেলে ঝামেলা হবে।

মজিদ বলল, দাঁড়িয়ে আছিস কেন? চলে যা।

ওরা গেল না দাঁড়িয়ে রইল। মজিদ রেসকোর্সের দিকে হাঁটতে শুরু করা মাত্র তারাও পেছনে-পেছনে আসতে লাগল। মির্জা সাহেব লক্ষ করলেন মজিদ এখন আর পা টেনে-টেনে হাঁটছে না। ব্যথা বোধ নিশ্চয়ই নেই। সে তাহলে ঘরের মধ্যে আছে, ঘোর কাটছে না।
 
রেসকোর্সের ময়দানে ঢোকা হল না। বৃষ্টিতে কাদা হয়ে আছে। কাদার উপর হাঁটাহাটি কারো পছন্দ হল না। তাছাড়া জায়গাটা জনশূন্য। বৃষ্টি হবার করণেই হয়ত কেউ নেই। মজিদ বলল, চল ফিরে যাই। করিমের কাছে যাওয়া যায়।

আলম বলল, করিমের কাছে কী জন্যে? জিন খাবি?

হুঁ।

সবাই আবার ফিরে চলল। কেউ কোনোরকম আপত্তি করল না। মাহিন আবার তার ইমার্জেন্সি স্টক থেকে সিগারেট বের করেছে। এবার সে এক ধরায় নি—অন্য দুজনকেও দিয়েছে। মাহিন মনে-মনে আশা করছিল মজিদ রাগ করে সিগারেট নেবে না। তা হয় নি। মজিদ সহজ ভাবেই সিগারেট নিয়েছে।

দলটা দ্রুত গতিতে হাঁটছে। এত দুত যে মির্জা সাহেব ঠিক তাল মিলাতে পারছেন না। বার-বার পিছিয়ে পড়ছেন। মাহিন তার সঙ্গে-সঙ্গে আসছে।

মাহিন নিচু গলায় কথা বলা শুরু করল। মির্জা সাহেবের কথা বলতে ইচ্ছা করছে। না তবু বলছেন।

আমেরিকায় আপনি কী করেন?

একটা ফার্মের সঙ্গে যুক্ত আছি।

কী ফার্ম?

রিসার্চ ফাৰ্ম। ওরা ওয়াটার সলুবেল পলিমার নিয়ে গবেষণা করে। নতুন নতুন প্রডাক্ট তৈরি করে।

আপনি কি সাইনটিস্ট না-কি?

হ্যাঁ, তা বলা যেতে পারে।

বেতন কত পান।

অনেক।

অনেকটা কত সেটা বলেন? না-কি বলা যাবে না।

বলা যাবে না কেন। নিশ্চয়ই বলা যাবে। বৎসরে তিরানব্বই হাজার ডলার পাই।

ট্যাক্স কাটে না?

সব কেটে-কুটে এই পাই।

তিরানব্বই হাজার ডলার মানে বাংলাদেশি টাকার কত?

জানি না কত।

হিসেব করে বের করেন কত। বত্রিশ দিয়ে গুণ দেন। ডলার এখন বত্রিশ করে যাচ্ছে।

মির্জা সাহেব প্রায় সঙ্গে-সঙ্গেই বললেন, প্রায় ত্রিশ লক্ষ টাকা।

এক বৎসরেই ত্রিশ লক্ষ পান?

হ্যাঁ। করেন কী এত টাকা দিয়ে?

মির্জা সাহেব জবাব দিলেন না। মাহিন বলল, আপনার গাড়ি আছে?

আছে।

একটা না দুটা?

দুটা আছে।

বাড়ি কিনেছেন?

হ্যাঁ।

কটা রুম সেই বাড়িতে?

বলতে পারছি না। দোতলা বাড়ি বেশ কিছু রুম আছে।

নিজের বাড়িতে কটা রুম তাও বলতে পারছেন না?

মির্জা সাহেব চুপ করে গেলেন। তিনি মাহিনের গলার উত্তাপ টের পাচ্ছেন। ছেলেটা রেগে যাচ্ছে। চাপা রাগ। চাপা রাগ যে কোনো মুহূর্তে ভয়ংকর রূপে ফুটে বেরুতে পারে।

বাড়িতে সুইমিং পুল আছে?

আছে।

রাজার হালে আছেন তাহলে।

আর দশটা বিত্তবান আমেরিকানদের মতোই আছি।

আপনার লজ্জা লাগে না?

লজ্জা?

হ্যাঁ লজ্জা। দেশের মানুষ না খেয়ে আছে আর আপনি সুইমিং পুলে সাঁতার কাটছেন।

তোমার কি ধারণা আমি সুইমিং পুলে সাঁতার কাটা বন্ধ করলে দেশের লোক খেতে পাবে?

মজিদ হুংকার দিয়ে উঠল, চুপ কর শালা আবার তর্ক করে।

আমি তর্ক করছি না। প্রশ্নের জবাব দিচ্ছি।

শালা তোকে প্রশ্নের জবাব দিতে কে বলেছে? এই লালটুস শালাকে খুন না। করলে আমি শান্তি পাচ্ছি না। শালার মুখের দিকে তাকালে গা কাঁপছে। শালা ত্রিশ লাখ টাকা কামাই করে আমাদের মানুষ মনে করছে না। হারামজাদা বজ্জাত।

মির্জা সাহেবের বুক কেঁপে উঠল। মজিদের উন্মাদ রাগ তিনি টের পাচ্ছেন। এই রাগ বাঁধ দিয়ে ঠেকিয়ে রাখা নদীর প্রবল জলধারার মতো পথ খুঁজে বেড়াচ্ছে। যে কোনো সময় নিজেই পথ বের করে নেবে।

উনিশশ বাষট্টি সনে নিজেই এ রকম অন্ধ রাগের একটি দৃশ্য দেখেছেন। নীলক্ষেতের লেপ তোষকের দোকানগুলোর কাছে তিনি দাঁড়িয়ে আছেন। এক ভদ্রলোক তার স্ত্রী এবং ছোট মেয়েকে নিয়ে লালরঙের একটা ভোক্সওয়াগনে করে দ্রুত যাচ্ছেন। একটা ছোট বাচ্চা কোনোদিকে না তাকিয়ে দৌড়ে রাস্তা পার হতে গেল। গাড়িতে ধাক্কা খেয়ে ছিটকে পড়ে গেল। প্ৰচণ্ড ব্রেক কষে ভদ্রলোক গাড়ি থামালেন। দরজা খুলে ছুটে গেলেন বাচ্চাটির কাছে। বাচ্চাটাকে রাস্তা থেকে টেনে তোলার আগেই লোকজন তাকে ধরে ফেলল। ঝাকড়া চুলের গোয় হলুদ রঙের মাফলার জড়ানো এক যুবক অন্ধ রাগে চেঁচাতে লাগল-হারামজাদা না দেখে গাড়ি চালায়। হারামজাদার চোখ গেলে দেন। হারামজাদার চোখ দুটো গেলে দেন…। ছেলেটার সঙ্গে-সঙ্গে আরো অনেকে চেঁচাতে লাগল-চোখ গেলে দাও। চোখ গেলে দাও।

মির্জা সাহেবের মতো আরো অনেকের চোখের সামনে ভয়াবহ ঘটনাটা সত্যি-সত্যি ঘটে গেল।

আজো এরকম কিছু ঘটবে। অন্ধ রাগের ছায়া মজিদের চোখে মুখে। তার প্যান্টের পকেটে ভয়াবহ একটি অস্ত্র।
 
০৭.
দলটি আবার ঢুকল ইসলাম ব্রাদার্সের আঠারতলা দালানের চত্বরে। ঢোকার মুখে স্থূপ করে রাখা রডে পা বেঁধে হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেল মজিদ। যে কোনো পতনের দৃশ্য হাস্যরস তৈরি করে। এই দৃশ্যটি করল না। বরং সবাই মিলে খানিকটা শংকিত বোধ করল। মাহিন বলল, ব্যথা পেয়েছিস?

মজিদ উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল, না, আরাম পেয়েছি। অন্য সময় এই কথায় প্রচুর হাসাহাসি শুরু হয়ে যেত আজ হল না। আজ দলটির অস্বস্তি আরো বেড়ে গেল।

মজিদ সিঁড়ি বেয়ে তিন তলার দিকে রওনা হল। করিমের কাছে যাবে এইটুকু সে জানে। কেন যাবে তা জানে না। কতক্ষণ থাকবে তাও জানে না। শেষ পর্যন্ত নাও যেতে পারে। তিন তলায় উঠার পর হয়ত আর করিমের সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছা থাকবে না। সে ফিরে যাবে। দলের অন্যরা কিছুই ভাবছে না। তারা মজিদকে অনুসরণ করছে। মজিদ যা করবে তারা তাই করবে।

তাদের তিন তলা পর্যন্ত উঠতে হল না। দোতলার সিঁড়িতে পা দেয়া মাত্ৰ করিম নেমে এল। তার গায়ে সাদা একটা কম্বল। তাকে দেখাচ্ছে ভালুকের মতো। তার জ্বর সম্ভবত আরো বেড়েছে। মুখ কেমন যেন লালচে দেখাচ্ছে। সে উঁচু গলায় বলল, স্টপ স্টপ। আপনারা যান কোথায়?

দলটা থমকে দাঁড়াল। সিঁড়িতে বাতি জ্বলছে। সিঁড়ির বাতি মাত্র চল্লিশ ওয়াটের। বাতি এই মুহূর্তে করিমের মাথার উপর বলে তাকে দেখা যাচ্ছে। সে অন্যদের দেখতে পাচ্ছে না। সে যে কোনো কারণেই হোক অসম্ভব ভীত। মজিদরা থমকে দাঁড়াল। করিম বলল, কে আপনারা?

মজিদ বলল, আমরা।

আমরা মানে কে?

মজিদ জবাব না দিয়ে আরো দুটা ধাপ পার হল। করিম চেঁচিয়ে বলল, স্টপ স্টপ।

মাহিন বিস্মিত গলায় বলল, করিম আমরা এখানে ব্যাপার কি?

করিম থমত খাওয়া গলায় বলল, উপরে উঠবেন না ভাই, প্লিজ।

ব্যাপার কি?

অসুবিধা আছে।

কী অসুবিধা?

চলেন নিচে যাই। নিচে গিয়ে বলি।

এখানেই বল কী অসুবিধা।

করিম কাঁপা কাঁপা বলায় বলল, ঘরে মীরন ভাই আছে। অন্য সময় আসেন।

মজিদ বলল, ফুর্তি করতে এসেছে?

করিম জবাব দিল না।

আলম বলল, ফুর্তিবাজ একটা ছেলে তার সঙ্গে দেখা না করে গেলে ভালো দেখায় না।

নো নো। স্টপ।

অসুবিধা আছে?

বললামতো অসুবিধা আছে।

মজিদ বলল, ভদ্রলোকের ছেলের সঙ্গে কথা বলব। আলাপ পরিচয় হবে। এর মধ্যে অসুবিধা কি? সেকি মেয়েছেলে নিয়ে এসেছে?

না না—এসব কিছু না।

মেয়েছেলে থাকলে অন্য ব্যাপার ছিল। যখন নাই তখন দেখা করতে অসুবিধা কি?

তাকে নিয়ে খানিকটা ঘুরব। দলে ফুর্তিবাজ একটা ছেলে থাকলে ভালো লাগে।

করিম কাঁদো-কাঁদো গলায় বলল, ভাই আপনাদের পায়ে ধরি আপনারা চলে যান। কেন আমাকে বিপদে ফেলছেন? আমি গরীব মানুষ। এখান থেকে বের করে দিলে না খেয়ে মরব।

আলম বলল, চল চলে যাই। যথেষ্ট হয়েছে।

করিম সঙ্গে-সঙ্গে বলল, জ্বি ভাই চলে যান। কাল আসবেন। কাল আপনাদের। জন্যে ভালো জিনিস যোগাড় করে রাখব। প্রমিস ভাই প্রমিস।

মজিদ বলল, মীরন ভাইয়ার সঙ্গে দেখা না করে চলে যাব এ কেমন কথা। সঙ্গে মেয়েছেলে থাকলে অন্য কথা।

করিম ফ্যাস ফ্যাসে গলায় বলল, সঙ্গে মেয়ে ছেলে আছে ভাই। আজ চলে যান। রিকোয়েস্ট। আপনার পায়ে ধরি ভাই। আই টাচ ইয়োর ফিট।

করিম সত্যি-সত্যি পা ধরবার জন্যে এগিয়ে গেল। মজিদ মুখ বিকৃত করে বলল, থাক থাক পা ধরতে হবে না। চলে যাচ্ছি।

থ্যাংকস ভাই। মেনি থ্যাংকস।

মজিদ দু ধাপ সিঁড়ি নেমে গেল। নেমে থমকে দাঁড়াল। করিম বলল, দাঁড়িয়ে আছেন কেন ভাই চলে যান।

মজিদ কড়া গলায় বলল, ব্যাপারটা কি বলেন তো। ঠিকমত বলেন। না বললে এই জিনিস পেটের মধ্যে ঢুকে যাবে। এই যন্ত্ররে চিনেন? এই যন্ত্রের নাম ক্ষুর। সান রাইজ ক্ষুর।

করিম সিঁড়িতে বসে পড়ল।
 
সে এই দলটিকে কিছুতেই তার ঘরে যেতে দিতে পারে না। ঘরে বিরাট সমস্যা। মীরন বেকুবের মতো এক কাণ্ড করে বসেছে। রাস্তায়-রাস্তায় ফুল বিক্রি করে এরকম একটা দশ-এগার বছরের মেয়েকে গাড়ি করে ভুলিয়ে-ভালিয়ে নিয়ে এসেছে। মেয়েটার রোগা ভোগা চেহারা। কিন্তু দেখতে সুশ্ৰী। মীরন তাকে কী বলে তুলিয়ে এতদূর এনেছে সেই জানে কিন্তু সিঁড়ি দিয়ে উঠবার মুখে মেয়েটি বেঁকে বসল, আফনে আমারে কই নেন?

মীরন তার হাত চেপে ধরে বলল, চুপ থাক। টাকা পাবি। মেলা টাকা পাবি। মেয়েটা হাত ছাড়িয়ে নেবার চেষ্টা করতে করতে বলল, আফনে আমার কই নেন? আফনে আমারে কই নেন?

হৈ-হৈ শুনে ঘুম ভেঙ্গে করিম নেমে এসে দেখে এই কাণ্ড। সে ভীত গলায় বলল, মীরন কী কর তুমি।

মীরন ভারী গলায় বলল, আপনি এসে এর আরেকটা হাত ধরেন তো। বড় যন্ত্ৰণা করছে।

মীরন ছেড়ে দাও। ঝামেলা হবে।

আরে দূর দূর।

মীরন ভাই তোমার পায়ে ধরি।

আমার পায়ে ধরতে হবে না। আপনি এর হাতটা ধরেন। হারামজাদীর কত বড় সাহস। আমার হাতে কামড় দিয়েছে। রক্ত বের করে দিয়েছে। হারামজাদীকে আমি উচিত শিক্ষা দেব।

মীরন ভাই কথা শোন।

ধুত্তোরী যন্ত্রণা। হাতটা ধরেন।

মীরনের মুখ দিয়ে ভকভক করে মদের গন্ধ বেরুচ্ছে। চোখ ঘোলাটে। মনে হচ্ছে। রেগে যাচ্ছে। রেগে গেলে এই ছেলে চণ্ডাল। করিম এসে মেয়েটির হাত ধরল। হাত ধরা মাত্র মেয়ে সেই হাতে কামড় দিল। মহা বিচ্ছু মেয়ে।

এই বিচ্ছু মেয়ে প্রায় আধা ঘন্টা ধরে করিমের ঘরে। ভেতর থেকে দরজা বন্ধ। সেখানে কী হচ্ছে একমাত্র আল্লা মালুদই জানে। প্রথম কিছুক্ষণ বিকট গোঙানী শোনা গেছে। সেই শব্দ কমে এসেছে। সম্ভব মুখ চেপে ধরার কারণে। তারপর আর কোনো সাড়া-শব্দ নেই।

করিম ক্রমাগত দোয়া ইউনুস পড়ে যেতে লাগল। হে আল্লা বিপদ থেকে উদ্ধার কর। এই হারামজাদা মীরন কী বিপদে ফেলল? বিপদের এই চাকরি আর ভালো লাগে না। এরচে গুলিস্তানে ভিক্ষা করা ভালো। হে আল্লা দয়া কর।

আল্লাহ দয়া করেন নি। বিপদ কমে নি উল্টো বিপদ আরো বেড়েছে। মজিদ ভাইয়ের মতো ঠাণ্ডা ছেলে হাতে ক্ষুর নিয়ে উপস্থিত। এখন কোন্ ঝামেলা বেঁধে যায় কে জানে।

সঙ্গে কোট পরা ভদ্রলোকই বা কে? কে জানে। পুলিশের আই.বি-র লোক নাতো। আই. বি-র লোগুলো এই রকমইতো থাকে।

মজিদ বলল, কথা বলছেন না বিষয় কি করিম ভাইয়া। মেরা পেয়ারা ভাই দিমু জিনিস পেটে হান্দাইয়া?

মজিদ সিঁড়ি বেয়ে তিন ধাপ এগিয়ে এল। করিম ফাঁস-ফাঁসে গলায় বলল, বলছি ভাই। পুরোটা ভেঙ্গে বলছি। শালার কী যন্ত্রণার মধ্যে যে পড়লাম। আপনাদের সাথে ইনি কি পুলিশের লোক?

বাজে প্যাচাল বন্ধ কইরা আসল কথা কহেন বাহে। সময় নাই।

করিম মূল ঘটনা অতি দ্রুত বলে গেল। মনে হল কেউ এক জন দাড়ি কমা ছাড়া রিডিং পড়ছে। দম নেবার জন্যেও থামছে না। করিম চুপ করা মাত্র মির্জা সাহেব কঠিন স্বরে জিজ্ঞেস করলেন, মেয়েটি কি মারা গেছে?

জানি না স্যার। আমি কিছুই জানি না। সারাক্ষণ আমি বাইরে ছিলাম।

কতক্ষণ আগের ব্যাপার?

ঘন্টা খানেক আগের ব্যাপার। বেশিও হতে পারে। আমার স্যার শরীর খারাপ। জল বসন্ত-মাথার কোনো ঠিক নাই।

তুমি কি মীরন নামের ছেলেটিকে এর মধ্যে একবারও ডেকে জিজ্ঞেস কর নি–কী ব্যাপার?

করেছি। সে জবাব দেয় নি?

জ্বি না।

মজিদ ক্ষুরের ফলাটা টেনে বের করল। মির্জা সাহেব কিছু বলতে গিয়েও বললেন। না। মজিদের ভঙ্গি, আচার আচরণে এই মুহূর্তে যে কোনো মানুষ বলে দেবে মজিদ ঘোরের মধ্যে আছে। এই ঘোর কাটবে না। এই ঘোর কাটবার নয়।

হুড়মুড় শব্দ হল। কারো কিছু বুঝবার আগেই মজিদের প্রায় গা ঘেঁসে ছুটে নেমে গেল করিম।

মজিদ নড়ল না। করিমের প্রতি সে কোনো আগ্রহ বোধ করল না।

আলম প্রায় অস্পষ্ট স্বরে বলল, ঝামেলা বাড়িয়ে লাভ নেই। চল ভেঙ্গে যাই।

মাহিন বলল, আমার মতে এটাই বেস্ট পসিবল একশান। করিম হারামজাদার ভাব ভঙ্গি থেকে বোঝা যাচ্ছে এখানে মার্ডার-ফার্ডার হয়ে গেছে। উপস্থিত থাকলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।

মজিদ বলল, চলে যেতে চাইলে যা।

তুই যাবি না। ওখানে দাঁড়িয়ে থেকে তুই কবি কী?

তোদের চলে যেতে বলছি তোরা চলে যা।

আলম বলল, দোস্ত এটা মাথা গরম করার সময় না। এখানে থাকলেই মার্ডার কেইসে পড়ে যাবি।

তুই চলে যা।
 
আলম এবং মাহিন সিঁড়ি ভাঙ্গতে লাগল। তারা নেমে যাচ্ছে তবে একটু পরপর পেছন ফিরে তাকাচ্ছে। মির্জা সাহেব দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি বেশ স্পষ্ট স্বরেই বললেন,

মজিদ তুমি কী করতে চাও?

নখু রেক বলফে।

ঐ ছেলেটিকে খুন করতে চাও?

হ্যাঁ।

আমি কিন্তু তার কোনো প্রয়োজন দেখছি না। যদি সত্যি-সত্যি এখানে কোনো হত্যাকাণ্ড হয়ে থাকে আমরা দেখব যেন পুলিশ এসে ছেলেটাকে ধরে। যেন বিচার হয়, আমরা চাই যেন শাস্তি হয়।

পয়সাওয়ালা মানুষদের শাস্তি এদেশে হয় না।

এটা শুধু এ দেশের জন্যে সত্যি নয়, এটা পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের জন্যে সত্যি। তবু আমাদের চেষ্টা করতে হবে যেন আইন নিজের পথে চলে। তুমি যা করতে যাচ্ছ। তার ফল ভয়াবহ। তুমি ফাঁসিতে ঝুলবে, তুমি পয়সাওয়ালা নও। কেউ তোমাকে বাঁচাবে না।

নখু রেক বলফে।

তুমি ক্ষুরটা ফেলে দাও। তারপর আমার সঙ্গে হোটেলে চল। হোটেলের লাউঞ্জে বসে হট কফি খেতে খেতে গল্প করব। আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি, এ দেশ ছেড়ে যাবার আগে আমি তোমার একটা ব্যবস্থা করে যাব। তুমি কি আমেরিকা যেতে চাও? যেতে চাইলে সেই ব্যবস্থাও করা যাবে। মানি ক্যান ড়ু ওয়ান্ডারফুল ট্রিকস।

নখু রেক বলফে।

তোমাকে আমার পছন্দ হয়েছে মজিদ। বেশ পছন্দ হয়েছে। আমেরিকায় তুমি আমার সঙ্গে থাকতে পার। আমার মেয়েটা একা-একা থাকে। সে এক জন সঙ্গী পাবে। জীবন চমৎকার একটা জিনিস মজিদ। ইউ ক্যান নট গ্যামবল উইথ ইট। লিসন টু মি। বি রিজনেবল।

মির্জা সাহেব মজিদের দিকে কয়েক পা এগিয়ে আসতে মজিদ হুংকার দিয়ে উঠল—স্টপ।

মির্জা সাহেব থমকে দাঁড়ালেন।

যান হোটেলে চলে যান। যান বলছি।

মির্জা সাহেব সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে লাগলেন। মজিদ তরতর করে তিন তলায় উঠে গেল। করিমের দরজায় টোকা দিতেই দরজা খুলে গেল।

মজিদ নিচু গলায় বলল, মীরন ভাই ভালো আছেন?

মীরন ভয়ার্ত গলায় বলল, আপনি কে?

মজিদ তার উত্তর না দিয়ে আগের চেয়েও নরম গলায় বলল, ভাই সাহেব মেয়েটা কি মরে গেছে?

মীরন কাঁদো-কাঁদো গলায় বলল, বুঝতে পারছি না। শরীরতো এখনো গরম। আপনি কে?

আমার নাম আবদুল মজিদ।

আপনার হাতে এটা কি?

এটা কিছু না। এর নাম ক্ষুর।

ক্ষুর দিয়ে কী করবেন?

মজিদ মধুর স্বরে হাসল। হাসতে হাসতেই নরম স্বরে বলল, নখু বরক—খুন করব।



মজিদ নিচে নেমে এসে দেখে মির্জা সাহেব অন্ধকারে দাঁড়িয়ে আছেন। প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে তাকিয়ে আছেন আকাশের দিকে। মজিদ বলল, আপনি যান নি?

না।

আপনি কি দয়া করে আমাকে বাসায় পৌঁছে দেবেন।

নিশ্চয়ই পৌঁছে দেব।

ফুপা-ফুপুর সঙ্গে একটু দেখা করব। রাতটা থাকব। সকালে পুলিশের কাছে ধরা দেব। আমার বাসা কিন্ত বেশ দূর। আপনাকে অনেক হাঁটতে হবে।

অসুবিধা নেই আমি হাঁটব। তুমি ঠিকমত পা ফেলতে পারছ না। মজিদ আমি কি তোমার হাত ধরব?

না হাত ধরতে হবে না। চলুন রওনা হই।

তারা দুজন পথে নামল। মজিদ ছোট-ঘোট পা ফেলতে ফেলতে এক সময় বলল, স্যার আপনার মেয়েটার নাম কি?

ওর নাম পলিন।

ও নিশ্চয়ই খুব সুন্দর।

হা সুন্দর। তুমি কি ওর ছবি দেখবে। আমার মানি ব্যাগে ওর ছবি আছে।

মির্জা সাহেব ছবি বের করে মজিদের হাতে দিলেন।

মজিদ বলল, স্যার আপনার মেয়েটা পরীর মতো সুন্দর।



তারা হাঁটছে। ঘুমন্ত শহরের পথে জোছনার আলো। এই চাঁদের আলো বড় অদ্ভুত জিনিস। এই আলোয় চেনা পৃথিবী অচেনা হয়ে যায়। পিচ ঢালা কালো কঠিন রাজপথকে মনে হয় ভাদ্র মাসের শান্ত নদী।

তারা হাঁটছে। পায়ের নিচে নদী। মাথার উপর অন্য এক রকম আকাশ। চারপাশে থৈ-থৈ জোছনা। যে জোছনা মানুষকে পাল্টে দেয়। যে জোছনায় সত্যকে মিথ্যা, মিথ্যাকে সত্য বলে ভ্ৰম হয়।







অনেকক্ষণ কড়া নাড়ার পর মজিদের ফুপা দরজা খুললেন। তিনি কিছু বলার আগেই মজিদ বলল, ভালো আছেন ফুপা?

জমির সাহেব থমথমে গলায় বললেন, রাত দুপুরে এটা কী ধরনের রসিকতা?

মজিদ উদাস গলায় বলল, রসিকতা না ফুপা। কিছুক্ষণ আগে একটা খুন করে আসলাম। ফুপুকে ডেকে তোলেন। সাবান আর পানি দিতে বলেন। হাতে রক্ত লেগে আছে। হাত ধুতে হবে।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top