আবু তাহের সিগারেট টানছে। সিগারেট তার বা হাতে ধরা। সে ডান হাত তুলতে পারছে না। তার ডান হাতের প্রতিটি আঙুলে পিন ফুটানো হয়েছে। মধ্যমা আঙুলের পিন ঠিকমতো ফুটে নি। অর্ধেক বের হয়ে আছে। একবার তার কাছে মনে হলো, এরকম কিছুই ঘটে নি। সে ভয়ঙ্কর কোনো দুঃস্বপ্ন দেখছে। তার বোঝায় ধরা রোগ হয়েছে। বোঝায় ধরার আগে আগে সে এরকম দুঃস্বপ্ন দেখে। ঘুম ভাঙলেই দেখা যাবে সব ঠিক আছে।
মোহাম্মদ আবু তাহের?
জি।
অনেকে শাস্তির হাত থেকে বাচার জন্যে সব অপরাধ স্বীকার করে। তাদেরকে যখন বলা হয়–মুক্তি যেখানে থাকে সেখানে নিয়ে চল— তখন তারা কোথাও নিয়ে যেতে পারে না। কাউকে ধরিয়েও দিতে পারে না। তারা আমাদের সময় নষ্ট করে। তুমি বলে আমাদের সময় নষ্ট করা কি উচিত?
জি-না।
তুমি আমাদের সময় নষ্ট করছ না তো?
জি-না।
কাউকে যদি ধরিয়ে দিতে না পোর, তাহলে আমরা তোমাকে মজার একটা শাস্তি দেব। শাস্তির ইংরেজি নাম Castration. তোমার দুটা অণ্ডকোষ কেটে ফেলে দেব। খোঁজা বানিয়ে দেব। খোঁজা কী চেন?
চিনি।
পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিটা পুরুষকে খোজা বানিয়ে দিতে পারলে হতো; একটা নতুন জাতি তৈরি হতো। নপুংসক জাতি। ভালো হতো না?
জি স্যার। ভালো হতো।
এক ঘণ্টার মধ্যে আমরা তোমাকে নিয়ে বের হব। তুমি বাড়িগুলি চিনিয়ে দেবে। তোমার হাত থেকে আমরা পিন সরাব না। যে রকম আছে, সে রকমই থাকবে। ঠিক আছে?
জি স্যার।
তোমার একটা আঙুলের পিন দেখছি ঠিকমতো ঢোকানো হয় নি। ঢুকিয়ে দেই?
দিন স্যার।
আচ্ছা এখন থাক। আমরা ভ্ৰমণ শেষ করে কাজটা করব।
জি আচ্ছা স্যার।
ভ্ৰমণে যাবার আগে কিছু কি খাবে? এক পিস কেক। এক কাপ চা।
খাব স্যার।
কাজটা সেরে এসে খাই? প্ৰথমে কাজ তারপর খাদ্য। সেটা ভালো না?
জি স্যার ভালো। খুব ভালো।
গাঢ় নীল রঙের একটা টয়োটা গাড়ি নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরছে। গাড়ির কাচ এমন যে, ভেতবের আরোহীদের বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু গাড়ির ভেতরের মানুষরা বাইরে কী হচ্ছে দেখতে পাচ্ছে। পেছনের সিটে আবু তাহের বসে আছে। তার শায়ে কম্বল জড়ানো। আবু তাহেরের মুখ দিয়ে এখনো লালা পড়ছে। প্রচণ্ড জ্বর এসেছে। কিছুক্ষণ পরপর শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছে। আবু তাহেবের দুপাশে দুজন। আবু তাহের বাড়ি দেখিয়ে দিচ্ছে, এই দুজন নোট নিচ্ছে। বাড়ি দেখানোর কাজটা আবু তাহের করছে কিছুই না জেনে। মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে তার কোনোই যোগ নেই। তারা কে কোথায় থাকে সে কিছুই জানে না।
স্যার, এই বাড়ি।
এটা তো দোতলা বাড়ি। দোতলা বাড়ির কোন তলা?
সেটা বলতে পারছি না। স্যার।
ভালো করে দেখে বলো, এই বাড়ি?
জি স্যার।
এখন কোন দিকে যাব?
পুরানা পল্টন।
পুরানা পল্টন?
জি স্যার।
পুরানা পল্টনে যে থাকে তার নাম কী?
নাম জানি না স্যার। রাতে এই বাড়িতে এসে ঘুমায়।
একা ঘুমায় নাকি আরো লোকজন থাকে?
সেটা বলতে পারছি না স্যার। আবু তাহের ঢাকা নগরের বিভিন্ন এলাকায় পাঁচটি বাড়ি দেখিয়ে দিল। সেই রাতেই পাঁচটি বাড়ি থেকে নয়জনকে মিলিটারি ধরে নিয়ে গেল। তাদের কেউই জীবিত ফিরে এলো না। এই নয়জনের কেউই মুক্তিবাহিনীর বিষয়ে কিছুই জানত না।
এই নয়জন আরো কিছু মানুষের নাম বলল। অদ্ভুত এক চেইন রিঅ্যাকশন। তরুণ যুবকরা ধরা পড়ছে। কেন ধরা পড়ছে তারা জানে না। কোনো একজনের নাম বলে দিলে অত্যাচারের হাত থেকে বাচার সম্ভাবনা। তারা নাম বলছে। বাড়িঘর দেখিয়ে দিচ্ছে।
সেই সময় দুস্কৃতিকারী ধরার জন্যে পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়েছিল। পুরস্কারের লোভে যদি কেউ এগিয়ে আসে। জেলা প্রশাসকরা যে-কোনো মুক্তিযোদ্ধাকে ধরিয়ে দিতে পারলে এক হাজার টাকা পুরস্কার দিতে পারতেন।*
ক. সাধারণ দুস্কৃতিকারী বিষয়ে খবর দেয়ার জন্যে ৫০০ টাকা।
খ. ভারতের ট্রেনিংপ্রাপ্ত দুস্কৃতিকারীর বিষয়ে খবর দেয়ার জন্যে ৭৫০ টাকা।
গ. আগ্নেয়াস্ত্রসহ গ্রেফতারের জন্যে ১,০০০ টাকা।
ঘ. দুস্কৃতিকারী দলের নেতা গ্রেফতারের জন্যে ২,০০০ টাকা।
ঙ. অন্ত্রশস্ত্রসহ দুস্কৃতি দলের নেতা গ্রেফতারের জন্যে ১০,০০০ টাকা।
————–
*সূত্র : দৈনিক পাকিস্তান
মোহাম্মদ আবু তাহের?
জি।
অনেকে শাস্তির হাত থেকে বাচার জন্যে সব অপরাধ স্বীকার করে। তাদেরকে যখন বলা হয়–মুক্তি যেখানে থাকে সেখানে নিয়ে চল— তখন তারা কোথাও নিয়ে যেতে পারে না। কাউকে ধরিয়েও দিতে পারে না। তারা আমাদের সময় নষ্ট করে। তুমি বলে আমাদের সময় নষ্ট করা কি উচিত?
জি-না।
তুমি আমাদের সময় নষ্ট করছ না তো?
জি-না।
কাউকে যদি ধরিয়ে দিতে না পোর, তাহলে আমরা তোমাকে মজার একটা শাস্তি দেব। শাস্তির ইংরেজি নাম Castration. তোমার দুটা অণ্ডকোষ কেটে ফেলে দেব। খোঁজা বানিয়ে দেব। খোঁজা কী চেন?
চিনি।
পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিটা পুরুষকে খোজা বানিয়ে দিতে পারলে হতো; একটা নতুন জাতি তৈরি হতো। নপুংসক জাতি। ভালো হতো না?
জি স্যার। ভালো হতো।
এক ঘণ্টার মধ্যে আমরা তোমাকে নিয়ে বের হব। তুমি বাড়িগুলি চিনিয়ে দেবে। তোমার হাত থেকে আমরা পিন সরাব না। যে রকম আছে, সে রকমই থাকবে। ঠিক আছে?
জি স্যার।
তোমার একটা আঙুলের পিন দেখছি ঠিকমতো ঢোকানো হয় নি। ঢুকিয়ে দেই?
দিন স্যার।
আচ্ছা এখন থাক। আমরা ভ্ৰমণ শেষ করে কাজটা করব।
জি আচ্ছা স্যার।
ভ্ৰমণে যাবার আগে কিছু কি খাবে? এক পিস কেক। এক কাপ চা।
খাব স্যার।
কাজটা সেরে এসে খাই? প্ৰথমে কাজ তারপর খাদ্য। সেটা ভালো না?
জি স্যার ভালো। খুব ভালো।
গাঢ় নীল রঙের একটা টয়োটা গাড়ি নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরছে। গাড়ির কাচ এমন যে, ভেতবের আরোহীদের বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু গাড়ির ভেতরের মানুষরা বাইরে কী হচ্ছে দেখতে পাচ্ছে। পেছনের সিটে আবু তাহের বসে আছে। তার শায়ে কম্বল জড়ানো। আবু তাহেরের মুখ দিয়ে এখনো লালা পড়ছে। প্রচণ্ড জ্বর এসেছে। কিছুক্ষণ পরপর শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছে। আবু তাহেবের দুপাশে দুজন। আবু তাহের বাড়ি দেখিয়ে দিচ্ছে, এই দুজন নোট নিচ্ছে। বাড়ি দেখানোর কাজটা আবু তাহের করছে কিছুই না জেনে। মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে তার কোনোই যোগ নেই। তারা কে কোথায় থাকে সে কিছুই জানে না।
স্যার, এই বাড়ি।
এটা তো দোতলা বাড়ি। দোতলা বাড়ির কোন তলা?
সেটা বলতে পারছি না। স্যার।
ভালো করে দেখে বলো, এই বাড়ি?
জি স্যার।
এখন কোন দিকে যাব?
পুরানা পল্টন।
পুরানা পল্টন?
জি স্যার।
পুরানা পল্টনে যে থাকে তার নাম কী?
নাম জানি না স্যার। রাতে এই বাড়িতে এসে ঘুমায়।
একা ঘুমায় নাকি আরো লোকজন থাকে?
সেটা বলতে পারছি না স্যার। আবু তাহের ঢাকা নগরের বিভিন্ন এলাকায় পাঁচটি বাড়ি দেখিয়ে দিল। সেই রাতেই পাঁচটি বাড়ি থেকে নয়জনকে মিলিটারি ধরে নিয়ে গেল। তাদের কেউই জীবিত ফিরে এলো না। এই নয়জনের কেউই মুক্তিবাহিনীর বিষয়ে কিছুই জানত না।
এই নয়জন আরো কিছু মানুষের নাম বলল। অদ্ভুত এক চেইন রিঅ্যাকশন। তরুণ যুবকরা ধরা পড়ছে। কেন ধরা পড়ছে তারা জানে না। কোনো একজনের নাম বলে দিলে অত্যাচারের হাত থেকে বাচার সম্ভাবনা। তারা নাম বলছে। বাড়িঘর দেখিয়ে দিচ্ছে।
সেই সময় দুস্কৃতিকারী ধরার জন্যে পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়েছিল। পুরস্কারের লোভে যদি কেউ এগিয়ে আসে। জেলা প্রশাসকরা যে-কোনো মুক্তিযোদ্ধাকে ধরিয়ে দিতে পারলে এক হাজার টাকা পুরস্কার দিতে পারতেন।*
ক. সাধারণ দুস্কৃতিকারী বিষয়ে খবর দেয়ার জন্যে ৫০০ টাকা।
খ. ভারতের ট্রেনিংপ্রাপ্ত দুস্কৃতিকারীর বিষয়ে খবর দেয়ার জন্যে ৭৫০ টাকা।
গ. আগ্নেয়াস্ত্রসহ গ্রেফতারের জন্যে ১,০০০ টাকা।
ঘ. দুস্কৃতিকারী দলের নেতা গ্রেফতারের জন্যে ২,০০০ টাকা।
ঙ. অন্ত্রশস্ত্রসহ দুস্কৃতি দলের নেতা গ্রেফতারের জন্যে ১০,০০০ টাকা।
————–
*সূত্র : দৈনিক পাকিস্তান